সাধারণত চাঁদরাতেই ইদের রান্নাবান্না শুরু হয়ে যায়। ঈদের দিনের কাজগুলো যদি আগের দিন কিছুটা কমিয়ে ফেলা যায়, সেদিনটা একটু হালকা থাকা যায়। গুছিয়ে কাজগুলো করতে পারলে খুব সহজেই আপনার রান্নাঘর চলে আসবে হাতের মুঠোয়। ঈদের দিনের জন্য আপনার রান্নাঘরটি কীভাবে সাজাবেন, জেনে নেই।
সবার প্রথমে জরুরী আপনি কয়টি আইটেম রান্না করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করা। যেমন কয়টি মিষ্টি আইটেম, কয়টি ঝাল, টক বা সালাদ আইটেম।
যে খাবারগুলো তৈরি করতে বেশি সময় লাগবে এবং রেফ্রিজারেটরে রাখলে স্বাদ নষ্ট হবেনা, সেগুলোর একটা তালিকা প্রস্তুত করে নিন ঈদের আগের রাতেই। আর যেগুলো তাৎক্ষণিক পরিবেশন করতে সেগুলো ঈদের দিনের জন্য রেখে দিন। যেমন পোলাও, সালাদ, জুসজাতী, ফ্রুট কাস্টার্ড বা ফল দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার হতে পারে।
অতিথি আপ্যায়ণের জন্য শোকেস থেকে বিভিন্ন ডিশ, সব ধরনের চামচ, প্লেট, পিরিচ, পানীয় বা জুস খাবার আলাদা গ্লাস ও ন্যাপকিন জাতীয় সব প্রয়োজনীয় জিনিস ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রেখে দিনে। চুলা থেকে দূরে হাতের কাছেই কোনো জায়গায় ঢেকে রেখে দিলে ভলো। এতে খাবার পরিবেশনের সময় সব সহজে পেয়ে যাবেন।
হাতের কাছাকাছি কয়েকটা পরিষ্কার পুরোনো কাপড় বা ছোট তোয়ালে রাখতে পারেন। এতে বারবার হাত মোছা, খাবার পরিবেশন করে ধুয়ে সহজে মুছে আবার পরিবেশন করতে পারবেন। তা ছাড়া রান্নাঘরের সম্মুখে অবশ্যই নরম পাপশ বা তোয়ালে রেখে দিতে পারেন। এতে পা বা স্যান্ডেল মুছে বাইরে গেলে রান্নাঘরের চিটচিটে ভাব অন্য ঘরে লাগবে না।
ঈদের দিন ভাজাপোড়া করার মতো কোনো পদ থাকলে তা সকাল সকাল শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুন। কারণ, এতে ঘর গরম হয়ে যায় অথবা ধোঁয়াটে হয়ে যায়। সেগুলো যে ডিশে পরিবেশন করবেন তা আলাদা করে রাখুন এবং অবশ্যই শুকনো পাত্র ব্যবহার করুন। তা না হলে মুচমুচে ভাব থাকবে না।
ঈদের আগের রাতে যেসব ডিশ তৈরি করবেন, সেগুলো ওভেনপ্রুভ সুন্দর বাটিতে বা বক্সে করে রেফ্রিজারেটরে রেখে দেবেন। যাতে কম সময়ে ওভেনে দেওয়া যায়। এ ছাড়া ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশনযোগ্য খাবারের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবেই।
রান্নাবান্না ও পরিবেশনের কাজ যারা করবেন, তারা অবশ্যই অ্যাপ্রোন ব্যবহার করবেন। এতে কাপড়টি সুরক্ষিত থাকবে এবং তেল মশলা গায়ে লাগবে না। আর হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। এতে হাতও সুরক্ষিত থাকবে। আর হাড়ি পাতিল ও প্লেট গ্লাস আলাদা মাজুনি দিয়ে মাজুন।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের লোনা পানির চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানোর পর দেখা যাচ্ছে, এর তিনটি সুন্দরবনে ফিরে গেলেও একটি বহু পথ ঘুরে এখন বরিশাল বিভাগের জেলা পিরোজপুরের নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি জানতে সম্প্রতি চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় চলে যায়। তবে একটি কুমির বন ছেড়ে মংলা, বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকে পড়েছে।
মাত্র ১১ দিনে প্রায় একশ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিরটি বুধবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালির একটি নদীতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশা, নির্দিষ্ট সময় পর আবারও সুন্দরবনে ফিরে আসবে। তবে আপাতত সে তার নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজছে।
স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে ১৬ মার্চ কুমিরটি অবমুক্ত করা হয়েছিল সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। এরপর এটি মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকেছে।
