ফাগুন শুরুর মধ্য দিয়ে এসেছে বসন্ত। প্রকৃতিতে লেগেছে রঙ। চারপাশে উৎসবের ছোঁয়া। সেই উৎসবের রঙ লেগেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। দিনটিকে বিশেষ করে রাখতে অনেকে সেজেছেন দেশীয় সাজে। লাল, হলুদ, বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি এবং রঙিন ফুলে সাজিয়েছেন নিজেদের।
মাথায় ফুলের মুকুট ও হাতে ফুল নিয়ে অনেকে হেঁটেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে করে, কেউবা আবার বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল উৎফুল্লতা।
জিরো পয়েন্ট ও শহীদ মিনার চত্বরে ফুলের পসরা সাজিয়ে রং-বেরঙের ফুল বিক্রি করতে দেখা গেছে একদল শিক্ষার্থীদের। ভিড়ও ছিল ভালো। মেহেদি পরানোর স্টল ছিল বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে। ছিল পিঠা-পুলির দোকানও।
বসন্তবরণ উপলক্ষে মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সেখানে সংগীত, লোকসংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, গম্ভীরাসহ নানা পরিবেশনা করেন উদীচীর সদস্যরা। সংগীত বিভাগের আয়োজনে কলা অনুষদের সামনে হয় বসন্তের অনুষ্ঠান। সেখানে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘ঋতুরাজ বসন্ত ক্যাম্পাসে উৎসব নিয়ে এসেছে। চারদিকে প্রাণের ঝংকার, আনন্দের সুবাতাস। ক্যাম্পাসের নানা আয়োজন দিনটিকে সুন্দর করেছে।’
সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন আক্তার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এসে ভালো লাগছে। আমরা বন্ধুরা মিলে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেছি, ছবি তুলেছি। বসন্তের রঙ সবার জীবন রাঙিয়ে তুলুক।’
আরও পড়ুন:আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা সাড়ম্বরে উদযাপন করছে।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ প্রজ্বালন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাতফেরি, সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া মানবজাতির সর্বাঙ্গীন শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ এই অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধিপ্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ- এই স্মৃতিবিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন বুদ্ধ ভক্তরা।
গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ- এই ত্রিস্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে পরিচিত।
শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘‘মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত হানাহানি রোধ এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ বির্নিমাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। আশা করি, তারা গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন।’
বৌদ্ধ ধর্মমতে, আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা।
আরও পড়ুন:‘প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা ও ভাব-বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি।’
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে চলমান ‘জামাই মেলা’য় কথাগুলো বলছিলেন সুকুমার সাহা ও প্রদীপ সাহা।
রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। একদিকে ঈদের আনন্দ অপরদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে। এই আয়োজন ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
মেলাটি জামাই মেলা নামেই পরিচিত। রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারেজ মিয়া বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে এলাকার মেয়ে জামাতারা শ্বশুরালয়ে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসেন এবং কেনাকাটা করেন। আর মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতিবছরই জমে ওঠে। এটি জেলার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মেয়ে জামাতারা শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের জামাইয়েরা।
এছাড়া মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ে জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। তিন দিনের এই মেলায় রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক দোকান বসেছে মেলায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দোকানও আছে। এছাড়া মেলায় রয়েছে একাধিক ফার্নিচারের দোকান। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে-মেয়েরাও মেলা উপভোগ করছে।
