গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও আশপাশের এলাকায় দেশের বৃহত্তম জুমার জামাতে অংশ নিয়েছেন লাখ লাখ মুসল্লি।
শুক্রবার বেলা পৌনে ২টার দিকে এ জামাতে অংশ নেন তারা।
কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ এ নামাজে ইমামতি করেন। এর আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে খুতবা পাঠ করেন তিনি।
ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানান, দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজে ১০ লাখের বেশি মুসল্লি অংশ নেন।
জুমার দিন হওয়ায় সকাল থেকেই ঢাকা, সাভার, নরসিংদী, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার মুসল্লিরা নামাজে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।
অনেকেই জুমার নামাজে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান নেন।
দুপুর ১২টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের খোলা জায়গা, অলিগলিসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলিগলিসহ যে যেখানে পেরেছেন, জায়নামাজ, পুরোনো পত্রিকা, হোগলা পাটি, চটের বস্তা বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন।
মুসল্লিদের অনেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও কামারপাড়া সড়কে জামাতবদ্ধ হলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
এর আগে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় পাকিস্তানের মুরব্বি মাওলানা জিয়াউল হকের বয়ানের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বাংলাদেশ ও ভারতের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্যসহ নেতৃস্থানীয়রা ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত নিয়ে বয়ান করেন।
মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়।
আয়োজকরা জানান, বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে।
পরপর দুই বছর ইজতেমা না হওয়ায় এবার সাধারণ মুসল্লিদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশি। অনেকেই মূল শামিয়ানার নিচে স্থান না পেয়ে সড়কের পাশে ফুটপাতে পলিথিন টানিয়ে অবস্থান নেন।
আরও পড়ুন:বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা ও মদিনা রুটে টিকিটের দাম কমিয়েছে।
পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য আগে দু’টি নির্দিষ্ট ফেয়ার ক্লাস বা রিজার্ভেশন বুকিং ডেজিগনেটর (আরবিডি) ব্যবহার করা হতো। এবার ওমরাহ যাত্রীদের টিকিট পাওয়া সহজ করতে চলমান দুটি বুকিং ক্লাসের পরিবর্তে সব বুকিং ক্লাস বা আরবিডি উন্মুক্ত করা হয়েছে। তা সব ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে উন্মুক্ত রয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের সুবাদে এখন ওমরাহ যাত্রীরা সাধারণ যাত্রীদের মতো যে কোনো আরবিডিতে ওমরাহ টিকিট কিনতে পারবেন। আর যেসব ওমরাহ যাত্রী আগে টিকিট কিনবেন তারা সর্বনিম্ন ভাড়ার সুবিধা পাবেন।
এছাড়াও যেসব যাত্রী ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মদিনায় যাবেন তাদের জন্য আকর্ষণীয় মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে।
পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে। কারণ বুধবার বাংলাদেশের আকাশে আরবি ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে হিসাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার।
বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এ অবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. সোমবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হবে।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম, সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মুন্সী জালাল উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আ. রহমান খান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক মো. রুহুল আমিন, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান ও লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলাকারীদের পশু আখ্যা দিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে বিব্রত করার জন্য এক শ্রেণির মতলবি মানুষ মাঠে নেমেছে। এদের প্রতিহত করতে হবে।
‘উপাসনালয়ে যারা হামলা করে, এরা মানুষ নয়; এরা পশু। এদের প্রচলিত আইনে কঠোর শাস্তির বিধান করা হবে।’
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গণে শুক্রবার বিকেলে জন্মাষ্টমী উদযাপন উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন বলে ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আবহমানকাল থেকেই এ দেশে অসাম্প্রদায়িক আবহ বিরাজমান। এটাকে কোনোক্রমেই নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। আমাদের দেশের নানা ধর্মের বৈচিত্র্য রয়েছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য।
‘এই ঐতিহ্যকে আমরা লালন করতে চাই, ধারণ করতে চাই এবং বিশ্ববাসীকে আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।’
ড. খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে স্পষ্ট দলিল আছে, এমন কোনো দেবোত্তর সম্পত্তি যদি কেউ দখল করে থাকে, তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় উচ্ছেদ করা হবে। এ ছাড়া কোনো দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা থাকলে সেটাও দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।’
তিনি মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘সুন্দর কথা বলা সহজ, কিন্তু সুন্দর কাজ করা কঠিন। সুন্দর কথাকে অবশ্যই কাজে পরিণত করতে হবে। আমরা সুন্দর কথা যেমন বলব, তেমনই সুন্দর কাজও করে যাব।
‘আমরা সুন্দর, শান্তিময়, সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়োগ সংক্রান্ত খবরটি সঠিক নয় জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) শুক্রবার বলেছে, কাউকে এখনও খতিব নিয়োগ দেয়া হয়নি।
ইফার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব বা ভারপ্রাপ্ত খতিব নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গোচরীভূত হয়েছে। এরূপ সংবাদটি ভিত্তিহীন ও অসত্য।
‘প্রকৃতপক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কাউকে খতিব বা ভারপ্রাপ্ত খতিব হিসেবে নিয়োগ কিংবা দায়িত্ব দেয়া হয়নি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এরূপ কোনো পত্র বা অফিস আদেশ জারি করা হয়নি।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রকৃত বিষয়টি হলো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন কিছুদিন যাবত মসজিদে না আসায় তার স্থলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও মুহাদ্দিস ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খানকে নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ একটি বিশাল পরিবার। এখানে সরকারের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। সেই দায়িত্ব পালনে সরকার বদ্ধপরিকর।
সোমবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে সবাই নির্ভয়ে তাদের ধর্ম চর্চা করতে পারবে এবং যেখানে কোনো মন্দির পাহারা দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।’
