সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাতে সেহরি খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করেন মুসলিমরা। এ সময়ে পাকস্থলীসহ শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিশ্রাম পায়। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রোজার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতার কথা এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মনোদৈহিক ও জীবনযাপনবিষয়ক রোগের থেরাপিস্ট এবং কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কোঅর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। পরামর্শগুলো তার ভাষায় উপস্থাপন করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশ্রাম
রমজান আসল, রমজান চলে গেল। ৩০টি রোজা আমি রাখলামও। ৩০টি রোজার পরেও আমার ওজনের একটুও কম-বেশি হলো না। এইটুকু খোলা চোখে বলে দেয়া যায়, রোজা থেকে আমি কোনো কিছু ফায়দা নিতে পারলাম না। আমি ব্যর্থ হয়েছি রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন করতে। বিজ্ঞান কী বলে?
সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরে সারা বিশ্ব থেকে বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়ে ৫০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তারা উপস্থাপন করেন। সেই সম্মেলনের নাম ছিল হেলথ অ্যান্ড রামাদান; সুস্থতা এবং রমজান। সেই সেমিনারে বক্তারা বলেন, রমজানের ৩০টি রোজা আমাদের শরীরের জন্য একটা বিশাল অপরচুনিটি; একটা বিশাল সুযোগ। তারা এভাবে তুলনা করে বলছেন, একটা জটিল মেশিন থেকে যদি সারা বছর পূর্ণ সার্ভিস চান, তাহলে অবশ্যই মাঝে মাঝে তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাকে বিশ্রামে রাখতে হবে। তো আমাদের শরীরটাও একটা মেশিন। এর মধ্যে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে; হার্ট, লাং, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র…কত ধরনের হার্ড ডিস্ক। এইসব মেশিনপত্র থেকে যদি আপনি সারা বছর পুরো সার্ভিস চান, তাহলে তাকে বছরের একটি মাস বিশ্রাম দিতে হবে। তাহলে বাকি ১১টা মাস সে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে আপনাকে পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে। আপনি তার থেকে পুরো আউটপুট পাবেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনার বাড়তি ওজন কমবে। বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি একজন স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হবেন। আর যদি রোজার পরেও আপনার বাড়তি ওজন থেকে যায়, এইটুকু পরিষ্কারভাবে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে রোজা রাখার কথা ছিল, সেই পদ্ধতিতে রোজা রাখতে পারেন নাই; রোজা রাখা হয় নাই। ফলে আপনি আপনার ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মস্তিষ্ককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা
আমেরিকার সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের (এনআইএইচ) একটি শাখা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং। সেখানকার প্রখ্যাত নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. মার্ক ম্যাটসন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘ গবেষণা করেন ফাস্টিং নিয়ে। এরপর তারা পাবলিশ করেন এর ফলাফল। সেখানে তারা পরিষ্কার করে বলছেন যে, একজন মানুষ যদি মাঝে মাঝেই ফাস্টিং থাকে, নিজেকে সকল ধরনের খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত রাখে, তবে তিনি তার ব্রেনের যে এজিং, সে এজিংটাকে প্রতিরোধ করতে পারবে। ব্রেনকে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং বৃদ্ধ বয়সে এখন যে রোগগুলো খুব দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যেসব রোগগুলোতে স্মৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেই রোগগুলোকে বলা হয় আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া, হান্টিংটন, পারকিনসনের মতো রোগগুলো আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন।
