পুরো বছরের মধ্যে শীতকাল অনেকটাই ভিন্ন। আবহাওয়াজনিত কারণে এ সময় ত্বক স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। চেহারা দেখায় শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল। কেউ কেউ অভিযোগ করেন শীতে তাদের ত্বকে কিছুটা কালো ছোঁপ পড়ে যায়। তাই শীতকালে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
শীতকালে অল্প কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে এবং তারুণ্য বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
১. সঠিকভাবে আপনার ত্বক পরিষ্কার করুন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্যই স্কিনকে পরিষ্কার করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই সবার আগে দরকার একটি ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করা। এরপর শীতকালে উজ্জ্বল ত্বক পেতে ময়েশ্চারাইজিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখে। শীতকালে আমাদের ত্বক শুকিয়ে যায়, কারণ বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এই পরিস্থিতিতে আপনার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে এবং বাড়তি ক্ষতি এড়াতে হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
২. একটি ভারী ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করুন
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকের যত্নের পরিবর্তন বাধ্যতামূলক, কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আর্দ্রতার মাত্রা পরিবর্তিত হয়। কারণ আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি এবং ত্বক শ্বাস নিচ্ছে; তার আর্দ্রতা পরিবর্তিত হয়। তাই গ্রীষ্মের ঋতুটিতে আমরা হালকা জেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু শীতকালে এমন একটি ময়েশ্চারাইজার বাছাই করা উচিত; যাতে ভিটামিন ই ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মতো উপাদানগুলো থাকে। এ ছাড়া নারকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, বাটারমিল্ক ও শসার মতো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন।
৩. একটি ভাল এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন কোনোভাবোই বাদ দেয়া যাবে না
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে শীতকালে সূর্য দৃশ্যমান নাও হতে পারে, তা সত্ত্বেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। কারণ আপনার ত্বক শীতেও সূর্যের রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ত্বকে পিগমেন্টেশন, সানস্পট ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সানস্ক্রিন ব্যবহার, আপনার মেকআপকে সৌন্দর্যের সঙ্গে সানস্ক্রিন সুরক্ষা দেবে।
৪. ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এক্সফোলিয়েট মূল চাবিকাঠি
এক্সফোলিয়েশন হল আপনার ত্বকের বাইরের স্তর থেকে মৃত ত্বকের কোষ অপসারণের প্রক্রিয়া। এক্সফোলিয়েশন ময়লার স্তর অপসারণ করে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্যগুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে দেয়। যদি সঠিকভাবে এটি না করা হয়, তবে এটি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। আপনি যদি ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে চান, তবে অবশ্যই একটি নিরাপদ পদ্ধতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি না করে এবং লালভাব বা ব্রণ কমাতে পারে।
৫. ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে বডি বাটারের প্রয়োজনীয়তা
আপনার ত্বক যদি সুপার ড্রাই হয়, আর একটু পর পরই ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে হয়; তাহলে আপনার জন্য বেস্ট সল্যুশন হচ্ছে বডি বাটার। কেননা বডি বাটার স্কিনে প্রোটেক্টিভ লেয়ার হিসেবে কাজ করবে, যেটা দিনভর আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড, ডিউয়ি আর সফট রাখতে সাহায্য করে। এটা শুধু ত্বকের উপরিভাগই না, ত্বকের ডিপ লেয়ারে পৌঁছেও কাজ করে। এক কথায়, দীর্ঘ সময় ধরে ময়েশ্চার লক রাখে।
আরও পড়ুন:স্টেক হলো মাংসের মোটা টুকরো করে কাটা অংশ। যা গ্রিল বা ভেজে খাওয়া হয়। স্টেক সাধারণত গরুর মাংসের হাড় ছাড়া কোমল অংশকে বোঝায়।
পারফেক্ট স্টেক তৈরির জন্য সবার আগে সঠিক মাংস নির্বাচন করা জরুরি। গরুর কোন অংশের মাংস নেয়া হচ্ছে তার ওপর স্টেকের স্বাদ নির্ভর করবে অনেকটা।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সায়েন্টিস্ট ড. রাইসা খান তারেক জানিয়েছেন কীভাবে বাসায় সহজেই পারফেক্ট বিফ স্টেক বানানো যায়।
