× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

google_news print-icon

রাজনীতির কবি

রাজনীতির-কবি
বঙ্গবন্ধু তার মাহাত্ম্য, প্রজ্ঞা, সাহস ও সংগ্রামের পাঠ নিয়েছিলেন দুই মহান কবি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কাছ থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাই একজনের গানকে করেছেন জাতীয় সংগীত, আরেকজনকে করেছেন জাতীয় কবি। এভাবে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু অনুভবের মগ্নতায় ধারণ করেছেন সংস্কৃতির দুই কবিকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম কলকাতা শহরে। ১৮৬১ সালে। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। ১৯৯৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৪১ সালে, নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে নির্বাক হয়ে যান ১৯৪২ সালে। তারা সাতচল্লিশের দেশভাগ দেখেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্র দেখেননি। স্বাধীন বাংলাদেশও না। তারা দেখেছেন পূর্ববঙ্গ। দু’জনেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে ছুটে এসেছেন পূর্ববঙ্গে। এই ভূখণ্ডের নানা জায়গায় ঘুরেছেন। দু’চোখ ভরে দেখেছেন পূর্ববঙ্গের প্রকৃতি ও মানুষকে। এই ভূখণ্ড ছিল দু’জন সৃজনশীল মানুষের অবলোকনের আরাধ্য ভূমি। এই ভূমি থেকে তারা দু’হাত ভরে নিয়েছেন শিল্পের উপাদান। গড়েছেন সাহিত্যের জমিন। আর এই ভূখণ্ডও তাদের দিয়েছে অমরত্বের শ্রেষ্ঠ আসন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম শিলাইদহে আসেন ১৪ বছর বয়সে। সঙ্গী হয়েছিলেন পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সময়টি ছিল ১৮৭৫ সালের ডিসেম্বর মাস। ১৯ ডিসেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামপুর বোয়ালিয়ার ব্রহ্মামণ্ডলী আয়োজিত প্রার্থনা সভায় যোগ দেন। প্রশান্ত কুমার পাল তত্ত্ববোধিনী মাঘ সংখ্যার সূত্র ধরে লিখেছেন ‘স্বাধ্যায়ের পর প্রধান আচার্য্য মহাশয়ের কনিষ্ঠপুত্র শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুমধুর স্বরে একটি মনোহর ব্রহ্মসঙ্গীত করেন।’ এই সময়ে শিলাইদহে অল্প দিন অবস্থানের কারণে শিলাইদহ তার মনে তেমন দাগ কাটেনি।

তিনি দ্বিতীয় বার শিলাইদহে যান ১৮৭৬ সালে। সঙ্গী হয়েছিলেন বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সেবার তিনি শিলাইদহে একমাসের বেশি সময় কাটিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কবিতা লিখে খাতা ভরিয়েছেন। ঘোড়ায় চড়ে ঘুরেছেন। ফুলের রঙিন রস কলমের নিবে লাগিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি। তিনি জীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন: ‘একলা থাকার মন নিয়ে আছি। ছোট একটি কোণের ঘর, যত বড় ঢালা ছাদ তত বড় ফলাও আমার ছুটি। অজানা ভিন দেশের ছুটি, পুরোনো দিঘার কালো জলের মতো তার থই পাওয়া যায় না। বউ-কথা-কও ডাকছে তো ডাকছেই, উড়ো ভাবনা ভাবছি তো ভাবছিই। এইসঙ্গে আমার খাতা ভরে উঠতে আরম্ভ করেছে পদ্যে।’

কাজী নজরুল ইসলাম ১৫ বছর বয়সে পূর্ববঙ্গে আসেন। ১৯১৪ সালে। পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর কাজী রফিজউল্লাহর সহযোগিতায় তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কাজীরশিমলা গ্রামে আসেন। নদী-বিধৌত পূর্ববঙ্গ তার মানসপটে স্থায়ী ছাপ ফেলে। দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কাজীরশিমলা থেকে পাঁচ মাইল হেঁটে তিনি স্কুলে যেতেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার কাজী নজরুল ইসলাম : জীবন ও সৃজন গ্রন্থে লিখেছেন: ‘১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মহিমচন্দ্র খাসনবীশ নজরুলদের ইংরেজি পড়াতেন। তার বিবরণীতে জানা যায়, নজরুল ক্লাসে একটু অন্যমনস্ক থাকতেন এবং কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে একটু ঘাবড়ে যেতেন কিন্তু প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করলে নজরুল যথাযথ উত্তর দিতেন। ঐ বছর মহিমবাবুর পরিচালনায় দরিরামপুর স্কুলে একটি বিচিত্রানুষ্ঠান হয়, তাতে নজরুল রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ এবং ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা দুটি আবৃত্তি করে সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন।’ এই স্কুলে এক বছর পড়ার পরে তিনি আবার বর্ধমানে নিজ গ্রামে ফিরে যান।

এই এক বছরে কিশোর নজরুলের মনে পূর্ববঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রবলভাবে দাগ কাটে। তাকে প্রায়ই দেখা যেত ঠুনিভাঙা বিলের ধারে। দেখা যেত গাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাচ্ছেন। এভাবেই সৃজনশীল প্রতিভার মানস গঠনে পূর্ববঙ্গ এক হয়। পূর্ণ করে তার সৃজনশীলতার মাত্রা। প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র বিস্তৃত হয় সাহিত্যের ক্যানভাসে রঙে ও সৌন্দর্যে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেন পূর্ববঙ্গের যশোর জেলার দক্ষিণডিহি গ্রামের মেয়ে ভবতারিণীকে। ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। বিয়ের পরে তিনি স্ত্রীর নাম রাখেন মৃণালিনী। বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: ‘মা গায়ে হলুদের পরে রবিকাকাকে আইবুড়োভাতের নেমন্ত্রন্ন করে। মা খুব খুশি, একে যশোরের মেয়ে, তায় রথীর মা মার সম্পর্কের বোন।’ বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মামা ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের পিসিমা আদ্যাসুন্দরী। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার কবির কথা বইয়ে লিখেছেন: ‘এই প্রস্তাব স্বীকৃত হইলে মহর্ষি দক্ষিণডিহির বাড়িতে নানাবিধ খেলনা, বসনভূষণাদি কর্মচারী সদানন্দ মজুমদারের সঙ্গে পাঠাইয়াছিলেন। সদানন্দ মহর্ষির কথানুসারে গ্রামে নানা মিষ্টান্ন প্রস্তুত করাইয়া কন্যার ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠাইবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।’

রবীন্দ্রনাথের জীবনসঙ্গী গ্রহণের পর্বটি সম্পন্ন হয় ভালো ভাবেই। পূর্ববঙ্গের মেয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সন্তানটির জীবনে ঠাঁই নেয়। দু’জনে মিলে পাড়ি দেন অনেক পথ। জন্মগ্রহণ করে পাঁচটি সন্তান। এক সময় থেমে যান পূর্ববঙ্গের জলহাওয়ায় বড় হওয়া ভবতারিণী। এগিয়ে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উঠে যান দীর্ঘ পথ পার হয়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।

স্কুল পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা ও ব্যবসায়ী আলী আকবর খানের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে কলকাতায়। ১৯২১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার আমন্ত্রণে কুমিল্লা জেলার দৌলতপুর গ্রামে বেড়াতে যান। কিশোরবেলায় ময়মনসিংহ থেকে চলে যাওয়ার পরে এটি ছিল পূর্ববঙ্গে তার দ্বিতীয় বার আসা।

কুমিল্লায় পৌঁছে তারা শহরে আলী আকবর খানের বন্ধু বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে কয়েকদিন থাকেন। বীরেন্দ্রর মা বিরাজসুন্দরী লেখালেখি করতেন। নজরুলের সঙ্গে তার হৃদ্যতা হয়। এই পরিবারের আতিথেয়তা নজরুলকে মুগ্ধ করে। এরপরে তারা দৌলতপুরে যান। গ্রামের প্রকৃতি তার কবিতায় উঠে আসে। তিনি অনেক কবিতা লেখেন। তার বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে সেসব কবিতা সংকলিত হয়।