রসুলপুরের কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘জামাই মেলার বয়স দেড়শ’ বছরের মতো হবে। এ এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই এই মেলা একটি বড় উৎসবের উপলক্ষ।
‘ব্রিটিশ আমলে এটি বৈশাখী মেলা হিসেবে শুরু হলেও এখন এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলা সামনে রেখে রসুলপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোর বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। এছাড়া রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হয়েছে। এতে করে মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক ও সুন্দর থাকে।’
পার্শ্ববর্তী বড় বাসালিয়া গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এমনিতে রডমিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর ধরে আকড়ি বিক্রি করি। বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে।’
অপর ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম বলেন, ‘এটি টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুর থেকেই নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করছে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমাদের বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।’
মেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসেম বলেন, ‘মেলায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে। এখানে মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি বিক্রি হয়। মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে।’
ইফতেখার রায়হান, গাজীপুর
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ বছর অনেকটাই যানজটমুক্ত পরিবেশে গাজীপুর পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে পেরেছেন উত্তরবঙ্গগামী লাখ লাখ যাত্রী। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা নেয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। তাদের সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন হয়েছে ঈদযাত্রায়।
জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুর বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম উৎপাদন কেন্দ্র। দেশের অধিকাংশ গার্মেন্টস, ওষুধ কারখানা ও অন্যান্য উল্লেখ্যযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মধ্যে। সে লক্ষ্যে এখানে রয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ লোকের বাস। তাদেরকে কাঙ্ক্ষিত নাগরিক ও পুলিশি সেবা প্রদানে আমরা নিরলস কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ট্রাফিক বিভাগ। তারা নিয়মিত জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং অসংখ্য শাখা সড়কে সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করে।
‘মেট্রোপলিটন এলাকার টঙ্গী ব্রিজ থেকে রাজেন্দ্রপুর অংশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতি দিন গড়ে ৫০-৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও অন্যান্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে চব্বিশ ঘণ্টা নিরবচ্ছিনভাবে বিপুলসংখ্যক গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন চলাচল করে।
‘যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনয়নে জিএমপি ট্রাফিক বিভাগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান নির্মাণ কাজ বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এবং উলুখোলা থেকে মিরের বাজার, ভোগড়া বাইপাস হয়ে জিরানী বাজার পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার।’
জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হলেও বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। চলমান নির্মাণ কাজের জন্য স্টেশনকেন্দ্রিক রাস্তার প্রশস্ততা হ্রাস, খানা-খন্দের সৃষ্টি, রোড ডিভাইডার না থাকা, বর্ষাকালে ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় নিচু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ধীরগতি ও যানজট দুঃসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়।
