সিলেটে ‘পুলিশ হেফাজতে’ রায়হান আহমদ নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ সব অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য। এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত ব্যুরো (পিবিআই)।
এ অবস্থায় দ্রুত এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রায়হানের পরিবার ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। দায়সারা গোছের তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
সিলেট নগরের এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী রায়হান আহমদকে (৩৪) গত ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফাঁড়ি থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১১ অক্টোবর ভোরে তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।
রায়হানের স্ত্রী ও তিন মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা যান রায়হান। পরে পরিবার ও এলাকাবাসী সরব হলে বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা। কাষ্টঘর এলাকার সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা) ফুটেজেও গণপিটুনির কোনো প্রমাণ মেলেনি।
রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ১১ অক্টোবর ভোরে ফাঁড়ি থেকে ফোন দিয়ে তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় রায়হানকে পিটিয়ে হত্যা করেন ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা। এ ঘটনায় ১১ অক্টোবর রাতে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে নগরের কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তন্নি। মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই।
এই মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, পিবিআই পুলিশেরই একটি বাহিনী। আর এ ঘটনায় অভিযুক্তরাও পুলিশ সদস্য। তাই পিবিআই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারবে বলে মনে হয় না।
‘ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি প্রধান অভিযুক্ত পালিয়ে গেছেন এবং যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরও জবানবন্দি আদায় করা হয়নি। এমনটি হলে মামলা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হবে’, বলেন এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম।
পুলিশ সত্যতা পেলেও স্বীকারোক্তি নেই
রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। তারা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ। এই তিনজনই বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
রায়হানের মৃত্যুর পর মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে চার জন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাদের মধ্যে টিটু ও হারুন রয়েছেন। আর আশেক এলাহিসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। রায়হানকে ধরে আনা ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা এবং সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানিয়েছিল তদন্ত কমিটি।
এ ছাড়া গত ১৯ অক্টোবর আদালতে জবানবন্দি দেন রায়হানকে নির্যাতনের তিন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কনস্টেবল শামীম, সাইদুর ও দিলোয়ার। তারা ঘটনার রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
জবানবন্দিতে তারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আশেক এলাহি, টিটু ও হারুন মিলে রায়হানকে নির্যাতন ঘটনার বর্ণনা দেন।
তবে গ্রেফতার হওয়া আশেক এলাহি, টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদ এসব অভিযোগ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি। টিটু ও হারুনকে দুই দফায় আট দিন এবং আশেক এলাহিকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়েও তাদের জবানবন্দি দিতে রাজি করাতে পারেনি পিবিআই।
রিমান্ডে এই তিনজনই রায়হানকে নির্যাতনের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, পলাতক এসআই আকবরই রায়হানকে নির্যাতন করেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এসেছে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি দিতে রাজি করাতে না পারাকে তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অভিযুক্তরাও পুলিশ সদস্য হওয়ায় রিমান্ডে তাদের হয়তো সেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এ কারণে রিমান্ড শেষে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
কাদের সহযোগিতায় আকবর ভারতে
বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই আকবর হোসেন ভুইয়ার নেতৃত্বেই রায়হানের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পায় মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ অক্টোবর এসআই আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে ওই রাতেই পালিয়ে যান আকবর।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি আকবরের পালিয়ে যাওয়ার জন্য মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করে।
জানা যায়, সিলেট থেকে পালিয়ে ১৩ অক্টোবর সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে আশ্রয় নেন আকবর হোসেন । স্থানীয় এক দালাল ও এক সাংবাদিকের সহযোগিতায় ১৪ অক্টোবর সেখান থেকে তিনি পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে যান।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে আকবর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জেনেছি। স্থানীয় সাংবাদিক নোমানের কোম্পানীগঞ্জের গ্রামের বাড়ি এবং তার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জে তল্লাশি চালানো হয়েছে। নোমানের স্ত্রী, মা ও বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’ এ ছাড়া তাদের দেশত্যাগে সহায়তার অভিযোগে চোরাকারবারি হেলালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, আকবরকে পালিয়ে যেতে কোনো পুলিশ সদস্য সহায়তা করলে তাকেও বিচারের আওতায় আনা হবে।
অভিযুক্ত তিনজন কেন অধরা
পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আকবর পলাতক। আশেক, টিটু ও হারুন জেলে। এএসআই কুতুব আলী এবং কনস্টেবল সজিব হোসেন ও তৌহিদ মিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে থাকলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, ‘একটি নিরীহ ছেলেকে হত্যার গুরুতর অভিযোগ এবং তার কিছু প্রমাণ পাওয়ার পরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।’
মামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘মামলার তদন্ত কার্যক্রমে আশাপ্রদ অগ্রগতি নেই। অভিযুক্তরা পুলিশ বলে কী আমরা ন্যায় বিচার পাব না?’