দৌলতপুরে থাকার সময় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আকবর আলী খানের ভাগ্নী সৈয়দা খাতুনের সঙ্গে। কবি তার নতুন নামকরণ করেন- নার্গিস আসার খানম। একই বছরের ১৮ জুন তাদের বিয়ে হয়। নার্গিস পরিবারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে তিনি দৌলতপুর ছেড়ে চলে আসেন। কুমিল্লায় সতেরো দিন থাকেন। চারটি গান রচনা করেন। এ সময় শহরজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের জোয়ার বইছিল। নজরুল কুমিল্লার রাস্তায় মিছিলে যোগ দিয়েছেন। ‘এ কোন পাগল পথিক ছুটে এল’ গানটি গেয়েছেন। ড. রফিকুল ইসলাম তার জীবন ও সৃজন গ্রন্থে প্রাবন্ধিক আবদুল কুদ্দুসের লেখা উল্লেখ করেছেন: ‘একদিন কংগ্রেসের সভা বসেছিল কুমিল্লার টাউন হলে। বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা আশরাফউদ্দিন চৌধুরী, বাবু অতীন্দ্রমোহন রায় প্রমুখ বক্তারা বারবার তাগিদ দিয়ে নজরুলকে নিয়ে আসেন কান্দিরপাড়ের বাসা থেকে।’ সে সভায় তিনি গেয়েছিলেন এ গানটি- ‘এস এস এস ওগো মরণ!/ ওই মরণ-ভীতু মানুষ-মেষের ভয় কর গো হরণ।’

দেখা যাচ্ছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করে তার আন্দোলনে অংশগ্রহণের সীমানা শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ রাখেননি। পূর্ববঙ্গের কুমিল্লা শহর পর্যন্ত ছড়িয়েছিলেন। এমনই ছিল পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তার আত্মিক যোগ। ১৯২২ সালে তার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তাকে গ্রেফতার করা হয় কুমিল্লা থেকে, ঐ বছরের ২২ নভেম্বরে। পরদিন তাকে কলকাতায় নেয়া হয় এবং প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। এইসঙ্গে তার যুগবাণী কাব্যগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করে সরকার।

১৯২৫ সালের ২৪ এপ্রিল নজরুলের সঙ্গে বিয়ে হয় কুমিল্লার প্রমীলার। নজরুলের বয়স ছিল তেইশ আর প্রমীলার ষোল। বিয়েতে ধর্মীয় ও সামাজিক সূত্রে বিরোধ হয়েছিল। সব বিরোধিতা পাশ কাটিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন মিসেস এম রহমান। নজরুল তাকে বিষের বাঁশী কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেন।

দেখা যাচ্ছে দু’জন বড় মানুষের ব্যাপ্ত জীবনের পূর্ণতা পূর্ববঙ্গকে বাদ দিয়ে হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সালের আষাঢ় মাসে জোড়াসাঁকোর সেরেস্তার হিসাব দেখার দায়িত্ব পান বাবার কাছ থেকে। অগ্রহায়ণ মাসে জমিদারি পরিদর্শনের অধিকার লাভ করেন। মৃণালিনী দেবী, তার বান্ধবী, বেলা ও রথীন এবং ভাইপো বলেন্দ্রনাথকে নিয়ে শিলাইদহ আসেন। শুরু হয় তার পূর্ববঙ্গ যাত্রা⎯ অবিরাম, নিরন্তর। শারীরিক এবং মানসিক ভ্রমণের সবটুকু গভীর আনন্দ দিয়েছে তার জগৎ উপুড় করে দিয়ে। পূর্ববঙ্গ যেমন দিয়েছে, তিনি তেমন দু’হাত উপচে গ্রহণ করেছেন। নিতে কুণ্ঠিত হননি। এই নেওয়াকে আপন আলোয় রাঙিয়েছেন⎯ কবিতায়, গানে, চিত্রকর্মে, নাটকে, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে এবং সর্বোপরি পত্র-সাহিত্যে।

ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিতে শিলাইদহ উঠে এসেছে এভাবে ‘শিলাইদহের অপর পারে একটা চরের সামনে আমাদের বোট লাগানো আছে। প্রকাণ্ড চর⎯ ধূ ধূ করছে ⎯ কোথাও শেষ দেখা যায় না। ..... পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়। এই যে ছোট নদীর ধারে শান্তিময় গাছপালার মধ্যে সূর্য প্রতিদিন অস্ত যাচ্ছে, এবং এই অনন্ত ধূসর নির্জন নিঃশব্দ চরের উপরে প্রতি রাতে শত সহস্র নক্ষত্রের নিঃশব্দ অভ্যুদয় হচ্ছে, জগৎ সংসারে এ যে কী একটা আশ্চর্য মহৎ ঘটনা তা এখানে থাকলে তবে বোঝা যায়।’

দীর্ঘ কয়েক বছর এখানে স্থায়ীভাবে বাস করে ১৯০১ সালে তিনি সংসার গুটিয়ে শান্তিনিকেতনে যান। তারপর আসা-যাওয়া করেছেন। নদীতে বসবাস করেছেন বোটে- পতিসর-শাহজাদপুর ঘোরার সময় বিল-নদীর নৌপথে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার বিবরণ পত্র-সাহিত্যে পাওয়া যায়। কত নিবিড়ভাবে মানুষ ও প্রকৃতিকে দেখেছেন তা বর্ণনা করে শেষ করার নয়।

রবীন্দ্রনাথ শেষবারের মতো পূর্ববঙ্গে আসেন ১৯৩৭ সালে। গ্রাম ছিল প্রতিসর। ১৮৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি লিখেছিলেন: ‘এখন বেলা একটা বেজেছে। পাড়াগাঁয়ে মধ্যাহ্নের এই হাঁসের ডাক, কাপড় কাঁচার শব্দ, নৌকা-চলা জলের ছলছল ধ্বনি, দূরে গরুর পাল পার করবার হৈ হৈ রব এবং আপনার মনের ভিতরকার একটা উদাস আলস্যপূর্ণ স্বগত সংগীতস্বর, কলকাতার চৌকি-টেবিল-সমাকীর্ণ, বর্ণ-বৈচিত্র্যবিহীন নিত্যনৈমিত্তিকতার মধ্যে কল্পনাও করতে পারিনে। কলকাতাটা বড় ভদ্র এবং বড় ভারী, গবর্মেন্টের আপিসের মতো। জীবনের প্রত্যেক দিনটাই যেন একই আকারে একই ছাপ নিয়ে টাঁকশাল থেকে তকতকে হয়ে কেটে কেটে বেরিয়ে আসছে⎯ নীরস মৃত দিন, কিন্তু খুব ভদ্র এবং সমান ওজনের। এখানে আমি দলছাড়া এবং এখানকার প্রত্যেক দিন আমার নিজের দিন⎯ নিত্যনিয়মিত দম-দেওয়া কলের সঙ্গে কোনো যোগ নেই।’

এই ছিল পূর্ববঙ্গের সঙ্গে কবির আত্মিক যোগ। সেবার রবীন্দ্রনাথ নাগর নদীপথে পতিসর ছাড়েন। তারপর আত্রাই স্টেশন থেকে রেলে করে কলকাতায় যান।

১৯৩৬ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে ‘Degree of Doctor of Literature’ দেয়। এছাড়া কবি পূর্ববঙ্গের সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ইত্যাদি শহরে বিভিন্ন উপলক্ষে যান। জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারকে কবি যে চিঠি লিখেছিলেন সেখানে আছে: ‘ঢাকার জনসাধারণের পক্ষ থেকে আজ আমাকে নিমন্ত্রণ করবার জন্যে দূত এসেছিলেন। তাঁদের বিশেষ অনুরোধে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই যাত্রা করতে প্রস্তুত হয়েছি। ... বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃস্থিত ঢাকার লোকের নিমন্ত্রণ কোনো মতেই উপেক্ষা করা উচিত বোধ করিনে।’ এভাবে গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে ঢাকা শহর পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ববঙ্গে তার ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কখনো একটানা পূর্ববঙ্গে থাকেননি, কিন্তু ঘুরে ঘুরে এসেছেন অনবরত। কাটিয়েছেন মাসাধিক কাল। বিভিন্ন শহরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহীর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, ভারতবর্ষের এক ইঞ্চি জমিতে একজন ইংরেজ থাকলেও তা পূর্ণ স্বাধীনতা হবে না। এভাবে তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন দেশের মানুষকে।

