আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে নেয়া হয়নি তামিম ইকবালকে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষদের মাঝে। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্র তারকা ওমর সানি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে তিনি এই প্রতিবাদ জানান।
ওমর সানি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা নির্বাচক, আপনাদের খেলা আমি দেখেছি। স্টেডিয়ামে বসে বলুন আর টিভির পর্দায় বলুন, ভীষণ পুরুষত্ব ফুটে উঠতো। আজকে এমন কী হলো, কাপুরুষের মতো ঘোষণা করতে হবে তামিম ইকবাল বাংলাদেশ দলেই নেই!’
এই অভিনেতা আরও লেখেন, ‘মানলাম একজন সুপারস্টারের কথায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনাদের জায়গায় যদি আমার মতো রাষ্ট্রের প্রজা থাকতো তাহলে বলতাম- আমি পদত্যাগ করলাম। সরি, একজন খেলোয়ার তামিম ইকবাল।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে শেষেই বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে- তা আগেই জানিয়েছিল বিসিবি। তাই খেলা শেষ হতেই মঙ্গলবার বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব পেজে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হয়।
গুঞ্জন সত্যি করে শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ওপেনিংয়ের দায়িত্ব সামলানো অভিজ্ঞ ব্যাটার তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়। এর কারণ দেখানো হয়েছে তিনি আনফিট। তবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
২০২২-২৩ করবর্ষে খেলোয়াড় কোটায় সেরা করদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের তিন ক্রিকেটার।
তারা হলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তিনজনের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। এর পরের অবস্থানে যথাক্রমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল খান।
এর আগে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সেরা করদাতাদের তালিকায় ছিলেন সাকিব ও তামিম। এ দুজনের বাইরে এবার নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
তালিকায় এ বছর মোট ১৪১ জন করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ব্যুরো অফ রেভিনিউ (এনবিআর)। এর ভেতর ব্যক্তি ৭৬ জন, কোম্পানি ৫৪টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১১ জন।
ইতোমধ্যে সরকারি গেজেট আকারে এটি প্রকাশিত হয়েছে। সেরা করদাতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড দেবে এনবিআর। ২০১৬ সাল থেকে এ সম্মাননার প্রচলন করেছে এনবিআর।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্বে দ্বিতীয় দফায় বসানো হয় শ্রীলঙ্কান কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর প্রায় এক বছর পেরোতে চলল, কিন্তু এখনও তিনি শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট দেখে সেটি কেমন আচরণ করবে তা বুঝে উঠতে পারেন না।
পাঁচ দিনের খেলায় উইকেট কেমন আচরণ করবে সেটি বুঝতেই হাথুরুর একদিন লেগে যায়।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানান লঙ্কান এই কোচ।
একাদশ কেমন হবে সেটি এখনই নির্ধারণ না করে ম্যাচের আগে উইকেটের কন্ডিশন দেখে নির্ধারণ করবেন বলে ওই সময় তিনি মন্তব্য করেন।
হাথুরু বলেন, ‘এটা পিচের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। আর অবশ্যই আমাদের শক্তিমত্তার ওপরও। যেমনটা আপনি বললেন, সিলেটে আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি। পাঁচ দিনের প্রতিটিতেই আমরা আধিপত্য বিস্তার করেছি। ভালোভাবে লড়াই করেছি। সেখানেও আমরা আমাদের শক্তি আর সিলেটের কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করেই দলটা বানিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর মিরপুরের কথা আপনি জানেন, কখনও কখনও মাঠে নামার আগে আপনি বুঝবেন না পিচ কেমন আচরণ করতে যাচ্ছে, এমনকি কয়েকটা সেশন না খেললে বোঝা যায় না (উইকেট কেমন)।
‘যেহেতু এখানে অনেক বেশি খেলা হয়... আমার মনে হয় না বিশ্বের আর কোনো মাঠে এত বেশি খেলা হয়, যতটা এই মাঠে হয়ে থাকে। তো আমরা চেষ্টা করব খুব বেশি পরিবর্তন না করতে।’
হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের উইকেট ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। এখানে টেস্টে পেসার ছাড়াও খেলার একাধিক নজির আছে বাংলাদেশের। টার্নিং, মন্থর আর উঁচু-নিচু বাউন্সের কারণে ব্যাটারদের কাজ এখানে বরাবরই বেশ কঠিন।
কিন্তু সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে দেখা গিয়েছিল ভিন্ন এক মিরপুরকে। আর সে কারণেই হাথুরুর কপালে চিন্তার কালো ভাজ সেটি বলার অপেক্ষাই রাখে না।
আরও পড়ুন:টানা হামলায় বহু প্রাণহানির পর সাত দিনের জন্য ছিল যুদ্ধবিরতি, তবে সেই বিরতি শেষ হওয়ায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ফের ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়েছে। এবারের হামলাটি অবরুদ্ধ গাজায় সবচেয়ে বড় হামলা।
উত্তর গাজায় হামলা শুরুর পর এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণ গাজায় চলে যেতে বলা হয়। এখন সেই দক্ষিণ গাজাতেও হামলা হচ্ছে। বিমান হামলা হচ্ছে খান ইউনিস শহরে, এই হামলার যে তীব্রতা; যুদ্ধ শুরুর পর তা কখনও দেখা যায়নি।
বিবিসি বলছে, খান ইউনিস শহরে ৪০০-এর মতো হামলা হয়েছে। হামাস এই শহরে লুকিয়ে আছে এমন সন্দেহে হামলা করছে ইরসায়েল। ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন হামলায়। হামাসও ইরসায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলায় সবমিলিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চলবে।
