কানাডা প্রবাসী লেখক বায়েজিদ গালিবের ‘বাসর রাতের বিড়াল’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন হয়েছে।
অমর একুশে বইমেলার মোড়ক উম্মোচন মঞ্চে শুক্রবার বিকেলে বইটির মোড়ক উম্মোচিত হয়।
বইয়ের লেখক বায়েজিদ গালিব কানাডাপ্রবাসী। মোড়ক উম্মোচনের সময় তিনি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
বই সম্পর্কে বায়েজিদ গালিব বলেন, ‘ বইটিতে পাঁচটি রম্য গল্প আছে। তার মধ্যে একটির গল্পের নাম বাসর রাতের বিড়াল। আমাদের দেশে মধ্যযুগ থেকে চলে আসছে মেয়েদের কীভাবে বউ হিসেবে বশ বা অনুগত করা যায়। এটি নিয়েই রম্য গল্পটি লেখা। এখানে জাপান ভ্রমণেরও একটি রম্য গল্প আছে। আরেকটা প্রেমের গল্প আছে। গল্পটির নাম চারুলতা। চারুলতা খুব চঞ্চল ও সংগ্রামী। তার প্রেম কাহিনী নিয়ে একটা গল্প আছে। এই বইয়ের মোট পৃষ্ঠা ১২০। ৩২নং প্যাভিলিয়ন ভাষাচিত্রে এ বইটি পাওয়া যাবে।’
মোড়ক উম্মোচন শেষে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আসহাদুজ্জামান বলেন, ‘এ বইয়ের লেখক কানাডা প্রবাসী। তিনি কানাডা এবং জাপানের সংস্কৃতি এখানে তুলে ধরেছেন। ভ্রমণকাহীনি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পাই। আশা করি এই বইটি পাঠকমহলে সমাধৃত হবে।’
বাংলা একাডেমির পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘বইটি আমি পড়েছি। এখানে অনেকগুলো গল্প আছে। এই বইটি অন্যধারার লেখা। এখানে জাপানের সংস্কৃতিসহ আরও অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি বইটি আপনাদের ভালো লাগবে।’
লেখকের এক শুভাকাঙ্ক্ষী বলেন, ‘কোনো লেখক যখন কোনো লেখা লেখেন সেটা নতুন রূপ আর ভাষা নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হয়। গালিব ভাইয়ের এই লেখা পৃথিবীতে নতুন এক ধরনের আইডিয়া ও সৌন্দর্যবোধ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আপনারা বইটি পড়ে লেখককে অনুপ্রাণিত করবেন।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ময়নামতি বলেন, ‘জাপান ও লন্ডনে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বইটিতে লিখেছেন। কীভাবে মেয়েরা ঘরে নানারকম বাধা আর প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ করতে পারে সে বিষয়টি বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। আমি বইটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার শতবর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘ধূমকেতু পত্রিকার শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারটি সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। আলোচক হিসবে ছিলেন চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ ও দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক ছড়াকার রাশেদ রউফ।
প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকতা এবং জনমত পরস্পর নির্ভরশীল। জনমত গঠনে সংবাদপত্র সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সত্য সংবাদ প্রকাশ, ন্যায় ও সত্যের জন্য অবিরাম সংগ্রাম করা, শাসক শ্রেণির নির্দেশের কাছে মাথা নত না করা, মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রামের সমর্থনে দাঁড়ানো অত্যাচারিত-উৎপীড়িত মানুষের কণ্ঠে প্রতিরোধের ভাষা দেয়া, গণতন্ত্রের জন্য এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা—এ সবই হচ্ছে সংবাদপত্রের সামাজিক দায়িত্ব। ঔপনিবেশিক শাসনামলে আজ থেকে ১০০ বছর পূর্বে ১৯২২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ধূমকেতু’ সেই দায়িত্বই পালন করছিল।”
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুলের মধ্যে কখনও আপস ভাব ছিল না। তারই বহিঃপ্রকাশ নজরুলের সাংবাদিক সত্তা এবং ধূমকেতুর সম্পাদনা। তিনি ধূমকেতুর সম্পাদকীয়তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ভাব তুলে ধরেছেন। কলমের ধার দিয়ে শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছিলেন।’
শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নজরুলের চেতনা, কাজ নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। নজরুলকে যতই চর্চা করা হবে, ততই নতুন করে জানা যাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, ইতিহাস বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। এসব বিভাগে আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক আছেন। তারা তাদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেবেন।’
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিককে নামাজে জানাজা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় বৃষ্টির মধ্যে কবির নিজ হাতে বাবা-মায়ের নামে গড়া সামসু উদ্দিন-নাহার ট্রাস্টের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কবির শেষ ইচ্ছা অনুসারে কোনো আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন জানানো ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে জানাজায় এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
দেশবরেণ্য এই কবি এক সপ্তাহ আগে ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে অবস্থানকালে রোববার সকালে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশালে নেয়া হয়।
বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশকিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় কবিকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মাদারীপুরের রাজৈরে রাত ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে কবি মোহাম্মদ রফিকের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কবির শেষ বিদায়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত রফিক, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধাসহ কবির বিভিন্ন স্বজন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গুণগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
