সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু যখন দীর্ঘায়ুর কথা আসে, তখন তালিকায় যুক্ত হয় সুষ্ঠু জীবনধারণ পদ্ধতি। খাদ্যাভাসের ওপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সার্বিকভাবে বদলে দিতে পারে মানুষের জীবনযাত্রাকে। আর তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ব্লু জোন।
ব্লু জোনের মানুষগুলো কেবল দীর্ঘজীবীই নয়, জীবদ্দশার সময়গুলোতে তারা নিজেদের সুস্থতাকেও ধরে রাখে। কীভাবে ব্লু জোন নিবাসীরা রোগহীনভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন, এ তথ্য ছাড়াও ইউএনবি এই ব্লু জোন নিয়ে দিয়েছে বিস্তারিত তথ্য।
ব্লু জোন কী
ব্লু জোন ধারণাটির সূত্রপাত হয়েছে মূলত ২০০৪ সালে প্রকাশিত জিয়ান্নি পেস এবং মিশেল পউলেইনের জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা থেকে। তারা ইতালির সার্ডিনিয়ার নুরো প্রদেশকে শতবর্ষী পুরুষদের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে তার নাম দিয়েছিলেন ‘ব্লু জোন’। পরবর্তীতে এই গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমেরিকান লেখক ড্যান বুয়েটনার খুঁজে বের করেন আরও ৪টি অঞ্চল।
প্রকৃতপক্ষে ব্লু জোন হলো বিশ্বের সেই অঞ্চলগুলো, যেখানকার অধিবাসীদের আয়ু পৃথিবীর মানুষের সাধারণ গড় আয়ুর তুলনায় বেশি।
বিশ্বের ৫টি ব্লু জোন
নুরো প্রদেশ, সার্ডিনিয়া, ইতালি
এটি ইতালির সার্ডিনিয়ার স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ অঞ্চলের একটি প্রদেশ। সার্ডিনিয়া হলো ইতালির মূল ভূখণ্ডের অদূরে বনে ঘেরা এক রুক্ষ দ্বীপ, যার সম্মুখে রয়েছে সুন্দর বালুকাময় সমুদ্র সৈকত।
এখানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মাথাপিছু শতবর্ষজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় দশগুণ বেশি। এমনকি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এই আয়ুর অনুপাত সমান।
নুরো নিবাসীদের প্রধান খাবার সেখানকার ঐতিহ্যগত ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য। এই তালিকার বেশিরভাগই শস্যজাত, শাক-সবজি, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং একদম স্বল্প পরিমাণ মাংস।
পাহাড়ি দ্বীপ সার্ডিনিয়ার মানুষেরা গাড়ির বদলে পায়ে হেটেই বেশি পাহাড়ি পথসহ অন্যান্য রাস্তাগুলো অতিক্রম করে। এখনও সেখানকার অধিকাংশ অধিবাসীদের মেষ চড়াতে দেখা যায়। অফিস থেকে লোকেরা সরাসরি বাড়িতে এসে পরিবারের সঙ্গে দুপুরের খাবার খায়।
সার্ডিনিয়ানরা পরিমিত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করে। স্থানীয় এই ওয়াইন ক্যানোনৌ বা গ্রেনেচ নামে পরিচিত।
ওকিনাওয়া, জাপান
এটি জাপানের দক্ষিণে একটি উপক্রান্তীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ। এখানকার লোকেরা কয়েক প্রজন্ম ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে।
১৯৮০ সালে ওকিনাওয়ার পুরুষদের আয়ু ছিল কমপক্ষে ৮৪ এবং নারীদের সর্বোচ্চ আয়ু ছিল ৯০ বছর।
সকাল হতে না হতেই ঘুম ভেঙে বাইরে পড়তে দেখা যায় বয়স্ক ওকিনাওয়ানদের। তাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভাসে রয়েছে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য যেমন ভাজা সবজি, মিষ্টি আলু, তোফু। তারা শুকরের মাংসও খায় তবে বেশ অল্প পরিমাণে। প্রায় সব ওকিনাওয়ান শতবর্ষীদের সাধারণ কাজ হলো বাগান করা।
নিকোয়া, কোস্টারিকা
এটি কোস্টারিকার একটি উপদ্বীপ, যেখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু ৮৫ বছর। এদের প্রাত্যহিক খাবার হচ্ছে স্কোয়াশ, ভুট্টা, কলা, এবং প্রচুর পরিমাণে মটরশুটি। এখানে মাংসের পরিমাণ থাকে অনেক কম।
সকালে ভাত, মটরশুটি এবং কফির নাস্তা শেষে নিকোয়ান পুরুষরা ঘোড়ায় চড়ে পাহাড় আরোহন করেন। এরা প্রতিদিনি দ্বীপের যত্রতত্র ঘুরে বেড়ান, এবং বাগান করার মত বিভিন্ন কায়িক পরিশ্রমে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন।
নিকোয়া নিবাসীরা অতিরিক্ত সময় জীবিকা নির্বাহে ব্যয় করার চেয়ে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান।
ইকারিয়া, গ্রিস
গ্রিসের সামোস থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল (১৯ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগরের বুকে জেগে একটি দ্বীপ এই ইকারিয়া। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গড়ে দশ বছর বেশি বাঁচে এখানকার অধিবাসীরা। প্রতি তিনজন ইকারিয়ানের মধ্যে একজনের বয়স ৯০-এর কোঠায়।