বন সংরক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা মূলত এই গবেষণার মাধ্যমে তাদের আচরণ ও বসবাসের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করেছি। যে কুমিরটি বনের বাইরে গেছে সে হয়তো তার বসবাসের জন্য সুবিধাজনক জায়গা খুঁজছে।’
কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে, জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।
আইইউসিএন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘সুন্দরবনের কুমির কোথায় কিভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো গবেষণা হয়নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে গবেষণাটি করা হচ্ছে।’
বিশ্বে পাখি, কচ্ছপ, নেকড়েসহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে তাদের আচরণ নিয়ে গবেষণার নজির রয়েছে। তবে বাংলাদেশের কুমির নিয়ে এভাবে গবেষণা এই প্রথম।
গবেষণাটি যেভাবে শুরু
লোনা পানির মোট চারটি কুমিরের গায়ে ১৩ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়। এর মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী কুমির।
এদের মধ্যে পুরুষ কুমির ‘জুলিয়েট’ সুন্দরবনের করমজলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে ছিল। আর স্ত্রী কুমির ‘মধু’কে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া বাকি দুটি কুমির ফাঁদ পেতে ধরা হয় সুন্দরবনের খাল থেকে। এই চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ স্থাপন করে ছেড়ে দেয়া হয় সুন্দরবনের খালে।
আইইউসিএন এই কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে কুমির গবেষক ড. সামারাভিরা ও পল বেরিকে।
আইইউসিএন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘গবেষক টিমের পরিকল্পনা ছিল মোট পাঁচটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানোর। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করি আমরা। তবে শেষ পর্যন্ত একটি বাদে মোট চারটি কুমিরের গায়ে বসানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।’
যেভাবে বসানো হল স্যাটেলাইট ট্যাগ
১৩ মার্চ সুন্দরবনের করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে বাছাই করা হয় জুলিয়েট নামের একটি কুমিরকে। সকালেই সেটির শরীরে ট্যাগ বসানোর কাজ শুরু হয়। ট্যাগ বসানো শেষে কুমিরটিকে ছেড়ে দেয়া হয় সুন্দরবনে করমজলের খালে।
যশোরের চিড়িয়াখানা থেকে আনা ‘মধু’ নামের কুমিরটি আনা হয়েছিলো আগেই। একই দিনে সেটির গায়েও স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে ছাড়া হয় একই খালে।
গবেষক দল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইল্ড লাইফ কম্পিউটার নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এই স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার কিট। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি পানির নিচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
কুমিরের গায়ে বসানো এই ট্রান্সমিটার কিটটির মেয়াদ এক বছর। ব্যাটারিচালিত এই যন্ত্রে থাকে একটি ক্ষুদ্র অ্যান্টেনা, যেটি সরাসরি যুক্ত থাকে স্যাটেলাইটের সঙ্গে। ট্যাগ লাগানোর পরই চালু হয়ে যায় এর লোকেশন অপশন। সেটি প্রতি ঘণ্টার আপডেট তথ্য ম্যাপের মাধ্যমে শেয়ার করে।
গবেষক দলের সদস্য দীপু বলেন, ‘কিটটির মেয়াদ এক বছর হলেও চাইলে তা আরও বাড়ানো যাবে।’
এর পরের দুদিন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের খাল থেকে ফাঁদ পেতে ধরা হয় আরও দু’টি কুমির। সেই দুটির গায়েও একইভাবে বসানো হয় এই স্যাটেলাইট ট্যাগ।
কুমিরের মাথার উপরের অংশে আঁশের মতো স্কেল থাকে। স্যাটেলাইট ট্যাগটি বসানোর জন্য সেখানে ছোট একটি ছিদ্র করতে হয়। ওই ছিদ্রের মধ্যেই বসানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘এই ট্রান্সমিটার চিপ খুব হালকা। ওজন দুই গ্রামেরও কম। এ ধরনের চিপ বসানো হলে তাতে কুমিরের কোনো ক্ষতি হয় না।’
ট্যাগ বসানো কুমিরগুলো এখন কোথায়?