ষাটের দশকে আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন দেশবরেণ্য কবি মোহাম্মদ রফিক।
কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সবার বড়। তার শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান।
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিলে মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান।
অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শরীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
কবি মোহাম্মদ রফিক ঢাকায় থাকলেও এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পৈতৃক ভিটায় সব ভাইবোন মিলে সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। কবি মোহাম্মদ রফিক সামছউদ্দীন নাহার ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আমৃত্যু ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
১৯৭০ সালে দেশবরেণ্য এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।
মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আজ ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতি বছর বাইশে শ্রাবণ আসে।
বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করছে। খবর বাসসের।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ্য তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।
রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবন কথা’য় কবির মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন, শান্তিনিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না, চিকিৎসা ও সেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই।
৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তিনিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অনেক বছরের স্মৃতি জড়িত কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন এই তার শেষ যাত্রা? যাবার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেছে।
৩০ জুলাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপচার হলো। তার কিছু পূর্বে শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনা জালে হে ছলনাময়ী।’
রবীন্দ্র জীবনী থেকে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকোতে রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন রানী চন্দ লিখে নিতেন।
কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক আগে চৌদ্দই শ্রাবণ। রানী চন্দ সেদিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি।’
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করলেন তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগলো। তিনি জ্ঞান হারালেন। শেষ নিঃশ্বাস পড়ল রাখীপূর্ণিমার দিন, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা বেজে ১০ মিনিট। অমৃত আলোকের নতুন দেশে চলে গেলেন কবি।
আরও পড়ুন:ইম্মরটালিটি, দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিং-এর মতো বিখ্যাত উপন্যাসের লেখক চেক বংশোদ্ভূত মিলান কুন্ডেরা মারা গেছেন।
ফ্রান্সের প্যারিসে মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান মোরাভিয়ান লাইব্রেরির (এমজেডকে) মুখপাত্র আনা ম্রাজোভা।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশের জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি চেকস্লোভাকিয়ার ব্রানোতে ১৯২৯ সালের পয়লা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন।
পরে ১৯৭৫ সালে ফ্রান্সে চলে আসেন। চেকস্লোভাকিয়ায় ১৯৬৮ সালের সোভিয়েত আক্রমণের সমালোচনা করে তিনি রাজনৈতিক তোপের মুখে পড়েন।
মিলান কুন্ডেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। তার মনোভাব ছিল, লেখকরা তাদের কাজের মাধ্যমেই সবার সঙ্গে কথা বলেন।
তার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘দ্য জোক’। ১৯৬৭ সালে এটি প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
ওই লেখায় তিনি কমিউনিস্ট শাসনের নিষ্ঠুর চিত্র তুলে ধরেন। এ উপন্যাসকেই তার নির্বাসিত হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৮৭৬ সালে ফরাসি দৈনিক লে মন্ডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করে তার লেখার ভার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত তাৎপর্য অস্পষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিলান কুন্ডেরা প্রধানত চেক ভাষার লেখক। তবে তিনি ফরাসি ভাষাতেও লিখেছেন।
তার রচনা মধ্যে The Unbearable Lightness of Being, Life Is Elsewhere, Immortality, Ignorance, The Festival of Insignificance অন্যতম।
আরও পড়ুন:যেকোনো মেলাই আনন্দের আতিশয্য নিয়ে আসে। আর বইমেলা হলে তো কথাই নেই।
আমাদের বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা সময়ের দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা। আমরা প্রতি বছর বই নিয়ে ছুটে চলি বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়; ভারতের কলকাতা, আগরতলা, আসামের শিলচর পর্যন্ত আমরা বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে যাই। আবার আটলান্টিকের এ পাড়ে ‘লন্ডন বাংলা বইমেলা’, ওপাড়ে উত্তর আমেরিকার ‘নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা’। ‘টরন্টো বাংলা বইমেলায়’ও যাওয়া হয়।
এবারও ৩২তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আয়োজন করছে মুক্তধরা ফাউন্ডেশন। চার দিনব্যাপী এ বইমেলার উদ্বোধন করবেন জাতিসত্তার কবি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।
প্রকাশক হিসেবে সর্বপ্রথম আমেরিকার ভিসা পাই ২০১০ সালে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে মিল না থাকায় সেই বছর বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি।
