করোনাভাইরাসের কারণে পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে আগামী এক মাস ফ্লাইট বন্ধ রাখবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বিমানের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, সৌদি আরবের মদিনা, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, নেপালের কাঠমান্ডু ও কুয়েত রুটের সব ফ্লাইট বাতিল করা হলো।
এসব রুটে ফ্লাইট চালুর দিন ও তারিখ পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে।
তবে বাকি রুটগুলোতে বিমানের ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত থাকবে। সোমবার বিমানের ওয়েবসাইটের নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।
এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ ফোন কেটে দেন।
গত মার্চে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর বিভিন্ন দেশে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। জুলাইয়ের পর সব রুটেই বন্ধ করে দেয়া হয় ফ্লাইট।
সংক্রমণ কমতে থাকায় আগস্টের পর থেকে ফ্লাইটগুলো আবার চালু হতে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে শীতে সংক্রমণ বাড়ার পর আবার নিষেধাজ্ঞার পথে যাচ্ছে বিমান।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এরই মধ্যে জার্মানি ও ফ্রান্স নতুন করে লকডাউন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যও লকডাউন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় সংক্রমের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী শীত নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পর্যটকদের আপাতত ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিন এই দুটি জেলা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন রোববার বিকেল ৪টায় জানান, অনিবার্য কারণবশত ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণপ্রত্যাশী পর্যটকদের বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন থেকে জারি করা এক নির্দেশনায়ও ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সাজেক উপত্যকায় বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন এক হাজার চারশ’ পর্যটক।
খাগড়াছড়িতে দু’পক্ষের সহিংসতার ঘটনায় তিন পার্বত্য জেলার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’ প্ল্যাটফর্মে শনিবার সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়া হয়।
এদিন সকাল থেকে পার্বত্য জেলাগুলোতে শুরু হয় এই অবরোধ। পাশাপাশি রাঙামাটিতে যৌথ পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে।
সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সকাল ও দুপুরে এসকর্ট মিলিয়ে ১০০-১১০টি জিপ, ৫০টির মতো মাহেন্দ্র ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা সাজেকে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেকে এসেছেন।
‘হঠাৎ অবরোধের ঘোষণা আসায় পর্যটকরা আর খাগড়াছড়ির উদ্দেশে ফিরে যেতে পারেননি। শনিবার পর্যটকরা সাজেকেই কাটিয়েছেন। আগামীকাল রোববার এসকর্ট ছাড়বে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি চাই থোয়াই চৌধুরী জয় বলেন, ‘সাজেকে বর্তমানে এক হাজার চারশ’ জনের মতো পর্যটক অবস্থান করছেন। যেহেতু পর্যটকরা ফিরে যেতে পারেননি, তাই আমাদের রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের থাকার খরচ আজকের জন্য ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকালও পর্যটকরা ফিরতে না পারলে তাদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ ভাড়াই রাখা হবে।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার ঢাকায় আয়োজিত বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার সমাবেশ থেকে এই অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছে সৌদি আরবের প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ অঞ্চল আল-ফাও।
নতুন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দেশটিতে ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের সংখ্যা দাঁড়াল আটটি।
সৌদি আরবের ঐতিহ্য ও প্রাচীন ইতিহাস পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধন। বাণিজ্যপথ হিসেবে বরাবরই এ অঞ্চলটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে এসেছে। মানুষের হাজার বছরের আবাস রয়েছে এ প্রাচীন ভূমিতে।