কিশোর বেলায় ময়মনসিংহের দরিরামপুরে স্কুলপর্বের পর নজরুল ১৯২০ সালে বরিশালে আসেন। সেটি ছিল দূর্গা পূজার সময়। কমরেড মুজফফর আহমদ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। কবি বেশ কয়েকটি কবিতা রচনা করেছিলেন। বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচন করেছিলেন ঢাকা বিভাগ থেকে। স্বরাজ দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। সে বছরে তিনি নির্বাচনী প্রচারের কাজে বরিশালে এসেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার স্মরণে আলেকান্দায় ‘নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯২১ সালে কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লা তার জীবনের এক বড় অধ্যায়। নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে কুমিল্লার মেয়ে প্রমীলার সঙ্গে প্রেম হয়। এই প্রেমে হিন্দু রক্ষণশীলদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। প্রমীলার মা গিরিবালা দেবী মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে ১৯২৪ সালের ২৪ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। এরপরে নজরুল কুমিল্লায় আসেননি। তবে কুমিল্লায় অবস্থান তার সৃজনশীলতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কুমিল্লার প্রকৃতি, লালমাই পাহাড়, গোমতী নদী তার কবিতা, গল্পে ফিরে ফিরে এসেছে। কুমিল্লায় নজরুল শীর্ষক গ্রন্থে আবদুল কুদ্দুস লিখেছেন: ‘কুমিল্লা নজরুলের কাব্য কাননের লালন-ক্ষেত্র, পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত পীঠস্থান, জীবননাট্যের একটা অবিস্মরণীয় অধ্যায়।’ এভাবে কালজয়ী কবির আপন আবাস পূর্ববঙ্গ হয়।

এরপর ১৯২১ সালে চাঁদপুরে আসেন, ১৯২৪ সালে কুড়িগ্রামে। ফরিদপুরে আসেন ১৯২৫ সালের ২৫ মে। উপলক্ষ ছিল বঙ্গীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন। ২ মে ফরিদপুর টাউন লাইব্রেরি মাঠে জনসভার আয়োজন হয়েছিল। সভায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতিত্ব করেন। অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধি ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। সে সময়ে কবি জসীম উদদীনের সঙ্গে নজরুলের ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি নৌকায় করে ঘুরেছেন, চরে নেমে বেড়িয়েছেন। পূর্ববঙ্গের মাটি মানুষ দেখেছেন। জনসভায় বক্তৃতা করেছেন, গান গেয়েছেন। ‘শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল’ গান গেয়ে মাতিয়ে তুলেছেন ফরিদপুরবাসীকে।

এরপর তিনি আরও কয়েকবার ফরিদপুরে এসেছিলেন। ১৯৩৬ সালে আসেন জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনে অংশগ্রহণ করতে। তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৮ সালে আবার ফরিদপুরে আসেন। ‘ফরিদপুর সংসদ’ তাকে সংর্ধনা জানায়। কবি শেষবার ফরিদপুরে আসেন ১৯৪১ সালে। রংপুরে আসেন দু’বার। একবার ১৯২৫ এবং আর একবার ১৯২৮ সালে। এই বছরে তাকে রংপুরে সংবর্ধনা দেয়া হয়। দিনাজপুরে আসেন ১৯২৬ সালে। এই একই বছরে দিনাজপুর থেকে মাদারীপুরে যান। এ সময়ে মাদারীপুর শহরে নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রাদেশিক মৎস্যজীবী সম্মেলনের অধিবেশন হয়। তিনি জেলেদের নিয়ে রচিত গান গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

১৯২৬ সালে প্রথম ঢাকা সফর করেন নজরুল। ২৭ জুন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তিনি বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর জোর দেন। তার রচিত গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন। ১৯২৭ সালে আবার আসেন। ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আবার ঢাকায় আসেন। এ সময় ড. কাজী মোতাহার হোসেনের বর্ধমান ভবনের (বর্তমানে বাংলা একাডেমি) বাসায় অবস্থান করেন। ‘চল চল চল’ গানটি লেখেন। এই গান গেয়ে মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর ১৯৪০ সালে বেতার কেন্দ্রের প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন।

পূর্ববঙ্গের আরও অনেক জায়গায় ঘুরেছেন তিনি। চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, বগুড়া, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ ইত্যাদি। এবং আরও কোনো কোনো স্থান। পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যেমন তার প্রাণের টান ছিল, তেমনি পূর্ববঙ্গবাসী তাকে সংবর্ধনা দিয়ে জানিয়েছে বুকভরা ভালবাসা।

২.

যে পূর্ববঙ্গের কথা এই লেখায় উল্লেখ করা হলো তা আজকের বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাতি অর্জন করেছে স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। তার অবর্তমানে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে তার নামে। এই যুদ্ধের রণধ্বনি ছিল ‘জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দুই মহান কবির একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তিনি তাদের বরণ করেছেন গভীর শ্রদ্ধায়, প্রদীপ্ত চেতনায়, জ্ঞানের মাহাত্ম্যে, সাহসের বলিষ্ঠতায়, মননের শাণিত প্রভায় এবং দিব্যলোকের অনিঃশেষ যাত্রায়।

১৯৬১ সাল ছিল রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে বাঙালি রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযপন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ছায়ানট’। এক পর্যায়ে পাকিস্তান বেতার থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন: ‘দেউলিয়া সরকার আমাদের পাঠ নিষিদ্ধ করিয়া দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলায় কবিতা লিখিয়া যিনি বিশ্বকবি হইয়াছেন। আমরা এই ব্যবস্থা মানি না⎯ আমরা রবীন্দ্রনাথ পড়িবই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাহিবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এইদেশে গাওয়া হইবেই।’

এভাবে বঙ্গবন্ধু রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির সেতুবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন।

বেতার কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান তার দেশের বেতার ও শেখ মুজিব প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘প্রবল গণ আন্দোলনে আইয়ুব খান এবং মোনায়েম খানের অপসারণের পর প্রথম বেতারের অনুষ্ঠান প্রচার নিয়ে আলাপ হয় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। দেশের ছাত্রদল ইতোমধ্যেই তাকে বঙ্গবন্ধু আখ্যায় ভূষিত করেছে। দেখা হতেই তিনি প্রথম বেতার নিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করলেন। বললেন, দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অনুষ্ঠান প্রচার করতে না পারলে বেতার বন্ধ করে দিন। পরে কাছে এসে হেসে বলেছিলেন, একবার রবীন্দ্রনাথের ‘‘আমার সোনার বাংলা’’ গানটি বেতার থেকে প্রচার করতে পারেন না?

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমস্ত বেতার কর্মীদের একান্ত সহায়তায় পরদিনই বেতার থেকে প্রচারিত হয় ‘আমার সোনার বাংলা’ গান এবং আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত করে বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ এই গানটিকে জাতীয় সংগীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার সময়। ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জি একই বিমানে লন্ডন থেকে দিল্লি আসছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বঙ্গবন্ধু বিমানে বসে গানটি গুনগুন করে গাইছিলেন। তিনি শশাঙ্ক ব্যানার্জিকে বলেছিলেন, এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হবে। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের রচনা পড়তে ভালবাসি। আমি তাকে ভালবাসি। সাহিত্য পাঠে আমার পুঁজি ওইটুকুই। বঙ্গবন্ধুর জন্য এটি এক ধরনের সরল সত্য।

‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি যখন তিনি জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেন, তখন শুধু সাহিত্য পাঠের প্রেরণা হিসেবে নির্বাচন করেননি। কৈশোর থেকে লাভ করা অভিজ্ঞতা এবং তার ভিত্তিতে গড়ে তোলা রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিধ্বনি পেয়েছিলেন সেই গানে। যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি তার জীবন এবং রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, এই গান ছিল তার রবীন্দ্র রচনার পাঠজনীত অভিজ্ঞতা। তিনি তাকে নন্দিত করেছেন। বরণ করেছেন। কৃষক-মজুরের ঘামে-শ্রমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করেছেন।

এই গানের প্রতিটি চরণে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন একাকার হয়ে আছে। রবীন্দ্রসাহিত্য না পড়েই রাজনীতির যে দর্শন তিনি কিশোর বয়স থেকে স্থির করেছিলেন, পরিণত বয়সে তার প্রতিচিত্র দেখলেন রবীন্দ্রসাহিত্যে। যখন পড়লেন ‘তোমারি ধুলোমাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন জানি’ দেখলেন ওই একটি চরণে তার শৈশব-কৈশোর আশ্চর্যভাবে উদ্ভাসিত। যখন পড়লেন ‘তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে’⎯ দেখলেন বাবার ধানের গোলা থেকে নিরণ্ণজনের মাঝে ধান বিতরণের ছবি। যখন পড়লেন ‘ও মা, তোমার রাখাল, তোমার চাষি’⎯ দেখলেন বাংলার কৃষককুলকে, যারা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ধরে রাখে⎯ তারাই তো বাস করে পাখি-ডাকা ছায়ায় ঢাকা পল্লিবাটে। যখন পড়লেন, ‘দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মাণিক হবে’⎯ দেখলেন দেশ মায়ের পায়ের ধুলো তার সারা অঙ্গে জড়ানো। পড়লেন ‘গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে’⎯ দেখলেন গরিবের ধন ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন, সেই স্বাধীনতার ভূষণ তার গায়ে জড়ানো হয়েছে। পড়লেন, ‘আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি’⎯ দেখলেন স্বনির্ভর অর্থনীতির যে কাঠামো তার জীবনের ধ্রুব সত্য তার জন্য মৃত্যুতে উৎসর্গিত করতে হলো জীবন।

