সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় বেতন কাঠামোর ১৩তম গ্রেড দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সোমবার (১২ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে এই নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণবিহীন) থেকে গ্রেড-১৩ তে উন্নীত করা হয়।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যারা নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার এ শর্ত প্রযোজ্য হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকের নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। কিন্তু আগে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৩’ তে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এইচএসসি।
আগের নিয়োগিবিধির আওতায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকায় তারাও গ্রেড-১৩ পেতে পারেন বলে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে।
বর্তমানে পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়া যে কী কষ্ট, পুঁজি সংগ্রহ করা যে কী কঠিন! আমি এই জেনারেশনের অংশ হিসেবে জানি, ব্যাংক আমাদের ৫ লাখ টাকাও লোন দেয় না। এটাই বাস্তবতা। এখন আমি যদি সারাদিন আপনাদের বলি উদ্যোক্তা হন, সেক্ষেত্রে ছাত্র হিসেবে আপনাকে কে টাকা দেবে?’
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যার রেঞ্জ রোভার গাড়ি আছে তাকে মার্সিডিজ কেনার জন্য ব্যাংক টাকা দেবে। কিন্তু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কোনো টাকা পয়সা দেবে না।’
শনিবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে একসময় ১০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডও দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। তারপর যখন সরকারের মন্ত্রী হয়েছি, তখন ২০ লাখ টাকার ক্রেডিট কার্ডের জন্য তারা নিজেরাই রাজি হয়েছে। কারণ তখন তারা জানে, আমি যদি ঋণখেলাপী হই, নির্বাচন করতে পারব না কখনও। তাই তারা বিনা সিকিউরিটিতে ক্রেডিট কার্ড দিতে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমার জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ, বিনিয়োগের নামে তা গুটিকয়েক ব্যাবসায়ীর হাতে তুলে দিচ্ছি। সাধারণ উদ্যোক্তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এখন আমি ৫ লাখ টাকাই পেলাম না, ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করব কোথা থেকে? তাই আমি বলব, ওই পুঁজির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমরা যদি দক্ষ হই, তবেই আত্মনির্ভরতা সম্ভব।’
এ সময় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার একটা আন্তর্জাতিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে। অনেকে অর্থ খরচ করে সেই উচ্চশিক্ষা নেয়ার জন্য, সেটি যেভাবেই হোক।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ নিজেরা একটা র্যাঙ্ক টেবিল বানিয়েছে নিজেদের কিছু পত্রিকাকে দিয়ে। সেই র্যাঙ্কিং তারাই করে, সেখানে ইংরেজি ভাষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুব কম স্থান দেয় তারা। সেখানে পড়তে গেলে আমাদের শতকোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তারা মনে করে, তারা একটা উচ্চশিক্ষার বাজার সৃষ্টি করেছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে দিকেও জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে প্রতিবছর। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার কথা নয়, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করার কথা। গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার জন্য মানসিকতা থাকতে হবে সবার। আমাদের দৃষ্টিসীমা সেভাবেই নির্ধারণ করতে হবে। এই ভূখণ্ডে আমি নিজেকে আবদ্ধ রাখব না, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে সারা বিশ্ব আমার কর্মক্ষেত্র হবে। সেখানে আমি যেন কাজ করতে পারি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যথেষ্ট নয়।’
‘যথেষ্ট নয় এজন্য যে, আমরা যখন কর্মক্ষেত্রে যাই, আমাদের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কাজ করতে পারেন না। ১ শতাংশেরও কম শিক্ষকতা ও গবেষণায় যান। কর্মক্ষেত্রে আমরা যখন যাই, সেক্ষেত্রে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা নিয়েছি, তা যথেষ্ট নয়। সেটা কর্মজীবনের জন্য যথেষ্ট উপযোগীও নয়। এই শিক্ষার প্রয়োগিক মূল্য খুব কম।’
এ সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ডে স্টিভ জবস স্নাতকদের উদ্দেশে বলেছিলেন- অন্যকে নকল করতে গিয়ে সংক্ষিপ্ত এই জবন নষ্ট করো না। তোমার মনে যা আসে তাই করবে। তোমার বিবেক যা বলবে তাই করবে। তোমার মস্তিষ্ক যা চিন্তা করে তাই করবে। আজকের স্নাতকদের প্রতিও আমার একই আহ্বান।’
আরও পড়ুন:নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বেড়েই চলছে অনুমোদনহীন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) ব্যবহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রকৌশল দপ্তরকে না জানিয়েই চলছে এসি লাগানোর মহোৎসব। পরিকল্পনা ছাড়াই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসির ব্যবহারে বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহার। এতে বাড়ছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