রক্ত পরিশোধন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এই রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা।
কোষ পরিষ্কার
আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। এই কোষের ভিতরে প্রতিনিয়ত নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরি হচ্ছে বিপাকক্রিয়ার ফলে এবং নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে। শক্তি তৈরি হচ্ছে, হরমোন তৈরি হচ্ছে, এনজাইম তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরির পাশাপাশি কিছু বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন তৈরি হচ্ছে। এইসব বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফাস্টিং বা রোজা। এটা নিয়ে গবেষণা করে যিনি নোবেল প্রাইজ পান, তিনি হচ্ছেন ড. ইয়োশিনোরি ওহসুমি। তিনিসহ অন্য বিজ্ঞানীরা এটার নাম দিয়েছেন অটোফেজি। এটি (অটোফেজি) যখন ১২ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টা হবে, এটি চমৎকার কাজ করবে। এটি যখন ১৮ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা, ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা হবে এক্সিলেন্ট।
টাইপ টু ডায়াবেটিস রোধে সহায়ক
আমরা জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সম্প্রতি দুটো গবেষণা বলছে, টাইপ টু ডায়াবেটিস রিভার্স করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার ফাস্টিং কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন করেন, তবে তিনি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হবেন। সেই সময় তার স্থূলতাও তার শরীর থেকে চলে যাবে।
দীর্ঘায়ু হওয়ায় সহায়তা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। এই যে দেখেন না, হজরত শাহজালাল (র.) ১৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি স্বল্পাহারি ছিলেন এবং প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি এক বেলা খেতেন। এই যে ঢাকা থেকে কাছে সোনারগাঁয়ে ছিলেন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনিও স্বল্পাহারি ছিলেন। প্রায়ই উপবাস করতেন।
আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখতেন; সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। এ ছাড়াও তিনি প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।
রোজা রাখলে কী ঘটে শরীরে
রোজায় দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকায় নানা ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় শরীর। ধাপে ধাপে সেটি কীভাবে হয়, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে সুস্থতা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট মাইন্ডবডিগ্রিন ডটকম।
প্রথম চার ঘণ্টা
খাওয়ার পর প্রথম চার ঘণ্টায় অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সচল রাখার পাশাপাশি কোষ ও টিস্যুর বিকাশ ঘটায় শরীর। এ সময়ে দরকারি হরমোন ইনসুলিন উৎপন্ন করে অগ্ন্যাশয়। এর মধ্য দিয়ে রক্তে নিঃসৃত গ্লুকোজ ব্যবহারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কোষে বাড়তি শক্তিও মজুত করা যায়।
চার থেকে ১৬ ঘণ্টা
দেশভেদে সেহরি থেকে ইফতারের মধ্যকার সময়ে তারতম্য হয়। কোনো কোনো দেশে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উপবাস থাকতে হয় রোজাদারদের।
১৬ ঘণ্টার মতো যারা রোজা রাখবেন, তাদের শারীরিক ক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে চতুর্থ ঘণ্টা থেকে। এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সঞ্চিত অতিরিক্ত পুষ্টি ব্যবহার করা শুরু করে শরীর।
কোষে থাকা শক্তি ফুরিয়ে গেলে শরীর নজর দেয় সঞ্চিত চর্বি বা ফ্যাটে। শরীর থেকে চর্বি নির্গমন এবং শক্তি জোগাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কিটন বডিজ ফর এনার্জি’। এটি সাধারণত ঘটে ১৬তম ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ে।
শরীর সঞ্চিত চর্বি পোড়ানোর পর্যায়ে কখন যাবে, সেটি নির্ভর করে রোজা বা উপবাস শুরুর আগে গ্রহণ করা খাদ্যের ধরনের ওপর। কেউ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও শ্বেতসার খাবার খেলে এ পর্যায় দেরিতে শুরু হবে। বিপরীতে কেউ চর্বি ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে আগেই সে পর্যায়ে পৌঁছাবে।
