লিভার শরীরের সর্ববৃহৎ অঙ্গ। আকৃতিতে যেমন বৃহৎ, প্রয়োজনীয়তার দিক থেকেও এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে সুখে রাখতে দরকার সুস্থ লিভার। অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত লিভার আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে দুঃখ-কষ্ট, এমনকি অকাল মৃত্যুও। মানব শরীরের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করেছেন হেপাটোলজিস্ট এবং গ্যাস্ট্রো-অ্যান্টারোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)।
-
অন্য যেকোনো যন্ত্র বা মেশিনের মতো আমাদের দেহযন্ত্রও চলে শক্তির সাহায্যে। এই শক্তি আসে খাদ্য থেকে। আমরা যেভাবে খাবার খাই, তা থেকে সরাসরি শক্তি উৎপন্ন হতে পারে না। জটিল খাবার লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে শক্তি উৎপাদনের উপযোগী হয়ে জমা থাকে এবং প্রয়োজনমাফিক শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে শক্তি উৎপাদন করে। তাই লিভারকে বলা হয় শরীরের ‘পাওয়ার হাউস’।
শুধু তা-ই নয়, শরীরে উৎপন্ন বিভিন্ন দূষিত পদার্থ লিভার বিশুদ্ধ করে এবং পরবর্তীকালে শরীর থেকে বের করার ব্যবস্থা করে। অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে কোনো বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করলে লিভার সেটিকে বিষমুক্ত করে। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি করে যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
-
গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটি নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু রোগ বংশগত, কিছু রোগ অনিয়মিত জীবন যাপনের জন্য হয়ে থাকে। কিছু রোগ স্বল্পস্থায়ী এবং পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়; কিছু রোগ দীর্ঘস্থায়ী, যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে কেড়ে নেয় জীবন। এমনকি চিকিৎসা করা সত্ত্বেও।
হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ বিশ্বজুড়ে লিভারের প্রধান রোগ। নানা কারণে এই প্রদাহ হতে পারে। যার অন্যতম কারণ এ, বি, সি, ডি, ই নামক হেপাটাইটিস ভাইরাস। পানি ও খাবারের মাধ্যমে সংক্রমিত হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস লিভারে একিউট হেপাটাইটিস বা স্বল্পস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সেরে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি ভাইরাস। অনেক কারণেই লিভারের প্রদাহ হতে পারে। ভাইরাস ছাড়া ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া, বিভিন্ন ড্রাগ ও কেমিক্যালস ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। অটোইমিউন হেপাটাইটিস, উইলসন্স ডিজিজসহ বিভিন্ন অজানা কারণজনিত রোগ ও বংশগত রোগে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
যে কারণেই প্রদাহ সৃষ্টি হউক না কেন, দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক হেপাটাইটিস বছরের পর বছর চলতে থাকলে লিভারের কোষগুলো মরে যায়। অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় ফাইব্রাস টিসু সেই স্থান দখল করে জন্ম দেয় সিরোসিস নামক মারাত্মক রোগ। সিরোসিস হলে লিভারের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণই লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ।
উন্নত বিশ্বে এ স্থান দখল করে আছে অতিরিক্ত মদ বা অ্যালকোহল পানজনিত হেপাটাইটিস। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা ফ্যাটি লিভার, লিভারের সিরোসিসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের দেশে সিরোসিসের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে এটি দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বির উচ্চমাত্রা প্রভৃতি কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো লিভারেও ফ্যাট জমে ফ্যাটি লিভার হয়।
এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া এবং প্যারাসাইট লিভারে অ্যাবসেস বা ফোঁড়া তৈরি করতে পারে। সর্বোপরি প্রাণঘাতী ক্যানসারও ভর করতে পারে লিভারে। সিরোসিস যাদের হয় তাদের এ ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
-
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ ও ই ছড়ায়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বড়দের জন্ডিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস।
ঘরের বাইরে আমরা যখন থাকি, তখন খোলা খাবার, পানি, ফলের রস ইত্যাদির উৎস ও বিশুদ্ধতা যাচাই না করে খাবার অভ্যাস আছে অনেকেরই। আর এই বাজে অভ্যাসটির কারণে অনেকেই আক্রান্ত হন জন্ডিসে।
তা ছাড়া শহরে পানি সরবরাহ লাইনে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে জন্ডিস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও নতুন কিছু নয়। তাই ফুটিয়ে পানি খাওয়া আর বেছে বুঝে খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এতে শুধু হেপাটাইটিস এ এবং ই নয়, টাইফয়েড আর ডায়ারিয়ার মতো আরো অনেক পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচা যাবে।
রক্ত ও ব্যক্তিগত অনৈতিক আচরণের মাধ্যমে ছড়ায় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। দূষিত রক্ত গ্রহণ বা দূষিত সিরিজ ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকেই নিজের অজান্তে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। একই শেভিং রেজার, ব্লেড কিংবা খুর ব্যবহারের মাধ্যমে এ দুটি ভাইরাস ছড়াতে পারে।
হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত মায়ের সন্তানের জন্মের পরপর বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। তবে মায়ের দুধের মাধ্যমে বি ভাইরাস ছড়ায় না। সামাজিক মেলামেশা যেমন হ্যান্ডশেখ বা কোলাকোলি এবং রোগীর ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন গ্লাস জামা-কাপড় ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না।
-
একিউট হেপাটাইটিসে ক্ষুধামন্দা, শরীর ব্যাথা, বমির ভাব কিংবা বমি এবং কিছু দিনের মধ্যে প্রস্রাবের রং ও চোখ হলুদ বর্ণ ধারন করে। এ সময় শরীরে চুলকানি দেখা দিতে পারে। জন্ডিস ক্রমে বেড়ে গিয়ে ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
ক্রনিক হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশির ভাগ রোগীর উপসর্গ থাকে না বললেই চলে। কেউ কেউ দুর্বলতা, অবসন্নতা বা ক্ষুধামন্দা অনুভব করতে পারে। হেপাটাইটিস বি ও সি অনেকাংশই নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও অ্যাডভ্যান্সড লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগী প্রায়ই কোনো শারীরিক অসুবিধা অনুভব করে না। এসব রোগীদের পেটে পানি জমে পেট ফুলে যেতে পারে, রক্ত বমি বা কালো পায়খানা কিংবা অজ্ঞান হয়ে জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। এ সময় শরীর শুকিয়ে যায়।
আমাদের দেশে অনেকে বিদেশে যাওয়ার আগে রক্ত পরীক্ষার সময়, কিংবা রক্ত দিতে গিয়ে বা ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে হেপাটাইটিস বি ইনফেকশনের কথা প্রথম জানতে পারেন। এ কারণে আমাদের সবারই উচিত একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত পরীক্ষা করা।
-
লিভারের রোগীর কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে অথবা শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।
তিনি রোগীর রোগ নির্ণয় করে এর কারণ, রোগের জন্য সৃষ্ট জটিলতা এবং রোগের বর্তমান অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উপদেশ দিবেন। হেপাটাইটিস এ ও ই জনিত রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতাও দেখা দিতে পারে। যেমন- জীবনসংহারী একিউট হেপাটিক ফেইলিউর নামক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই জন্ডিসকে কখনো অবহেলা করবেন না।
ক্রনিক হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি ও সি-এর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধগুলোর সবই এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তাই এ ক্ষেত্রেও হতাশ না হয়ে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
-
হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিন
ঝুঁকিপূর্ণ আচারণ যেমন- অনিরাপদ যৌনতা, একই সুঁই বা সিরিঞ্জের বহুজনের ব্যবহার পরিহার করুন।
নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ও ডিজপজেবল সুঁই ব্যবহার করুন। একই ব্লেড, রেজার, ব্রাশ; ক্ষুর বহুজনে ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না ।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খান আর চর্বিযুক্ত খাবার কম খান।
মদ্যপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন।
বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকুন।
-
মানুষের দেহে লিভার মাত্র একটিই থাকে এবং জীবন ধারনের জন্য এটি অত্যন্ত অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্রবিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ। তবে লিভারের রোগ মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। ঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময় এবং অনিরাময়যোগ্য জটিলতা মুক্ত মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে জীবন নির্বাহ করা যায়।
-
লেখক : ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন প্রধান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন:চা পান করতে কমবেশি সবাই পছন্দ করে। তবে সারা দেশে এবার তীব্র দাবদাহ চলায় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে চাপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও এ সময় ঘনঘন চা পান করা থেকে বিরত থাকতে বলছেন।
তবে চাপ্রেমীদের কাছে তা মানা কিছুটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য অনেকেই প্রশ্ন করছেন গরমে ঠিক কত কাপ চা পান স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ভারতের কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের কাছে এ বিষয়ে জানতে চায় ইন্ডিয়া টাইমস। তিনি বলেন, ‘চা হলো অত্যন্ত রিফ্রেশিং একটি পানীয়। তাই হাজার চাপের মধ্যে এক কাপ চা খেলে মাথা হালকা হয়, দুশ্চিন্তা কমে। শুধু মানসিক প্রশান্তি আনার কাজেই নয় নিয়মিত চা খেলে হার্ট ভালো থাকে।’
তবে এই তাপপ্রবাহে গরম চা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মত এ পুষ্টিবিদের। তার ভাষ্য, ‘না হলে পেটের সমস্যা বাড়তে পারে। তবে এতসব কথা জানার পরও যারা গরম চা পান করতে আগ্রহী তারা একদম সকাল-সকাল এক কাপ ধূমায়িত চা পান করতে পারেন।’
গরমে শরীরের খেয়াল রাখতে চাইলে গরম চা পান করার পরিবর্তে ঠাণ্ডা চা বা কফি পান কর যেতে পারে। তাতেই শরীর ঠাণ্ডা থাকবে বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত।
দুধ-চিনি ছাড়া চা পান করতে পারলে বিষয়টি আরও ভালো। চায়ের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে এই পানীয়টির অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চা পান করে আর তেমন কোনো উপকার আসে না উল্টো গ্যাস-অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই গরমকাল অথবা সারা বছর; দুধ চা পান করা এড়িয়ে চলা ভালো। তার বদলে সুস্থ থাকতে বরং রং চা পান করলে মিলবে উপকার।
