ঢাকার আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের সবগুলো বসে গেছে। এখন উপরে চলছে রেললাইন স্থাপনের কাজ।
তবে এখান থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নয় কিলোমিটার ভায়াডাক্ট বসেছে দুই একটা মাত্র। যেগুলো পিলার তৈরি হয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগেই পিয়ার হেড বসানো হয়নি। অথচ কাজ শেষ করতে হবে আর সোয়া এক বছরের মধ্যে।
নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণে আশা দেখানো প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় প্রায় চার বছর ধরে। সময় বাড়ানোর পর ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত আছে।
লক্ষ্য পূরণ করতে হলে তিন গুণ গতিতে কাজ শেষ করতে হবে। প্রায় চার বছরে কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেকেরও কম। বাকি সাড়ে ১৪ মাসে শেষ করতে হবে বাকি ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
করোনা পরিস্থিতিতে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকায় এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না- স্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক। শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে কী হবে, তা নিয়েও চিন্তিত তিনি।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করতে সরকারের হাতে সময় আছে ১৪ মাস। কাজের অগ্রগতি ফিফটি পার্সেন্ট। সেক্ষেত্রে সময়টা কম।’
উত্তরা থেকে মিরপুর আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল ও কমলাপুর পর্যন্ত যাবে দেশের প্রথম মেট্রোরেলটি।
প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে আগে সিদ্ধান্ত ছিল ২০১৯ সালে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ও বাকি অংশ পরে চলতি বছরের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হবে। তবে পরে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দুই ভাগে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। কাজ চলছিল সেভাবেই।
তবে চলতি বছরের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখার দেওয়ার পর লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ থাকে দুই মাসেরও বেশি। পিছিয়ে থাকে কাজ।
করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে আসায় কয়েক মাস পর কাজ শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এখনও সবাই কাজে ফেরেননি। বিভিন্ন দেশ থেকে মালামাল আনার ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে বাধা।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরপর সংকটের মধ্যে পড়ছি। হলি আর্টিজানের হামলার পর প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল। করোনায় আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি দুই মাস। সামনে শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তখন আবার হতে পারে বন্ধ থাকবে। তবে আমরা সামনের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও শেষ করতে পারব। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল শেষ করতে হয়ত একটু সময় বাড়বে।’
অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে মাটির নিচের কাজে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের কাজে শুরুর দিকের থেকে শেষের দিকেই অগ্রগতি বেশি দেখা যায়। তবে সেটা নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের উপর। একটি ঠিকাদারের কর্মততপরতা, অপরটি বাস্তবায়নকারী সংস্থার তদারকি।
‘তবে একটি অংশের কাজ শেষ হলেও, কারিগরি নানা বিষয় থাকে। তাই সম্পূর্ণ অংশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো অংশই চালু হবে না। পুরোটা একসঙ্গেই চালু করতে হবে।’
এ বিষয়ে এম এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাস্তবায়নের লক্ষ্য ২০২১ সালে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাই নতুন করে কর্মপরিকল্পনা করতে হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নের জন্য। সেই নতুন কর্মপরিকল্পনা ধরেই সকল কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
পিছিয়ে পড়ার কারণ
২০১৬ সালের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর কাজ বন্ধ ছিল প্রায় ছয় মাস। তারপরে আবার করোনার সময় বন্ধ ছিল দুই মাস। দুই মাস পর কাজ শুরু হলেও বিদেশি নাগরিকদের সবাই না আসার কারণে পুরোদমে কাজ হচ্ছে না।
করোনা মহামারির আগে প্রকল্পে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের মতো লোক কাজ করত। তার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক আছেন। বর্তমানে ৬০০ জনের মতো কাজে এসেছেন। বাকিরা জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা আসবেন না।
সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশি শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী হলেও বিদেশিরা অনুৎসাহী। কেউ কেউ আবার কঠিন শর্ত বেধে দিয়েছিল কাজে ফেরার ক্ষেত্রে।
ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি বিদেশিদের শর্ত।’
অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। প্রকল্পের টাকায় নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে নিতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজস্ব ক্লিনিক, সুরক্ষাব্যবস্থা, কর্মীদের বিচ্ছিন্ন রেখে সংক্রমণ ঠেকানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকেও একই পথে হাঁটতে হবে। এতে খরচ বাড়লেও তা মেনে নিতে হবে।’
এখন কাজ চলছে যেভাবে
সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও রেললাইন স্থাপনসংক্রান্ত কাজ সীমিতভাবে শুরু হয়।
১০ জনের একেকটা দল গঠন করে ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে দূরে কাজের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। থাকার জায়গাতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কোথাও দেয়াল, কোথাও দূরে দূরে বিছানা বসানো হচ্ছে।
উত্তরার ডিপো এলাকার ভেতরে ভবন হবে ৫২ টি। কিছু ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত, দেয়ালে দেয়া হয়েছে লাল টাইলস। কোনোটার আবার কাজ হচ্ছে।
উত্তরায় রয়েছে তিনটি স্টেশন। প্রথম স্টেশনে সিঁড়ি না বসলেও, অস্থায়ী সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে দেখা যায়, বিশাল এক হল রুম। এই হল রুমকে বলে কনকোর্স হল, যাত্রীরা এখান থেকে টিকিট কিনবে।
পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে আরও ছয়টি স্টেশনের কাজ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের দিকে চলছে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ।
সার্বিক অগ্রগতি
উত্তরা থেকে মিরপুর আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল ও কমলাপুর পর্যন্ত যাবে দেশের প্রথম মেট্রোরেলটি।
আগারগাঁও থেকে উত্তরার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের সবগুলো বসে গেছে। তবে এখান থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নয় কিলোমিটার পর্যন্ত ভায়াডাক্ট বসেছে দুই একটা মাত্র।
এই নয় কিলোমিটারে ভায়াডাক্ট বসবে যে সব পিলারের ওপর তার সবগুলো এখনও শেষ হয়নি। যেগুলো পিলার তৈরি হয়েছে, সেগুলো বেশিরভাগেই পিয়ার হেড বসানো হয়নি।
প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পরে এই উড়ালপথের ওপরই ট্রেনের জন্য লাইন বসানো হবে। এ প্যাকেজের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অথচ কাজের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আগারগাঁও থেকে উত্তরার মধ্যে মেট্রোরেলের মূল ডেকের ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেম, রোলিং স্টক (রেল কোচ) আর ডিপো সরঞ্জামসহ সমন্বিত অগ্রগতি ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এলাকায় চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। এখানে মেট্রোলাইনের পিয়ার হেড বসানো হচ্ছে। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৯০টি খুঁটির ওপর বসবে পিয়ারহেড। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যার ৩৭টি বসানো হয়েছে।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের অগ্রগতি হয়েছে ৪৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। ফলে বর্ধিত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটারের সামাজিক জরিপ চলছে।
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। বর্ধিত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার নিয়ে জরিপ চলছে।
জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক যোদ্ধা শাহ আলী। তিনি এক জন দিনমজুর। দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন একটি হাত। পুরো পরিবার এখন নির্ভরশীল তার এক হাতের ওপর।
ঘরে চার মেয়ে ও স্ত্রী আকলিমা বেগমকে নিয়ে আলীর সংসার। তার আয়ে কোনোরকম চলছে পরিবারটি।
এলাকায় কাজ না থাকলে ছুটতেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষিকাজ করে যে টাকা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে ভালোই চলছিল পরিবারটি।
দুই বছর আগে বগুড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় শাহ আলী হারিয়ে ফেলেন তার বাম হাতটি। একই বছর একমাত্র সম্বল বসতভিটা তলিয়ে যায় নদীতে, তবে এমন বাস্তবতায় তিনি থেমে থাকেননি। এক হাত নিয়েই ধরেন সংসারের হাল।
যদিও আগের চেয়ে তার উপার্জন কমেছে, তবুও পরিবারকে বাঁচাতে দিন রাত পরিশ্রম করে চলছেন শাহ আলী।
আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশাম গ্রামে। বর্তমানে চরখিতাব গ্রামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
শাহ আলী বলেন, ‘আমার জায়গা জমি বলতে ১৬ শতক ভিটেমাটি ছাড়া কিছু ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলতো। এলাকায় কাজ না থাকলে জেলার বাইরে ধান কাটতে যেতাম।
‘২০২১ সালে বগুড়ায় ধান কাটতে যাই সিএনজিতে করে। পথে ট্রাক আর সিএনজির ধাক্কায় আমার বাম হাতটি রাস্তায় পড়ে যায়। আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে স্থানীয়রা আমাকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। এক মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে আসি।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষত না শুকাতেই শুরু হয় নদী ভাঙন। এক রাতেই তিস্তা নদী আমার ভিটেমাটি কেড়ে নেয়। এরপর চলে যাই দ্বীপ চরে।
‘বছরে পাঁচহাজার টাকা ভাড়ায় ১০ শতক জমিতে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করছি।’
কৃষিকাজের বিষয়ে আলী বলেন, ‘আমি এই এক হাত দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই, মাটি কাটা, ইট ভাঙাসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকি। তবে আমার এক হাত নেই বলে আগের মতো কেউ আর কাজে নিতে চায় না। তাই এ চরের মধ্যেই কাজ করে খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে।
‘শরীরে যতক্ষণ দম আছে এক হাতেই কাজ করে যাব, তবুও ভিক্ষার মতো নিচু কাজ করব না।’
শাহ আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে মোটামুটি ভালো ছিলাম। স্বামীর হাত হারানোর পর প্রায় তিন বছর ধরে আমরা কষ্টে আছি। সরকার তিন মাস পর দুই হাজার দুই শ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়। আর এলাকায় কৃষিকাজ করে চলছে সংসার।
‘কষ্ট হলেও ওই মানুষটার এক হাতের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নাই। সংসারের খরচ বাড়ছে। আল্লাহ জানেন ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কী আছে?’
প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শাহ আলী ও তার পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এক হাতের ওপর চলছে পুরো সংসার। মেয়ের লেখাপড়া খরচ ও পরিবারের খরচ যোগান দিতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।’
এ বিষয়ে ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বলেন, ‘দুর্ঘটনায় এক হাত হারিয়ে শাহ আলী পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। সরকারি-বেসরকারি ভাবে পরিবার চলার মতো সাহায্য পেলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা কমবে।’
জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, ‘আরও খোঁজখবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তাসহ তাকে কীভাবে স্বাবলম্বী করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:খাদি ও রসমলাই। দুটো নাম দেশ ও দেশের বাইরে কুমিল্লার প্রতিনিধিত্ব করে। খাদি ও রসমালাইয়ের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও।
খাদি কাপড়ের পোশাক প্রক্রিয়া করে রপ্তানি করা হয়। খাদির কদর এখনও রয়েছে দেশ-বিদেশে। অন্যদিকে নানা উৎসবে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের জন্য দেশে থাকা স্বজনরা রসমালাই পাঠিয়ে থাকেন। দীর্ঘ বছরের এক পরম্পরা বেয়ে চলছে এ দুই পণ্য।
বাংলাদেশের ১৭টি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তালিকায় এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের নাম। সর্বশেষ স্বীকৃতি পায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা।
তালিকায় খাদি ও রসমালাইয়ের নাম না থাকায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিলে এ দুটি পণ্য জিআইয়ের স্বীকৃতি পেতে পারে বলে তাদের অভিমত।
পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম পণ্য হিসেবে জামদানি জিআইয়ের স্বীকৃতি পায়। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট ইলিশ, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি খিরসাপাত আম, ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মসলিন, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ক, শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ এবং বিজয়পুরের সাদা মাটি, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল বাগদা চিংড়ি, রাজশাহীর ফজলি আম, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম এবং ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
রসমালাই ও খাদির উৎপত্তি কুমিল্লায় কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেন, তবে ইতিহাসবেত্তাদের অনেকে মনে করেন, খাদি ও রসমালাই কুমিল্লার।
কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘খাদি ও রসমালাই কুমিল্লার মৌলিক পণ্য। এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। ১৯২৩ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক দেন। ওই সময় ভারতীয় উপমহাদেশে মোটা কাপড় পরিধান ও মোটা ভাত খাওয়ার আওয়াজ ওঠে। সে সময় খাদি কাপড় বানানোর প্রতিযোগিতা জোরদার হয়।
‘ওই সময় ভারতেও খাদি কাপড় তৈরির হিড়িক পড়ে। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরির ইতিহাস কমপক্ষে এক হাজার বছরের পুরোনো। পূর্বে কুমিল্লার মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও বুড়িচংয়ের ময়নামতি এলাকায় খাদি কাপড় বানানো হতো। রসমালাইও কুমিল্লার নিজস্ব পণ্য। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রসমালাই তৈরি করেন কুমিল্লার মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিআই পণ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এবং কুমিল্লার জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে। তাহলে কুমিল্লার খাদি ও রসমালাই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বেগ পেতে হবে না।’
কুমিল্লার সন্তান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘কালের বিবর্তনে ভারতে খাদি কাপড় তৈরিতে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। তারা কচুরিপানা, বাঁশ, তুলা ছাড়াও আরও নানা কাঁচা পণ্য দিয়ে খাদি কাপড় বানান। তাদের হ্যান্ডলুম মেশিনগুলোও অত্যাধুনিক। বিপরীতে কুমিল্লায় অল্প কয়েকটি পরিবার শুধু তুলা দিয়ে বর্তমানে খাদি কাপড় তৈরি করছেন। কুমিল্লায় খাদি কাপড় তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই।
‘কোনো একটি পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিছু ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার দরকার হয়, যেমন: ঐতিহাসিক ব্যাকগ্রাউন্ড, ইকোনমিক্যাল ভ্যালু ইত্যাদি, কিন্তু কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মানসিকতা কারও মধ্যে নেই। কোনো পণ্যকে ব্র্যান্ডিং করার প্রকল্প চালু হলে জেলা প্রশাসকরা নড়েচড়ে বসেন। অন্যথায় তারা এসব নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করেন না। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের জিআই স্বীকৃতি পেতে খাদিকে করতে হবে আধুনিক। রসমালাইয়ের জন্য দরকার জোর প্রচেষ্টা।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, ‘মানুষের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে। কুমিল্লার খাদিকে সময়োপযোগী করার প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে। কুমিল্লার খাদি ও রসমালাইয়ের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক।’
জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘রসমালাইয়ের জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন করেছি। এখানে যেসব আনুষ্ঠানিকতা পালনের দরকার, তা হচ্ছে।
‘আমাদের আশা রসমালাই জিআই স্বীকৃতি পাবে। রসমালাইয়ের পর আমরা খাদি নিয়েও কাজ করব। আগে রসমালাই স্বীকৃতি পেলে খাদি নিয়ে কাজ করাটাও সহজ হবে।’
আরও পড়ুন:২০২০ সালের শেষ প্রান্তিক। দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির থাবা। বেসরকারি অন্য অনেক খাতের মতো সংবাদমাধ্যমেও চরম অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ। ঠিক এমন সময়ে ‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আবির্ভাব হয় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ওই বছরের পয়লা অক্টোবর যাত্রা শুরু করা সংবাদমাধ্যমটি আজ পা রাখল চতুর্থ বছরে। দিবসের হিসাবে হাজার দিনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে নিউজবাংলা। মহাকালের পরিক্রমায় একে অতি দীর্ঘকাল বলা না গেলেও সংবাদমাধ্যমের বাস্তবতায় নিজেকে জানান দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেই সময়ে অসীম চ্যালেঞ্জের মধ্যে অমিত সম্ভাবনার পথে চলার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা শুরু থেকেই কোনো খবরের আদ্যোপান্ত জানানোর চেষ্টা করেছি পাঠকদের। সংবাদের পূর্ণাঙ্গ একটি গল্প বলেই আমরা দায়িত্ব শেষ করিনি; সেই সংবাদে নতুন মাত্রা যোগ হলে তা পাঠককে জানানোর তাগিদ অনুভব করেছি। আমাদের প্রতি আস্থা রেখে সেই প্রচেষ্টার প্রতিদান দিয়েছেন পাঠকরা।
সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারত্ব ছিল সবসময়ই আমাদের প্রাধান্যের শীর্ষে, যে কারণে আগে দেয়ার উত্তেজনা সামলে দেরিতে হলেও সঠিক সংবাদটি পাঠকদের জানাতে চেয়েছি। এ মনোভাব পাঠকের কাছে অনেক সংবাদমাধ্যমের তুলনায় আমাদের ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।