জুন/জুলাই মাস এলেই নিউইয়র্কে শুরু হয়ে যায় বইমেলার গুঞ্জন। প্রকাশকরা মেলা শুরু হওয়ার দুই-চার দিন আগে থেকেই পৌঁছে যান নিউইয়র্ক শহরে। জেটল্যাগ কাটিয়ে ঘোরাঘুরি শেষে প্রস্তুতি নেয় মেলায় অংশগ্রহণের। এবারের মেলায় দুই বাংলা থেকে অংশগ্রহণ করবে প্রায় ২৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘বাতিঘর’, ‘বেঙ্গল পাবলিকেশন’, ‘নালন্দা’, ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’, ‘কবি প্রকাশনী’, ‘অনন্যা’, ‘অন্বয় প্রকাশনী’, ‘সাঁকোবাড়ি’ ও ‘কথাপ্রকাশ’।
আগে ছিল দুই দিনের বইমেলা। বইপ্রেমী মানুষের ব্যাপক চাহিদার কারণে এখন ৪ দিনের বইমেলা হয়। ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এই মেলা চলবে।
প্রতিদিন মূল মঞ্চে থাকবে সেমিনার, আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত। ইতোমধ্যে আসা শুরু করেছেন অতিথিরা। আসছেন পশ্চিম বাংলা থেকে বাউল শিল্পী পবন দাস বাউল।
এই আয়োজন উপলক্ষে বিশ্বজিৎ সাহার মুক্তধারার বইয়ের দোকানে থাকছে প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা সভা।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের বইমেলায় অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা একটু ব্যতিক্রম। আমরা যদি অমর একুশে বইমেলা অথবা কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার সঙ্গে তুলনা করি, তবে বাংলা একাডেমির বইমেলার পর নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার অবস্থান।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বইপ্রেমীর প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালোবাসা। বিশেষ করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নবনিযুক্ত সেক্রেটারি জেনারেল বিশ্বজিৎ সাহাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করব না। এবারের বইমেলা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক, এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: প্রকাশক, নালন্দা
আরও পড়ুন:পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর লেখা ‘কিডনিবান্ধব পথ্য’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বইটির প্রকাশনা উৎসব হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শবনম জাহান, এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিসিন সার্ভিস) আরিফ মাহমুদ ও আক্তারুজ্জামান চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসক, শিক্ষক, পুষ্টিবিদ, রন্ধনশিল্পী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী জানান, তার দুই দশকের কর্মজীবনে খুব কাছ থেকে হাজারো কিডনি রোগীর জীবন সংগ্রাম দেখেছেন। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি কিডনি রোগীদের সঠিক পথ্য সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনাগুলো দিয়ে সাজিয়েছেন বইটি।
এটি কিডনি রোগীদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকা তৈরিতে সাহায্য করবে।
পেশাদার দায়িত্বের বাইরেও মানবিক সেবার ব্রত নিয়ে তার লেখা বই কিডনির সঠিক যত্ন ও পরিচর্যায় অনবদ্য অবদান রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
বইটি প্রকাশ করেছে ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশনস।
আরও পড়ুন:মনিরুল ইসলামের ‘পথভোলা পথিকেরা’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আহমেদ শাহরিয়ার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। প্রথম পরিচ্ছেদেই দেখা মেলে নেকড়ের মতো হিংস্র, নিরোর মতো নিষ্ঠুর আবু মোস্তাকিমের মুখোমুখি দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ শাহরিয়ার।
উপন্যাসের গল্প এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে আবু দুজানার সাথে আবু মোস্তাকিমের ব্যক্তিত্বের সংঘাত; হাফেজ আবু দুজানার চারিত্রিক দৃঢ়তার বিপরীতে আবু মোস্তাকিমের চরিত্রের নীতিবর্জিত কঙ্কাল। আবু মোস্তাকিমের সমকামিতাও আবু দুজানার নজর এড়ায় না।
উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে কাগজের ক্যানভাসে শব্দের রংতুলিতে লেখক নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন চরিত্রের মনোজগতের নানা টানাপোড়েন। তিনি কেবল ঘটনার ধারা বর্ণনা করে পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখেননি; বরং প্রতিটি চরিত্রের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থার সাথে ব্যক্তিমনের সংঘাত ও অভিযোজনের চিরকালীন দ্বন্দ্বের দিকটিও তুলে ধরেছেন।
উপন্যাসে বর্ণিত ‘পিওর হার্ট বেকারি’ রেস্তোঁরায় চূড়ান্ত হামলায় অংশ নেয়া পাঁচ তরুণের ব্যক্তি-জীবনের হতাশা, বেদনাও চোখ এড়িয়ে যায় না।
শহীদি মৃত্যুর স্বপ্নে বিভোর কৈশোর উত্তীর্ণ পাঁচ তরুণকে সঙ্গে নিয়ে নেকড়ের পালের মত পায়ে পায়ে রাজধানী ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে তাদের দীক্ষাগুরু। লক্ষ্য, বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় করা ঘটনা ঘটিয়ে দেশে এক নতুন জিহাদের সূচনা করা। তাদের এই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা রুখে দেয়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রস্তুতি নেন আহমেদ শাহরিয়ার ও তার সহকর্মীরা।
দেশি-বিদেশি দোসরদের মদদে ঘৃণা আর জিঘাংসার আগুনে ঝলসে যাওয়া ইসলামি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে কি মোকাবেলা করতে পারবেন আহমেদ শাহরিয়ার? বইয়ের শুরুতেই এই রোমাঞ্চ পাঠকের মনে সঞ্চারিত হয় যা তাকে টেনে নিয়ে যাবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা অবধি।
‘পথ ভোলা পথিকেরা’ উপন্যাসে দানবের বিরুদ্ধে মানবের চিরন্তন সেই লড়াইয়ের গল্পই লেখক বলেছেন সুনিপুণ মুন্সিয়ানায়।
মন্তব্য