এদের খাদ্যতালিকায় আছে জলপাই তেল, শাক-সবজি, রসুন, সার্ডিন, স্যামন, হেরিং, ট্রাউট, বাদাম, আখরোট, গোটা শস্যের রুটি, পাস্তা এবং ভাতের মত ভূমধ্যসাগরীয় খাবার।
পার্বত্য এলাকা হলেও ইকারিয়ানরা প্রতিদিন হেঁটেই এখানকার এলাকাগুলোতে বিচরণ করে। সীমিত সময় কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের মাঝে এদের রয়েছে দুপুরে সংক্ষিপ্ত ঘুমের অভ্যাস। এছাড়াও তাদের মধ্যে আছে শক্তিশালী পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন। স্থানীয় অপূর্ব সৈকত এলাকার মতই মানুষগুলোও বেশ প্রফুল্ল ও দুশ্চিন্তামুক্ত।
লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
এটি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় এক ঘন্টা দূরত্বে পূর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ছোট্ট সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। এখানকার অধিবাসীদের বয়স জাতীয় গড় আয়ু থেকে ১০ বছর বেশি; এমনকি জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বেঁচে আছে ১০০ বছর ধরে।
শহরে অ্যালকোহল বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ। গির্জার মালিকানাধীন মুদির দোকানে মাংস বিক্রি হয় না।
দীর্ঘজীবীদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার লোক সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট-এ বিশ্বাসী। এই প্রোটেস্টেন্ট খ্রিস্টানদের খাদ্যের বিশাল অংশ দখল করে আছে উদ্ভিজ্জ খাবার। কালো মটরশুটি, বাদাম এবং অ্যাভোকাডো তাদের খাদ্যের কেন্দ্রীয় উপাদান। স্বল্প কিছু সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্ট শেলফিশ এবং লাল মাংস (বিশেষ করে শূকরের মাংস) গ্রহণ করেন।
মাংসের পরিবর্তে স্থানীয় লোমা লিন্ডা মার্কেট ভরা থাকে শিম এবং শস্য বীজ দিয়ে। সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্টরা অ্যালকোহল পান করেন না। সাধারণ ধর্মাবলম্বীরা নিকোটিন এবং ক্যাফেইনও এড়িয়ে চলেন।
লোমা লিন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটনেস সেন্টার এর সকল বাসিন্দাদের জন্য উন্মুক্ত। পরিবারের সঙ্গে প্রকৃতি ভ্রমণ সেভেন্থ-ডে অ্যাডভেন্টিস্টদের জন্য বেশ সাধারণ একটি ব্যাপার।
যেসব কারণে ব্লু জোনের মানুষ দীর্ঘদিন রোগমুক্তভাবে বেঁচে থাকে
সম্পূর্ণ উদ্ভিদজাত খাদ্য গ্রহণ
ফল, শাক-সবজি, মটরশুটি, লেবু, গোটা শস্য, বাদাম এবং বীজ ব্লু জোনের মানুষের ক্যালোরির সিংহভাগ সরবরাহ করে। এই জাতীয় খাবারগুলোতে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ এবং জৈবিক যৌগগুলোর মতো পুষ্টি থাকে। এই পুষ্টি কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মাংস ও অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ
ব্লু জোনের বাসিন্দারা একেবারেই যে মাংস খান না তা নয়। মাংসের পাশাপাশি তারা মাছ, দুধ ও ডিমও খান, তবে অবশ্যই প্রতিদিন নয়। ফলে, তাদের শরীরে প্রাণীজ পণ্যগুলোতে থাকা দ্রুত বয়স বৃদ্ধির হরমোনের মতো বিপজ্জনক কৃত্রিম রাসায়নিকের পরিমাণ কম থাকে।
ব্লু জোনের লোকেরা দিনে ১ থেকে ২ গ্লাস ওয়াইন পান করেন। এই অভ্যাস তাদেরকে বিভিন্ন রোগসহ বয়স-সম্পর্কিত জ্ঞানীয় পতন থেকে দূরে রাখে। এছাড়া এই নিয়ন্ত্রণ তাদেরকে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো থেকেও মুক্ত রাখে।
কাজের মাধ্যমে শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম
বাগান করা, হাঁটা এবং পর্বত আরোহণ ব্লু জোনের লোকেদের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাদের জিম করতে হয় না বা ভোরে উঠে স্বাস্থ্য গঠনের উদ্দেশে আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন হয় না। তাদের জীবনধারণ পদ্ধতিই তাদের ৯০-এর বছর বয়সের সময় তাদেরকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখে।
দৈনিক কায়িক শ্রম সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ এটি টক্সিন ভাঙ্গন বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড় ও পেশীকে মজবুত রাখে।
তারা ঘুমের সময়রেখাটা বেশ ভালোভাবেই মেনে চলেন। তাদের প্রায় সকলেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই জেগে ওঠেন। অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে বেশি তারা ঘুমানোর জন্য বেশি রাত করেন না। কেউ কেউ কাজের মাঝে নিজেকে সতেজ রাখার জন্য দিনের বেলাতেও হাল্কা ঘুম দিয়ে নেন।
