পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ সোমবার, ১২ রবিউল আউয়াল। ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন।
মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে এই পৃথিবীতে প্রেরিত মহানবীর জন্মদিনটি সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনটিতে নানা কর্মসূচি ও ইবাদত-বন্দেগিতে দিনটি অতিবাহিত করে থাকেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সরকারি ছুটি।
বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এক সময় গোটা আরব সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে তারা নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা। মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত।
আরবের ওই সময়কাল বলা হয়ে থাকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদকে (সা.) প্রেরণ করেন এই পৃথিবীতে।
মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিবি খাদিজা নামের এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন। আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভ করেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও আটটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
রমনা কালী মন্দির পরিদর্শনকালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে তিনি এ কথা জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবসময় প্রস্তুত ও তৎপর রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে, সেটি আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
‘আমরা অতীতের মতোই সকল ধর্মের মানুষদের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখব এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’
নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ওই সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজার দশমী পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। এবার সবচেয়ে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বৃহস্পতিবার পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এবার পূজা উপলক্ষে চার কোটি টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেখানে যতটা দরকার, সেই পরিমাণ সশস্ত্র বাহিনী দেয়া হয়েছে।
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আট দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেভাবেই কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে দুই-একটা ঘটনা ঘটে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাংলাদেশ পূজা কমিটির মহাসচিব আমাকে জানিয়েছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই।’
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। ৩৬৫ দিনই দেশের মানুষ নিরাপদে থাকবে। মাঝে মাঝে যা ঘটে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’
আরও পড়ুন:শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষের কার্যক্রম। এ কার্যক্রম সোমবার পর্যন্ত চলবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকালীন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোরূপ বিঘ্ন ঘটলে নিয়ন্ত্রণকক্ষের ০১৭৬৬৮৪৩৮০৯ এই মোবাইল নম্বরে অবহিত করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনে ১৪ তলায় ১৪২৪ নম্বর কক্ষেও সরাসরি তথ্য প্রদান করা যাবে।
‘ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিবকে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল (বুধবার) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ শাখা হতে এ সংক্রান্ত পত্র জারি করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হিন্দুদের নির্যাতনের সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
দুর্গাপূজার প্রথম দিনে বুধবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের আট দফার প্রতি বিএনপির সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা যে আট দফা উল্লেখ করেছেন, আমরা তা বিবেচনা করছি। আট দফার মূল ইস্যুর প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে।
‘আমরা আপনাদের বলতে পারি যে অতীতে যেমন প্রতিটি সমস্যায় আপনাদের পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’
আওয়ামী লীগের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা বলে দাবি করা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অতীতে তাদের ওপর যেসব নিপীড়ন হয়েছে তার সবগুলোর সঙ্গে জড়িত।
‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি ও সম্পত্তি দখলের ঘটনার পেছনেও তারা (আওয়ামী লীগের লোকজন) ছিল। ভবিষ্যতে আমাদের দল সরকার গঠন করলে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা নিজ সম্প্রদায়ের আট দফা দাবি তুলে ধরে সংখ্যালঘুরা অন্যায় ও নির্যাতনের শিকার হলে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পালাবদলকে খাটো করতে কিছু বিদেশি গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট ও মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বলব না যে কিছুই হয়নি। তবে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে কিছু ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ সবাইকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম…। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল সত্যিকার অর্থেই অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