সৌদির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতা সমৃদ্ধি লাভ করেছে, যার অনেক কিছুই এখনও অজানা। ওই অঞ্চলের বিশেষত্ব হলো সেটি এখনও অতীত দিয়ে অনেকটাই প্রভাবিত।
প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ আল-ফাও অঞ্চল
আল-ফাও প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আবিষ্কারের অপেক্ষায় রহস্যঘেরা কারইয়াত আল-ফাউ শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানে। সৌদির কেন্দ্রস্থল আল-ফাও পঞ্চম শতাব্দীতে এসে রহস্যজনকভাবে পরিত্যক্ত হয়।
সৌদি আরবের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অসাধারণ ঐতিহাসিক নিদর্শন আল-ফাও। এখানে প্রায় ১২ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শেষ প্রাক-ইসলামিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব নিদর্শন প্রমাণ করে ছয় যে, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তত তিনটি ভিন্ন জনগোষ্ঠীর বসতি ছিল।
যেভাবে যাওয়া যাবে আল-ফাও এলাকায়
আল ফাও প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল সৌদির রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ওয়াদি আল-ডাওয়াসির থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এম্পটি কোয়ার্টারের উত্তর-পশ্চিমে এবং টুওয়াইক পর্বতমালার কাছে অবস্থিত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে আল-ফাও দর্শনীয় স্থান। আল-ফাওয়ের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্রের জীবনযাপনের ছোঁয়া রয়েছে। এর সৌন্দর্য কালের স্রোতে অপরিবর্তিত থেকে গেছে।
ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে প্রতি পদক্ষেপেই ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে আবিষ্কার করতে পারবেন, যা ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আল-ফাও এলাকা সংরক্ষণ ছিল যথেষ্ট দুরূহ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অত্যন্ত উন্নতির ফলে সহজেই পর্যটকরা তা ঘুরে আসতে পারবেন। একসময় সেখানে উট বা ঘোড়া ছাড়া যাওয়ার চিন্তাও করা যেত না।
রিয়াদ এবং জেদ্দা থেকে নাজরান বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট চলে। সড়কপথে নাজরান থেকে আল-ফাওয়ের দূরত্ব দুই ঘণ্টার। সৌদিয়া, ফ্লাইনাস ও ফ্লাইআইডিলের মতো বিমান সংস্থা নিয়মিত তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে।
নাজরান থেকে আপনি একটি গাড়ি ভাড়া করতে পারেন অথবা আল-ফাওয়ের একটি ট্যাক্সি নিতে পারেন। আল-ওয়েফাক রেন্ট-এ-কার এবং লুমিরেন্টাল থেকেও আপনি গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
আল-ফাওয়ের কাছে থাকার জন্য পাওয়া যাবে বেশ কিছু গেস্টহাউজ, যেগুলোতে স্থানীয় ঐতিহ্য, খাবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। আর যদি রিয়াদে থাকেন তবে, সে সুযোগে সৌদি রাজধানী এবং এর আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন।
‘দ্য সিটি অফ আর্থ’ নামে পরিচিত দিরিয়াহ ১৭২৭ সালে সৌদি রাজ্যের জন্মস্থান হিসেবে খ্যাত। এখানে আত তুরাইফের ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যে তালিকাভুক্ত স্থান রয়েছে, যা সৌদি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অত্যাধুনিক বুজাইরি টেরাসে বিভিন্ন দেশের রেস্তোরাঁ রয়েছে। চার তারকা রেস্তোরাঁগুলোতে সৌদি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন সহজেই।
স্থানীয় ক্যাফেগুলোতে সৌদি কফির প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে ভুলবেন না।
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে ‘দ্য এজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে বেড়িয়ে পড়তে পারেন। গাড়িতে গেলে এটি রাজধানী শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
রাজধানী রিয়াদে পছন্দসই বাজেটে নানা রকম ট্যুর প্যাকেজ ও আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। এখানে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