এই চর্চা শুধু শরীরকেই নয়; তাদের মনকেও সুস্থ রাখে।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা
শরীর ভালো থাকাটা মনকে অনেকটাই দুশ্চিন্তা মুক্ত করে দেয়। এরপরেও ব্লু জোনের জনগণ প্রতিদিন প্রার্থনা বা ধ্যান করে এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটায়। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে তারা অতিরিক্ত কাজ করার দিকে ধাবিত হন না। এছাড়া পরস্পরের সঙ্গে তারা সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখেন। পিতামাতা এবং দাদা-দাদীসহ যৌথ পরিবারে তারা একত্রে বসবাস করেন। শুধুমাত্র কুশল বিনিময় ছাড়াও প্রতিবেশীদের সঙ্গে তারা নিয়মিত দেখা করেন। ফলে দীর্ঘস্থায়ী চাপ থেকে সৃষ্ট প্রদাহ এবং বিষণ্নতার মতো ব্যাধির ঝুঁকি থেকে তারা দূরে থাকেন।
জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী
ব্লু জোন নিবাসীরা জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্ত নন। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশ খুশী। তারা জানেন যে, তারা কোথায় যাচ্ছেন এবং কেন যাচ্ছেন। আর এর জন্য তাদের মধ্যে কোনও রকম তাড়াহুড়ো নেই।
এই আত্মবিঃশ্বাস তাদের ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং বিকাশের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। গবেষণা দেখা গেছে যে, এ ধরনের অনুভূতি সুখ এবং আত্মসম্মানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এমনকি ব্যক্তির আয়ু আরও ৭ বছর বাড়িয়ে দিতে পারে।
ব্লু জোন-এর এই রোগহীন দীর্ঘজীবী সম্প্রদায় গোটা পৃথিবীর বিস্ময়। সেই সঙ্গে এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্তও বটে বাকি বিশ্ববাসীর জন্য। জীবনধারণকে কিছুটা আলাদা বলতে যাবতীয় মিষ্টতা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা নয়। বরং এই উদ্ভিজ্জ খাবার, নিয়মিত ও পরিমিত পরিশ্রম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার বজায় রাখার মত কর্মকাণ্ডেই নিহিত আছে প্রকৃত সুখ।
নিয়ন্ত্রণের নিয়ম-কানুনগুলো যখন নিত্য-নৈমিত্তিক অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন সেই নিয়মানুবর্তিতা আর চাপের সৃষ্টি করে না। বরং এর প্রতি নিবেদিত হওয়া সীমিত জীবনে যুক্ত করতে পারে আরও কয়েকটি বছর।
বৃষ্টি মৌসুমগুলোতে ভারী বর্ষণের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয় বন্যা। আর বন্যা মানেই নানা ধরণের কীট-পতঙ্গের পাশাপাশি শুরু হয় সাপের উপদ্রব। এমনকি এই চিত্র কেবল গ্রামেরই নয়, শহরাঞ্চলগুলোরও একই অবস্থা। এছাড়া যারা বর্ষার সময় বনে বা পাহাড়ে ঘুরতে যান তাদেরও প্রায় সময় সাপের কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে দেশ জুড়ে সাপে কাটার ঘটনা আশঙ্কাজনক মাত্রায় রয়েছে। সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার হলো- সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। তাই চলুন, সাপে কামড়ালে কি করণীয় এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
সাপে কাটলে কি করা উচিত
সাপে কাটা ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণরক্ষার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত:
- সাপে কামড়ানো ব্যক্তি প্রায় ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রে এই মানসিক অবস্থা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় দূর করে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে এবং সাহস দিতে হবে। বিশেষত নির্বিষ সাপের দংশনে মৃত্যু হয় না। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপেরই বিষ নেই। বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এগুলো অধিকাংশ সময় শিকারের শরীরে পর্যাপ্ত বিষ ঢুকিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়।
- ব্যক্তির আক্রান্ত অঙ্গকে অবশ্যই স্থির করে রাখতে হবে। খুব বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। হাঁটাচলা বা অধিক ঝাঁকুনির সম্মুখীন না করে স্থির ভাবে আধশোয়া অবস্থায় রাখা উত্তম।
- ক্ষতস্থানে একটু চাপ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ বেধে দিতে হবে। এই প্রাথমিক চিকিৎসাটি প্রেসার ইমোবিলাইজেশন নামে পরিচিত। ব্যান্ডেজের বদলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- রোগী শ্বাস না নিলে অবিলম্বে তার মুখে শ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবান দিয়ে ধুয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে হাল্কা ভাবে মুছে নিতে হবে।
