× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

google_news print-icon

রাজনীতির কবি

রাজনীতির-কবি
বঙ্গবন্ধু তার মাহাত্ম্য, প্রজ্ঞা, সাহস ও সংগ্রামের পাঠ নিয়েছিলেন দুই মহান কবি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কাছ থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাই একজনের গানকে করেছেন জাতীয় সংগীত, আরেকজনকে করেছেন জাতীয় কবি। এভাবে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু অনুভবের মগ্নতায় ধারণ করেছেন সংস্কৃতির দুই কবিকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতা শহরে। ১৮৬১ সালে। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। ১৯৯৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৪১ সালে, নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে নির্বাক হয়ে যান ১৯৪২ সালে। তারা সাতচল্লিশের দেশভাগ দেখেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্র দেখেননি। স্বাধীন বাংলাদেশও না। তারা দেখেছেন পূর্ববঙ্গ। দু’জনেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে ছুটে এসেছেন পূর্ববঙ্গে। এই ভূখণ্ডের নানা জায়গায় ঘুরেছেন। দু’চোখ ভরে দেখেছেন পূর্ববঙ্গের প্রকৃতি ও মানুষকে। এই ভূখণ্ড ছিল দু’জন সৃজনশীল মানুষের অবলোকনের আরাধ্য ভূমি। এই ভূমি থেকে তারা দু’হাত ভরে নিয়েছেন শিল্পের উপাদান। গড়েছেন সাহিত্যের জমিন। আর এই ভূখণ্ডও তাদের দিয়েছে অমরত্বের শ্রেষ্ঠ আসন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম শিলাইদহে আসেন ১৪ বছর বয়সে। সঙ্গী হয়েছিলেন পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সময়টি ছিল ১৮৭৫ সালের ডিসেম্বর মাস। ১৯ ডিসেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামপুর বোয়ালিয়ার ব্রহ্মামণ্ডলী আয়োজিত প্রার্থনা সভায় যোগ দেন। প্রশান্ত কুমার পাল তত্ত্ববোধিনী মাঘ সংখ্যার সূত্র ধরে লিখেছেন ‘স্বাধ্যায়ের পর প্রধান আচার্য্য মহাশয়ের কনিষ্ঠপুত্র শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুমধুর স্বরে একটি মনোহর ব্রহ্মসঙ্গীত করেন।’ এই সময়ে শিলাইদহে অল্প দিন অবস্থানের কারণে শিলাইদহ তার মনে তেমন দাগ কাটেনি।

তিনি দ্বিতীয় বার শিলাইদহে যান ১৮৭৬ সালে। সঙ্গী হয়েছিলেন বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সেবার তিনি শিলাইদহে একমাসের বেশি সময় কাটিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কবিতা লিখে খাতা ভরিয়েছেন। ঘোড়ায় চড়ে ঘুরেছেন। ফুলের রঙিন রস কলমের নিবে লাগিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি। তিনি জীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন: ‘একলা থাকার মন নিয়ে আছি। ছোট একটি কোণের ঘর, যত বড় ঢালা ছাদ তত বড় ফলাও আমার ছুটি। অজানা ভিন দেশের ছুটি, পুরোনো দিঘার কালো জলের মতো তার থই পাওয়া যায় না। বউ-কথা-কও ডাকছে তো ডাকছেই, উড়ো ভাবনা ভাবছি তো ভাবছিই। এইসঙ্গে আমার খাতা ভরে উঠতে আরম্ভ করেছে পদ্যে।’

কাজী নজরুল ইসলাম ১৫ বছর বয়সে পূর্ববঙ্গে আসেন। ১৯১৪ সালে। পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর কাজী রফিজউল্লাহর সহযোগিতায় তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কাজীরশিমলা গ্রামে আসেন। নদী-বিধৌত পূর্ববঙ্গ তার মানসপটে স্থায়ী ছাপ ফেলে। দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কাজীরশিমলা থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে তিনি স্কুলে যেতেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার কাজী নজরুল ইসলাম : জীবন ও সৃজন গ্রন্থে লিখেছেন: ‘১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মহিমচন্দ্র খাসনবীশ নজরুলদের ইংরেজি পড়াতেন। তার বিবরণীতে জানা যায়, নজরুল ক্লাসে একটু অন্যমনস্ক থাকতেন এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে একটু ঘাবড়ে যেতেন কিন্তু প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করলে নজরুল যথাযথ উত্তর দিতেন। ঐ বছর মহিমবাবুর পরিচালনায় দরিরামপুর স্কুলে একটি বিচিত্রানুষ্ঠান হয়, তাতে নজরুল রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ এবং ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা দুটি আবৃত্তি করে সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন।’ এই স্কুলে এক বছর পড়ার পরে তিনি আবার বর্ধমানে নিজ গ্রামে ফিরে যান।

