আগামী বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাও হজে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে হজে যেতে বয়সের আর কোনো বাধা থাকবে না। গত বছর ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকে হজে যেতে পারেননি।’
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মঙ্গলবার বেলা ২টায় ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতামূলক আন্তধর্মীয় সংলাপ’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে দ্রুত প্রাক-নিবন্ধন করার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ সিস্টেমে কারও আবদার রক্ষার সুযোগ থাকবে না। যারা আগে নিবন্ধন করবেন তারাই আগে সুযোগ পাবেন। নিবন্ধিতদের ধারাবাহিকভাবে হজে পাঠানো হবে।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্মের কল্যাণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, জাতীয় পর্যায়ে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, বিশ্ব ইজতোমর জন্য টঙ্গীতে জমি বরাদ্দ, হজ পালনে সরকারি অনুদান, বেতার-টিভিতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত প্রচার, সমুদ্রপথের হজযাত্রীদের জন্য জাহাজ কেনাসহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে গেছেন।
‘এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার সরকারের উদ্যোগে প্রতি উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, জেদ্দা হজ টার্মিনালে বাংলাদেশ প্লাজা স্থাপন ছাড়াও হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৩৬ বছরে যা হয়নি, তার চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে গত ১৪ বছরে। তাই উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অসিত কুমার সরকার সজল, পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম, কেন্দুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার, নেত্রকোণা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মহসিন আলম।
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছিলেন, হজে যাওয়ার জন্য আগে নিবন্ধন করা থাকলেও যাদের বয়স ৬৫ পার হয়েছে তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না।
এদিন সচিবালয়ে বাংলদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় নগদের ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবে মঙ্গলবার হিজরি রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। সে হিসাবে দেশটিতে রমজান মাস শুরু হবে বৃহস্পতিবার।
আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটি জানিয়েছে যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশটির কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, মিসর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরেও বৃহস্পতিবার রোজা শুরু হবে।
সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর একদিন পর বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়। ফলে বাংলাদেশে প্রথম রোজা হওয়ার সম্ভাবনা শুক্রবার (২৪ মার্চ)।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি হচ্ছে রোজা।
পবিত্র রমজান মাসে ঢাকায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
২৩ মার্চ বিকেলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। প্রথম রোজা থেকে ২৮ রোজা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।
মঙ্গলবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গরুর মাংস ৬৪০, খাসির মাংস ৯৪০ ও ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে। আর প্রতি লিটার দুধ ৮০ ও এক ডজন ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করা হবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, রমজান মাসে জনসাধারণ যেন সহজে প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও সাপ্লাই চেইন-সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ষাট ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, মিরপুরের কালশী, খিলগাঁও রেলগেট, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুরের বসিলা, উত্তরার দিয়াবাড়ি, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, হাজারীবাগ, বনানীর কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীরচর এবং রামপুরায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করা হবে।
পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবি পড়ার সময় সারা দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
রমজান মাসে দেশের প্রায় সব মসজিদে খতমে তারাবি নামাজে পবিত্র কোরআনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পারা তিলাওয়াত করার রেওয়াজ চালু আছে। তবে কোনো কোনো মসজিদে এর ভিন্নতা থাকে। এতে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কোরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি ও মানসিক চাপ অনুভূত হয়। কোরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হন।
এ পরিস্থিতি নিরসনে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে এক পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করলে ২৬ রমজান দিবাগত রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে কদরে পবিত্র কোরআন খতম করা সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় দেশের সব মসজিদে খতমে তারাবির নামাজে প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ও পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই অনুরোধ করা হয়েছে।
১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য বৈঠকে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে এই বৈঠক হবে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাতে জনাতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফোন নম্বরগুলো হলো- ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬, ০২-৪১০৫০৯১৭।
আরও পড়ুন:
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এ মাসে অন্য অনেকের মতো ডায়াবেটিস রোগীরাও রোজা রাখবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের করণীয় ও বর্জনীয়গুলো এক ভিডিওতে তুলে ধরেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল। পরামর্শগুলো তার ভাষায় পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
প্রস্তুতি
সবাই যারা সামর্থ্যবান মুসলিম, যাদের ওপর রোজা ফরজ হয়েছে, আমরা সবাই আসলে চাই এ সময়ে রোজা রেখে ওপরওয়ালার নৈকট্য লাভের যে সুযোগ, সেটা থেকে যেন আমরা কেউই বঞ্চিত না হই। এরই অংশ হিসেবে আমরা আসলে প্রতি বছর রোজা রাখি; রোজা রাখছি আমরা অনেকেই, কিন্তু যারা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের মধ্যে অনেকগুলো প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেকগুলো গাইডলাইন প্রয়োজন।
যেমন: প্রথম কথাই হচ্ছে আপনি রোজা রাখবেন রমজান মাসে টানা এক মাস। আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী। প্রস্তুতি শুরু করবেন কখন? উত্তরটা কিন্তু তিন মাস আগে। সেটা কী? আমি রোজা শুরু করার আগে আমার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেব যে, ‘আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন রোগী। আমি রোজা রাখব। আমার জন্য কী কী উপদেশ আছে?’