পড়নে অলঙ্কার বা ঘড়ি কিংবা তাগা, তাবিজ থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। নতুনবা এগুলো রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
সাপে কামড়ালে যে ভুলগুলো করা উচিত নয়
- সাপে কাটা ব্যক্তিকে ওঝার কাছে নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।
- আক্রান্ত অঙ্গে কোনও ধরণের ভেষজ ওষুধ, উদ্ভিদের বীজ, লালা, গোবর, কাদা, বা পাথর লাগানো যাবে না।
- অনেকেই মনে করে থাকেন যে, আক্রান্ত স্থানে মুখ দিয়ে টেনে বিষ বের করলে রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সাপের বিষ আসলে লসিকা ও রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, যা এই পদ্ধতিতে বের করা অসম্ভব। এছাড়া আক্রান্ত স্থানে যিনি মুখ দিচ্ছেন, তার জন্যও বিষয়টি ক্ষতিকর।
- কামড়ানোর স্থানে অনেকে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে বাঁধেন। কিন্তু এমনটি একদমি উচিত নয়। বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কামড়ানোর স্থান থেকে কিছুটা ওপরের দিকে শক্ত করে বাঁধা হয়। মূলত এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এতে বরং উল্টো রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সঠিক রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন বা নেক্রোসিস-এর উপক্রম হতে পারে।
- দংশনের স্থানে ছুরি বা ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেওয়া যাবে না। বিষ বের করার জন্য অনেকে এমনটি করেন। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- ব্যথা দূর করতে মোটেই অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
- কোনও ধরণের রাসায়নিক পদার্থ লাগানো বা তা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দেওয়া ঠিক নয়।
- অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার বা ঢোক গিলতে কিংবা কথা বলতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি নাসিক কণ্ঠস্বর, বমি, বা অতিরিক্ত লালা নিঃসরণের মত ঘটনা ঘটে। এগুলোর প্রতিকার হিসেবে তাকে কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টা করা হয়। এই কাজটি একদমি অনুচিত।
শেষাংশ
সাপে কাটা ব্যক্তিকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিকভাবে এই করণীয়গুলো যথেষ্ট কার্যকর। সাপের বিষ বের করার বা দংশনের ব্যথা উপশমে বিভিন্ন ভুল ধারণাগুলো সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এগুলো পরিহার করে ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আক্রান্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া না করা এবং অতিরিক্ত চাপ প্রশমনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে দংশিত স্থান জীবাণুমুক্ত করা একটি উৎকৃষ্ট উপায়। সর্বপরি, চিকিৎসা সংক্রান্ত এই প্রাথমিক জ্ঞান যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার আত্মবিঃশ্বাস যোগায়।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ শতাধিকের বেশি।
জানা গেছে, প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে।
বিশেষ করে বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। বরগুনা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদেরও চাপ বেড়ে গেছে। অনেক হাসপাতালে রোগীর বেড ও জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম দুসপ্তাহেই প্রায় ৫০০ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই শহর এলাকার বাসিন্দা হলেও গ্রামীণ অঞ্চলেও আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকা বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে প্রতিদিন যে হারে রোগী আসছে, তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের বেড সংকট, স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।’
তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের মশার কামড়ে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় হাসপাতাল চত্বরেও মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছি। এবং হাসপাতালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের সেচ্ছাসেবকরা জনসচেতনা মূলক মাইকিং ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগ জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে না পারলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকেও মশক নিধনে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