কুমির প্রজনন কেন্দ্রের জুলিয়েট, যশোরের চিড়িয়াখানা থেকে আনা মধু এবং সুন্দরবনের খাল থেকে ফাঁদ পেতে ধরা আরও দুটি কুমিরের গতিপথ পর্যালোচনা করা হচ্ছে অবমুক্ত করার দিন থেকেই।
গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এর মধ্যে তিনটি কুমিরই আছে সুন্দরবনের মধ্যে। কিন্তু একটি কুমির অন্য পথে চলতে শুরু করেছে।
১৬ মার্চ যে কুমিরটিকে সুন্দরবনের জংলা খাল থেকে ধরে গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়, এর পরদিন থেকেই কুমিরটি সুন্দরবন ছেড়ে ছুটছে লোকালয়ের দিকে।
গত দশ দিনে গতিপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কুমিরটি সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্ট থেকে মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলায় পৌঁছেছে।
স্যাটেলাইট তথ্য বলছে, বাকি তিনটি কুমিরই এখন অবস্থান করছে সুন্দরবনের মধ্যে নদী ও খালে। এর মধ্যে জুলিয়েট ও মধু হারবাড়িয়া পয়েন্টের কাছাকাছি নদীতে রয়েছে গত কয়েকদিন ধরে। অন্য কুমিরটিকে করমজল থেকে ধরে ট্যাগ বসিয়ে সেখানকার খালে ছাড়া হয়েছিলো। সেটি এখন আশপাশের খালেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনটি কুমির সুন্দরবনের মধ্যে থাকলেও একটি কেন এত পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ের নদীগুলোতে ঢুকে পড়েছে সেটি নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে গবেষক দলেরও।
গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলছেন, ‘লোনা পানির কুমিরগুলো আসলে কোন দিকে মুভ করে সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য আমাদের এক গবেষণার ধারণাকে স্পষ্ট করছে।’
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিচের দিকে সমুদ্রের কাছে নদীতেও অনেক স্যালাইন থাকে। আবার কোনো কুমির যদি কম লবণাক্ততা পছন্দ করে, সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে আশপাশের নদী-খালগুলোতে যায়।
বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ওই এলাকার পানিতে লবণাক্ততা কম বলে হয়তো কুমিরটি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কিংবা সে যা খায় সেগুলো হয়তো সে বেশি পাচ্ছে। আর সে কারণে কুমিরটি ওদিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
কুমির নিয়ে এ ধরনের গবেষণা কেন?
বর্তমানে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবন এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে লোনা পানির কুমির দেখা যায়। তারপরও এই পরিবেশে লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন খুব একটা হচ্ছে না।
আইইউসিএন-এর গবেষক দলটি বলছে, কুমির নিয়ে এর আগে কিছু গবেষণা হলেও বিশদ কোনো কাজ হয়নি। এ কারণেই কুমিরের অভ্যাস আচরণ জানার জন্য এই গবেষণা করা হচ্ছে।
গবেষক দীপু বলেন, ‘কুমির কোন অঞ্চলে ডিম পাড়ে, কোন অঞ্চলে স্ত্রী-পুরুষের সংখ্যা কেমন সেটা জানার জন্য এমন গবেষণার পরিকল্পনা অনেক দিন আগে থেকেই ছিল। এবার প্রথমবারের মতো তা শুরু হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞ ও বন কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা লবণাক্ততা বাড়া-কমার কারণেও জীবন-জীবিকায় এক ধরণের প্রভাব পড়ছে। হুমকির মুখে পড়ছে এই বন্যপ্রাণীটি। কুমিরগুলোকে বাঁচাতে তাই এ ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জিআইজেড-এর ‘ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অব সুন্দরবন ম্যানগ্রোভস অ্যান্ড দ্য মেরিন প্রোটেকটেড এরিয়া সোয়াস অফ নো গ্রাউন্ড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি চলছে।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘লোনা পানির কুমির নিয়ে এই গবেষণা ফলপ্রসূ হলে মিঠা পানির কুমির নিয়েও এভাবে গবেষণা করা দরকার বলে মনে করি আমরা।’
কেন হুমকির মুখে কুমির?