এই এক বছরে কিশোর নজরুলের মনে পূর্ববঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রবলভাবে দাগ কাটে। তাকে প্রায়ই দেখা যেত ঠুনিভাঙা বিলের ধারে। দেখা যেত গাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। এভাবেই সৃজনশীল প্রতিভার মানস গঠনে পূর্ববঙ্গ এক হয়। পূর্ণ করে তার সৃজনশীলতার মাত্রা। প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র বিস্তৃত হয় সাহিত্যের ক্যানভাসে রঙে ও সৌন্দর্যে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেন পূর্ববঙ্গের যশোর জেলার দক্ষিণডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিণীকে। ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। বিয়ের পরে তিনি স্ত্রীর নাম রাখেন মৃণালিনী। বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: ‘মা গায়ে হলুদের পরে রবিকাকাকে আইবুড়োভাতের নেমন্ত্রন্ন করে। মা খুব খুশি, একে যশোরের মেয়ে, তায় রথীর মা মার সম্পর্কের বোন।’ বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মামা ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের পিসিমা আদ্যাসুন্দরী। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার কবির কথা বইয়ে লিখেছেন: ‘এই প্রস্তাব স্বীকৃত হইলে মহর্ষি দক্ষিণডিহির বাড়িতে নানাবিধ খেলনা, বসনভূষণাদি কর্মচারী সদানন্দ মজুমদারের সঙ্গে পাঠাইয়াছিলেন। সদানন্দ মহর্ষির কথানুসারে গ্রামে নানা মিষ্টান্ন প্রস্তুত করাইয়া কন্যার ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠাইবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।’

রবীন্দ্রনাথের জীবনসঙ্গী গ্রহণের পর্বটি সম্পন্ন হয় ভালো ভাবেই। পূর্ববঙ্গের মেয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সন্তানটির জীবনে ঠাঁই নেয়। দু’জনে মিলে পাড়ি দেন অনেক পথ। জন্মগ্রহণ করে পাঁচটি সন্তান। এক সময় থেমে যান পূর্ববঙ্গের জলহাওয়ায় বড় হওয়া ভবতারিণী। এগিয়ে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উঠে যান দীর্ঘ পথ পার হয়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।

স্কুল পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা ও ব্যবসায়ী আলী আকবর খানের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে কলকাতায়। ১৯২১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার আমন্ত্রণে কুমিল্লা জেলার দৌলতপুর গ্রামে বেড়াতে যান। কিশোরবেলায় ময়মনসিংহ থেকে চলে যাওয়ার পরে এটি ছিল পূর্ববঙ্গে তার দ্বিতীয় বার আসা।

কুমিল্লায় পৌঁছে তারা শহরে আলী আকবর খানের বন্ধু বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে কয়েকদিন থাকেন। বীরেন্দ্রর মা বিরাজসুন্দরী লেখালেখি করতেন। নজরুলের সঙ্গে তার হৃদ্যতা হয়। এই পরিবারের আতিথেয়তা নজরুলকে মুগ্ধ করে। এরপরে তারা দৌলতপুরে যান। গ্রামের প্রকৃতি তার কবিতায় উঠে আসে। তিনি অনেক কবিতা লেখেন। তার বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে সেসব কবিতা সংকলিত হয়।

দৌলতপুরে থাকার সময় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আকবর আলী খানের ভাগ্নী সৈয়দা খাতুনের সঙ্গে। কবি তার নতুন নামকরণ করেন- নার্গিস আসার খানম। একই বছরের ১৮ জুন তাদের বিয়ে হয়। নার্গিস পরিবারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে তিনি দৌলতপুর ছেড়ে চলে আসেন। কুমিল্লায় সতেরো দিন থাকেন। চারটি গান রচনা করেন। এ সময় শহরজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের জোয়ার বইছিল। নজরুল কুমিল্লার রাস্তায় মিছিলে যোগ দিয়েছেন। ‘এ কোন পাগল পথিক ছুটে এল’ গানটি গেয়েছেন। ড. রফিকুল ইসলাম তার জীবন ও সৃজন গ্রন্থে প্রাবন্ধিক আবদুল কুদ্দুসের লেখা উল্লেখ করেছেন: ‘একদিন কংগ্রেসের সভা বসেছিল কুমিল্লার টাউন হলে। বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা আশরাফউদ্দিন চৌধুরী, বাবু অতীন্দ্রমোহন রায় প্রমুখ বক্তারা বারবার তাগিদ দিয়ে নজরুলকে নিয়ে আসেন কান্দিরপাড়ের বাসা থেকে।’ সে সভায় তিনি গেয়েছিলেন এ গানটি- ‘এস এস এস ওগো মরণ!/ ওই মরণ-ভীতু মানুষ-মেষের ভয় কর গো হরণ।’

