স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ প্রতিদিন সকালে হাঁটার চেষ্টা করেন। সকালে হাঁটলে মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে, হাড়ের নানা ব্যথা থেকে শুরু করে অস্থির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিসে ও উচ্চ রক্তচাপে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ক্যালোরি ও মেদ কমাতে তাই হাঁটতে হয়। হাঁটলে মন ভালো থাকে। এমন তথ্য আমাদের মোটামুটি জানা। কিন্তু যদি মাটিতে বা ঘাসে হাঁটা যেত তাহলে উপকার হতো দ্বিগুণ।
শরীরে গতি আনে
নিয়মিত প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটতে পারলে মানবদেহের চালিকার অন্যতম শক্তি ইলেকট্রনের বিস্তার ও কর্মক্ষমতা বাড়ে। এই ইলেকট্রনগুলো পায়ের তলায় নির্দিষ্ট আকু পয়েন্ট এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের মানবদেহের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, যা শরীরে জন্মানো ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে। শরীরের অভ্যন্তরে নানা কারণে ইনফ্লামেশন তৈরি হয়, সেটিকে রোধ করতে আমাদের শরীরে ইলেকট্রনের উপস্থিতি খুবই জরুরি, যা বিভিন্ন প্রদাহের সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পায়ের তলায় থাকে একাধিক সেন্সর নার্ভের সুইচ পয়েন্ট, যা খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভেতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করে। খালি পায়ে হাঁটলেই পায়ের তলার সুইচগুলো অ্যাকটিভ হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যার ফলে সহজেই রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
শরীরে নানা ব্যথা কমায়
আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাপ নিয়ে থাকি, সেটি হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব আমাদের শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যদিও আমাদের মাঝে এটি নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। কিন্তু গবেষণা বলে, খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, শরীরের ভেতরে ভারসাম্য ঠিক থাকে, নানা ধরনের ব্যথা নিয়ে যারা জীবন যাপন করছেন, তারা নিয়মিত খালি পায়ে মাটিতে হাঁটতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরের অভ্যন্তরে আর্থিংয়ের দ্বারা ব্যথা কমানোর হরমোনগুলো সচল হয়ে ওঠে। ফলে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে, শরীরের ব্যথা কমে যায়। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, খালি পায়ে হাঁটলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পেশি ও হাড় মজবুত করতে খালি পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্যে করে। বয়সজনিত কারণে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, ভুল লাইফস্টাইলের কারণে মেমোরি লস হওয়াসহ নানা কারণে স্মৃতিশক্তির ঘাটতিজনিত সমস্যা থাকলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে থাকা নিউরনগুলো সকালে খালি পায়ে হাঁটার ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে । নিউরনগুলো সক্রিয় থাকলে স্বাভাবিকভাবেই বুদ্ধিও বাড়ে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে।
হার্ট ভালো রাখে
যারা নিয়মিত হাঁটতে সাহস করেন না, কিছু দূর হাঁটলেই হাপিয়ে যান, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাদের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্যের কার্ডিও ভাসকুলার উন্নতি ঘটবে। এ সময় ভেনাস রিটার্ন বেড়ে যায়, অর্থাৎ বেশি বেশি করে রক্ত পৌঁছে যেতে শুরু করে হার্টে। সেই সঙ্গে হৃদরোগের আশঙ্কাও কমে।
মানসিক শক্তি বাড়ে
আধুনিক জীবনযাপনে হতাশা একটি বড় দুর্যোগ, সেই থেকে বাঁচতে খালি পায়ে হাঁটলে উদ্বেগ এবং হতাশা দূর হয়। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। তাই মাটির সঙ্গে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্ক যত নিবিড় হবে, ততই শরীরের নানাবিধ তরলের উপাদানের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। খাদ্য থেকে আমরা যেমন ফাইট্রোনিউট্রেন্ট নিয়ে থাকি, তেমনি মাটি থেকে ইলেকট্রন মানসিক শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করে মানসিক অবসাদ কমায়। সেই সঙ্গে ইনসোমেনিয়া প্রতিরোধ করে। যারা অনিদ্রায় ভুগে থাকেন, তারা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য খালি পায়ে হাঁটলে উপকার পাবেন।
এ ছাড়া খালি পায়ে হাঁটলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়তে থাকে খালি পায়ে হাঁটার সঙ্গে চোখের সরাসরি যোগসূত্র আছে। ফলে পায়ের তলায় যত চাপ পড়ে, তাতেই দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। পেশি ও হাড় আরও শক্ত হয়।
প্রতিদিন সকালে খালি পায়ে ১৫ মিনিট ধীরগতিতে হাঁটলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে, যদি হাঁটার মতো জায়গা না থাকে তাহলে ছোট্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেও এই উপকার পাবেন। অনেকের প্রথম দিনে খালি পায়ে হাঁটার কারণে সর্দি জ্বর হতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দু-তিন দিন হাঁটলেই শরীর সহ্য করে নেবে।
