নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনে উপনির্বাচনকে প্রহসন ও সাজানো উল্লেখ করে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম।
শনিবার বিকেলে আত্রাই উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, ভোটে কোনো রকম নিয়ম মানা হয়নি। তারা বিজয়ী হতে যা করার প্রয়োজন; তা করছেন। এটাকে কোনো নির্বাচন বলা যায় না।
‘এখানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক ও অভিন্ন। এই কমিশনের কাজের এবং কথায় কোনো মিল নেই। সরকারের এটি প্রহসনের নির্বাচন এবং সাজানো নির্বাচন। এই নির্বাচন আমরা মানি না’, বলেন বিএনপির প্রার্থী।
শেখ রেজাউল ইসলামের অভিযোগ, সব কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। সকাল থেকে ভোটের কোনো পরিবেশ ছিল না। তিনি নির্বাচন কমিশনারকে কয়েকবার তা অবগত করেছেন। তবে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখেননি।
বিএনপির প্রার্থীর আরও অভিযোগ, ভোট কেন্দ্র ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। যারা কেন্দ্রে গিয়েছে, তাদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙলের ছাপ) নিয়ে পরে ইভিএমে নৌকা মার্কার বাটন চেপে ভোট দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল, আত্রাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল জলিল চকলেট, শফিকুল ইসলাম বেলাল, মান্নান সরদার, জ্যেষ্ঠ সদস্য তসলিম উদ্দিন, যুবদলের আহ্ববায়ক একরামুল বারী রজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদের’ ব্যানারে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একদল কর্মকর্তা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে শনিবার আয়োজিত এক সমাবেশে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। সমাবেশে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠনের আহ্বায়ক কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আহসান উল্লাহ।
সাবেক সেনা কর্মকর্তারা মহাখালীর রাওয়া (অবসরপ্রাপ্ত আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন) কমপ্লেক্স থেকে সকাল ১০টার দিকে একটি শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রাটি বিজয় সরণি এলাকা প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ভারতের আধিপত্য ও আগ্রাসন নীতির বহিঃপ্রকাশ।
ভারতকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে স্বাধীন দেশের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কোনো প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ সহ্য করবে না।
পরিষদের সদস্যরা ভারত সরকারকে দুই দেশের মধ্যে সই করা সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের আহ্বান জানান।
ভিয়েনা কনভেনশনের উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, একটি মিশনের ওপর হামলা সংশ্লিষ্ট দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার সমতুল্য।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মনীশ দেওয়ান ও কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) লুৎফুল হক।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর পাওয়া গেছে। এমন ভুয়া খবর/গুজব প্রচারের তালিকায় দেশটির অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নাম এসেছে।
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রচারে এগিয়ে আছে ‘রিপাবলিক বাংলা’। এই গণমাধ্যমটি সর্বাধিক পাঁচটি গুজব প্রচার করেছে।
পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট। এরা প্রত্যেকে অন্তত তিনটি করে গুজব প্রচার করেছে। এছাড়া রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত দুটি করে গুজব প্রচার করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রচার করা এসব গুজবের মধ্যে ছিল- শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়া গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি এবং বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন এবং ওই চিঠিতে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও জানা যায়, শেখ হাসিনা এমন কোনো চিঠি দেননি। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে আসে, এই চিঠিটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে ভারতের আগরতলাভিত্তিক দৈনিক ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে তারিখসহ প্রকাশিত হয়। এরপর, ওই পত্রিকার স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে এবং পরবর্তীতে ভারতের ও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়।
৫ আগস্টের পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দাবি করা হয়, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ পুত্রের সন্ধান দাবিতে মানববন্ধন করছেন।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ব্যক্তি আসলে মুসলিম এবং তার নাম বাবুল হাওলাদার। ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করেছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। এ দাবির সঙ্গে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তির ছবিও প্রকাশিত হয়।
রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি ড. ইউনূসের নয়। ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের কিংবা বাংলাদেশেরও কোনো ছবি নয়। প্রকৃতপক্ষে ড. ইউনূস সুস্থ রয়েছেন।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে বেশ কিছু নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করে ভারতীয় গণমাধ্যম।
তবে, রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এই দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য ও প্রমাণ ছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমে এই মিথ্যা দাবি প্রচারিত হয়।
৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন। ট্রাম্পের বিজয়ের পর ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে গেছেন।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবি মিথ্যা। পালানোর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত বিমানের ছবিটি ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময়ের।
স্বাধীনতার পর গত ১৩ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সরাসরি পাকিস্তানের করাচি থেকে কনটেইনার বহনকারী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ‘সোয়াত’ নামের যে সামরিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে এসেছিল, সেই জাহাজ আবারও চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আরও দাবি করা হয়, ওই জাহাজে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র আনা হচ্ছে।
