চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার আউটার রিং রোড সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা গেল, ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা।
মনের আনন্দে গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে ছেঁড়া জাল মেরামত করছিলেন জেলে কামাল মাঝি। জাল বোনার ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশের ভরা মৌসুমে তারা মাছ ধরতে পারছেন না। আয়-রোজগার নেই। অনেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তবুও সরকারি আদেশ তারা অমান্য করছেন না।
নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ামাত্র তারা নৌকা নিয়ে সাগরে বেরিয়ে পড়বেন। আর সেই প্রস্তুতিতেই জাল বোনা আর মেরামত চলছে।
ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৪ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। এরপর সাগরে রওনা হবে উপকূলের হাজার হাজার জেলে। এ জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ঝিমিয়ে পড়া চট্টগ্রামের জেলেপল্লীগুলো।
চট্টগ্রামে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৯২। এখানকার জেলেদের বিকল্প কোনো কাজ নেই। মাছ শিকার তাদের একমাত্র পেশা। যখন সাগরে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা চলে, তখন তারা জালের রশি বদলানো, ছেঁড়া জাল মেরামত ও মাছ ধরার নৌকা সংস্কার করে।
জাল বুনে সামান্য টাকা আয় হয় জেলেদের। এ টাকায় সংসার চলে না বলে জানিয়েছে তারা। এ জন্য অনেক ঋণের ফাঁদে পা বাড়ায়।
ফিশারীঘাট এলাকার জেলে আমিন মিয়া বলেন, ‘জাল তুনিলি দুই শততে দুইশ পঞ্চাশ টিয়্যা পাই। এগিন দিয়েরে আঁরার ঘর ন চলে। এতল্লাই সুদি গরি টিয়া লই। (জাল বুনলে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি দেয় মাঝি। তা দিয়ে তো সংসার চলে না। এজন্য একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি।)’
চট্টগ্রামের ফিশারীঘাটে সোমবার গিয়ে দেখা যায়, নোঙর করা ট্রলারগুলো প্রস্তুত হয়ে আছে সাগরে যাওয়ার জন্য। ট্রলারে জাল, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলতে ব্যস্ত জেলেরা। মৎস্য আড়ৎগুলোতে জেলেদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ করছেন মহাজনেরা।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার করতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে সরকার।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। গত কয়েক বছরের চেষ্টায় মা ইলিশ রক্ষায় সফলতা এসেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা এখন ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকছেন। তাই নির্বিঘ্নে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারছে।
মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। এ জন্য আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পরে ১৮ দিন মিলিয়ে ২২ দিন বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যত দ্রুত সম্ভব ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন।
ওই সময় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এতে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম এবং ব্যাপক হারে আমদানি ও সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
সভায় রমজানে লোডশেডিং না রাখা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এতে বলা হয়, ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
‘গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একটা অংশ হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন, শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহিদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
‘দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষতে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব। সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা সরকার খতিয়ে দেখবে।’
আরও পড়ুন:গণমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। আর ৯৪ শতাংশ মানুষ শোনেন না রেডিও।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, খবরের বাহন হিসেবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি, তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তারা।
জরিপে দেখা যায়, মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনও মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে রেডিওর প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে।
জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা। তবে বেশির ভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
গণমাধ্যমবিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ হিসেবে ৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি।
জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন, তারা টেলিভিশন দেখেন।
পরিসংখ্যানে রেডিওর অবস্থা বেশি নাজুক। ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তারা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।
এ বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে সাত জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউজহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের সদস্য থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।
এতে দেখা যায়, মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা।
সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার সাত শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে ১৬.৫ শতাংশ।
কোনো কিছু শেখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এ ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।
আরও পড়ুন:ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ধাপে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ছয় হাজার ৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মেধার ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে ৩০ চাকরিপ্রার্থীর করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ফলে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়। বৃহস্পতিবার সেই রুলের ওপর রায় দেওয়া হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফয়েজ উদ্দিন আহমদ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান ভূইয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী ও আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব।