এভাবে রাজনীতির কবি, Poet of Politics, বঙ্গবন্ধু সংস্কৃতির কবিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৪১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘আজ আশা করি আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্য লাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই ত্রাণকর্তা, মহানায়ক।

বঙ্গবন্ধুই সেই রাষ্ট্রনায়ক যিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশে এনে তার বেঁচে থাকার বাকি দিনগুলো স্বস্তির করেছিলেন⎯ শারীরিকভাবে এবং মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই কবির গান অনুপ্রেরণার অন্তহীন উৎস ছিল।

পূর্ববঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর সময় নজরুল এই ভূখণ্ডকে বারবার নমস্য মেনেছেন। ‘পূর্ববঙ্গ’ নামের কবিতায় এবং ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গানে আবেগের মাত্রা প্রকাশ পায়। অসুস্থ হওয়ার কয়েক মাস আগে দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকায় ‘আমার সুন্দর’ নামে সম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন ⎯ ‘আট বৎসর ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতি জেলায়, প্রতি মহকুমায়, ছোট বড় গ্রামে ভ্রমণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য গান গেয়ে, কখনো কখনো বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালাম। এই প্রথম আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ভালবাসলাম। মনে হলো, এই আমার মা।’

১৯৪২ সালের এপ্রিল মাসে ‘বাঙালির বাঙলা’ প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘বাঙালিকে, বাঙালির ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকে শুধু এক মন্ত্র শেখাও⎯ এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির⎯ আমাদের। ... বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক!’

পাকিস্তান সরকার নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য তার সাহিত্যে হাত দিতেও দ্বিধা করেনি। তার কবিতার ‘মহাশ্মশান’ শব্দটি বদলে দিয়ে ‘গোরস্থান’ শব্দ প্রতিস্থাপন করে।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে এম আর আখতার মুকুল তার মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুল প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘বঙ্গবন্ধু স্বয়ং উদ্যোগ গ্রহণ করায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দান করা ছাড়াও কবির রচিত ঐতিহাসিক গান ‘‘চল্ চল্ চল্, উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ‘‘মার্চিং সংগীত’’ হিসেবে মর্যাদা দান করা হলো। এখানে শেষ নয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের আরো সিদ্ধান্ত হচ্ছে, অবহেলিত কবিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শুশ্রুষার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। এখন থেকে সমস্ত দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অনতিবিলম্বে ঢাকায় পাঠাবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হলো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মর্মে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে, বিদ্রোহী কবির উপস্থিতিতেই ঢাকায় আড়ম্বরের সঙ্গে কবির ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। মাঝে মাত্র দিন দুয়েকের সময়। তখন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. এ. আর. মল্লিক। তিনি তড়িৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছার কথা অবহিত করলেন। এতেই কাজ হলো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান ছাড়াও রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়ে দিলো।

প্রসঙ্গত এ কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, বিদ্রোহী কবিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের অবদান অনস্বীকার্য।

অবশেষে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশ বিমানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। সঙ্গে এলেন সস্ত্রীক দুই পুত্র সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ এবং কবির দুই নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। সেদিন তেজগাঁও বিমান বন্দরে এক বিশাল জনতা বাংলাদেশের জাতীয় কবিকে সংবর্ধনা জানালো। সেদিন ঢাকা উৎসব মুখরিত। কবিকে সোজা নিয়ে আসা হলো ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় ২৮ নম্বর সড়কের (পুরাতন) ৩৩০-বি বাড়িতে।’

১৯৭৪ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি। এই সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৪ ফেব্রুয়ার থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ১৯ তারিখ ছিল কবিতা বিষয়ক আলোচনা। ঐ দিন কবি নজরুলকে মঞ্চে আনা হয়েছিল প্রধান অতিথি হিসেবে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘Degree of Doctor of Literature’ প্রদান করে।

১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই কবির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কবিকে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ১১৭ নম্বর কেবিনেই তিনি ছিলেন এক বছরেরও বেশি সময়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন আগস্ট মাসের ৬ তারিখে। রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শহীদ হন ১৫ আগস্ট। রাজনীতির কবি নিজের প্রগাঢ় অনুভবের মগ্নতায় কাছে টেনেছিলেন সংস্কৃতির দুই কবিকে। বিভিন্ন বছরের একই মাসে তাদের মৃত্যু একটি স্বাধীন দেশ ও তার মানুষের কাছে বেঁচে থাকার সত্য। জাতির মননের কাছে তিনজনই ধ্রুবতারা।

একজন রাজনীতির কবি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য করেছিলেন। বাংলা ভাষার দুই অমর কবিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে শ্রেষ্ঠ আসন দিয়েছেন।

সেলিনা হোসেন: কথাসাহিত্যিক

আরও পড়ুন

মুজিব শতবর্ষ
Expats and rich people are the target of fraud traps with women

নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ, টার্গেট প্রবাসী ও ধনাঢ্যরা

নারী দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ, টার্গেট প্রবাসী ও ধনাঢ্যরা এই গজারী বাগানে ডেকে নিয়েই ফাঁদে ফেলা হয় বলে অভিযোগ নাজমুলের। ছবি: নিউজবাংলা
প্রস্তাবিত স্থানে আগে থেকেই তৈরি থাকেন চক্রের সদস্যরা। ওই ব্যক্তি পৌঁছানোমাত্র তাকে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেলে মারপিটসহ জোরপূর্বক নকল বিয়ে দেন কাজী ডেকে। দেনমোহর ধার্য করেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে ডিভোর্সের নামে সেই দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

প্রথমে প্রবাস ফেরত ও টাকাওয়ালা ব্যক্তিদের টার্গেট, পরে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে ডেকে আনেন ডেটিংয়ের জন্য। প্রস্তাবিত স্থানে আগে থেকেই তৈরি থাকেন চক্রের সদস্যরা। ওই ব্যক্তি পৌঁছানোমাত্র তাকে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করেন।

চাঁদা না পেলে মারপিটসহ জোরপূর্বক নকল বিয়ে দেন কাজী ডেকে। দেনমোহর ধার্য করেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে ডিভোর্সের নামে সেই দেনমোহরের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এমনই প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে চাম্বলতলা গ্রামে।

গত ২১ মার্চ এই চক্রের সদস্যদের কাছে প্রতারণার শিকার হন ঘাটাইল উপজেলার রহমতখাঁর বাইদ গ্রামের দুলাল মন্ডলের প্রবাস ফেরত ছেলে নাজমুল ইসলাম। এরপর বিচার চেয়ে তিনি টাঙ্গাইল আদালতে কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

আসামিরা হলেন- মো. জাহিদুল হাসান জাহিদ, সৌরভ তালুকদার, হুমায়ুন সিকদার রানা, বাবুল হোসেন, মো. জুয়েল, রিজান, সুজন, রায়হান, কাজী মো. তাহেরুল ইসলাম তাহের ও রাশেদা বেগম।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে দেশে ফেরেন নাজমুল ইসলাম। গত ২১ মার্চ চাম্বলতলা গ্রামের আবু তালুকদারের বাড়িতে তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ৯টার দিকে সৌরভ তালুকদারের মাধ্যমে নাজমুলকে ডেকে নিয়ে নাজিম উদ্দিনের বাড়ির উত্তর পাশের গজারী বাগানে নিয়ে যান জাহিদুল। সেখানে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। চাঁদা না দিলে নাজিম উদ্দিনের নাবালিকা মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়।

সে সময় টাকা দিতে অস্বীকার করায় ব্যাপক মারধরের শিকার হন নাজমুল। পরে তারা কয়েকটি কার্টিজ পেপারে খুনের ভয় দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নেন এবং সুমাইয়াকে কাবিন ছাড়াই বিবাহের নামে নাজমুলের বাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দেন। এমনকি পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।