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আগত হিন্দু নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের কাজ হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
‘আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকতে পারে না। আমরা সমান নাগরিক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর।’
হিন্দু নেতারা শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তারা দেশের সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ চেয়েছেন।
হিন্দু নেতারা জানান, তারা দেশের বন্যাকবলিত অংশে জন্মাষ্টমী উদযাপন স্থগিত করেছেন এবং এই অঞ্চলে খাদ্য ও ত্রাণ পাঠিয়েছেন।
পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রশংসা করে হিন্দু নেতারা বলেন, এটি দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এবং সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
মন্দিরের জমিসহ হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তারা।
হিন্দু নেতাদের মধ্যে ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের কাজল দেবনাথ ও মনিন্দ্র কুমার নাথ, ইসকনের চারু চরণ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বাসুদেব ধর ও সন্তোষ শর্মা এবং ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রীতি চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসাতে নিজ বাড়ির মন্দিরে আগুন দিয়েছে একটি হিন্দু পরিবার। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তারা প্রচার করতে থাকে যে ওই মুক্তিযোদ্ধা তাদের মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের অনুসন্ধানে সত্য ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুজনকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে বিনোদপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাজী আলাউদ্দিনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান প্রতিবেশী অসিত কুমারসহ তার লোকজন। অসিতের বাড়িতে নিয়ে একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রেখে বাড়ির উঠোনে থাকা পারিবারিক মন্দিরে খড় দিয়ে আগুন লাগায় অসিতের পরিবারের লোকজন। পরে ধর্মীয় উস্কানির লক্ষ্যে প্রচার করা হয় যে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মন্দির ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
খবর পেয়ে টহলে থাকা ওয়ারেন্ট অফিসার ছায়েম আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর টিম ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে। পরে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসে।
শুক্রবার বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে জুড়ী থানায় মামলা করেন। সন্ধ্যায় এজাহারভুক্ত আসামি বাড়ির মালিক অসিত রুদ্র পাল ও নাদিম আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জুড়ী থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান জানান, বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করে ধর্মীয় উস্কানির লক্ষ্যে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আসামি পক্ষ মন্দির পোড়ানোর মতো একটি স্পর্শকাতর অপরাধ করেছে। মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ‘হিন্দু গণহত্যা’ চলছে এমন অভিযোগ তুলে বাড়ি পোড়ানো, সহিংসতা ও নারীদের সাহায্যের আকুতির ভিডিও অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের পর যে অস্থিরতা শুরু হয়, তাতে চার শতাধিক মানুষ মারা যায়। ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটলে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় তার দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের লক্ষ্য করে সহিংসতা শুরু হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উগ্র ডানপন্থীরা, বিশেষ করে ভারত থেকে, ‘ইসলামি চরমপন্থীরা হিন্দুদের ওপর হামলা করছে’ এমন শিরোনামে সহিংসতার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভিডিও ছড়িয়ে মিথ্যা প্রচার করেছে।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয় যে চট্টগ্রামের একটি মন্দিরে ইসলামপন্থীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তবে বিবিসি খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, নবগ্রহ মন্দিরটি অক্ষত রয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছিল পাশের একটি আওয়ামী লীগ অফিসে। মন্দিরের কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন যে মন্দিরে হামলা হয়নি, যদিও পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল।
এছাড়াও একজন হিন্দু ক্রিকেটারের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা দাবি করা হয়, যা আসলে একজন মুসলিম আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের বাড়ি। এছাড়াও একটি স্কুলে আগুন দেয়া হয়, যার পেছনে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে।
যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশকে আরও উসকে দেয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই ভারত থেকে পরিচালিত বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর কার্যকর আইন প্রয়োগের অভাবে তা আরও তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান বিবিসিকে বলেন, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হিন্দু নিপীড়নের দাবি করে কিছু পোস্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে দাঙ্গার সময় উস্কানিমূলক পোস্ট করার জন্য সমালোচিত ব্রিটিশ উগ্র ডানপন্থী কর্মী স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন যিনি টমি রবিনসন নামে বেশি পরিচিত। তার শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, ইসলামপন্থীরা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে দেখা যায়, ধর্মীয় সহিংসতা নয়; এটি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ছিল। স্থানীয় শিক্ষার্থী এবং বাসিন্দারাও জানিয়েছেন যে হামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এতে হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই জড়িত ছিল।
এই জটিল পরিস্থিতিতে সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়েও ধারণা পরিষ্কার নয় এবং সেগুলো ধর্মীয় আক্রমণ হিসেবেও ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদ ও এএফপির প্রতিবেদনে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাহতের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যাদের রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এদিকে মন্দিরে হামলার মিথ্যা দাবির জবাবে মুসলিম বিক্ষোভকারীরা মন্দির রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। সংঘাত ও সহিংসতা প্রতিহত করতে তারা কাজ করছে।
স্থানীয় বিক্ষোভকারী মইনুল জানান, হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মন্দির রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।
মন্তব্য