কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করে ঢাকায় এসে রাজনৈতিক জীবন শুরু করার পর বসবাসের জন্য বঙ্গবন্ধুর কোনো বাসস্থান ছিল না। ট্রেন থেকে ফুলবাড়িয়া নেমে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সোজা চলে গিয়েছিলেন ১৫০ মোগলটুলীর দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে আবুল হাশিম ও সোহরাওয়ার্দী সমর্থিত মুসলিম লীগের একটি ক্যাম্প অফিস ছিল। দূর-দুরান্ত থেকে আসা কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। অফিস সচিব শওকত আলী এ দিকটা সামলাতেন। শেখ মুজিবুর রহমানও তার কল্যাণে ক্যাম্প অফিসে থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা পেলেন। এভাবেই মুজিবের ঢাকাই জীবন শুরু।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর মেস জীবন
এরপর শুরু হয় তার মেস জীবন। সেটাও নিজের ভাড়া করা মেসে নয়, ফুফাত ভাই মমিনুল হক খোকার মেসে। খোকা পুরান ঢাকার আরমানীটোলার রজনী বোস লেনের একটি মেসবাড়িতে বসবাস করতেন। একদিন সেখানে উঠে যান বঙ্গবন্ধু। একটি চৌকিকে ভাগাভাগি করে থাকতে শুরু করেন। কাঁথা-বালিশ-চাদর সবকিছুই ফুফাত ফাইয়ের কেনা।
শেখ মুজিব ভাবলেন, ক্যাম্প অফিস কর্মীতে ঠাসাঠাসি। তাই জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্যে তার মেসে থাকার সিদ্ধান্ত। তাদের দলে এমন অনেক কর্মী রয়েছেন, যাদের সামর্থ্য নেই মেসে থাকার, আবার এমন কোনো আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবও নেই, যাদের কাছে তারা থাকতে পারেন।
মমিনুল হক খোকার স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৯৫৩ সালের দিকে শেখ মুজিব তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক সহচর জালাল উদ্দিন মোল্লা এবং আবদুল হামিদ চৌধুরীকে নিয়ে আরমানীটোলার ৮/৩ নম্বর রজনী বোস লেসের মেসে চলে আসেন।
টুঙ্গিপাড়া থেকে মাঝেমধ্যে স্ত্রী ফজিলাতুনন্নেসা ওরফে রেনুও সেখানে এসে সবাইকে অবাক করে দিতেন। শেখ মুজিব যা যা পছন্দ করতেন, সবকিছুই ব্যাগভর্তি করে নিয়ে আসতেন রেনু।
রজনী বোস লেনের ছোট বাসাটি এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক ঘটনাবহুল দিনের সাক্ষী হয়ে আছে। কেউ কেউ মনে করেন, রজনী বোস লেনের আগে বঙ্গবন্ধু কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের এক মেসে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন। ফলে ঢাকায় ওটাই মুজিবের প্রথম ঠিকানা।
মমিনুল হক খোকা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের মেঝ ফুফুর ছেলে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা ছিল তার পৈত্রিক বাড়ি। মুজিবের পরিবারের সঙ্গে তিনি আজীবন ছায়ার মতো থেকেছেন। নিঃস্বার্থভাবে পরিবারটিকে আগলে রেখেছিলেন। শেখ মুজিব রাজনৈতিক কারণে জীবনের বড় একটা অংশ জেলে কাটিয়েছেন। এ দুঃসময়ে তিনি পুরো পরিবারের অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনা, শেখ কামাল ও শেখ রেহানাকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন স্থানীয় অভিভাবক হিসাবে।
অস্তরাগের স্মৃতি সমুজ্জ্বল: বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি শিরোনামের বইতে মমিনুল হক খোকা স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে: ‘রজনী বোস লেনের মেসবাড়িটি ছিল শেখ মুজিবের মিনি অফিস। তখনকার সময় তাঁর অনেক রাজনৈতিক সহকর্মী সেখানে যেতেন। তারা গোপন সভায় মিলিত হয়ে সাম্প্রদায়িক পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও এ দেশীয় এজেন্টদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার পথ খুঁজতেন।’
রজনী বোস লেনের এই ছোট কক্ষটি এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় সাক্ষী। বঙ্গবন্ধুর ঢাকার রাজনৈতিক জীবনের অনেক ঐতিহাসিক উপাদান ওই কক্ষ ও তার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