রিটজ-কার্লটন রিয়াদ, কিংডম সেন্টারের ফোর সিজন হোটেল রিয়াদ, র্যাডিসন ব্লুসহ আরও অনেক হোটেল রয়েছে, যেখানে একা কিংবা পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকা যাবে।
সহজ অনলাইন ই-ভিসা ব্যবস্থা
কিছুদিন আগেও সৌদি ভ্রমণ খুব সহজ ছিল না। এখন ৬৬টি দেশের নাগরিক ই-ভিসার মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে দ্রুত ও সহজে ভিসা পেতে যান। জি-সি-সিভুক্ত দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা শেনজেন ভিসাধারী এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাৎক্ষণিক ই-ভিসা পেতে পারেন।
ভ্রমণের সময় যেকোনো সমস্যায়, ‘ভিজিট সৌদি’ ট্যুরিস্ট হেল্পলাইন ৯৩০ থাকবে আপনার পাশে।
আরও পড়ুন:পর্যটকদের জন্য বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফোর্বসের পর্যটকদের জন্য অ্যাডভাইজার লিস্টে এমন তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১১ জুলাই প্রকাশিত এই তালিকায় তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ শহরকে হাইলাইট করেছেন ফোর্বস উপদেষ্টারা।
তালিকা অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে ভেনেজুয়েলার কারাকাস, যার স্কোর রেটিং ১০০ তে ১০০। দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে করাচি, শহরটির স্কোর ১০০ তে ৯৩ দশমিক ১২। এছাড়া মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ১০০ তে ৯১ দশমিক ৬৭ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
এ তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে- নাইজেরিয়ার লাগোস ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা। এরপরই ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার স্কোর ৮৯ দশমিক ৫০।
এছাড়া কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা সপ্তম, মিসরের রাজধানী কায়রো অষ্টম, মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি নবম এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো দশম স্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুর শূন্য স্কোর নিয়ে প্রথম, জাপানের টোকিও ১০ দশমিক ৭২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় এবং কানাডার টরন্টো ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে।
এছাড়া চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে- অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জুরিখ ও ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন।
মূলত সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করে বিশ্বের ৬০টি শহর নিয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে ফোর্বস। এর মধ্যে রয়েছে- অপরাধ, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা।
আরও পড়ুন:মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে একসময় যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে, তবে পেঁয়াজু ও শিঙাড়ার দোকানে ধীরে ধীরে ভোক্তা বাড়তে থাকায় তাকে আর যেতে হয়নি প্রবাসে।
দোকানে দুই ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন এ ব্যক্তি। দূরদুরান্ত থেকে লোকজন আসছেন তার বানানো পেঁয়াজু ও শিঙাড়া খেতে।
ক্রেতারা বলছেন, এখানকার পেঁয়াজু অন্যান্য স্থানের চেয়ে মচমচে ও বেশি সুস্বাদু। একবার খাওয়ার পর নিয়মিত আসেন অনেকে।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার ভোজনরসিকরা দোকানটিতে আসেন পেয়াজু ও শিঙাড়ার স্বাদ নিতে।
সড়কের পাশেই চেয়ার-টেবিলে পরিবশেন করা হয় শিঙাড়া ও পেঁয়াজু। অনেকে আবার দাঁড়িয়ে খেতে থাকেন।
ক্রেতার কমতি না থাকায় বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয়ে পেঁয়াজু ও শিঙাড়া বিক্রি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
স্থানীয় ক্রেতাদের জন্য ছোট্ট দোকানটির মধ্যে চোকি দিয়ে বানানো হয়েছে বসার স্থান।
পেঁয়াজুতে বাজার থেকে কেনা বেসন ব্যবহার করেন না আবদুস সালাম। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে নিজেই মিল থেকে পিষে আনেন বেসন। পেঁয়াজের পরিমাণ বেসনের চেয়ে বেশি হওয়ায় বেশ মুখরোচক হয় পেঁয়াজু।
ব্যবসায় আবদুস সালামকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূ। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার পেঁয়াজু ও শিঙাড়া বিক্রি হয় দোকানটিতে।
