অমর একুশে বইমেলার এবারের আসরে ধীরে ধীরে বাড়ছে দর্শনার্থী ও পাঠক। বইপ্রেমীরা মেলায় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বই কেনা শুরু করেছেন। বিভিন্ন স্টলে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রয়কর্মীরা।
মেলায় অনিন্দ্য প্রকাশের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের নতুন ৪ উপন্যাসসহ ১২০টি বইয়ের অধিকাংশ। সেই স্টল থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন বয়স ও নানা শ্রেণির পাঠককে মোশতাক আহমেদের নতুন-পুরনো বইগুলো কিনতে দেখা গেছে।
মেলায় বাবার সঙ্গে আসা সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া পাঠক সিয়াম আহমেদ জানায়, রহস্য উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক উপন্যাস ভালো লাগে তার। সে জন্য মোশতাক আহমেদের একাধিক উপন্যাস কিনেছে সে।
এর আগেও মোশতাক আহমেদের একাধিক উপন্যাস পড়েছে বলে জানায় এই শিক্ষার্থী।
সিয়াম আহমেদের বাবা বলেন, ‘এখন মোবাইলের যুগ। এর নানা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। শিশুরা যেন ডিভাইস থেকে দূরে থাকে, সে জন্য নানাভাবে তাদের বই পড়তে উৎসাহিত করা দরকার। আমার সন্তানকে আমি সেটাই করছি। মেলার শুরুর দিকেই তাকে নিয়ে বই কিনতে চলে এসেছি। নির্ধারিত সময়ে উপন্যাস পড়ে শেষ করতে পারলে তাকে পুরস্কার দেব বলে জানিয়েছি।
‘তার পছন্দ রহস্য উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক উপন্যাস। সে জন্য একাধিক বই কিনেছি। মোশতাক আহমেদের সিরিজগুলো তার খুবই প্রিয়। এ জন্য মেলায় ঢুকে প্রথম দিকেই তার বই কেনার জন্য নিয়ে আসতে হয়েছে।’
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল একাধিক নারী পাঠকের কাছেও। স্টল ঘুরে দেখা গেল, তারা নিজেরা বই কিনছেন এবং কেউ কেউ সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসে মোশতাক আহমেদের বিভিন্ন বই কিনেছেন। নতুন বইয়ের পাশাপাশি পুরনো বই কিনতেও দেখা যায় তাদের।
অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, ‘মোশতাক আহমেদের উপন্যাসগুলো তুমুল জনপ্রিয়। এ জন্য আমাদের স্টলে অধিকাংশ বই বহুমাত্রিক লেখক মোশতাক আহমেদের। পাঠকের কাছে তার উপন্যাসের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে সব উপন্যাস একসঙ্গে জড়ো করে রাখা হয়েছে।
‘মেলায় শুরুর দিকে তার বইয়ের পাঠক চাহিদায় আমরা সন্তুষ্ট। সামনের দিকে এ চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করি।’
তিনি জানান, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মোশতাকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৯০টি। মেলা উপলক্ষে ৩০টির বেশি উপন্যাস পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এবারের মেলায় কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের নতুন চারটি উপন্যাস এসেছে। প্যারাসাইকোলজি উপন্যাসটির নাম ‘হারানো জোছনার সুর’। এ ছাড়া সায়েন্স ফিকশন ‘দ্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড’, ভৌতিক ‘মৃত্যুবাড়ি’ এবং শিশিলিন গোয়েন্দা সিরিজের ‘রূপার সিন্দুক’।
কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘এবারের বইমেলায় সব মিলিয়ে আমার ১২০টি বই বিক্রি হচ্ছে। বইমেলায় পাঠক উপস্থিতি ও তাদের প্রতিক্রিয়ায় আমি সন্তুষ্ট। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।
‘আমার স্বপ্ন দেশের সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে যাওয়া। ভালো অনুবাদকের অভাবে কাজটা করতে পারছি না। আশা করি, এটিও করতে পারব।’
মোশতাক আহমেদ যেমন সামাজিক ও ভৌতিক উপন্যাস লিখছেন, তেমনই লিখছেন গোয়েন্দা ও সায়েন্স ফিকশন। নতুন ধারার প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস রচনায়ও তিনি সমাদৃত হচ্ছেন।
মোশতাক আহমেদ ২০১৮ সালে বাংলা একেডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
আরও পড়ুন:প্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ২-১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব-২০২৪’ আয়োজন করেছে।
যৌথভাবে শনিবার বেলা ১১টার দিকে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ ও তরুণ অনুবাদক মাহীন হক।
স্বাগত বক্তব্যে ঐতিহ্যর প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, ‘ঐতিহ্য দুই যুগ যাবৎ প্রকাশনা ক্ষেত্রে ধ্রুপদিয়ানা ও নতুনত্বের সমন্বয় সাধনের কাজ করে চলেছে। এবারের একক বই উৎসব লেখক-পাঠক-প্রকাশকের সংযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ করবে।’
তরুণ অনুবাদক মাহীন হক বলেন, ‘ঐতিহ্য প্রকাশনা জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে চলেছে। প্রবীণ ও নবীনের সৃজনশীল অভিযাত্রাকে ঐতিহ্য ধারণ করছে সাহসিকতার সঙ্গে।’
বিশিষ্ট গবেষক শারমিন আহমদ বলেন, ‘ঐতিহ্য প্রতিকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সত্য ইতিহাসের একের পর এক বই প্রকাশ করেছে। একজন প্রকৃত প্রকাশকের বৈশিষ্ট্য এমনই হওয়া উচিত।’
ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ঐতিহ্য আমার প্রকাশক, আমাদের প্রকাশক। ঐতিহ্য শুধু মুনাফার দিকে খেয়াল রাখেনি, প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বইয়ের ভবিষ্যৎ মানুষের ভবিষ্যতের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ। মুনাফাবাদী বিশ্বব্যবস্থা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে, স্বার্থপরে পরিণত করছে। মানুষ বই পড়ায় আগ্রহী না হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে।
