ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বৃহস্পতিবার মাউশির ওয়েবসাইটে এ পাঠ্যসূচি প্রকাশ করা হয়। ১ নভেম্বর থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এ পাঠ্যসূচি তৈরি করেছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর আজ এটি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী ১ নভেম্বর থেকেই শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। জমাও দিতে হবে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে।
শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়বস্তু জানিয়ে দেবে।
করোনা মহামারির কারণে এবার স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
২১ অক্টোবর ওই ঘোষণায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৩০ দিনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে একটি অ্যাসাইনমেন্ট নেয়া হবে। তবে এর মাধ্যমে পাস-ফেল নির্ধারণ করা হবে না। এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা কোথায়, সে বিষয়ে ধারণা নেয়া।
ওই সময় ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা।
করোনাকালে অনলাইনে ও সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হলেও নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা সে সুবিধার বাইরে ছিল। ফলে তারা অনলাইন অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় পড়বে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে ছিলেন শিক্ষকরা।
এর মধ্যেই এ পাঠ্যসূচি দেয়া হলো।
দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং পত্রিকাটির সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শনিবার রাতে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
তাতে বলা হয়, ‘সরকারের দুর্নীতি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তুলে ধরে প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। হামলা-মামলাসহ নানামুখী নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে রুদ্ধ করা হচ্ছে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ বা ক্ষুধার কথাও জনগণ প্রকাশ্যে বলতে পারছে না।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র দেশের জনগণের পক্ষে স্বাধীনভাবে কথা বলবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক নানা আইন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এসব আইনের জেরে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং সাংবাদিক শামসকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা এর সর্বশেষ নজির।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের এহেন পদক্ষেপ দেশে মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ঐতিহ্যবাহী লালনক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সর্বোপরি বিবেকবান মানুষ হিসেবে এটি আমাদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
‘আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং এর প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনের স্বার্থে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর করা ‘মাছ মাংস আর চালের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদনকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা বলে অভিহিত করে এর নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সরকারের প্রতি শিক্ষক সমিতির দাবি, প্রথম আলোসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জিনাত হুদা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম আলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবিলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটিতে মূলত একজন শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, যে বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। অন্য একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে।’
প্রথম আলো পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থি। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।’
এতে বলা হয়, ‘এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ কোনো কোনো মহল প্রচার করছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশ করায় সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যদিও বাস্তবতা হলো, প্রকৃতপক্ষে অসৎ উদ্দেশে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে একজন শিশুকে সংবাদের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি বলেছে, ‘এই সংবাদ তাদের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’
প্রথম আলোর নাম উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই সংবাদপত্র ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।’
আরও পড়ুন:সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো হলো- শামসুজ্জামানের নি:শর্তে মুক্তি, শামসুজ্জামান ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনকারী জাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণঅভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের সাংবাদিককে চোরের মত আটক করা হয়। এটি একটি লজ্জার কথা। আমরা যখন পুলিশ, সিআইডির কাছে থেকে জানতে চাই শামস ভাই কোথায় তারা কোন সদুত্তর দিতে পারে না। যদি সে রাষ্ট্রদোহী কোনো অপরাধ করে থাকত তাহলে কেন ওয়ারেন্ট দেখিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি? রোবববারের ভেতর শামস ভাইকে মুক্তি না দিলে আরও কঠোর কর্মসূচি গঠন করা হবে।’
জাবির প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেছে। আমরা দ্রুত সেখানে গিয়েছি যাতে তাদের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। রমজানের দিনে মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা নিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে। অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে। আইনসম্মতভাবেই সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে সাভার সার্কেলের পুলিশের এএসপি শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছি। কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেটার দিকেও খেয়াল রাখছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রথম আলোর সাংবাদিক মো. শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন।
আন্দোলনকারীরা ‘নজরদারি মুক্ত গণমাধ্যম চাই’; ‘সংবাদ প্রকাশ কোন অপরাধ নয়’; ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’; ‘ফ্রি শামস’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মিছিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকতাকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখাচ্ছে এবং সাংবাদিকতা করার কারণে জেলে দেয়া হচ্ছে।
কথিত প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের চিহ্নিত করতে আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল রউফ মামুনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর ড. এম এল পলাশকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, স্যার এ এফ রহমান হল, কবি জসীমউদ্দীন হল, জগন্নাথ হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়া হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত প্রলয় গ্যাং নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর উত্থানের কথা জানা যায়। কথিত এই গ্যাং-এর সদস্যদের আচরণে বখাটেপনা ও উচ্ছৃঙ্খলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী এই গ্যাং কার্যক্রম কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী এই গ্যাং অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার জন্য এই আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রলয় গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কার হওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাইমুর রহমান দুর্জয় এবং অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাকিব ফেরদৌস। সাকিব। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় , দুজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাময়িক বহিষ্কারের এই অনুমোদন প্রদান করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না' মর্মে পত্রপ্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মর্তুজা মেডিকেল সেন্টারে এই দুই আসামি অবস্থান করছেন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীও উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর তাদের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্থানীয়দের হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার রাত ১০টার দিকে গেন্ডারিয়ার মুরগিটোলা মোড়ে প্রথম দফায় ও ১১টার দিকে বানিয়ানগর এলাকায় দ্বিতীয় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আহত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। তখন এক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুইজনকে আটক করে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
পরে রাত ১১টার দিকে আবু সুফিয়ান ও শিহাব নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরা অবস্থায় মুরগিটোলা মোড়ে চা খেতে গেলে হঠাৎ ৫০-৬০ জন স্থানীয় যুবক এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালান তারা।
এসময় তাদের চিৎকারে আরও আশেপাশে অবস্থান করা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে তাদের ওপরও আক্রমণ করেন স্থানীয়রা।
আহত সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি চা খাওয়ার জন্য আমার বন্ধুর সাথে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের আটকিয়ে কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করে। বানিয়ানগর থাকি বলতেই আমাদের ওপর অনেকগুলো ছেলে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে আর মারতে থাকে। আমরা আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালেও পাশে অবস্থান করা পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে যায়নি পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ১০-এর বেশি পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
হামলার শিকার শিহাব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মারধর করার পর পুলিশ এসে থামায়। কিন্তু বলতে থাকে তোরা জগন্নাথের স্টুডেন্ট এখানে আসছিস কেন? এই কথা বলেই পুলিশ আমাকে মারতে থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর আহতদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া দুই থানার ওসির সাথেই কথা বলেছি। থানায় অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ যে শিক্ষার্থীদের ওপর হাত তুলেছে সেই ভিডিওটিও ওসিকে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘এটা সূত্রাপুর থানা অধীনে। তবে ঘটনার সময় সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিল। তারা মারামারি থামিয়ে দিয়েছে। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তবে এ ঘটনায় আমাদের এখানে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’
সূত্রাপুর থানায় ওসি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় হামলার শিকার কেউ এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা তারা আসলে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। আর যেই দুজন কে আটক করা হয়েছিল তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত না। তাই তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য