তিনি বলেছেন, ‘স্টেক করার জন্য গরুর দেহের এমন অংশটি প্রয়োজন যেই অংশের মাংসপেশী খুব বেশি কাজ করে না। ওই অংশটা খুব সফট আর টেন্ডার হয়। অর্থাৎ গরুর পেছনের পায়ের ওপরের অংশ থেকে সামনের পায়ের ওপরের অংশ পর্যন্ত (মেরুদণ্ডের জায়গা) স্টেকের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ অংশের মাংসপেশী একদমই নড়াচড়া হয় না, কোনো কাজ করে না।’
প্রস্তুত প্রণালি
স্টেক বানাতে প্রয়োজন অল্প কিছু উপকরণ। মাংস সিজনিং করতে হবে শুধু লবণ আর গোলমরিচ দিয়ে। আর রান্নার সময় দিতে হবে একটু বাটার আর রসুন।
ভাবতে পারেন এত অল্প মসলায় মাংস খেতে ভালো হবে কি না, তবে বেস্ট কোয়ালিটি স্টেকের জন্য সিম্পল সিজনিং করা হয়। অতিরিক্ত মসলা স্টেকের স্বাদ নষ্ট করতে পারে।
স্টেক তৈরির জন্য প্রথমে লাগবে মোটা মেটালের পাত্র। খেয়াল রাখতে হবে গরম প্যানে মাংস দেয়ার পর যেন পাত্রের তাপমাত্রা হুট করে কমে না যায়। কারণ স্টেকটা সিয়ার করতে হবে, বয়েল বা সিদ্ধ না।
সিয়ারিং হলো উচ্চতাপে মাংসের উপরিভাগ খুব কম সময়ে সংকুচিত করে ফেলা, যাতে ভেতরের জুস বের না হয়ে আটকা পড়ে সেই ফ্লেভারফুল ক্রাস্ট তৈরি হয়।
পাত্র গরম হলে অল্প তেল দিতে হবে। এর পর স্টেকের মাংস দিতে হবে। পাত্র ভালো মতো গরম হলে মাংস দেয়ার পর ঝলসানোর মতো শব্দ হবে। মাংস সিয়ার করতে হবে ছয় থেকে আট মিনিটের মতো। প্রত্যেক মিনিটে স্টেক উল্টে দিতে হবে। তিন থেকে চার মিনিট পর দিতে হবে রসুন ও বাটার। রসুন হালকা ছেঁচে দিতে হবে। বাটার গলে গেলে একটি চামচ দিয়ে উঠিয়ে বার বার স্টেকের ওপরে দিতে হবে। বাটারের সঙ্গে হার্ব হিসেবে থাইম বা রোজমেরি দেয়া যায়।
রাইসা বলেন, মাংস যদি ভালো মতো সিয়ার হয় তাহলে মাংসের কাঁচা কোনো গন্ধ থাকবে না। কারণ মাংস যখন সিয়ার হচ্ছে তখন মাংসে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড, সুগার আর হিটের মধ্যে এক ধরনের রিঅ্যাকশন হয়। ফলে মাংসের গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন হয়ে অনেক মজার স্বাদ ও ঘ্রাণ তৈরি করে।
তাই স্টেকের স্বাদের জন্য মসলা নয়, বরং কুকিং কেমিস্ট্রিটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেক নামিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট রেস্ট করতে হবে। স্টেকের স্বাদ পুরোপুরি পেতে হলে এই রেস্টিংটা খুব জরুরি। এতে স্টেক আরও বেশি জুসি হয়।
এবার স্টেকটি পরিবেশন করতে পারেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ অথবা ম্যাশড পটেটোর সঙ্গে।
আরও পড়ুন:সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহায় বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি হয়। স্বভাবতই এখানে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে কোরবানি-পরবর্তী শহর পরিষ্কারের বিষয়টি।
পশু জবাইয়ের পর সঠিকভাবে তার বর্জ্য নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে শহরবাসীকেই পোহাতে হয় হাজারও ভোগান্তি। তা ছাড়া ধর্মীয় দিক থেকেও পরিবেশ আবর্জনামুক্ত রাখা প্রত্যেক কোরবানি পালনকারীর ইমানি দায়িত্ব।
কোরবানির পর বাসা ও চারপাশ বর্জ্যমুক্ত রাখার কয়েকটি উপায় জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। এ প্রতিবেদনে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর বর্জ্য অপসারণের সে উপায়গুলো নিয়ে বলা হয়েছে।
একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন
শহর বা গ্রাম নির্বিশেষে একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকজন আলাদাভাবে কোরবানি না দিয়ে কয়েকজন একসঙ্গে হয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি করা উত্তম। মূলত বসতবাড়ি থেকে যথাসম্ভব দূরে এমন একটি স্থান নির্বাচন করা উচিত, যেখান থেকে সহজেই পশুর বর্জ্য নিষ্কাশন করা যায়। এতে করে সিটি করপোরেশন কর্মীরা দ্রুত সময়ে বর্জ্য অপসারণের কাজ করতে পারবে। এ সময় খেয়াল রাখা উচিত, স্থানটি যেন চলাচলের রাস্তার উপরে না হয়।
পশুর রক্ত পরিষ্কার
পশু জবাইয়ের পর প্রথম কাজ হচ্ছে পশুর রক্ত সরিয়ে ফেলা। এর জন্য রক্ত সম্পূর্ণ ঝরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অতঃপর পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। রক্ত অপসারণের জন্য কাছাকাছি কোনো ড্রেন ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন রক্তের সঙ্গে কোনো কঠিন বর্জ্য ড্রেনের মুখ বন্ধ করে না দেয়। তরল রক্ত দ্রুত সরিয়ে ফেলার পর রক্তের দাগ ও দুর্গন্ধ দূর করার জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।
বর্জ্য খোলা স্থানে না রাখা