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদ উদ দীন বলেন, তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় আমরা কোনো তাড়াহুড়ো করছি না। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করছি।’
ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫-এ যোগ দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইং) ড. মো. মাহমুদুর রহমান।
উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফোরামে দেশের কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সদস্য দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবে। সফরকালে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা ইতালির ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোমস্থ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ ফোরাম ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সূত্র: বাসস
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করে মোট ১২ টি নতুন কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক গতকাল একটি সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ দু’টির বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে জনবল বৃদ্ধি এবং নতুন ১২টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে ৩৭৩টি ক্যাডার পদ এবং ৩,২২৪ টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৩,৫৯৭টি পদ নতুনভাবে সৃজন করা হয়েছে।
কর জাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক উক্ত আদেশ জারী করা হয়। উক্ত আদেশ অনুযায়ী ৩ পর্যায়ে ৫টি নতুন মূল্য সংযোজন কর কমিশনারেট, ৪টি নতুন কাস্টমস হাউস এবং ৩ টি বিশেষায়িত দপ্তর সৃজন করা হলো।
নতুন ১২ টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন ছাড়াও উক্ত সরকারি আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সম্প্রসারণ, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাস্টমস কার্যক্রম এবং কাস্টমস ও ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ফলে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় অধিক সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, আমাদের দেশে এখন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে আমাদের আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
নূরজাহান বেগম আরও বলেন, আমাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে হবে, যাতে করে আমরা ৬৪ জেলায় ক্যান্সার সচেতনতার বিষয়টি পৌঁছে দিতে পারি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি বিভাগীয় হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য লিনাগ মেশিন খুবই প্রয়োজনীয়। বর্তমান সরকার ৩৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি লিনাগ মেশিন ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মেশিন গুলো দেশে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ন্যাশনাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা সরকার অব্যাহত রাখবে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানলে অবাক হবেন যে একটি ফাইল একজনের কাছেই ছিল এক মাস দশ দিন। তাহলে বলুন, উন্নয়ন কাজ কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়?
তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
নূরজাহান বেগম আরো বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর হয়তো আমরা কেউ থাকব না। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ এনজিও আপনাদের পাশে থাকবে সব সময়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের পাশে থাকব এবং আপনারা আমাদেরকে যখনই ডাকবেন, আমরা তখনই আপনাদের ডাকে সাড়া দেব।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের টাকার অভাব রয়েছে। তাই আমরা হয়তো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সব সময় বিদেশে যেতে পারি না। কিন্তু বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেশে এনে তো আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। এক্ষেত্রে তো কোন বাধা নাই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সকলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহা-পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার মো. আবু জাফর বলেন, স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে শতভাগ নিরাময় সম্ভব। এজন্য আমাদের লজ্জা বা ভয় না পেয়ে যথাসময়ে স্ক্যানিং করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। আমাদের এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।’
সোমবার ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের ছয় দফা প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমেই বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন’—এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ুুসংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।
পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।
ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, অথচ আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়— এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, নৈতিক ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?’
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন এক নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে— সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।’
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর স্বপ্নের ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি অপরিহার্য— বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য আমরা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে এমন বহু সামাজিক ব্যবসা মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিুউদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।’
তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।’
তিনি বলেন, ‘তরুণদের বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিলের মাধ্যমে মূলধনে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কৃষি-উদ্ভাবন কেন্দ্র, কৃষিুপ্রযুক্তি, চক্রাকার খাদ্য ব্যবস্থা ও জলবায়ুুস্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দিতে হবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘যুব সমাজের ওপর বিনিয়োগ করলে শুধু বিশ্বকে খাদ্য দিতে পারব না, বিশ্বকেই বদলে দিতে পারব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্েযর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০-এর সঙ্গে মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘আসুন, একটি তিন-শূন্য বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ফোরামের তিনটি স্তম্ভ—যুব, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, এটি আমাদের খাদ্যব্যবস্থা ও সমাজ রূপান্তরের প্রধান হাতিয়ার।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তি রয়েছে, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি আসবে। এখন দরকার সৃজনশীল চিন্তা ও সঠিক ব্যবসা কাঠামো—যার মাধ্যমে আমরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি কল্পনা করতে পারি, আমরা তা বাস্তবেও সৃষ্টি করতে পারব।’