সরকারি নিয়মানুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান, ইন্সটিটিউট পরিচালক, দপ্তর প্রধান ও এর সমমানের পদধারীদের অফিস কক্ষে এসি ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জবির বিভিন্ন বিভাগের অফিস কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ, এমনকি বিভিন্ন দপ্তরেও এসি লাগানো হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে লাগানো এসব এসির কারণে তৈরি হয়েছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার শঙ্কা। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মচারী বলেন, ‘বিভাগের প্রয়োজনেই এসি লাগানো হয়ে থাকে। বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে কোম্পানি থেকে সরাসরি এসিগুলো কেনা হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট আর রিকুইজিশন দেয়া হয় না। ফলে প্রকৌশল দপ্তরও বিষয়গুলো জানে না।
‘কোম্পানির লোকজনই এসে এসিগুলো লাগিয়ে দিয়ে যায়। কোনো সমস্যা হলে বা এসি নষ্ট হলে কোম্পানির লোক বা বাইরে থেকে এসির মিস্ত্রি এনে সারানো হয়।’
তবে বিষয়টি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কনসার্নেই হয়ে থাকে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের বিভিন্ন বিভাগের অফিস কক্ষে ও শ্রেণিকক্ষে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এসি লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের অফিস কক্ষ, সেমিনার কক্ষসহ অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষেও এসি লাগানো হয়েছে। এসব বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকের ব্যক্তিগত রুমেও চলছে এসি।
এ ছাড়াও গণিত বিভাগের অফিস কক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষ, সেমিনার কক্ষ ও শ্রেণিকক্ষে এসি লাগানো হয়েছে। মনোবিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের সেমিনার কক্ষসহ শ্রেণিকক্ষে এসি লাগানো হয়েছে। এসব বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা না থাকার পরও এসি, লাইট, ফ্যান চালু থাকতে দেখা যায় প্রতিনিয়তই। ছুটির দিন কিংবা অফ টাইমে শ্রেণিকক্ষগুলোতে বিনা কারণে লাইট-ফ্যান জ্বলতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনেই এক হাজার টনের বেশি এসি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নিয়মবহির্ভূতভাবে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া গণিত ভবন, বিজ্ঞান ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন মিলিয়ে প্রায় চারশ’ টনের বেশি এসি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই একটি মাত্র সাব-স্টেশন থেকে পুরো ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। সেটির কার্যক্ষমতা কমতে কমতে বর্তমানে প্রায় ১২০০ কেভিতে নেমেছে, যা কোনোভাবেই ভবনগুলো বৈদ্যুতিক লোড নিতে পারত না। পরে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের জন্য সাব-স্টেশনটি ২০০০ কেভি ধারণক্ষমতার করা হয়েছে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব এসি ব্যবহারে দৈনিক যে পরিমাণ বিদুৎ খরচ হয়, তার যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে নতুন স্থাপনকৃত বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনটিও। ফলে কিছুদিন পরপরই ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে। বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াতে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাবলগুলোর আংশিক পরিবর্তন করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
এর আগে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন লাইন ও সাব-স্টেশনের সঙ্গে ডরমিটরির লাইনের তারের লুজ কানেকশনের জন্য তা ঝলসে গিয়ে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়৷ লাইনের তার জোড়া দেয়ার কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসেই তখন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের লোড নিতে না পেরে চারবার শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে ও দপ্তরে ত্রুটিপূর্ণ ও ভাঙা এসি এবং অ্যাডজাস্ট ফ্যানের কারণে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবারাহের ক্যাবলগুলো বেশ পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেগুলো থেকে নিয়মিত শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতে এই ক্যাবলগুলোতে আগুন ধরে যেতে দেখা যায়। এতে তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়।
এদিকে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনেই ৫টি ত্রুটিপূর্ণ এসি ও ১০টির অধিক ভাঙা অ্যাডজাস্ট ফ্যান রয়েছে। এতে যেমন বেড়েছে বিদ্যুৎ অপচয়ের পরিমাণ, পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা নয়, অনুমোদনহীন এসব এসি ব্যবহারে প্রতি মাসে বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলও গচ্চা দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকার বিদুৎ বিল পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত মাত্রায় অনুমোদনহীন এসির ব্যবহারের ফলে এর পরের তিন মাসে তা প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সতেরো লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসি, লাইট, ফ্যান না চালানোর নির্দেশনা দিলেও তা মানছেন না কেউই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বেশিরভাগ তারই অনেক পুরনো। কোনো ভবনে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি হয়ে গেলে ওইসব তার লোড নিতে পারে না। তখন বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে।’
হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রকৌশল দপ্তরকে না জানিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এসি লাগিয়েছে। এতে তারগুলোর ওপর লোড আরও বেড়েছে। যার ফলে শর্ট সার্কিটসহ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়েছে। আমরা বারবার বলার পরও তারা শোনেনি। এখন সমস্যা হলে আমাদেরকে জানানো হচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে এবার নির্যাতন চালানো হয়েছে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে। প্রহারের পর ভুক্তভোগীর শরীরে মদ ঢেলে তাকে মাদকাসক্ত সাজানোরও চেষ্টা করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের আপন ছোট ভাই আরমান খান যুব ও তার সহযোগীরা এই নির্যাতন চালিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও হলের কক্ষ দখল করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন এই যুব। চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকের কারবার।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমনকে ক্যাম্পাসে মওলানা ভাসানী হলে নিজের ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে দফায় দফায় মারধরের পাশাপাশি ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন’ মর্মে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। একইসঙ্গে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দেয়া হয়।
বুধবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা আঁচ করতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে ফল হয়েছে উল্টো। অভিযুক্তদের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে গেছেন প্রক্টর।’
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে প্রক্টরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে ফোন ধরে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর থেকে তিনি আর সাড়া দেননি।
ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
বুধবার বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী (২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ) আরমান খান যুব ছাড়াও রয়েছেন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আরাফাত, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি।
এদের মধ্যে আরমান খান যুব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্যাম্পাসে ‘র্যাগের রাজা’ নামে তার পরিচিতি রয়েছে। কয়েক বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও তিনি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের একটি কক্ষ দখল করে রেখেছেন।
আরমান খান যুব’র বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সিন্ডিকেট ও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ‘টর্চার সেল’ পরিচালনার অভিযোগ বেশ পুরনো। মাদক কারবারি ও বহিরাগতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করার ঘটনাও অনেকের মুখে মুখে।
জাহিদ হাসান ইমন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘১৩ আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনির বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার মনোমালিন্য হয়। ওই ঘটনার জের ধরে আমাকে ফোন দিয়ে আরমান খান যুবর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন বাড়ির মালিকের পূর্বপরিচিত আরাফাত।
‘আমি যুবর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে আমাকে মওলানা ভাসানী হলের সামনে যেতে বলা হয়। রাত ১২টার দিকে সেখানে গেলে আমাকে মোটরসাইকেল হলের ভেতরে রেখে ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন যুব।’
ইমন বলেন, ‘আমি কক্ষে ঢুকতেই ঘুষি মেরে আমার নাক ফাটিয়ে দেন যুব। আমি যাতে চিৎকার করতে না পারি সেজন্য কাপড় দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলেন আরাফাত। পরে যুব ও আরাফাতসহ সেখানে উপস্থিত অন্যরা আমাকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন।
‘আমাকে এক দফা মারধরের পর ইয়াবা সেবন করেন যুব। পরে সবাই মিলে আবারও অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন। এছাড়া আমার শরীরে মদ ঢেলে উল্লাস করতে থাকেন ওরা।’
ইমন জানান, দফায় নির্যাতনের পর রাত ৩টার দিকে তাকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাকে পরিষ্কার-পরিছন্ন হয়ে আসতে বলেন তুষণ। এরপর ‘ইমন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন’ বলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেন। এমনকি মোবাইল ফোনে তার ভিডিও ধারণ করে রাখেন তুষণ। পরে তাকে ফের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ইমনের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল ওই কক্ষে গিয়ে ইমনকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও ইমনকে আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগী ইমন বলেন, ‘ঘটনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে বিষয়টির ব্যাপারে আগে থেকে অবহিত করেছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে মারধরের ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পরদিন সকালে প্রক্টরের বাসায় যাই। তবে সেখানে গিয়ে দেখি যে আকতারুজ্জামান সোহেল প্রক্টরের বাসায় অবস্থান করছেন।
‘আমাকে ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে (গেস্টরুম) গিয়ে বসতে বলেন তিনি। এ অবস্থায় প্রক্টরের ওপর ভরসা না পেয়ে আমি চলে আসি। এরপর মারধরের বিষয়টি আল নাহিয়ান খান জয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়েছি।’