বাংলাদেশে লোনা পানির কুমির সুন্দরবনের বাইরে দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রাণীর একটি তালিকা তৈরি করে। ‘আইউসিএন রেড লিস্ট’ নামে পরিচিত ওই তালিকায় লোনা পানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশেই লোনা পানির কুমির দেখা যায়। এর বাইরে অন্য যেসব কুমির রয়েছে তার অধিকাংশই চিড়িয়াখানাগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোনা পানির কুমিরের এই প্রজাতির প্রজনন তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তাই কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে কুমির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
কুমির প্রজনন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আজাদ কবীর বলেন, ‘এ পর্যন্ত কয়েক দফায় এই প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া লোনা পানির দুই শতাধিক কুমির ছাড়া হয়েছে সুন্দরবনের খালগুলোতে। এর মধ্যে লোনা পানির কুমির ১০৭টি আর মিষ্টি পানির কুমির আছে মাত্র তিনটি।’
গবেষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পানিতে লবণাক্ততা হ্রাস-বৃদ্ধি, নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরা, নৌযান চলাচল বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে সুন্দরবনে কুমিরের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর মধ্যে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জাল ফেলে মাছ ধরা হয় না। মিঠা পানির কুমিরগুলো জালে ধরা পড়ে। অনেক কুমির এ কারণে হারিয়ে গেছে। একই কারণে হুমকিতে আছে লোনা পানির কুমিরও।’
বর্তমানে সুন্দরবনে কতগুলো কুমির আছে তা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেলেও এ নিয়ে সঠিক কোনো জরিপ বা তথ্য নেই বন বিভাগ কিংবা গবেষকদের কাছে। কেননা বিভিন্ন সময় যে গবেষণা হয়েছে সেসব তথ্যে বেশ গরমিল রয়েছে।
গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলেন, ‘একটি গবেষণা তথ্য বলছে সুন্দরবনে কুমির আছে দেড়শ’ থেকে দুশ’টি। আরেক গবেষণার তথ্য বলছে আড়াইশ’ থেকে তিনশ” লোনা পানির কুমির আছে সুন্দরবনে। সঠিক কোনো তথ্য কারও কাছে নেই।’
এই গবেষক একটি ধারণা দিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনে কুমির বসবাসের পরিবেশ ও ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কুমির অনেক কম রয়েছে।’
তবে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি বলছেন, ‘সুন্দরবনের নদী ও খালে বর্তমানে দুশ’র বেশি কুমির নেই।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পর্যটক বৃদ্ধি, মাছ ধরাসহ নানা কারণে আস্তে আস্তে কুমির যে বন থেকে সরে যাচ্ছে তার একটি উদাহরণ হতে পারে এই গবেষণা। যেমনটি দেখা গেছে স্যাটেলাইটের তথ্যেও।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক পাড়ের চিড়িয়াখানায় ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঘ জো বাইডেন ও বাঘিনী জয়ার সংসারে আসে তিনটি শাবক। আর জন্মের এক মাসেরও বেশি সময় পর নাম পেয়েছে ওরা তিন বোন।
জেলা প্রশাসক ও চিড়িয়াখানার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সোমবার দুপুরে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে গেলে বাঘ শাবকগুলোকে জনসম্মুখে আনা হয়। এ সময় তিনি মেয়ে শাবক তিনটিকে কোলে নিয়ে এগুলোর নামকরণ করেন। তিন বোনের নাম দেয়া হয়- প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী।
জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী ও চট্টগ্রাম লেডিস ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সভাপতি তানজিয়া রহমান, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাত সিদ্দিকী, চিড়িয়াখানার সদস্য সচিব ও এনডিসি হুছাইন মুহাম্মদ, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিন এবং চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শুভ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাঘ শাবক দেখতে চিড়িয়াখানায় গিয়ে জেলা প্রশাসক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দু’টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসেছিলাম। সে দু’টি থেকে বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় তিনটি শাবকসহ মোট বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ৫টি বাঘ ও ১২টি বাঘিনী। এখানে সাদা বাঘও রয়েছে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রাণী বিনিময়ের আওতায় দু’টি বাঘ রংপুর চিড়িয়াখানায় দিয়ে দু’টি জলহস্তী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে সাবেক জেলা প্রশাসক বাঘটির নাম রাখেন জো বাইডেন। বাঘিনী জয়ার জন্ম ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আর বাঘ জো বাইডেনের জন্ম ২০২০ সালে ২৮ ডিসেম্বর।
