নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের প্রতিবাদে সোচ্চার সারা দেশ। পুলিশ, র্যাবও তৎপর হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামি ও তাদের মদতদাতা হিসেবে পরিচিত একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে।
এর আগে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। বাকিদেরও আদালতে তোলার প্রস্তুতি চলছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জে ওই নারীর বাড়িতে ঢুকে তাকে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হয়। রোববার সে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সারাদেশ, আর তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বেগমগঞ্জ থেকে রোববারই আবদুর রহীম ও রহমত উল্লাহ নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোববার গভীর রাতে আরেক অভিযুক্ত মো. দেলোয়ার হোসেনকে পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলিসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। আর দেলোয়ারের তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভোরে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে গ্রেফতার হন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদল।
নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তে সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
দুই আসামি রিমান্ডে
নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মাসফিকুল হক বিকেলে দুই আসামি আব্দুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান। পুলিশ তাদের সাত দিন হেফাজতে নেয়ার আবেদন করেছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দেলোয়ার বাহিনীর কাজ: র্যাব
মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদল ও মদতদাতা দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১১ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, এই ঘটনা বেগমগঞ্জের দেলোয়ার হোসেনের বাহিনী ঘটিয়েছে। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে এর আগে হত্যার দুটি এবং চাঁদাবাজির দুটি মামলা আছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, দেলোয়ারকে রোববার গভীর রাতে একটি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও দুটি গুলিসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে দেলোয়ারের তথ্যের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিকের কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামলার প্রধান আসামি বাদলকে।
বাদলকে হস্তান্তর করা হয়েছে বেগমগঞ্জ থানায়।
র্যাব জানায়, দেলোয়ার বাহিনী ওই এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত।
উচ্চ আদালতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সকালে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন দুই জন আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনা মানবতার ওপর জঘন্যতম অপরাধ। আপনারা এটি ফলোআপে রাখেন।’
আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের সমাজের ওপর প্রভাব পড়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদাহানি হয়েছে।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এ ঘটনায় শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বিদেশেও মানুষ দেখতে পেয়েছে।’
শুনানি শেষে নির্যাতিতা নারী ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
পাশাপাশি ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে দিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের অবহেলা আছে কি না- অনুসন্ধান করতে কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিকে ২৮ অক্টোবর প্রতিবেদন দিতে হবে।
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
বেগমগঞ্জ নির্যাতনের প্রতিবাদ হয়েছে সারাদেশে। রাজধানীর উত্তরা ও শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র গঠনে কঠোর ভূমিকার ডাক এসেছে।
বিক্ষোভে এই ঘটনার পাশাপাশি দেশজুড়ে ঘটা ধর্ষণের প্রতিবাদ জানানো হয়। উত্তরায় বিক্ষোভ শেষে দুই মাসের মধ্যে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়।
শাহবাগে কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ প্ল্যাটফর্মে প্রতিবাদকারীরা সমবেত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রদল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নোয়াখালীর সুবর্ণচরের শিক্ষার্থীরা আলাদা ব্যানারে মানববন্ধন করেন।
মামলায় যা অভিযোগ
আগের রাতে বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী; একটি নির্যাতনের ঘটনায় এবং একটি পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। আসামি করা হয় নয় জনকে।
আসামিরা হলেন বাদল, মো. রহিম, আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ ও রহমত উল্যা। তাদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে।
ওই নারী জানান, নির্যাতন করে তাকে বলা হয়, ঘটনা ফাঁস করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। তাকে কুপ্রস্তাবও দেয়া হয়। বলা হয়, রাজি না হলে ভিডিওটি ফেসবুকে ফাঁস করে দেয়া হবে। পরে তাই করা হয়।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছেন, নির্যাতনের ঘটনায় নয় জনকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে ধরতে অভিযান চলছে। দ্রুত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটিকে হৃদয়বিদারক বলে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক অঙ্গ সংস্থা ইউনিসেফ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক অফিসের প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যে ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। ইউনিসেফ এসব মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে ইতোমধ্যে রিপোর্ট করেছে এবং মোট কত শিশু নিহত বা আহত হয়েছে, তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের প্রত্যেকের জন্য শোক প্রকাশ করছি।’
অভ্যুত্থানে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকিসহ নানা ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনার নথি পাওয়া গেছে।
‘শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি; তাদের অনেককে হত্যা করা হয়, পঙ্গু করে দেওয়া হয়, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়, অমানবিক অবস্থায় আটক করে রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়।’
বিবৃতিতে শিশুদের ওপর সহিংসতার তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন ফ্লাওয়ার্স।
তিনি বলেন, ‘একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ধানমণ্ডিতে, যেখানে ২০০টি ধাতব গুলি ছোড়ার কারণে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জে, সেখানে ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।
‘এই বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়ংকর দিন ৫ আগস্ট পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়ে আজমপুরের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে বলে, সব জায়গায় বৃষ্টিপাতের মতো গুলি চলছিল। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেদিন।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে।’
বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে আর কখনোই যেন এমনটি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে দেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
প্রাপ্ত এসব ফলাফলের আলোকে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনা-বিষয়ক ইউনিসেফের আগের বিবৃতিগুলোর জের ধরে বাংলাদেশের সমস্ত নীতিনির্ধারক, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শিশু, যুবসমাজ ও পরিবারগুলোকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত সারিয়ে ওঠার পাশাপাশি আশা সঞ্চার করে তাদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
এ জন্য তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক অঙ্গ সংস্থাটি।
