বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১০ আসামির মধ্যে সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩৪ ও ৩০২ ধারায়। এই ধারার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
এই সাত আসামির বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও একজোট হয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে।
বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের পালাতে সহযোগিতা করার। দণ্ডবিধির ১২০ বি ১ ধারায় আনা এই অভিযোগেও সরাসরি অপরাধে জড়িতদের যে শাস্তি হবে, সেটাও হতে পারে তাদের।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বরগুনার একটি আদালতে। গত সোমবার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন বিচারক।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান মিয়ার আদালতে গত ১ জানুয়ারি শুরু হয় বিচার কাজ। শুনানি শেষ হয় ১৬ সেপ্টেম্বর।
গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফকে প্রধান সড়কে ঘিরে ধরে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ পায়। পরদিন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী রাখা হয়। ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন প্রধান আসামি নয়ন বন্ড।
তবে তদন্তে ঘটনায় নাটকীয় মোড় আসে। প্রকাশ পায় প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যদিও ভিডিওতে তিনি তার স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন বলে প্রকাশ পায়।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ জন ও কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচার শুরু হয়। অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের বিচার চলছে শিশু আদালতে।
প্রাপ্তবয়ষ্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭ নং আসামি রাখা হয়।
৪৩ কার্যদিবসে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
১০ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।
হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে
নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পর মামলার প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী। গত ৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফরাজীর বিরুদ্ধে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। এলাকায় চুরি, ছাত্রাবাসে চাঁদাবাজি ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালে মার্চ মাসে ‘বন্ড ০০৭’ নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার আগের রাতে এই গ্রুপেই হত্যার নির্দেশনা দেয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপের সবাইকে ২৬ জুন বুধবার সকাল নয়টার মধ্যে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়। মোহাম্মদ নামে একজনকে আসার সময় রাম দা নিয়ে আসতেও বলা হয়।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যায়, রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর তাকে প্রথম কলার ধরেন রিফাত ফরাজী। দুই হাতে দুটি রামদা নিয়ে এসে কোপাতে শুরু করেন নয়ন।
রিফাত শরীফের ওপর হামলার ছবি
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আগেও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে মোট আটটি মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবার সন্ত্রাসে জড়ানোর অভিযোগ আছে।
দুই নং আসামি আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি ওরফে রাব্বি আকন আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন। তিনি বুড়িরচর ইউনিয়নের পশ্চিম কেওড়াবুনিয়া এলাকার আট নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাব্বি। তিনিও বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, রিফাত হত্যার পরিকল্পনা ও ঘটনাস্থলে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার।
অভিযোগপত্রে আছে, ঘটনার আগের দিন রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি রাব্বি আকনকে জানান রিফাত ফরাজী।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে রিফাত কলেজে রওয়ানা হলে সে খবর রিফাত ফরাজীকে মুঠোফানে জানান রাব্বি।
সকাল সোয়া নয়টায় রিফাত কলজে ঢুকলে এবং সায়েন্স ভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন এই আসামি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাত কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকেন রাব্বি।
হামলার সময় যেন পালাতে না পারে, সে জন্য অন্য আসামিদের সঙ্গে রাব্বি আকনও রিফাতকে ঘিরে রাখেন।
হত্যার পর নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে রাব্বির একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথোপকথনের প্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ গঠনের পর রাব্বি আকন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
এই মামলার তিন নং আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত। পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্ড গ্রপের অন্যতম এই সদস্যও হত্যার আগের দিন করা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রিফাত কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিফাতও তাকে ঘিরে ধরেন এবং রামদা আনতে দৌঁড়ে যান। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড যখন রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছিলেন, তখন নিহত রিফাতকে ঘিরে রাখেন সিফাত।
আগে থেকে তিনটি মামলার আসামি সিফাতের বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে।
রিফাত শরীফ
মামলার চতুর্থ আসামি রেজোয়ান আলী খান। তিনি স্থানীয়ভাবে টিকটক হৃদয় নামেও পরিচিত।
পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পর অন্যরা যখন তাকে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন কলেজের পূর্ব দিকে রাখা রাম দা আনতে যান রেজোয়ান। ফিরে এসে নিহত রিফাত শরীফকে ঘিরে রাখেন এই আসামি।
২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পরপর তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া ও কোপানোর সময় ঘিরে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে হাসানের পাঁচ নং আসামি বিরুদ্ধেও।
২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছে এই আসামিকে।
ছয় নং আসামি মুছা বন্ড এই মামলার একমাত্র পলাতক আসামি। বাড়ি বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকায়। তিনিও বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে মুছার বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার কারণ হিসেবে সাত নং আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
ষড়যন্ত্র ও সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এই তরুণীর বিরুদ্ধে। মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিন্নি প্রথমে নয়নকে বিয়ে করেন। বিষয়টি গোপন রেখে বিয়ে করেন রিফাত শরীফকে। তবে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক চালু থাকে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
হত্যার আগের দিন মিন্নি, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের কাছে বৈঠক করেন। সেখানেই হত্যার ষড়যন্ত্র হয় বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন মিন্নি, ২৯ আগস্ট তাকে জামিন দেয় উচ্চ আদালত। ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। এই মামলার জামিনে থাকা একমাত্র আসামি তিনি।
আসামিদের ‘পালাতে সহযোগী’ তিনজন
বাকি তিন আসামি রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুনের বিরুদ্ধে আসামিদের পলাতে সহায়তা ও আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে ১২০ বি ১ ধারা।
এরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও আসামিদের আশ্রয় দিয়ে পালাতে সহায়তা করেছেন বলে জনিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইমুন ও রাফিউল ইসলাম রাব্বির সহায়তায় ঘটনার পর পালিয়ে যান নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী।
বন্ড গ্রুপের সদস্য হিসেবে সাগর হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত হয়ে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ভিক্টর সূচক চিহ্ন দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাব্বি ও সাগরকে গতবছরের ১ জুলাই গ্রেফতার করে পুলিশ। সাইমুনকে একই বছরের ৩০ জুন গ্রেফতার করা হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য