বাঘ জো বাইডেন জন্মের পরপরই ওর মা থেকে পরিত্যক্ত হলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনায় লালন-পালন করা হয়। এক বছর লালনপালনের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাঁচায় অবস্থিত বাঘ পরিবারের সঙ্গে সোশালাইজেশনের মাধ্যমে সদস্য হএসবে রি-ইন্ট্রোডাকশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো জো বাইডেন নিজের সংসার তৈরি করলো। মানুষের হাতে লালন-পালন হয়ে পুনরায় বাঘ পরিবারের সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে বংশবিস্তার করার চক্র একটি বিরল ঘটনা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে ছিল। সেগুলো আমরা ইতোমধ্যে উদ্ধার করে সরকারের দখলে নিয়ে এসেছি। সেখানে আমরা বার্ডস পার্ক করার পরিকল্পনা করেছি।
‘ইতোমধ্যে কিছু আমেরিকার ফ্ল্যামিংগোর ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। এর বাইরে কিছু পেলিক্যান ও কিছু ম্যাকাও পাখি পাওয়া গেলে চট্টগ্রামে আর্ন্তজাতিক মানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ডস পার্ক করতে পারব আশা করছি।’
সাগর-কন্যা কুয়াকাটার সৈকত জুড়ে আবারও মৃত জেলি ফিশের ছড়াছড়ি। গত পনের দিন ধরে চরগঙ্গামতি পয়েন্টসহ আশপাশের সৈকত এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে মৃত জেলি ফিশে। গত বছরও এখানে একই চিত্র দেখা গেছে এবং তা এই সময়টাতেই।
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা হাজার হাজার জেলি ফিশ সৈকতের বালুতে আটকে মারা যাচ্ছে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের তুলনায় চরগঙ্গামতি পয়েন্টে পর্যটক কম থাকায় এটি কারও বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। তবে এগুলো এভাবে পড়ে থাকলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে জিরো পয়েন্টের আশপাশ এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সৈকত জুড়ে জেলি ফিশের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় জেলেদেরও। কারণ তারা ঠিকভাবে সাগরে জাল ফেলতে পারছেন না। এসব পয়েন্টে জাল ফেললেই জীবিত জেলি ফিশ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। জেলি ফিশে জাল আটকে যাচ্ছে।
মৃত জেলি ফিশগুলোর কোনোটা দেখতে চাঁদের মতো আবার কোনোটা অক্টোপাসের মতো। সৈকত থেকে এগুলোকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকরা।
পটুয়াখালী জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলি ফিশ সমুদ্রের এক আজব প্রাণি। এগুলোকে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসর যুগের প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
‘জেলি ফিশের মাথা, হৃৎপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। সম্পূর্ণ নরম দেহ বা জিলেটিনাস দেহ নিয়ে এটা গঠিত। বিভিন্ন প্রজাতির জেলি ফিশ পৃথিবির সব সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা লেগুনে বিস্তৃত রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে এগুলো টিকে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জেলি ফিশ প্রকৃতপক্ষে লোনা পানির প্রাণি। এরা সাধারণত সাঁতার কাটার উপযুক্ত নয়। কারণ এদের সাঁতার কাটার কোনো দৈহিক শক্তি বা অঙ্গ নেই। তবে উল্লম্বভাবে সামান্য চলাচলে ভার্টিকেল প্রোপালশন সিস্টেম রয়েছে, যার মাধ্যমে এগুলো পানির গভীর থেকে উপরে এবং উপর থেকে গভীরে গমনাগমন করতে পারে। পার্শ্বীয় চলাচল বা সামন্তরাল পথ ভ্রমণে এরা মোটেই উপযুক্ত নয়। তাই জেলি ফিশ পানির স্রোত বা বাতাসের গতির ওপর নির্ভরশীল থাকে।
‘সমুদ্রের স্রোত, জোয়ার বা সামদ্রিক বাতাসের তোড়ে এগুলো সমুদ্র থেকে উপকূলে বা সমুদ্রতীরে বা বিচে এসে আটকে পড়ে। স্রোতের বিপরীতে যাওর অক্ষমতার জন্য এখানেই এদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে।
‘জেলি ফিশ সাধারণত উপযুক্ত লবণাক্ততায় প্রজনন করে থাকে এবং নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে মারা যায়। প্রচুর খাবার, সঠিক অক্সিজেন ও লবণাক্ততা পেলে জেলি ফিশ দ্রুত বংশ বিস্তার করে।