তবে, রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে এসব দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাহাজটির নাম ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’। এটি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং এর মাধ্যমে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য আনা হয়েছে।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ২৫ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে জামিন না-মঞ্জুর করা হয়। এর পর আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যানে তুলে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। এ সময় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।
সংঘর্ষের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, সাইফুল ইসলাম চিন্ময়ের আইনজীবী হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবি সঠিক নয়। চিন্ময়ের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা, সাইফুল ইসলাম নন।
ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে চ্যানেলগুলো এখনও সচল থাকতে দেখা যায়। একইসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বিষয়টি গুজব বলে রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করে।
ভারতীয় কতিপয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় চিকেন নেকের কাছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করবে। তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবি পুরোপুরি মিথ্যা।
লালমনিরহাটের বিমানবন্দর দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বন্ধ রয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এর কার্যক্রম পুনরায় চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সম্প্রতি, বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দু মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এই দাবি ভারতের কিছু গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ সুলতানপুর গ্রামে প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য। ভিডিওটি বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা রুটে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বাংলাদেশি ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটানোর দাবি করে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। আরও দাবি করা হয়, শ্যামলী পরিবহনের বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের স্থানীয়রা প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবিগুলোর কোনো সত্যতা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, দুর্ঘটনাটি মূলত ওভারটেকিংয়ের কারণে ঘটেছিল।
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির ছবি নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়। দাবি করা হয়, ওই ব্যক্তি রমেন রায়, যিনি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী। আরও বলা হয়, মুসলিমরা তার বাড়ি ভাঙচুর করে এবং হামলা চালিয়ে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করেছে।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রমেন রায় চিন্ময় দাসের আইনজীবী নন এবং তার মামলার সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রকৃতপক্ষে ২৫ নভেম্বর শাহবাগে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার-বিরোধী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্মসূচিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় রমেন রায় আহত হন। তবে তার বাড়ি ভাঙচুরের খবর বা কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে যেকোনো সময় জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমমে প্রচার করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা কেবল বাংলাদেশে নয়; বরং ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, ফ্রান্সসহ বিশ্বের অনেক দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন পরিকল্পিতভাবে অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ‘এই অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে চিত্রিত করছে।’
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শনিবার করা এক পোস্টে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও অধিকার গোষ্ঠীগুলোকে তিনি বাংলাদেশে এসে এ বিষয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।
শফিকুল বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। আমরা আশা করি, শীর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারপন্থি সংবাদপত্রগুলো কাউন্সিল দ্বারা প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনকে বিশ্বাস না করে তারা নিজেরা তদন্ত করবেন।’
তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে কেউ কেউ বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর বা বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা এ ধরনের বার্তার প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
শফিকুল বলেন, ‘আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে; যেভাবে তারা তদন্ত করেছিলেন ২০১৩ সালে হেফাজত কর্মীদের গণহত্যার বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লব-পরবর্তী দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন যে অতিরঞ্জিত, তা প্রমাণিত হয়েছে নেত্র নিউজের একটি প্রতিবেদনে।’
নেত্র নিউজ একটি শীর্ষ অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট এবং নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের জন্য তাদের খ্যাতি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের পর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অন্তত একটি বিবৃতি দেবে। কারণ, তাদের প্রকাশিত অতিরঞ্জিত প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেছে একটি শীর্ষ অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় তারা কোনো বিবৃতিও দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে নয়জন হিন্দু সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, কিন্তু এটা কোনোভাবেই সত্য নয়। তারা কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত হয়নি, বরং তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুর পেছনে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য কারণ ছিল।