রোজা বা উপবাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি অটোফেজি। ১৬ ঘণ্টার আশপাশের সময়ে এটি শুরু হয়।
অটোফেজি হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে কোষে থাকা মৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তুগুলো সরিয়ে দেয় শরীর। এসব বস্তু বার্ধক্য, ক্যানসার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণ হতে পারে।
১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা
রোজার সময় ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে কোষে থাকা গ্লুকোজ ও লিভারে থাকা গ্লাইকোজেন এবং পেশিগুলো দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। ফলে শক্তি জোগাতে জমানো চর্বি গলাতে হয় শরীরকে।
এ পর্যায়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদার অনেক বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। রোজাদার বা উপবাসে থাকা ব্যক্তি তখনও জেগে থাকা, দৈনন্দিন কাজ করা, লোকজনের সঙ্গে লেনদেন করা কিংবা ব্যায়াম করতে পারেন। এ কারণে উল্লেখযোগ্য মাত্রার শক্তির দরকার হতে পারে।
১৬ ঘণ্টার পরে শরীরে এএমপিকে নামের আরেকটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়। এটি শরীরজুড়ে অটোফেজি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:পোপ হলেন ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতা। ১.৪ বিলিয়ন মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। যিশুর প্রধান শিষ্য। ফলে আস্থার দিক থেকে খ্রিষ্টান সমাজ ও চার্চে পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধরা হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে শুধুমাত্র পুরুষকেই বেছে নেওয়া হয়। সেখানে কোনো নারীর জায়গা নেই।
যাজক হিসেবে সবসময়ই পুরুষদের নির্বাচিত করায় বারবারই প্রশ্নের মুখে পড়েছে চার্চ। কয়েক শ বছর থেকেই যাজকের দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন নারীরা। ১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর প্রয়াত হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তার প্রয়াণের পর এবার নতুন করে শুরু হবে পোপ নির্বাচন। তখন নতুন করে উঠেছে প্রশ্নটি।
পোপের মৃত্যু পর বা পদ্যত্যাগ করার পর ১৫-২০ দিন সময় নেয় রোমান ক্যাথলিক চার্চ। এই সময়ের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে চার্চের সবচেয়ে প্রবীণ কর্মকর্তারা রোমে এসে উপস্থিত হন। তাদের সম্মিলিতভাবে ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ বলা হয়। ভ্যাটিকান থেকে তাদের কাছে পোপ নির্বাচনে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ আসে।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকলকে তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম কাগজে লিখে জানাতে হয়। কঠোর প্রোটোকল অনুসারে, এই নির্বাচনে শুধুমাত্র পুরুষরাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন, কোনো নারী নয়।
পোপ হওয়ার অধিকার থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি চার্চের দীর্ঘদিনের রীতির সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়টি কেবল পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। ক্যানন আইন (ক্যানন ১০২৪) অনুসারে, শুধুমাত্র দীক্ষিত পুরুষদেরই পোপ হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। আসলে খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস যে প্রভু যীশু কেবল পুরুষদের শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যে নিয়ম ক্যাথলিক চার্চে বহুদিন ধরে চলছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিওন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর রেভারেন্ড টমাস রিজের মতে, পোপের মতো পদের জন্য অর্ডিনেশন প্রয়োজন এবং নারীদের পুরোহিত হওয়ার অনুমতি নেই।