পশুর রক্তসহ অন্যান্য কঠিন ও তরল বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে রাখা ঠিক নয়। কেননা এতে রক্ত আর নাড়ি-ভুঁড়ি বাতাসের সংস্পর্শে এসে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। এগুলো গর্ত করে ভেতরে রেখে মাটিচাপা দিতে হবে, অথবা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে রেখে আসতে হবে। গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত কোনো পলিব্যাগে ভরে কাছাকাছি কোনো ডাস্টবিনে গিয়ে ফেলে আসা যেতে পারে।
গর্ত করা
পশুর দেহের উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য নিষ্কাশনের উত্তম পন্থা হলো মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলা। অন্যথায় যেখানে-সেখানে ফেলে রাখলে তাতে পচন ধরে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াবে। এই পরিবেশ দূষণ পরবর্তীতে নানান রোগের কারণ হতে পারে। তাই কোরবানির আগেই নিকটবর্তী কোনো মাঠ বা পরিত্যক্ত জায়গায় ৩ থেকে ৪ ফুট গর্ত তৈরি করে রাখা উচিত। জবাই পর্ব শেষে পশুর শরীরের যাবতীয় উচ্ছিষ্ট এক করে সেই গর্তে ফেলে তার ওপর ব্লিচিং পাউডার, চুন, বা ফাম-৩০ নামক জীবাণুনাশক ছড়াতে হবে।
চামড়ার ব্যবস্থাপনা
কোরবানির পর যত দ্রুত সম্ভব পশুর চামড়া বিক্রি বা দান করে দিতে হবে। ক্রেতা হিসেবে এতিমখানা, মাদ্রাসা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চামড়াগুলো অবশ্যই কোথাও স্তূপ করে ফেলে রাখবেন না। কারণ এগুলো কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে।
ডাস্টবিনের যথাযথ ব্যবহার
পশু কোরবানির যাবতীয় কাজ শেষে উচ্ছিষ্ট ও ময়লা খুব দ্রুত সিটি করপোরেশনের বর্জ্যের গাড়িতে পৌঁছানো উচিত। ময়লা গাড়িতে ওঠানোর পরপরই পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে জবাই করার স্থান পরিষ্কারের কাজে লেগে যেতে হবে। গাড়ি আসতে দেরি হলে জমাকৃত আবর্জনা একটি বড় ব্যাগে ভরে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে। অতঃপর ব্যাগটি রেখে দিতে হবে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে, যেখান থেকে বর্জ্যের গাড়ি ময়লা নিয়ে যায়। পশুর যাবতীয় কঠিন বা তরল বর্জ্য কোনো ভাবেই পয়ঃনিষ্কাশন নালায় ফেলা যাবে না।
যারা ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে পশু জবাই দিয়ে থাকেন তাদের ভবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডাস্টবিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পশুর কান, মাথার খুলি, হাড়, লেজ, ও পায়ের অবশিষ্টাংশ মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে জড়িয়ে নিতে হবে। অতঃপর এ সবকিছু একসঙ্গে করে রাখতে হবে সেই ডাস্টবিনে। বিষয়টি কোরবানির সময় ব্যবহৃত হোগলা, পাটি, কাপড় বা কাঠের গুঁড়ি এবং ন্যাকড়ার জন্যও প্রযোজ্য।
মাংস বাড়িতে নেয়ার সময় সতর্কতা
মাংস প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় মাংস ভর্তি বালতিতে কোনো রকম ফুটো থাকা চলবে না। কোরবানির স্থান থেকে বাড়ি দূরে হলে রাস্তা দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে মাংসের রক্ত চুয়ে পড়ছে কিনা। প্রায় সময় দেখা যায়, সিঁড়ি বা লিফ্ট দিয়ে কাঁচা মাংস তোলার সময় সিঁড়ি বা লিফ্টে রক্তের দাগ লেগে আছে। শুধু তাই নয়, ঈদের ৩ দিন পর্যন্ত সিঁড়িঘর ও লিফট থেকে দুর্গন্ধ যায় না। তাই মাংস বহনকারী বালতিগুলো নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় সাবধান থাকা জরুরি।
লিফটের দুর্গন্ধের তীব্রতা কমানোর জন্য কোরবানির দিন লিফটের দরজা রাতের বেলা কিছুক্ষণ খোলা রাখা যায়। এতে বদ্ধ জায়গায় আটকে না থেকে দুর্গন্ধ বাইরে বেরিয়ে আসবে, আর কিছুটা হলেও দুর্গন্ধ কমবে।
ঘরের ভেতরের পরিচ্ছন্নতা
মাংস ঘরে আনার আগেই ঘরের মেঝেতে প্লাস্টিকের বড় শিট বা পাটি বিছিয়ে রাখতে হবে। মাংস আনার পর তা কাটা, ওজন, ও বণ্টনের জন্য এই পাটি ব্যবহার করতে হবে। কাজ শেষে পাটি উঠিয়ে পুরো মেঝে প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে তা দিয়ে মেঝে মুছতে হবে।
মাংস কাটার সরঞ্জামাদি পরিষ্কার করা
মাংস রান্নার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে এবার মাংস কাটার ছোট-বড় ছুরি ও বটি পরিষ্কার করার পালা। এগুলো নোংরা অবস্থায় রেখে দিলে অচিরেই নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে পরের ঈদুল আজহায় এগুলো ব্যবহারের সময় পড়তে হবে বিড়ম্বনায়। তাই এগুলোও ভিম বার দিয়ে মেজে ও হালকা গরম পানিতে ধুয়ে গুছিয়ে তুলে রাখতে হবে।
দুর্গন্ধ দূরীকরণে জীবাণুনাশক ব্যবহার