বিএনপি মহাসচিব সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী দেড় হাজারের বেশি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও তাদের পরিবারকে সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক এই কামনা করছি।’
আরও পড়ুন:মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে বুধবার।
আগামী রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
এ উৎসবে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। সরকার নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে।
আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি হতে যাচ্ছে। পরের দিন রোববার দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি।
সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ছুটি থাকছে। টানা চার দিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আমেজ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশের সর্বাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হওয়া পুরান ঢাকাতে এবারও উৎসবের আমেজে ব্যতিক্রম নেই। সর্বত্র চলছে উৎসব আয়োজনের তোড়জোড়।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই এ বছর পূজা হবে ২৫২টি মণ্ডপে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপন করা হবে পুরান ঢাকায়।
এর মধ্যে সূত্রাপুর থানায় ২৬টি, কোতোয়ালি থানায় ২৪টি, ওয়ারীতে ১৮টি, গেন্ডারিয়ায় ১৫টি ও বংশাল থানায় দুটি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কালী মন্দির, নর্থব্রুক হল রোড, মহাকাল শিব বিগ্রহ, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শতাধিক প্রতিমা শিল্পী গত এক মাস নির্ঘুম সময় কাটিয়েছেন প্রতিমা তৈরিতে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত তিন বছর বড় পরিসরে আয়োজন না হলেও এ বছর তা কাটিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজ সাজ রব।
প্রতিমা শিল্পী মিন্টু চন্দ্র পাল মঙ্গলবার বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে প্রতিমা তৈরি করেছি। গতকাল (সোমবার) কাজ শেষ। অন্য বছরের চেয়ে এবার দুর্গার আশীর্বাদে ভালোই অর্ডার পেয়েছি।
‘বছরে এমনিতে ১৫-২০টি মূর্তি বানাই। এ বছর ৩৬টি বানিয়েছি। আগে একাই সব করতাম। এবার সঙ্গে দুজন সহকারীও নিয়েছি। তাই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে।’
শেষ সময়ে প্রতিমায় রং-তুলির ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আরেক শিল্পী পল্টন পাল। ৩৩ বছর ধরে প্রতিমা বানিয়ে আসছেন তিনি।
পল্টন গতকাল বলেন, ‘এ সময় ভীষণ কাজের চাপ, তবে প্রতিমা তৈরি শেষ। চুন-কালির প্রলেপ দিচ্ছি এখন। এ বছর মোটামুটি ভালো কাজ পেয়েছি। গত বছর করোনায় তেমন সুবিধা করতে পারিনি।’
পুরান ঢাকার ১৩৬, শাঁখারীবাজারে ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব।
ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ও কোতোয়ালি থানা পূজা কমিটির সহসভাপতি উৎপল কুমার ঘোষ শেখর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ২০টি পূজা হবে। তার মধ্যে দুটি পারিবারিক পূজা ও বাকি ১৮টি সার্বজনীন। এবার আমাদের ভলান্টিয়ার থাকবে, সিসিটিভি তো অবশ্যই লাগানো হবে।
‘নির্দেশনা আছে ব্যাগ-বস্তা নিয়ে কেউ মণ্ডপে যেতে পারবে না। বিকৃত মস্তিষ্ক কেউ থাকতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে, আমরাও সর্বদা সচেষ্ট থাকব।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পূজা আমাদের, রক্ষা করব আমরাই। এসবি, ডিবিসহ সাদা পোশাকে পুলিশ হাঁটাচলার মধ্যে থাকবে।
‘দেবীর সঙ্গে আমরা কারও তুলনা করি না। পূজার আরাধনার জন্যই পূজা করি। দেবীর জন্য পূজা করছি, বড় আনুষ্ঠানিকতা করছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাজেট ৮-১০ লাখ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় মন্দা। আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। সার্বিক অবস্থায় সবাই আমরা উদ্বিগ্ন। মায়ের নিকট এসবেরই পরিত্রাণ চাইব।’
তাঁতীবাজার শিব মন্দির পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরেন ঘোষ বীরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর মায়ের আরাধনার সব ব্যবস্থা করে থাকি। এবারও ব্যত্যয় ঘটবে না।
‘ষষ্ঠীর দিন রাতে আমরা মণ্ডপে প্রতিমা তুলব। আশা করছি আমাদের এবারের দুর্গাপূজা ভালোই কাটবে।’
কোতোয়ালি থানা পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও তাঁতীবাজার শিব মন্দির পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ গগন বলেন, ‘মায়ের প্রতিচ্ছবি দিয়ে প্রতিমা করা হয়। দুর্গা মায়ের আসল রূপই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
‘দুর্গাপূজায় এবার ভক্তিমূলক গান বেশি বাজবে। কারও যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা হবে।’
সঙ্ঘমিত্র পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ পিয়াল নাগ বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিসিটিভি লাগাতে বলা হয়েছে। সময়মতো লাগানোও হয়ে যাবে। এবার প্রতিটি মণ্ডপের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানানো হয়েছে।’
নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকায় এসব কর্মকাণ্ড করার সাহস কারও নেই। অন্ততপক্ষে শাঁখারীবাজারে কেউ এসব করতে আসবে না। এমন দুঃসাহস কারও হয়নি।
‘আমরা সার্বক্ষণিক মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। মায়ের প্রতিমা রক্ষায় সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রাখব।’
দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে নেয়া হচ্ছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এরই মধ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে প্রায় সব মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।
নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মু. এনামুল হাসান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোবাইল টিম এখন থেকেই কাজ করছে।
‘আমরা পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে মিটিং করেছি। কীভাবে নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার মাধ্যমে আমরা পূজা সমাপ্ত করতে পারব, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
দুর্গাপূজায় মণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বংশাল থানার উপপরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। আমার থানায় মাত্র দুটি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। তাও আবার এক ছাদের নিচেই। তবু পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পূজার সমন্বয়ক কমিটি করা আছে।
‘তারা সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করবে। ভলান্টিয়াররা তো আছেই। সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে।’
সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গাপূজায় আমাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের একজন অফিসার থাকবেন।
‘পূজা উদযাপন কমিটি ভলান্টিয়ার টিমসহ হিন্দু-মুসলিম মিলে সম্প্রীতি টিম গঠন করা হয়েছে। মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি এবং আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে নানা আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দুর্গাপূজা। আগামী ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। সরকার নির্বাহী আদেশে আগামী বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে। আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি হতে যাচ্ছে। পরদিন রোববার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি।
সব মিলিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ছুটি থাকছে। টানা চারদিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আমেজ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশের সর্বাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হওয়া পুরান ঢাকাতে এবারও উৎসবের আমেজে ব্যতিক্রম নেই। সর্বত্র চলছে উৎসব আয়োজনের তোড়জোড়।
সরকারি হিসাব মতে, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। শুধু রাজধানী ঢাকায়ই এ বছর ২৫২টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপন করা হবে পুরান ঢাকায়। এখানে সূত্রাপুর থানায় ২৬টি, কোতোয়ালি থানায় ২৪টি, ওয়ারিতে ১৮টি, গেন্ডারিয়ায় ১৫টি ও বংশাল থানায় দুটি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কালী মন্দির, নর্থব্রুক হল রোড, মহাকাল শিব বিগ্রহ, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শতাধিক প্রতিমা শিল্পী গত এক মাস নির্ঘুম সময় কাটিয়েছেন প্রতিমা তৈরিতে। এখন অপেক্ষা শুধু মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার। তবে কিছু জায়গায় সোমবারও তুলির শেষ আঁচড় চালাতে দেখা গেছে শিল্পীদের। শাড়িও পরানো হয়ে গেছে অনেক প্রতিমার। শিল্পীরা খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছেন কোনো ত্রুটি রয়ে গেল কিনা।
ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে বুধবার শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। মহাষষ্ঠীতে হবে মায়ের চক্ষুদান। সনাতন সম্প্রদায়ের এই উৎসব ঘিরে রাজধানীর পুরান ঢাকায়ও এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে এখানকার মণ্ডপগুলো বর্ণাঢ্যসাজে সাজানো হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর বড় পরিসরে আয়োজন না হলেও এ বছর তা কাটিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজ সাজ রব।
দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে নেয়া হচ্ছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে প্রায় সব মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিমা শিল্পী মিন্টু চন্দ্র পাল বলেন, ‘গত দেড় মাস ধরে প্রতিমা তৈরি করেছি। গতকাল কাজ শেষ। অন্য বছরের চেয়ে এবার দুর্গার আশীর্বাদে ভালোই অর্ডার পেয়েছি। বছরে এমনিতে ১৫-২০টি মূর্তি বানাই। এ বছর ৩৬টি বানিয়েছি। আগে একাই সব করতাম। এবার সঙ্গে দু’জন সহকারীও নিয়েছি। তাই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে।’
শেষ সময়ে প্রতিমায় রঙ-তুলির ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আরেক শিল্পী পল্টন পাল। ৩৩ বছর ধরে প্রতিমা বানিয়ে আসছেন তিনি। বললেন, ‘এ সময় ভীষণ কাজের চাপ। তবে প্রতিমা তৈরি শেষ। চুন-কালির প্রলেপ দিচ্ছি এখন। এ বছর মোটামুটি ভালো কাজ পেয়েছি। গত বছর করোনায় তেমন সুবিধা করতে পারিনি।’
পুরান ঢাকার ১৩৬, শাঁখারি বাজারে ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব।
ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ও কোতোয়ালি থানা পূজা কমিটির সহ-সভাপতি উৎপল কুমার ঘোষ শেখর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ২০টি পূজা হবে। তার মধ্যে দুটি পারিবারিক পূজা ও বাকি ১৮টি সার্বজনীন। এবার আমাদের ভলেন্টিয়ার থাকবে, সিসি টিভি তো অবশ্যই লাগানো হবে।
‘নির্দেশনা আছে ব্যাগ-বস্তা নিয়ে কেউ মণ্ডপে যেতে পারবে না। বিকৃত মস্তিষ্ক কেউ থাকতে পারবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে, আমরাও সর্বদা সচেষ্ট থাকব।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পূজো আমাদের, রক্ষা করব আমরাই। এসবি, ডিবিসহ সাদা পোশাকে পুলিশ হাঁটাচলার মধ্যে থাকবে।