তবে সারা দিন অথবা তাপপ্রবাহে ঠিক কত কাপ চা পান করা ভালো তা একান্তই নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। শরীরে বেশি কষ্ট অনুভব করলে তখন নিজের থেকেই চায়ের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো। নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো অভ্যাসই ধরে রাখা ভালো নয়।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
যশোর-চুয়াডাঙ্গার পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই মাগুরায় বাড়ছে তাপদাহ। তাপদাহের ফলে পুড়ছে মাঠ-প্রকৃতিসহ প্রাণীকুল। গরমে কোথাও স্বস্তি নেই। তাপদাহ বৃদ্ধির কারণে বেশি ভুগছে জেলার শিশু ও বৃদ্ধরা।
সরজমিনে মাগুরা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে সিট না পেয়ে অবস্থান নিয়েছেন মেঝেতে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেক বয়স্ক রোগীও। তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়েছে লোডশেডিং।
সোমবার সকাল থেকে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে শিশু ও অন্যান্য ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এসেছে এ হাসপাতালে।
এরমধ্যেই রোগীর চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে কর্র্তপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে মানুষের চলাচলের রাস্তার মেঝেতে থাকছেন অনেক রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৪৩৪ জন ভর্তি রয়েছেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪১টি শিশুই ভর্তি হয়েছে সেখানে, যাদের অধকিাংশই গরমজনতি বিভিন্ন রোগে (ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর) ভর্তি হয়েছেন।
শহরের খাঁপাড়া থেকে আসা অনন্যা রহমান তার মেয়েকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে তার দুই মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা ও জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।
পৌরসভার কাদিরাবাদ গ্রামের আবু মিয়ার নাতনির তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা ও বমি এবং জ্বর, কিন্তু শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে নানতির চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে বাতাস চলাচলের জন্য ওয়ার্ডের কোনো একটা জানালা যে খুলব, সে উপায়ও নেই। ফলে প্রচণ্ড গরমে শিশুটি ছটফট করছে। আমাদের অবস্থাও তাই। হাতপাখা চালিয়ে গরম নিবারণ করা যাচ্ছে না।’
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাজিয়া আক্তার বলেন, ‘ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে ৩ বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
‘গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।’
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মোহসিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অতি গরমে হাসপাতালে দিন দিন শিশুসহ অন্যান্য রোগী বাড়ছে।’
এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরার্মশ দেন এই চিকিৎসক। বলেন, ‘হাসপাতালে গরমে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই চিন্তিত। এ কারণে শিশু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়েছে। স্কুলে আরও এক সপ্তাহ ছুটির নির্দেশ আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমরা আরও এক সপ্তাহ স্কুলগুলোকে বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছি। আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেগুলো সব জায়গায় দেয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সাভারের সিআরপি নার্সিং কলেজের ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বয়স্ক ও শিশুরা যেন প্রয়োজন না থাকলে ঘরের বাইরে না যায়। আর বাকি যে নির্দেশনাগুলো সেগুলো আজকেই চলে যাবে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইউনিটের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করতে বলেছি। আজকেই তদন্ত হবে।’
স্বাস্থ্যখাতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমি সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌছে দেব। প্রত্যেকটা হেলথ কমপ্লেক্সকে, কমিউনিটি ক্লিনিককে উন্নত করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ গ্রামেই চিকিৎসা পায়।’
সাভার ও ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এটাকে করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ড. ভ্যালেরি টেইলর, সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এর আগে, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তারও আগে দেশজুড়ে চলমান দাবদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরবর্তীতে শনিবার বিকেলে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজও সাত দিন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক (কলেজ-১) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন বলেছেন, ‘পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকবে।’
তবে ক্লাস বন্ধ থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব পরীক্ষা বিদ্যমান সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকাও চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনুভব করেছে আজ। এদিন ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শনিবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে শুক্রবার আগুন ধরেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, বেলা একটা ৪৭ মিনিটে আগুন ধরার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাহিনীর পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আগুন ধরার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য