কাগজ, ক্যানভাসের বাইরে দেয়াল, কাঠ, পাথরের মতো বস্তুর ওপর বিখ্যাতদের ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা, তবে স্ক্রু দিয়ে কারও প্রতিকৃতি তুলে ধরার ঘটনা বিরল। তেমনটিই করেছেন শিল্পী জোনায়েদ মোস্তফা।
কাঠের ফ্রেমে স্ক্রু বসিয়ে কুমিল্লার এই শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। এ কাজে প্রশংসাও পাচ্ছেন বেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ছাত্র জোনায়েদ মোস্তফা। তার বাবা কুমিল্লার আলোচিত প্রয়াত সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।
স্ক্রু দিয়ে প্রতিকৃতি তৈরির বিষয়ে শিল্পী জোনায়েদ বলেন, “আসলে সবাই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু পোর্ট্রেট ছবি এঁকেছে। কেউ কেউ ভাস্কর্য তৈরি করেছে, কিন্তু আমার কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ‘আয়রনম্যান’ ও প্রধানমন্ত্রীকে ‘আয়রন লেডি’ মনে হয়েছে। তাই লৌহ দিয়ে কীভাবে তাদের প্রতিকৃতি তৈরি করা যায়, সে চিন্তা থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিই।”
উপকরণ সংগ্রহ নিয়ে এ শিল্পী বলেন, ‘ঢাকার নবাবপুরে যাই। সেখান থেকে স্ক্রু সংগ্রহ করি। তারপর শুরু করি কাজ। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি বানাতে দুই মাস করে চার মাস লেগেছে। আসলে মনের খেয়াল থেকে এমন প্রতিকৃতি তৈরি করেছি।
‘পরে এগুলো কয়েকজন শৌখিন লোক কিনে নিয়ে যায়। আসলে শিল্প কেনা যায় না। তারা তো আমাকে পরিশ্রমের মূল্য দিয়েছেন মাত্র।’
এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, “জোনায়েদ তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী। কুমিল্লা নগরীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত ধর্মসাগরপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় তার শিল্পকর্মের ছাপ দেখেছি। লৌহ, ইট ও সিমেন্ট দিয়েও অনেক ভাস্কর্য তৈরি করেছেন শিল্পী জোনায়েদ।”
সংগঠক ও কলামিস্ট মনজুরুল আজিম পলাশ বলেন, ‘এ রকম কঠিন একটি মাধ্যমে সঠিক আকৃতি এবং আবেগ ফুটিয়ে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। সে ক্ষেত্রে বলা যায় শিল্পী জোনায়েদ সফল।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে পরিচালিত পুষ্টিশাসন প্রকল্পের সুফলভোগীদের বদলে যাওয়ার চিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে উপকূলীয় অঞ্চল বাগেরহাটের বাসিন্দাদের পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
জাপানের টোকিওতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘নিউট্রিশন ফর গ্রোথ (এন৪জি)’ নামের শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশন সব ধরনের অপুষ্টি কমাতে ২০২১-২০২৪ সালের জন্য আড়াই বিলিয়ন (২৫০ কোটি) ইউরো সহায়তার ঘোষণা দেয়।
এ অর্থ জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলায় মানবিক সহায়তার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদার দেশগুলোতে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ব্যয় হবে।
ইইউর অর্থায়নে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প ‘কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি, অ্যাকশন অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন’ (সিআরএএন) বাস্তবায়ন করছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং তাদের অংশীদার ওয়াটারএইড, জেজেএস ও রূপান্তর।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বাংলা পাঠশালার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের তিন সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি ঘটেছে ২৬ ফেব্রুয়ারির মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে শিশুদের চিত্রাংকন কর্মশালা ও ছবি আঁকার আয়োজনের পর ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ছিল ছবির প্রদর্শনী, অংশগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে প্রশংসাপত্র বিতরণ ও আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা সুইস কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক।