২০২৩ সালের ১৪ জুন ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ৬ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করে গত ৩১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৩১ অক্টোবরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসরণ করে উপজেলাভিত্তিক মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের জন্য প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ আদেশ সংবলিত নির্দেশনা জারি করে। এ সংক্রান্ত আদেশ অনুসারে নির্বাচিত প্রার্থীদের অনুকূলে ২০ নভেম্বর নিয়োগপত্র ইস্যু করার কথা ছিল।
ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণের অভিযোগ তুলে ফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগবঞ্চিত ৩০ প্রার্থী গত নভেম্বরে রিটটি করেন।
রিটে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৩ জুলাই কোটা পদ্ধতি সংশোধনের পর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরের জারি করা পরিপত্রসহ আগের এ সংক্রান্ত সব পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ রহিত করা হলো। ফলে আগের কোনো আদেশ বহাল থাকছে না।
অথচ ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসরণ করা হয়েছে। এ অনুসারে নারী কোটা ৬০ শতাংশ, পোষ্য কোটা ২০ শতাংশ, ৪ শতাংশ অন্যান্য কোটা ছিল।
এ রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিয়ে নিয়োগের কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
রুলে ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বিষয়ে ১১ নভেম্বরের নির্দেশনা সংবলিত স্মারক কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপাতত বহাল রাখেন। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত রুল ২৫ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার এ রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন।
বেলা ১১টার দিকে তারা শাহবাগ অবরোধ শুরু করেন। এতে মোড়ের চারপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধের আগে শহিদ পরিবারের স্বজনরা প্রায় এক ঘণ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সমাবেশ করেন।
ওই সময় তারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন।
১. প্রতিটি হত্যার বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের ১০ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে।
২. শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. শহীদ পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. শহীদ পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায্য সম্মানী দিতে হবে।
৫. শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানীর দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বজনদের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
অবরোধে অংশ নিয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে নিহত ইমন হোসেন আকাশের মামা বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল সরকার পতনের, কিন্তু যারা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, সেই হত্যাগুলোর বিচার এখনও হয়নি।
‘আমরা দাবি জানাই, দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং শহীদ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
গত বছরের ১৮ জুলাই নিহত শাকিলের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে শেখ হাসিনা হত্যা করেছে। আমরা তার বিচার চাই, কিন্তু ডক্টর ইউনূস আমাদের সহযোগিতা করছেন না কেন? তাই আমরা রাজপথে নেমেছি।
‘আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। আমাদের থাকার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়নি। আমরা কীভাবে বাঁচব? অথচ তারা আমার ছেলের রক্তের বিনিময়েই গদি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ লাখ বা দুই লাখ টাকা কোনো ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। আমাদের জন্য ন্যায্য সম্মানী ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘আমরা শুনেছি শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই অর্থ কোথায়? আমাদের সেই টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাংবাদিক মনির হায়দারকে।
তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ দিয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বিশেষ সহকারী হিসেবে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে লিয়াজোঁ এবং যোগাযোগ রক্ষায় ভূমিকা পালন করবেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
মনির হায়দার বর্তমানে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। দেশে ফিরে তিনি এ পদে যোগদান করবেন।
মনির হায়দার প্রায় তিন দশক ধরে দৈনিক পূর্বকোণ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, যায় যায় দিন, ইত্তেফাক ও মানবজমিন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির ৯ আসামিসহ সাজাপ্রাপ্ত ৪৭ আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাকি আসামিদের মধ্যে ২৫ জন যাবজ্জীবন এবং ১৩ জন ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। খালাসপ্রাপ্ত সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।
বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমান বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান খান ও মাকসুদ উল্লাহ।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল।
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বিচারিক আদালতের ওই রায় ছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ সিদ্ধান্ত। শেখ হাসিনাকে খুশি করতেই ২০১৯ সালে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওই রায় দিয়েছিলেন।
‘রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মী। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে সবাইকে খালাস দিয়েছেন।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথে সভা করার কথা থাকলেও বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টুসহ তার নেতৃত্বে মামলার অন্যান্য আসামিরা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদী স্টেশন এলাকায় ট্রেনে গুলি ও বোমা বর্ষণ করেন।
এ ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দিনই একটি মামলা করেন। পরে মামলাটির তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেলে তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে ৩ জুলাই জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। পাশাপাশি খালাস চেয়ে আপিল করেন আসামিরা।
এ ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর গত ৩০ জানুয়ারি শুনানি শেষ হয়। হাইকোর্ট সেদিন রায়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য