যা বললেন আবদুস সালাম ও তার ছেলে
এ ব্যবসায়ী ও তার ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানে শিঙাড়া ও পেঁয়াজু বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে আয় হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত গ্রামের বিয়ে কিংবা খানা বাড়িতে রান্নাবান্নার জন্য দাওয়াত পেতাম, তবে রান্নার অনুষ্ঠান তো আর প্রতিদিন হয় না। সেই ফাঁকে গ্রামের বাজারে বড়া (পেঁয়াজু) ও শিঙাড়া ভাজা শুরু করি। বতর্মানে সেটাই পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিদিন আমার গড়ে ১৪০০ পিস শিঙাড়া ও ৪৫ কেজি করে পেঁয়াজ লাগে।
‘এই কাজে আমার দুই বেটার বউ, ছেলে ও আমার স্ত্রী সহযোগিতা করে থাকে। আমাদের পরিশ্রমটা একটু বেশিই হয়। কেননা খাবারের মান ভালো রাখার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিছন্নতার জন্য বাড়তি সময় ব্যয় করা লাগে।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমি আয়ের জন্য বিদেশ যাওয়ার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন আল্লাহ খুব ভালো রেখেছে। আয়-রোজগারও বেশ ভালোই হয়। ছেলেপিলে নাতিপুতি নিয়ে খুব ভালোই আছি।’
আবদুস সালামের বড় ছেলে জুয়েল বলেন, ‘আমাদের এ বড়ার দোকান বেশ ভালোই চলে। দুপুর থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের দম ফেলার সুযোগ থাকে না। ১৩০০-১৪০০ পিস করে শিঙাড়া তৈরি করা এবং এক-দেড় মণ করে বড়া ভেজে বিক্রি করাটা সহজ কথা না। মাথার ঘাম পায়ে পড়ে যায়। আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
‘আমাদের এখানে অনেক দূর থেকেও মানুষ বড়া, শিঙাড়া খেতে আসে। আব্বা তো মাঝে বড়া, শিঙাড়া ভাজার কাজ করতে করতে মাজার (কোমর) সমস্যায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সে কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ রেখেছিলাম। দোকানটি এখন আমাদের পরিবারের সকলের আয়ের উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
ভোক্তাদের ভাষ্য
পেঁয়াজু খেতে আসা কৃষক আসমান আলী বলেন, ‘আমরা সারা দিন মাঠে কাজ করি। বিকেল হলেই সব কাজ সেরে সালাম ভাইয়ের পেঁয়াজুর দোকানে চলে আসি।
‘এলাকায় অনেক জায়গায় পেঁয়াজু ভাজে, তবে সালাম ভাইয়েরটার স্বাদ পুরাটাই ভিন্ন। এর স্বাদ কারোর সাথে মেলে না।’
বেশ দূর থেকে পেঁয়াজু খেতে আসা সামিউল বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে পেঁয়াজু, শিঙাড়া খেতে এসেছি। মূলত আমি এক ফেসবুক আইডিতে এ দোকানের পেঁয়াজুর স্বাদ সম্পর্কে জেনে ছিলাম।
‘আর আজ এসে খেয়ে দেখলাম। এককথায় সত্যিই অসাধারণ। না খেলে হয়তো এর স্বাদ বোঝা সম্ভব হবে না।’
গৃহবধূ জরিনা বলেন, “আমার মেয়ে বিকেল হলেই বলবে, ‘মা, শিঙাড়া খাব।’ আর না খেয়ে থামবে না। বাড়ির পাশে হওয়ায় আমি নিজেই এসে কিনে নিয়ে যাই।
“মেয়ের জন্য আমাদের খাওয়া হয়ে যায়। সত্যি বলতে এই দোকানের স্বাদ সব জায়গার থেকে আলাদা।”
আরও পড়ুন:হজ ও ওমরাহ পালন করতে প্রতি বছর সৌদি আরবের পবিত্র নগর মক্কা ও মদিনায় যান বিশ্বের ধর্মপ্রাণ বিপুলসংখ্যক মুসলমান। এর বাইরেও সৌদিতে রয়েছে দর্শনীয় অনেক স্থান।
সৌদি ভ্রমণে দীর্ঘদিন বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পর্যটকদের জন্য এখন সেটি অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। ভ্রমণকারীদের জন্য দেশটি দুয়ার খুলে দিয়েছে, যাতে করে পর্যটকরা সেখানকার সব আকর্ষণীয় ও ধর্মীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।
অবকাশযাপন, বোমাঞ্চ বা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে দূরদুরান্তের মানুষ এখন সৌদিতে ভিড় জমাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি পর্যটকরাও, তবে আপনি যদি প্রথমবারের মতো সৌদি আরব বেড়াতে যেতে চান, তাহলে কিছু বিষয় জানা জরুরি।
সহজ ভিসা প্রক্রিয়া
বাংলাদেশিদের জন্য এখন সৌদিতে ওমরাহ, ট্যুরিজম বা স্টপওভার ভিসার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ফলে সৌদি ভ্রমণ হয়ে উঠেছে আগের তুলনায় অনেক সহজ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও শেনজেন ভিজিট ভিসা আছে এমন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা অন অ্যারাইভাল ভিসার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তা ছাড়া সম্প্রতি চালু হওয়া ৯৬ ঘণ্টার স্টপওভার ভিসা ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার আগে সৌদিতে ৯৬ ঘণ্টা সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে দেশটি স্টপওভার হিসেবে বাংলাদেশিদের জন্য চমৎকার গন্তব্য।