‘দেবীর সঙ্গে আমরা কারও তুলনা করি না। পূজার আরাধনার জন্যই পূজা করি। দেবির জন্য পূজা করছি, বড় আনুষ্ঠানিকতা করছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাজেট ৮-১০ লাখ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় মন্দা। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নেই। সার্বিক অবস্থায় সবাই আমরা উদ্বিগ্ন। মায়ের নিকট এসবেরই পরিত্রাণ চাইবো।’
তাঁতীবাজার শিব মন্দির পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরেন ঘোষ বীরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর মায়ের আরাধনার সব ব্যবস্থা করে থাকি। এবারও ব্যত্যয় ঘটবে না। ষষ্ঠীর দিন রাতে আমরা মণ্ডপে প্রতিমা তুলব। আশা করছি আমাদের এবারের দুর্গাপূজা ভালোই কাটবে।’
কোতোয়ালি থানা পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও তাঁতীবাজার শিব মন্দির পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ গগন বলেন, ‘মায়ের প্রতিচ্ছবি দিয়ে প্রতিমা করা হয়। দুর্গা মায়ের আসল রূপই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দুর্গাপূজায় এবার ভক্তিমূলক গান বেশি বাজবে। কারও যেন কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা হবে।’
সঙ্ঘমিত্র পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ পিয়াল নাগ বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিসি টিভি লাগাতে বলা হয়েছে। সময়মতো লাগানোও হয়ে যাবে। এবার প্রতিটি মণ্ডপের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানানো হয়েছে।’
নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকায় এসব কর্মকাণ্ড করার সাহস কারও নেই। অন্ততপক্ষে শাঁখারীবাজারে কেউ এসব করতে আসবে না। এমন দুঃসাহস কারও হয়নি। আমরা সার্বক্ষণিক মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। মায়ের প্রতিমা রক্ষায় সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রাখব।’
নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মু. এনামুল হাসান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোবাইল টিম এখন থেকেই কাজ করছে।
‘আমরা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইতোমধ্যে মিটিং করেছি। কিভাবে নির্বিঘ্নে নিরাপত্তার মাধ্যমে আমরা পূজা সমাপ্ত করতে পারব সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
দুর্গাপূজায় মণ্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। আমার থানায় মাত্র দুটি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। তাও আবার এক ছাদের নিচেই। তবু পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পূজার সমন্বয়ক কমিটি করা আছে। তারা সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করবে। ভলেন্টিয়াররা তো আছেই। সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে।’
সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গাপূজায় আমাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের একজন অফিসার থাকবেন। পূজা উদযাপন কমিটি ভলেন্টিয়ার টিমসহ হিন্দু-মুসলিম মিলে সম্প্রীতি টিম গঠন করা হয়েছে। মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় কোনো ধরনের ‘থ্রেট’ (হুমকি) নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপ এলাকা, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় সব ধরনের মাদক ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে সব ধরনের পটকা ও আতশবাজির ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
‘বিসর্জনের সময় উচ্চৈস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না। যারা সাঁতার জানেন না তাদের বিসর্জনের সময় পানিতে না নামার অনুরোধ করছি।’
মাইনুল হাসান বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৫৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৩১টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩১টি মণ্ডপ রয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে শান্তি-শৃঙ্খল ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পূজা অনুষ্ঠানে আগে সমন্বয় সভা করেছি।’
পর্যায় নিরাপত্তার উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, ‘প্রতিটি পূজামণ্ডপে ফিক্সড পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি থানা পুলিশের অধিক টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং ব্যবস্থা থাকবে।
‘সাদা পেশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ র্যাবের সদস্যরা টহল ও অন্যান্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূজা চলাকালীন যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট এড়াতে পূজা কমিটিকে অনুরোধ করেছি মণ্ডপের আশপাশে কোনো মেলা যাতে না হয়।’
বিসর্জনে ঢাকা মহানগরীতে ১৫টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রায় ডিএমপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিসর্জনের জন্য সব পূজা কমিটি ও ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আগস্টের ৫-৬ তারিখে পুলিশের কার্যক্রম দেখেন। আর আজ ৮ অক্টোবরের পুলিশের কার্যক্রম দেখলে আপনারাই বুঝতে পারবেন পুলিশ কতটুকু মনোবল ফিরে পেয়েছে। যারা কর্মবিরতি দিয়েছিল তারাও পুরোদমে কাজে ফিরে আসছে। পূজার অনুষ্ঠানে দৃঢ় মনোবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশের প্রতিটি সদস্য। এতে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য