তেমন একটি উপাদান ‘অবনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’। মেস বাড়ির অদূরে আরমানীটোলা বটতলায় ছিল এটির অবস্থান। সেখানে শেখ মুজিব নিয়মিত আড্ডা দিতেন। সেই আড্ডায় মিলিত হতেন তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী হাফেজ মুসা, শওকত আলী, ইয়ার মোহাম্মদ খান, মোল্লা জালাল উদ্দিন, আতাউর রহমান খানসহ আরো অনেকে। চলত বিভিন্ন আলোচনার পাশাপাশি চা-নাস্তা খাওয়া। সেখানকার হালুয়া, লুচি, রসগোল্লা ও গরম ডালপুরি ছিল বঙ্গবন্ধুর খুবই প্রিয়।
অবনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কাছেই ছিল হাফেজ মুসার বাড়ি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা। পরবর্তী জীবনে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন। যখনই শুনতেন মুজিব অবনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এসেছেন, তিনি দৌড়ে সেখানে হাজির হতেন। ‘আদি ঢাকাইয়া’ এ মানুষটির ছিল দরাজ আত্মা। তিন প্রয়াত মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের আত্মীয় ছিলেন। ১৯৫৪ সালে বন্যার সময় বঙ্গবন্ধু স্ত্রী-সন্তানসহ তার বাড়িতে কিছুদিন বসবাস করেছিলেন।
ঢাকার রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, রজনী বোস লেনের মেসবাড়িটি ছিল শেখ মুজিবের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। এ মেসে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব লাভ করেছিলেন। এটা ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের ‘ইউ টার্ন’।
মেসের ছোট কক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানের আওয়ামী লীগপন্থি নেতা মোহাম্মদ খান লুন্দখোর কিছুদিন অতিথি হিসেবে থেকেছিলেন। মেসে থেকে তিনি অনুভব করেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ নেতারা কত দীনহীনভাবে জীবন যাপন করে মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও লেখক আবুল মনসুর আহমেদ এই মেসে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করতেন।
এ-বাড়ি ও-বাড়ি
যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেগুনবাগিচায় সরকারি বাসভবনে ওঠেন। বেশিদিন থাকা হয়নি সে বাসায়। সরকার গঠনের ৫৬ দিনের মাথায় তা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। গ্রেফতার হন শেখ মুজিব। তখন তার পরিবারকে সরকারি বাসভবন থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
তখন পরিবারটির মাথার উপর ছাদ তো দূরের কথা, কোনো খড়কুটোও নেই। তারা এখানে-সেখানে ঘুরতে থাকেন। অবশেষে ঠাঁই পান নাজিরাবাজারে মোহাম্মদ হানিফের বাসায়। মাত্র তিন দিনের নোটিশে তাদেরকে সরকারি বাসভবন ছাড়তে হয়েছিল। এরপর আওয়ামীলীগ নেত্রী আমেনা বেগমের সহযোগিতায় এক নির্মাণাধীন বাড়িতে তাদের উঠতে হয়। কিন্তু নির্মাণকাজের নানা ঝামেলা, লোহালক্কর ভাঙ্গার আওয়াজ ও হাতুড়িপেটার বিকট শব্দের কারণে তারা বেশিদিন সেখানে থাকতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধু তখন জেলে থাকায় অনেক বাড়িওয়ালা তার পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দিতেন না, মূলত পুলিশি হয়রানির কারণে। সেগুনবাগিচায় বাসা ভাড়া নিতে গেলে একজন জজ পর্যন্ত তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। এমনকি তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম গ্যারান্টর হওয়ার পরও তারা বাসা ভাড়া পাননি।
গ্যারান্টর হয়ে জহুরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের পরিবারকে বাসা ভাড়া দিলে কোনো অসুবিধা হবে না। তাদের সব দায়িত্ব আমার। তারা নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করবেন। না করলে তাদের ভাড়া আমি পরিশোধ করব।’
পরে মুসলিম লীগের নেতা ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ভাগ্নে আজিজুল হক নান্না মিঞার অনুরোধে সেই জজ সাহেব সেগুনবাগিচার বাসা ভাড়া দিয়েছিলেন। নান্না মিঞা শেখ মুজিবের বিপরীতমুখি রাজনীতি করলেও তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
