বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়া আজ। ভোর থেকে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ তিথিকে বলা হয় ‘দেবীপক্ষ’। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন কৈলাসের শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আসেন দেবী দুর্গা। তখন থেকেই মণ্ডপে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়।
এদিন অমাবস্যার শুরু এবং পরবর্তী পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেবীপক্ষ। মহালয়ার পাঁচ দিন পর মহাষষ্ঠীতে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজ বা হাতিতে। এর ফলে বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ। আর দেবীর বিদায় হবে নৌকায়, যার অর্থ শস্য ও জলবৃদ্ধি। দেবীর এই আগমন ও গমনে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এ বছরটা সত্যিকার অর্থেই কল্যাণকর।
পুরাণ অনুযায়ী, মহালয়ার দিনেই ব্রহ্মার কাছ থেকে মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান দেবী দুর্গা। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশভুজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।
মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার আবাহন। আর এ চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা ও তার প্রশস্তি।
মহালয়া উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে ঘট স্থাপন করা হয়।
এবার সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপ ৩২ হাজার ১৬৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপ বেড়েছে ৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৪১টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে।
আরও পড়ুন:ফেনী পৌরসভা এলাকায় আল্লাহর ৯৯টি নাম সংবলিত ইসলামিক স্থাপত্যের উদ্বোধন করেছেন ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।
শহরের মিজান রোড়ের মাথায় রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থাপত্যটির উদ্বোধন করা হয়।
চত্বরটির নামকরণ করা হয় শান্তি চত্বর। ওই সময় ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান দোয়া ও মোনাজাত পাঠ করেন।
পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, ‘ফেনী পৌরসভার অর্থায়নে ইসলামিক স্থাপত্যটি নির্মাণ করা হয়। মুসলিম দেশ হিসেবে ইসলামের বিভিন্ন নিদর্শন, আল্লাহ ও রাসুলের নাম মানুষের সামনে উপস্থাপন করা মুসলমান হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে এ স্থাপত্যটি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
‘এ ছাড়াও ফেনী পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইসলামিক স্থাপত্য স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে শহরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ফেনীর এমপি নিজাম উদ্দিনের নির্দেশে কাজ করছি। আশা করছি শহরের আরও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ইসলামিক নিদর্শন স্থাপনের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রের গুরুত্ব এখান থেকে আরও বেশি উন্মোচন হবে।’
পৌর মেয়র নজরুল আরও বলেন, স্থাপত্যটির ওপর চারটি এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয়, যার মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল, বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি প্রচার করা যাবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ৫০০ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি শুরু হয়েছে ফরিদপুরে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে রোববার শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে রমজান মাসজুড়ে।
রোববার সকাল ১১টার দিকে এই বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি গোলাম মো. নাসিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে এ ডা. নাহিদ উল হকের প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শহরের আলীপুরে শেখ রাসেল ক্রীড়া কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে গরুর গোশত।
ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনে প্রথম দিন ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণ ক্রেতারা এ উদ্যোগের উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান।
আরও পড়ুন:নোয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরাম-এনজেএফ, ঢাকার আয়োজনে ইফতার ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে ঢাকাস্থ নোয়াখালী জেলা সমিতি কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এনজেএফ সভাপতি শামছুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন।
সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক জামাল উদ্দিন, জিয়াউল কবির সুমন, তরুণ তপন চক্রবর্তী, ফিরোজ আলম মিলন, লিটন এরশাদ, মো. রফিক উল্লাহ, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, এসএম হানিফ, এসএম মিজান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালীর ঢাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘদিন ধরেই। আর পবিত্র রমজানে বাজার হয়ে পড়েছে লাগামহীন। এ অবস্থায় খুবই কঠিন সময় পার করছে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। রমজানে তাদের মাসিক ব্যয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব পরিবারকে।