ছবি আঁকার কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিশুদের প্রশংসাপত্র দেন জেনেভা বাংলা পাঠশালার পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিয়াজুল হয় ফরহাদ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন রিয়াজুল হক ফরহাদ, এহতেশামুল হক, রিসালাত রহমান, সেগুফতা মোহাম্মদ, তাইফুর রাহান, প্রান্তি, সুনিষ্কা, মাদিহা, নিতু, রেইন, দিলারা, আফসারা, বিভোর ও রোদেলা।
জেনেভা বাংলা পাঠশালার পরিচালকের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন আরিনুল হক ও ফারানা হক।
অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে জেনেভায় বসবাসরত বাঙালিদের পাশাপাশি অন্য ভাষাভাষীসহ প্রায় ৭০ জন দর্শক-শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সবার জন্য ছিল নৈশভোজের আয়োজন।
নগরসভ্যতার বিকাশে থাকে পরম্পরা, যা বলে যায় পুর্বপুরুষের অবদানের কথা। একই সঙ্গে তা মনে করিয়ে দেয় সমকালের মানুষের দায়।
ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে এমন চিন্তা করতে পারেন শিল্পী আরিফ শাহীন। তা থেকেই হয়তো ক্যানভাসের বুকে অ্যাক্রিলিকে তুলে ধরেছেন প্রাচীন স্থাপনার নিজস্ব বয়ান।
তার এ চিত্রে নীলের তল থেকে উঁকি দেয় অতীত গৌরব। একই সঙ্গে কালো আর লালে মিলে জ্বলজ্বল করতে থাকে সমকালের জীর্ণতা।
‘হেরিটেজ অ্যান্ড লিগেসি’ শীর্ষক শিল্পকর্ম দেখে আমাদের চেতনা এভাবিই ধাবিত হতে পারে।
আরিফ শাহীন বর্তমানের শিল্পী হলেও সোনালী অতীত আর আগুয়ান ভবিষ্যৎ নিয়েই তার শিল্পকর্ম। সেই চেতনা উৎসারিত বেশ কিছু শিল্পকর্ম নিয়ে তার সপ্তম একক প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে (বাড়ি ২১/এ, সড়ক ৪)।
শুরুতে যে শিল্পকর্ম বিবৃত হয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে এই আয়োজনে।
‘দ্রোহ ও দহনে’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত চিত্রকর্মগুলোতে সমকালের মানুষের প্রেম, দ্রোহ, হাহাকার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
আরিফ শাহীনের শিল্প চেতনায় রয়েছে দ্রোহ, প্রেম ও প্রকৃতি। ছবিতে তিনি অ্যাক্রেলিকের তীব্র বর্ণালি ছড়িয়ে দেন।
সেখানে কি তবে স্বস্তির কোনো আভাস নেই? দুদণ্ড শান্তি দেবে না কোনো ছবি?
‘আমার ভেতরে বিদ্রোহ আছে, তবে শান্তিও ভালোবাসি। মাঝেমাঝে বিক্ষুব্ধ হই। মাঝেমাঝে আবার প্রশান্তও হই’, উত্তরে বলেন এ চিত্রশিল্পী।
প্রদর্শনীটি উদ্বোধন হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পী শহীদ কবীর। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব খুরশীদুজ্জামান উৎপল, শিল্পী মো. ইউনুস এবং শিশু সাহিত্যিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আমীরুল ইসলাম।
প্রদর্শনীর সমাপনী একুশে ফ্রেব্রুয়ারির রাত আটটায়।
আরও পড়ুন:অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের হাতে ‘একুশে পদক-২০২৩’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হস্তান্তর শুরু করেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।
একুশে পদক প্রদান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন।
১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে জাতি ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করে।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে একুশে পদকপ্রাপ্তদের দেয়া অর্থের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য একুশে পদকের জন্য ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক ও দুটি সংস্থার নাম ঘোষণা করে।
এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে তিনজন, মুক্তিযুদ্ধে একজন, শিল্পকলায় আটজন (অভিনয়, সংগীত, আবৃত্তি, চারু ও চিত্রকলা), রাজনীতিতে দুজন, শিক্ষায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকতা, গবেষণা এবং ভাষা ও সাহিত্যে একজন করে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন।
ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য খালেদা মঞ্জুর-ই খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (মরণোত্তর) এবং হাজী মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়।