যেকোনো সংবাদের গল্পের খণ্ডিত চিত্রের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ দিক তুলে ধরার চেষ্টা ছিল বরাবরই, যা পাঠক মহলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাদারত্বকে তুলে ধরেছে।
পেশাদারত্বের অংশ হিসেবে আমরা প্রথম দিন থেকেই রোজকার জনদুর্ভোগ, সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তিগুলোকে তুলে ধরেছি ধারাবাহিকভাবে। আমাদের এসব সংবাদে টনক নড়েছে দায়িত্বশীল মহলের, তৈরি হয়েছে ভোগান্তি কমার পথ।
সংকট ও সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের জগৎ। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলো আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের রিপোর্টারদের বিরামহীন প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা জোগানো অদম্য মানুষদের কথা উঠে এসেছে একের পর এক।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিনিয়তই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। আমরা সেসব অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেই দায়িত্ব শেষ মনে করিনি; সেসব অনিয়মের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছি।
কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। শুরু থেকেই চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের সংকট ও সম্ভাবনাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে আমরা সামনে এনেছি। স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়মিতই উঠে এসেছে আমাদের সংবাদ গল্পগুলোতে।
সুস্থ মানুষ ছাড়া উন্নত জাতি গড়া যায় না বলে আমরা বিশ্বাস করেছি। সুস্থতার জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকে জরুরি মনে করা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে একমত হয়ে সেই দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ নিয়ে আমরা একের পর এক কনটেন্ট পরিবেশ করেছি। পাশাপাশি প্রতিকার নিয়েও কথা বলেছি।
স্বাধীনতার পর দেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সমাজে উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ এখনও বাস্তবতা। আমরা তা ভাঙার চেষ্টা করেছি। আমরা কথা বলেছি জেন্ডার নিয়ে, সচেতন করার চেষ্টা করেছি পাঠকদের। আমরা অনেকের কাছে ‘ট্যাবু’ হয়ে থাকা নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক ও যৌনতা নিয়ে কথা বলেছি। এ ধরনের কনটেন্ট পাঠক মহলে আমাদের ভিন্নতা তৈরি করেছে।
একটি দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তার অর্থনীতি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পাঠকদের নিয়মিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা উন্নয়নের মহাযজ্ঞগুলো যেমন তুলে ধরেছি, তেমনি বাধাগুলোও সামনে এনেছি।
সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব প্রচলিত ভুলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জয়জয়কারের যুগে অসত্য তথ্যকে সত্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া নতুন বিষয় নয়। আমরা সেসব অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করে সত্য তথ্যটা পাঠকদের দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আমাদের সংবাদে স্থান পেয়েছে। আমরা শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করেছি। তরুণদের কর্মসংস্থানসহ অন্য সমস্যাগুলো নিরসনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের তাগিদ অনুভব করেছি। বৃদ্ধদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে কথা বলাকে করণীয় মনে করেছি।
আমাদের চলার এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ভাইরাসজনিত মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভাঙতে থাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিন্যাস। আমরা সেই কঠিন সময়ে ঝড়ের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি। প্রতিটি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের চেষ্টা ছিল আমাদের। চেষ্টায় কতটা সফল হয়েছি, সেই বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
শুরুর পর থেকে আমরা ধীরে ধীরে এক হাজার দিনের মাইলফলক পেরিয়েছি। এ যাত্রায় আমরা টিকে ছিলাম পাঠকের আস্থায়। আমরা টিকে আছি তাদের ভালোবাসায়। আমরা বহু দূর যেতে চাই পাঠকের ভরসায়।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা
আরও পড়ুন:একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১২ সালের ২ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী সাবেক জামায়াত নেতা ও তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। এরপর কারাগার থেকে বের হয়েই সবার চোখের সামনে গড়ে তোলেন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সাম্রাজ্য। সেই এনজিও দেশ-বিদেশ থেকে আনছে বিপুল অর্থ।