‘এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাংলাদেশের মানুষ এবং সারা বিশ্বের মানুষকে বইয়ের অন্তর্গত মানবিক বাণী ধারণ করেই বেঁচে থাকার ও সুষম পৃথিবী গড়ার লড়াই করতে হবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যর ২৪ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত ২৪টি বাংলা ক্ল্যাসিক বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এরপর ফিতা কেটে ১০ দিনব্যাপী ঐতিহ্য বই উৎসব উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শারমিন আহমদ ও মাহীন হক।
ঐতিহ্য বই উৎসব চলবে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
উৎসবে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে পাঠক ঐতিহ্য প্রকাশিত দুই সহস্রাধিক বই থেকে তার পছন্দেরটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক ও বরেণ্য গবেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’-এর ধারা ৬(১), ধারা ৬(২) ও ধারা ৬(৩) অনুযায়ী এ নিয়োগ দিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিন বছরের জন্য তিনি এ নিয়োগ পেয়েছেন।
কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সভাপতির দায়িত্ব এবং অন্যান্য কার্যাবলি ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সম্প্রতি বাংলা একাডেমির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:সাহিত্যে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কার জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং।
সুইডেনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা একটা (বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক হ্যান্স এলেগ্রেন ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হানকে পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, তার ঐকান্তিক কাব্যিক গদ্য ঐতিহাসিক মর্মাঘাত সামনে নিয়ে আসে। এগুলো মানবজীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে।
হান ক্যাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে সিউল চলে আসেন।
সাহিত্যিক বেষ্টিত পরিবেশে জন্ম নেন হান। তার বাবাও নামী ঔপন্যাসিক।
আরও পড়ুন:সাম্যবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার।
তরুণ এ বিপ্লবী কবি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারণ ভট্টাচার্য ও মা সুনীতি দেবী।
‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘অভিযান’, ‘হরতাল’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তার রচিত কাব্যগুলো এখনও বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও কবির পূর্বপুরুষের নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে। বর্তমানে কবির পিতৃভিটায় তার নামে সরকারিভাবে একটি অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি করা হয়েছে। কবির পৈতৃক বাড়ি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।
এ ছাড়াও প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কবির পূর্বপুরুষের ভিটায় পাঁচ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবিপ্রেমীরা অংশ নেন, তবে কবির জন্ম ও মৃত্যুর দিনে এ উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।
কবি মিন্টু রায় বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। কবির স্মরণে প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কোটালীপাড়ায় সুকান্ত মেলা হয়।
‘বছরে একটি মেলার আয়োজন করে কবি সুকান্তকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি চাইব জাতীয়ভাবে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যেন পালন করা হয়।’
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক কর্মকার বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির জন্ম ও মৃত্যুদিনে তার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকি। এ বছর দেশের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন রয়েছে। তাই কয়েক দিন পরে আমরা কবির জন্মদিন পালন করব।’
কবি সুকান্ত সেবা সংঘের সভাপতি অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার বলেন, ‘সুকান্তের বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য মাদারীপুরে চাকরি করতেন। দেশ বিভক্তের আগেই তিনি কোটালীপাড়ার পৈতৃক ভিটা ফেলে রেখে কলকাতা চলে যান। পরে আমরা মামলা করে কবির পৈতৃক ভিটামাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করি।
‘কবির স্মৃতি ধরে রাখতে কবির পৈতৃক ভিটায় অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরি নির্মাণ করেছে সরকার। এখানে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। আগামী প্রজন্মের কাছে কবির বিপ্লবী চেতনাকে তুলে ধরতে হবে। তা হলেই নতুন প্রজন্ম কবির জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে।’
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ১৩ মে ২১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন:বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগের ২৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন অধ্যাপক হারুন-উর-রশীদ আসকারী। গত ১৮ জুলাই বাংলা বাংলা একাডেমিতে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি।
শনিবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের উপ-পরিচালক নার্গিস সানজিদা সুলতানা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হন। আর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৪ জুলাই।
