উত্তর ভারতের প্রয়াগরাজ শহরের ট্রাক চালক শ্যাম (ছদ্দনাম)। স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় ছয় মাস ধরে যৌন সম্পর্ক করতে পারছেন না তিনি। ভীষণ অস্থিরতায় ভুগছিলেন, এমন সময় ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের এক বিজ্ঞাপন দেখে পুলকিত হয়ে যান শ্যাম।
দেরি না করে গোলাপী থিমের ওয়েবসাইটে ঢোকেন শ্যাম। সেখানে তাকে ৪ হাজার ভারতীয় রুপি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছিল।
বাড়ির পাশের ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে শ্যাম বাড়ি ফিরেই ওয়েবসাইটে ঢোকেন। কিন্তু এবার সেবা দেয়ার জন্য আরও অর্থ চাওয়া হয়। বলা হয়, কেবল সাইবার-সেক্সের একটি সেশনের জন্য ৬ হাজার রুপি জমা দিতে হবে। সেই অর্থও দেন শ্যাম। তারপর তাকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ভিডিও কলের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।
কয়েক ঘণ্টা পর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কল পান শ্যাম। শার্ট খুলে শ্যাম ফোনের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কলটা রিসিভ করে। কয়েক সেকেন্ড পর পর্দায় এক নগ্ন যুবতী হাজির হন। যুবতী তার নগ্ন দেহ হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তারপর কলটা কেটে যায়।
হঠাৎ লাইন কেটে যাওয়ায় বিরক্ত হন শ্যাম। কল কেন কেটে গেল তা বোঝার আগেই ওই নম্বর থেকে একটা হোয়াটঅ্যাপ মেসেজ আসে তার মোবাইলে। সঙ্গে ছিল কিছুক্ষণ আগের সেই ভিডিও কলের রেকর্ডিং।
মেসেজে বলা হয়, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার রুপি জমা দিন। নয়তো এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাবে।’
২০ হাজার রুপি বেতনে চাকরি করেন শ্যাম। এই অর্থ দিয়ে চার সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। শ্যাম হিসাব করে দেখেন, সব খরচ বাদ দিয়ে এই ১৫ হাজার রুপি জমাতে তার ১০-১২ মাস লেগে যাবে।
শ্যাম বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। এ কারণে ছেলের টিউশনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করছিলাম, তাতে হাত দিতে বাধ্য হই।
‘তারপরের কয়েদিন স্বস্তিতে ছিলাম। একদিন আবার কল আসে। এসএমএসে আমাকে এবার ৩০ হাজার রুপি দিতে বলে। শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে সে অর্থ দিই।’
ভারতে অনলাইন যৌন নির্যাতনের শিকারের সংখ্যা আশংকাজনকহারে বাড়ছে। শ্যাম সেই দলের একজন।
অনলাইন সেক্সটর্শন স্ক্যামের পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, ২০২১ সালে ভারতে ৫২ হাজার ৯৭৪টি সাইবার ক্রাইমের রেকর্ড আছে পুলিশের কাছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৯ সালের চেয়ে সংখ্যাটা ৪৪ হাজার ৭৩৫ বেশি৷
ভারতের তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০০০ এর ধারা ৬৭ এর অধীনে এ সংক্রান্ত ১৩ হাজার ১৯৬টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা বিতরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ধরা হয়।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তথ্য-সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক চাপের ভয়ে অনলাইনে যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো চেপে যায় বেশিরভাগ মানুষ।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রক্ষিত ট্যান্ডন বলেন, ‘এই প্রতারণাগুলো কোভিডের সময় বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কারণ ওই সময় বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে থাকতেন এবং অনলাইনে বেশি সময় কাটাতেন।
‘স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের অপ-ব্যবহারও বাড়ছে।’
স্ট্যাটিস্টা বলছে, ভারতে ৯৩২ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যা চীন ছাড়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। স্ট্যাটিস্টার ধারণা, এই সংখ্যা ২০৪০ সালের মধ্যে দেড় বিলিয়ন ছাড়াবে।
যেসব মানুষ একাকী কিংবা যৌন সম্পর্কহীন জীবনে আটকে আছেন তাদের পাশাপাশি অল্পবয়সী প্রাপ্তবয়স্করা (যৌনতায় মুখিয়ে যারা) সেক্সটর্শনের ঝুঁকিতে আছেন। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই জালে আটকা পড়েন।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস চালাতে অদক্ষ লোকজনকে সহজেই বোকা বানাতে পারে প্রতারকরা। ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে সামাজিক মিডিয়া, ডেটিং অ্যাপস, স্প্যাম টেক্সট মেসেজ এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকেন তারা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় নারীর ছবি ব্যবহার করে তৈরি প্রোফাইল থেকে শিকারকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা মেসেজ দেয়া হয়। প্রতারকরা শিকারের অন্য বন্ধুদেরও সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। এতে ভুয়া প্রোফাইলটি নিয়ে সন্দেহ অনেকটায় কমে যায়।
ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টেলিগ্রাম গ্রুপে বা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এবং ফোরামে প্রতারকরা তাদের সাইটের লিংক পোস্ট করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে তারা পর্নোগ্রাফিক ভিডিও বা যৌনকর্মীর ছবি ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা এই কৌশলটিকেও কার্যকর বলে মনে করছেন। আকর্ষণীয় কন্টেন্টের কারণে এগুলো দীর্ঘসময় মানুষ দেখে। এতে অনলাইন থেকে পোস্টকারী ভালো অর্থ উপার্জন করে।
যুক্তরাজ্যের সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম সোফোসের একটি সমীক্ষা বলছে, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেক্সটর্শন স্প্যাম মেসেজের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ ডলার আয় করেছে পোস্টকারীরা।
কিছু প্রতারক তাদের ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে বলে জানা গেছে।