‘তদুপরি সড়ক যানজটমুক্ত করতে এবং শৃঙ্খলা আনয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সবার চেষ্টায় ঘরমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কাজ করছি আমরা।’
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক মিন্নত আলী বলেন, ‘বিগত ৭-৮ বছর ধরে ঈদযাত্রায় ভয়াবহ দুর্ভোগ হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এবারই যানজটমুক্ত পরিবেশে গাজীপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতে পেরেছি। এতে যাত্রী এবং পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সবাই খুশি।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামিউল আলম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘চাইলেই যানজটমুক্ত মহাসড়ক সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছে জিএমপি।’
জিএমপি অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে মারুফ হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘মহাখালী থেকে মাওনা মাত্র ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে এসেছি। গত কোরবানির ঈদে যেখানে সময় লেগেছিল প্রায় ৫ ঘণ্টা।’
গাজীপুর থেকে প্রতিদিন ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এ বছর পবিত্র রমজান মাসে যানজটমুক্ত পরিবেশে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পেরেছি। কয়েক বছর আগে তা কল্পনাও করা যেত না। রাস্তায় বিপুলসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।’
জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঈদের সময় জিএমপি ট্রাফিক এরিয়া দেশের অন্যতম ব্যস্ত ইউনিটে পরিণত হয়। এবার ঈদযাত্রায় জিএমপি এরিয়ায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং মহাসড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ছিল ট্রাফিক বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।’
আরও পড়ুন:ঈদের দিন দেশের ৮ বিভাগেই অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এমনকি পরবর্তী তিনদিনও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে শুক্রবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সিলেটে, ২০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া আগামী তিনদিনে সারা দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। সে সঙ্গে রাতের তাপমাত্রাও কমতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। ঢাকাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন সারা দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আমরা জানাচ্ছি। তবে এই বৃষ্টি টানা সব জায়গায় হবে এমনটা আশা করা হচ্ছে না। থেমে থেমে কোথাও কোথাও হতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বাড়তি অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে, যার বাড়তি অংশ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে হযরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহে সকাল ৮টায়। তবে বৃষ্টির মতো কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একই সময়ে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে হযরত শাহ মখদুম (রহ.) দরগা জামে মসজিদে। আর সে ক্ষেত্রে মানুষ বেশি হলে ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে দরগা মসজিদে পর পর ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মখদুম (রহ.) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি নিজেই কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন মহানগরীর হেতমখাঁ বড় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা ইয়াকুব আলী এবং রাজশাহী শাহ মখদুম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ।
এদিকে রাজশাহীতে ঈদের দ্বিতীয় প্রধান জামাতও অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় মহানগর ঈদগাহে (টিকাপাড়া)। বৃষ্টি হলে একই সময়ে পাশেই থাকা টিকাপাড়া মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সকাল ৮টায় মহানগরীর তৃতীয় বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সাহেববাজার বড় মসজিদ সংলগ্ন সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে। এখানে প্রধান সড়কের ওপর একটিই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় জানিয়ে দেয়া হয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা রাজশাহী জেলা প্রশাসন এবারও ঈদের নামাজের সময়সূচি নির্ধারণ করে দেয়নি। সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটি আলোচনা করে নিজ নিজ ঈদগাহের ঈদ জামাতের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। তারা তাদের সুবিধামতো নামাজের সময় নির্ধারণ করবে এবং মাইকিং করে জানিয়ে দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যেই বেশিরভাগ মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে শুক্রবার বাংলাদেশেও সহস্রাধিক গ্রামে ঈদ উৎসব উদযাপন করতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা।