তবে মুক্তি পেয়ে আদালতে মামলা করেন বলে নিউজবাংলাকে জানান নাজমুল।

ঘটনার বিষয়ে সুমাইয়া জানায়, সে নাজমুলকে চিনত না। জাহিদুল তার দুঃসম্পর্কের মামা হয়। জাহিদুলের কথায় সে এমনটি করেছে। প্রথমে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ তার।

স্থানীয়দের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি এমন প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা নারীদের ব্যবহার করছে। আর স্থানীয় কাজীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।

এদিকে জানতে চাইলে ওই বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করেন কাজী তাহেরুল ইসলাম তাহের। জানান, এ ধরনের বিয়ে তিনি পড়াননি। তবে তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ওসি আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন:
সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা
হাইকোর্টের রায় জালিয়াতি, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
ভুয়া এনআইডি তৈরি করে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ
ভুয়া নিয়োগপত্রে চাকরি, প্রতারক চক্রের হোতসহ আটক ২
মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
The Facebook video returned the sister who was lost 30 years ago

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে রাজধানীর মহাখালীতে আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’র স্টুডিওতে সোমবার হাস্যোজ্জ্বল রাশিদা (বাঁয়ে) ও রহিমা। ছবি: নিউজবাংলা
ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতে এসে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩০ বছর আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান রাশিদা। পরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বাসে চেপে বসেন। কিন্তু সেই বাস তাকে নিয়ে যায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এনায়েতপুরে। এরপরের গল্প অনেক দীর্ঘ।

এ যেন রূপকথার কল্পকাহিনী। ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে খুঁজে পাওয়ার গল্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও’র সূত্র ধরে তিন দশক পর দেখা হলো দুই বোনের। অঝোরে কাঁদলেন ওরা। এই কান্না হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার। এই কান্না আনন্দের।

হারিয়ে যাওয়া বড় বোনের নাম রাশিদা। তার বর্তমান ঠিকানা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে সোনার বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৫ নম্বর ঘর। আর তাকে খুঁজে পাওয়া ছোট বোনের নাম রহিমা খাতুন।

রহিমার ঠিকানা ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের একটি বাড়ি। এখানে গৃহকর্মী হিসেবে থাকেন তিনি। তার মায়ের বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। সেখানে থাকেন তার মা মোছাম্মৎ বেগম ও ছোট ভাই ইউনুস।

সন্তানদের ছোট রেখেই মারা যান তাদের বাবা আকুব্বর। এরপর ওদের মা পুনরায় বিয়ে করেন। সেই বাবাও মারা গেছেন সাত বছর আগে।

রাশিদা তার পরিবারের খোঁজ না জানলেও তার অবস্থানস্থলের সঙ্গে মা ও ভাইবোনের দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। এক পাশে কুষ্টিয়া, অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। মাঝখানে শুধু পাবনা জেলা।

গুগলের ম্যাপের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এনায়েতপুর গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। গাড়িতে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট। অথচ এই পথটুকুর দূরত্ব ঘুচতে লেগে গেছে দীর্ঘ ৩০টি বছর।

ঘটনাটা শুরু করা যাক ৩০ বছর আগের এনায়েতপুর গ্রাম থেকে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার এই গ্রামে ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকত চার সদস্যের একটি পরিবার। মা মোছাম্মাদ বেগম, দুই বোন সাত বছর বয়সী রাশিদা ও চার বছর বয়সী রহিমা এবং দুই বছর বয়সী একমাত্র ভাই ইউনুস।

পরিবারটিতে অভাব-অনটন ছিলো নিত্যদিনের মোছাম্মৎ বেগম সে সময় পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবারের সংস্থান করতে বড় মেয়ে রাশিদাকে কাজে পাঠান কুমারখালীর লতিফ নামের এক ব্যক্তির ঢাকার বাসায়।

এরপর হঠাৎ একদিন গৃহকর্তা লতিফের কাছ থেকে খবর আসে যে রাশিদা তার ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মা আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মেয়ের খোঁজ পাননি। নিজের নামে থাকা স্যামান্য জমিটুকু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে রাশিদাকে খুজতে থাকেন মা। এক পর্যায়ে সেই টাকাও শেষ হয়ে যায়। আর নিখোঁজই থেকে যান রাশিদা। এই পর্যায়ে নিজ বাড়িতে বসে মেয়ের ফিরে আশায় পথ চেয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না মায়ের।

ছোট দুই ভাই-বোন রহিমা ও ইউনুস বোড় বোন রাশিদা হারিয়ে যাওয়ার মর্ম না বুঝলেও মায়ের প্রতিটি দিন কাটতে থাকে বড় মেয়ের আশায় পথ চেয়ে থেকে। এভাবেই রাশিদার পথ চেয়ে মায়ের কেটে যায় ৩০টি বছর।

এনায়েতপুর গ্রামের ছোট্ট বাড়িটিতে এখন একাই থাকেন রাশিদার মা বেগম। সাত বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে দিন কাটে তার। একমাত্র ছেলে ইউনুস থাকে কুষ্টিয়া শহরে। আর ছোট বোন রহিমা কাজ করে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটি বাসায়।

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে
দীর্ঘ ৩০ বছর পর পরস্পরকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা দুই বোন। ছবি: নিউজবাংলা

যেভাবে রাশিদার খোঁজ পান রহিমা

চলতি এপ্রিল মাসে ১৬ তারিখ, রাত সাড়ে ১১টা। কুমারখালী থেকে রহিমার ফোনে আসা একটা কল সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। যেন আকাশ থেকে পড়েন রহিমা। নিউজবাংলাকে সে সময়ের মানসিক অবস্থার বর্ণনা দেন তিনি।

রহিমা বলেন, ‘আমি ঢাকায় যে বাসায় কাজ করি তাদের দেশের বাড়ি ঝিনাইদ শহরের আদর্শপাড়ায়। ঈদের ছুটিতে তারা ঝিনাইদহে যান। আর আমি চলে যাই কুমারখালীতে। ১৭ এপ্রিল আমাদের ঢাকায় চলে আসার কথা। তাই ১৬ তারিখেই কুমারখালী থেকে ঝিনাইদহে গিয়ে আমার গৃহকর্তার বাসায় অবস্থান করি।’

তিনি বলেন, “১৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার সময় হঠাৎ আমাদের গ্রাম থেকে এক চাচা ফোনে জানান যে ফেসবুকে আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা, পর্ব-৫৭৫’ নামের এক অনুষ্ঠানে হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ে আমাদের গ্রামের নাম বলে নাকি আমার বোন দাবি করছে। সে সময় চাচা আমাকে ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান দেখতে বলেন।”

রহিমা বলেন, ‘এরপর আমি বাসার লোকজনে সহযোগিতায় ফেসবুকের ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওটা দেখি। ভিডিওর ওই মেয়েকে প্রথম দেখায়ই আমার বুকের মধ্যে একটা বাড়ি মারে! সব কিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে যায়। আমার গা তখন কাঁপছিলো! মুখ দিয়ে কোন কথা আসছিলো না।

‘তবে প্রথম দেখায়ই আমি চিনে ফেলি যে এটা আমারই বড় বোন রাশিদা। চিনবো না? আমার রক্ত, আমি এক দেখায়ই চিনবো। একদম আমার মতো দেখতে। তাছাড়া ভিডিওতে সে বলছে তার ছোট বোনের নাম রহিমা, ভাইয়ের নাম ইউনুস, মায়ের নাম বেগম। সবই মিলে যায়।’

রহিমা বলতে থাকেন, ‘তখন সব কিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধু আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো। আমি কল্পনাও করিনি আমি আমার বড় বোনকে আর খুঁজে পাবো!’

