ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে অনশনরত তরুণীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
রোববার রাতে ফেইসবুক লাইভে এসে ওই তরুণীকে কটাক্ষ করে তার 'চরিত্র' নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নুর। এরপরেই ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
নুর তার ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও নিজের অবস্থানের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে।
নুরদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী বলেছেন, 'আমি দুশ্চরিত্রা হলে নুরের সহযোগীরা কি চরিত্রবান? কারণ, নুর তো বলেছেন, স্বেচ্ছায় সব কিছু হয়েছে। তাহলে তাদের কেন আস্কারা দিচ্ছেন তিনি।
‘প্রথমত তিনি (নুর) যা বলেছেন সব বানোয়াট, মনগড়া কথা বলেছেন। এরপরেও তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি ধরেও নেই আমি দুশ্চরিত্রা, তাহলে তার সহযোগী সোহাগ বা মামুন কী? তারা কি চরিত্রবান?
‘নুর বলেছেন, সোহাগের সঙ্গে তোলা ছবিতে আমি হাসছিলাম। সেটা তো ঘটনার আগের ছবি। তখন হাসলেই কি ধর্ষণ মিথ্যা হয়ে যায়?’
এই তরুণীর মামলায় নুরের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে আসামি ছয় জন, যাদের একজন নুর নিজেও।
ওই তরুণী মামলা করেছেন মোট তিনটি। তার অভিযোগ, পরিষদের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক হাসান আল মামুন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। পরে মামুনের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ধর্ষণ করেন নাজমুল হাসান সোহাগ।
মামলায় বলা হয়েছে নুরকে ঘটনাটি জানানো হয়েছিল। প্রথমে তিনি মীমাংসার আশ্বাস দেন। পরে চুপ হয়ে যেতে বলেন। নইলে অনলাইনে ‘পতিতা’ হিসেবে প্রচার চালানোর হুমকি দেন।
নুরের ভিডিওর বক্তব্য নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখিনি, কিন্তু আপনার কথার প্রেক্ষিতে বলতে পারি এটি খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এভাবে কাউকে হেয় করে অপরাধ লুকানো যায় না।’
‘দ্বিতীয়ত, কারো চরিত্র ভালো না খারাপ এই বিষয়টি আসলে আপেক্ষিক। যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়। অপরাধ আর চরিত্র দুটি আলাদা জিনিস। অপরাধ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে, সেখানে কাউকে হেয় করা যথেষ্ট রুচিহীনতার কাজ।’
নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ বলেন, 'নুরুল হক নুরের যে ফেসবুক লাইভের কথা বলছেন আমি সেটি দেখিনি। যদি তিনি অভিযোগকারীর ক্ষেত্রে দুশ্চরিত্রা শব্দ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে খুবই নিন্দনীয়।'
তিনি বলেন, ‘পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শিক অস্ত্রগারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের জন্য নারীর চরিত্র-সংক্রান্ত নানা শব্দ দিনের ২৪ ঘণ্টা, মাসের ৩০ দিন, বছরের ১২ মাস- শানানো থাকে। এগুলোর ব্যবহার কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
‘ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে রাস্তায় শুধু মিছিল করলে হবে না, পিতৃতান্ত্রিক অস্ত্রগুলোকে নিরস্ত্র করার উপায় ও পদ্ধতি বের করতে হবে। আর সেই সদিচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার নিরন্তর প্রয়োগ দৃশ্যমান হতে হবে।’
সাংবাদিক উদিসা ইমন বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে না। নুর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, যা খুবই আপত্তিকর। ‘
সাংবাদিক ইশরাত জাহান ঊর্মি বলেন, ‘কথায় কথায় নারীকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করে দেয়াটা আমাদের সমাজের প্রচলিত বৈশিষ্ট্য। নুরের বক্তব্য আসলে সমাজের সেই বৈশিষ্ট্যেরই একটি অংশ।
‘ডাকসুর সাবেক ভিপি কিংবা একটি ছাত্র অধিকার সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ যখন আমরা পেলাম, তখন আমাদের বুঝতে হবে, ভবিষ্যতে যারা ছাত্র অধিকার বা নেতৃত্বে আসবেন তারা কতোটা নারীবিদ্বেষী হবেন।‘
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট লীনা পারভিন বলেন, ‘তিনি (নুর) একজন নারীকে দুঃশ্চরিত্র বলে মনের কদর্যকেই প্রকাশ করলেন। তার এই বক্তব্য আসলে সমাজে টিকে থাকা ধর্ষকামী পুরুষের বক্তব্যকেই প্রতিনিধিত্ব করে।
‘প্রকাশ্যে ভিডিও বার্তায় একজন ভিক্টিমকে গালিগালাজ করে তিনি প্রমাণ করলেন, তিনি সমাজ থেকে ধর্ষণ দূর হোক এটা চান না।‘
ডাকসুর সাবেক সদস্য তিলোত্তমা শিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরের কথা সত্যি ধরে নিলে বলতে হয়, নুর যাদের নিয়ে ঘোরেন, যাদের প্রশ্রয় দেন, তারাও দুশ্চরিত্র।
‘তারা তো এতদিন কিছু স্বীকারই করেননি। ভিডিওর মাধ্যমে এবার নুর কার্যত স্বীকার করে নিলেন তার সহকর্মীদের অপরাধ।’
নুরের ভিডিও নিয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল নিউজবাংলা। তবে এ প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ফোনে কোনো কমেন্ট দিই না। শুধু এখন না, আগেও দিইনি। ক্যামেরার সামনেও আমি আসছি না। আপনি বরং আমাকে ছেড়েই স্টোরিটা করেন।’
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে রোববার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে এ জানাজায় উপস্থিত হন হাজারো মানুষ।
জানাজায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অংশ নেন।
তৃতীয় জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহবাহী কফিন বহনকারী গাড়ি রওনা হয় তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে।
জোহরের নামাজের পর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে।
গণহত্যার সঙ্গে জড়িত কিংবা মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের দোসরদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মামলার অনুসন্ধানে যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য পাওয়া মাত্র ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তরে শহীদ মীর মুগ্ধ স্মরণে সভা, মিলাদ মাহফিল, মীর মুগ্ধ ভবন ও এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রবেশ তোরণ উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনেকে আগেই পালিয়ে গেছেন। এরপর আবার ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট অনেকে পালিয়ে গেছেন। ওই তিনদিন সবকিছু ঢিলেঢালা ছিলো। এখন বর্ডার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তারা কোথায় আছেন এবং কেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের তথ্য দিন। আমাদের দায়িত্ব তাদের গ্রেপ্তার করা। আপনাদের দায়িত্ব আমাদের তথ্য দেয়া।
‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আপনারাও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করুন। পলাতকদের তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তথ্য প্রদানের জন্য প্রয়োজনে খরচের ব্যয়-ভাড়া বহন করা হবে।’
রাজধানীসহ সারাদেশে যেসব মামলা হচ্ছে তাতে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন অনেককেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো মামলা পুলিশ বাদী হয়ে করছে না। এই মামলাগুলো করছে সাধারণ জনগণ। তারা (জনগণ) ১০ জনের নাম দিচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে ১০০ জনের নামে মামলা। অনুসন্ধানে, যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসা সরকার করবে। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্ভয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, এই উৎসবে নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শনিবার দুর্গাপূজা উদযাপনে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি সেখানে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
সেনাপ্রধান এ সময় উপস্থিত মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থেকে পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা তৎপর রয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক বাংলাদেশি অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন। পাশাপাশি তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, টিকিট জটিলতায় মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মীকে সে দেশে পাঠানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেছেন, দেশটিতে বন্ধ শ্রমবাজার চালু ও বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয়-৭১ মিলনায়তনে শনিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সমঝোতা সইকে সে দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশের আর্সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী কর্মীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের একেকটি পতাকা হয়ে কাজ করেন।
‘প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের কল্যাণমূলক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড এ কাজটি নিরলসভাবে করে চলেছে।’
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে চুক্তিতে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান এবং মালয়েশিয়ার পারকেসোর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজমান আজিজ মোহাম্মদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, জাতি একজন বিশিষ্ট জনসেবক ও একজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারালো।
প্রধান উপদেষ্টা এক শোক বার্তায় বলেন, ‘আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে সুন্দর স্থান দান করুন।’
বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসক ও জনসেবক হিসেবে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দীর্ঘ ও বহুল সম্মানিত কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা ছড়িয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) তার উপস্থাপনায় প্রচারিত ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠানটি লাখ লাখ দর্শকের প্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানটি তাকে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি একই স্তরের একনিষ্ঠতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। পাঁচবারের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ৯০-এর দশকে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংসদে তার বক্তৃতা সব মতের রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা আশা করেন তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এই ক্ষতি বহন করার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন।
তিনি জনগণকে তার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং ‘জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার’ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আজ শনিবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকার উত্তরা উইমেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছি। এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া বিষয়ক আইন এবং সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছি।
‘ভুয়া নির্বাচনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার কথা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। বিচার বিভাগে ২০ জন বিচারপতি এখনও কাজ করছেন যারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।
‘এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের যেন জামিন দেয়া না হয়। গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে মন্তব্য করে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।
রাজধানীর এফডিসিতে শনিবার গণতন্ত্র সুরক্ষায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখন নয়, সংস্কার করা যেতে পারে। পুনর্লিখন করলে বিপদ হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক বলেন, ‘এখনকার যুগে সেনা শাসন সম্ভব নয়। সেনা শাসন হলে উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা বন্ধ করে দিবে।
‘আমেরিকা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেনা শাসনের বিপক্ষে, তবে বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। আর বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হব।’
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস একজন বিশ্বনন্দিত ভালো লোক, তবে প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য অনন্তকাল সময় দেওয়া যায় না।’
মানবজমিন সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রাপ্তিতেও সংশয় সৃষ্টি হবে।’
মন্তব্য