একই দিন চট্টগ্রাম, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
আড়াই শ’ বছর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখীল গ্রামে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া চিশতিয়ার বুজুর্গ হযরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান জাহাঁগিরির (র.) ফতোয়া অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ পালন করেন অনুসারীরা। শুধু ঈদ নয়, রোজাসহ সব ধর্মীয় আচার-উৎসবও একই নিয়ম ধরে পালন করেন তারা৷
মাওলানা মোখলেছুর রহমান জাহাঁগিরির আওলাদ মাওলানা হযরত শাহ সূফি সৈয়্যদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘২২ মার্চ নাইজেরিয়ায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদের ভিত্তিতে সৌদি আরবসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমরাও রোজা শুরু করেছি। বাংলাদেশে প্রথম রমজান শুরু হয় তার পরের দিন।
‘বিশ্বে কেয়ামত হবে মহরমের ১০ তারিখ শুক্রবার। হয়তো তখন কোথাও সকাল, কোথাও দুপুর, কোথাও বিকাল বা রাত। কিন্তু সারাবিশ্বে কোথাও মহরমের ১০ তারিখ কোথাও ১১ তারিখ হবে না। হানাফী মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা ও ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করার কথা।’
শুক্রবার ঈদ উৎসব পালন নিয়ে চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার বাসিন্দা ও সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ সবকিছু সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পালন করি। আমাদের ঈদের প্রস্তুতি আরও কয়েকদিন আগে থেকেই নেয়া হচ্ছে। তাই সৌদিতে চাঁদ দেখার বিষয়ে দেরিতে জানা গেলেও কাল আমরা ঈদ উৎসব পালন করব ইনশাআল্লাহ।’
মির্জাখীল দরবার শরিফ সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টায় চন্দনাইশের জাহাঁগিরিয়া শাহ সূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের ঈদগাহ মাঠে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দরবার শরিফের পির মাওলানা হযরত শাহ সূফি ছৈয়দ মোহাম্মদ আলী ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন।
শুক্রবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের পশ্চিম এলাহাবাদ, উত্তর কাঞ্চন নগর, জুনিগোনা, আব্বাসপাড়া, মাঝের পাড়া, স্টেশন, দিঘির পাড়, কেন্দুয়ারপাড়া, কেওয়া, মোহাম্মদপুর, হারালা, সাতবাড়িয়া, উত্তর হাশিমপুর, সৈয়দাবাদ, খুনিয়ারপাড়া, বাঁশখালীর জলদী, গুনাগড়ি, কালিপুর, গন্ডামারার মিরিঞ্জিরিতলা, সনুয়া, সাধনপুর, আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ, বাথুয়া, বারখাইন; বোয়ালখালীর চরনদ্বীপ, খরণদ্বীপ; লোহাগড়ার বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, চুনতি, পুটিবিলা, উত্তর সুখছড়ি, আধুনগর; সাতকানিয়ার মির্জাখীল, বাংলাবাজার, মাইশামুড়া, খোয়াছপাড়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, গাঠিয়াডাঙ্গা, পুরানগর, মালেয়াবাদ গ্রামসহ সীতাকুন্ড, সন্দীপ, মীরেশ্বরাই, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, উখিয়া, বান্দরবান, আলী কদম, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, কুতুবপুর, ফেনী, বরিশাল সিটি করপোরেশন, বাবুগঞ্জ, হিঙ্গলা, মেহেন্দিগঞ্জ, বন্দর, সাহেবের হাট, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, বাউফল, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও বরগুনার সহস্রাধিক গ্রামের বাসিন্দা পৃথক পৃথক ঈদের জামাতে শামিল হবেন।
আরও পড়ুন:ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। করোনা মহামারির সময়টা বাদ দিলে ঈদের আগের এই সময়টাতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থাকে লোকারণ্য। মানুষের চাপে পা ফেলাই দায় হয়ে পড়ে। সেখানে এখন অনেকটাই সুনসান নীরবতা।