একবার প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসকে প্রশ্ন করা হয়, নারীরা কি কখনো পোপ হতে পারবেন না? উত্তরে পোপ বলেন, আপনি যদি সেইন্ট দ্বিতীয় জন পলের ঘোষণা ভালোভাবে পড়ে থাকেন তাহলে সেই নির্দেশনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। নারীরা অন্য অনেক কাজে পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো করতে পারেন। তবে পোপ হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ওপর বিধিনিষেধ আছে।
ইতিহাসের দিক থেকে, পোপ হওয়ার মানদণ্ড মতবাদের পরিবর্তে নজিরের ওপর ভিত্তি করে। ১৪৫৫ সালে পোপ ক্যালিক্সটাস তৃতীয় ছিলেন পোপ নির্বাচিত হওয়া শেষ অ-পুরোহিত এবং ১৩৭৮ সালে আরবান ষষ্ঠ ছিলেন শেষ অ-কার্ডিনাল পুরোহিত যাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, যিশুখ্রিষ্ট ১২ জন পুরুষকে তার শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যারা পরে তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য পুরুষদের বেছে নিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, চার্চ এই পুরুষতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। ঠিক সেই কারণেই নারীরা কখনো যাজক হতে পারে না।
পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবালের সুস্থতায় দেশবাসী যেমন চরম আনন্দ পেয়েছে, তেমনই তাদের অনেকে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। এতদিন দেশের মানুষের বিশাল অংশের একটি ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসক নেই। কিন্তু তামিম ইকবাল যখন বুকে ব্যথা অনুভব করেন, তখন দুই ঘণ্টার মধ্যেই এনজিওগ্রাম, হার্টে স্টেন্ট তথা রিং বসানোসহ সবকিছু হয়ে যায়।
তামিম দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। তাই তার চিকিৎসায় বিলম্ব হয়নি। এই যে দ্রুত গতিতে চিকিৎসাসেবা পাওয়া, সেটি তার জন্য করুণা নয়; বরং ন্যায্য পাওনা।
আকস্মিক অসুস্থতায় মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার পর তামিমের দ্রুত চিকিৎসা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ঘটনাটি সমাজে ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্যকেও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
এ দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতা এত সুন্দর বা সহজ নয়। ভর্তির ফরম পূরণ, সিরিয়ালের অপেক্ষা, হাসপাতালের করিডোরে দীর্ঘ প্রতীক্ষা—আরও কতকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রতি পদে পদে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, এখানে উন্নত চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে ধনী, জনপ্রিয়ত হতে হবে অথবা আপনার তদবির করার মতো লোক থাকতে হবে। যাদের সেগুলো আছে, তারা ভালো চিকিৎসা পাবে, যাদের নেই তারা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়বেন। ভাগ্য ভালো না হলে বেঘোরে প্রাণটা হারাবেন।
জনগণ তামিমের ঘটনা থেকে জানতে পারল বাংলাদেশে চিকিৎসা নেই কথাটা ‘যদি’, ‘কিন্তু’ ছাড়া ভুল। বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা আছে, কিন্তু সেটা সাধারণ জনগণের জন্য সোনার হরিণেরমতো।
আসলে এটি শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, সারা বিশ্বেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুচিকিৎসা পেতে অনেক বেগ পেতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার ৭৪৯ ডলার খরচ করতে হয় স্বাস্থ্যবিমার জন্য। দেশটিতে গত এক দশকে বিমাহীন মানুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যা দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণে বড় বাধা সৃষ্টি করেছে।
জানলে অনেকে আঁতকে উঠবেন যে, জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতি বছর আড়াই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ভুল চিকিৎসায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও অন্য কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সংখ্যা চার লাখেরও বেশি। হৃদরোগ ও ক্যানসারে ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।