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘মারধর-পরবর্তী নানা ঘটনায় প্রক্টরের ওপর আমার ভরসা উঠে গেছে। নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেইনি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়েছি। তবুও ঘটনার বিচার করতে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বিচার না পেয়ে কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি। কারণ ওই রাতের ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, বিষয়টি আমি জানি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আমি জানি না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে ফোন করলে তিনি ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন:সাব-স্টেশন লাইনের ক্যাবল পরিবর্তনসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য আগামী ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বুধবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ব্যাপারে তার স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কিট মেরামত এবং ১৩ তলা-বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবনের এমডিবিতে বৈদ্যুতিক কাজের প্রেক্ষিতে বারো ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে।
বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনারেটরের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বিভিন্ন ল্যাব কক্ষ, ইন্টারনেট সার্ভার রুমসহ কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলেও হলে তা চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ওভারহেড লাইনের বৈদ্যুতিক তার পরিবর্তনসহ অন্যান্য কাজের জন্য চলতি বছরের ২১ ও ২৮ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অবস্থানরত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের দ্রুত হল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশটি ‘বৈষম্যমূলক বিধান’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোলায়মান তুষার বুধবার এ নোটিশ ডাক ও ইমেইলে করে পাঠিয়েছেন।
লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবী সোলায়মান তুষার বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, বিবাহিত ও গর্ভবতী হওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না বলে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আবাসিকতা লাভ ও বসবাসের শর্তাবলী এবং আচরণ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা-২০২১ এর ১৭ নং ধারা মোতাবেক বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা আবাসিক সিট পাবে না বিধায় তারা অতি দ্রুত হলের সিট ছেড়ে দেবে। অন্যথায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই মর্মে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হলে নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উক্ত বিধানের ফলে কার্যত বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীরা হলের আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ছাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বৈষম্যমূলক বিধান থাকার বিষয়টি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।’
নোটিশে সোলায়মান তুষার বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা অন্য স্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন। বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীদের জন্য এমন নিয়ম নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘নোটিশ প্রাপ্তির পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানটি বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অন্যথায় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।’
এ বিষয়ে আইনজীবী সোলায়মান তুষার বলেন, ‘আমি কারোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে না, সংবাদমাধ্যমে খবরটি দেখার পর আমি নিজে থেকে এই নোটিশ পাঠিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালাও যদি এই রকম কিছু থেকে থাকে তাহলে সেই বিধিমালার সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ (১) (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংঘর্ষিক। আর সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বা বিধিমালা বাতিল হয়ে যায়।’
জানতে চাইলে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, ‘আমি এখনও হাতে নোটিশ পাইনি। আর হল থেকে যে নোটিশ দেয়া হয়ছে, তা বিধিমালায় রয়েছে। এর বাইরে তো কিছু করিনি।
‘আমি বিবাহিত কিংবা গর্ভবতী যারা তাদের তো সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু আইনি নোটিশ কেন দেয়া হবে বুঝলাম না। যারা বিবাহিত আছে তাদেরকে আবারও নোটিশ দিয়ে হল থেকে নামিয়ে দেয়া হবে। আর বিষয়টি (আইনি নোটিশ) আমাদের মধ্য থেকেই কেউ করেছে। আমি খুঁজে বের করব।’
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অবস্থানরত বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের অতি দ্রুত হল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হল প্রশাসন। একই সঙ্গে মাস্টার্সের ফল প্রকাশ হওয়া আবাসিক ছাত্রীদেরও হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ও চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন:গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসার মুহতামিমের (প্রধান) বিরুদ্ধে। আহত ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর উপজেলার চান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় মা হাফেজা বেগম মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষক আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২৮ বছর বয়সী ওই মুহতামিম একই উপজেলার নয়াকন্দি গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলাম মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক বিশেষ সভায় মঙ্গলবার মুহতামিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছে, ১০-১২ দিন আগেই পুড়েছে। দুই নিতম্বেই পুড়ে গিয়ে গভীর ঘাঁ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