কোরবানির পরবর্তী টানা কয়েকদিন ধরে যে বিষয়টি সবচেয়ে বিড়ম্বনার উদ্রেক করে তা হচ্ছে দুর্গন্ধ। বাড়ির ভেতরে-বাইরে এবং আঙ্গিনায় সর্বত্র কাঁচা মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে এক অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে রাখে। এই দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করা না গেলেও অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। এর জন্য কোরবানির স্থানে পানি ঢেলে দেয়ার পর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে রক্তের দাগ ও গন্ধ অনেকটাই কমে আসে।
বাড়ির ভেতরে এয়ার ফ্রেশনার দেয়া যেতে পারে, তবে এতে কাজ না হলে দারুচিনি, চিনি ও মাখনের মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়। এগুলো একসঙ্গে ব্লেন্ড করার পর গরম করলে যে সুগন্ধি ছড়ায়, তাতে মাংসের দুর্গন্ধের তীব্রতা হালকা হয়ে আসে।
লেবু, লবঙ্গ, ও কমলার খোসা এই দুর্গন্ধ দূর করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। পানির সঙ্গে এই খাদ্যসামগ্রী ফুটানোর সময় হালকা এক সুগন্ধি তৈরি হয়, যা ঘরে অনেক সময় ধরে থাকে।
আরও পড়ুন:প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাবে সোমবার দিনভর হতে পারে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সময় ও তার পর করণীয়গুলো কী, তা জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি রোববার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে করণীয়গুলো তুলে ধরেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেগুলো নিচে নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঘরের দরজা-জানালা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে।
২. বিচ্ছিন্ন হতে পারে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এ জন্য মোবাইল ফোন ও অন্যান্য যন্ত্রে যথেষ্ট চার্জ দিয়ে রাখতে হবে।
৩. ধারালো কোনো বস্তু উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা যাবে না। খোলা অবস্থায় থাকলে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
৪. পোষা প্রাণীদের বাঁধনমুক্ত করতে হবে, যাতে বিপদ বুঝলে ওরাও নিরাপদ স্থানে যেতে পারে।
৫. ঝড় শুরু হলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। খোলা রাস্তায়, গাছের নিচে, জীর্ণ পাকা কিংবা কাঁচা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া যাবে না।
৬. ভেঙে পড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার ধারালো অংশের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করতে হবে।
আরও পড়ুন:দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দাবদাহ। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে করণীয় কী কী, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার।
এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা তার ভাষায় তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্কতা
সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী, প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে এবং এটি আরও কিছুদিন ধরে কন্টিনিউ করতে পারে। এ সময় কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে জন্য এই তাপদাহের সময় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া লাগবে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়া লাগবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সময় এটি একটানা দীর্ঘসময় ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া লাগবে এবং এগুলো যারা পরিচালনা করেন, শ্রমিক যারা তাদেরও কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একটানা কাজ না করিয়ে মাঝে মাঝে তাদেরকেও বিরতি দিতে হবে। তাহলে কিন্তু অগ্নিদুর্ঘটনার শঙ্কা হ্রাস পাবে এবং সীমিত থাকবে।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত রাখা
সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, এখনই চেক করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা বদলে ফেলতে হবে। একটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে অথবা একটি মাল্টিপ্লাগ থেকে অতিরিক্ত সংযোগ নেয়া যাবে না। এই জাতীয় সংযোগ থেকে কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারে সতর্কতা
বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যখন ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, সব ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। অফ করে রাখতে হবে।
রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
এ ছাড়া আমরা আবাসিক ভবনে যারা রান্নার কাজ করি, রান্না রেখে দূরে সরে যাওয়া যাবে না। রান্না শেষে অবশ্যই চুলা পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গ্রামেগঞ্জে রান্না করছি যেখানে ছাই যেন উত্তপ্ত না থাকে, ছাইও নিশ্চিন্তভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে।