‘তখন শুধুই ভাবছিলাম- হারিয়ে যাওয়ার পর আমার বোনের কত কষ্টই না হয়েছে। কত আপদ-বিপদই না তার পার করতে হয়েছে। তখন থেকেই মনের মধ্যে দুমড়ে-মুছড়ে যাচ্ছে, কখন আমি আমার বোনকে সামনা-সামনি দেখতে পাবো? কখন বোনকে একটু জড়িয়ে ধরবো? বলেন রহিমা।

রহিমা আরও বলেন, “ওই রাতেই আমাদের বাসা থেকে ফেসবুকের ওই ‘আপন ঠিকানা’ নামের অনুষ্ঠান যারা করেন তাদের মধ্যে তানভীর ও আরিফ নামের দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা বলে- ‘আপনারা ঢাকায় আসেন। আমরা রাশিদাকেও ঢাকায় এনে একদিন সময় করে আপনাদের একসঙ্গে মিলিয়ে দেব।’ এরপর আমি কুমারখালীতে মাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। মা মনে হয় এখন বোনকে দেখার আশায় ঘুমাতে পারছে না। শুধু কান্নাকাটি করছে।”

দু’বোনের দেখা হয় যেভাবে

আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠান থেকে তানভীর ও আরিফ নামের দুজন রহিমাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ২২ এপ্রিল (সোমবার) বিকেলে মহাখালীতে অবস্থিত তাদের স্টুডিওতে যেতে। সেখানেই তাদের ক্যামেরার সামনে হারিয়ে যাওয়ার পর দুই বোনের প্রথম দেখা হবে।

মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সময় হাতে রেখেই রওনা দেন রহিমা। এরপর বিকেল ৫টায় রহিমার জীবনে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানের স্টুডিওতে দেখা হয় ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বড় বোন রাশিদার সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর এনায়েতপুর গ্রামে থাকা রহিমার মা বেগমের সঙ্গেও ভিডিও কলে দেখা ও কথা হয় রাশিদার। সে সময় মা-মেয়ে দু’জনই অঝোরে কাঁদতে থাকেন। ফিরে পাওয়া মেয়েকে উদ্দেশ করে মা বলতে থাকেন- ‘তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। আমি তোকে ছুঁয়ে দেখবো।’

রাশিদা স্টুডিও থেকে বের হয়ে রহিমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘তোর তো নাকফুল ছিলো না, এখন তোর নাকে নাকফুল। তুই কত বড় হয়ে গেছিস। আমার ছোট ভাইটাও মনে হয় অনেক বড় হয়ে গেছে। মাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে খুব মন চাচ্ছে।’

এই পর্যায়ে দুই বোনের কান্নায় আর সব কথা হারিয়ে যায়।

ফেসবুকের ভিডিও ফিরিয়ে দিল ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে
বাঁ থেকে- রাশিদা, রহিমা, রহিমার বড় ছেলে রাহুল ও রাশিদার বড় ছেলে শাকিল। ছবি: নিউজবাংলা

রাশিদার জীবনের গল্প

৩০ বছর আগে রাশিদার হারিয়ে যাওয়ার গল্প জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছোট বেলায় মা যে বাড়িতে আমাকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলো সেখানে বাসার লোকজন আমাকে খুব মারতো। একদিন মেরে তারা আমার মাথা দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছিল। সেদিনই রাগ করে ওই বাসা থেকে পালিয়ে একটা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গাড়িতে উঠে বসি।

‘ওই বাসে ওঠার বিশেষ কারণও ছিল। বাসের লোকজন বলছিলো যে উল্লাপাড়ায় একটা এনায়েতপুর আছে। সে সময় আমার মনে ছিলো যে আমার বাড়িও এনায়েতপুরে। কিন্তু আমার জেলা কুষ্টিয়া, থানা কুমারখালী সেটা তখন মনে ছিলো না।’

রাশিদা বলেন, উল্লাপাড়ার এনায়েতপুরে গিয়ে দেখি এটা আমার বাড়ির এনায়েতপুর না। তখন ওই এনায়েতপুরের এক মহিলা তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়। তাদেরও কোনো মেয়ে সন্তান ছিল না। এর কিছুদিন পর তারা আমাকে তাদের পারিচিত একজনের ঢাকার শ্যামলীর বাসায় কাজ করতে পাঠায়। সেখানে আমি অনেক বছর থাকি।’

রাশিদা জানান, শ্যামলীর ওই বাসার লোকজন তাকে একসময় বিয়ে দিয়ে দেন। তার স্বামীর বাড়িও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি উল্লাপাড়ায় চলে যান। তখন থেকে তিনি এখানেই ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারীর সময় আমার স্বামী করোনায় মারা যায়। তারপর সরকার আমার থাকার জন্য এনায়েতপুরের এক আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটা বাড়ি বরাদ্দ দেয়। এখন আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে টিউবওয়েল বসানোর কাজ করে এবং মেঝো ছেলে এতিমখানায় থাকে। আর ছোট সন্তান মেয়েটা আমার সাথেই থাকে। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি।’

ফেসবুক শো ‘আপন ঠিকানা’র খোঁজ পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘আমি যে বাড়িতে কাজ করি ওই বাড়ির মেয়ে আমাকে এই অনুষ্ঠানের খোঁজ দেয়। সেই আমাকে এখানে নিয়ে আসে।’

রাশিদা বলেন, ‘এখন আমার একটাই চাওয়া আমার ভিটেয় (বাড়ি) যাওয়া। আমি আজ সিরাজগঞ্জ চলে যাব। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় মায়ের কাছে যাব। মায়েরে ছুঁয়ে দেখব।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘সামান্য জেলা আর থানার নাম মনে না থাকায় আজ ৩০ বছর আমি আমার পরিবার থেকে আলাদা। আমার শুধু মনে ছিলো এনায়েতপুর গ্রামের কথা। কুমারখালীর এনায়েতপুরের খোঁজে বের হয়ে আমি এখনও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আরেক এনায়েতপুরের বাসিন্দা হয়ে আছি।’

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
People of 40 villages suffered due to the broken bridge

ভাঙা সেতুতে ভোগান্তি ৪০ গ্রামের মানুষের

ভাঙা সেতুতে ভোগান্তি ৪০ গ্রামের মানুষের স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেতুর ভাঙা অংশে বাঁশের মাচাল বিছিয়ে চলছে হালকা যানবাহন। ছবি: নিউজবাংলা
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘সেতুটি অনেক আগের। এ কারণে ভেঙে গেছে, তবে সেতুটি দিয়ে প্রায় ৪০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা ও নওদা শালুয়া খালের ওপরে নির্মিত সেতু ভেঙে পড়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে বাঁশের মাচাল দিয়ে চলাচল করছেন ওই এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ।

উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সেতুর পূর্ব পাশের ভারী যানবাহন চলাচল একদম বন্ধ হয়ে গেছে।

নলকা-শালুয়া সেতু দিয়ে চলাচলকারী জানান, কয়েক যুগ আগে নির্মিত সেতুটি গত পাঁচ বছর ধরে নড়বড়ে ছিল। এ অবস্থায় স্থানীয় ইটভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক চলাচল করায় সম্প্রতি সেতুটির একাংশ ভেঙে পড়েছে। এতে ওই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে অটোরিকশা ভ্যানসহ হালকা যানবাহন এখনও চলাচল করছে।

তারা জানান, বর্তমানে ভাঙা অংশের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় ওই ইউনিয়নসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁশের মাচাল বিছিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছে, তবে খুঁটির নড়বড়ে অবস্থা।

জরুরি ভিত্তিতে নলকা-শালুয়া সেতু সংস্কার বা পুনরায় নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ভাঙা সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও কাজ হচ্ছে না। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে এলাকাবাসী মিলে সামান্য চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মুহূর্তে সেতু ভেঙে মানুষের মৃত্যুসহ বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারে।’

পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, ‘সেতুটি অনেক আগের। এ কারণে ভেঙে গেছে, তবে সেতুটি দিয়ে প্রায় ৪০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সেতুর যাবতীয় তথ্যাদি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।’

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘সেতু পরিদর্শন শেষে এলজিইডিকে জানানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত জনগণের ভোগান্তি নিরসন করা হবে।’

আরও পড়ুন:
খালের এক কিলোমিটারে ৪৬ সেতু
সরকারি খালে পারিবারিক সেতু
৬ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক, চালক ও যাত্রীদের স্বস্তি
সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, জনদুর্ভোগ
যানজটে নাকাল বাঁশখালীর এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
Almost closed import of perishable goods through Benapole port
পেট্রাপোলে সময়ক্ষেপণ

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে ওপারেই। ছবি: নিউজবাংলা
পণ্য আমদানিকারকরা জানান, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল পণ্য আমদানি থেকে, কিন্তু বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। 

গত কয়েক মাস ধরে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র ৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানিত নিয়ম চালু করেছে।

এদিকে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে পরদিন। ফলে অধিকাংশ পচনশীল পণ্যের চালান দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে না পেরে নষ্ট হচ্ছে ওপারেই।

সিরিয়ালের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওপারে ট্রাক আটকে থাকায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে তারা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে।

সেইসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় বন্ধ পচনশীল পণ্য আমদানি