নির্যাতিত শিশু আবদুল কাইয়ুম জানায়, ওইদিন সে তার অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাচ্ছলে দুষ্টুমি করছিল। এক ফাঁকে তার পরণের লুঙ্গি খুলে যায়। এর শাস্তি হিসেবে ওইদিন (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মুতামিম তাকে অফিসে নিয়ে শিক্ষক আতিকুল এবং তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় তার নিতম্ব এবং পায়ের তলায় গরম ইস্ত্রি লাগিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দেন।
ভুক্তভোগীর মা হাফেজা বেগম বলেন, ‘খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে। ছেলের মানসিক অবস্থা বুঝে তাক বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়িতে এসে সে তার জখমের জায়গা দেখিয়ে পুরো ঘটনা বলে। তারা আমার ছেলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।’
এ বিষয়ে ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, ‘সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ছেলেটিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পোড়ার ঘটনায় মুহতামিম হাফেজ সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক আতিকুল ইসলামহ আরও তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মা হাফেজা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’
আরও পড়ুন:আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে যারা দেশের বাইরে অভিভাসন, চাকরি বা পড়ালেখা করতে যেতে চান, তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এলো ব্রিটিশ কাউন্সিল। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার এই পরীক্ষায় এতদিন কোনো একটি বিষয়ে আশানুরূপ ফল না আসলে আবার সব বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে হতো পরীক্ষার্থীদের। তবে সেই সমস্যার সমাধান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এখন থেকে শোনা, পড়া, বলা ও লেখা- কোনো একটি বিভাগে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে শুধু ওই বিভাগের জন্য পরীক্ষা দিতে আবেদন করা যাবে। ওয়ান স্কিল রিটেক নামের এই পরীক্ষা ব্যবস্থা ভারত, পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চালু থাকলেও এতদিন সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীরা। এটি চালুর ফলে একদিকে যেমন কমবে খরচ, অন্যদিকে সব বিভাগে পরীক্ষার প্রস্তুতির ঝামেলা থেকেও মিলবে মুক্তি।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতি সেকশনের ফরম্যাট ও সময় স্বাভাবিক আইইএলটিএস পরীক্ষার মতোই থাকবে। তবে, বাকি তিনটি সেকশনের দক্ষতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা কাটিয়ে অনেকটা সময় বাঁচাতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে আইইএলটিএস অ্যাট দ্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক অ্যান্ড্রু ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘গ্রাহকদের ফিডব্যাক অনুযায়ী এই ওয়ান স্কিল রিটেক ফিচারটি চালু করা হয়েছে। আমরা জানি, সঠিক প্রস্তুতি এবং সহায়তার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা সেরা স্কোর অর্জন করতে পারবেন। তবুও যদি কেউ মনে করে থাকেন যে প্রথম চেষ্টায় ইংরেজি দক্ষতার সঠিক মূল্যায়ন পাননি, তারা ওয়ান স্কিল রিটেকের মাধ্যমে শুধু একটি স্কিলে পুনরায় পরীক্ষা দিতে পারবেন। আমাদের বিশ্বাস, এতে করে পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ান স্কিল রিটেক গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীর মানের সঙ্গে আপস না করেও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি আরও সহজ করে তুলতে পারবেন। পরীক্ষার্থীদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ নিয়ে আইইএলটিএস অংশীদাররা গর্বিত।’
আইইএলটিএস ওয়ান স্কিল রিটেক দেয়া পরীক্ষার্থীরা একটি দ্বিতীয় টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পাবেন, যা অভিবাসন ও পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে। অর্জনকৃত স্কোরের ভিত্তিতে পুরনো অথবা নতুন টেস্ট রিপোর্টের মধ্যে যেকোনোটাই বেছে নিতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
মূল পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে আইইএলটিএস ওয়ান স্কিল রিটেক বুক করা যাবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর টম মিশশা বলেন, ‘নতুন এ ফিচার যুক্ত করার ফলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইইএলটিএস টেস্ট এখন একমাত্র প্রধান হাই-স্টেকস টেস্ট, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের সেরা স্কোর অর্জনে সহায়তা করব। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহযোগিতা করে আমাদের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে তুলতে পেরে আমরা গর্বিত।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য