বাংলাদেশ থেকে সহজলভ্য ফ্লাইট
সৌদির বিমান চলাচল খাত বিশ্বে অন্যতম প্রধান স্থান অধিকার করে আছে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে এই খাত কাজ করে। নতুন নতুন এয়ারলাইনস সৌদির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি দ্বিতীয় রুট হিসেবে চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত হয়েছে সৌদিয়া। এর আওতায় সপ্তাহে চারবার ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। জেদ্দা, মদিনা ও রিয়াদ থেকে ঢাকার বিদ্যমান রুটের সাথে এটি যুক্ত হবে।
সৌদিয়ার এ নতুন ফ্লাইটের পাশাপাশি বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা পর্যন্ত সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে ফ্লাইনাসও। ফলে বাংলাদেশ-সৌদির মধ্যে সংযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
পর্যটকদের কাছে সৌদির জনপ্রিয়তা
সৌদি ২০২৩ সালে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫৬ শতাংশ বেশি। এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের সাত বছর আগেই ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন পর্যটক নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (ইউএনটিডব্লিউও) ২০২৪ সালের ব্যারোমিটার রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে সৌদি।
নারীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা
আন্তর্জাতিক সূচক অনুসারে, জি২০ দেশগুলোর মধ্যে সৌদি সবচেয়ে নিরাপদ। এ ছাড়া টানা তৃতীয়বারের মতো মদিনা সারা পৃথিবীর মাঝে একা ভ্রমণকারী নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশের রেটিং দিয়েছে ইনশিওরমাইট্রিপ।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্থান
১০ হাজারের বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাতটি স্থান আছে সৌদিতে। স্থানগুলো হলো উরুক বানি মা’রিদ, হিমা সাংস্কৃতিক অঞ্চল, আল-আহসা মরুদ্যান, হাইল অঞ্চলের পাথর শিল্প, ঐতিহাসিক জেদ্দা, মক্কার প্রবেশদ্বার, আদ-দিরিয়াহ্র আত-তুরাইফ জেলা ও হেগরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
ডাইভারদের জন্য স্বপ্নের জায়গা
সৌদি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ডাইভিং স্পট। লোহিত সাগর উপকূল আর আরব সাগরের আদিম পানি, সাদা বালির সৈকত, সমৃদ্ধ প্রবাল প্রাচীর ও চমৎকার কিছু জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার মতো আছে অনেক কিছুই। সুন্দর ও দুর্লভ কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর দেখাও পেতে পারেন ডাইভার।
পর্যটকদের হঠাৎ চোখে পড়ে যেতে পারে মিনিটে ১০৯ কিলোমিটার গতিতে চলা পৃথিবীর দ্রুততম মাছ ব্ল্যাক মার্টিন কিংবা বিপন্ন প্রজাতির নেপোলিয়ন ফিশ, যেটি কুইন অফ দ্য কোরাল রিফ নামেও পরিচিত।
লোহিত সাগর এলাকার আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল এবং তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। ফলে সাঁতারু ও ডাইভাররা বছরজুড়েই পাবেন উষ্ণ পানি।
আতিথেয়তা
আতিথেয়তাকে সৌদিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। এটি এ দেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষত পর্যটকদের সঙ্গে উদার ও সদয় আচরণের জন্য সৌদির মানুষ পরিচিত। তাই ভ্রমণকারীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার আশা করতেই পারেন। এ ছাড়া দেশটিতে সুনির্দিষ্ট পোশাক পরার বিধান অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। আর নারীরা চাইলেই গলায় রঙিন স্কার্ফ কিংবা দেশটির ঐতিহ্যবাহী ঢিলেঢালা লম্বা পোশাক আবায়াও পরতে পারেন।
ঐতিহ্যবাহী বাজার
নামকরা ফ্যাশন ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ব্র্যান্ড সংবলিত আধুনিক ও বিলাসবহুল অনেক শপিং মল সৌদিতে আছে। সেই সঙ্গে আছে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী বাজার বা সুউক। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় আল বালাদের রাস্তাগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে।