শিল্পকলা বিভাগে অভিনয় ক্যাটাগরিতে মাসুদ আলী খান ও শিমুল ইউসুফ এবং সংগীত বিভাগে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আবদুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর), আবৃত্তি বিভাগে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পকলায় নওয়াজিশ আলী খান এবং চিত্রকলা বিভাগে কনক চাঁপা চাকমা পুরস্কার পাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছেন মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষণায় ডা. মো. আবদুল মজিদ, শিক্ষায় অধ্যাপক ডা. মাজহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় সাইদুল হক, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর), রাজনীতিতে আখতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামান পুরস্কার পাচ্ছেন।
শিক্ষা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ পুরস্কার পাচ্ছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কার দেয়।
গত বছর ২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মর্যাদাপূর্ণ এ পদক দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:পেশায় শিক্ষক হলেও লেখক হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন রচনা পারভীন। এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ।
অন্তর্জীবনের গল্প ২০২১- এর বইমেলায়, পরের বছর সুখের মতো উদযাপিত দুঃখগুলি আর এবার এসেছে তার ‘ঋষি শূন্যতায় সমর্পণ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে শব্দশিল্পের স্টলে। স্টল নম্বর ১৮৮/১৮৯/১৯০
এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে বইটি। কবি রচনা পারভীনের লেখা একটা পত্রকাব্য এটি। একদম আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইয়ের প্রতিটি কবিতা।
একজন কল্পিত মানুষ যার নামকরণ করা হয়েছে ঋষি, যাকে উদ্যেশ্য করে ভীষণ ভালোবাসা জড়িয়ে মান অভিমান, অভিযোগ, অনুযোগ করে লেখা সবকটি কবিতা।
কবি রচনা বলেন, সত্যিই ভালোবাসলে মানুষের মাঝে যে পাগলামিগুলো থাকে তা এই কবিতাগুলোতে পাওয়া যায়। যা,পাঠক হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
কর্মঠ, চটপটে, আবৃত্তিকার এবং দারুণ আঁকিয়ে, এমন গুনের অধিকারী রচনা পারভীনের জন্ম সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত কুষ্টিয়ার কুমারখালি থানার বানিয়াখড়ি গ্রামে।
পেশাগত কারণে তিনি দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন গাজীপুরে। সেখানে তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
দেশের নাট্যচর্চায় যুক্ত হচ্ছে আরও একটি নাম। মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নাট্যসংগঠন অ্যাক্টোম্যানিয়া।
দলটির প্রথম নাটক ‘হ্যামলেট মেশিন’ মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে ১১ জানুয়ারি। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির মঞ্চায়ন হবে সেদিন সন্ধ্যায়।
উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় নাট্যসংগঠন অ্যাক্টোম্যানিয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাইনার মুলারের উত্তরাধুনিক নাটক ‘হ্যামলেট মেশিন’ নির্দেশনা দিয়েছেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রভাষক নওরীন সাজ্জাদ।
নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক নওরীন সাজ্জাদ বলেন, ‘এটিই সম্ভবত মুলারের দূরহতম নাটক। জটিল প্রতীকাবলি, বিচিত্র উপমা, স্থান কালের সংকলন-প্রসারণসহ বহুমাত্রিক বিষয়াদির স্বাতন্ত্র উপস্থিতি এই নাটকটির সময়ের কাঠামো ভেঙে একে সমসাময়িক করে তোলে।
‘সমাজের অস্থিরতা, ব্যক্তিগত হতাশা, আন্তঃসম্পর্কের টানাপোড়েন এই সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আসলে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে। হ্যামলেট মেশিন মঞ্চে আনার জন্য সত্যিই সাহসের প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাক্টোম্যানিয়ার সদস্যরা এই সাহস করেছেন এবং আমি তাদের এই দুঃসাহসিক যাত্রায় সহযাত্রী হিসেবে থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি মূল পান্ডুলিপির নির্যাস অপরিবর্তিত রেখে যেন এই আপাত-দুর্বোধ্য নাটকের সহজ উপস্থাপন করতে পারি। আশা করছি দর্শকরা নিরাশ হবেন না।’
