চা শ্রমিকদের অবহেলিত জীবনে অন্যতম উৎসব রং পরব বা ফাগুয়া উৎসব। এই আয়োজনের আবেদন সীমানা ভেঙে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছে। সময় পরিক্রমায় এটি হয়ে উঠেছে এক মিলনমেলায়।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগান মাঠে শনিবার নানা বয়সি হাজারও নারী-পুরুষ আবির নিয়ে মেতে ওঠে রঙের খেলায়। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে নানা জাতি-গোষ্ঠীর বাস। চা শ্রমিকদের যেমন আছে নিজেদের পৃথক ভাষা, তেমনই আছে পৃথক সংস্কৃতিও। ভাষা ও সংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেন একেকটি দেশ। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে মেতে ওঠেন রঙের উৎসবে।
উৎসবে কেবল রঙের হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ৩০টি পরিবেশনা। পত্রসওরা, নৃত্যযোগী, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাঁড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসঙ্গে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমনই অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও।
ফাগুয়া উৎসবটি ঘন্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল্ উপজলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব।
গেস্ট অফ অনার হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতীয় সহকারী কমিশনার নীরাজ কুমার জায়সওয়াল। দেউন্ডি চা বাগান থেকে আসা প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, ‘শত দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটনের মাঝেও উৎসবের কয়েকটি দিন চা শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দূর-দূরান্তের চা বাগান থেকে মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইওর আসে জামাইসহ।
আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কালিগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, ‘তৃতীয় বারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনককে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরবর্তী বছর আরও বড় পরিসরে ফাগুয়া উৎসব করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘চা বাগানের কৃষ্টি-সংস্কৃতি যেন কোনোভাবে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ফাগুয়া উৎসব যেন বন্ধ না হয় সেজন্য আমরা কিছু সহযোগিতাও করেছি। এই সুন্দর সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব সবার। এটি যেন প্রতি বছর করা যায় সেজন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছি।’
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন চা শ্রমিক সন্তান প্রকাশ ভর ও পিংকি বর্মা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গণবিয়ের আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পাত্রকে অবশ্যই এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হতে হবে। আর উপস্থিত রাখতে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর হল প্রাঙ্গণে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হবে। আয়োজকরা বলছেন, সমাজে বিয়ের বিষয়টিকে সহজ করতে তাদের এই আয়োজন। সেদিন যারা সব শর্ত পূরণ করে বিয়ে করতে চাইবেন তাদের সেদিনের খরচ বহন করবেন হলের অন্য শিক্ষার্থীরা।
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে ধুম পড়ে গেছে পাত্রপাত্রী খোঁজার। তবে এখানেও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের অন্যতম একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘হঠাৎ করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে নিরুৎসাহিত করছি আমরা। বিয়ে জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই আবেগের বশে কেউ প্ররোচিত হবেন না, আশা করছি। তবে কাউকে নিষেধও করছি না আমরা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই গণবিবাহের মূল টার্গেট, ক্যাম্পাসে প্রেমিক যুগলদের সম্পর্কটাকে হালাল এবং সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করা।’
যোগাযোগ করা হলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ, যেন সমাজে বিয়ে বিষয়টিকে আরেকটু সহজ করা হয়। ছেলের চাকরি থাকতেই হবে- এরকম বাধ্যবাধ্যকতা যেন বন্ধ করা হয়।’
এই আয়োজনের পরিকল্পনা কীভাবে এসেছে জানতে চাইলে আল আমিন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের সবাই একটা ট্রমাটাইজ পরিস্থিতি অতিবাহিত করছি। তাই আগামী ২০ তারিখ আমরা একটা ভোজের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে আমাদের হলের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।
‘পরে মাথায় এলো আমাদের হলের অনেক ভাই প্রেম করেন। বিয়ে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে রাখায় অনেকে বিয়ে করতে পারছেন না। তাই গণবিয়ের সিদ্ধান্তটা নেই। তবে পাত্রকে অবশ্যই আমাদের হলের হতে হবে। পাত্রী যে কেউ হতে পারেন। আর অবশ্যই এই বিয়ে হবে দুই পরিবারের অভিভাবকদের অনুমতি এবং উপস্থিতিতে।’
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রথমে আমি আমাদের হলের গ্রুপে পোস্ট দেই। ভালো সাড়া পাওয়ার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে পোস্ট দিয়েছি।’
এখন পর্যন্ত কতজন যুগল আগ্রহ দেখিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য হলের অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আমাদের হলের দুই ভাইয়ের বিয়ে কনফার্ম। ওনারা পারিবারিকভাবে বিয়েটা করবেন আর ঘরোয়াভাবে এটির আয়োজন আমরা হলে করব।’
এদিকে জহুরুল হক হলের এমন আয়োজনের পর হাফসাতুল জান্নাত চৈতী নামের এক শিক্ষার্থী সব পাত্রীকে হাতে মেহেদী লাগিয়ে দেয়া এবং সাজিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০৩৫ সালের মধ্যে উচ্চতর গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে গবেষণা-প্রধান (R-1) ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি জানিয়েছেন, ওই লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান এবং অ্যাকাডেমিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। আর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য তার এই পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন।
‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন।
রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্য, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের সামাজিক দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে হবে। তারুণ্য জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়কে যথাযথভাবে সদ্ব্যবহার করে মেধা ও মননকে শানিত করতে হবে এবং প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত হতে হবে।’
নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তরুণদের আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, ‘শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানী, দক্ষ এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন করে তোলে। তাই শিক্ষার মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। জ্ঞান অর্জনের অন্যতম মাধ্যম উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের একটি লক্ষ্য ট্রানজেকশনাল, অপরটি ট্রান্সফরমেশনাল। প্রথম লক্ষ্যটির ক্ষেত্রে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