ভিড়ে-ভিড়াক্কার পরিস্থিতিতে ক্রেতার চাপ সামলানোর ব্যস্ততা নেই। একরকম অলস সময় কাটাচ্ছেন দোকানের মালিক-কর্মচারীরা। রাতে কিছুটা বেচা-বিক্রি হলেও দিনে দেখা মিলছে না ক্রেতার। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না।
সম্প্রতি নিউমার্কেট লাগোয়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আর তীব্র তাপদাহের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন দোকানিরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে হাতের বাম দিকে একটু এগুতেই দেখা গেল সুনসান নীরবতা। সারি সারি দোকানগুলোর সামনে চেয়ার ফেলে বসে আছেন দোকান কর্মচারীরা।
ঈদবাজারে যেখানে ক্রেতারা বার বার জিজ্ঞাসা করেও বিক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণে হিমশিম খান সেখানে উল্টো চিত্র। সামনে দিয়ে দুই-একজন হেঁটে যেতে দেখলেই চেয়ারে বসে থাকা কর্মচারীরা বলে উঠছেন- ‘কী লাগবে ভাই, আমাদের দোকানে আসেন, এখানে সব আছে।’ নিউবাংলার প্রতিবেদক ললিতা শাড়ীজ নামের একটি দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া সময় দোকান কর্মচারী হাত উঁচু করে বলতে থাকেন- আমাদের দোকানে আসেন ভাই। এখানে সব আছে। কাছে গিয়ে জানা গেলো তার নাম মোহাম্মদ সোহেল।
সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হলো সোহেলের সঙ্গে। বেচা-বিক্রি কেমন হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এবারে একদমই বেচাকেনা নেই ভাই। ঈদের বাজার। অথচ সারা দিনে যা বেচাবিক্রি হয় তা দিয়ে আমাদের ইফতারির খরচও ওঠে না। এই গরমে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তার ওপর আছে আতঙ্ক।
‘আগুন লাগছে নিউ সুপার মার্কেটে। আর মানুষ ভাবছে পুরো নিউমার্কেটে আগুন লাগছে। তাই কাস্টমাররা এবার নিউ মার্কেটে আসছে না। তবে রাতে কিছুটা বেচা-বিক্রি হয়।’
কাপড়ের দোকান শাহি স্টোরের কর্মচারী রিপনের কণ্ঠেও হতাশার সুর। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে এখনও কিছু বেচাবিক্রি হয়নি। কখন হবে তাও জানি না। অথচ আগে এইরকম সময় আপনার সাথে কথা বলারও আমাদের সময় ছিলো না। কথা তো দূরে থাক, দোকানে ভীড়ের কারণে দাঁড়াতেই পারতেন না। অথচ আজ দেখেন পুরো দোকান ফাঁকা। শুধু আমার দোকানই না, আশপাশের সব দোকানেই কাস্টমার নেই। যা কাস্টমার আছে সেগুলো এই ফুটপাত থেকেই কিনে চলে যাবে। দোকানে ঢুকবে না।’
কথা হয় নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা মোহাম্মাদপুরে। এবার ঈদের কেনাকাটা প্রায় সবটাই আমি টোকি স্কয়ার আর কৃষি মার্কেট থেকে করে ফেলেছি। আজকে আমার আজিমপুরে একটু কাজ ছিলো। এইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় এখান থেকে একটু ঘুরে যাচ্ছি। যদি মনমতো কিছু পাই কিনবো না হলে কিনব না।’
ঢাকা নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের সময় আমাদের অন্যরকম প্রত্যাশা থাকে। বিশেষ করে রোজার মাসের শেষ দুই সপ্তাহ এই প্রত্যাশা থাকে কয়েক গুণ বেশি। আগে এই সময়ে বিক্রিও হতো অনেক বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছর নানা কারণে বেচা-বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। কয়েক বছর গেলো করোনা। তারপর গত বছর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের কর্মাচারীদের মারামারিতে কমে যায় বেচাকেনা। আর এবার আবহাওয়া গরম আর আগুন সবকিছু থমকে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরম আর আগুন আতঙ্কে মানুষ এই মার্কেটে কম আসছে। তাছাড়া এখন প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই ছোট-বড় মার্কেট হয়ে গেছে। মানুষ সেখান থেকেও কেনাকাটা করছে। তবে দিনে মানুষ কম এলেও রাতে কিছুটা বেচাবিক্রি হচ্ছে।
শুধু নিউমার্কেট নয়, ঈদের সময় চরম ব্যস্ততায় সময় কাটানো গাউসিয়া মার্কেটেও এবার ক্রেতা অনেক কম। বেশিরভাগ দোকানই ফাঁকা। দোকান মালিক-কর্মচারী আড্ডা মেরে সময় কাটাতে দেখা গেছে।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত পাঠান বাজার নামের শাড়ির দোকানের রাব্বি নামে এক কর্মচারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর যদি আমরা সারাদিনে দেড় লাখ টাকা বেচাবিক্রি করতাম এখন সেখানে মাত্র ১০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছি।’