দলটির আহ্বায়ক তালহা জুবায়ের বলেন, ‘গত ১৫ অক্টোবর থেকে অ্যাক্টোম্যানিয়া নাটকটির মহড়া শুরু করেছে। ১০ জানুয়ারি কারিগরি ও পরদিন উদ্বোধনী মঞ্চায়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জার্মান লেখক হাইনার মুলারের এই নাটকে দেখা যাবে, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের হ্যামলেট ও ওফেলিয়াকে। সমকালীন যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউরোপ, নারী নির্যাতন, বাণিজ্যিক সভ্যতা, সমাজের আরও নানা স্খলনের চিত্র উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রগুলোর অভিব্যক্তি, অন্তর্নিহিত দহন এবং জটিল প্রতীকাবলীর সংমিশ্রণে নির্মিত এই নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন সায়েম সিজান, আমির হামজা আকাশ, তালহা জুবায়ের, সাগর বড়ুয়া, জয়ব্রত বিশ্বাস, পারিশা মেহজাবিন, মাঈশা কাশপিয়া অদ্রি, সানজিদা সাফরিন, ফাতেমা কানিজ শশী, সুমাইয়া ঝরা, রাসেল মাহমুদ, এম এইচ এস লাবন, গাজী রিয়াদ হোসেন, তানজিদ প্রিতম।
আরও পড়ুন:করোনা মহামারির কারণে দুই বছর স্থগিত থাকার পর রাজধানীতে ফের শুরু হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আগামী ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
এবারই প্রথম ঢাকা লিট ফেস্টে যোগ দিতে দর্শকদের কাটতে হবে টিকিট। আর এটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক আয়োজনে দর্শকের জন্য টিকিটের সমালোচনা করছেন অনেকে।
তবে উৎসবের আয়োজকরা বলছেন, বিপুল ব্যয়ের উৎসবটির জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি করপোরেট স্পনসরশিপনির্ভরতা কমিয়ে একটি টেকসই আয়োজনের লক্ষ্যে দর্শকদের জন্য এবার টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ঢাকার সহায়তায় ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথম এই সাহিত্য উৎসব আয়োজিত হয়। তখন এর নাম ছিল হে লিটেরারি ফেস্টিভ্যাল, তবে ২০১৫ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ রাখা হয়। এই উৎসবের তিন পরিচালক হলেন কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আয়োজনটি স্থগিত ছিল। এবার দশমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে উৎসব।
প্রতিবার এই উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এ বছর ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ছাড়া সবার জন্য তিন ক্যাটাগরিতে টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছেন আয়োজকরা।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন ২০০ টাকা, নিয়মিত দর্শকদের ৫০০ টাকা এবং ভিআইপি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার টাকার টিকিট রাখা হয়েছে। তবে চার দিনের প্যাকেজে টিকিট কাটলে খরচ কিছুটা কমবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চার দিনে দিতে হবে ৫০০ টাকা, নিয়মিত দর্শকদের ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ভিআইপি ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার টাকার টিকিট কাটতে হবে।
বাংলা একাডেমির মতো ভেন্যুতে টিকিটের বিনিময়ে সাহিত্য উৎসব আয়োজনের সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনেকে। টিকিটের বিভিন্ন ক্যাটাগরি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে আয়োজকরা বলছেন, ভেন্যু হিসেবে বাংলা একাডেমি ব্যবহারের জন্য তাদের বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হচ্ছে। প্রতিবার সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলেও এবার তা মেলেনি।
আয়োজকদের দাবি, লিট ফেস্টের ভেন্যু, দেশ-বিদেশের অতিথিদের যাওয়া-আসা, পারিশ্রমিক, আনুষঙ্গিক খরচসহ কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ জন্য দর্শকদের টিকিটের ব্যবস্থা রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
উৎসব আয়োজনের ভেন্যু ব্যবহার করতে দেয়ার বিনিময়ে ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান নিউজবাংলাকে জানান, এই উৎসব শুরু থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ভেন্যু ভাড়া দেয়া ছাড়া উৎসবের সঙ্গে একাডেমির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ এইচ এম লোকমান বলেন, ‘তাদের এই আয়োজনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা শুধু ভেন্যুটা ভাড়া দিয়েছি, এবারও তাই হয়েছে। তারা (ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজকেরা) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে ভেন্যুটি ফ্রি পাওয়া যায় বা কনসিডার করা হয়। একই সঙ্গে অনুদানের বিষয়ও ছিল। তবে মন্ত্রণালয় তাদের জানিয়েছে বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে। ভাড়া নেয়া বা না নেয়ার বিষয়টিও একাডেমির নির্বাহী পরিষদেরই সিদ্ধান্ত।
