আমাদের শরীর রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করে। শরীরের এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ত্রুটি হলো অ্যালার্জি। যার অ্যালার্জি আছে, তার শরীর রোগ-জীবাণুর পাশাপাশি ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুকেও ক্ষতিকর মনে করে, তার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়।
এ কারণে অন্যদের জন্য ক্ষতিকর না হলেও অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তির কাছে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ কিংবা গরুর গোস্ত ক্ষতিকর।
অ্যালার্জির লক্ষণ
একেকজনের কাছে অ্যালার্জির লক্ষণ একেক রকম। তবে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে চোখ ও ত্বক চুলকানো, হাঁচি, ভরাট নাক, গলা শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বমি হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এমনকি মূর্ছা যাওয়া।
অ্যালার্জি থেকে বাঁচবেন যেভাবে
অ্যালার্জি কখনও পুরোপুরি দূর করা যায় না। তবে এর প্রকোপ কমানো যায়। যে বস্তুতে অ্যালার্জি আছে তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকলেই অ্যালার্জিমুক্ত থাকা সম্ভব।
রোগীভেদে একেকজনের একেক বস্তুতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। ধরুন, কারও রেশমি কাপড়ে অ্যালার্জি, তিনি রেশমি কাপড় পরবেন না। যার চিংড়ি মাছে অ্যালার্জি তিনি চিংড়ি মাছ খাবেন না।
কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি, সেটা রোগীকে মনে রাখতে হবে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই অ্যালার্জির হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
-
ত্বকের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
টি-ট্রি অয়েল
ত্বকের অ্যালার্জিতে টি-ট্রি অয়েল দারুণ কাজ করে। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-আইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অনেক ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দেয়।
আপেল সিডার ভিনিগার
অ্যাপল সিডার ভিনিগারে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। ত্বকের চুলকানি কমিয়ে অ্যালার্জির প্রকোপ দূর করতে কাজ করে এই উপাদানটি। তবে ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে আপেল সিডার ভিনিগারে অ্যালার্জি আছে কি না। থাকলে ব্যবহার করা যাবে না।
নারকেল তেল
নারকেল তেলে থাকা ময়েশ্চারাইজিং অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। শুধু তা-ই নয়, নারকেল তেল অ্যালার্জিজনিত চুলকানি কমায়। একটি বাটিতে সামান্য নারকেল তেল নিয়ে কুসুম গরম করুন। যেখানে অ্যালার্জির লক্ষণ রয়েছে, সেখানে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে দিন। উপকার পেলে দিনে দুই বার করতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল
ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় অ্যালোভেরা জেল। এটি ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। সতেজ অ্যালোভেরা সরাসরি ত্বকে লাগালেই উপকার পাওয়া যায়।
-
চোখের অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
গোলাপজল
গোলাপজল চোখের অ্যালার্জির প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করে। চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ৩ ফোঁটা গোলাপজল দিয়ে দিন। এতে যে ইনফেকশনের কারণে চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে সেটি কেটে যায়। গোলাপজল দেয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখুন। খোলা রাখলে তরলটি বেরিয়ে যাবে। তখন পুরোপুরি কাজ হবে না।
লবণপানি
এক গ্লাস পানি নিন। এতে ৩ চা-চামচ পরিমাণ লবণ গুলে পানি ভালোমতো ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই পানিতে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে চোখগুলো ধীরে ধীরে মুছে দিন। এতে চোখে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি থেকেও আরাম মিলবে।
ঠান্ডা পানি
কথায় আছে পানির অপর নাম জীবন। চোখের অ্যালার্জির ক্ষেত্রেও ঠান্ডা পানি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। অ্যালার্জির কারণে চোখ ফুলে গেলে, লাল হলে বা চুলকালে বারবার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে যন্ত্রণার উপশম হবে।
আমলকী ও মধু
আমলকী পাউডার করে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই পাউডারের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীর অ্যালার্জেনমুক্ত থাকবে।
সায়েনি
সায়েনি এক ধরনের হার্ব। এটি অনেকটা মরিচের মতো দেখতে। সায়েনি শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার পাশাপাশি টক্সিন রিলিজ করতেও সহায়তা করে। চোখের ময়লা দূর করতে এর ভূমিকা রয়েছে।
সানগ্লাস
যদি আপনার অতিরিক্ত অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কোথাও বের হওয়ার আগে সানগ্লাস পরে বের হবেন। বিশেষ করে যেখানে বাস করেন সেটি যদি ধুলাবালিপূর্ণ এলাকা হয়, তাহলে চোখকে ডাস্ট অ্যালার্জিমুক্ত রাখতে সানগ্লাসের জুড়ি নেই।
পরিচ্ছন্নতা
ঘর এবং বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখবেন। যাতে ধুলাবালি না ওড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টিভি, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের সামনে টানা বসে থাকবেন না। আর চোখ চুলকালে আঙুল দিয়ে রগড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
-
ঠান্ডা অ্যালার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