বাতায়ন শাড়ি নামের দোকানের কর্মচারী সানা দেওয়ান বলেন, ‘এখন আমরা আপনারে ডেকে গল্প করছি আর আগে আপনি ডাকলেও আমরা শুনতাম না কাস্টমারের চাপে। এখন আমরা দর-দাম করি। আর আগে কাস্টমারকে বলতাম- এই দামে বেচবো; আপনি নিলে নেন না নিলে চলে যান। আরেক কাস্টমারকে এখানে আসার সুযোগ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বুঝতেছি না কাস্টমাররা কই যাইতাছে। কেউ তো আর কেনাকাটা বন্ধ করে দেয় নাই। কেনাকাটা তো ঠিকই চলতাছে। আমার ধারণা মানুষ অনলাইন আর নিজের এলাকাতেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলছে। তাই এখানে কাস্টমার কম।’
একইরকম হতাশার কথা বললেন হর্কাস মার্কেট আর চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের ব্যাবসায়ীরা। তাদেরও একই কথা- ‘বেচাবিক্রি নাই।’
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের নিচতলার বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের দোকানি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখনো বউনি করিনি ভাই। গতকালও মাত্র কয়েক হাজার টাকা বেচাবিক্রি করছি। এ রকম চললে এবার চালানও উঠবে না।’
আর হর্কাস মার্কেটের সুমাইয়া বিতানের মালিক ফয়সাল আলম বলেন, ‘এই নিউমার্কেট অঞ্চল নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যার কারণে মানুষ এই এলাকায় কম আসছে। তাই আমাদের বিক্রিও কমে গেছে।’
আর হকার্স মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, এবারে কাপড়ের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হচ্ছে। দামে বনিবনা না হওয়ায় ফিরেও যাচ্ছেন কেউ কেউ।
জাকিয়া সুলতানা নামে একজন গৃহিণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি দোকানেই যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটার দাম বেশি চাচ্ছে। অথচ অনলাইনে এই একই কাপড় কম দামে দেখেছি। তাই না কিনেই ফিরে যাচ্ছি। সন্ধ্যায় মিরপুরে গিয়ে কিনবো।’
কারও সর্বনাশ আবার কারও পৌষ মাস
নিউমার্কেট এলাকার প্রায় সব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বেচাবিক্রি নিয়ে হাতাশ হলেও উল্টো সুর দেখা গেছে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থিত নুরজাহান সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মুখে। সকাল বেলায়ও এই মার্কেটে মোটামুটি ভিড় দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর সেটা আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।
নুরজাহান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ট্রাস্ট পয়েট দোকানের কর্মচারী মোহাম্মাদ রাসেল বলেন, ‘বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। এমনকি গতবারের চেয়েও এবার বেচাকেনা বেশি।’
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই ছিলো ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জির দোকান। যেগুলো পুড়ে গেছে। আর আগুন লাগার কারণে এখন ওই মার্কেট পুরোটাই বন্ধ রয়েছে। আর আমাদের এই দ্বিতীয় তলায় সব দোকানেই ছেলেদের আইটেম। তাই আমাদের কাস্টমাররা তো আসছেই, তার ওপর আবার নিউ সুপার মার্কেটের কাস্টমাররা এখানে আসছে। তাই আমাদের এবারের বেচাবিক্রিও ভালো।’
দ্বিতীয় তলার ব্লু ফ্যাশন নামে আরেক দোকানের মালিক তানভীর আহম্মেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেচাকেনা বাড়ছে। সকালের দিকে একটু কম কাস্টমার হলেও বিকাল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত এখই মার্কেটে পা ফেলার জায়গা থাকে না। আশা করছি গত বারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ বিক্রি হবে।’
পাইকারি মার্কেট বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড আপনাদের ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর বলেন, ‘না, বঙ্গবাজারে আগুনের কোনো প্রভাবই এখানে পড়েনি। কারণ আমাদের এখানকার বেশিরভাগ ব্যাবসায়ী আরো এক মাস আগেই দোকানে মালামাল তুলে ফেলেছিলেন। তাছাড়া আমাদের এখানকার ব্যবসায়ীরা মিরপুর, কেরানীগঞ্জসহ অন্যান্য জায়গা থেকে মোকাম করে।’
একই মার্কেটের নিচতলায় বাচ্চাদের কাপড় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পিয়া ফ্যাশনের মালিক মুন্না বলেন, ‘ঈদের আগে যে কয়দিন গেছে সেটা তো ভালই গেছে। কাল থেকে আরও ভালো যাবে মনে করছি। কারণ কাল থেকে সরকারি ছুটি। যেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে আর সামনে আমাদের ধারণা অনুযায়ী বেচাকেনা হলে গতবারের চেয়েও ভালো ব্যবসা হবে প্রত্যাশা করছি।’
মন্তব্য