উনি (চিকিৎসক) তখন আপনাকে চেকআপ করবেন এবং আপনার রেকর্ডগুলো দেখবেন, আপনার ডায়াবেটিস লেভেলটা ফ্লাকচুয়েট করে কি না, ওপরে-নিচে হয় কি না। আপনার কিডনিটা ভালো আছে কি না, আপনার অন্য কোনো রোগ আছে কি না। এগুলো যদি দেখে মনে হয় আপনি স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) আছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিন্তু উপারা সাজেস্ট করবেন যে, ‘হ্যাঁ, আপনি রোজা রাখেন। সে ক্ষেত্রে আপনার কোনো সমস্যা নাই।’
এখন যেহেতু হাতে আর সময় নেই, এই ভিডিওটি প্রথমবার যারা দেখলেন, তাদের হাতে মাত্র কয়েক দিন, কয়েক ঘণ্টা বাকি আছে। আমি তাদের ক্ষেত্রে বলব, আপনি তো জানেন আপনার রিসেন্টলি ডাটাগুলো কেমন, আপনার ডায়াবেটিস কেমন থাকছে, কমছে না বাড়ছে, ফ্লাকচুয়েশনটা কেমন হয়, এটা আপনি যদি মাথায় রাখেন, আমার মনে হয় টেনশন করার কোনো কারণ নাই।
সেহরি
এখন আসেন যে, কিছু টিপস দিব, খুব গভীরে যাব না। একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মনে করেন যে, আমি সুস্থ আছি, আমার সব ঠিক আছে, আমি রাখতে চাই, কোনো বাধা নেই। আপনার যদি অন্য কোনো খারাপ কন্ডিশন না থাকে, রাখতে পারেন। রাখার ক্ষেত্রে যদি আমরা সেহরির কথা চিন্তা করি, সেহরিতে কী খাব? একদম সরাসরি কথা।
সোজা কথা হচ্ছে আপনি সেহরিতে যে খাবারটি গ্রহণ করবেন, আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আমি ১৪/১৫ ঘণ্টা একেবারেই না খেয়ে থাকব। তার মানে সেহরির সময় আমি এমন একটা খাবার গ্রহণ করব, যেটা মোটামুটি আমাকে লম্বা সময় এনার্জি দেয়।
সে ক্ষেত্রে কিন্তু দেখবেন যে, ভাতের থেকে রুটি কিন্তু বেশি সময় মানুষের শরীরে শক্তির জোগান দেয়। ভাত কিন্তু খুব দ্রুত শক্তি দেয় এবং খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়। সে কারণে আমরা ভাতকে খুব একটা সাজেস্ট করি না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমরা সেহরির ক্ষেত্রে বলি আপনি একটু অপেক্ষা করেন। একেবারে আজান হওয়ার, অর্থাৎ সেহরির সময় শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে খাবেন। তাহলে আপনার জন্য সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হবে না। তখন ডিউরেশনটা কম হবে। অনেকে রাত একটা-দুইটার মধ্যে খেয়ে ফেলেন। এটা ঠিক না। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস রোগী।
সে ক্ষেত্রে খাবারের আইটেমের ক্ষেত্রে যদি সকালবেলা প্রবলেম না হয়, তারা যদি ফলমূল রাখতে পারেন, যদি খেজুর রাখেন, রুটিটা রাখেন, আমার মনে হয় যে, তিনি অনেক বেশি পুষ্টি বা এনার্জি নেয়ার একটা অবস্থায় থাকবেন।
সারা দিন না খেয়ে থাকব, সে জন্য কোনো অবস্থাতেই পেট ভরে খাব, চান্স পেয়েছি খেয়ে নিই, এমনটা যেন না হয়। তাতে দেখা যাবে যে, আপনার সকালবেলা পেট খারাপ হবে। তখন কিন্তু আপনি রোজাটাও রাখতে পারবেন না; প্রবলেমটা আরও বাড়বে। এমনিতেই অনেকের পেট খারাপ হয়। কারণ খাবারের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হচ্ছে।
সকালবেলা আপনি ঘুম থেকে উঠবেন। সারা দিন থাকলেন। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভয় কখন? ভয়টা হচ্ছে বিকেলের দিকে।
তার কিন্তু হঠাৎ করে হাইপো (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে। অনেক কমে যেতে পারে। কমে গিয়ে তিনি কিন্তু অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। যদি মাথা ঘোরায়, চোখে অন্ধকার দেখেন, পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়, ঘাম হয়, এ সময় তো আল্লাহর বিধানই আছে। রোজা না রাখা আপনার জন্য সেই সময় দায়িত্ব। সেটা আপনি মেনে নিলেন।
টেস্ট