পেয়ারা খান
পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে এই উপাদানটি দারুণ কাজ করে। পেয়ারার পাশাপাশি লেবুর শরবত অথবা লেবু চা খেলেও উপকার পাবেন।
ঘিতে উপকার
ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দূর করতে খাবারের সঙ্গে ঘি খেতে পারেন। বিশুদ্ধ ঘি সংগ্রহ করে একবার এক চা-চামচ ঘি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রহণ করলে ঠান্ডার সমস্যা কেটে যাবে।
কালিজিরা একটি মহৌষধ
কালিজিরা খেয়ে ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রাতের খাবার কালিজিরা ভর্তা অথবা ঘুমানোর আছে কালিজিরার বড়ি খান। উপকার পেলে নিয়মিত খেতে পারেন।
ঠান্ডার সমস্যায় মধু
গ্রামে এখনও ঠান্ডার চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা হয়। যাদের অ্যালার্জিজনিত ঠান্ডার সমস্যার কষ্ট দিচ্ছে, তারা দিনে দুই চা-চামচ মধু খেয়ে দেখুন, ঠান্ডার সমস্যা চলে যাবে।
আরও পড়ুন:দীর্ঘদিন ধরে ১০ জন চিকিৎসক ছাড়াই চলছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ করছেন সাতজন।
দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে আলোচিত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্স। এটি ২০২০ সালে জাতীয় পুরস্কার পায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি থেকে জেলার বিভিন্ন কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ডেপুটেশনে নেয়া হয় চিকিৎসকদের, যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী আসে। সব শয্যায় সারা বছরই রোগী থাকে। এমন বাস্তবতায় মেডিক্যাল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট সংকটে কমে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান।
অনেক দিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ছয়জন চিকিৎসক গাজীপুরের বিভিন্ন কারাগারে পেষণে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে একজন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালে পেষণে কর্মরত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সটিতে নেই অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি কনসালট্যান্ট।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম মানসম্মত রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে অর্থোপেডিক্স কনসালট্যান্ট ও ইএনটি কনসালট্যান্ট পদায়ন জরুরি। প্রেষণে কর্মরত ছয়জন মেডিক্যাল অফিসারের পেষণাদেশ বাতিল করা খুব প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও তিনজন ডাক্তার কোর্সের জন্য পেষণে চলে যাবেন। তখন সংকট আরও তীব্র হবে।
‘এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুণগত মান ধরে রাখতে চিকিৎসক সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জেলার সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আখতার বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ডাক্তার সংকট দূর করা যায়। এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই ডাক্তার সংকট দূর হবে।’
আরও পড়ুন:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১৯৯৩ সালে যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণার পর থেকেই রোগটি নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও।
সারা দেশের মতো গাইবান্ধাতেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কার্যক্রম চলছে। এসবের পরও উত্তরের জেলাটিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে যক্ষ্মা ও মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকুলোসিস (এমডিআর) তথা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা।
পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, জেলায় ২০১৯ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল পাঁচজন, যেটি পরের বছর ২০২০ সালে কমে হয় চারজন, তবে পরের বছর থেকে গাইবান্ধায় বাড়তে থাকে এমডিআর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
গাইবান্ধায় ২০২১ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল ২৪ জন। জেলায় ২০২২ সালেও সমসংখ্যক মানুষ যক্ষ্মার এ ধরনের আক্রান্ত হন। এর পরের বছর ২০২৩ সালে এমডিআরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ জনে।
এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী ৩৭ জন, যা রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বোচ্চ। এ সময়ে জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী ৬৮১ জন।
বক্ষব্যাধি নিয়ে কাজ করা রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের (সিডিএইচ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এমডিআরে আক্রান্ত রোগী ১২৫ জন। এ সময়ে এমডিআর আক্রান্ত বিভাগের সর্বোচ্চ রোগী ছিল গাইবান্ধায়, যেখানে সর্বনিম্ন পাঁচজন রোগী পাওয়া যায় কুড়িগ্রামে।
এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা বলছে, ২০২৩ সালে গাইবান্ধায় যক্ষ্মার সব ধরনে আক্রান্ত রোগী তিন হাজার ৬০৩ জন।
পরীক্ষায় অবহেলা
গাইবান্ধায় সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবির অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তারা জানান, যক্ষ্মার সব লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চান না, যার মূলে রয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, লোকলজ্জা ও রোগের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অবহেলা ও অসচেতনতা।
