নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাড়িতে ঢুকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার আরো ৩ আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে নোয়াখালী মুখ্য বিচারিক হাকিম (আমলি আদালত-৩) আদালতের বিচারক মাসফিকুল হক এ আদেশ দেন। পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় এ রিমান্ড আবেদন করা হয়।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে মাঈন উদ্দিন সাজুর ৬ দিনের এবং আনোয়ার হোসেন সোহাগ ও নুর হোসেন রাসেলকে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মঙ্গলবার ওই মামলার প্রধান আসামি বাদলের ৭ দিনের রিমান্ড হয়। একই দিন মামলার অন্যতম আসামি দেলোয়ার হোসেনকে অস্ত্র আইনের মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। দেলোয়ার সোমবার রাতে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার হয়।
গৃহবধূকে ২ সেপ্টেম্বর বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও রোববার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধন হচ্ছে।
এই ঘটনায় নয় জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে আদালতে সোর্পদ করলে আদালত পৃথকভাবে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে আইন-কানুন, বিধি-বিধান ঠিক করে অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।
চলমান সংস্কারে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন দল নিবন্ধনসহ নানা বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে ভোট করতে গেলে অক্টোবরে তফসিল করতে হবে। অক্টোবরের মধ্যে আইন-কানুন, বিধি-বিধান সংস্কারসহ সব শেষ করতে হবে।’
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার ‘আরএফইডি-টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি।
নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘আশা করি, উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট করতে পারব। প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুনে আমাদের দেশে বর্ষা থাকে। এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
‘এ সময়কে ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করা হয়েছে। আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ইসির ক্ষমতা খর্ব হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হাতে নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজ গেলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। আমরা স্থায়ী কমিটির ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না।
‘এই সংক্রান্ত সুপারিশ বাতিল করতে হবে। পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং (স্থায়ী) কমিটির মুখাপেক্ষী হলে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হবে। ভোটার হালনাগাদ এবং সীমানা নির্ধারণের জন্য ইসির বাইরে অন্য কারও হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুপারিশ অনেক কিছু দেওয়া যায়। তবে তার বাস্তবায়ন করা কঠিন।’
সীমানা নির্ধারণে ইসির হস্তক্ষেপ না রাখার সুপারিশে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘এটা ইসির এখতিয়ার।’
সিইসি বলেন, ‘জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) দেওয়া লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে ভোটার হালনাগাদ কাজ সময়ের আগেই শুরু করা গেছে।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রুলস অব দ্য গেম না থাকায় নির্বাচনের কাজে আগাতে পারছে না ইসি। আইনি বাধার কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় সীমানা নির্ধারণের অনেক কাজ করা যাচ্ছে না। তাই আইনের সংশোধন জরুরি।’
আরও পড়ুন:পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার।’
ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত বছরগুলোতে দুই দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ রাজনৈতিক নেতা, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, ব্যবসায়ী নেতা, সম্পাদক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সেলিব্রেটিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, তারা পারস্পরিক সম্পর্ককে এমন একটি জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে উভয় দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সদিচ্ছা, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
শুরুতে দুই দেশের জাতীয় সংগীতের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘এটি বিশ্বে অনন্য যে, দুটি জাতীয় সংগীতই একই কবি নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, যা সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে।’
জীবনভর শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে কাজ করা এ উপদেষ্টা বলেন, ৭৬ তাকে নিজের বয়সের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আমার বয়স স্বাধীন ভারতের সমান।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বহুমুখী এবং আমাদের অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং মানুষে মানুষে সংযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।’
উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বাংলাদেশের জনগণ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে অভিন্ন সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আশা করে এই সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে হবে।’
জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রশ্নে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন তার কিছু ব্যক্তিগত মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ রয়েছেন। তারা ভারতে থাকেন বা বিদেশে থাকেন।
তিনি বলেন, তারা অনেক গবেষণা নেটওয়ার্ক এবং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহযোগিতা করে এবং ধারণাগুলো বিনিময় করে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আস্থার সঙ্গে বলতে পারি যে, ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের অনেকের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক শুভেচ্ছা ও বোঝাপড়ায় অবদান রাখবে।’
ওয়াহিদউদ্দিন ভারতের সরকার ও জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক চিরকাল অটুট থাকার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন:বার্ষিক ৫০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে একটি অবাধ্যতামূলক চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।
আর্জেন্ট এলএনজি লুইজিয়ানায় বছরে ২ কোটি ৫০ লাখ টন (এমটিপিএ) এলএনজি সুবিধা সরবরাহ করছে।
আর্জেন্ট এলএনজির বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এটিই প্রথম বড় চুক্তি।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই, এমন দেশগুলোতে সুপার-চিল্ড গ্যাস রপ্তানির লাইসেন্সের ওপর জ্বালানি বিভাগের স্থগিতাদেশ বাতিলের নির্বাহী পদক্ষেপ নেন। তিনি এলএনজি রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।