লেখক : খাদ্য-পথ্য ও আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ ও প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
আরও পড়ুন:তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী মুরব্বিরা অভিযোগ করেছেন, তাবলিগ জামাতকে বিতর্কিত করতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দান নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কোনো কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পশ্চিমপাশে কামারপাড়ায় এক রেস্তোরাঁয় বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগ জামাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
সাদপন্থী মুরব্বিরা দাবি করেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা ও তাবলিগের যাবতীয় কাজ পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া দরকার।
তারা প্রশাসনের তদারকিতে দু’পক্ষকে প্যান্ডেল তৈরি ও খোলার দায়িত্ব অর্পণসহ ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা সা’দপন্থী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম, অ্যাডভোকেট ইউনুস মিয়া, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মো. সোহেল ও আতাউল্লাহ।
এ বছর বেসরকারিভাবে হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা হবে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (হাব)।
রাজধানীর নয়াপল্টনের হোটেল ভিক্টরিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাবের সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হজে গিয়ে কোরবানি দিতে হলে আলাদা টাকা খরচ করতে হবে।
প্যাকেজে ঘোষিত অর্থের মধ্যে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা। সার্ভিস চার্জ হিসেবে নেয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। বাকি টাকা অন্যান্য খাতের জন্য নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বেসরকারিভাবে হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কথা রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ পড়বে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণ করেছে ইস্টার্ন হাউজিং যুব কল্যাণ সমিতি।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গিয়ে গত ২৬ থেকে ২৯ জানুয়ারি এ ভ্রমণ করেন সমিতির সদস্যরা।
আনন্দ ভ্রমণের আহ্বায়ক ছিলেন জহির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (জেডএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির।
আনন্দ ভ্রমণের সদস্য সচিব ছিলেন ইস্টার্ন হাউজিং যুব কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল সরকার।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ পড়বে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেসরকারি হজ প্যাকেজ কত টাকার মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে বেসরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।’
তিনি আরও জানান, সরকারি হজ প্যাকেজের মধ্যে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা লাগবে বিমান ভাড়া বাবদ। রিয়ালের মূল্য ২১ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হওয়ায় হজে যাওয়ার খরচ বেড়েছে।
বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন।
বেসরকারি হজ প্যাকেজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাব নেতারা।
আরও পড়ুন:ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।
‘আমার ভাই এর রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বুধবার থেকে রক্তে রাঙ্গানো সেই ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু। এ দিন থেকে ধ্বনিত হবে সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী । বাঙ্গালী জাতি পুরো মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল দিক। কারণ এ মাসে পৃথিবীতে একমাত্র জাতি হিসেবে বাঙালিরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর শুরু হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আবার হয়ে উঠবে জমজমাট।
বুধবার থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হচ্ছে। বাংলা একাডেমিতে বিকাল তিনটায় এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
এ ছাড়াও জাতীয় কবিতা উৎসবও শুরু হবে বুধবার থেকে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এ উৎসবের। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করেছে এ পথ নাট্য উৎসবের। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।
আরও পড়ুন:সাংবাদিক আবু আলীর ভ্রমণবিষয়ক বই ‘টেমস থেকে নীলনদ’ পাওয়া যাবে এবারের অমর একুশে বইমেলায়। বইটি শুধুই ভ্রমণবৃত্তান্ত নয়, প্রতি পৃষ্ঠায় বিধৃত রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশর এবং যুক্তরাজ্যের দর্শনীয় স্থানের ভ্রমণসংক্রান্ত চিত্তাকর্ষক তথ্য এবং সুচারু চিত্রাবলি।
বইটির ভূমিকা লিখেছেন মিশরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম। প্রকাশ করেছে জ্যোতিপ্রকাশ। পাওয়া যাবে বইমেলায় জ্যোতিপ্রকাশের ৪৪৪ এবং বাংলা একাডেমি চত্বরের ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ৭৩২ নম্বর স্টলে, দাম ২৬৫ টাকা। তবে মেলা উপলক্ষে থাকছে ২৫ শতাংশ ছাড়।
