দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক দাবি করছে, তারা 'ব্যানকোভিড' নামে এমন একটি টিকা তৈরি করছে, যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্ষম। তারা বলছে, এই টিকা প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে প্রাণিদেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সফল হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসেই মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হতে পারে। আর বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারে জানুয়ারির মধ্যে।
গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা ২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে আসার কথা প্রথম জানান। সেই সময়ে তারা একটি খরগোশের ওপর টিকা প্রয়োগ করে ফলাফল দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।
গ্লোব বায়োটেক আশা করছে, জানুয়ারিতে তাদের টিকা বাজারে আসবে। তবে প্রাণিদেহে পরীক্ষা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যে টিকা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনা কতটা সম্ভব? অথবা একটি কার্যকর টিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় ধাপগুলো এ সময়ের মধ্যে অনুসরণ করা সম্ভব কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
প্রাণীর ওপর পরীক্ষার (প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) পর একটি সম্ভাব্য টিকার কার্যকারিতা সাধারণত তিন ধাপে মানুষের দেহে পরীক্ষা করতে হয়। প্রতিটি ধাপে কয়েক মাস সময় লাগার কথা। এর যে কোনো পর্যায়ে জটিলতা দেখা দেখা দিলে বাতিল হতে পারে যে কোনো ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট (সম্ভাব্য টিকা)।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লোব বায়োটেক এখনও তাদের সম্ভাব্য টিকার গবেষণা পদ্ধতি সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেনি। এখনও বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অথচ মানবদেহে কোনো টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আগে বিএমআরসির নৈতিক ছাড়পত্র (ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স) নেয়া বাধ্যতামূলক।
বিএমআরসির পরিচালক ডা. মাহমুদ উজ জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেকের টিকা মানব দেহে পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এমনকি কোনো কাগজপত্রও আমরা পাইনি।‘
গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করছেন, বিএমআরসিকে তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও বিকাশ শাখার ইনচার্জ আসিফ মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। তাদের মাধ্যমে বিএমআরসির কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হবে।‘
তিনি বলেন, ‘টিকার ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিতে অনেক মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করে সব প্রক্রিয়া শেষেই মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করবে গ্লোব বায়োটেক।‘
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, মানবদেহে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। একেবারে শুরুতে অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এটি প্রয়োগের পর সময় নিয়ে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি সফল হলে দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন বয়স ও স্বাস্থ্যের স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর প্রয়োগ করা হয় টিকা। তৃতীয় ধাপে, টিকা প্রয়োগ করা হয় দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। কোনো কোনো সময় একই প্রক্রিয়ায় চতুর্থ ধাপেও পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন পড়ে।
এই ধাপগুলো কবে, কীভাবে অনুসরণ করা হবে- সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দেয়নি গ্লোব বায়োটেক।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল নিয়ে একটি নিবন্ধ আন্তর্জাতিক প্রি-প্রিন্ট সার্ভার ‘বায়ো আর্কাইভে’ প্রকাশিত হয়েছে। জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনো গবেষণার ফল দ্রুত তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা এ ধরনের প্রি-প্রিন্ট সার্ভার ব্যবহার করে থাকেন।
গ্লোব বায়োটেকের সম্ভাব্য টিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেক আবেদন করলে ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটি প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলগুলো বিশ্লেষণ করবে। এর ভিত্তিতে ঠিক করা হবে, এটি মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে কি না। তবে গ্লোব জানুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে আসার যে দাবি করছে, তার ভিত্তি নেই। বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান মাত্র সাত মাসে ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সক্ষম হয়নি।‘
চীনের সিনোভ্যাক্সের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই টিকা এখন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ট্রায়ালটি শুরুতে দুই মাস চলার কথা ছিল। যেসব স্বেচ্ছাসেবী টিকা নেবেন তাদের ছয় মাস ফলোআপে রাখা হবে। যদি চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপেই এতো সময় লাগে, তাহলে গ্লোবের ভ্যাকসিন কীভাবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে আসবে!’
কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবনে চূড়ান্ত সাফল্য দাবি করছে রাশিয়া। দেশটির গামালিয়া ইনস্টিটিউট টিকা বাজারজাত শুরু করলেও সব ধাপ অনুসরণ না করায় সেটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এর বাইরে কোভিড-১৯ টিকা উদ্ভাবনে বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি গবেষণা চলছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, জার্মানির বায়োটেক, চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিক্যাল, সিনোভ্যাক বায়োটেক এবং সিনোফার্ম।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে আরও ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ১৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ৭৩ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন করে করোনা আক্রান্ত ১০ জনসহ চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৮ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
মন্তব্য