রাজস্থানের নাগৌরের প্লাম্বার অজয় (ছদ্দনাম) মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার রুপি আয় করেন। তিনি বলেন, ‘একজন নিজেকে ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ফেসবুকে যৌন কেলেঙ্কারিতে নাকি আমি জড়িত। ৬০ হাজার টাকার জন্য তিনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেন।
‘দ্বিতীয় দিনে আমি ওই নম্বরটি ব্লক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর ট্রুকলারে (কলার শনাক্তকরণ অ্যাপ্লিকেশন) ‘শ্যাম আইপিএস’ নামে একটি অজানা নম্বর থেকে কল পাই।
‘তিনি আমাকে বিষয়টি টাকার বিনিময়ে রফাদফার প্রস্তাব দেন। বলেছিলেন, তা না করলে চার বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে আমার। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাউন্সেলরের সঙ্গে পরামর্শ করে নম্বরটি ব্লক করে দিই।’
ভুক্তভোগীদের ওপর যৌন নির্যাতনের প্রভাব কেবল অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে সমাজে যৌনতা নিয়ে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা, সেখানে ভুক্তভোগীর মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রয়াগরাজের ট্রাক চালক শ্যাম বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতে প্রতারণার শিকার হওয়ার পর থেকে আমি রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ভয় তো ছিলই। পাশাপাশি স্ত্রীর কাছে বিষয়টা ফাঁস হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকতাম।
‘একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সন্তানের কথা ভেবে ফিরে আসি। আয়-রোজগারও বেশি ছিল না। মানসিক যন্ত্রণায় জীবন নরক হয়ে গিয়েছিল।’
‘মনস্তাত্ত্বিক খেলা’
জয়পুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম কনসালট্যান্ট মুকেশ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের ‘অতিরঞ্জিত’ ভয়ের পাশাপাশি ভারতের সাইবার আইনের দুর্বলতায় সুযোগ নেয়।
‘ভিডিও ছড়ানোর ভয় একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা। খুব কম ক্ষেত্রেই ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করা হয়। কারণ প্রতারকরা জানেন, এটা করলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তারা ফেঁসে যাবেন। এসব ক্ষেত্রে অপরাধীরা মানুষের ভয় নিয়ে নিষ্ঠুর এক খেলায় মেতে উঠেন।’
সামাজিক ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী পুলিশের পরিবর্তে এনজিওর সাহায্য নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ এতে পরিচয় গোপন থাকার নিশ্চয়তা বেশি।
ভারতের প্রথম সাইবার ক্রাইম এনজিও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মিলিন্দ আগরওয়াল বলেন, ‘অধিকাংশ ভুক্তভোগী আমাদের কাছে বানোয়াট গল্প নিয়ে আসে। সম্মানহানির ভয়ে তারা পুলিশের কাছে যেতে চায় না।
‘শুরুতে আমরা তাদের বোঝাই ফুটেজ অনলাইনে পোস্ট করা হবে না। দ্বিতীয়ত, আমরা তাদের অ্যাকাউন্ট বা নম্বর আগামী দুই থেকে তিন দিনের জন্য ব্লক করতে বলি। অজানা কল বা মেসেজের উত্তর দিতে না বলি। বহিরাগতদের সঙ্গে যোগাযোগের খবর আমাদের জানাতে বলি।
‘প্রতারকরা দুই থেকে তিন দিন আপনাকে অনুসরণ করবে। তারপর থেমে যায়। এই কৌশলটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করেছে।’
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, সাইবার ক্রাইম মামলার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ গঠন হয়।
পুলিশের উদাসীনতা, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং ফরেনসিক সংস্থানগুলোর ঘাটতির কারণে এসব ঘটনায় বিচার কম হয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
আগরওয়াল বলেন, ‘আপনি যদি একজন সাধারণ মানুষ হন, তবে কেবল হুমকির অভিযোগ নিয়ে আসলে পুলিশ তা নথিভুক্ত করবে না। অনলাইনে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ভিন্ন কথা।
‘প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।’
প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে সাইবার ক্রাইম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট আইনটি প্রায় ২০ বছরের পুরনো; কেবল একবার এটির সংশোধন হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের আইনজীবী শশাঙ্ক তিওয়ারি বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নতির কারণে কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং নেটওয়ার্কের শক্তি বাড়ছে। এই অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার ক্রাইমও বাড়ছে। এ ধরনের অপরাধ কমাতে অবশ্যই কঠোর শাস্তির আইন করতে হবে।’
স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল শরৎ কবিরাজ বলেন, ‘রাজস্থান যৌন নির্যাতনের একটি হটস্পট। তাই আমরা অন্যান্য রাজ্যের পুলিশকে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছি।
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আন্তঃরাজ্য সাইবার ক্রাইম ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে। অপরাধীরা মূলত সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। তাই সিম কার্ড ইস্যু করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং গ্রাহককে জানার পদ্ধতিগুলো কঠোর করা উচিত।’
সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌন নির্যাতনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়া এড়াতে ভারতকে অবশ্যই আইন সংস্কার করতে হবে। পুলিশিং ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হবে এবং যৌনতার সঙ্গে জড়িত ‘সামাজিক ট্যাবু’ দূর করতে হবে।
শ্যাম এবং অজয়ের মতো ভুক্তভোগীরা এখনও মনে করেন, তাদের কাছে আইনি কোনো উপায় নেই। এনজিওগুলোর কাউন্সেলিং-ই তাদের একমাত্র ভরসা।
অজয় বলেন, ‘আমার মতো একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে কেন তারা বেছে নিল? সিস্টেমের কাছে আমি কোনো বিষয় না হলেও, সমাজের কাছে আমি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।’
ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য