‘উচ্চশিক্ষার দ্বিতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শুধু ভালো চাকরি পাওয়া নয়। বরং এক্ষেত্রে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ ঘটে এবং সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে তার মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এবং সে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করে।’
জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, অ্যালামনাই, ব্যবসায়ীসহ সবার সহযোগিতায় গবেষণা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
উপাচার্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কৃতিত্বপূর্ণ নজির নেই।
দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ‘আত্মত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল ও স্বাবলম্বী জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
‘দক্ষতা-ভিত্তিক, আধুনিক, প্রায়োগিক ও জনকল্যাণমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুত করতে চাই। শিক্ষার্থীদের হতাশামুক্ত শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে প্রথম বর্ষের সব অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি অ্যালামনাই ও ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ অতিথিবৃন্দ এই মোড়ক উন্মোচন করেন।
এর আগে উৎসবমুখর পরিবেশে ১০৪তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’।
দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সকাল ১০টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, থিম সং পরিবেশন এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এর আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অ্যালামনাইবৃন্দের অংশগ্রহণে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। উপাচার্য এতে নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন:প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল সোমবার। বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি পালন উপলক্ষে নানামুখী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।
পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ইতিহাস নেই যে সেই বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পূর্ববাংলার মুসলমানদের মাঝে একটি সচেতন মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ নামক আমাদের এই দেশকে জন্ম দিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নির্মাণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। সাংবাদিক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদও তার বইয়ে লিখেছেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অবিচ্ছেদ্য।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ঐতিহাসিক। ১৯৪৮ সালে যখন পাকিস্তানিরা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলো, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই প্রথম প্রতিবাদ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়। এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা প্রধান ভূমিকায় ছিলেন।
এজন্যই হয়তো বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নয়; একটি জনপদের মানুষের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিবর্তন ও উত্থানের ৫০ বছরের ইতিহাস।
এছাড়া স্বাধীনতার পর প্রতিটি গণতান্ত্রিক, মৌলবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সর্বদা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দেশের প্রয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিজ দায়িত্ব হিসেবে কাঁধে তুলে নিয়েছে। যে কোনো সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে দেশ ও জাতি এটিই প্রত্যাশা করে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়ালেও বিগত কয়েক দশক ধরে শিক্ষার্থীদের তীব্র আবাসন সঙ্কট, গেস্টরুম সংস্কৃতি, গবেষণার অপ্রতুলতা এবং সেকেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সেবার কারণে সমালোচনায় জর্জরিত হচ্ছে।
তবে গত বছর অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের দায়িত্ব নেয়ার পর যেন তিনি পরশ পাথর হয়ে এসেছেন। তার আগমনে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া, আশার আলো দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন নির্ধারণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত বার্ষিক অধিবেশনে উপাচার্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে নিজের পরিকল্পনা জানান। তিনি বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন নির্ধারণ করেছি: ‘Create a world-class educational ecosystem that enables individuals to act as dynamic human capital and ethical leaders for a sustainable future.’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন এবং এ সম্পর্কিত মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অ্যাকাডেমিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এবং ফিজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান প্রস্তাব করা হয়েছে। এই দুটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উপাচার্য জানান, একাডেমিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই বিদ্যাপীঠ উচ্চতর গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে, যা কার্নেগির শ্রেণিবিভাজন অনুযায়ী R2 বিশ্ববিদ্যালয়। এই ধারাবাহিকতায় ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি রূপান্তরিত হবে গবেষণা-প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা কার্নেগির বিভাজনে R1 বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থান R3 বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য, অর্থাৎ গবেষণা থেকেও পাঠদানকে এখানে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত একাডেমিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থী-সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হবে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কিছু নতুন বিভাগও খোলা হবে।
শুভেচ্ছা
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। পাশাপাশি অভিনন্দন জানিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে।
বর্ণাঢ্য কর্মসূচি
বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে পায়রা চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হবেন।
স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল পৌনে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে পায়রা চত্বরে গমন করবেন।
সকাল ১০টায় পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নীলক্ষেত ও ফুলার রোড সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এই সময়কালে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণ এবং রোড ডিভাইডার ও আইল্যান্ডসমূহে সাজ-সজ্জা করা হবে।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাইটশৈলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ-২০১১ এর শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ঈদুল ফিতরের পরদিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল ১১টায় গান-বাজনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে নানা অনুষ্ঠান। দুপুরে ছিল ভুরিভোজের আয়োজন। বিকেলে ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাইটশৈলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম হোসেন। সভাপতিত্ব করেন নবগঠিত বিদ্যালয় পরিচালনা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব উল আলম খান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষিকা রেহেনা জাহান খান, সিনিয়র শিক্ষকমণ্ডলী এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকে।