যদিও ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (OECD) নামে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণী একটি ফোরাম বলছে, আমেরিকার চেয়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশে চিকিৎসা খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয় না। তবে চিকিৎসায় ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ সরাসরি রোগীদের চিকিৎসার জন্য নয়, বরং হাসপাতাল নির্মাণ, উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন ও ওষুধের উচ্চমূল্যের পেছনে ব্যয় হয়। ফলে জনসাধারণ স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা পান না।
আমরা যখন একুশ শতকে সামরিকভাবে প্রচণ্ড প্রভাবশালী রাষ্ট্রের এ চিত্র দেখছি, তখন শত শত বছর আগে ইসলামী ভাবধারার শাসনামলে চিকিৎসা ছিল ধনী-গরিব সবার জন্য সমান। পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ডে ইসলামের সোনালি এ দিনগুলোকে অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও বাস্তবে ১২৮৪ খ্রিস্টাব্দে কায়রোর আল-মানসুর কালাউনের বিমারিস্তানের (হাসপাতাল) পলিসি স্টেটমেন্টটি দেখলে আপনি হয়তো ফিরে যেতে চাইবেন সেই সময়ে। চলুন দেখে নিই, কী ছিল সেই পলিসি স্টেটমেন্টে।
সেখানে বলা ছিল, ‘হাসপাতাল সকল রোগীকে-পুরুষ ও নারী- সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রাখবে। সব খরচ হাসপাতাল বহন করবে, তা সে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আসুক বা নিকটবর্তী এলাকা থেকে, বাসিন্দা হোক বা বিদেশি, সবল হোক বা দুর্বল, উচ্চবিত্ত হোক বা নিম্নবিত্ত, ধনী হোক বা দরিদ্র, কর্মরত হোক বা বেকার, দৃষ্টিহীন হোক বা শারীরিকভাবে সক্ষম, মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ, শিক্ষিত বা নিরক্ষর সবাইকে সমান সেবা দেওয়া হবে।’
এখানে কোনো শর্ত বা অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ যদি অর্থ প্রদান করতে না পারত, তাতেও কোনো আপত্তি বা ইঙ্গিত করার সুযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ সেবাটি পরম দয়ালু আল্লাহর অনুগ্রহের মাধ্যমে প্রদান করা হতো।
১২৮৪ সালে মিসরের কায়রোতে নির্মিত এই ‘মানসুরি হাসপাতাল’ ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানে চারটি বড় আঙিনার কেন্দ্রে জলপ্রপাত ছিল, রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ, ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থীদের জন্য লেকচার হল ছিল।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা শুধু রোগীদের চিকিৎসাই করতেন না, বরং প্রয়োজনে তাদের বাড়িতেও গিয়ে সেবা দিতেন। বিশেষত, জ্বর ওয়ার্ডগুলোকে জলপ্রপাতের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখা হতো এবং রোগীদের বিনোদনের জন্য সংগীতশিল্পী ও গল্প বলার ব্যবস্থা ছিল।
বিশেষভাবে উল্লেখ করার বিষয় হলো রোগীরা হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় তাদের হাতে কিছু পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়া হতো, যাতে তারা আর্থিক সংকটে না পড়ে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
এবার একটি চমকপ্রদ চিঠি তুলে ধরা হলো, যা দেখলে আপনি অবাক হতে পারেন। আর সেই সঙ্গে ইসলামী শাসনামলের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন।
দশম শতাব্দীতে কর্ডোবার একটি হাসপাতাল থেকে এক তরুণ ফরাসি যুবকের চিঠির কথা আমির গাফার আল-আরশদি কর্তৃক ১৯৯০ সালে বৈরুতের আল-রিসালা এস্টাবলিশমেন্ট থেকে প্রকাশিত The Islamic Scientific Supremacy শীর্ষক গ্রন্থে তুলে ধরা হয়।
চিঠিটির অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো।
‘আপনি আপনার আগের চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন যে, আমার ওষুধের খরচের জন্য কিছু টাকা পাঠাবেন। আমি বলতে চাই, আমার একেবারেই সেই টাকার প্রয়োজন নেই, কারণ এই ইসলামী হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।