পণ্য আমদানিকারকরা জানান, রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে পচনশীল পণ্য আমদানি থেকে। কিন্তু বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সিরিয়ালের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক আটকে রাখায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, সবজি, ক্যাপসিকাম, কাচা মরিচসহ অন্য পচনশীল পণ্য আমদানি হয় দুপুরের পরপরই। ফলে সন্ধ্যার আগেই এসব পণ্য চালান খালাস হয়ে চলে যেত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু গত মাসখানেক ধরে ভারতীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর ২০ ট্রাক জেনারেল পণ্যের পর মাত্র পাঁচ ট্রাক পচনশীল পণ্য রপ্তানির নিয়ম চালু করেছে।

‘কোনো কোনো চালান সিরিয়াল পেয়ে রাতে প্রবেশের অনুমতি পেলেও বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনো পচনশীল পণ্য খালাস না দেয়ায় পরদিন বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পণ্য চালান পচন ধরতে শুরু করে।’

পচনশীল পণ্য আমদানিকারকদের দাবি, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জেনারেল গুডস আমদানির অনুমতি দেয়া হোক। শুধু পচনশীল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুপুরের পর থেকে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য একসঙ্গে সব পচনশীল পণ্য চালান আমদানির অনুমতি দিলে পচনশীল পণ্য খুব দ্রুত সময়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।

তারা জানান, গত মাসখানেক আগেও এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি হতো। যা থেকে সরকার প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছিল। ফলে বর্তমানে আমদানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১০ ট্রাকে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাস ও নিষ্পত্তিকরণ বিধিমালা-২০২১ নামে একটি নতুন বিধিমালা জারি করেন। যার আওতায় ৬৩ ধরনের পচনশীল পণ্যের শুল্কায়নসহ সব কর্মকাণ্ড দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ মার্চ ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনিল কুমার সিংহ স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজারকে বলা হয়েছে। পচনশীল পণ্য দ্রুত রপ্তানির বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।

বেনাপোল আমদানীকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, পচনশীল পণ্য দ্রুত খালাসের নিয়ম থাকলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রতিপালন করছেন না।

পচনশীল পণ্য দ্রুত আমদানিতে সিরিয়ালের নামে দীর্ঘসূত্রিতা প্রথা বাতিল করে পূর্বের ন্যায় আমদানির পণ্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের দাবি করেছেন আমদানিকারকরা।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে পেট্রাপোল পোর্ট ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানিয়েছি অন্য পণ্যের সঙ্গে পচনশীল পণ্যের গাড়ির সারা দিনব্যাপী বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে সে অনুযায়ী সিরিয়াল মেইনটেন করার জন্য তাকে আমি অনুরোধ করেছি।’

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে সিরিয়ালের নামে পচনশীল পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দরে আগের তুলনায় আমদানি কমে গেছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও অনেক কমে গেছে।

আরও পড়ুন:
ভারত থেকে চার চালানে ১০০০ টন আলু আমদানি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে বেনাপোলে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে সন্ধ্যার পর পচনশীল পণ্য আনা যাবে না
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্লেন্ডিং মেশিনে প্রায় আড়াই কেজি স্বর্ণ

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
In three years the money donated to Pagla Mosque has increased three times

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা সাধারণত প্রতি তিন মাস পর পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। ছবি: নিউজবাংলা
ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। আর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মেলে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের বেশি সময়কালে মসজিদটিতে দানের টাকা বেড়েছে সোয়া তিন গুণের বেশি।  

মনের বাসনা পূরণের আশায় কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে প্রতিনিয়ত টাকা, অলংকারের মতো বিভিন্ন বস্তু ও হাঁস, মুরগির মতো জীবিত প্রাণী দান করেন স্থানীয়সহ অন্য জেলার লোকজন।

সাধারণত প্রতি তিন মাস পর দানবাক্সগুলো খুলে গণনা শেষে টাকার পরিমাণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এ ঘটনাটি দেশজুড়ে থাকে আলোচনায়।

দানবাক্স গণনার পর প্রতিবারই টাকার পরিমাণটা সাধারণত আগের মাসের চেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। গত তিন বছরের হিসাবে দেখা যায়, কিছু ব্যতিক্রম বাদে প্রতিবারই বেড়েছে দানের টাকা।

কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। সম্প্রসারণের পর মসজিদের আওতাধীন জায়গা দাঁড়িয়েছে তিন একর ৮৮ শতাংশে।

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

তিন বছরের কোন সময়ে কত টাকা দান

পাগলা মসজিদে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্সের টাকা গণনা করা হয়েছিল। চলতি বছরের ২০ এপ্রিল গণনা করা হয় টাকা।

ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। আর ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মেলে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের বেশি সময়কালে মসজিদটিতে দানের টাকা বেড়েছে সোয়া তিন গুণের বেশি।

মসজিদটিতে ২০২১ সালের ১৯ জুন পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ টাকা। একই বছরের ৬ নভেম্বর পাওয়া যায় রেকর্ড পরিমাণ তিন কোটি সাত লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকা।

পরে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া ওই বছরের ৩ জুলাই পাওয়া গিয়েছিল তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। একই বছরের ২ অক্টোবর মেলে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা।

তিন মাস এক দিন পর ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

এরপর রমজানের কারণে চার মাস পর ৬ মে দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ১৯টি বস্তায় রেকর্ড পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার, হীরা ও বিপুল পরিমাণ রুপা পাওয়া গিয়েছিল। ওই বছরের ১৯ আগস্ট খোলা হয়েছিল এ মসজিদের আটটি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাড়ে ১৩ ঘণ্টায় ২০০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনা শেষে রেকর্ড পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পান।

একই বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন রেকর্ড ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময়ে পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।

পাগলা মসজিদে আটটি দানবাক্স থাকলেও তখন থেকে একটি বাড়ানো হয়।

গত বছরের পর এবার ৪ মাস না যেতেই আলোচিত ও ঐতিহাসিক মসজিদটির দানবাক্সে সব রেকর্ড ভেঙে মেলে পৌনে আট কোটি টাকা।

দান করেন কারা

দিনের পাশাপাশি গভীর রাতে গোপনে অনেকে দান করে থাকেন পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলোতে। টাকা, অলংকারের পাশাপাশি প্রতিদিন মসজিদে দান করা হয় হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল। কারা দান করেন এসব টাকা এবং কোন খাতে ব্যয় হয় এসব অর্থ, সে তথ্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন এ মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন ২৭ বছর ধরে, যার ভাষ্য, ‘শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’

তিনি জানান, অতীতে এ মসজিদে কেবল আশপাশের এলাকার মানুষ দান করতেন। আর এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে টাকা-পয়সা দান করেন। এ ছাড়া বিদেশিরা অনেক সময় আসেন। পুরো মসজিদ ঘুরে দেখে যাওয়ার সময় দানবাক্সে বৈদেশিক মুদ্রা দান করেন।

মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলেন, এখানে দান করার পর তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করেন তারা।

তিন বছরে সোয়া তিন গুণ বেড়েছে পাগলা মসজিদে দানের টাকা

টাকা ব্যয় হয় যেসব খাতে

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতি মাসে পাগলা মসজিদের স্টাফ বাবদ ব্যয় হয় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ১২৪ জন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য এবং অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের জন্য ১৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও করোনাকালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তিনি জানান, পাগলা মসজিদের টাকায় ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ১৩০ জন এতিম শিশু পড়াশোনা করছে। মসজিদের টাকায় তাদের যাবতীয় ভরণপোষণ ও জামাকাপড় দেয়া হয়ে থাকে। ওয়াকফ এস্টেটের অডিটর দিয়ে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে পাগলা মসজিদের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হয়।

শওকত উদ্দিন জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনার জন্য ৩১ সদস্যের কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই কমিটিতে আছেন।

অতীতে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করা হলেও বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অনুদান বন্ধ রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ দানের টাকার বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ এ এলাকার মানুষের একটি আবেগের স্থান, যে কারণে আমরা প্রতিবারই দান হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা পেয়ে থাকি।

‘আমরা মানুষের স্বপ্ন ও ইচ্ছা অনুযায়ী বর্তমান মসজিদের স্থানে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে এমন একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করব। আধুনিক স্থাপত্যের এ মসজিদ নির্মাণে অচিরেই নকশা চূড়ান্ত করাসহ কাজ শুরু হবে।’

তিনি জানান, প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এর অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও গোরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া দানের টাকায় জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তার পাশাপাশি গরিব ছাত্র ও দুস্থদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।

দানের টাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামি কমপ্লেক্স

মেয়র পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

আরও পড়ুন:
বেনাপোল ছেড়ে ভোমরায়, নেপথ্যে...
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে টিসিবি
তিন দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে: প্রতিমন্ত্রী
ভারত থেকে আরও ৩০০ টন আলু আমদানি
নারীর দান করা দুই হাত জোড়া লাগল পুরুষের শরীরে

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
When will you get rid of the fire?