শুধু বাসা ভাড়া নয়, শেখ মুজিবের সন্তানদের পড়াশোনারও অনেক বিঘ্ন ঘটে তখন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে। পাকিস্তানের দোসররা বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের পড়াশুনার পথ রুদ্ধ করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা-তদবির চালায়। এমনকি তাদেরকে কোনো স্কুলে পর্যন্ত ভর্তি নিত না।
তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনেও। পাকিস্তানি শাসকদের ভয়ে যখন কোনো স্কুল তাকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তখন এগিয়ে আসেন কবি সুফিয়া কামাল। তিনি থাকতেন টিকাটুলীতে। সেখানকার ‘নারী শিক্ষা মন্দির’ স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি শেখ হাসিনাকে সেখানে ভর্তি করে দেন। বিপ্লবী নীলা নাগের প্রতিষ্ঠিত স্কুল নারী শিক্ষা মন্দির হয়ে শেখ হাসিনা কামরুননেসা গার্লস স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল হয়ে ইডেনে পড়াশুনা করেছিলেন। সে সময় শেখ কামাল ও জামাল ভর্তি হয়েছিলেন শাহীন স্কুলে।
পাকিস্তানের ২৫ বছরে শেখ মুজিবকে ১৪ বছরই জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছিল। এ সময় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এবং তার সন্তানদের কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল। তার স্ত্রীর সংগ্রামী জীবন ছিল একটি অনুকরণীয় বিষয়। একজন বাঙালি নারী কতটা সহনশীল আর আদর্শ চরিত্রের হতে পারেন, এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হলেন তিনি। তার জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করলেই সেটা বুঝা যাবে।
বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। সিদ্ধেশ্বরীতে বাসা ভাড়া নিতে গেলেন বেগম মুজিব। সেখানে গিয়ে তিনি এক অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলেন। সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল মাঠের পাশে এক পুলিশ অফিসারের বাসা ভাড়া নেন মাসিক ২০০ টাকায়। শেখ মুজিবের পরিবারকে বাসা ভাড়া দেওয়াতে পাকিস্তানি প্রশাসনের উপর মহল থেকে বাড়িওয়ালাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বাড়ির মালিক অনেকটা বাধ্য হয়েই সে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। বেগম মুজিব তখন ঘটনাটি কবি সুফিয়া কামালকে জানান। তখন তিনি যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়িওয়ালাকে শেখ মুজিবের পরিবারকে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার অনুরোধ করেন। কারণ সেখানে একটি বাসা তখন খালি ছিল। কিন্তু বাড়িওয়ালা তাদের পরিচয় জেনে আর বাসা ভাড়া দিতে রাজি হননি। অবশেষে প্রখ্যাত কংগ্রেসনেতা ও মন্ত্রী আশরাফ আলী চৌধুরীর সহযোগিতায় তাদের জন্য ৭৬ নম্বর সেগুন বাগিচায় ৩০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাসা জোগাড় করা হয়।
৩২ নম্বরে এক বিঘার প্লট
মূলত এমন সীমাহীন হয়রানি আর দুর্দশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্লটে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন বেগম মুজিব। ১৯৬০ সালের দিকে শেখ মুজিব জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বেগম মুজিব বলেন, পাকিস্তানি শাসক এবং এদেশীয় দোসর-দালালদের ভয়ে তাদেরকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। দিলেও পরে উঠে যেতে বলে। ফলে আশ্রয়ের জন্য এখানে-সেখানে ঘুড়ে বেড়াতে হয়। এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় বেশ বিঘ্ন ঘটছে।
এসব কথাবার্তা বলে বেগম মুজিব বরাদ্দ পাওয়া ধানমন্ডির প্লটে বাড়ি নির্মাণে রাজি করান স্বামীকে। কিন্তু অধিকাংশ সময় জেলে কাটানো স্বামীর হাতে বাড়ি বানানোর টাকা কোথায়?