ধূমপান পরিহার
আবাসিক ভবন ও কারখানায় কোনোভাবেই কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। অপরিহার্য ক্ষেত্রে বাইরে যারা ধূমপান করবেন, বিড়ি-সিগারেটের শেষ অংশ সতর্কভাবে, সচেতনভাবে নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং গাড়িতে চলাচলের সময় ধূমপান করে যেখানে সেখানে কিন্তু সিগারেটের অংশ ফেলা যাবে না।
বারবিকিউ পার্টি না করা
বাড়ির ছাদে, বারান্দায় অথবা আশপাশে দাহ্য বস্তু আছে, এমন খোলা জায়গায় এ সময় বারবিকিউ পার্টি করবেন না। কারণ একটি স্ফূলিঙ্গ উড়ে গিয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে। এই সময় ক্যাম্প ফায়ার, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিকে পুরোপুরি না বলুন।
গাড়িতে অবস্থান ও পার্কিংয়ে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশন থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহের সময় অনুগ্রহপূর্বক কেউ গাড়িতে অবস্থান করবেন না। সবাই সচেতন থাকবেন। বিশেষ করে ফিলিং স্টেশনের মালিক এবং যারা কর্মরত আছেন, তাদের এ ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ সময় সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় গাড়ি পার্কিং করবেন না। গাড়ি ছায়ার মধ্যে পার্কিং করবেন বা যেখানে ছায়া আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করবেন।
আগুন নিয়ে খেলা পরিহার
এ সময় বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না এবং আপনার হাতের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সংরক্ষণ করুন। সরঞ্জাম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন এবং এগুলোর সামনে কোনো ব্যারিয়ার তৈরি করবেন না।
ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পেতে
আপনার সতর্কতা এবং আপনার প্রতিবেশীকে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে কিন্তু নিরাপদ থাকা সম্ভব। এ ছাড়া আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইলে নিকটস্থ ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সেভ করে রাখুন। যেকোনো সময় ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত রেসপন্স করার জন্য ১৬১৬৩ হটলাইন অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কিংবা নিকটতম ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বরে দ্রুত কল করুন এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকে সম্প্রতি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হন একই পরিবারের ছয়জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন এবং বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এমন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগার ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে প্রায়ই। নানা ধরনের দুর্ঘটনার পরেও এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়ম গ্যাস) সিলিন্ডারগুলো বর্তমানে গ্যাস যোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঠিক ব্যবহার না জানায় জীবনের জন্য এ প্রয়োজনীয় বস্তুটিই ভয়াবহ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তামূলক কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি। জেনে নেয়া যাক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে ৮টি প্রয়োজনীয় সতর্কতা।
১. অনুমোদিত বিক্রেতা
এলপিজি সিলিন্ডারের সুষ্ঠু ব্যবহারের প্রথম শর্ত হচ্ছে সেটি কেনার জন্য সঠিক বিক্রেতাকে বাছাই করা। তাই সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত একটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা। তারপর তাদের সূত্র ধরে খুঁজে বের করতে হবে যে, নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অনুমোদিত বিক্রেতা আছে কিনা। এ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রয় পরবর্তী সেবা এবং গ্যাস রিফিল সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে।
এ ছাড়া সিলিন্ডার কেনার মুহূর্তে প্রধান দুটি বিষয় দেখে নিতে হবে।
- সিলিন্ডারে সেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সিল রয়েছে কি না
- সিলিন্ডারটির সেফটি ক্যাপ সুরক্ষিত ভাবে লাগানো রয়েছে কি না
২. মেয়াদ থাকা গ্যাস সিলিন্ডার
