বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১০ আসামির মধ্যে সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩৪ ও ৩০২ ধারায়। এই ধারার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
এই সাত আসামির বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও একজোট হয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে।
বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের পালাতে সহযোগিতা করার। দণ্ডবিধির ১২০ বি ১ ধারায় আনা এই অভিযোগেও সরাসরি অপরাধে জড়িতদের যে শাস্তি হবে, সেটাও হতে পারে তাদের।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বরগুনার একটি আদালতে। গত সোমবার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন বিচারক।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আসাদুজ্জামান মিয়ার আদালতে গত ১ জানুয়ারি শুরু হয় বিচার কাজ। শুনানি শেষ হয় ১৬ সেপ্টেম্বর।
গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফকে প্রধান সড়কে ঘিরে ধরে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও প্রকাশ পায়। পরদিন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী রাখা হয়। ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন প্রধান আসামি নয়ন বন্ড।
তবে তদন্তে ঘটনায় নাটকীয় মোড় আসে। প্রকাশ পায় প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যদিও ভিডিওতে তিনি তার স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন বলে প্রকাশ পায়।
ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ জন ও কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচার শুরু হয়। অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের বিচার চলছে শিশু আদালতে।
প্রাপ্তবয়ষ্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে ৭ নং আসামি রাখা হয়।
৪৩ কার্যদিবসে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
১০ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুন।
হত্যায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে
নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পর মামলার প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী। গত ৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফরাজীর বিরুদ্ধে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। এলাকায় চুরি, ছাত্রাবাসে চাঁদাবাজি ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালে মার্চ মাসে ‘বন্ড ০০৭’ নামে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার আগের রাতে এই গ্রুপেই হত্যার নির্দেশনা দেয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপের সবাইকে ২৬ জুন বুধবার সকাল নয়টার মধ্যে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়। মোহাম্মদ নামে একজনকে আসার সময় রাম দা নিয়ে আসতেও বলা হয়।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যায়, রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর তাকে প্রথম কলার ধরেন রিফাত ফরাজী। দুই হাতে দুটি রামদা নিয়ে এসে কোপাতে শুরু করেন নয়ন।
রিফাত শরীফের ওপর হামলার ছবি
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আগেও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে মোট আটটি মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবার সন্ত্রাসে জড়ানোর অভিযোগ আছে।
দুই নং আসামি আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি ওরফে রাব্বি আকন আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন। তিনি বুড়িরচর ইউনিয়নের পশ্চিম কেওড়াবুনিয়া এলাকার আট নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
প্রধান আসামি রিফাত ফরাজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাব্বি। তিনিও বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, রিফাত হত্যার পরিকল্পনা ও ঘটনাস্থলে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার।
অভিযোগপত্রে আছে, ঘটনার আগের দিন রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি রাব্বি আকনকে জানান রিফাত ফরাজী।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে রিফাত কলেজে রওয়ানা হলে সে খবর রিফাত ফরাজীকে মুঠোফানে জানান রাব্বি।
সকাল সোয়া নয়টায় রিফাত কলজে ঢুকলে এবং সায়েন্স ভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন এই আসামি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাত কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকেন রাব্বি।
হামলার সময় যেন পালাতে না পারে, সে জন্য অন্য আসামিদের সঙ্গে রাব্বি আকনও রিফাতকে ঘিরে রাখেন।
হত্যার পর নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে রাব্বির একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথোপকথনের প্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ গঠনের পর রাব্বি আকন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
এই মামলার তিন নং আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত। পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্ড গ্রপের অন্যতম এই সদস্যও হত্যার আগের দিন করা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রিফাত কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিফাতও তাকে ঘিরে ধরেন এবং রামদা আনতে দৌঁড়ে যান। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড যখন রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছিলেন, তখন নিহত রিফাতকে ঘিরে রাখেন সিফাত।
আগে থেকে তিনটি মামলার আসামি সিফাতের বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে।
রিফাত শরীফ
মামলার চতুর্থ আসামি রেজোয়ান আলী খান। তিনি স্থানীয়ভাবে টিকটক হৃদয় নামেও পরিচিত।
পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পর অন্যরা যখন তাকে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন কলেজের পূর্ব দিকে রাখা রাম দা আনতে যান রেজোয়ান। ফিরে এসে নিহত রিফাত শরীফকে ঘিরে রাখেন এই আসামি।
২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পরপর তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া ও কোপানোর সময় ঘিরে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে হাসানের পাঁচ নং আসামি বিরুদ্ধেও।