বেগম মুজিব ছিলেন দৃঢ়চেতা বাঙালি নারী। তিনি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। নিজের কাছে ছিল সঞ্চয় করা কিছু টাকা। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করলেন দীর্ঘমেয়াদে। তার সঙ্গে যুক্ত হলো বঙ্গবন্ধুর বেতনের সামান্য আয়। বঙ্গবন্ধু তখন আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
১৯৬০-৬১ সালের দিকে বাড়ি নির্মাণ শুরুর এক পর্যায়ে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে কিছু টাকা ঋণ নেওয়া হয়। বাড়ি বানানোর সময় কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী মুজিব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম, তৎকালীন পিডব্লিউডির নির্বাহী প্রকোশলী পরে পূর্তসচিব মাইনুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম ‘ওরফে পোস্টার নুরু’ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মাইনুল ইসলাম বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ির নকশা করে দিয়েছিলেন। নির্মাণ কাজেরও তদারকি করেছেন তিনি। কখনও নির্মাণসামগ্রী বা অন্যান্য জিনিস সরবরাহে এগিয়ে এসেছেন জহুরুল ইসলাম।
নির্মাণাধীন বাড়ির সার্বক্ষণিক কর্মী ছিলেন পোস্টার নুরু। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এমন বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক এদেশে বিরল। বাড়ি নির্মাণের সময় পোস্টার নুরু যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলে বঙ্গবন্ধু তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে দেখতে বঙ্গবন্ধু সপ্তাহে একদিন হাসপাতালে যেতেন। এভাবে তিন মাসের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে নুরুল ইসলাম প্রায়শ ক্রসওয়ার্ড লটারি খেলতেন। লটারিতে নামঠিকানা দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তিনি একদিন সেখানে শেখ রেহানার নাম দেন। সেদিনই তিনি পেয়ে যান ছয় হাজার টাকা। তখনকার সময় সেটা ছিল বিশার অঙ্ক। সে টাকা নিয়ে তিনি সোজা চলে যান বেগম মুজিবের কাছে। ঘটনা খুলে বলে তিনি জানান, ‘টাকাটা তো আমি রেহানার ভাগ্যে পেয়েছি। তাই ভাবি এটা আপনার কাছে রেখে দেন। মুজিব ভাইয়ের বাড়ি নির্মাণে অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় হচ্ছে বরং এ কাজে তা খরচ করবেন।’
তার এমন দরদভরা কথায় বেগম মুজিব টাকাটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের কাছে রেখে দেন। বলা বাহুল্য তিনি টাকাটা বাড়ি নির্মাণে খরচ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে সেটা নুরুল ইসলামকে অনেকটা জোরপূর্বক ফেরত দিয়েছিলেন।
৩২ নম্বরের বাড়ি নির্মাণে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক কর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। সেসব তথ্য হয়তো গবেষক লেখকদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান রাজনীতির পাশাপাশি লোহা-লক্কড়ের ব্যবসা করতেন। তেজগাঁয়ে তার একটি গ্রিল তৈরির কারখানা ছিল। তিনি প্রিয় নেতার ৩২ নম্বরে বাড়ি নির্মাণের সময় জানালার গ্রিল সরবরাহ করেছিলেন। বাড়ির মধ্যে রোপনের জন্য নারিকেল ও সুপারি গাছ গ্রাম থেকে এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি শেখ মোহাম্মদ মুসা। বাড়ির সামনে ঝাউ গাছ লাগিয়েছিলেন নূরউদ্দিন আহমেদ।
দুইটি বেড রুম, একটি ড্রইং রুম এবং একটি গেস্টরুম দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ৩২ নম্বরের জীবন শুরু করেছিলেন। বেডরুমের একটিতে সস্ত্রীক বঙ্গবন্ধু থাকতেন। একটিতে থাকতেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। গেস্টরুম শেখ কামাল ও শেখ জামাল ব্যবহার করতেন। ড্রয়িং রুমে সাজানো হয়েছিল কমদামি একটি বেতের সোফাসেট দিয়ে।
এ বাড়ির সঙ্গে বেগম মুজিব ও শেখ মুজিবের অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে ছিল। রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি গণভবন ও বঙ্গভবনের জৌলুস আর রাষ্ট্রীয় চাকচিক্য, সুযোগ সুবিধা বাদ দিয়ে কার্পেটবিহীন, শীততাপ নিয়ন্ত্রণহীন সাধারণ একটি বাড়িতে থাকতে পছন্দ করতেন। ষাটের দশকের ছায়াসুনিবিড় ধানমন্ডিতে খরগোশ আর সজারু ঘুরে বেড়ানো পরিবেশ তাদের মনকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করত।
বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সোমবার বিকেলে কর্নারের উদ্বোধন করেন।
একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনে একুশে টেলিভিশনের উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘জাতির পিতার প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ আর দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বসহ গণতন্ত্রের জন্য একুশে টেলিভিশন তাদের প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে।
‘আজকে একুশে টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হলো, সম্ভবত এটি প্রথম কোনো টিভি স্টেশন যেখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন হলো। একুশে টেলিভিশনের কলাকুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন, তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে এই টেলিভিশন দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, এখন যে বন্যা হচ্ছে, সে সময় একুশে টেলিভিশন অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে একুশে টেলিভিশন বহু অনুষ্ঠান করেছে।’
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারে একুশে টেলিভিশন কার্যালয়ের সপ্তম তলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।
কর্নারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। ফাইবারে তৈরি প্রতিকৃতিটির শিল্পী বিপ্লব দত্ত।
এ ছাড়া এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই রাখা হয়েছে।
পরে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ একুশে টেলিভিশনের গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বই দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়েছে গ্রন্থাগারটি।
একুশে টেলিভিশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু কিংবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটই হোক, বাংলাদেশের এমন যেকোনো সফলতা নিয়েই কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধিতা করবে। এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
নিজের ফেসবুকে পেজে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার রাতে দেয়া পোস্টে এ মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, “যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মারা যাতে অন্ধকার অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে না পারে, সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।”
গত ৬ মে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্টের’ একটি ভিডিও ওই পোস্টে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ। তার বর্ণনায় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সহায়তায় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি এসব কথা লেখেন।
“১৯৭১ সাল, হাজার হাজার মাইল সাগর দূরত্বের একটি দেশ তার লালসবুজ পতাকা রক্ষায় রক্ত ঝরাচ্ছিল। আর বন্ধুর মুখে সেই দেশটির গল্প গভীরভাবে নাড়া দিল বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে।
“পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা, অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ আর অনাহারে শিশুদের মৃত্যু তাকে মর্মাহত করল। ঠিক তখনই কিছু কাব্যিক শব্দ একটি অবিস্মরণীয় গানের লিরিক আকারে ফুটে উঠল।”
খ্যাতনামা ব্রিটিশ ব্যান্ডদল বিটলসের ভোকাল ও লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ইংরেজি ওই গানটির বাংলা ভাষান্তর নিজের পোস্টে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা।
‘চোখ ভরা বিষাদ নিয়ে আমার বন্ধু আমার কাছে এসেছিল, তার দেশ শেষ হয়ে যাবার আগে পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে আমাকে জানিয়েছিল।’
মনে যা এসেছিল, শুধু তাই দিয়ে গানটি রচনা করলেন না বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসন। বরং ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস একটি গণহত্যার শিকার হওয়া বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার চিন্তায় মগ্ন তখন।
‘ছুটে গেলেন বব ডিলান এবং এরিক ক্ল্যাপটনের মতো কিংবদন্তিদের কাছে। তারাও বাংলাদেশকে সমর্থন জোগাতে সম্মত হন। আর বাকিটা তো ইতিহাস।
‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের মাধ্যমে তারা যুদ্ধের শিকার দেশকে সাহায্য করার নজির স্থাপন করেছে। যখনই আমি এটি ইউটিউবে দেখি, এটি আমাকে একটি সোনালি মুহূর্তে ফিরিয়ে নিয়ে যায়'-
“জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশ গানটি গাইছেন, কানে ভাসছে বব ডিলানের ‘হাউ মেনি রোডস অ্যা ম্যান মাস্ট ওয়াক ডাউন (কতটা পথ পেরোলে বলো পথিক হওয়া যায়)’, ঝড়ের মতো তার সেতারে সুর তুলছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। একই মঞ্চে সকল তারাদের মেলা!”