দেখা যাচ্ছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করে তার আন্দোলনে অংশগ্রহণের সীমানা শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ রাখেননি। পূর্ববঙ্গের কুমিল্লা শহর পর্যন্ত ছড়িয়েছিলেন। এমনই ছিল পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তার আত্মিক যোগ। ১৯২২ সালে তার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তাকে গ্রেফতার করা হয় কুমিল্লা থেকে, ঐ বছরের ২২ নভেম্বরে। পরদিন তাকে কলকাতায় নেয়া হয় এবং প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। এইসঙ্গে তার যুগবাণী কাব্যগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করে সরকার।

১৯২৫ সালের ২৪ এপ্রিল নজরুলের সঙ্গে বিয়ে হয় কুমিল্লার প্রমীলার। নজরুলের বয়স ছিল তেইশ আর প্রমীলার ষোল। বিয়েতে ধর্মীয় ও সামাজিক সূত্রে বিরোধ হয়েছিল। সব বিরোধিতা পাশ কাটিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন মিসেস এম রহমান। নজরুল তাকে বিষের বাঁশী কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেন।

দেখা যাচ্ছে দু’জন বড় মানুষের ব্যাপ্ত জীবনের পূর্ণতা পূর্ববঙ্গকে বাদ দিয়ে হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সালের আষাঢ় মাসে জোড়াসাঁকোর সেরেস্তার হিসাব দেখার দায়িত্ব পান বাবার কাছ থেকে। অগ্রহায়ণ মাসে জমিদারি পরিদর্শনের অধিকার লাভ করেন। মৃণালিনী দেবী, তার বান্ধবী, বেলা ও রথীন এবং ভাইপো বলেন্দ্রনাথকে নিয়ে শিলাইদহ আসেন। শুরু হয় তার পূর্ববঙ্গ যাত্রা⎯ অবিরাম, নিরন্তর। শারীরিক এবং মানসিক ভ্রমণের সবটুকু গভীর আনন্দ দিয়েছে তার জগৎ উপুড় করে দিয়ে। পূর্ববঙ্গ যেমন দিয়েছে, তিনি তেমন দু’হাত উপচে গ্রহণ করেছেন। নিতে কুণ্ঠিত হননি। এই নেওয়াকে আপন আলোয় রাঙিয়েছেন⎯ কবিতায়, গানে, চিত্রকর্মে, নাটকে, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে এবং সর্বোপরি পত্র-সাহিত্যে।

ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে শিলাইদহ উঠে এসেছে এভাবে ‘শিলাইদহের অপর পারে একটা চরের সামনে আমাদের বোট লাগানো আছে। প্রকাণ্ড চর⎯ ধূ ধূ করছে ⎯ কোথাও শেষ দেখা যায় না। ..... পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়। এই যে ছোট নদীর ধারে শান্তিময় গাছপালার মধ্যে সূর্য প্রতিদিন অস্ত যাচ্ছে, এবং এই অনন্ত ধূসর নির্জন নিঃশব্দ চরের উপরে প্রতি রাতে শত সহস্র নক্ষত্রের নিঃশব্দ অভ্যুদয় হচ্ছে, জগৎ সংসারে এ যে কী একটা আশ্চর্য মহৎ ঘটনা তা এখানে থাকলে তবে বোঝা যায়।’

দীর্ঘ কয়েক বছর এখানে স্থায়ীভাবে বাস করে ১৯০১ সালে তিনি সংসার গুটিয়ে শান্তিনিকেতনে যান। তারপর আসা-যাওয়া করেছেন। নদীতে বসবাস করেছেন বোটে- পতিসর-শাহজাদপুর ঘোরার সময় বিল-নদীর নৌপথে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার বিবরণ পত্র-সাহিত্যে পাওয়া যায়। কত নিবিড়ভাবে মানুষ ও প্রকৃতিকে দেখেছেন তা বর্ণনা করে শেষ করার নয়।