২০১৯ সালের ১ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছে এই আসামিকে।
ছয় নং আসামি মুছা বন্ড এই মামলার একমাত্র পলাতক আসামি। বাড়ি বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকায়। তিনিও বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে মুছার বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার কারণ হিসেবে সাত নং আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে উল্লেখ করা হয়েছে।
ষড়যন্ত্র ও সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এই তরুণীর বিরুদ্ধে। মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিন্নি প্রথমে নয়নকে বিয়ে করেন। বিষয়টি গোপন রেখে বিয়ে করেন রিফাত শরীফকে। তবে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক চালু থাকে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
হত্যার আগের দিন মিন্নি, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের কাছে বৈঠক করেন। সেখানেই হত্যার ষড়যন্ত্র হয় বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন মিন্নি, ২৯ আগস্ট তাকে জামিন দেয় উচ্চ আদালত। ৩ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। এই মামলার জামিনে থাকা একমাত্র আসামি তিনি।
আসামিদের ‘পালাতে সহযোগী’ তিনজন
বাকি তিন আসামি রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম সাইমুনের বিরুদ্ধে আসামিদের পলাতে সহায়তা ও আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অভিযোগ গঠন করা হয়েছে ১২০ বি ১ ধারা।
এরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও আসামিদের আশ্রয় দিয়ে পালাতে সহায়তা করেছেন বলে জনিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইমুন ও রাফিউল ইসলাম রাব্বির সহায়তায় ঘটনার পর পালিয়ে যান নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী।
বন্ড গ্রুপের সদস্য হিসেবে সাগর হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত হয়ে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ভিক্টর সূচক চিহ্ন দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাব্বি ও সাগরকে গতবছরের ১ জুলাই গ্রেফতার করে পুলিশ। সাইমুনকে একই বছরের ৩০ জুন গ্রেফতার করা হয়।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার প্রদান করেনি বলে শিক্ষামন্ত্রীর দাবির একদিন পর এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে ইউনূস সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪-১৬ মার্চ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত বাকু ফোরাম একাদশে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিশিয়াল অনুষ্ঠানসূচিতেও অধ্যাপক ইউনূস ইউনেস্কোর পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসকে বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তিনি ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য মঞ্চে সশরীর উপস্থিত থাকেন।
ইউনূস সেন্টার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে। অধ্যাপক ইউনূসকে প্রদত্ত ‘ট্রি অফ পিস’ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত পদকের একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এর আগে ২০২৩ সালের জুনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের সময় ইউনেস্কো এবং অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনূস স্পোর্টস হাবের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউনেস্কোর ফিট ফর লাইফ ফ্ল্যাগশিপের অধীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উভয় প্রতিষ্ঠানের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া।
এর আগে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ইউনেস্কো কমিশনের চেয়ারম্যান মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজারবাইজানের গঞ্জাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ইসরাইলের একজন ভাস্কর ‘ট্রি অফ পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করেন।”
ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পেয়েছেন বলে ড. ইউনূস যে দাবি করেছেন তা অসত্য বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্যাতন ও জনগণকে দমন করা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। বিএনপির ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী এই ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর তাদের দমন-পীড়নের প্রথম শিকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।’
বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকার বা একদলীয় শাসন বা এক নারী শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন শুরু করলে নেতা-কর্মীদের ওপর তারা দমন-পীড়ন শুরু করে।
‘তারা এমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে না, লিখতেও পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাবা-মা, ছেলে, মেয়ে-স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও রেহাই পায়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে নখ উপড়ে ফেলা, পা ভাঙাসহ নানা অমানবিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগীরা। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, তারা কোনো চিকিৎসা পাননি। পরিবারও তাদের চিকিৎসা করাতে পারেনি।’
সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আমাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি কাজ করে যাচ্ছি।
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ সালের মতো ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সে সময় জনগণ একতাবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এবারও আমাদেরকে সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
আরও পড়ুন:সিরাজগঞ্জের বেলকুচি জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ম্যানেজার আল-আমিনের জালিয়াতির নতুন নতুন খবর বেরিয়ে আসছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করে এই কর্মকর্তা ব্যক্তি জীবনে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন। চাকরির আড়ালে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার খোঁজ এখনও মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। এরই মাঝে তথ্য মিলেছে, ব্যাংকের ম্যানেজারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চক্র গ্রাহকদের বিপুল টাকা তাদের অগোচরে তুলে নিয়েছে। আর এভাবে ব্যাংকের বিপুল টাকা সরিয়ে নিয়ে চাকরির আড়ালে নিজের ব্যবসা ফেঁদেছেন ম্যানেজার আল-আমিন। ঠিকাদারিসহ পার্টনারশিপে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও দোকানপাট।
সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এদিকে জনতা ব্যাংক প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল বুধবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই সদস্যের তদন্ত দলও তাদের মতো করে তদন্ত করছে।
ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টের বিপুল পরিমাণ টাকার হদিস মিলছে না- এমন খবরে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার হিসাবধারী গ্রাহকরাও উৎকণ্ঠিত। তারা নিজ নিজ হিসাবের টাকার খবর জানতে ভিড় করছেন ব্যাংক কার্যালয়ে।
ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সিসি একাউন্টসহ বিভিন্ন হিসাব থেকে বড় অংকের টাকা নয়-ছয় হওয়ার শঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তবে এখনই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাচ্ছেন না তদন্তকারী দলের সদস্যরা।
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জনতা ব্যাংক তামাই শাখা থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে রোববার রাতে গ্রেপ্তার হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা। এর আগে অভিযুক্তরা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ২০ লাখ টাকা ভল্টে ফেরত দিয়েছেন- এমন তথ্য অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনুসন্ধানে গিয়ে ব্যবস্থাপক আল-আমিনের পার্টনারশিপে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল-আমিনের বসবাস সিরাজগঞ্জ শহরের ধানবান্ধি মতি সাহেবের ঘাট মহল্লায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ছয়-মাস ধরে ব্যবস্থাপক আল-আমিন তার বসতবাড়ির পাশে আবুল পাটোয়ারীর পাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের কারখানা। ‘এম আর ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের কারখানাটিতে পিভিসি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল তৈরি হয়।
এই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ শহরের বড়বাজার পাতিলাপট্টিতে পুরাতন হিরাঝিল মার্কেটে ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ইলেক্ট্রিক দোকানের প্রোপ্রাইটার হিসেবে ব্যবসায় করছেন আল-আমিনের ভাতিজা মঈন উদ্দিন পলাশ। ‘আবরার এন্টারপ্রাইজ’-এর আবরার নামটি আল-আমিনের ছোট ছেলের।
আল-আমিনের ব্যবসার গণ্ডি ছড়িয়েছে রাজধানীতেও। ঢাকার নবাবপুর ও মিরপুরে এম আর এন্টারপ্রাইজ নামে ইলেক্ট্রিক সামগ্রীর দুটি দোকান রয়েছে তার। গাইবান্ধায় যমুনা নদী তীর রক্ষাবাঁধের কাজে সিসি ব্লক তৈরি প্রকল্পেও আল-আমিন টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের হোসেনপুর মোল্লাবাড়ি মহল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে পার্টনারশিপে এসব ব্যবসা কারখানা ও দোকানপাট পরিচালনা করেন ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাদের ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে।
মঈন উদ্দিন পলাশ অবশ্য ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিকানা নিজের বলে দাবি বলেন, ইলেক্ট্রিক তার উৎপাদন কারখানাটি তার চাচার নয়, মিজানুর রহমানের।
অপরদিকে আল-আমিনের বন্ধু মিজান বলেন, ‘আবরার এন্টারপ্রাইজের মালিক আমি। আল-আমিন বা তার ভাতিজা পলাশ নয়।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যৌথভাবে ব্যাংক ম্যানেজার আল-আমিন ও মিজানুর রহমান।
বুধবার দুপুরে আল-আমিনের ধানবান্ধি মহল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রুনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার স্বামী আল-আমিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব আছে। কিন্তু তার সাথে কোনো প্রকার অংশীদারত্বমূলক ব্যবসার কথা আমি জানেন না।’
একইসঙ্গে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন, তার স্বামী আল-আমিন কারও খপ্পরে পড়ে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।
একই দিন সকালে বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে গিয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম সেখের ছেলে সাদি সেখ বলেন, “এই ব্যাংকে ‘শামীম ব্রাদার্স’ ও ‘সাদি এগ্রো ফার্ম’ নামে আমাদের দুটি একাউন্ট আছে। এর মধ্যে শামীম ব্রাদার্স-এর হিসাবের ২৩ লাখ আর সাদি এগ্রো’র হিসাব থেকে ৩২ লাখ টাকা ডামি চেকে স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে।”
মুসলিম উইভিং ফ্যাক্টরি নামীয় হিসাবধারী মোতালেব জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার হিসাবে ৪৮ লাখ টাকার সিসি লোন পাস করা আছে। আমি ২০২২ সালের পর ব্যাংকের এই শাখা থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করি নাই। ব্যাংকের এই অবস্থা জেনে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে দেখা যায় যে, ৪৮ লাখ টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে।’
জনতা ব্যাংক তামাই শাখার অনেক গ্রাহকেরই এমন অভিযোগ। শাহিন কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের সিসি হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ১৫ লাখ, চান টেক্সটাইলের চান মিয়া আকন্দের ১০ লাখ, হাজী আব্দুল্লাহ আকন্দের পাঁচ লাখসহ অনেক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা তাদের একাউন্ট থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ হাওলাতি টাকা নিয়েছেন শাখা ব্যবস্থাপক আল-আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, ‘২৪ মার্চ বিপদের কথা বলে স্বল্প সময়ে পরিশোধের আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার চেয়েছিলেন আল-আমিন। দুই লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি না জানিয়ে আমার ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। আর একই দিন সন্ধ্যায় ব্যবস্থাপক তার নামে আমার কাছ থেকে পিয়ন শহিদুল মারফত ১০ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নিয়েছেন।’