তারা বলেন, একজন সম্ভাব্য রোগীকে নানাভাবে বোঝানোর পরও কাশি পরীক্ষার জন্য কফ দিতে চান না এবং এক্সরে করতে চান না। কফ পট নিলেও অবহেলা ও নানা অজুহাতে তা ফেরত দেন।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যক্ষ্মার পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে টিপিটি (টিবি প্রিভেনটিভ থেরাপি) দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি জটিলতায় পড়তে হয়। কেননা রোগীর স্বজনরা সুস্থতা দাবি করে কোনোভাবেই টিপিটির আওতায় আসতে চান না।
যক্ষ্মার লক্ষণ
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তথা এনটিপির রংপুর বিভাগীয় বিশেষজ্ঞ ডা. রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে, যা হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে থাকে। যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি। সে ক্ষেত্রে কাশির সাথে রক্ত আসতেও পারে, নাও আসতে পারে।
‘এ ছাড়া রোগীর ওজন কমে যাওয়া, আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকা, ক্ষুধামান্দ্য, বিকেল-সন্ধ্যায় জ্বর হওয়া, ঘামের সঙ্গে ভোররাতে জ্বর ছেড়ে যাওয়া ও বুকে-পিঠে ব্যথা হওয়া যক্ষ্মার লক্ষণ।’
তিনি বলেন, ‘এসব লক্ষণ যদি কোনো ব্যক্তির মাঝে থাকে তাহলে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী হিসেবে তাকে পরীক্ষা করাতে হবে। শনাক্ত হলে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়।’
এ চিকিৎসক জানান, যক্ষ্মা হাত-পায়ের নখ, দাঁত ও চুলের বাইরে অনেক স্থানকে আক্রান্ত করতে পারে। এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের অস্বাভাবিক গুটি, ফোঁড়া, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়, জরায়ু, অস্ত্রোপচারস্থলসহ শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয় এমন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে, সেই অংশটি ফুলে উঠবে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রোগটি সাধারণত ঘনবসতিপূর্ণ ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, এ জীবাণু থেকে তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
‘এ ছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, মাদকে আসক্তি ব্যক্তি, অপুষ্টি, দারিদ্র্য, পরিবেশ দূষণ এবং সঠিক সময়ে সকল রোগী শনাক্ত না হওয়া যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।’
একজন মানুষ এমডিআরে কীভাবে আক্রান্ত হন
এমডিআরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শোভন পাল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমডিআর যক্ষ্মা রোগী প্রধানত দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. সরাসরি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর জীবাণু দ্বারা। দুই. যক্ষ্মা পজিটিভ রোগী যদি অনিয়মিত ওষুধ খায় কিংবা অনেকেই সেরে উঠেছেন ভেবে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে এসব রোগী এমডিআরের রোগী হিসেবে চিহ্নিত হন। এসব রোগীর যক্ষ্মার স্বাভাবিক ওষুধে আর কোনো কাজ হয় না।’
যক্ষ্মার নিরাময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘যক্ষ্মা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরন, মাত্রা এবং রোগীর বয়স অনুসারে ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত, এমনকি রোগীর কন্ডিশন অনুযায়ী আরও দীর্ঘ সময় হতে পারে। এসবের ব্যত্যয় হলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হয়।
‘এমন অবস্থায় যক্ষ্মা রোগীদের ধৈর্যের সাথে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী পুরো মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে। সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এই জীবাণু শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে এবং একজনের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ জনের মধ্যে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
শোভন পালের মতে, যক্ষ্মা এবং এমডিআর রোগী কমাতে আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যক্ষা রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনের আরও সজাগ হওয়া, অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা মানুষগুলোকে নিয়মিত পরীক্ষার আওতায় নেয়ার পাশাপাশি জীবাণুবাহী রোগী হাসপাতালে আসার আগেই রোগ শনাক্ত করতে। এ ছাড়া কেউ যাতে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে না দেন, সে বিষয়ে নজরদারি করা, শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসার দুই, তিন ও পাঁচ মাসের নিয়মিত ফলোআপ এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত গরিব মানুষদের চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
এনটিপি কতটা সফল
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বর্তমান সফলতা প্রসঙ্গে ডা. রানা বলেন, ‘রোগী চিহ্নিত ও চিকিৎসায় করার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর ৯৬ ভাগ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যাচ্ছে। এনটিপি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে যেখানে প্রতি এক লাখে প্রায় ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, বর্তমানে তা ২২ জনে নেমে এসেছে।’