দাবদাহ থেকে মুক্তি মিলবে কবে

দাবদাহ থেকে মুক্তি মিলবে কবে গরমের তীব্রতা বাড়ার মধ্যে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গোসল করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা
জুন থেকে দাবদাহ একেবারে চলে যাবে কি না, সে বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘জুনে যে একেবারে থাকবে না, তা নয়। গত বছর জুন মাসেও বেশ কিছু স্বল্প পরিসরে, ছোট ছোট স্কেলে দুই-তিন দিনের স্পেলে কিছু তাপপ্রবাহ ছিল। যদিও গত বছর সারা বিশ্বে এল নিনো অ্যাকটিভ ছিল। এই বছরটাতে এল নিনো আমরা আশা করছি জুন থেকে কমে যাবে। এল নিনো থেকে নিউট্রাল কন্ডিশন বা লা নিনা পর্যায়ে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটু কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’

দেশের নানা প্রান্তে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ, যার ফলে গরমে অতিষ্ঠ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। তীব্র দাবদাহের মধ্যে শনিবার হিট স্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এমন বাস্তবতায় গা ঝলসানো গরম থেকে মুক্তি কবে মিলবে, তা জানার আগ্রহ অনেকের।

দেশের মানুষ কবে দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, তা নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী এক আবহাওয়াবিদ রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) কিন্তু রংপুর বিভাগে কোনো হিটওয়েভ (দাবদাহ) ছিল না, তবে আজকে রংপুর বিভাগের টেম্পারেচারটা (তাপমাত্রা) বাড়বে এবং এটা মৃদু হিটওয়েভ হবে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। এ ছাড়া দেশের যে অবস্থাটা আছে তাপপ্রবাহের, এটা দুই-এক জায়গায় বাড়বে। তা ছাড়া মোটামুটি গতকালকের মতো একই অবস্থা থাকবে।

‘আগামীকাল-পরশু এই ‍দুই দিনও আশা করছি আমরা একই মতো থাকবে; নিয়ারলি আনচেঞ্জড (প্রায় অপরিবর্তিত) যেটা বলি আমরা। (এপ্রিলের) ২৪/২৫ তারিখে একটু কমার সম্ভাবনা আছে, তবে তার মানে এই না যে, তাপপ্রবাহ শেষ হয়ে যাবে। সেটা হয়তো মাঝারি থেকে মৃদুতে আসতে পারে বা দুই-এক জায়গা থেকে কমতে পারে তাপপ্রবাহের হারটা, কিন্তু দেশের বেশির ভাগ জায়গায় তাপপ্রবাহটা এই মাসজুড়েই বিরাজমান থাকবে।’

দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।

তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।

মে মাসে দাবদাহ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সে বিষয়ে সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘আসলে আমাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান, প্লাস আমাদের যে ক্লাইমেটোলজি (জলবায়ু পরিস্থিতি অর্থে), এই প্রেক্ষিতে এপ্রিল এবং মে মাস হচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম দুটি মাস। অতীতের যে ক্লাইমেটোলজি বা রিপোর্টগুলো আছে, তাতে দেখা গেছে যে, কখনও কখনও এপ্রিলের থেকে মে মাসেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। তো আমরা সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা করতে পারি যে, এপ্রিলের পাশাপাশি মে মাসেও হিটওয়েভটা থাকবে।

‘মে মাস যেহেতু আমাদের মনসুনের (বর্ষাকাল) কাছাকাছি, এর পরেই জুন মাস। জুন মাস থেকেই আমাদের মনসুনটা মোটামুটি অনসেট শুরু হয়। তো সে ক্ষেত্রে জুন মাসে কিছু ময়েশ্চার (বাতাসে আর্দ্রতা) আসতে শুরু করবে। কখনও কখনও দেখা যাবে যে বৃষ্টি, আবার হিটওয়েভ। ময়েশ্চার আসার কারণে গরমের অস্বস্তিটাও বাড়বে, আবার একটু কমবে, তবে হিটওয়েভ থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যে স্পেলটা আমাদের এপ্রিল মাসে আছে, হয়তো এটার মতো না, তবে তাপপ্রবাহ থাকবে। এপ্রিল ও মে উভয় মাসেরই হিটওয়েভ থাকবে, তবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে একটু কম থাকার সম্ভাবনা আছে।’

জুন থেকে দাবদাহ একেবারে চলে যাবে কি না, সে বিষয়ে জেবুন্নেসা বলেন, ‘জুনে যে একেবারে থাকবে না, তা নয়। গত বছর জুন মাসেও বেশ কিছু স্বল্প পরিসরে, ছোট ছোট স্কেলে দুই-তিন দিনের স্পেলে কিছু তাপপ্রবাহ ছিল। যদিও গত বছর সারা বিশ্বে এল নিনো অ্যাকটিভ ছিল। এই বছরটাতে এল নিনো আমরা আশা করছি জুন থেকে কমে যাবে। এল নিনো থেকে নিউট্রাল কন্ডিশন বা লা নিনা পর্যায়ে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটু কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘হয়তো ছোট স্পেলে এক দিন, দুই দিন, এ রকম একটু থাকতে পারে, তবে আমরা আশা করছি আসলে মের মাঝামাঝি থেকেই একটু তাপপ্রবাহটা কমে যাবে।’

প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন বা তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়াকে এল নিনো বলে।

আরও পড়ুন:
চলমান দাবদাহ ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে
তীব্র দাবদাহ: ‍চুয়াডাঙ্গায় হিট অ্যালার্ট
এপ্রিলের এ গরম কি অস্বাভাবিক
তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে ছয় জেলায়
সপ্তাহজুড়ে বাড়বে তাপপ্রবাহ, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত অস্বস্তি বাড়াবে

মন্তব্য

মুজিব শতবর্ষ
Dreaming of the teachers hobby vineyard

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন শিক্ষক বিল্লাল হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।

থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আর কয়েকদিন পর পেকে গেলে তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বাতাসে দোল খাওয়া আঙুর বাগানের এমন দৃশ্য দেখা গেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কাজী বিল্লাল হোসেন খোকন পেশায় কলেজ শিক্ষক। শখ করে করা আঙুর বাগানটি এখন তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর উৎপাদনের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে বিস্তৃর্ণ ধানি জমি। তার মাঝেই উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের মাচা। সেই মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে গাঢ় সবুজ রঙের আঙুর।

বাগানে নিবিষ্ট চিত্তে গাছের পরিচর্যা করছিলেন বিল্লাল হোসেন। এ সংবাদ সগ্রাংহককে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি। এরপর আগ্রহ নিয়ে ঘুরিয়ে দেখান তার শখের আঙুর বাগান।

বাগানের প্রতিটি কোণায় যত্নের ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষকের হাতের ছোঁয়ায় আঙুর গাছগুলো সজীব ও সতেজ হয়ে বাগানে শোভা ছড়াচ্ছে।

স্বপ্ন দেখাচ্ছে শিক্ষকের শখের আঙুর বাগান

বিল্লাল জানান, বছর দুই আগে শখ করে তার নার্সারিতে দুটি আঙুর চারা রোপণ করেন তিনি। সেবার গাছ দুটি থেকে তিনি প্রায় ১৮ কেজি আঙুর পেয়েছিলেন। তারপর ইউটিউব দেখে আঙুর বাগান করার উদ্যোগ নেন তিনি।

তিনি জানান, এ বছর ১৪ শতক জমিতে আঙুর বাগান করেছেন। মোটামুটি লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার আঙুর তিনি বিক্রি করতে পারবেন।

শখের এ কৃষকের চিন্তা, আগামী বছর তিনি বাগানের পরিসর আরও বড় করবেন।

কুমিল্লা জেলার মাটিতে আঙুর চাষের উপযোগিতা আছে কি না তা এ মুর্হুতে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এ জেলার মাটি সব ধরনের ফল উৎপাদনে সহায়ক বলে জানান অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ।

কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহযোগিতা পেলে আঙুর চাষেও সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আঙুর চাষে শিক্ষক খোকনের প্রচেষ্টা অন্যদের উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি জেলায় ফলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।’

মন্তব্য

p
উপরে