মোহাম্মদ আলী উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক হাজী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ব্যাংককে বিশ্বাস করে টাকা রাখি। সেই ব্যাংক যদি এরকম কাজ করে তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল হক জানান, ম্যানেজার আল-আমিন বিভিন্ন সময় লুজ চেক ব্যবহার করে সিসি একাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষরের মিল নেই, চেকের সিরিয়ালের পরম্পরা নেই।
ব্যাংকের ক্যাজ্যুয়াল পিয়ন শহিদুল বলেন, ‘ম্যানেজার স্যার বিভিন্ন সময়ে আমার নাম ব্যবহার করে আমার মাধ্যমে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনে তিনি আমার নাম লিখে দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি জানি না।’
জনতা ব্যাংক এরিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ভল্টের ক্যাশ লিমিট ৭৫ লাখ টাকা। তাহলে সেই ভল্টে আত্মসাৎ করা পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলো কীভাবে- এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত চলছে, তদন্তে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম নজরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল-আমিন, সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও ব্যাংকের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরদিন সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। পরে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক সাধারণ ডায়েরি আকারে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা অফিসে পাঠানো হয়।
দুদক সমন্বিত পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খায়রুল হক বলেন, ‘অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক।
বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজে পৌঁছান তিনি। সেখানে বিশ্রাম ও দুপুরের খাবারের পর জেলা শহরের কাছে ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত প্রস্তাবিত ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সেখানে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রায় ২০মিনিট অবস্থান করে সবকিছু দেখেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাজা স্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি এলাকাটি ঘুরে দেখেন এবং সবার সঙ্গে ছবি তোলেন। পরিদর্শনকালে জোন এলাকাটি তার পছন্দ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও ইকোনোমিক জোন এলাকায় অ্যাগ্রোবেজড ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ হওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ভুটানের বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশের স্থানীয়দের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ইকোনোমিক জোনে কী ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। পরে জোন এলাকা থেকে তিনি ১টা ৪০ মিনিটে সোনাহাট স্থলবন্দরের উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করেন।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী এম এ আরাফাত, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার, সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক বলেন, ‘জায়গাটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি কাজ শুরু হলে আবারও এখানে আসব।’
এরপর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি সোনাহাট স্থলবন্দর এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ২০ মিনিট অবস্থানের পর তিনি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গোলকগঞ্জ দিয়ে ভুটানের উদ্দেশে ভারতে প্রবেশ করেন। সোনাহাট থেকে সড়ক পথে ভুটানের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।
সফর শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘উনি শতভাগ সন্তষ্ট। জায়গা দেখেছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখেছেন। সবকিছু মিলিয়ে উনি সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে কী ধরনের কার্যক্রম হতে পারে, সে বিষয়ে রাজা জানিয়েছেন, এখানকার স্থানীয় লোকজনের কী ধরনের চাহিদা রয়েছে এবং ভুটানের বিনিয়োগকারী লোকজনের কী চাহিদা রয়েছে- তার ওপর ভিত্তি করে এখানে কী ধরনের শিল্পকারখানা হবে তা নির্ধারণ করা হবে। তবে কৃষিনির্ভর ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১০/২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে অনুন্নত কুড়িগ্রাম উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে। ২০১৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক জোনের জন্য জায়গা খুঁজতে বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমরা সফলতার মুখ দেখছি।
‘এটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার বেকার মানুষ কাজ পাবে। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে পিছিয়ে পড়া এই জেলা।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পতেঙ্গা থানাধীন ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙর করা একটি ফিশিং বোটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন- ৫৫ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন, ৪৫ বছর বয়সী মাহমুদুল করিম ও মফিজুর রহমান এবং ২৮ বছর বয়সী এমরান। এদের মধ্যে প্রথম তিনজনের শরীরের ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। অন্যজনের শরীর পুড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ।
চমেক হাসপাতালে বার্ন ও ক্যাজুয়ালটি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের বার্ন হয়েছে। এই ধরনের রোগীদের অবস্থা ভালো থাকে না।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারে ইঞ্জিন থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে চট্টগ্রামের চার তরুণকে জিম্মি করেছে একটি চক্র। সেখানে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছে মুক্তিপণ। এ নিয়ে দেশে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনা বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। আর ওই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
হুমকি দেয়া হয়, মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে এক এক করে লাশ পাঠাবে বলে স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করেছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি?’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
মন্তব্য