তবে বরগুনা পৌরসভার অনেক নাগরিক অভিযোগ করছেন, পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। অনেক এলাকায় এখনো মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি ও পারিবারিক সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রতিদিন ঘরের আশপাশের জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, ড্রাম, কনটেইনার, এসি ট্রে ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। এছাড়া দিনে ও রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার ও মশা নিধনের স্প্রে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৫০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। হাসপাতালের পুরাতন ভবনে এই ওয়ার্ডটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সেবা দিতে প্রস্তুত হবে বলে আশা করছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।
এর আগে মেয়র শাহাদাতের নেতৃত্বে এক সভার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালও করোনা রোগীদের সেবায় বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গতকাল মঙ্গলবার পরিদর্শনকালে মেয়র হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান এবং সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। এরপর মেয়র মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২০২৫ (২০ তম ব্যাচ) শিক্ষাবর্ষের এম.বি.বি.এস কোর্সের অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীম কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এস, এম, মোরশেদ হোসাইন, ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল। মান্নান রানা, ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোঃ সান্না উল্লাহ, ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার জনাব তারিকুল ইসলাম তানভীর, ইঞ্জিঃ মো. জাবেদ আবছার চৌধুরী এবং ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কলেজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ.এস.এম. মোস্তাক আহমেদ, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক এবং পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. এ.কে.এম. আশরাফুল করিম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফেজ-১ এর কো-অর্ডিনেটর (ভারপ্রাপ্ত) এবং বায়েকেমিষ্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জেসমীন আবেদীন, ফেইজ-২ এর কো-অর্ডিনেটর এবং ফার্মাকোলজি ও থেরাপিউটিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রোজিনা হক, ফেইজ-৩ এর কো-অর্ডিনেটর (নতুন কারিকুলাম) ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোঃ জালাল উদ্দিন এবং ফেজ-৪ এর কো-অর্ডিনেটর এবং নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। অত্র মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. অনুপম বড়ুয়া মেডিকেল কলেজের ইতিহাস, অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা, শিক্ষার্থীদের পেশাগত পরীক্ষার ফলাফল, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের পরিচিতি এবং ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এম.বি.বি.এস কোর্স কারিকুলাম-২০২১ এর উপর সংক্ষিপ্তভাবে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য তুলে ধরেন। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে পারফরমেন্স বিবেচনা করে ‘বেস্ট ডাক্তার’ হিসাবে নির্বাচিত ডা. অরুনিমা বড়ুয়াকে ‘এস এন্ড এফ করিম ট্রাস্ট’ এর পক্ষ থেকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন যে, বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির কার্যক্রম শীর্ষে রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের আওয়তায় ‘চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার হাসপাতাল এবং রিচার্স সেন্টার’ রয়েছে, যা এক অনন্য উদ্যোগ।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় সম্মিলিতভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে করোনার নতুন অ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার কমানো এবং প্রতিরোধের উপরেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচতে সবার সচেতনতা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি মানবিক চিকিৎসক হওয়ার জন্য তিনি ভর্তিকৃত নতুন শিক্ষার্থীদের পরামর্শ প্রদান করেন।