বাচ্চু রাজাকারকে সহায়তাকারী কীভাবে দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও চালাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
ঘটনার সময় ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। ওই দিন একটি মাইক্রোবাস করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে প্রথমে আগারগাঁওয়ের নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখার পর ওই বছরের ২ এপ্রিল হিলি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন আবু ইউসুফ। এরপর কী করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলেন, তা নিয়ে দেশে শুরু হয় হইচই।
আবু ইউসুফ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীটি জানায়, গ্রেপ্তার আবু ইউসুফ পিসল্যান্ড কোম্পানির একটি মাইক্রোবাসে করেই বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন।
ওই গাড়িতে ছিলেন বাচ্চু রাজাকারের ছেলে মুহাম্মদ মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ, আবু ইউসুফ ও বাচ্চু রাজাকার। এরপর আদালতে নিজের জবানবন্দিতেও তার অপরাধ স্বীকার করেন আবু ইউসুফ। পরে এই অপরাধের দায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
এরপর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। এখন কী করছেন সেই আবু ইউসুফ, কোথায় আছেন তিনি, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজ করে জানা গেছে, তিনি এখন গড়ে তুলেছেন এনজিও সাম্রাজ্য। রাজধানীর শ্যামলী এক নম্বর রোডের ওয়ান বাই বি ঠিকানায় অ্যাসোসিয়শেন ফর ম্যাস এডভাসমেন্ট নেটওয়ার্ক (আমান) নামের একটি এনজিও পরিচালনা করেন তিনি। কাজ করছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমান ছাড়াও চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, আল ইমদাদ ফাউন্ডেশনের নামে কয়েকটি সহযোগী সংস্থাও চালাচ্ছেন এই আবু ইউসুফ।
এসব বিষয়ে কথা হয় আবু ইউসুফের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার এই প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ১৯৯৫ সালে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটা লোকাল ফান্ডে চলে। এরপর এটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১২ সালে আমি গ্রেপ্তার হয়ে ২ মাস ২২ দিন কারাকারে ছিলাম।
‘পরে ২০১৫ সালে এটা (এনজিও) আবার শুরু করি। এটা এখন দেশি-বিদেশি ফান্ডে চলে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর সাউথ আফ্রিকা থেকে টাকা আসে।’
বাচ্চু রাজাকারের পালিয়ে যাওয়ায় সহযোগিতার মামলার এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মামলা হাইকোর্ট স্টে দিয়েছে। সময়টা সঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২০১৫-২০১৬ সালে হাইকোর্ট এটা স্টে করে।’
‘গ্রেপ্তারের সময় আপনি জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন বাচ্চু রাজাকারকে আপনি পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।’
উল্লিখিত তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলাম।’
‘সে সেময় জামায়াতে ইসলামী আপনার পক্ষে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল?’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এনজিও ব্যুরোর সকল নিয়ম কানুন মেনেই ফান্ড রিসিভ করি এবং ব্যয় করি। আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বনায়ন, খাদ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করি। আমার কাজে কোনো সমস্যা নেই, থাকলে তো সরকার এটা বন্ধ করে দিত।’
এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময়
আবু ইউসুফের এনজিও পরিচালনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই রকম একজন অপরাধী কীভাবে হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এনজিও পরিচালনা করছে, সেটা অবশ্যই সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত হলে জানা যাবে কীভাবে সে এত বড় একটা অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এনজিও ব্যবসা করছে। আমাদের আইনেই আছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেই আছে ক্রাইমকে যে সহযোগিতা করে, ক্রিমিনালকে যে সহযোগিতা করে, সেও সমানভাবে অপরাধী। আবু ইউসুফ বাচ্চু রাজাকারকে পালাতে সাহায্য করেছে। তাই সেও অপরাধী।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যেহেতু এটা যুদ্ধাপরাধের মামলা, তাই এখন ট্রাইব্যুনালকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে হাইকোর্টে এই স্টে কনটেস্ট করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে এটা উঠে যাবে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধা থাকবে না।’
র্যাবের ভাষ্য