‘এ ছাড়াও এ হাসপাতালের আরেকটি চমকপ্রদ দিক হলো—যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাকে হাসপাতাল থেকে একটি নতুন পোশাক এবং পাঁচ দিনার দেওয়া হয়, যাতে তিনি বিশ্রাম ও পুনরুদ্ধারের সময় কাজ করতে বাধ্য না হন। প্রিয় বাবা, আপনি যদি আমাকে দেখতে আসতে চান, তবে আমাকে সার্জারি ও জয়েন্ট চিকিৎসা বিভাগের ওয়ার্ডে পাবেন। ফটক দিয়ে প্রবেশ করার পর দক্ষিণ কক্ষে যান, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় বিভাগ রয়েছে। এরপর আপনি সন্ধান পাবেন বাত (জয়েন্ট) রোগ বিভাগের।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার কক্ষের পাশে একটি গ্রন্থাগার এবং একটি হলঘর রয়েছে, যেখানে চিকিৎসকরা একত্রিত হয়ে অধ্যাপকদের বক্তৃতা শোনেন এবং এটি পড়াশোনার জন্যও ব্যবহৃত হয়। হাসপাতালের প্রাঙ্গণের অপর পাশে রয়েছে স্ত্রীরোগ বিভাগের ওয়ার্ড, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। হাসপাতালের আঙিনার ডান দিকে রয়েছে বিশাল একটি হল, যেখানে সুস্থ হওয়া রোগীদের পুনরুদ্ধারের জন্য কিছুদিন রাখা হয়। এই কক্ষে একটি বিশেষ লাইব্রেরি ও কিছু বাদ্যযন্ত্রও রয়েছে।
‘প্রিয় বাবা, হাসপাতালের প্রতিটি স্থান অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বিছানা ও বালিশ দামাস্কাসের সূক্ষ্ম সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকে। কম্বল তৈরি হয় নরম ও মসৃণ প্লাশ কাপড় দিয়ে। প্রতিটি কক্ষে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা আছে, যা পাইপের মাধ্যমে বিশাল একটি ঝরনার সঙ্গে সংযুক্ত। শুধু তাই নয়, প্রতিটি কক্ষে গরম রাখার জন্য চুলাও রয়েছে।
‘খাবারের ব্যবস্থা এত ভালো যে, প্রতিদিন রোগীদের জন্য মুরগির মাংস ও সবজি পরিবেশন করা হয়। এমনকি, অনেক রোগী সুস্থ হয়েও হাসপাতাল ছাড়তে চান না শুধু এখানকার সুস্বাদু খাবারের প্রতি ভালোবাসার কারণে।’
চিকিৎসাব্যবস্থাকে পুঁজিবাদ ও ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখে। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় চিকিৎসা একটি লাভজনক ব্যবসা, অন্যদিকে ইসলাম চিকিৎসাকে মানবসেবার অংশ হিসেবে দেখে, যেখানে মুনাফার পরিবর্তে সবার জন্য সুলভ ও ন্যায়সঙ্গত চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ইসলামে চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ইসলামে রাষ্ট্রকে জনগণের কল্যাণ এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি দায়িত্বশীল হতে নির্দেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চিকিৎসাসেবা।
ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসাসেবা এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ হাদিসটি ইসলামি শাসনামলে চিকিৎসাশাস্ত্রে অগ্রগতির নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
এ ছাড়া ‘যে ব্যক্তি মুসলিম ভাইয়ের কোনো দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন’ এবং ‘মুসলিম একে অপরের ভাই। যদি কেউ তার ভাইয়ের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন’ ধরনের হাদিস তৎকালীন চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করতো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে।
সে সময় ভুল চিকিৎসায় কারও মৃত্যু হলে তাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখা হতো, তাই দক্ষতা ছাড়া কেউ এ পেশায় আসত না, যা ভুল চিকিৎসা রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসাসেবার মান নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা নিয়ে ইবন আল-উখওয়া (Ibn al-Ukhuwa) তার গ্রন্থ মা’আলিম আল-কুরবা ফি তালাব আল-হিসবাতে কয়েকটি বিষয়টি উল্লেখ করেন।
• যদি রোগী মারা যান, তবে তার পরিবারের সদস্যরা প্রধান চিকিৎসকের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। তারা চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন দেখান।
• যদি প্রধান চিকিৎসক মনে করেন যে চিকিৎসক তার কাজ যথাযথভাবে করেছেন, তবে তিনি পরিবারকে জানান যে এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যু।
• কিন্তু যদি চিকিৎসকের অবহেলা প্রমাণিত হয়, তবে প্রধান চিকিৎসক পরিবারকে বলেন, ‘তোমাদের আত্মীয়কে ভুল চিকিৎসার কারণে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করো!’