ঐতিহাসিক নাইটস রুফটপ ক্যাফে থেকে উপভোগ করুন জেদ্দার আকাশ আর প্রদর্শিত শত শত প্রাচীন জিনিসপত্র। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘ঐতিহাসিক জেদ্দা’ কিংবা পুরোনো শহর নামে পরিচিত জেদ্দার আল বালাদ জেলা।
সপ্তম শতকের প্রাচীন ভবনের দেখা মিলবে এ জায়গায়। এর অসাধারণ স্থাপত্য দেখে দর্শনার্থীদের মনে হতে পারে যে, তারা অনেকটা সময় পিছিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া আগ্রহী ক্রেতাদের জন্য এর রাস্তায় রাস্তায় আছে অনেক পণ্য।
আল বালাদের ভিড়ে ভরা বাজারগুলোতে মিলতে পারে অনেক গুপ্তধনের দেখা। পুরোনো শহরেই আছে সাতটি সুউক। সুউক আল আলাউয়ি নামক জেদ্দার সবচেয়ে পুরোনো সুউকটিও এখানেই অবস্থিত। চামড়ার জিনিস, আরবীয় সুগন্ধি, গহনা, পোশাকসহ আরও অনেক পণ্যসম্ভারের কারণে স্যুভেনির কেনাকাটার জন্য স্থানটি দারুণ।
আরও পড়ুন:ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর পর্যটকের ঢল নামে সিলেটে। পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আর হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ ফাঁকা পাওয়া যায় না। আগাম সব বুকিং হয়ে যায়।
তবে এবার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এবার ঈদের দিন ভোর থেকে তীব্র বন্যা দেখা দেয় সিলেটে। ঝুঁকি বিবেচনায় ওইদিনই সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।
পর্যটক না আসায় সিলেটের হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলোও ফাঁকা পড়ে আছে। ঈদের মতো একটি বড় উপলক্ষ ঘিরেও পর্যটকরা না আসায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। সবমিলিয়ে বড় ধাক্কা এসে লেগেছে সিলেটের পর্যটন খাতে।
ক্ষতি বিবেচনায় রোববার থেকে কিছু পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তেমন পর্যটক আসেননি সিলেটে। বন্যায় সিলেটে পর্যটন খাতের ক্ষতি পাঁচশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে জানিয়েছে সিলেট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
পর্যটক না আসায় বড় ক্ষতির কথা জানিয়ে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল সিটির মহাব্যবস্থাপক মৃদুল দত্ত মিষ্টু বলেন, ‘প্রতিবারই ঈদের সময় আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। নতুন করে এ সময় বিনিয়োগও করা হয়। ঈদের ছুটিতে প্রতিবারই ভালো ব্যবসা হয়। কিন্তু এবার খুবই খারাপ অবস্থা। ঈদের পর থেকে পুরো হোটেল প্রায় ফাঁকা। কোনো অতিথি নেই। অথচ অন্যান্যবার ঈদের সময় অতিথিদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়।’
সিলেটের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। সবসময়ই এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। আর ঈদের সময়ে তো পা ফেলারও জায়গা পাওয়া যায় না। তবে এবার ঈদের দিন থেকে এই পর্যটনকেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রোববার থেকে এটি পুনরায় চালুর ঘোষণা দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে সোমবার জালফংয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ফাঁকা পুরো পর্যটন এলাকা। নেই কোনো পর্যটক।
জাফলং এলাকার গুচ্ছগ্রাম দিয়ে এখানকার মূল পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন পর্যটকরা। পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করেই এই এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই-একটি ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। যেগুলো খোলা আছে সেগুলোতেও ক্রেতা নেই।
জাফলংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ছবি তোলার কাজ করেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘এবার ঈদের মৌসুমটা একেবারে মন্দ গেছে। কোনো পর্যটক আসছেন না। পর্যটক না আসায় আমরা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছি।’
এই এলাকার গ্রিন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবুল আহমদ বলেন, ‘এবার ঈদের পর রিসোর্টে কোনো অতিথি আসেননি। করোনার সময় একবার এমন অবস্থা হয়েছিল। এছাড়া আর কখনোই এমন মন্দায় পড়তে হয়নি।’
জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হোসেন মিয়া বলেন, ‘পর্যটকদের ওপর আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে। জাফলংয়ে প্রায় ৬০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোর মালিক, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
‘ঢলের পানিতে অনেকের দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। অনেকের মালামাল ভেসে গেছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এই ভরা মৌসুমে ব্যবসা করতে না পারায় এই লোনের কিস্তি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
কেবল জাফলং নয়, সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্রেই এখন এই অবস্থা। সাদাপাথর, রাতারগুল, লালাখাল, বিছানাকান্দিসহ কোনো পর্যটন কেন্দ্রেই এবার ঈদ মৌসুমে পর্যটক আসেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষা মৌসুমে সিলেটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয়। এখানকার পাহাড়, ঝর্না, হাওর, জলাবরণ, নদী- বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করে। তাই এ সময়ে সিলেট অঞ্চলে পর্যটক সমাগম হয় সবচেয়ে বেশি। এবার ঈদ পড়েছে বর্ষা মৌসুমে। তাই এবার বিপুল পর্যটক সমাগমের আশা করেছিলেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। তবে বন্যা তাদের সেই আশাও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে দুই বছর একেবারে স্থবির ছিল পর্যটন খাত। করোনার দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠার মুহূর্তে ২০২২ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে এই খাত। সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই আবারও বন্যার ধাক্কা লেগেছে পর্যটন খাতে।
সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বিছানাকান্দি। বর্ষা মৌসুমেই এখানকার নদী-ঝর্ণা-পাহাড় মোহনীয় রূপ নেয়। তবে এবার বর্ষায় পর্যটক নেই বিছানাকান্দিতে।
বিছানাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য বছর বর্ষায় এখানে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। এবার একেবারেই পর্যটক আসছেন না। পুরো ফাঁকা পর্যটন কেন্দ্র।
তিনি বলেন, ‘বিছানাকন্দি পর্যটন কেন্দ্রে রেস্টুরেস্ট, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। এই ভরা মৌসুমেও এগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
বর্ষায় পর্যটকের ভিড় বাড়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরেও। বর্ষায় হাউসবোট নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে রাতভর ঘুরে বেড়ানো সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এবারের বন্যায় সেখানেও কোনো পর্যটক নেই।
সিলেট হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। সেসবের বেশিরভাগই এখন পুরো ফাঁকা।
এই সমিতির সভাপতি সুমাত নুরী জয়েল বলেন, ‘বন্যার কারণে পুরো বিভাগজুড়েই পর্যটক শূন্যতা ও পর্যটন খাতে মন্দা দেখা দিয়েছে। অনেক বড় বড় হোটেল-রিসোর্ট ৬০/৭০ পার্সেন্ট ছাড়ের ঘোষণা দিয়েও অতিথি পাচ্ছে না।’
সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘কেবল হোটেল-মোটেল নয়, সিলেটের একজন রিকশাচালক, একজন কাপড় ব্যবসায়ীও পর্যটকের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীমঙ্গল, জাফলংসহ কিছু এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য তো পুরোটাই পর্যটকদের ওপর নির্ভশীল। তার ওপর এখন সিলেটে পর্যটনের ভরা মৌসুম।’
তাহমিন বলেন, ‘বন্যা কমে গেলেও সিলেটে এখন পর্যটক ফেরানো যাবে না। কারণ বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের মনে বন্যা নিয়ে আতঙ্কও আছে। ফলে এই খাতে ক্ষতি আরও বাড়বে।’
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে টানা দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত সিলেট। পাহাড়ি ঢলে ২২ মে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। এই পানি কমার আগেই অতিবৃষ্টি ও ঢলে ১৩ জুন থেকে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর ১৭ জুন ঈদের দিন সকালে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকা। ওইদিনই সিলেটের প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য