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই মুহূর্তকে আরেকটি কনসার্টের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা তুলে ধরেন জয়।
‘বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রকস্টার ও গানের সম্রাটরা যেমনটি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশের স্বপ্ন সত্যি হল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশটি এখন টেকসই অগ্রগতি এবং উন্নয়নের একটি প্রতিকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’
বাংলাদেশ স্থাপত্যের দৃষ্টিনন্দন কর্মযজ্ঞ পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- এক অনুপ্রেরণার ইতিহাস রচনা করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাইকে সোনার বাংলার প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, হ্যারিসনের বাংলাদেশ গানটি আরও একবার গাই এবং বিশ্ব আবার শুনুক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়াই হলো এবারের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রতিশ্রুতি।’
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় যে কলেজে পড়েছেন, সেই সাবেক ইসলামিয়া কলেজ বা বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজে বিশ্ববরেণ্য এই ছাত্রের জন্ম শতবর্ষের শ্রদ্ধা জানাতে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়।
শনিবার মৌলানা আজাদ কলেজের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা চক্রে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুল রহমান এবং কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কাছে বাংলা শুধুমাত্র একটা শব্দ ছিল না। তার কাছে বাংলা ছিল একটা দর্শন। তিনি ছিলেন আমার কাছে একজন শিক্ষক। বাংলা সাহিত্যকে অনুবাদ করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববন্দিত এই নেতাকে পাকিস্তানের জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে ফাঁসি দেয়ার প্রস্তুতিতে কবরও খোঁড়া হয়েছিল, পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মৃত্যুর পর তার দেহ যেন বাংলাদেশের মাটিতে কবর দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা ছিল এতটাই।’
কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আশরাফুল রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি ছিলেন দুই বাংলার বন্ধু। তার মানসিক বিকাশে এই কলেজের একটা অবদান রয়েছে।’
কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন, এই কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি। কলেজের হোস্টেলে থাকতেন। একটি জাতিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র কিছু অংশ পাঠ করে শোনান কলেজের ছাত্ররা।
কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে তাদের দাবি নিয়ে লড়াই করেছিলেন, কীভাবে ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কলকাতাসহ অন্যান্য এলাকার দাঙ্গাপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন– বক্তারা তা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন:দেশের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়কে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে ভূমিহীন ৫৯টি পরিবারকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে জমিসহ আধাপাকা বাড়ি দিচ্ছে সরকার।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড়ের পাশেই চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। সেখানেই ঠাঁই হবে কালীগঞ্জ উপজেলার ৫৯ পরিবারের প্রায় ৩০০ মানুষের।
দেশের ইতিহাসে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় পল্লি হতে যাচ্ছে। সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে পল্লিটি নির্মাণ হচ্ছে জলাধারের পাশেই।
আগামী জুনের মধ্যেই এ বাড়িগুলো বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করতে পারা যাবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দেশে সমতল পর্যায়ে যে ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য মুজিববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় মিলিয়ে ৬ হাজার ৫০০ গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মধ্য সবচেয়ে বড় বেদেপল্লি হতে যাচ্ছে কালীগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
শুক্রবার গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকা মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। নির্মাণাধীন এলাকাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইট। ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।
৫৯ পরিবারের প্রায় ৩০০ লোকের বাসস্থানের ঘরের পাশাপাশি সেখানে নির্মাণ করা হবে মসজিদ, কবরস্থান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ।
যেসব ভূমিহীন বেদেদের বাড়ি দেয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
পরম্পরা অনুযায়ী সাপ খেলা দেখান কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের মদিনাপারার শহীদুল ইসলাম। নিজের কোনো জমি নেই, পরের জায়গায় থাকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, ঘর পাইলে ভালো হবে৷ পরিবেশটা একটু ভালো হয়। ঘর পাইলে নাতি-নাতনিদের শিক্ষিত করে বিদ্যান করব, ওই স্বপ্ন দেখছি।
‘বাবা-দাদা আমাগো মূর্খ বানাইয়া থুইয়া গেছে, যদি আমাদের একটু শিক্ষা দিয়া যাইত, তাইলে ভালো হতো। তালিকা নিয়া গেছে, নাম সব নিয়া গেছে।’