রবীন্দ্রনাথ শেষবারের মতো পূর্ববঙ্গে আসেন ১৯৩৭ সালে। গ্রাম ছিল প্রতিসর। ১৮৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি লিখেছিলেন: ‘এখন বেলা একটা বেজেছে। পাড়াগাঁয়ে মধ্যাহ্নের এই হাঁসের ডাক, কাপড় কাঁচার শব্দ, নৌকা-চলা জলের ছলছল ধ্বনি, দূরে গরুর পাল পার করবার হৈ হৈ রব এবং আপনার মনের ভিতরকার একটা উদাস আলস্যপূর্ণ স্বগত সংগীতস্বর, কলকাতার চৌকি-টেবিল-সমাকীর্ণ, বর্ণ-বৈচিত্র্যবিহীন নিত্যনৈমিত্তিকতার মধ্যে কল্পনাও করতে পারিনে। কলকাতাটা বড় ভদ্র এবং বড় ভারী, গবর্মেন্টের আপিসের মতো। জীবনের প্রত্যেক দিনটাই যেন একই আকারে একই ছাপ নিয়ে টাঁকশাল থেকে তকতকে হয়ে কেটে কেটে বেরিয়ে আসছে⎯ নীরস মৃত দিন, কিন্তু খুব ভদ্র এবং সমান ওজনের। এখানে আমি দলছাড়া এবং এখানকার প্রত্যেক দিন আমার নিজের দিন⎯ নিত্যনিয়মিত দম-দেওয়া কলের সঙ্গে কোনো যোগ নেই।’

এই ছিল পূর্ববঙ্গের সঙ্গে কবির আত্মিক যোগ। সেবার রবীন্দ্রনাথ নাগর নদীপথে পতিসর ছাড়েন। তারপর আত্রাই স্টেশন থেকে রেলে করে কলকাতায় যান।

১৯৩৬ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে ‘Degree of Doctor of Literature’ দেয়। এছাড়া কবি পূর্ববঙ্গের সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ইত্যাদি শহরে বিভিন্ন উপলক্ষে যান। জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারকে কবি যে চিঠি লিখেছিলেন সেখানে আছে: ‘ঢাকার জনসাধারণের পক্ষ থেকে আজ আমাকে নিমন্ত্রণ করবার জন্যে দূত এসেছিলেন। তাঁদের বিশেষ অনুরোধে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই যাত্রা করতে প্রস্তুত হয়েছি। ... বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃস্থিত ঢাকার লোকের নিমন্ত্রণ কোনো মতেই উপেক্ষা করা উচিত বোধ করিনে।’ এভাবে গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে ঢাকা শহর পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ববঙ্গে তার ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কখনো একটানা পূর্ববঙ্গে থাকেননি, কিন্তু ঘুরে ঘুরে এসেছেন অনবরত। কাটিয়েছেন মাসাধিক কাল। বিভিন্ন শহরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহীর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, ভারতবর্ষের এক ইঞ্চি জমিতে একজন ইংরেজ থাকলেও তা পূর্ণ স্বাধীনতা হবে না। এভাবে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন দেশের মানুষকে।

কিশোর বেলায় ময়মনসিংহের দরিরামপুরে স্কুলপর্বের পর নজরুল ১৯২০ সালে বরিশালে আসেন। সেটি ছিল দূর্গা পূজার সময়। কমরেড মুজফফর আহমদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। কবি বেশ কয়েকটি কবিতা রচনা করেছিলেন। বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচন করেছিলেন ঢাকা বিভাগ থেকে। স্বরাজ দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। সে বছরে তিনি নির্বাচনী প্রচারের কাজে বরিশালে এসেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার স্মরণে আলেকান্দায় ‘নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯২১ সালে কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লা তার জীবনের এক বড় অধ্যায়। নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে কুমিল্লার মেয়ে প্রমীলার সঙ্গে প্রেম হয়। এই প্রেমে হিন্দু রক্ষণশীলদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। প্রমীলার মা গিরিবালা দেবী মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে ১৯২৪ সালের ২৪ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। এরপরে নজরুল কুমিল্লায় আসেননি। তবে কুমিল্লায় অবস্থান তার সৃজনশীলতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কুমিল্লার প্রকৃতি, লালমাই পাহাড়, গোমতী নদী তার কবিতা, গল্পে ফিরে ফিরে এসেছে। কুমিল্লায় নজরুল শীর্ষক গ্রন্থে আবদুল কুদ্দুস লিখেছেন: ‘কুমিল্লা নজরুলের কাব্য কাননের লালন-ক্ষেত্র, পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত পীঠস্থান, জীবননাট্যের একটা অবিস্মরণীয় অধ্যায়।’ এভাবে কালজয়ী কবির আপন আবাস পূর্ববঙ্গ হয়।

এরপর ১৯২১ সালে চাঁদপুরে আসেন, ১৯২৪ সালে কুড়িগ্রামে। ফরিদপুরে আসেন ১৯২৫ সালের ২৫ মে। উপলক্ষ ছিল বঙ্গীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন। ২ মে ফরিদপুর টাউন লাইব্রেরি মাঠে জনসভার আয়োজন হয়েছিল। সভায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতিত্ব করেন। অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধি ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। সে সময়ে কবি জসীম উদদীনের সঙ্গে নজরুলের ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি নৌকায় করে ঘুরেছেন, চরে নেমে বেড়িয়েছেন। পূর্ববঙ্গের মাটি মানুষ দেখেছেন। জনসভায় বক্তৃতা করেছেন, গান গেয়েছেন। ‘শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল’ গান গেয়ে মাতিয়ে তুলেছেন ফরিদপুরবাসীকে।