এখন সারা দিনে আপনি রোজা রাখছেন। মনে রাখতে হবে যে, আমি যে রোজা রাখলাম, আমার এখন তাহলে করণীয়টা কী? আমার তো পরীক্ষা করতে হবে। গ্লুকোজ টেস্ট করতে হবে। আমি রোজা রেখেছি। আমি কি পারব? এটার জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অনেক আগেই সমাধান দিয়েছে। তারা বিশ্বের আলেম, বাংলাদেশের আলেমদের সাথে কথা বলে একটা চুক্তিনামা করেছে এবং তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, ডায়াবেটিস রোগী যদি শুধু নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য ব্লাড টেস্ট করে, রক্ত গড়িয়ে পড়ে না, তাহলে কিন্তু রোজার ক্ষতি হয় না। ফলে আমাদের সম্মিলিত আলেম সমাজের যে মতামত, সেটা অনুযায়ী কিন্তু যদি আপনার প্রয়োজন হয় জীবন রক্ষার্থে এবং একই সঙ্গে রোজা রাখার স্বার্থে, টেস্ট করতে পারেন। তাতে কোনো ক্ষতি নাই।
ইফতার
ইফতারের সময় আপনি কীভাবে কী করবেন? এটা জটিলতর একটা বিষয় যে, ইফতারের সময় তো আমার একটু ভাজাপোড়া না খেলে হবে না। আবার ওষুধ নিতে হবে। আবার একটু শরবত না খেলে কী রকম হয়? বলা হয়ে থাকে, যারা ডায়াবেটিস রোগী চেষ্টা করেন, যত কমসংখ্যক, একেবারে না খেলে আরও ভালো। ভাজাপোড়াটা অ্যাভয়েড করাটা সবচেয়ে ভালো।
যদি শরবতের দিকে আসি, চিনির শরবত কোনো দরকারই নাই। আপনি যদি ডাব একটা ম্যানেজ করতে পারেন, খুবই ভালো। যদি ডাব ম্যানেজ করতে না পারেন, একটু ফ্রুটগুলোকে জুস করে নিলেন, খুব বেশি সেখানে চিনি যোগ করলেন না, তাহলে কিন্তু আপনি অনেকটা ভালো খাবার গ্রহণ করলেন। চেষ্টা করবেন যে, ইফতারের পরপর কিছুটা বিশ্রাম নিতে।
রাতের খাবার
এখন নেক্সট কোশ্চেন আসে যে, আমি রাতের খাবারটা খাব কি খাব না? এটা আপনার ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি মনে করেন যে, আমি ভালোভাবে ইফতার করেছি, আমি আর খেতে চাই না, ওকে; নো প্রবলেম। এটা নিয়ে টেনশন করার কোনো দরকার নাই।
এরপর কোশ্চেন আসে যে, ডায়াবেটিস রোগীর তো একটা হাইপো হওয়ার ভয়। আরেকটা কী ভয়? আরেকটা ভয় হচ্ছে তার শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। সারা দিন তিনি পানি গ্রহণ করেননি। সেই ক্ষেত্রে তাদের জন্য টিপস হচ্ছে আপনি ইফতারের পর থেকে একবারে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় পানি গ্রহণ করবেন। তাতে কী হবে? আপনার ডিহাইড্রেশনটা ফিলআপ (পানিশূন্যতার ঘাটতি পূরণ) হয়ে যাবে এবং সকালবেলা (ভোররাত) আপনি যখন সেহরি করতে আবার উঠবেন, তার আগে কিন্তু টোটালি ফিলআপ। আপনি একদম ফিল ফ্রি।
ব্যায়াম
এবার আসল ব্যায়ামের কথা। সব মানুষেরই ব্যায়ামের প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীরা বাধ্য হন ব্যায়াম করতে। এ কারণে আমাদের শ্রদ্ধেয় ইব্রাহিম স্যার বলতেন, ‘আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। তার মানে আপনি ভাগ্যবান। কারণ আপনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। কারণ সাধারণ মানুষ নিয়ম মানতে চায় না। ডায়াবেটিস হলে তখন সবাই নিয়ম মানে। তার আয়ু আল্লাহ হয়তো বা বাড়িয়ে দেন অথবা যতদিন তার আয়ু আছে, তিনি সুস্থ থাকেন।’ সো এটা এক দিক থেকে গুড নিউজ, ডায়াবেটিস আছে।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে যেটা করণীয়, সেটি হলো যে আপনার ব্যায়ামের সময় মনে রাখতে হবে যে, আমি অবশ্যই রাতের দিকে ব্যায়াম আমি করতে পারি, কিন্তু যদি আপনি চিন্তা করেন আমি ২০ রাকাত নামাজ, তারাবির নামাজ একেবারে ২০ রাকাতই প্রতিদিন পড়ব, কোনো দরকার নেই তাহলে (বাড়তি ব্যায়ামের)।
ওইটাই বড় ব্যায়াম। নতুন করে ব্যায়ামের আর কোনো প্রয়োজন নেই। সো যিনি ২০ রাকাত নামাজ পড়ছেন, তার কোনো দরকার নাই আলাদা করে ব্যায়াম করার।
কেউ যদি না মনে করেন যে, না আমার আলাদা করে করতেই হবে, তাহলে ইফতারের পরে হালকা রেস্ট নিয়ে উঠে একটু হালকা হাঁটাহাঁটি করলেন। এটাই এনাফ। এখন তো আমরা সবাই ঘরেই থাকছি; ঘরেই নিয়ে নিলে হবে।
ওষুধ