একই পাড়ার রঙ্গিলা বেগম গ্রামে গ্রামে ঘুরে ‘দাঁতের পোকা তুলে’ ও শিঙ্গা লাগিয়ে আয়-রোজগার করেন। ২২ বছর বয়সী নারীর রয়েছে দুই সন্তান। স্বামী দেখান বানরের খেলা। যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে সংসার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে-ঘাটে থাকি, এবার একটা ঠিকানা হবে। সামর্থ্য হলে পোলাপানদের লেখাপড়া করামু।’
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝিনাইদহ উপজেলার কালীগঞ্জে বেদেদের জন্য ৫৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বেদে সম্প্রদায় এখনই উল্লসিত তাদের ঘর পাওয়ার বিষয়টি জেনে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বিনির্মাণের জন্য এই প্রকল্পটি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।’
মাজদিয়া বাঁওড়ের পাশে জায়গাটা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরের পাশাপাশি এখানে মসজিদ, কবরস্থান, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটা ঘরে দুইটা রুম আছে, একটা রান্নাঘর, বাথরুম থাকবে। ঘরপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ঘরের চারপাশে কিছু খোলা জায়গা রেখেছি, তারা যাতে গবাদি পশু পালন এবং গাছ লাগিয়ে পরিবেশটা সুন্দর রাখতে পারে। সার্বিকভাবে এটা যাতে আধুনিক পল্লিনিবাসের সুবিধা পায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
যাযাবর জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম বেদে সম্প্রদায় কালীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছিল উল্লেখ করে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জ বেদে সম্প্রদায়ের ৫৯ পরিবারকে চিহ্নিত করেছে। জলাধারের সঙ্গে তাদের যে জীবনযাপন ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পরিবেশ আমরা নির্ধারণ করেছি।’
প্রায় ২ একর জমি অবৈধ দখলদারদের কাছে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দখলমুক্ত করেছি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৪০ লাখ টাকা। আমরা আশা করছি, এই পরিবারগুলো উন্নত জীবন যাপন করতে পারবে। পুনর্বাসন সম্পন্ন হলে তাদের নতুন প্রজন্ম শিক্ষা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে একটি উন্নত প্রজন্ম পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮ হাজার ৩টি। পরিবারের সদস্য ৫ জন ধরে হিসাব করলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ জন।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ একক গৃহের সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ৮০৩টি। বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের তখনকার ছাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। প্রতি বছর গ্রেপ্তারের এই দিনটিকে এখন থেকে দিবস হিসেবে পালন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে পরিবেশ পরিষদের সভায় এই দিবস পালন নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দিবসটি পালনের জন্য প্রস্তাব তোলেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার এবং কারাবরণ করেন। তাই সার্বিকভাবে আমরা মনে করি, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা উচিত। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমি এ আহ্বান করেছি। উপাচার্য এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে পরিবেশ পরিষদের সভায় এই দিবসটি পালন নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। ছবি: নিউজবাংলা
আর কী কী আহ্বান জানানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মূল সুর বহু ভাষিকতাকে রক্ষা করা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
কিন্তু ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সভা সেখানে চাকমাভাষী, গারোভাষী এবং আদিবাসী যারা রয়েছেন তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয় সেটির জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।
‘এ ছাড়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় চায়ের টংয়ের বাইরে অতিরিক্ত যেসব ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভারী যানবাহন বন্ধের বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছি।’
১১ মার্চ দিবসটি উদযাপনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভাষা আন্দোলনের এই পর্বে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে ছিলেন। তাকে রাজবন্দি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রনেতা ছিলেন, সেহেতু আমাদের দায়িত্বের জায়গাটা আরও বেশি। সুতরাং আমরা যখন এটি করব, তখন আমরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারব, বঙ্গবন্ধুর যে অনবদ্য অবদান ছিল সেটিতে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাব।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘এটি আমাদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করবে। ইতিহাসে যাদের অসাধারণ অবদান, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এসব দিবস আমাদের সুযোগ করে দেয়।’
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল সীমিতকরণ এবং ভ্রাম্যমাণ, অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়।
ছাত্রনেতাদের আলোচনার সূত্র ধরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিত ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