বক্তৃতার শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এফএও’র ৮০ বছর পূর্তি শুধু উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রস্তুতির আহ্বান।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘হাত ধরে হাতে, উন্নত খাদ্য ও উন্নত ভবিষ্যতের পথে’—আমাদের মনে করিয়ে দেয়: খাদ্য শুধু ক্যালরির ব্যাপার নয়, এটি মর্যাদার, ন্যায়ের এবং আমরা কেমন পৃথিবীতে বাস করতে চাই তার প্রতিচ্ছবি।’
তিনি এফএওুর নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী খাদ্য নিরাপত্তা ও শান্তি জোটের প্রশংসা করে বলেন, এটি ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তরুণরা সাহস ও আশায় ভরপুর হয়ে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। তাদের দাবি ছিল ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া, ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও আস্থার ভিত্তিতে সমাজ গঠন।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ তরুণরাই এখন নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে—যেখানে জনগণ শাসনের কেন্দ্রে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে আমরা ন্যায় ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করছে এবং মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে আছি ধান, সবজি ও স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে। কৃষকরা ফসলের নিবিড়তা ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং আমরা জলবায়ুুসহনশীল ১৩৩ প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করেছি, ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি, শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, অপুষ্টি কমিয়েছি, খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য এনেছি এবং কৃষিকে সবুজ করেছি— মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছি।’ সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলকে (আইএফএডি) বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের সহায়তার জন্য একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার ইতালির রোমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ইভেন্টের ফাঁকে আইএফএডির প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আপনাদের একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানাই। এমন তহবিল দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, তরুণ, কৃষক, নারী ও মৎস্য খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেবে।’
বৈঠকে দুই নেতা বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিল্প গড়ে তোলা, আম ও কাঁঠালের রপ্তানি সম্প্রসারণ, জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং মহিষের দুধ দিয়ে মোজারেলা চিজসহ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে সহায়তা।
অধ্যাপক ইউনূস আইএফএডি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং কৃষি, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা যাচাইয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর অনুরোধ করেন।
প্রত্যুত্তরে আইএফএডি প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগে কাজ করার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে আইএফএডি বাংলাদেশের কৃষিখাতে অর্ধডজনেরও বেশি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ফল প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, গুদাম সুবিধা ও আম-কাঁঠালের বৃহৎ পরিসরে রপ্তানিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আম রপ্তানি শুরু করেছি, তবে পরিমাণ এখনো কম। চীন বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম ও কাঁঠাল আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি জানান, বাংলাদেশের নারী দুগ্ধ খামারিরা মহিষের দুধ দিয়ে মোজারেলা চিজ তৈরি করছেন। তিনি এ খাত সম্প্রসারণে আইএফএডির সহায়তা চান।
বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রের মৎস্যসম্পদ নিয়ে আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশের জেলেরা এখনো অগভীর পানিতেই সীমাবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো গভীর সমুদ্রে যেতে সাহস পাই না। আইএফএডি এই খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আইএফএডি ৩৭টি প্রকল্পে অংশীদার হয়েছে, যার মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার সরাসরি আইএফএডি অর্থায়ন করেছে। বর্তমানে ৪১২ মিলিয়ন ডলারের ছয়টি প্রকল্প চলমান এবং আরও একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টার দিকে রোমে পৌঁছেন। তিনি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে অংশ নেবেন এবং সেখানে মূল অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং আইএফএডির এসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট ডোনাল ব্রাউন। সূত্র: বাসস
লুকানো নয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চান উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই, রাতের অন্ধকারে গোপন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ভোটের ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই ভোট দিতে পারেন না— এটা কেমন কথা ? তিনি ভোট সংগ্রহ করবেন, কিন্তু দিতে পারবেন না, এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। এবার আমরা তাদেরও ভোট দেওয়ার সেই ব্যবস্থা করছি।’
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেন, একটি জিনিস ধরে রাখেন—আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা অতি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, পার্টনার হিসেবে পাশে পেতে চাই। সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, এখানেও আপনাদেরও অবদান রাখতে হবে। আমি যেমন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের সবার একটি দায়িত্ব আছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি এবং পাশে পেতে চাই।
এনসিপির শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক যেহেতু আমাদের নির্ধারিত তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি। দেখেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল, তারাই কিন্তু এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন এটা আমি মনে করি না। কোনো অংশে তাদেরকে আমরা কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪-এর অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিল। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান, গণতন্ত্র চান, ভালো চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র উত্তরণের পথটা যাতে সুন্দর হয় সেরকম একটা পরিবেশের তারা সম্মতি দেবে।
চট্টগ্রামের ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগের মতো হবে না। আমি সাংবাদিকদের পূর্ণ সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে নিজের ভোট দিতে পারে নিরাপদ পরিবেশে। যাতে নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হতে না পারে সেই লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন বলেন, যখন আপনারা আমাদের সম্পর্কে প্রচার বা অপপ্রচার যা শুনবেন, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। আমরা এজন্য একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি। যাতে তথ্য পেলে আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়। সত্য হলে প্রচার করবেন।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সমস্যা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই-এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। সভায় বিভাগের নির্বাচন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
মন্তব্য