‘এই একই সময়ে একই কারণে আরও বহু মানুষও নিহত হয়, যারা হিন্দুও নয়, সংখ্যালঘু নয়, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ।’
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘হিন্দুদের ওপর বিপ্লব-পরবর্তী হামলার প্রতিবেদনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ মিলিয়নেরও বেশি বার উদ্ধৃত করা হয়েছে। বিশেষ করে এটা প্রচার করছে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী একটি হিন্দু আমেরিকান গোষ্ঠী, ভারতীয় মিডিয়া এবং ভারতীয় ভাষ্যকাররা।
‘তারা বাংলাদেশ নিয়ে ভুল মেসেজ তৈরি করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।’
আরও পড়ুন:ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশ ড্রোন মোতায়েন করেছে মর্মে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, সীমান্তে ড্রোন মোতায়েন নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর ভুয়া ও বানোয়াট।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশ তার রুটিন কার্যক্রম ছাড়া দেশের কোনো অংশে কোনো ড্রোন মোতায়েন করেনি। খবরটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি সাজানো অভিযানের অংশ।’
এর আগে সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাছে তুরস্ক নির্মিত ড্রোন মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ। এমন খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি জোরদার করছে ভারত।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। হাসিনার পতনের পর সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, এমন গোয়েন্দা তথ্যের পটভূমিতে নড়েচড়ে বসেছে ভারত।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, ভারত সীমান্তের কাছে তুরস্ক নির্মিত বায়রাক্তার টিবি-২ নামের ড্রোন মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ, যা যাচাই করে দেখছে দিল্লি।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, সীমান্তে মোতায়েন করা এসব ড্রোন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারি মিশনের জন্য পরিচালনা করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন:আগামী বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত অ্যানুয়াল বাল্টিক কনফারেন্স অন ডিফেন্সের (এবিসিডি) উদ্বোধন অধিবেশনে তিনি দেশের জটিল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেন।
আয় বৈষম্যকে দেশের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন এ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এই বৈষম্য মোকাবিলায় মানসম্মত শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সুবিধা ধরে রাখার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন ড. মাহমুদ।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের আর এলডিসি হিসেবে থাকা সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কিছু সুবিধা বজায় রাখার জন্য আলোচনা চলছে। অনেক দেশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।’
একটি আলাদা অধিবেশনে বাংলাদেশ কীভাবে মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, তার চিত্র তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্ডারমিট এস গিল।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ফোকাল পয়েন্ট হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি দেশে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:কাজের সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চারটি নতুন কমিটি গঠন করেছে।
নির্বাচন কমিশন বিধিমালা, ২০১০-এর বিধি ৩-এর উপ-বিধি ২-এর উপ-বিধি অনুযায়ী চারটি কমিটি গঠন করা হয় এবং বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নবগঠিত কমিটিগুলোর মধ্যে ৮ সদস্যের ‘আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি’র প্রধান করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছুউদকে। এই কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ হবে বিদ্যমান নির্বাচনি আইনসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব আইন ও বিধিবিধান পর্যালোচনা করা এবং সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করা।
নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ৯ সদস্যের কমিটির কাজ হবে নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারকে সীমানা পুনঃনির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও মনিটরিং এবং সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনা সংক্রান্ত ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন পরিচালনায় তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বের কমিশনের প্রথম বৈঠকে সোমবার এসব কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সিইসি ও ইসিদের শপথ পাঠ করান।
আরও পড়ুন:যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন আরও ১০৫ প্রবাসী। এসব বাংলাদেশি সেখানে আটকা পড়ে ছিলেন। সাম্প্রতিক এই প্রত্যাবাসনের ফলে নয়টি ফ্লাইটে লেবানন থেকে নিরাপদে দেশে ফিরে এলেন মোট ৯৬৩ বাংলাদেশি।
পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈরুতে বাংলাদেশ মিশন এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তারা দেশে ফিরে আসেন।
বাংলাদেশ সরকারের ভাড়া করা আমিরাত এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৪ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তারা দেশে পৌঁছান।
দেশে ফিরে আসার এসব প্রবাসীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম প্রতিনিধিরা বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
দেশে ফেরত আসা প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা, প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছে আইওএম।
লেবাননে সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রাসী ইসরায়েলের বোমা হামলায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
যুদ্ধ-সহিংসতার কারণে লেবানন থেকে দেশে ফেরত আসতে ইচ্ছুক সব বাংলাদেশির প্রত্যাবাসন ব্যয় বহন করার জন্য সরকার তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। যারা থাকতে চান তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য