নেতানিয়াহু বলেন, একটি কঠিন যুদ্ধ আমাদের সামনে।
খান ইউনিস এবং রাফাহ শহর মিশরের সীমান্তে। ভারী বিমান হামলায় ওই এলাকার এখন ভয়াবহ অবস্থা। ইসরায়েল উত্তর গাজায় হামলার পর এখন দক্ষিণের এই শহুরে তাণ্ডব শুরু করেছে।
ইসরায়েলে ঢুকে হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলা শুরুর পর ৯ অক্টোবর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
টানা হামলার শিকার গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কদিন আগে মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে ওই উপত্যকতায়।
এতদিন গাজায় জ্বালানি প্রবেশে ইসরায়েলের অনুমতি ছিল না। বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সম্প্রতি শুধু হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জন্য জ্বালানির অনুমতি দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ঢুকেছে কয়েকটি জ্বালানিবাহী ট্রাক।
এ অবস্থায় গাজায় জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তি ও ইরসায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে ও গাজায় মানবিক সহায়তায় পাঠানোর শর্তে গত ২৪ নভেম্বর প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এরপর এই যুদ্ধবিরতি চলে সাত দিন।
আন্তর্জাতিক নানা মহলের চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আর বাড়েনি। এরই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ফের গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
আরও পড়ুন:৩১৭ রানে সিলেট টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করে নিউজিল্যান্ডের লিড ৭ রানের লিড। মুমিনুল হক ৩ উইকেট নেন, যার মধ্যে ২টি তৃতীয় দিনের সকালের সেশনে নেয়া হয়।
দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ২৬৬ রান। খবর ইউএনবির
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানের জবাবে সেঞ্চুরি করে ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দেন কেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেল ৪১ ও গ্লেন ফিলিপস ৪২ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ইসলাম ৪ উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসান জয় বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যিনি পঞ্চাশ রান অতিক্রম করেন।
বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা আশাব্যঞ্জক শুরু করলেও তাদের ইনিংসকে কাজে লাগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ফিলিপস বল হাতে অপ্রত্যাশিত নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তার দ্বিতীয় টেস্টে চার উইকেট নেন।
এই সিরিজটি আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, যা টাইগারদের জন্য এই ইভেন্টের প্রথম হোম সিরিজ।
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম-এর আয়োজনে চট্টগ্রামে কেএসআরএম নবম গলফ টুর্নামেন্ট সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার (জিওসি) মেজর জেনারেল শাহেনুল হক। এছাড়া কেএসআরএমের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জসিম উদ্দিন, পরিচালক (করপোরেট) শামসুল হক, সিইও মেহেরুল করিম, বিজনেস রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) মো. আশফাকুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) সৈয়দ নজরুল আলম, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত থেকে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল শাহেনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা কেএসআরএমের সহযোগিতায় এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকি, যা অত্যন্ত আনন্দের ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। এজন্য কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা আশা করছি, কেএসআরএমের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক এ সম্পর্ক আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
আঞ্চলিক পর্যায়ের এসব গলফ টুর্নামেন্ট জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন জিওসি শাহেনুল হক।
কেএসআরএম-এর বিজনেস রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) মো. আশফাকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে ১০টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে গর্বিত নির্মাণ অংশীদার ছিল কেএসআরএম। কেএসআরএম প্রতিটি প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রড সরবরাহ করেছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। আমরা সবসময় চেষ্টা করি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে। আগামীতেও আমাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএমের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান রিয়াদ, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিজান উল হক, মিথুন বড়ুয়া, মিজানুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
শেষে গলফ টুর্নামেন্টে ১৯৬ জন গলফারের মধ্যে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ ও র্যাফেল ড্রয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্য ও বিশ্বজুড়ে লাখো ভক্তের মতোই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী হওয়ার পরে বিরাট কোহলিও ভেঙে পড়েছিলেন।