প্রথমত, যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে, তাদের ও তাদের শোকাহত পরিবারের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, যারা এখনও আটক অবস্থায় আছে এবং যাদের জীবন কোনো না কোনোভাবে এই ঘটনাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের সবার জন্য পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজোট হওয়া।
তৃতীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল ও নীতিনির্ধারকদের পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে, যাতে বাংলাদেশের কোনো শিশুকে আর কখনও এমন বিচার-বহির্ভূতভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আটক থাকতে না হয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে গিয়ে, যা তাদের অধিকার, তাদের যেন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হতে না হয়। আর এভাবে বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের অধিকার সমুন্নত রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি আরও বাংলাদেশি কর্মী নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আমিরাতের দুবাইয়ে দুই দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকগুলোতে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, বাণিজ্য ও ব্যবসার সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম বন্দরে আমিরাতি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ক্রীড়া ও শিক্ষা খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি জানান, আমিরাতি কোম্পানিগুলোকে তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জেয়ৌদি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করলে ড. ইউনূস আমিরাতি ব্যবসার জন্য বিশেষ শিল্প পার্ক স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশকে একটি ‘হালাল পণ্য উৎপাদন কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, যেখানে কম খরচে শ্রম সুবিধা পাওয়া যাবে।
এরপর আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে চান বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী।
প্রধান উপদেষ্টার এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও জ্যেষ্ঠ সচিব লামিয়া মোরশেদ।
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে অংশগ্রহণ শেষে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস।
দুবাই বিমানবন্দরে শুক্রবার তাকে বিদায় জানান সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রীড়ামন্ত্রী ড. আহমদ বেলহৌল আল ফালাসি।
আরও পড়ুন:যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় শুক্রবার রাতে দেশজুড়ে পালন করা হবে পবিত্র শবে বরাত।
হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ গভীর রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। রাতটি লাইলাতুল বরাত হিসেবেও পরিচিত।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে শনিবার সরকারি ছুুটি থাকবে।
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এ সৌভাগ্যময় রজনী মানব জাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদান ও প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।’
পবিত্র এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ মহিমাময় রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি; অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফিরাত।’
পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’
এ রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে আলোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভিডিও কলে আলোচনার সময় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে মাস্কের কোম্পানির সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও তারা আলাপ করেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টা স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্কের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার ও গ্লোবাল এঙ্গেজমেন্ট অ্যাডভাইজার রিচার্ড গ্রিফিথস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ইলন মাস্কের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাব, বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী তরুণ, গ্রামীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নারী এবং প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব নিয়ে কথা বলেন।
উচ্চগতির ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ কীভাবে বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন ড. ইউনূস ও ইলন মাস্ক।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের কানেক্টিভিটি যুক্ত করা হলে লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে দেশকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত করা যাবে।
তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তিতাড়িত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে মাস্কের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ পল্লী ফোনের একটি সম্প্রসারিত অংশ হতে পারে, যা গ্রামের নারী ও তরুণদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তারা বৈশ্বিক উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।
ইলন মাস্ক ওই সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করে দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা জানান।
টেসলা মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা জানান, গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণফোন উভয়ের কাজের ব্যাপারেই তিনি অনেক বছর ধরে জানেন।
মাস্ক বলেন, স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগালে বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সবাইকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এসবি ইমিগ্রেশনের বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল/ট্রানজিট ভিসা আবেদনে অনলাইন অ্যাপ উদ্বোধন, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন সহজীকরণ ও পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জটিলতা/অভিযোগ ৯৯৯-এ জানানোর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জাতিসংঘ র্যাব-বিলুপ্তির প্রস্তাব দিয়েছে। বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষার মধ্যে থাকা, ডিজিএফআইকে কেবল সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ও আনসারের ওপর থেকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ না রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে অবস্থান জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা প্রস্তাব তারা দিয়েছে। আমরা সবাই বসবো। বসার পর আমাদের যা ডিসিশন (সিদ্ধান্ত), সেটা আমরা জানাব।
‘তাদের এই তদন্তের বিষয়ে আমরা তো সবাই স্বাগত জানিয়েছি। তারা একটা ভালো কাজ করেছে। আমরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।
জেনেভায় বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।
এতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
স্বৈরাচারী সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, বিচার-বহির্ভূত হত্যা, মারণাস্ত্র দিয়ে নির্বিচার গুলি, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, চিকিৎসা পেতে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনকারীদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আরও পড়ুন:সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লিবিয়ায় আটকে পড়া ১৪৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন।
বুরাক এয়ারের চার্টার্ড ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগই সমুদ্র পথে অবৈধভাবে ইউরোপ গমনের উদ্দেশ্যে মানব পাচারকারীদের প্ররোচনা ও সহযোগিতায় লিবিয়ায় অনুপ্রবেশ করেন। তাদের অধিকাংশই লিবিয়াতে বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
এতে জানানো হয়, দেশে ফেরত আসার পর এই ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে আর যেন কেউ লিবিয়াতে না যান, এ বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পক্ষ থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের প্রত্যেককে ছয় হাজার টাকা, কিছু খাদ্যসমগ্রী উপহার, মেডিক্যাল চিকিৎসা ও প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য