এই ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতির কারণে শুধু অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরাই চিকিৎসাব্যবস্থায় কাজ করতে পারতেন।
ইসলামি সভ্যতায় আধুনিক হাসপাতালের ধারণা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময়েই জন্ম নিয়েছিল। ইসলামের প্রথম দিনগুলোতে চিকিৎসাসেবার মূল কেন্দ্র ছিল মদিনার মসজিদ, যেখানে রোগীদের চিকিৎসার জন্য তাঁবু স্থাপন করা হতো। বিশেষ করে, গাজওয়া খন্দকের সময় নবী (সা.) আহত সেনাদের চিকিৎসার জন্য রুফাইদা বিনতে সাদ (রাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ তাঁবু স্থাপন করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ইসলামী খলিফারা চিকিৎসাসেবা আরও সংগঠিত করেন এবং ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল প্রবর্তন করেন, যা নির্দিষ্ট অঞ্চলে গিয়ে জনগণকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করত।
১৩০০ শতকের চিকিৎসক ও পর্যটক আবদুল লতিফ আল-বাগদাদির এক চমৎকার অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করব, যা ইসলামি শাসনামলে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নত অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
দামেস্কে শিক্ষকতা করা এ চিকিৎসক এক চতুর পার্সি যুবকের গল্প বলেছেন, যিনি নূরী হাসপাতালের চমৎকার খাবার ও পরিষেবার প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসক তার অসুস্থতা নিয়ে সন্দেহ করলেও তাকে তিন দিন ধরে ভালো খাবার পরিবেশন করেন। চতুর্থ দিনে, চিকিৎসক তার কাছে এসে মৃদু হেসে বললেন, ‘আরবীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, আতিথেয়তা তিন দিনের জন্য হয়ে থাকে। এখন দয়া করে বাড়ি ফিরে যান!’
পরিশেষে, তামিম ইকবাল যে দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছেন, তা যেন কোনো ‘বিশেষাধিকার’ না হয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য হয়—সেই লক্ষ্যে এমন সমাজের জন্য কাজ করা জরুরি যে সমাজ রুফাইদা (রা.)-এর তাঁবু বা কালাউনের হাসপাতালের মতো ‘কাউকে অর্থ বা পরিচয় জিজ্ঞাসা করবে না, শুধু নিশ্চিত করবে মানবতা।’ কেননা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি যেহেতু মুনাফাকেন্দ্রিক, সেহেতু এ ব্যবস্থা বহাল রেখে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সুচিকিৎসা বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্ন হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক
আরও পড়ুন:যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক এক মসজিদ। সে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।
সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
চার তলা ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার।
মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।
সৌন্দর্যে অপরূপ মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।
মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।
দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে।
‘তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেন।’
সাজেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।
মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’
দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।
‘প্রতিদিন এ মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:হিজরি ১৪৪৬ সালের সাদাকাতুল ফিতরের হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক।
এতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ইসলামী শরিয়াহ মতে, আটা, যব, কিসমিস, খেজুর ও পনিরের মতো পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যাবে।
গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১০ টাকা প্রদান করতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৫৩০ টাকা, খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা, কিসমিস দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৯৮০ টাকা এবং পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৮০৫ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।
দেশের সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।
উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও সাদাকাতুল ফিতরা আদায় হবে।
আরও পড়ুন:পবিত্র রমজান উপলক্ষে জীবনের সর্বস্তরে সংযমের বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রমজানকে সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়া বাণীতে এ বার্তা দেন।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বাণীতে তিনি বলেন, ‘সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস মাহে রমজান আজ আমাদের মাঝে সমাগত। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ ও ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়।
