বুধবার বেলা ১১টা। রাজধানীর সেগুনবাগিচার জতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফটক। সামনে বসা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। মুখে মাস্ক নেই বেশিরভাগের।
যারা অফিসে ঢুকছিলেন, তাদের অবস্থাও একই। মাস্ক নিয়ে উদাসীন।
অথচ তিন দিন আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর মাস্ক ছাড়া সেবা মিলবে না বলে আদেশ জারি করা হয়। এর আগে পরিকল্পনা হচ্ছিল, সরকারি অফিসে হবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি। তবে পরে বেসরকারি অফিসকেও যুক্ত করা হয়।
মাস্ক মাধ্যতামূলক করে এমন আদেশ এর আগেও হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি।
তবে এটাও ঠিক যে, মাস্কই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে, এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই। যদিও মাস্ক পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত এক মাস ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ কমলেও সরকার মাস্কের ওপর জোর দেয়ার কারণ ‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের’ আশঙ্কা। আগামী শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সরকার সতর্ক করেছে। এ কারণেই মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরাপের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে গত দুই দিন বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণ পরিবহনে দেখা গেছে, মাস্ক পরতে আগ্রহ কমই। কারও কারও মাস্ক ঝুলছে গলায়।
করেনাভাইরাস আগমনের শুরুর দিকে এই অফিসে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও এখন এই ব্যবস্থা নেই।
সেগুনবাগিচার অডিট কমপ্লেক্স মূল গেটে বসে থাকা তিন জন আনসারের একজনের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। সেবা নিতে আসা ১০ জনের মধ্যে তিনজনের মাস্ক ছিল না। তবে তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়নি কেউ।
পাশের বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি অডিট অধিদফতের মহপরিচালকের কার্যালয়ের সামনে মিনিট দশেক অপেক্ষা করে দেখা গেছে, ১০ জনের পাঁচ জন অফিসে ঢুকেন মাস্ক ছাড়া।
তবে সেখানে কাউন্টার থেকে ফিরে আসতে হয়েছে মুখে মাস্ক না থাকায়।
সেগুনবাগিচায় রাবডেম জেনারেল হাসপাতালেও একই চিত্র। প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কাউকে তা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
যদিও হাসপাতালের হেল্পডেস্কের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া কোনো গ্রাহককেই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে কিছু মানুষ মাস্ক পরে ভেতরে ঘুকে আবার খুলে ফেলছে।’
আলমগীর হোসেন নামের এক রোগী বলেন, ‘সব সময় মাস্ক পরে থাকতে ভালো লাগে না। কিছু সময় আগে মাস্ক খুলে ফেলছি।’
কারওয়ানবাজারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চিত্রও আলাদা কিছু ছিল না।
মাস্ক পরেননি এমন একজন নারীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে দ্রুত চলে যান।
টিসিবি ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্কে দায়িত্বরত তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘এই ভবনে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়া আসে। তাদের বের করে দেয়া হয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে মাস্ক পরতে। পুলিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভূমিকা রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের নামতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও কাজ করতে হবে।’
মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে, সবার সঙ্গে মিটিং করে বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছি। দেশে যত যত সিভিল সার্জন আছেন ও ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার আছে, সবাইকে বলেছি প্রচার করার জন্য।’
‘তারা স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, স্থানীয় সরকারের লোকজন, পৌরসভা, সব পর্যায়ে সবার সঙ্গে বসে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়টি প্রচার করবে। হুজুররা যেন ওয়াক্ত ও জুমার নামাজের আগে বা পরে এটা বেশি করে প্রচার করে। একটা ব্যানার করেছি আমরা’-বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।’
আগের অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত ২১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগ। আদেশ অমান্য করায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুলসংখ্যক মানুষকে জরিমানাও করে।
সংক্রমণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মাস্ক না পরে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
অবশ্য গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঘোষণায় এই আইন সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে বলা জেলা প্রশাসক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি জরিপে দেখা যায়, মাস্ক পরার প্রবণতা ক্রমেই কমছে। গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এই জরিপ করা হয়।
২৭ আগস্ট প্রকাশিত এই জরিপে দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরেন না। যদিও মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার ঝুঁকি কমে, এমন মত এসেছে ৯২ দশমিক ৯০ শতাংশ।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য