এরপর তিনি আরও কয়েকবার ফরিদপুরে এসেছিলেন। ১৯৩৬ সালে আসেন জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনে অংশগ্রহণ করতে। তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৮ সালে আবার ফরিদপুরে আসেন। ‘ফরিদপুর সংসদ’ তাকে সংর্ধনা জানায়। কবি শেষবার ফরিদপুরে আসেন ১৯৪১ সালে। রংপুরে আসেন দু’বার। একবার ১৯২৫ এবং আর একবার ১৯২৮ সালে। এই বছরে তাকে রংপুরে সংবর্ধনা দেয়া হয়। দিনাজপুরে আসেন ১৯২৬ সালে। এই একই বছরে দিনাজপুর থেকে মাদারীপুরে যান। এ সময়ে মাদারীপুর শহরে নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রাদেশিক মৎস্যজীবী সম্মেলনের অধিবেশন হয়। তিনি জেলেদের নিয়ে রচিত গান গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

১৯২৬ সালে প্রথম ঢাকা সফর করেন নজরুল। ২৭ জুন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তিনি বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর জোর দেন। তার রচিত গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন। ১৯২৭ সালে আবার আসেন। ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আবার ঢাকায় আসেন। এ সময় ড. কাজী মোতাহার হোসেনের বর্ধমান ভবনের (বর্তমানে বাংলা একাডেমি) বাসায় অবস্থান করেন। ‘চল চল চল’ গানটি লেখেন। এই গান গেয়ে মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর ১৯৪০ সালে বেতার কেন্দ্রের প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন।

পূর্ববঙ্গের আরও অনেক জায়গায় ঘুরেছেন তিনি। চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ ইত্যাদি। এবং আরও কোনো কোনো স্থান। পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যেমন তার প্রাণের টান ছিল, তেমনি পূর্ববঙ্গবাসী তাকে সংবর্ধনা দিয়ে জানিয়েছে বুকভরা ভালবাসা।

২.

যে পূর্ববঙ্গের কথা এই লেখায় উল্লেখ করা হলো তা আজকের বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাতি অর্জন করেছে স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। তার অবর্তমানে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে তার নামে। এই যুদ্ধের রণধ্বনি ছিল ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দুই মহান কবির একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তিনি তাদের বরণ করেছেন গভীর শ্রদ্ধায়, প্রদীপ্ত চেতনায়, জ্ঞানের মাহাত্ম্যে, সাহসের বলিষ্ঠতায়, মননের শাণিত প্রভায় এবং দিব্যলোকের অনিঃশেষ যাত্রায়।

১৯৬১ সাল ছিল রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে বাঙালি রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযপন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ছায়ানট’। এক পর্যায়ে পাকিস্তান বেতার থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন: ‘দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করিয়া দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখিয়া যিনি বিশ্বকবি হইয়াছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না⎯ আমরা রবীন্দ্রনাথ পড়িবই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাহিবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এইদেশে গাওয়া হইবেই।’

এভাবে বঙ্গবন্ধু রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির সেতুবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন।

বেতার কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান তার দেশের বেতার ও শেখ মুজিব প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘প্রবল গণ আন্দোলনে আইয়ুব খান এবং মোনায়েম খানের অপসারণের পর প্রথম বেতারের অনুষ্ঠান প্রচার নিয়ে আলাপ হয় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। দেশের ছাত্রদল ইতোমধ্যেই তাকে বঙ্গবন্ধু আখ্যায় ভূষিত করেছে। দেখা হতেই তিনি প্রথম বেতার নিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করলেন। বললেন, দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারলে বেতার বন্ধ করে দিন। পরে কাছে এসে হেসে বলেছিলেন, একবার রবীন্দ্রনাথের ‘‘আমার সোনার বাংলা’’ গানটি বেতার থেকে প্রচার করতে পারেন না?