ওষুধ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা যেটা বলি যে, আপনার সকালটা। আপনি সকালবেলাতে একটা ওষুধ গ্রহণ করতেন, ওইটা হয়ে যাবে আপনার ইফতারের সময়। তাই না? আর রাতেরটা হয়ে যাবে সেহরির সময়। তাইলে ধরেন যে, আপনি সেহরির সময় যে ডোজটা নেবেন, সেটা আপনি অরিজিনাল যে ডোজটা নিতেন, তার অর্ধেক নেবেন। অর্ধেক নেবেন কী কারণে? সেহরির সময় যদি আপনি ফুল ডোজ নিয়ে নেন, তাহলে কী হবে? সারা দিনে খুব দ্রুতই কিন্তু সুগারটা ফল করতে পারে। আমরা হাফ ডোজ দিচ্ছি তাইলে কী কারণে, যাতে বিকালের দিকে আপনি হাইপো না হন।
আপনার গ্লুকোজ লেভেল যাতে ফল না করে। সে কারণে আপনি রিগুলার ডোজ যেটা রাতে নিচ্ছেন, সেটার আপনি অর্ধেক নেবেন।
আর ইফতারে...আপনারা জানেন যে, কিছু কিছু ওষুধ আমরা ইফতারের, মানে খাওয়ার আধা ঘণ্টা পরে নিই। যেমন: সকালের নাশতাটাই তো আপনার ইফতার, তাই না? সকালের নাশতাটা ইজ ইকোয়াল টু ইফতার। তাহলে সকালে নাশতার আধা ঘণ্টা আগে আপনি ওষুধ খেতেন অন্য সময়। এখন কী করবেন?
খুবই সহজ। সেটা হলো আপনি পানিটা মুখে দিয়েই ওষুধটা নিলেন বা ইনসুলিনটা নিলেন, নিয়ে আপনি ইফতারটা দ্রুতই করে ফেলুন। এখানে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার কোনো দরকার নাই।
আরও পড়ুন:এবার হজে যেতে বয়স সর্বনিম্ন ১২ বছর হতে হবে বলে সৌদি আরব যে শর্ত দিয়েছিল তা তুলে নিয়েছে দেশটি।
ফলে যে কোনো বয়সের ব্যক্তিরা এ বছর হজ করতে যেতে পারবে বলে বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা-১ সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সৌদি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৩ সালে হজে হজযাত্রীদের কোনো বয়সসীমা নেই। ১২ বছর বয়সের নিচের বয়সী ব্যক্তিরাও পবিত্র হজ পালন করতে পারবে।
এ বছর হজ পালনের বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের দেয়া চারটি শর্তের কথা জানিয়েছিল।
এগুলো হলো- করোনাভাইরাস, মেনিনজাইটিস ও সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেয়া; যারা হজ করেননি এবার হজে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া, হজ পালনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর হওয়া এবং হজযাত্রীর কোনো বড় দীর্ঘস্থায়ী রোগ না থাকা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন:আগামী কয়েক দিন দেশের তাপমাত্রা বাড়তে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এমন অবস্থা চলতে পারে রোজার শুরুর সময়েও।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির সোমবার দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান, গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কমে এসেছিল। সেটি আগামী কয়েক দিন বাড়তে পারে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ মার্চ থেকে রোজা শুরু হবে। সে সময়ে তাপমাত্রা বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, সে সময়ে তাপমাত্রা এখনকার তুলনায় সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
দিনভর আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিয়ে বলা হয়, ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গা এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়া হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে জানানো হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে এবং তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রোববার দেশের সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে।
আজ ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সূর্যাস্ত হবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, মঙ্গলবার ঢাকায় সূর্যোদয় হবে ভোর ৬টা ৩ মিনিটে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য