যক্ষ্মা রোগীর নিবন্ধন ও পরামর্শসহ সব কার্যক্রম সরকারিভাবে করা হলেও রোগী শনাক্তের চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে থাকে ব্র্যাক, আইসিডিডিআরবির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে ব্র্যাক যক্ষ্মা কর্মসূচির (বিএইচপি টিবি) গাইবান্ধার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার (ডিএম) নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও ব্র্যাক যৌথভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধায় এই রোগ নির্মূলে শ্রেণিভেদে মাঠ পর্যায়ে ব্র্যাকের ৫৬ জন কর্মী সরাসরি কাজ করছে এবং তাদের সহযোগিতায় জেলায় ৩২০০ স্বাস্থ্য সেবিকা কাজ করছে। আমরা সরাসরি রোগীর কাছ থেকে কফ কালেকশন করে হসপিটালে পরীক্ষার জন্য জমা দিচ্ছি।
‘পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো এবং নিয়মিত ফলোআপ এবং টিপিটির ব্যবস্থা করছি। অতি দরিদ্র রোগী, পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, ইটভাটা শ্রমিকসহ এই ক্যাটাগরির পরিবারের রোগীদের পরীক্ষার জন্য যাতায়াত খরচ এবং পুষ্টিকর খাবারের জন্য অর্থ সহায়তা করা হচ্ছে। শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা এবং ডেটা প্রোভাইডারদের ভাতা প্রদান করে রোগীদের ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে চলেছে ব্র্যাক।’
২০৩৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটি কতটা সহজ হবে, এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক কাজ হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। কেননা একদিকে মানুষ যেমন সচেতন নয়, অপরদিকে রোগী শনাক্তও অত্যন্ত কঠিন, তবে ওই সময়ের মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবু হানিফ মোবাইল ফোনে নিউজবাংলকে বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিসহ সব পরিকল্পনাই রয়েছে আমাদের। যক্ষা নির্মূলে জেলার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, এমনকি জেলখানা ও গার্মেন্ট কর্মীদের চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়াও ব্র্যাকসহ বেসরকারি আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বহুসংখ্যক ল্যাবরেটরিতে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় হচ্ছে। এ জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও।
‘এর পরও যক্ষ্মা নির্মূলে যতটুকু সংকট আর চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার দাবিতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে।
রোববার সকাল ৮টা থেকে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এই কর্মবিরতি শুরু করেন যা চলবে ২৬ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত।
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দুপুরে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের আয়োজন করে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মূখপাত্র ডা. মনজুরুল হাসান জীবন, ডা. এমএ কাভী সেকান্দর আলম, ডা. হৃদয় রঞ্জন দাস, ডা. সাদিয়া তাসনিমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাতা প্রদান ও চিকিৎসকদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন। ইন্টার্ন ভাতা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ভাতা ৫০ হাজার টাকায় উত্তীর্ণ করা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান বক্তারা।
পরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহানের কাছে এসব দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন:বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মবিরতি চলবে সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা। কম জনবল দিয়ে প্রায় তিন গুণ ভর্তি থাকা রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। রোগী ও তাদের স্বজনদেরও অভিযোগ, শনিবার রাত থেকে তারা ভালো সেবা পাচ্ছেন না।
খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. দিবাকর চাকমা জানান, গত বছর ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেন। ওই সময় বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোল স্থগিত করা হয়। পরে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এখনও বঞ্চিত রয়েছেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করলেও সেই তুলনায় তাদের বেতন-ভাতা অনেক কম। তাদের দাবি, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে অন্তত ৩০ হাজার টাকা করা হোক।’
খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার, কিন্তু রোগী ভর্তি আছে প্রায় এক হাজার ৫০০ মতো। এত রোগী সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা থাকলে রোগী সামাল দেয়া অনেকটা সহজ হয়।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মবিরতিতে নিয়মিত চিকিৎসকদের রোস্টার করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা হয়েছে। যে দুই দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করবেন, ওই দুই দিন রোগী ও চিকিৎসকদের কিছুটা বাড়তি কষ্ট সইতে হবে।’
আরও পড়ুন:সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩ মার্চ সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যান মির্জা ফখরুল। শনিবার দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সালাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।’
প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। মুক্তির পর তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রফেসর শামসুল আরেফীনকে দেখান এবং বাসায় থেকে তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন।