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমস্ত বেতার কর্মীদের একান্ত সহায়তায় পরদিনই বেতার থেকে প্রচারিত হয় ‘আমার সোনার বাংলা’ গান এবং আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত করে বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ এই গানটিকে জাতীয় সংগীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার সময়। ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জি একই বিমানে লন্ডন থেকে দিল্লি আসছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বঙ্গবন্ধু বিমানে বসে গানটি গুনগুন করে গাইছিলেন। তিনি শশাঙ্ক ব্যানার্জিকে বলেছিলেন, এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হবে। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের রচনা পড়তে ভালবাসি। আমি তাকে ভালবাসি। সাহিত্য পাঠে আমার পুঁজি ওইটুকুই। বঙ্গবন্ধুর জন্য এটি এক ধরনের সরল সত্য।

‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি যখন তিনি জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেন, তখন শুধু সাহিত্য পাঠের প্রেরণা হিসেবে নির্বাচন করেননি। কৈশোর থেকে লাভ করা অভিজ্ঞতা এবং তার ভিত্তিতে গড়ে তোলা রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিধ্বনি পেয়েছিলেন সেই গানে। যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি তার জীবন এবং রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, এই গান ছিল তার রবীন্দ্র রচনার পাঠজনীত অভিজ্ঞতা। তিনি তাকে নন্দিত করেছেন। বরণ করেছেন। কৃষক-মজুরের ঘামে-শ্রমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করেছেন।

এই গানের প্রতিটি চরণে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন একাকার হয়ে আছে। রবীন্দ্রসাহিত্য না পড়েই রাজনীতির যে দর্শন তিনি কিশোর বয়স থেকে স্থির করেছিলেন, পরিণত বয়সে তার প্রতিচিত্র দেখলেন রবীন্দ্রসাহিত্যে। যখন পড়লেন ‘তোমারি ধুলোমাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন জানি’ দেখলেন ওই একটি চরণে তার শৈশব-কৈশোর আশ্চর্যভাবে উদ্ভাসিত। যখন পড়লেন ‘তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে’⎯ দেখলেন বাবার ধানের গোলা থেকে নিরণ্ণজনের মাঝে ধান বিতরণের ছবি। যখন পড়লেন ‘ও মা, তোমার রাখাল, তোমার চাষি’⎯ দেখলেন বাংলার কৃষককুলকে, যারা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ধরে রাখে⎯ তারাই তো বাস করে পাখি-ডাকা ছায়ায় ঢাকা পল্লিবাটে। যখন পড়লেন, ‘দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মাণিক হবে’⎯ দেখলেন দেশ মায়ের পায়ের ধুলো তার সারা অঙ্গে জড়ানো। পড়লেন ‘গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে’⎯ দেখলেন গরিবের ধন ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন, সেই স্বাধীনতার ভূষণ তার গায়ে জড়ানো হয়েছে। পড়লেন, ‘আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি’⎯ দেখলেন স্বনির্ভর অর্থনীতির যে কাঠামো তার জীবনের ধ্রুব সত্য তার জন্য মৃত্যুতে উৎসর্গিত করতে হলো জীবন।

এভাবে রাজনীতির কবি, Poet of Politics, বঙ্গবন্ধু সংস্কৃতির কবিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘আজ আশা করি আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্য লাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই ত্রাণকর্তা, মহানায়ক।

বঙ্গবন্ধুই সেই রাষ্ট্রনায়ক যিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশে এনে তার বেঁচে থাকার বাকি দিনগুলো স্বস্তির করেছিলেন⎯ শারীরিকভাবে এবং মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই কবির গান অনুপ্রেরণার অন্তহীন উৎস ছিল।

পূর্ববঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর সময় নজরুল এই ভূখণ্ডকে বারবার নমস্য মেনেছেন। ‘পূর্ববঙ্গ’ নামের কবিতায় এবং ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গানে আবেগের মাত্রা প্রকাশ পায়। অসুস্থ হওয়ার কয়েক মাস আগে দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকায় ‘আমার সুন্দর’ নামে সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন ⎯ ‘আট বৎসর ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতি জেলায়, প্রতি মহকুমায়, ছোট বড় গ্রামে ভ্রমণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য গান গেয়ে, কখনো কখনো বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালাম। এই প্রথম আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ভালবাসলাম। মনে হলো, এই আমার মা।’

১৯৪২ সালের এপ্রিল মাসে ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘বাঙালিকে, বাঙালির ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকে শুধু এক মন্ত্র শেখাও⎯ এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির⎯ আমাদের। ... বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক!’