‘কিছু প্রজাতির জেলি ফিশের স্টিং থাকে। আর তাতে ভেনম বা বিষ থাকে; যদিও এই বিষ মৃত্যুঝুঁকির মতো নয়। তবে চুলকানি, লাল বার্ন হয়ে যাওয়া বা কিছু ক্ষেত্রে চোখে লাগলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘কুয়াকাটার বিচে আটকে পড়া এসব জেলি ফিশ সাদা জেলি ফিশ নামে পরিচিত, যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাঙটাটা। এরা মোটেই বিষাক্ত প্রজাতির নয়। এদের স্টিং নেই যেখানে বিষ থাকতে পারে। তবে এই প্রজাতির জেলি ফিশের সংস্পর্শে কিছুটা চুলকানি হতে পারে।’
প্রতি বছর মার্চ মাসের দিকে সাগর উপকূলে জেলি ফিশের বিস্তারের কারণ সম্পর্কে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ থেকে জুলাই মাসে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন ভালো থাকে। পাশাপাশি অনুকূল তাপমাত্রা ও ও লবণাক্ততা প্রজননের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় সাদা জেলি ফিশ এই সময়ে ব্যাপকমাত্রায় প্রজনন করে পপুলেশন ব্লুমস তৈরি করে। পরবর্তীতে সাগরের ঢেউ, স্রোত ও বাতাসের শক্তিতে এগুলো উপকূলভাগে চলে আসতে বাধ্য হয়।
‘এ কারণেই প্রতি বছর মার্চ মাসের শুরুতে বা কিছু ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসব জেলিফিশ উপকূলে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। তবে তাপমাত্রা কমে গেলে বা সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই এগুলো মারা যাবে।’
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, সাগরে অধিক পরিমাণ মাছ আহরণের কারণেও জেলি ফিশের ব্যাপক বংশ বিস্তার হতে পারে। কারণ অনেক সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণি জেলি ফিশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাই সাগরে কিছু প্রয়োজনীয় মাছ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই জেলি ফিশের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের সাগর সীমায় সরকার যে ৬৫ দিনের জন্য মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) তা অব্যাহত থাকলে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে এবং মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জেলি ফিশের সংখ্যা বা ব্লুমস প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ হবে।
পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম কাবা প্রান্তরে ছুটে আসেন। তবে আধুনিক যুগে ইবাদত ও ওমরাহ পালনের পাশাপাশি ছবি তোলারও হিড়িক পড়ে যায় সেখানে।
উদ্ভূত বাস্তবতায় তাওয়াফ করার সময় ছবি তোলার মতো কাজ না করার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবের পবিত্র কাবা শরিফ ও মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানের জেনারেল অথরিটি।
ওমরাহ পালনকারীদের তাওয়াফ (পবিত্র কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ) করার সময় ছবি না তুলে ইবাদতে পূর্ণ মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সূত্র: সৌদি গেজেট।
তাওয়াফ করার সময় ওমরাহ পালনকারীদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘তীর্থযাত্রীদের চিৎকার-শোরগোল না করে নীরবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। পবিত্র কাবার পবিত্রতা ও মর্যাদাকে সম্মান করতে হবে।
‘তাওয়াফ করার সময় হারাম শরিফের শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনুপযুক্ত আচরণ করা উচিত নয়, যেমন- ভিড় করা, ধাক্কাধাক্কি বা ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত থাকা।’
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওমরাহ পালনকারীরা ভিড় না থাকলে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে পারেন এবং তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজও আদায় করতে পারেন।
কর্তৃপক্ষ কাবায় যাওয়া মুসলিমদের এমন কাজগুলো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে যেগুলো অন্যদের বিপদে ফেলতে পারে।
এ ছাড়া মাতাফের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ওমরাহ সঠিক পদ্ধতিতে পালন করতে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:রমজান উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (বিআইআরই)।
গত ১৫ মার্চ এ আলোচনা শুরু হয়, যা চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এটি প্রতি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আলোচনার প্রথম পর্বে ১৫ মার্চ বিকেল পৌনে পাঁচটায় বাংলায় সুফি দর্শন নিয়ে কথা বলেন তাহমিদাল জামি। দ্বিতীয় পর্বে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ও ইহজাগতিকতা নিয়ে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় আলাপ শুরু করেন পারভেজ আলম।