৭৭ বছর বয়সী মির্জা ফখরুল এর আগেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুরে যান। ২০১৫ সালে কারাবন্দি অবস্থায় বিএনপি মহাসচিবের ঘাড়ের ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়লে মুক্তির পর সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। এরপর প্রতি বছরই ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে যেতে হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রিন্সেস অফ ওয়েলস কেট মিডলটন এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর তিনি চিকিৎসা নিতে শুরু করেছেন। তার পেটের অস্ত্রোপচারের পর রোগটি ধরা পড়ে। সূত্র: বিবিসি
কেটের ক্যান্সারের বিষয়ে বিশদ বিবরণ প্রকাশ না করা হলেও কেনসিংটন প্যালেস থেকে জানানো হয়েছে, প্রিন্সেস সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে।
৪২ বছর বয়সী কেট জানিয়েছেন, প্রিন্স অফ ওয়েলস উইলিয়াম এবং তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তাদের পরিবারের কম বয়সী সদস্যদের জন্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে পুরো বিষয়টি নিজেদের মতো করে ব্যবস্থাপনা করার।
নিজ সন্তানদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জর্জ, শার্লট ও লুইকে তাদের জন্য উপযুক্ত করে সবকিছু ব্যাখ্যা করে আশ্বস্ত করতে এবং আমি সুস্থ হয়ে উঠব সেটা বুঝাতে সময় লেগেছে।
‘এখন আমার পরিবারের নিজেদের মতো করে কিছু সময় কাটানো এবং প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা প্রয়োজন।’
কেট মিডলটন যে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন সেখানে বলেছেন যে জানুয়ারিতে যখন তার পেটে অস্ত্রোপচার হয় তখন জানা যায়নি যে কোনও ক্যান্সার ছিল।
‘তবে অপারেশনের পর পরীক্ষায় ক্যান্সার পাওয়া গেছে। তাই আমার মেডিক্যাল টিম পরামর্শ দিয়েছে যে আমাকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি নিতে হবে এবং আমি এখন সেই চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি,’ বলেন তিনি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তিনি কেমোথেরাপি শুরু করেছেন।
প্যালেস থেকে বলা হয়েছে, কেটের ব্যক্তিগত চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য তারা জানাবে না। ফলে ক্যন্সারের ধরন সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
‘প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি সাধারণত অস্ত্রোপচারের পর দেয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকি কমে’- বলছিলেন কনসালট্যান্ট কোলোরেক্টাল সার্জন প্রফেসর অ্যান্ড্রু বেগস।
জানুয়ারিতে অস্ত্রোপচারের পর কেনসিংটন প্যালেস সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে উল্লেখ করে। এরপর চিকিৎসকরা আরও টেস্ট করলে ক্যান্সারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
কেনসিংটন প্যালেস থেকে বলা হচ্ছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি মেমোরিয়াল সার্ভিসে প্রিন্স উইলিয়ামের না থাকার কারণ ছিল এই ক্যান্সার ধরা পড়ার খবর।
বড়দিনের পর থেকে কেট কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এবারের ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘উইলিয়াম আমার পাশে থাকাটাও সান্ত্বনা এবং আশ্বাসের একটা বিরাট উৎস।’
যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার বেশি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার ভূতের গলি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ‘গতকালও (মঙ্গলবার) আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ এ বিষয়ে একটা সভা করেছি। যে বিষয়টা সবচেয়ে পীড়াদায়ক তা হলো, গত বছর মৃত্যুর হার খুবই বেড়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, স্বাস্থ্যসেবাকে আরও নিশ্চিত করতে হবে।
‘কারণ গত বছর আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেক রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে বলা হয়েছে যে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করলেও চলবে। পরবর্তীতে দেখা গেছে রোগীর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। পরে ওই রোগী যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তখন দেখা যায় তাকে সেভাবে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায়নি। এতে করে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।’
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে বিশেষ করে যেসব দেশে মৌসুমী বৃষ্টি হয় তথা বর্ষাপ্রবণ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এডিস মশা বেশি হয়। সেসব দেশের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, তাদের তুলনায় আমাদের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবাটা সঠিকভাবে পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত কাজ করছে। আমরা মনে করি, আমাদের প্রয়াস বা কর্মপরিকল্পনা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদেরকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কমাতে আমাদেরকে যৌথভাবে আরও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
মেয়র পরে ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুলের সৌজন্যে ওয়ার্ডের আওতাধীন ২১টি মসজিদের ১৫০ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব ও খাদেমের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন।
এছাড়াও শ্যামপুর এলাকায় ৫৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাসুদের সৌজন্যে ওয়ার্ডের ২ হাজার ৫০০ বাসিন্দার মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য