একজন অনুমোদিত সিলিন্ডার সরবরাহকারী কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করবেন না। গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত ন্যূনতম প্রতি ১০ বছরে প্রতিস্থাপন বা পুনরায় পরীক্ষা করা উচিত। অন্য তথ্যের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি সিলিন্ডারের বডিতেই লিপিবদ্ধ থাকে। প্রস্তুতের তারিখ থেকে ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সিলিন্ডারের গুণগত মান হারাতে থাকে। ফলে সেটি পুনরায় গ্যাস রিফিলের জন্য উপযুক্ত থাকে না।
৩. সিলিন্ডারকে সর্বদা উপরের দিকে মুখ করে রাখা
স্পষ্ট করে ভিন্ন কোনো নির্দেশনা না থাকলে এলপিজি সিলিন্ডার ওপরের দিকে মুখ করে সোজা অবস্থায় রাখা উচিত। উল্টো করে কিংবা যে কোনো একদিকে কাত করে রাখা যাবে না। মোট কথা এমনভাবে রাখতে হবে যেন সেটি স্থিরভাবে এক জায়গায় থাকতে পারে। এ সময় আশেপাশের কোনো কিছুর সঙ্গে সিলিন্ডারের যেন কোনো ধাক্কা না লাগে। খালি বা গ্যাস ভরা সিলিন্ডার, উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এ অবস্থায় রাখলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিক করে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে না।
৪. সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গায় সঠিক বাতাস চলাচল
বদ্ধ জায়গায় জমা হওয়া এলপিজি ধোঁয়া বিপদের লক্ষণ। তাই সিলিন্ডারের সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল। এর জন্য সিলিন্ডারটি রাখার জন্য যতটা সম্ভব উন্মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির যে জায়গাটি বেশি খোলামেলা সেখানে মাটির ওপর সমতলে রাখা যেতে পারে, তবে সরাসরি সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখাই ভালো।
৫. সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গাটির সুরক্ষা
আবদ্ধ এবং স্যাঁতসেঁতে জায়গায় সিলিন্ডার রাখা ঠিক নয়। বরং যেখানে বিশৃঙ্খলা কম এমন খোলামেলা, বিচ্ছিন্ন এবং পরিষ্কার শুষ্ক জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। চুলার খুব কাছাকাছি তো রাখা যাবেই না, বরং লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে সিলিন্ডারটিকে স্থাপন করতে হয়। যত বেশি দূরে রাখা যায় ততই নিরাপদ।
৬. কোনো ধরনের দাহ্য বস্তু সিলিন্ডারের সংস্পর্শে না আনা
কাগজ, অ্যারোসল, পেট্রল, পর্দা এবং রান্নার তেলের মতো দাহ্য বস্তু সর্বদা এলপিজি সিলিন্ডার থেকে দূরে রাখা উচিত। ছোট্ট আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে এমন সবকিছুই বর্জনীয়; এমনকি ধূমপানের জন্য ম্যাচের কাঠি বা দিয়াশলাইও।
৭. রান্নার সময় করণীয়
রান্না শুরু করার আধঘণ্টা আগে থেকেই রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে, এতে করে বাতাস চলাচল করতে পারবে। রান্নাঘর যথেষ্ট প্রশস্ত না হলে সিলিন্ডার রান্নাঘরে রাখা উচিত নয়। রান্না শেষে চুলার চাবি বন্ধ করতে কোনো মতেই ভুলে যাওয়া চলবে না। এ ছাড়া উচ্চ ভোল্টেজের ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সিলিন্ডারের আশেপাশে রাখা যাবে না।
৮. নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ
এলপিজি সিলিন্ডারের সংযোগগুলো ক্ষয়ক্ষতি ও লিক জনিত যে কোনো লক্ষণের জন্য আগে থেকেই পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। আর একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পরিদর্শন এ পরীক্ষার কাজে সহায়ক হবে।
এর বাইরেও অনেক সময় কোনো ফাটল চোখে পড়তে পারে বা গ্যাস লিকের মতো আশঙ্কাজনক কোনো শব্দ কানে আসতে পারে। এ সময় অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
এ ছাড়া শুধু সিলিন্ডারই নয়, এর সঙ্গে ব্যবহৃত বিভিন্ন পার্টসগুলোর প্রতিও দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এগুলোর মধ্যে আছে সিলিন্ডার রেগুলেটর, সংযোগ পাইপ, ভাল্ভ ক্যাপসহ নানাবিধ ছোট ছোট যন্ত্রাংশ।
আরও পড়ুন:সিয়াম সাধনার মাস রমজানে ভোররাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবারের পাশাপাশি পানি পান থেকে বিরত থাকেন মুসলিমরা। রোজায় দেহে পানিশূন্যতার ঝুঁকি তৈরি হয়, যা থেকে হতে পারে অবসাদ ও বমি বমি ভাব।
কাতারের প্রধান অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হামাদ মেডিক্যাল করপোরেশন জানিয়েছে, সাধারণত শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, ডায়াবেটিস, কিডনি বা অন্যান্য দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কিংবা সূর্যের নিচে শারীরিক ব্যায়াম করা লোকজন পানিশূন্যতার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।
রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে ৭টি উপায়
হামাদ মেডিক্যাল করপোরেশন পানিশূন্যতা এড়াতে সাতটি পরামর্শ দিয়েছে।
১. ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে আট থেকে ১২ কাপ পানি পান করুন। ঠান্ডা পানির তুলনায় দ্রুত শোষণ হয় বলে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে।
২. রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন স্যুপ খেতে পারেন। শরীরে তরলের চাহিদা পূরণের ভালো উৎস হতে পারে খাবারটি।
৩. তরমুজ, টমেটো, শসা, আঙুরের মতো ফল ও সবজিতে অনেক পানি থাকে, যা তৃষ্ণা কমাতে সাহায্য করে।
৪. ইফতারে উচ্চ মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এ ধরনের খাবার শরীরে পানির চাহিদা বাড়ায়। এ ছাড়া সালাদ ও তরকারিতে লবণ কম দেয়া উচিত। বেশি পরিমাণে লবণ খেলে বাড়তে পারে তৃষ্ণা।
৬. ক্যাফেইন শরীরের তরল শুষে নিয়ে তৃষ্ণা বাড়ায়। এ কারণে রমজানে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের পানীয়র মধ্যে এনার্জি ও কার্বনযুক্ত পানীয়, চা ও কফি রয়েছে। ধূমপান মুখকে শুষ্ক করে তৃষ্ণা বাড়ায়। এ কারণে ধূমপানও এড়িয়ে চলুন।
৭. গরমের দিনে সূর্যতাপে ব্যায়াম করলে প্রচুর পরিমাণে পানি পানের চাহিদা তৈরি হয়। এ কারণে রোজায় ব্যায়ামের সবচেয়ে ভালো সময় হলো ইফতারের পর। কারণ ইফতারের মধ্য দিয়ে শরীর পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে শক্তি পায়। রোজা ভেঙে ব্যায়াম করলে শরীর থেকে ঝরে যাওয়া তরলের চাহিদা পূরণের জন্যও পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জাগায় বাসা-বাড়িতে দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এ সংকট দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে লাকড়ি বা মাটির চুলা ব্যবহার করা গেলেও শহরের বাসা-বাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্না করা দুরূহ।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে গ্যাস সরবরাহ। বর্তমানে যেখানে গ্যাসের প্রয়োজন ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট পার ডে), সেখানে সরবরাহ রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ এমএমসিএফডি।
প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই এলপিজি (লিকুইড পেট্রলিয়াম গ্যাস) বা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন, কিন্তু এগুলোর দাম ও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেকেই থাকছেন শঙ্কায়।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি হয়ে পড়েছে রান্নার জন্য গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা।
বাসা-বাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্নার করার উপযুক্ত কিছু উপায় সম্পর্কে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।
ইন্ডাকশন চুলা
তড়িৎ চৌম্বক শক্তিকে ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তাপশক্তির জোগান দেয় ইন্ডাকশন চুলা। এর কাঁচ-সিরামিক প্লেটের নিচে থাকে তামার কয়েল। প্লেটের ওপর নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয় রান্নার পাত্র।
বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা অবস্থায় চৌম্বক পদার্থের তৈজসপত্র রাখা হলে চুলাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শেষে পাত্র সরিয়ে ফেলা হলে চুলা সঙ্গে সঙ্গেই তাপ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে অধিকাংশ স্টেইনলেস-স্টিল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রয়েছে কাস্ট আয়রন এবং এনামেল্ড ঢালাই লোহা।
এই চুলাগুলো সহজে পরিষ্কারযোগ্য এবং অল্প তাপেই গ্যাস ও অন্যান্য সাধারণ বৈদ্যুতিক চুলার থেকে দ্রুত রান্না করতে পারে। ইন্ডাকশন চুলা বিভিন্ন পাওয়ার রেটিংয়ের ভিত্তিতে ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার হয়ে থাকে। বাজারে সাধারণত এক হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াটের চুলাগুলো বেশি পাওয়া যায়। ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য যাবতীয় রান্নার কাজ এই চুলা দিনে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় সম্পন্ন করতে পারে। ফলে আবাসিক এলাকার সর্বোচ্চ ইউনিট রেট হিসেবে মাসে বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে ৯০০ থেকে ৯৬০ টাকা।
ইনফ্রারেড চুলা
বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে আভ্যন্তরীণ তামার কয়েলকে উত্তপ্ত করে রান্নার জন্য তাপ উৎপন্ন করে ইনফ্রারেড চুলা। এগুলো মূলত হ্যালোজেন লাইট (যা ইন্ডাকশন লাইট নামেও পরিচিত) ব্যবহার ইনফ্রারেড বিকিরণ প্রক্রিয়ায় পাত্র গরম করে। এগুলোতে ইন্ডাকশন চুলার মতো নির্দিষ্ট কোনো তৈজসপত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নেই। তবে চুলার পৃষ্ঠের সঙ্গে সমতলে থাকা অর্থাৎ ফ্ল্যাট পাত্রগুলোতে গরম করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।