চুক্তি অনুযায়ী পোর্ট ফোরচনে আর্জেন্টের এলএনজি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর কার্গো পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এই চুক্তি কেবল বাংলাদেশের সম্প্রসারিত শিল্প ভিত্তির জন্য নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্বকেও শক্তিশালী করবে।’
এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ এখনও মূল্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এলএনজির দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশ আরও সাশ্রয়ী মূল্যের কয়লা ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ১৭ দিন পর বাসায় ফিরেছেন যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকরা আপাতত তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে তিনটা) বেগম খালেদা জিয়াকে তারেক রহমান তার বাসায় নিয়ে যান।
এর আগে তারেক বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রিকলেন মসজিদে তার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, শুক্রবার রাতের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসবে। সবকিছু ভালো থাকলে তাকে রিলিজ দেওয়া হতেও পারে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক প্রফেসর পেট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে থাকবেন।
খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি জানিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ উনার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয়।
‘তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে আরও হয়তো দ্রুত সুস্থ করা যেত। এখন আমাদের চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে আগে হলে হয়তো উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত।’
ডা. জাহিদ আরও জানান, বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ সব রোগের জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। আপাতত ওষুধের মাধ্যমেই এটি অব্যাহত থাকবে। এর বাইরেও আরও কোনো চিকিৎসা করা যায় কি না, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হসপিটালের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিক্যাল বোর্ডের সভায় অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার এনে দেওয়া হতো। ছেলে তারেক রহমান, পুৃত্রবধূ জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ প্রতিদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকতেন।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেদিন হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীকে এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ বন্দরে রূপান্তরে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি মালিকানাধীন কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল।
বিশ্বমানের টার্মিনাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভার ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান আমির এ আলীরেজা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কোম্পানিটিকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের এবং দেশে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য রপ্তানি ও শিপিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে আরও বন্দর গড়ে তুলবে।
আলীরেজা বলেন, পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনাকারী রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, কোম্পানিটি সম্প্রতি চীন থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্রেন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানির আদেশ দিয়েছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সরঞ্জামের কার্যাদেশ দেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো হাইব্রিড সরঞ্জাম, যার অর্থ হলো তারা বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উভয়েই চলতে পারে ও কার্বন নিঃসরণ কমাবে।’
মাতারবাড়ীকে গভীর সমুদ্র বন্দরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে বর্ণনা করে আলীরেজা বলেন, তার কোম্পানি এ বন্দরে বিনিয়োগ এবং এটিকে এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শিপিং হাবে পরিণত করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বন্দরের দক্ষতা দেশে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। কারণ অনেক শীর্ষ নির্মাতা তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে আগ্রহী হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় জাতিসংঘে ঢাকার স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ অভিমত দেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে।
ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কী ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশি আর তরুণ নয়, বরং সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ প্রজন্ম পুরোনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না। তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে।
আরও পড়ুন:বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বিশিষ্ট রাজনীতিক আশরাফ হোসেন বড়দা (৮৫) আর নেই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তার।
তিনি এক কন্যাসন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, আত্মীয়স্বজন ও শুভান্যুধায়ী রেখে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগরীর গুপ্তপাড়া জামে মসজিদে শুক্রবার বাদ জুমা জানাজা শেষে নূরপুর কবরস্থানে বড়দাকে দাফন করা হবে।
আশরাফ হোসেন বড়দা ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি লেখা পড়ে রাষ্ট্রভাষার প্রতি উদ্বুদ্ধ হন তিনি।
পরে প্রগতিশীল শিক্ষক সন্তোষ গুহের সান্নিধ্য ও কবি শাহ আমানত আলীর অনুপ্রেরণায় আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।
ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতির স্বপ্ন না দেখা এ ভাষাসৈনিকের চাওয়া ছিল ‘ভাষা আগ্রাসন’ যেন বন্ধ হয়।
ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করার কারণে আশরাফ হোসেন ১৯৫৪ সালে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ১৯৫৫ সাল থেকে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
নগরীর গুপ্তপাড়ার নিউ ক্রস রোডের ডুয়ার্স ভবনই ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেনের ঠিকানা।
ঢাকা পোস্টের দ্বিতীয় বর্ষে পদাপর্ণ অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ আফজাল ও ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসনে বড়দাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
এদিকে ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দার মৃত্যুতে রংপুর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেস ক্লাব রংপুর, সিটি প্রেস ক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, মাহিগঞ্জ প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএ, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শোক জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য