আগামী ২২ মার্চ বেলা তিনটায় আলোচনার তৃতীয় পর্বে বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম নিয়ে কথা বলবেন মুহাম্মদ তানিম নওশাদ। একই বক্তা ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায় চতুর্থ পর্বে বাংলায় খ্রিষ্ট ধর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন।
আলোচনা সিরিজের পঞ্চম পর্বে আগামী ২৯ মার্চ সন্ধ্যা সাতটায় কথা বলবেন অধ্যাপক জিনবোধি মহাথেরো।
সাত পর্বের এ সিরিজের সমাপনী দিন ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্বের আলোচনা হবে। ওই দিন বেলা তিনটা থেকে বাংলার ফকিরি দর্শন নিয়ে আলাপ করবেন অরূপ রাহী। আর সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ ও ইউরোপের ধর্মের পর্যালোচনা বিষয়ে কথা বলবেন গৌতম দাস।
আলাপগুলো দেখা যাবে বিআইআরইর ইউটিউব চ্যানেলের এই লিংকে।
আরও পড়ুন:চৈত্রের গরমে রোজাদারদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো বৃষ্টি। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাজধানীতে ঝেপে বৃষ্টি নেমে আসে। এই বৃষ্টিতে ঘরমুখো মানুষ কিছুটা বিপাকে পড়ে যায়। স্থানে স্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়ে যায় যানজটের তীব্রতা।
তারপরও সবকিছু ছাপিয়ে ধূলার নগরে এমন বৃষ্টি আশীর্বাদ বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী। ঝুম বৃষ্টির কল্যাণে কমে এসেছে শহরের তাপমাত্রা। সবমিলিয়ে চৈত্রের শুরুতে এমন বৃষ্টি বিশেষত রোজাদারদের জন্য বাড়তি স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বাংলা ১৪৩০ সনের শেষ মাস চৈত্রের পঞ্চম দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। তবে তাপমাত্রা ছিল বেশি। গুমোট গরমে তপ্ত ছিল নগরী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘের ঘনঘটা বাড়তে শুরু করে। বেলা আড়াইটা নাগাদ রাজধানীর আকাশ কালো হয়ে আসে। বিকেল পৌনে ৩টার ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় বৃষ্টি।
মুষলধারার এই বৃষ্টি আর বাতাসের ঝাপটায় ছাতা মাথায় দিয়েও রেহাই মেলেনি। ভিজে গেছেন সবাই। মুহূর্তেই রাজপথের স্থানে স্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেটে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অফিস থেকে বাসার উদ্দেশে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকেই।
ভোগান্তিতে পড়েছেন ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানিরাও। রাস্তায় ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে বসা দোকানিদের মধ্যেও লেগে যায় হুড়োহুড়ি।
মেট্রো ট্রেন বন্ধ আধ ঘণ্টা
বৃষ্টির মধ্যে মেট্রো ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কারিগরি জটিলতায় মেট্রো ট্রেন আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ে ঘরমুখো মানুষ।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীতে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পৌনে ৫টার দিকে মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে করে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষ বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে আটকা পড়ে যান। ক্রমে ভিড় জমতে থাকে স্টেশনগুলোতে।
কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মেট্রো ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
এদিকে দেশের মধ্যাঞ্চলে বুধবার থেকে কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বলা হয়েছে, এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় হালকা তাপপ্রবাহ চলছে। মাসের শেষ দিকে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, পশ্চিমা লঘুচাপে মেঘরাশি প্রবেশ করছে দেশের ভৌগোলিক সীমায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই মেঘমালা সরাসরি আসছে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে। তাই সারাদেশে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ২০ মার্চ বুধবার থেকে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা ও রংপুরের কিছু এলাকায় কালবৈশাখী হানা দিতে পারে। এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হতে পারে৷ এদিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকায় ৩৩ দশমিক ৩, রাজশাহীতে ৩৪ দশমিক ৪, রংপুরে ৩৪, ময়মনসিংহে ৩২, সিলেটে ৩৩ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৯, খুলনায় ৩১ এবং বরিশালে ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মাগুরার মহম্মদপুরের বাবুখালি ইউনিয়নের সেলামতপুর গ্রামে বেলের মালা তৈরি করে শতাধিক নারী জীবন-জীবিকা করছেন। নারীদের নিখুঁত হাতের এ মালা দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বাইরেও। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়েতে এ মালা বেশি ব্যবহার হয়।