‘তবে বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদ ভেন্যু ভাড়া না নেয়া বা কমানোর সিদ্ধান্ত দেয়নি।’
বিগত বছরগুলোর ভেন্যু ভাড়া কত ছিল, সেটি জানাতে না পারলেও এ এইচ এম লোকমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ২১ লাখ টাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ তাদের দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের অগ্রিম ১০ লাখ টাকার চেকও দিয়েছেন।’
বাংলা একাডেমির সচিব বলেন, ‘অনুদানের বিষয়ে আমরা জেনেছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, সেটা ওই অবস্থাতেই আছে।’
উৎসব আয়োজনে এবার সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে দাবি করছেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালকের একজন কাজী আনিস আহমেদ।
তিনি মঙ্গলবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সঠিক পরিমাণ বলাটা কঠিন, শুধু এটুকু বলি কয়েক কোটি টাকার আয়োজন।’
খরচের খাতগুলো ব্যাখ্যা করে আনিস আহমেদ বলেন, ‘শুধু ভেন্যু ভাড়া বাবদই আমাদের ২১ লাখ টাকা লাগছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বিদেশ থেকে লেখকদের আনতে। যারা আসেন তাদের জন্য আমাদের কোটি খানিক টাকা খরচ হয়ে যায়। এর বাইরেও অনেক রকম আয়োজন আছে, সব মিলিয়ে কিন্তু কয়েক কোটি টাকার উৎসব।’
কোনোবারই এই উৎসব থেকে আয়োজকরা খরচের পুরো টাকা তুলতে পারেনি জানিয়ে কাজী আনিস বলেন, ‘আমরা তিন পরিচালক কিন্তু বছরের পর বছর ব্যক্তিগতভাবে এখানে ডোনেট করেছি। গত তিন-চারবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে একটা অনুদান পেতাম, এবার সেটা পাইনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকচুয়ালি একটা (টিকিট) প্রয়োজন ছিল।
‘তবে টিকিট ধার্য করার কারণ শুধু এই আর্থিক প্রয়োজনটা নয়, এটাই আসলে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালের রীতি। বড় বড় সব ফেস্টিভ্যালে গেলে এটা দেখবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা মনে করি যে আমাদের এত পাঠক আছেন, এত দর্শক আছেন, যারা এত বছর ধরে ঢাকা লিট ফেস্টে এসেছেন; তারা অনুষ্ঠান পছন্দ করেন, সাহিত্য ভালোবাসেন। তারা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের জন্য আমাদের এত চেষ্টা, এত তোড়জোড়।’
বিগত সময়ের আয়োজনে করপোরেট স্পনসরশিপ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় অনেকে বলেছেন এখানে করপোরেট স্পনসরশিপ এত কেন? করপোরেট স্পনসরশিপের নির্ভরতা কমাতে চাইলে এবং অনুষ্ঠানটাকে টেকসই করতে চাইলে, যে দর্শক-শ্রোতা-পাঠকের জন্য এই অনুষ্ঠান তাদেরই এক ধরনের স্টেকহোল্ডিং ক্রিয়েট করতে গেলে এটাই (টিকিট রাখা) হচ্ছে সবচেয়ে চমৎকার উপায়।
‘এটার মধ্যে দিয়ে তারা কিন্তু আসলে সাহিত্যকে এবং সাহিত্যিক-লেখক-চিন্তকদের একটা সম্মান দেখাবেন। তাদের কিন্তু আমাদের অনেক পারিশ্রমিক দিতে হয়। সেখানে দর্শক এখন সরাসরি পার্টিসিপেট করতে পারছেন। এ রকম একটা সার্বিক বিবেচনা থেকে আমাদের এই ব্যবস্থা।’
ঢাকা লিট ফেস্ট (ডিএলএফ) একটি অলাভজনক ট্রাস্ট বলেও জানান কাজী আনিস আহমেদ।
এবার সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার একটি ব্যয় সংকোচনের মধ্যে আছে। এ কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। তারপরও বিবেচনায় আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তো সেই সাপোর্টটা আমাদের কাছে নেই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সদয়, কিন্তু টাকা তো ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে আসতে হবে।’
ডিএলএফের ওয়েবসাইটে ঢাকা লিট ফেস্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঢাকা ও বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার নিয়ে ২০১১ সালে এই উৎসবের সূচনা হয়।
‘উৎসবটি মূলত সাহিত্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলেও ইতিহাস, রাজনীতি ও সমাজকেন্দ্রিক ফিকশন এবং সাহিত্যিক নন-ফিকশন; কবিতা ও অনুবাদ; বিজ্ঞান ও গণিত; দর্শন এবং ধর্ম-সংক্রান্ত সংস্কৃতি এবং ধারণাগুলোকে বিস্তৃত পরিসরে অঙ্গীভূত করে ও বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার জন্ম দেয়।
‘ডিএলএফ শুধু আমাদের শ্রোতাদের বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায় না বরং জোরাল বিতর্ক ও নতুন অভিব্যক্তির মাধ্যমে সেই বিশ্বকেও সমৃদ্ধ করতে চায়।’
মন্তব্য