এ ছাড়া প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম সহজীকরণ, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব, সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় ঘটানো এবং সেমিস্টার শিক্ষাকার্যক্রম আরও কার্যকর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি ইউনিটের (ক, খ, গ ও চ) অধীনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সুষ্ঠু, সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা চান। ছাত্র সংগঠনের নেতারা এসব উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ জীবনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তৈরি করা হয়েছে অ্যাপভিত্তিক গেম ‘আমার বঙ্গবন্ধু’।
গেমটি সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। ‘গেমিং অ্যাপস’ শীর্ষক অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিএনসিসি অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনবৃত্তান্ত ও জীবনাদর্শ নিয়ে নির্মিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক গেমিং অ্যাপসের উদ্বোধন করা হয়।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রমনা রেজিমেন্ট আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্ট ক্যাডেটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পিইউও আতিয়ার রহমান, সিইউও মো. মামুন শেখ, আর্মি স্টাফ এবং বিএনসিসি ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ অ্যাপসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই গেমিং অ্যাপটি ব্যবহারে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, আদর্শ এবং নেতৃত্বের গুণাবলিতে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী একটি জাতি গঠন করা সম্ভব হবে।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ মোবাইল গেমিং অ্যাপটি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তৈরি এমন একটি গেম, যা খেলার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনী সহজভাবে জানতে পারবেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশপ্রেম তথা নেতৃত্বের গুণাবলিতে উজ্জীবিত হবে।
‘আমার বঙ্গবন্ধু’ গেমিং অ্যাপস শীর্ষক অনুষ্ঠান উপলক্ষে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় আগামী ২৬ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত অংশগ্রহণ করা যাবে।
সর্বপ্রথমে অ্যান্ড্রয়েড গেমিং অ্যাপ ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ ডাউনলোড করে মোবাইলে ইনস্টল করতে হবে। ইনস্টল করে গেমসটি চালু করার পর ইন্টারফেস আসবে। যেখানে একজন প্রতিযোগীকে ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
গেমসটি খেলাকালীন দুটি সময় গণনা করার মাধ্যমে বিজয়ী নির্ণয় করা হবে। সেই ক্ষেত্রে এই সময় গণনা করে একটি ডাটাবেজ সার্ভারে জমা হবে এবং সেখান থেকে ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে তা জানা যাবে। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলে সফল প্রতিযোগীরা জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার লাভে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন:একাত্তরে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ।
পাকিস্তানিদের ওই বর্বরতার ৫০ বছর পূর্তিতে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গ্রেগরি এইচ স্ট্যানটন বৃহম্পতিবার তাদের ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা দেন।
এ ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘জেনোসাইড ওয়াচ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর যেসব অপরাধ করেছে, তার মধ্যে ছিল জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ।’
সেই সঙ্গে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানসহ জাতিসংঘের সব সদস্য দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর করা সেসব অপরাধকে জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’হিসেবে স্বীকার করে নিতে আহ্বান জানান।
এই ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সংগঠন ‘পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য’ আনন্দ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
এই স্বীকৃতির নেপথ্যে কাজ করা শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূরকে অভিনন্দন জানানো পাশাপাশি তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য।
এ বিষয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামজা রহমান অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত ও আবেগ আপ্লুত এই খবরে। এটি নিঃসন্দেহে পাকিস্তান কর্তৃক বাঙালির ওপর একাত্তরে যে জেনোসাইড ঘটানো হয়েছিল সেই নৃশংসতার বিচার তরান্বিত করবে। আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সেই সব গণহত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।’
বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনকে শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে তৎকালীন পূব-পাকিস্তানের ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ।
নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩০ লাখ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। এসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারে এক কোটি মানুষ পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শহর থেকে গ্রামে সাধারণ মানুষের ঘর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট করে। এসময় তারা দুই লাখের বেশি নারীকে ধর্ষণ করে। যাকে জেনোসাইড বা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দিয়েছ গণহত্যা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য