ব্যাট হাতে দুর্দান্ত রানের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া কোহলি টপ-স্কোরিং ব্যাটার হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করলেন, কিন্তু ট্রফি হাতে নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার।
বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলের অর্ধশত রানকে ছাপিয়ে শতরান করে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দিলেন ট্রাভিস হেড।
এরপরেই চোখ ছলছল রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের। আবেগঘন ছিলেন বিরাটের স্ত্রী আনুশকা শর্মাও। ম্যাচ শেষে স্বামীকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে যান তিনি। বিরাট-আনুশকার একে অপরকে জড়িয়ে ধরার সেই মুহূর্ত এরই মধ্যেই ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভক্তরা বলছেন, ভারতের জয়ের সময় যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আনুশকা, তেমন কঠিন সময়ে স্বামীর সব থেকে বড় সাপোর্ট সিস্টেম ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের পুরো আসরজুড়ে অপরাজিত শুধু নয়, বল-ব্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে ভারত। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে নিজেদের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব থেকে বঞ্চিত হলো ভারত।
আরও পড়ুন:ভারতের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া নিল মধুর প্রতিশোধ। ফাইনালে সেই ভারতকে পেয়ে তাদের হারিয়েই ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল অজিরা। আর পুরো আসরে মাত্র এক ম্যাচ হেরেই হৃদয় চূর্ণ হলো ভারতের।
বিশ্বকাপের পুরো আসর জুড়ে অপরাজিত শুধু নয়, বল-ব্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ভারত অবশেষে হারল। হারল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে ফাইনাল ম্যাচেই হারতে হলো! এক ম্যাচ হেরেই নিজেদের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব থেকে বঞ্চিত হলো ভারত। আর তাদেরই মাঠে, তাদের দর্শকের সামনে থেকে শিরোপা নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনাল ম্যাচে টসভাগ্য সঙ্গী হয়নি ভারতের। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে রোহিত শর্মা অ্যান্ড কোং। অজি বোলিং তাণ্ডবে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪০ রানে থামে তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়লেও চতুর্থ উইকেট জুটির অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪২ বল বাকি থাকতে জয়ের দ্বীপে নোঙর করে অস্ট্রেলিয়া। আর সেইসঙ্গে পেয়ে যায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ট্রফির দেখা।
ব্যাট হতে ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য ফাইনাল হয়েছেন ট্র্যাভিস হেড। মারনাস লেবুশেন ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দেন ভারতের বোলাররাও। প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যে টপাটপ প্রথম সারির তিন উইকেট তুলে নিয়ে দুর্দান্ত প্রতাপ দেখান বুমরাহ-শামিরা। সে সময় মনে হচ্ছিল দুই শ’ পেরোনোই অস্ট্রেলিয়ার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু না; একপাশে যখন উইকেট পড়ে চলেছে, অন্যপাশে তখন মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন ট্র্যাভিস হেড।
মাত্র ৪৭ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মারনাস লেবুশেনকে নিয়ে উইকেটে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দেন হেড। এ সময় লেবুশেন টেস্ট ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হন, অন্যপ্রান্তে হেড রানের চাকায় মরিচা না ধরতে দিতে ব্রতী হন।
এই দুই ব্যাটারের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফলতা পায় টিম ক্যাঙ্গারু। ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে প্রথমে দলীয় পঞ্চাশ, এক শ’, দেড় শ করতে করতে দুই শ’ পার করে জয়ের দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকে হেড-লেবুশেন জুটি। এর মাঝে নিজের হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি পূর্ণ করে জয়ের দুই রান আগে থামেন হেড। থামার আগে তার ১২০ বলে ১৩৭ রানের স্মরণীয় ইনিংসটি ১৫টি চার ও চারটি ছক্কায় সাজান তিনি।
অন্যপ্রান্তে ১১০ বল মোকাবিলা করে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন মারনাস লেবুশেন। ব্যাট হাতে এসে প্রথম বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দুই রান নিয়ে নিলে ছয় উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা। মাঝে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্কের শর্ট অফ লেংথ ডেলিভারিটি সামনের পায়ের ওপর ভর করে পুল করতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শুভমান গিল।
তিনি মাত্র চার রান করে ফিরে গেলেও রোহিতের ব্যাটিং ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান তোলে ভারত। তবে এরপরই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতকে চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়া। দশম ওভারের চতুর্থ বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমান্তে ক্যাচ হয়ে ফেরেন রোহিত। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩১ বলে ৪৭ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক।