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবু ইউসুফকে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তিনি সম্ভবত এনজিও ব্যুরোর অনুমতিতেই আবার এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
‘এই এনজিও পরিচালনার মাধ্যমে তার কোন অপরাধের তথ্য যদি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা এনজিও ব্যুরো পায়, ওই সকল তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার সাতটি পয়েন্ট ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ।
এ ছাড়া রাণীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত দুই দিন ধরে সড়কপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
নদীতে পানির চাপ বাড়ায় জেলার ওই চার উপজেলার বেড়িবাঁধের ছয়টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। এখন চারিদিকে থইথই করছে পানি। বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় আসবাবপত্রসহ সবকিছুই পানির নিচে।
বাড়িঘরে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: নিউজবাংলা
বর্তমানে গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউবা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। রান্নার চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাবার তৈরির মতো কোনো ব্যবস্থা নেই তাদের।
বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। খাবারের জন্য ঘরে ঘরে হাহাকার শুরু হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা সেখানে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জরুরি প্রয়োজনে বাইরে কোথাও যেতে হলে এক বুক পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্ক রয়েছেন তারা।
বর্তমানে নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন নদীর পাড়ের মানুষজন।
আত্রাই উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, ‘চার দিন আগে ছোট যমুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। ঘরের মধ্যেও এক হাঁটু পানি। চার দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। গরু-ছাগল, মুরগিসহ এখন বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গবাদি পশুর খাবারের সংকট।
‘খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে রয়েছি আমরাও। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।’
একই গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ‘বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটাতে করতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে আছি। খাবারের সমস্যা। কী যে বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের একটা স্থায়ী সমাধান চাই। কয়েক বছর পরপর বাঁধ ভেঙে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আবার এমন অবস্থা। রান্না করতে পারছি না, খাদ্য সংকটে পড়েছি।’
নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘আত্রাই নদীতে পানির প্রচুর চাপ। বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়ক ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বেলা ১১টার দিকে ভেঙেই যায় বাঁধটি। রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ধসে যায়।
‘এতে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পুকুর ভেসে যাওয়ায় আমারই চার লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনের স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আরও সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে, তবে কী পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে, তা এখনও নিরুপণ করতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।
আরও পড়ুন:সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে হওয়া প্রবল বৃষ্টিতে সড়কের মাঝখান থেকে ধসে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে আশপাশের মানুষসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়তকারী পথচারীরা সমস্যায় পড়লেও সড়কটির সংস্কার নিয়ে একে অন্যকে দুষছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
নীলফামারীর ডোমার ইউনিয়ন সদরের চেয়ারম্যানপাড়ার বাইপাস রাস্তা ধরে মহাসড়কে উঠতে গেলেই দেখা মেলে সড়কের ওই ভাঙা অংশের।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়ক হওয়ার পর থেকেই এটি একটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে রাস্তাটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তার পুরোটা জুড়েই পিচ ও পাথর উঠে এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়েছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অনেকেরই যাতায়াতে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার পাথর উঠে গেছে। এটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