সেলামতপুর গ্রামে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হিন্দু নারীরা তাদের গৃহস্থালির ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার এ মালা তৈরির কাজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর কিংবা বিকালে কাটা হয় এ মালা।
সেলামতপুর গ্রামের এক নারী মিনতী বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে এ বেলের মালা কাটছি। আমার গৃহস্থলির কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি এ কাজ করি। এ বেলে ২টি মালা তৈরি হয়। ৮০টি মালায় হয় ১ পোন। আর ১ পোন মালার বাজার পাইকেরি দর ৩শ' টাকা। বিভিন্ন স্থানের মালার মহাজনেরা এ মালা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। হিন্দুদের বিয়ে এ মালা বেশি চলে। বিয়েতে বেলের মালা ছাড়া হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন মেলা আসলে আমাদের বেলের মালার চাহিদা হয়। বর্তমান বাজারে বেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা বেল সংগ্রহ করতে পারছি না। কারণ বেল সব মৌসুমে পাওয়া যায় না । এখন বেল পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে বেল সংগ্রহ করছি। তারপর সারা বছর বেলের মালা তৈরি করি। আমার এ কাজে আমার পরিবারের লোকজন সহযোগিতা করে।’
এ গ্রামের মালা কারিগর বিষ্ণু প্রিয়া বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এ মালার কাটার কাজ করছি। আমার নিজের কোন জমি নেই। শুধু বসত বাড়ীটুকু আছে। বর্তমানে বেলের সংকট থাকায় আমরা আগের মতে বেশি পরিমাণে মালা কাটতে পারছি না। প্রথমে বাঁশের একটি ছোট লাঠির মাথায় ছাতার চিকট ছিক লাগানো হয়। লাঠিতে একটি শক্ত সুতালি লাগানো হয় যেত লাঠি ঘোরানোর সময় ছিড়ে না যায়। একটি বেলের ভিতরের অংশতে প্রথমে মালার ছক তৈরি করা হয়। এরপর বেলের উল্টোদিকে আবার লাঠি ঘুরিয়ে কাটা হয় মালা। এক একটি খুব ক্ষুদ্র আকৃতি হয়। এ ক্ষুদ্র মালাগুলো রাখা হয় একটি সরায় । তারপর বাঁশের চিকট কাটির মধ্যে কাটিমের সুতার সাহায্যে ভরা হয় মালা। চিকন কাটি বের করে সুতাটি টান টান করলেই মালা তৈরি হয়ে যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে আমরা বিকাল পর্যন্ত বেলের মালা তৈরি কাজ। দূর-দূরান্তে মালা মহাজনেরা আমাদেও বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এ মালা। ১ পোন মালা ৩শ' থেকে ৪শ' টাকায় আমরা বিক্রি করি। বর্তমানে সব জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা মালার কারিগররা নানা সমস্যার মধ্যে আছি। সরকার থেকে আমরা কোন সহযোগিতা পায় না। তাছাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাদের কোন সহযোগিতা পায় না ফলে অনেক সময় আমাদের পরিবার চলে না।’
এ কাজে অপর কারিগর নয়ন তারা জানান, ৩০ বছর ধরে এ কাজের সাথে তিনি যুক্ত। বর্তমানে মালা তৈরি করে পরিবার চলছে না। মহাজনরা আমাদের নিকট থেকে কম দামে কিনে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা ১ পোন মালা ৩শ' থেকে সব্বোর্চ ৪শ' টাকা দাম পাওয়া যায়। কিন্তু মহাজনরা ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা মালা বিক্রি করছে। ফলে উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ বেলের মালা তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। প্রথমে বেল সংগ্রহ করে তা রোদে শুকাতে হয়। তারপর তৈরি হয় মালা। ভালো বেল হলে একটি বেলের আচা থেকে ৩ থেকে ৪টি মালা তৈরি হয় । এক্ষেত্রে বেলের আচা অবশ্যই শক্ত ও পরিপক্ক হতে হবে।
বেলের মালার মহাজন দেব দুলাল বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। আমরা মহম্মদপুরের সেলামতপুর গ্রাম থেকেই বেশি মালা সংগ্রহ করি। কারণ এ গ্রামের অধিকাংশ ঘরে ঘরেই মালা তৈরি হয়। ১ পোন মালা আমরা ৩শ' থেকে টাকায় সংগ্রহ করি। মালার মান ভালো হলে ৪শ' টাকাও কেনা হয়। এ মালা আমরা বিভিন্ন মেলায়, কির্তন উৎসব ও বিয়েতে বিক্রি করি। তাছাড়া বেলের মালা পাশ্ববর্তী ফরিদপুর, নড়াইল, রাজবাড়ি, কদমবাড়িসহ ঢাকা-খুলনায় মহাজনদের কাছে বিক্রয় করা হয়। দিন দিন বেলের মালার চাহিদা বাড়ছে। এ শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
মন্তব্য