আসলে পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম টানতে অষ্টম ওভারেই ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আসেন কামিন্স। প্রথম ওভারে সফলতা না পেলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই রোহিতকে পকেটে ভরেন তিনি। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা এবং চার মারেন রোহিত। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ফিরে যেতে হয় হেডের দুর্দান্ত ক্যাচে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আর গতি পায়নি ভারতের রানের চাকা। পরের ৪০ ওভারে তারা তোলে মোটে ১৬০ রান। প্রথম ইনিংসে রোহিত ছাড়া আর কেউ ছক্কা মারতে পারেননি। পুরো ইনিংসে চার হয়েছে মাত্র ১৩টি।
রোহিতের পর ৩ বলে একটি চার মেরে ফিরে যান শ্রেয়াস আইয়ার। কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা জস ইংলিসের গ্লাভসে উইকেট বিলিয়েছেন শ্রেয়াস। এরপর রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে জুটি বড় করতে মনোযোগী হন কোহলি। খানিকটা সফলও হন তারা। এ জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। এর মধ্যে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন কোহলি।
তবে হাফ সেঞ্চুরির পর তাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি কামিন্স। ৬৩ বলে ৫৪ রান করা কোহলিকে বোল্ড করে দেন তিনি। এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে ব্যাটিং লাইন আপে পরিবর্তন করে সুর্যকুমারের পরিবর্তে রবীন্দ্র জাদেজাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান রোহিত। কিন্তু এই জুটিও বেশি বড় হতে দেননি হেজলউড।
হেজলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৯ রান করা জাদেজা।
এরপর ধীরগতির ইনিংস খেলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ৬৬ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রাহুলও। স্টার্কের গুড লেংথের ডেলিভারিতে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
এরপর মোহাম্মদ শামিকেও আউট করেন স্টার্ক। খানিক বাদে অ্যাডাম জ্যাম্পার শিকার হয়ে জসপ্রিত বুমরাহ এলবিডব্লিউ হলে ভারতের ইনিংস আর বেশিদূর এগোতে পারেনি।
ভারতের শেষ ভরসা সূর্যকুমার যাদব আউট হন মাত্র ১৮ রান করে। ইনিংসের শেষ বলে উইকেট পড়লে ২৪০ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
এদিন উইকেটের পেছনে পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে বিরল এক কীর্তি গড়েন ইংলিস। বিশ্বকাপ ফাইনালে পাঁচ ক্যাচ নেয়া প্রথম ক্রিকেটার তিনি। আগের ১২ আসরের ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩টি করে নেয়া কীর্তি রয়েছে রডনি মার্শ (১৯৭৫), মইন খান (১৯৯৯) ও টম ল্যাথামের (২০১৯)।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন লোকেশ রাহুল। এ রান করতে তিনি মোকাবিলা করেন ১০৭ বল। এ ছাড়া বিরাট কোহলি ৫৪ ও অধিনায়ক রোহিত করেন ৪৭ রান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্স ও জশ হেজলউড পান দুটি করে উইকেটের দেখা।
এ জয়ের ফলে বিশ্ব ক্রিকেটের লম্বা ইনিংসের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো আবার। এ বছরের জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও জেতে তারা। ফলে এই দুই বিভাগেই ক্রিকেটর সেরার মুকুট এখন অস্ট্রেলিয়ার মাথায়।
এখানে বিশেষভাবে আলোচনায় চলে আসেন ট্র্যাভিস হেড। টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের ফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেই ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে ফাইনালের রাজা হয়েছিলেন তিনি। আজ ওয়ানডে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই ১২০ বলে ১৩৭ রান করে ফাইনালের রাজা তিনি।
আরও একটি বিশেষ ব্যাপার না বললেই নয়। সেটি প্যাট কামিন্সের অধিনায়কত্ব। টস জিতে পিচের আচরণ টের পেয়ে আগে বোলিং করার যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। পরে পাওয়ার প্লের মধ্যেও রোহিতকে ফেরাতে ম্যাক্সওয়েলকে বাজি ধরেন তিনি। সে যাত্রায়ও সফল হয়েছেন। আবার কোহলি ও রাহুল যখন হাতখুলে খেলা শুরু করবেন, তখনই উপযুক্ত বোলার দিয়ে কাঁৎ করেছেন তাদের। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার যোগ্য ব্যক্তি তিনি।
তবে বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও এবারের বিশ্ব আসরে বিরাট কোহলির অবদান কিছু কম নয়। ব্যাট হাতে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন কোহলি। ১১ ম্যাচে ৯৫.৬৩ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৬৫ রান। এর মধ্যে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি ও তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের মঞ্চেই শচীনের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়ে তা ভেঙেছেন তিনি। সেমি ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ বলে ১১৭ রানের ওই ইনিংসটি ভারতকে ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখে। ফাইনালেও ৬৩ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি।
এমন অসাধারণ পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন কোহলি। হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। কিন্তু এত করেও দলকে, ভক্তদের বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে না পেরে মাথা নিচু করে ভাঙা হৃদয়ে পুরস্কার নিয়ে পোডিয়াম ছাড়েন তিনি।
সবশেষে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের জয় দেখতে গ্যালারিতে এসে শেষমেস অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য