বইটিতে সাবলীল ভাষায় বিশ্বখ্যাত পিরামিড, আলেক্সান্দ্রিয়া লাইব্রেরি, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবীর গাজী সালাউদ্দীন আইয়ুবীর দুর্গপ্রাসাদ, নীলনদ, সুয়েজ খাল, লোকমান হেকিমের কবর, ফেরাউনের মমি, বিশ্ব বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন আই, বিগ বেন, টেমস নদী, ব্রিটিশ জাদুঘর, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, ম্যানচেস্টার স্পোর্টস সিটি, ব্লাকপুল সি বিচ ও টাওয়ারের চিত্তাকর্ষক তথ্য এবং মনোরম চিত্র হয়েছে। লেখক উপস্থাপন করেছেন কীভাবে কম খরচে সুন্দর সুন্দর স্পটে ভ্রমণ করা যায়।
ঐতিহাসিক অনেক স্থান নিয়ে পৃথিবীজুড়েই নানা ধরনের মিথ বা গল্প প্রচলিত থাকে। এ ছাড়াও রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য এবং প্রেক্ষাপট। এসব মিথ ও গল্পের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি গল্পের সত্য-অসত্যের বিষয়ে সাংবাদিকতাসুলভ অনুসন্ধানই ছিল লেখকের লেখার মূল উপজীব্য। বইটিতে খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনা এবং আবিষ্কারের বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
এ ছাড়াও তুলে ধরা হয়েছে ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ারের বর্ণনা। আরও আছে এশিয়া-আফ্রিকার মাঝখানে সিনাই উপদ্বীপ, যার পূর্বকোল ধরে লোহিত সাগর, তার তীরঘেঁষে ‘শার্ম আল শেখ’ নামের এক স্বপ্নিল শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বর্তমান অবস্থা।
দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে যুক্ত লেখক আবু আলী। বর্তমানে তিনি দৈনিক আমাদের সময়ে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে আছেন। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সাধারণ সম্পাদক তিনি।
এটি লেখকের পঞ্চম গ্রন্থ। ২০২২ সালের বইমেলায় শেয়ারবাজার নিয়ে লেখা ‘শেয়ারবাজারের সহজপাঠ’, ২০২১ সালের মেলায় ভ্রমণসংক্রান্ত ‘আকাশ থেকে জলে’, ২০২০ সালে ‘মেঘ পাহাড়ের আলিঙ্গন’ এবং ২০১৮ সালে প্রথম গ্রন্থ ‘শেয়ারবাজারের প্রাথমিক ধারণা’ প্রকাশ হয়।
আরও পড়ুন:বিল-ঝিলের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘পলো বাওয়া উৎসব’। তবে একেবারে যে হারিয়ে যায়নি তা প্রমাণ করতেই বুঝি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে হয়ে গেল এই উৎসব।
উপজেলার বড়আন বিলে আয়োজন করা হয় ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই এই বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করেন আতুকুড়া গ্রামবাসী। এতে আশপাশের গ্রামগুলো ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে শত শত শৌখিন ও পেশাদার মাছ শিকারি অংশ নেন।
শনিবার ভোর হতেই ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে বড়আন বিলে আসতে থাকেন হাজারও মাছ শিকারি। সকাল ১১টা বাজতেই কোমর ও মাথায় গামছা বেঁধে পলো নিয়ে মাছ শিকারে বিলের শীতল পানিতে নেমে পড়েন নানা বয়সী মানুষ।
পলোর পাশাপাশি হাতাজাল, উড়াল জালসহ মাছ ধরার নানা ফাঁদ নিয়ে হই-হুল্লোড় আর হাসি-আনন্দে মাছ ধরায় মেতে ওঠেন অনেকে। বিলের আশপাশের গ্রাম ছাড়াও হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিরা পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন।
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিভিন্ন পেশার মানুষ এই মাছ করা উৎসবে অংশ নেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মাছ ধরা উৎসবে ধরা পড়ে বোয়াল, আইড়, শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। অনেকে বড় মাছ ধরতে না পারলেও এমন উৎসবে অংশ নিতে পেরেই খুশি।
পলো উৎসবে নাগুড়া থেকে আসা রবিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন থেকে এই বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবে আসি। তখন বাবার সঙ্গে আসতাম, এখন নাতিকে নিয়ে আসছি। শত শত বছর ধরে এই বিলে পলো উৎসব চলে আসছে।’
বড় একটি বোয়াল মাছ ধরেছেন ফয়েজ মিয়া। খুশিতে আত্মহারা এই মাছ শিকারি বলেন, ‘আমি আজ জীবনের প্রথম পলো উৎসবে এসেছি। প্রথমবার এসেই একটা বড় মাছ ধরতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।’
হবিগঞ্জ সদর থেকে মাছ ধরতে আসা দোকান কর্মচারী পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই আমরা দোকানের ৮ জন গ্রাম থেকে পলো নিয়ে মাছ ধরতে আসছি। মাছও কয়েকটা ধরেছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে।’
আতুকুড়া গ্রামের সাংবাদিক এস এম সুরু আলী বলেন, ‘এক সময় হবিগঞ্জের বিভিন্ন বিলে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু দিন দিন নদী ও বিল ভরাট এবং দখল হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আয়োজক কমিটির সদস্য সুমন আখঞ্জি বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর বড়আন বিলে পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করে থাকি। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্য সময় পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এমন আয়োজন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য