ভ্যানচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে রয়েছে ইট ভাটা। সবসময় এই রাস্তা দিয়ে শ্রমিকরা রিকশা-ভ্যানে করে যাওয়া আসা করে। ভাটার মাটিও এই রাস্তা দিয়ে আমরা নিয়ে থাকি। এমন একটি ব্যস্ত রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদেরও যাত্রী কমে গেছে। এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কিন্তু এখনও কেউ রাস্তা ঠিক করতে এলো না।’
শ্রমিক রাজ্জাক হোসেন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা থাকায় সারাদিনই অনেকেই এসে গাড়ি নিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। দ্রুত এই রাস্তা সংস্কার করা না হলে রাতের আঁধারে দুর্ঘটনায় পড়তে পারে মানুষ।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলার কথা হয় ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদের সঙ্গে। তবে রাস্তা সংস্কারের বিষয়টি এলজিইডির কাঁধে চাপালেন তিনি। বলেন, ‘তাদেরকে আমি ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কারের কথা জানিয়েছি, কিন্তু তারা এখনও কোনো গুরুত্ব দেখাচ্ছে না। আমি আরও দুয়েকদিন দেখব। তারপরও যদি তারা না আসে, তবে আমি নিজেই ঠিক করে দেব।’
তবে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেলেন ভিন্ন কথা। তাকে রাস্তার ব্যাপারে কেউ জানাননি বলে জানালেন। প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এখন জানলাম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।’
দুই পক্ষের মন্তব্য জানার পর এখন স্থানীয়দের একটাই প্রশ্ন- রাস্তাটি আসলে ঠিক হবে কবে?
আরও পড়ুন:সম্প্রতি ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন কথাবার্তা ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিল মাঠকর্মী স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদনও করেছিলেন ভুক্তভোগী দাবি করা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
তবে ঘটনার প্রায় এক মাস পর অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে উল্টো কর্তৃপক্ষের রোষাণলে পড়েছেন অভিযোগকারীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে বদলির আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিযোগকারীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করার কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বদলির ব্যবস্থা করিয়েছেন। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম ওই দুজনের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
২৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে বদলির আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক খান। আদেশে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহারকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাঠকর্মীদের গরু-ছাগল মনে করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণিসহ ৭৪ জন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী। এদের সবার পক্ষে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেন নাজমুন নাহার।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওসমান গণি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজ অফিসে আসার পর জানতে পারলাম আমাকে বদলি করা হয়েছে। কারণ আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করেছিলাম। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উনিই এই বদলির অর্ডার করিয়েছেন।’
সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন বাক্য ব্যবহার ও করোনাকালে টিকা কার্যক্রমের সময় আমাদের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটা লিখিত আবেদন করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা স্যারের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছিলাম, সেটার কারণেই বদলি করা হয়েছে। এছাড়া তো আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফাত আরাকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘এটা তো বলতে পারব না, কে বদলি করেছে। অভিযোগটা তো ডিজি স্যার বরাবর দিয়েছিল। এখন সেখানে কী হয়েছে, আমি বলতে পারব না এই মুহুর্তে। অনেক সময় ওখান থেকে কপি দেয়, আবার দেয় না।’
তবে অভিযোগের পর ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না- সে বিষয়েও তিনি জানেন না বলে জানান।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক বদলি। বহুদিন একটা জায়গায় থাকলে যেটা হয়।’
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পর কোনো তদন্ত হয়েছে কি না- প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বলেন, ‘সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য