পাওয়ার রেটিং ইন্ডাকশন চুলার মতোই এক হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াট। সেই সঙ্গে দামের পরিধিও ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। তবে একই রেটিং থাকা সত্ত্বেও ইনফ্রারেড চুলা রান্নার সময় ইন্ডাকশন কুকারের চেয়ে কিছুটা বেশি শক্তি খরচ করে। সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে প্রতিদিনের রান্নায়, যেখানে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসতে পারে এক হাজার টাকার কাছাকাছি।
রাইস কুকার
সুনির্দিষ্টভাবে ভাত রান্না করার জন্য তৈরি রাইস কুকারের রয়েছে একটি হিট সোর্স, একটি রান্নার পাত্র এবং একটি থার্মোস্ট্যাট। থার্মোস্ট্যাট রান্নার পাত্রের তাপমাত্রা পরিমাপ করে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চাল ভর্তি পাত্রটি পানি দিয়ে ভরার পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থার্মোস্ট্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুকার বন্ধ করে দেয়। তাই এখানে পুড়ে যাওয়ার বা কোনো ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে না।
পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের পরিবারের রান্নায় ৩ থেকে ৫ লিটারের কুকার যথেষ্ট। এগুলোর মূল্য সর্বনিম্ন দুই হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা ছাড়াতে পারে।
রাইস কুকারের পাওয়ার রেটিং সাধারণত ইলেক্ট্রিক চুলার থেকে কম হয়ে থাকে; সাধারণত ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ ওয়াট। স্বভাবতই এগুলো কম বিদ্যুৎ শোষণ করে। সারা দিনের রান্নার কাজ সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই করতে সক্ষম এই কুকারগুলো। ফলে সাশ্রয়ী এই কিচেন সামগ্রী ব্যবহারে মাসিক বিদ্যুৎ বিল হতে পারে প্রায় ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকা।
কারি/মাল্টি-কুকার
রাইস কুকারেরই উন্নত সংস্করণ হচ্ছে কারি কুকার, যেখানে ভাত ছাড়াও অন্যান্য নানা খাবার বিভিন্ন উপায়ে রান্না করার কার্যকারিতা আছে। তরকারি রান্নার জন্য এর সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি বাটিটি বেশ বড় থাকে। এই কুকারগুলো ফুটানো, বেকিং, সিদ্ধ, ভাজা, রোস্ট, প্রেসার কুকিং, স্লো কুকিং এবং খাবার গরম রাখার জন্য উপযোগী।
রাইস কুকারের মতো এগুলোর পাওয়ার রেটিংও ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। প্রায় ৪ লিটার ক্ষমতার একটি মাল্টি-কুকার দিয়ে ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের রান্নার কাজ বেশ ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়। গুণগত মানের ভিত্তিতে এগুলোর দাম সাধারণত ৪ হাজার থেকে এক০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এগুলো মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিনের রান্নার কাজ শেষ করতে সক্ষম। মাল্টি-কুকার ব্যবহারে মাস শেষে সম্ভাব্য বিদ্যুৎ খরচ আসতে পারে প্রায় ৭০০ থেকে ৭২০ টাকার মধ্যে।
বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকার
সাধারণ প্রেসার কুকারের সঙ্গে বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকারের (ইপিসি) মূল পার্থক্য হচ্ছে ইপিসি গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আর বাষ্প চাপের মাধ্যমে দ্রুত খাবার রান্নার বাকি প্রক্রিয়া সব একই। এর মজবুতভাবে বদ্ধ পাত্র তরলকে বাষ্পে পরিণত করে ভেতরে দ্রুত চাপ বাড়াতে পারে।
ইপিসির পাওয়ার রেটিং সাধারণত ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। পাত্রের ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করে এই পাওয়ার রেটিং। সাধারণত ৫ থেকে ৭ লিটারের একটি ইলেক্ট্রিক প্রেসার কুকার ৩ থেকে ৫ জনের রান্নার কাজ আঞ্জাম দিতে পারে। ইপিসিগুলোর দাম ৬ থেকে সর্বোচ্চ এক৭ হাজার টাকা। এগুলোর মাধ্যমে সারাদিনের রান্না শেষ করতে আড়াই ঘণ্টা বা তার খানিকটা বেশি সময় লাগতে পারে। এতে করে সারা মাসের বিদ্যুৎ বিল হতে পারে প্রায় ৭০০ টাকা।
গ্রাম বা শহরের বাসায় গ্যাস ছাড়া রান্নার কাজে ইতোমধ্যেই দেশবাসী এই বৈদ্যুতিক চুলাগুলোর সুফল ভোগ করা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে রান্নাতে সর্বাধিক সময় বাঁচালেও বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকারগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। কম খরচে বেশি সুবিধা পেতে ইন্ডাকশন চুলাগুলো পছন্দ করা যেতে পারে রান্নাঘরের নান্দনিক সামগ্রী হিসেবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য