পাকিস্তান সরকার নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য তার সাহিত্যে হাত দিতেও দ্বিধা করেনি। তার কবিতার ‘মহাশ্মশান’ শব্দটি বদলে দিয়ে ‘গোরস্থান’ শব্দ প্রতিস্থাপন করে।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে এম আর আখতার মুকুল তার মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুল প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘বঙ্গবন্ধু স্বয়ং উদ্যোগ গ্রহণ করায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দান করা ছাড়াও কবির রচিত ঐতিহাসিক গান ‘‘চল্ চল্ চল্, উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ‘‘মার্চিং সংগীত’’ হিসেবে মর্যাদা দান করা হলো। এখানে শেষ নয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের আরো সিদ্ধান্ত হচ্ছে, অবহেলিত কবিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শুশ্রুষার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। এখন থেকে সমস্ত দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অনতিবিলম্বে ঢাকায় পাঠাবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হলো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মর্মে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে, বিদ্রোহী কবির উপস্থিতিতেই ঢাকায় আড়ম্বরের সঙ্গে কবির ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। মাঝে মাত্র দিন দুয়েকের সময়। তখন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. এ. আর. মল্লিক। তিনি তড়িৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কথা অবহিত করলেন। এতেই কাজ হলো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান ছাড়াও রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়ে দিলো।

প্রসঙ্গত এ কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, বিদ্রোহী কবিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের অবদান অনস্বীকার্য।

অবশেষে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশ বিমানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। সঙ্গে এলেন সস্ত্রীক দুই পুত্র সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ এবং কবির দুই নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। সেদিন তেজগাঁও বিমান বন্দরে এক বিশাল জনতা বাংলাদেশের জাতীয় কবিকে সংবর্ধনা জানালো। সেদিন ঢাকা উৎসব মুখরিত। কবিকে সোজা নিয়ে আসা হলো ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় ২৮ নম্বর সড়কের (পুরাতন) ৩৩০-বি বাড়িতে।’

১৯৭৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি। এই সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৪ ফেব্রুয়ার থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ১৯ তারিখ ছিল কবিতা বিষয়ক আলোচনা। ঐ দিন কবি নজরুলকে মঞ্চে আনা হয়েছিল প্রধান অতিথি হিসেবে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘Degree of Doctor of Literature’ প্রদান করে।

১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই কবির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কবিকে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ১১৭ নম্বর কেবিনেই তিনি ছিলেন এক বছরেরও বেশি সময়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন আগস্ট মাসের ৬ তারিখে। রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শহীদ হন ১৫ আগস্ট। রাজনীতির কবি নিজের প্রগাঢ় অনুভবের মগ্নতায় কাছে টেনেছিলেন সংস্কৃতির দুই কবিকে। বিভিন্ন বছরের একই মাসে তাদের মৃত্যু একটি স্বাধীন দেশ ও তার মানুষের কাছে বেঁচে থাকার সত্য। জাতির মননের কাছে তিনজনই ধ্রুবতারা।

একজন রাজনীতির কবি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য করেছিলেন। বাংলা ভাষার দুই অমর কবিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ আসন দিয়েছেন।

সেলিনা হোসেন: কথাসাহিত্যিক

আরও পড়ুন

মুজিব শতবর্ষ
Hamanti and Magnolias mo smell in the courtyard of Uttara Ganabhaban

উত্তরা গণভবনের আঙিনায় হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ম-ম গন্ধ

উত্তরা গণভবনের আঙিনায় হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ম-ম গন্ধ ছবি: সংগৃহীত

নাটোর জেলার উত্তরা গণভবনে এখন হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার ভরা মৌসুম। সাতটি করে হৈমন্তি আর ম্যাগনোলিয়ার রুপে রসে গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা। এছাড়া দুটি হোয়াইট এলামন্ড গন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে। ফুলের কানে ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহনীয় চারিদিক।

অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যায় গণভবনের দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছের সমাহার। এর বেশির ভাগটাই ফুল গাছ। এরমধ্যে পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, হোয়াইট এলামন্ড, সুরভিকা আর হৈমন্তি অন্যতম। এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সাম্রাজ্যও বটে।

এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টিয়ে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। নাগালিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে। গ্রীষ্মের তাপদাহকে উপেক্ষা করে হোয়াইট এলামন্ড তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে এখন।

আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তি গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তির রুপ হয়ে ওঠে অপরুপ। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দুই মাস। এটিই হৈমন্তির ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তি শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।

গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইটালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তি। ইটালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দুইটি হৈমন্তি গাছ। আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তি গাছ। ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তির সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচেয়ে সমৃদ্ধ।

দুষ্প্রাপ্য গাছের তালিকায় আছে ম্যাগনোলিয়া। এর সংখ্যাও সাতটি। কুমার প্যালেস এর সাথে একটি ছাড়া অন্য ছয়টি ইটালিয়ান গার্ডেনে। কাঁঠাল পাতার মত প্রায় পাঁচ মিটার উঁচুতে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাগনোলিয়ার প্রতিটি গাছে শত শত ফুলের কলি আর ফুল। বিরাট আকৃতির সাদা ফুল অকৃপণভাবে সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইটালিয়ান গার্ডেনকে সুশোভিত করে রাখে অতিকায় দুটো হোয়াইট এলামন্ড। এখন শুধু সুশোভিতই নয় সারা গাছ জুড়ে সাদা ঝিরিঝিরি ফুল রাশি পুরো গার্ডেনকে সুরভিত করে রেখেছে।

জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসমা শাহীন বলেন, হৈমন্তী, ম্যাগনোলিয়া আর হোয়াইট এলামন্ড গণভবনকে সুশোভিত সুরভিত করে রেখেছে। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীদের আগমনে মুখর উত্তরা গণভবনের আঙিনা। সৌন্দর্য পিপাসুদের মধ্যে অনেকেই গ্রীষ্মের এই তাপদাহে এসব ফুল গাছের তলায় দু’দণ্ড শান্তির পরশ খুঁজে পাচ্ছেন। দুষ্প্রাপ্য এসব গাছের সুরক্ষায় জেলা প্রশাসন সদা সচেষ্ট।

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
Wish was that the corpse returned home to be a judge

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে

ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার, বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে ঢাবি ছাত্রী আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ছবি: সংগৃহীত
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে। এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।

আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।

এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।

সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।

বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‌‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।

‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’

বুটেক্স ছাত্র আটক

আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:
অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
The Dealership Agriculture Officer of the Seed Fertilizer by irregularities is a college lecturer

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের

অনিয়ম করে বীজ, সারের ডিলারশিপ কৃষি কর্মকর্তা, কলেজ প্রভাষকের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।

অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’

অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‌‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’

দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’

সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’

নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।

‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’

ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।

এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।

তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’

‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’

উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’

এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’

অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।

এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।

‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’

‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’

যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা

ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’

‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’

এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুন:
নওগাঁয় হত্যা মামলায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন
নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকা থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নওগাঁয় উদ্ধার
মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল তিন বন্ধুর
গলা কেটে হত্যা: দাফন-কাফনে সহযোগিতা করেও হলো না রক্ষা

মন্তব্য

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক

জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।

মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।

এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।

জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।

‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’

বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।

‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।

বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’

জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
তাড়াইলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত: পুলিশ
নোয়াখালীর বয়ারচরে ডাকাতদলের তাণ্ডব, আটজনকে কুপিয়ে জখম
বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও জমিতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ বীর মুক্তিযোদ্ধার
প্যারোলে মেলেনি মুক্তি, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
জামালপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ২

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
Petrol Pumps closed in Naogaon strike What the victims say

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

নওগাঁয় ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রল পাম্প: কী বলছেন ভুক্তভোগীরা ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। কোলাজ: নিউজবাংলা
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না। এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।

এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

কী বলছেন ভুক্তভোগীরা

যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।

তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।

‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।

‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।

‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’

প্রেক্ষাপট

পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।

তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
ডাকাতি করতে এসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় সাতজন গ্রেপ্তার
শৈত্যপ্রবাহ: নওগাঁয় এক দিনে তাপমাত্রা কমল ৬.৪ ডিগ্রি
নওগাঁয় বিএনপির দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার
সিলেটে কর্মবিরতির ডাক পরিবহন শ্রমিকদের
১৮ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা ওড়ে নওগাঁর আকাশে

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
The bus fares increased by the train closed more than doubled

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি

ট্রেন বন্ধে বাস ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণের বেশি ট্রেন না পেয়ে খুলনা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ছবি: নিউজবাংলা
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।

খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।

তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।

শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’

সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।

এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।

খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন:
ট্রেনের বিকল্প হিসেবে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আটজন
ট্রেনযাত্রীদের অধিকার রক্ষার ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর
এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নজর ছোট ও গণমুখী প্রকল্পে
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিমা সুবিধা দেবে ‘আমি প্রবাসী’ ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
The trial is going on in the court of Jhalkathi

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে

ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজ চলছে ঝালকাঠির আদালতে ঝালকাঠির আদালত ভবনের বাইরের এবং ভেতরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। কোলাজ: নিউজবাংলা
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।’

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।

এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।

সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।

ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।

ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।

কী ছিল পরিদর্শন কপিতে

ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।

‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’

পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’

প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ

সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।

দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা

আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।

তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।

‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’

আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।

‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’

আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।

‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।

‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’

জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।

তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’

ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা

ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা

আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, ধারণা পুলিশের
স্কুলের পাশে ইটভাটা, ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পরিবেশ কর্মকর্তার
ওকালতনামা না থাকায় চিন্ময়ের পক্ষে ঢাকার আইনজীবীর ৩ আবেদনই নাকচ
ধাক্কা দিয়ে পথচারীর সঙ্গে প্রাণ হারালেন বাইক চালকও
‘আজ সেই দুষ্টু লোকেরা কোথায়?’

মন্তব্য

p
উপরে