নোয়াখালীতে নারীকে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার মামলায় গ্রেফতার বাদল ও দেলোয়ার
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্রের পর নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বাদলের সহযোগী মো. দেলোয়ার হোসেনও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশি হেফাজতে আছেন ওই গৃহবধূ।
নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভুক্তভোগী গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। আবাসিক চিকিৎসক সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই গৃহবধূর বাড়িতে ঢুকে তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবিও করে তারা। ৪ অক্টোবর ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে অভিযানে নামে র্যাব।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেলোয়ার এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতেন এলাকার লোকজন। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে এর আগে আরো দুটি মামলা আছে।
গ্রেফতার বাদলকে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করবে র্যাব। অন্যদিকে দেলোয়ারকে হস্তান্তর করা হবে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত মো. দেলোয়ার হোসেনকে একটি পিস্তল,ম্যাগাজিন ও দুটি গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রোববার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এরপর দেলোয়ারের তথ্যের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিকের কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদলকে।
নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, নির্যাতনের ঘটনায় নয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। দ্রুত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ডাক্তারি পরীক্ষায় জন্য নির্যাতিত গৃহবধূকে নেয়া হবে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে।
ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
কর্মসূচি থেকে বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও এজাহারে অভিযুক্ত দেলোয়ারের নাম না থাকায় ক্ষোভ জানানো হচ্ছে।
বাদল ও দেলোয়ারকে গ্রেফতারের তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম।
তিনি জানান, দুপুর ১টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে রোববার আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন রহমত উল্লাহ ও আবদুর রহিম। রোববার রাতে গ্রেফতার করা হয় রহমতকে। এর আগে বিকেলে গ্রেফতার করা হয় রহিমকে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হলো।
ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার দুপুরের দিকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হয়।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করে। তবে মূল সন্দেহভাজনরা আত্মগোপনে ছিলেন।
ওই নারী ও তার স্বামী এলাকা ছেড়ে গেলেও রোববার গভীর রাতে নোয়াখালী সদর উপজেলার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ নিউজবাংলাকে জানান, রাত দেড়টার দিকে বেগমগঞ্জ থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে বাদলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি বাদল এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে থানায় আরও একটি মামলা আছে। এছাড়া দেলোয়ার একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
আসামিদের মধ্যে একমাত্র রহমত উল্লাহ (৪১) ছাড়া সবার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এলাকায় তারা সবাই বখাটে হিসেবে পরিচিত।
ফেসবুকে এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী নিজেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কয়েকজন পুরুষ তাকে ক্রমাগত মারধর করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ওই নারীর স্বামী বেশকিছুদিন এলাকার বাইরে ছিলেন। বাড়িতে ফেরার পর বাদল ও তার সহযোগীরা তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে।
ঘটনার পর এক মাস পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল জড়িতরা। এ জন্য পরিবারটি থানায় অভিযোগও জানাতে পারেনি।