একুশে পদক ও বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার পাওয়া কবি অসীম সাহা মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
জানা গেছে, কবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত কবি বিষণ্নতায়ও ভুগছিলেন। নিজে থেকে কোনোকিছু খেতে পারতেন না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত মাসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কবি অসীম সাহা ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর জেলায়।
অসীম সাহার বাবা অখিলবন্ধু সাহা ছিলেন একজন অধ্যাপক। কবি ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৬৯ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কবি অসীম সাহার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘পূর্ব পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায়’, ‘কালো পালকের নিচে’, ‘পুনরুদ্ধার’, ‘উদ্বাস্তু’, ‘মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি’ ‘অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব’, ‘মুহূর্তের কবিতা’ ও ‘ম-বর্ণের শোভিত মুকুট’।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১১ সালে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
এছাড়াও কবি অসীম সাহা আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩) ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারসহ (২০১২) আরও বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন।
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মধ্য দিয়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
শনিবার সকালে জেলা প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে কবি নজরুল ইসলাম ও কবিপত্নী আশালতা সেনগুপ্তার (প্রমিলা) প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী কবিতা আবৃতি, নাটক, গল্প ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মানিকগঞ্জের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক সানজিদা জেসমিন, নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. নিরঞ্জন অধিকারী, সাবেক জেল শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মোন্নাফ খান, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত তেওতা গ্রামে নজরুল-প্রমিলা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর নির্মাণের দাবি করেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. নিরঞ্জন অধিকারী। একইসঙ্গে কবি ও কবিপত্নী প্রমিলার স্মৃতিবিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ি সংস্কার ও পুকুর ঘাট রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
নজরুল গবেষক জানান, ১৯০৮ সালে শিবালয়ের তেওতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দোলন বা দুলি। আশালতা সেনগুপ্তা ছিলেন বাবা বসন্ত কুমার ও মা গিরিবালা দেবীর একমাত্র সন্তান। তার বাবা বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরায় নায়েবের পদে চাকরি করতেন। তার কাকা ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ত্রিপুরায় কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের ইন্সপেক্টর ছিলেন। চাকরি সূত্রে আশালতার বাবা বসন্ত কুমার পরিবার নিয়ে তেওতায় বসবাস করতেন এবং তার কাকা ইন্দ্র কুমার পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন কুমিল্লায়।
তবে হঠাৎ করে বসন্ত কুমারের মৃত্যু হলে কাকা ইন্দ্র কুমারের সঙ্গে কুমিল্লায় চলে যান আশালতা ও তার মা গিরিবালা বেদী। এরইমধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম তার বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে একবার কুমিল্লায় বেড়াতে যান এবং সেখানে ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে আশালতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আশলতা সেনগুপ্তার টানে পাঁচবার কুমিল্লায় যান কাজী এবং তিনবার আসেন তেওতা গ্রামে। তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল তাদের বাড়ি।
নজরুল জেল থেকে মুক্তি পেয়ে কুমিল্লায় গেলে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক চাপে মা গিরিবালা দেবী মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তাকে নিয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯২৪ সালে গিরিবালা দেবীর ইচ্ছায় নজরুল ও আশালতার বিয়ে হয়। প্রেম চলাকালে আশালতাকে প্রমিলা নামে ডাকতেন কবি।
তিনি জানান, শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে কবি নজরুল ও তার পত্নী প্রমিলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বিয়ের পরও তারা বেশ কয়েকবার এ গ্রামে এসেছিলেন।
তেওতা জমিদার বাড়ির শান বাঁধানো পুকুরে নজরুল ইসলাম সাঁতার কেটেছেন, পুকুরপাড়ের বকুল গাছের তলায় বসে বাঁশি বাজিয়েছেন। এমনকি জমিদার বাড়ির নবরত্ন মঠের দোল উৎসবেও যোগ দিয়েছিলেন।
সবুজ শ্যামল তেওতা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। তেওতা গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে কবি লিখেছিলেন, ‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী এ কোন সোনার গাঁয়।’
প্রমিলার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘নীলাম্বরী শাড়ি পরি নীল যমুনায় কে যায়।’
এ ছাড়াও তেওতায় বসে কবি ‘ছোট হিটলার’, ‘লিচু চোর’ ও ‘হারা ছেলের চিঠি’র মতো সাহিত্য রচনা করেছেন। এসবের মাধ্যমে নজরুল ইসলাম তেওতা গ্রামের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য