প্রসঙ্গত, ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের সাইটশৈলা গ্রামে বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। এটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও সময় পরিক্রমায় প্রয়োজনের তাগিদে এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
‘ঈদ কার্ড বানিয়ে খোলা উদ্যানে, শৈশবে ফিরে যাই নব উদ্যমে’ স্লোগান নিয়ে মাগুরায় ঈদ কার্ড তৈরি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় মাগুরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘পরিবর্তে আমরাই’ নামক একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মাগুরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ও মাগুরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার মজুমদার।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শফিক, চিত্রশিল্পী আবুল আজাদ ও মনিরুল ইসলাম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। এ প্রতিযোগিতায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষও অংশগ্রহণ করেন।
‘পরিবর্তে আমরাই’ সংগঠনের পরিচালক নাহিদুল রহমান দুর্জয় বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সপ্তম বার্ষিকীতে এ আয়োজন। মাগুরাতে এ সংগঠন বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ করে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ নানা উৎসবে আমরা সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। মাগুরাতে আমরাই বির্তকের নানা কলাকৌশল শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে থাকি। আগামী দিনে মাগুরায় আরও ভালো কিছু সৃজনশীন কাজ আমরা করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গিয়ে কম হামলার শিকার হতে হয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে। তবে শুক্রবার ছিলো ভিন্ন দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী প্রবেশ করলেও তারা কোনো বাধার মুখে পড়েননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ইফতারে যোগ দিতে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন নির্বিঘ্নে।
এই ইফতার এক ছাদের নিচে এনেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে। ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেই ফেললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই দায়িত্ব ছিলো এ ধরনের আয়োজন করার। আর সেই দায়িত্ব পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। এজন্য সাংবাদিক সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই।’
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা শুরু হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়সহ সব দলমতের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ও বাম সংগঠনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
ইফতার-পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক, সমাজ বিশ্লেষক, রাষ্ট্রচিন্তক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য দেখি। ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ্য করি না। তবে আজ ডুজার আয়োজনে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি।
‘ক্যাম্পাসে সবসময় রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক, এটাই আমরা চাই। যাতে শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ পায়।’
আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজনের জন্য ডুজার সদস্যবৃন্দসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনকে অস্বীকার করি না। মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে কখন ডাকসু নির্বাচন দেয়া যায় তা বিবেচনায় নেয়া হবে।’
অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘এখানে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের সবার উপস্থিতি দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। এটি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকার গণতান্ত্রিক চর্চার উদাহরণ।’
মূল আলোচনায় অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়ন এবং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ও শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের অধিকারও। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভায়োলেন্স অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।’
এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক সংগঠনের নিরাপদ ও অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদানের দাবি জানান। তিনি বলেন, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসুর নির্বাচন যেন অতিসত্বর দেয়া হয়।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিউজ্জামান ফরিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ডুজা সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তরুণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন যারা পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। এর সদস্যরা প্রত্যেকে মুক্তমনা, নিরপেক্ষ, অনুসন্ধানী মনোভাব ধারণ করে সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সফলতা, অর্জন ও নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ড দেশ-জাতির সামনে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে সমাধানের উদ্দেশ্যে যৌক্তিক সমস্যাও তুলে ধরেন। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমরা এক অনন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পাচ্ছি। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দল-মত খুবই কাছাকাছি ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন। এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের খুবই প্রত্যাশিত এক চিত্র। নিঃসন্দেহে এই শিক্ষাঙ্গনকে ঘিরে জাতির যে প্রত্যাশা সেটি আরও বাড়িয়ে দেবে।’
ইফতার-পূর্ব এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান, নীল দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ এবং সাংবাদিক সমিতির সাবেক সদস্য ও নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব নাহিদ হাসানসহ সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি আয়োজন নিষেধের বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৪৯তম আবর্তনের (২০১৯-২০২০ সেশন) শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
গণ-ইফতার কর্মসূচি আয়োজকদের একজন গণিত বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাফায়েত মীর বলেন, ‘দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় আবেগ ইফতার মাহফিল নিষিদ্ধ করার যে দুঃসাহস দেখিয়েছে তারই প্রতিবাদে আজকের এই আয়োজন। যারা অসাম্প্রদায়িক দেশে এমন সাম্প্রদায়িক আচরণ করেছে তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই।’
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে যুগ যুগ ধরে ইফতার পার্টি হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সে রেওয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা তারই প্রতিবাদ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারের আয়োজন করেছি।
‘বিভিন্ন বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে ধর্মীয় আবেগের ওপর হস্তক্ষেপ এদেশের মানুষ কখনোই পরোয়া করে না।’
মন্তব্য