অত্র মেডিকেল কলেজ এর বায়েকিমিস্ট্র বিভাগের প্রভাষক ডা. জেরিন তাসনিম এবং এনাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. সাদ উল্লাহ চৌধুরীর প্রাণবন্ধ উপস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ প্রতিষ্ঠানের প্রি-ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল বিভাগ সমূহের অধ্যাপকসহ বিভাগীয় প্রধানরা।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো ৬২ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুই জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয় জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) এক জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) এক জন এবং সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুই জন রয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট ৪ হাজার ৪১৬ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
চলতি বছরের এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৫ জন। এরমধ্যে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন মারা গেছেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মারা যান ৫৭৫ জন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।
রোগীদের সুবিধার্থে ২৯ মার্চ ও ২ এপ্রিল খোলা থাকবে বিএমইউর বহির্বিভাগ।
এ দুই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই বিএমইউ হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে।
হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে।
বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে শুক্রবার এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে ২৯ মার্চ শনিবার থেকে ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্রাচ, লাঠি কিংবা বাঁশের সাহায্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্নভাবে পা হারানো ১০ ব্যক্তি। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে এ ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’।
স্বপ্ন নিয়ের উদ্যোগে গত ২০ মার্চ ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত কৃত্রিম পা, হাত ও ব্রেইস সংযোজন কেন্দ্র ইজি লাইফ ফর বাংলাদেশে ১০ জনের কৃত্রিম পা সংযোজনের কার্মক্রম শুরু হয়।
পা সংযোজন ও সাত দিন প্রশিক্ষণ শেষে বুধবার এ ১০ জনের কৃত্রিম পা প্রদান করা হয়।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন স্বপ্ন নিয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূরুস সাবা, ইজি লাইফ ফর বাংলাদেশের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, স্বপ্ন নিয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান, পরিচালক (অপারেশন) ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) মীর তানভীর আহমেদ, পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট) অ্যাডভোকেট তসলিম, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আমিনুল ইসলাম আরিফ, সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) ইলিয়াস হোসেন, সহকারী পরিচালক (আইটি) ইফতেখার হৃদয় ও সদস্য জীবন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।
কৃত্রিম পা লাগানোর প্রসঙ্গে “স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, ‘আমরা প্রায়ই আমাদের চারপাশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় মানুষ দেখে থাকি। আমরা স্বপ্ন নিয়ের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় এর আগে ১১৭ জনের কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিয়েছি। আমাদের সকলের যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এ সকল মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।
‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত অসহায় ও গরিব মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আসার পাশাপাশি যেন গতির সঞ্চার হয় এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবন যাপন আরো সহজ ও সুন্দর হয়, সে লক্ষ্যেই স্বপ্ন নিয়ে এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে যারা আমাদেরকে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য