‘সিয়াম ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘আসুন, পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যাবতীয় ভোগবিলাস, হিংসা-বিদ্বেষ, উচ্ছৃঙ্খলতা ও সংঘাত পরিহার করি এবং জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। সিয়াম পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করি এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকি।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের জাতীয় জীবনে পবিত্র মাহে রমজানের শিক্ষা কার্যকর করার তাওফিক দান করুন। মাহে রমজান আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা ও হেফাজত করুন, আমিন।’
আরও পড়ুন:দেশে রমজান মাস এলে বাজারে হু হু করে বেড়ে যায় খাদ্যপণ্যের দাম। এমন বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্র সামনে এনেছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মুদি দোকানি শাহ আলম।
রমজান উপলক্ষে ইফতারসামগ্রীর দাম কমিয়ে দিয়েছেন শাহ আলম। লাভ ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছেন তিনি।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মধ্য চরকুমিরা গ্রামে শাহ আলমের এ মুদি দোকান। পাশেই নিজ বাড়ি।
তিনি জানান, গেল দুই বছর রমজানে কেজিতে এক টাকা লাভে ইফতারসামগ্রী বিক্রয় করেন। অবশ্য এবারও কেজিতে এক টাকা লাভে উপজেলার ভাটিয়ালপুর এলাকায় তার নিজের অন্য একটি দোকানে ইফতারের ৮ রকমের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি। সেটা তার ভাই ও বোন দেখাশোনা করছেন। তবে আরেক দোকানে লাভ ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য।
শাহ আলম বলেন, ‘নিজ বাড়ির পাশে কোনো লাভ ছাড়াই কেনা দামেই পবিত্র মাহে রমজানের আটটি ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, ছোলা, খেসারির ডাল, বেসন, চিড়া, চিনি, খেজুর ও সয়াবিন তেল।’
শাহ আলমের দোকানে মূল্য তালিকা সাঁটানো রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও তার দোকান পরিদর্শন করেছেন।
এ দোকানি ইউএনবিকে বলেন, ‘বছরের ১১ মাসই তো ব্যবসা করি। এই মাসে কোনো ব্যবসা (লাভ) করব না। পাশে আমার আরেকটি মুদির দোকান রয়েছে। গরিব, মেহনতি মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য এ বছর রমজানে ক্রয়মূল্যেই রোজাদারের জন্য আটটি খাদ্যপণ্যসামগ্রী বিক্রয় করার সিদ্বান্ত নিয়েছি। এখন থেকেই শুরু করছি এসব পণ্য বিক্রি।’
অন্যান্য বছর রমজানে মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিক্রয় হলেও এবার রমজান মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল বিক্রয় করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী শাহ আলম।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার রমজানের মালপত্র বিক্রির অর্ডার পেয়েছি এ এলাকার লোকজন ও প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে।’
তার দোকান পরিদর্শন করে দেখা যায়, শাহ আলম, তার ভাতিজা সাকিবসহ (১৯) এসব পণ্য সামগ্রী প্যাক করছেন। দোকানে মালামালে পূর্ণ।
রমজানে দূরের বাজারে না গিয়ে বাড়ির পাশে শাহ আলমের মুদি দোকান থেকে ক্রয়মূল্যে ইফতারসামগ্রী কিনতে পেরে আশপাশের ক্রেতারা খুশি বলে জানান অটোচালক আরজু মিয়া (৪০), আইয়ুব আলী বেপারি (৫০), অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আবদুল খালেক (৭৭), বেলায়েত হোসেন (৫০), ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সাকিব বেপারি (১৮) ও আবুল বেপারি (৬০)।
তারা বলছেন, শাহ আলমের দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করলে সুবিধা। দূরের বাজারে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে দাম যাচাই-বাছাই করতে ঘুরতে হয় না।
শাহ আলম এসব পণ্য প্যাক করে মালামাল রিক্সা-ভ্যানে করে বাড়িতে বাড়িতে বাড়িতেও পাঠিয়ে দেন বলে জানান একজন গৃহিণী ও তার বাবা।
গেল দুই বছর ১ টাকা লাভে রমজানের পণ্য বিক্রয় করে ব্যাপক সাড়া পান শাহ আলম। গত বছর সরকার তাকে পুরস্কৃতও করে।
পাশের মুদি দোকানদার বেলায়েত হোসেন বেপারিসহ কয়েকজন শাহ আলমের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
এদিকে রমজান উপলক্ষে বিনা লাভে ক্রয়মূল্যে ইফতারসামগ্রী বিক্রয় করায় শাহ আলমকে অভিনন্দন জানিয়েছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সম্প্রতি তার দোকানে গিয়ে যেকোনো ব্যপারে শাহ আলমকে সহযোগিতার হাত বাড়ানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল ইমরান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য