শহরাঞ্চলে অনেকেই আছেন যাদের বাসা সুপারশপগুলোর আশপাশে। একটা সময়ে দৈনন্দিন বাজারটা তারা এখানেই সারতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা এই পরিবারগুলো এখন স্থানীয় কাঁচাবাজারের দিকে ছুটছেন। খুঁজছেন কিছুটা সাশ্রয়ে কেনাকাটার উপায়।
রাজধানীতে বসবাসকারী বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে কাজী শরিফুল হক বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘রমজানে ইফতার ও সেহরির সময় যে খাবার খাওয়া হয়, তাতে অন্য সময়ের থেকে মাসে খাবার খরচ বেশি হয়। এসময় সাধারণত ফল, গরুর মাংস ও খাসির মাংসের মতো কিছু জিনিসের ব্যবহার কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় বেশির ভাগ পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মুরগির কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খেজুর পাওয়া যায় না জানিয়ে শরিফুল বলেন, ‘আপেল, মাল্টাসহ কিছু ফল প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
‘চাল ও ভোজ্যতেলের দাম আপাতত স্থিতিশীল। তবে সংসার খরচ শুধু বাজারের খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধ (স্বাস্থ্য), পানির বিল, গ্যাসের বিল, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়াসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।’
ইদানীং রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে শরিফুলের মতো অবস্থা অধিকাংশ ক্রেতার।
২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘স্কুইজড মিডল’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ২০১১ সালে এটিকে তাদের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করে। শব্দবন্ধটির সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘এটি এমন একটি শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত সমাজ, যাদের আয় নিম্ন বা মধ্যম স্তরের। এরা মুদ্রাস্ফীতি, মজুরি হিমায়িত ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় খরচ কমাতে বাধ্য হয়।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ইউএনবিকে বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি ও এলোমেলোভাবে বিনিময় হারের উঠানামা (আমদানি পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে) শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ শহুরে মানুষ সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে একটি পরিবারের ভোগ করা পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় নিজের জমিতে, যা শহরে হয় না। মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই এমনকি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নগর জীবনকে আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।’
কাওরানবাজারের শরিফুলসহ অন্যদের একই রকম অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাহমিদা বলেন, শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম নয়, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যয় এবং নানা ধরনের (ইউটিলিটি) বিলও বেড়েছে।
‘কোভিডের প্রাদুর্ভাব (২০২০-২০২২) কমে যাওয়ার পর পরিবারের আয়, মূলত বেতন বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পড়েছেন চাকরিজীবীরা।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩ সালের নভেম্বরে টানা ২২তম মাস বাংলাদেশে গড় মজুরি প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির হারের অনেক নিচে রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমদানি হোক বা দেশে উৎপাদিত হোক সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
‘চাকরিজীবীদের আয় না বাড়লেও অন্যদের পাশাপাশি তাদের ব্যয়ও বেড়েছে। আর এটি নির্দিষ্ট আয়ের গোষ্ঠীর জন্য একটি বিশেষ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি যৌক্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে দাম বাড়ানো হয় অর্থাৎ বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলা, তাহলে এই বোঝা নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকবে। কিন্তু যখন স্বেচ্ছাচারিতা করে তখন জনগণের পক্ষে এটি খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
‘এমনটি ঘটছে কি না সেদিকে কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগ দেয়ার উচিত। কারণ দেশে মূল্যবৃদ্ধি, মজুতদারি ইত্যাদির বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।’
যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যায়, সেখানে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, বাজারে স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এই প্রোগ্রাম আয়োজনের জন্য সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি, যেটি কলা অনুষদ ও প্রক্টর অফিসের নিয়মের ব্যত্যয়।
অনুমতি না নিয়ে প্রোগ্রাম করায় তাদের (শিক্ষার্থী) বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পক্ষ থেকে ১৩ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির।
আরবি সাহিত্য পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ১০ মার্চ এই কুরআন তেলাওয়াত কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন এবং কুরআন তেলাওয়াত শোনেন। এ সময় অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষার্থীদের মাঝে আরবি সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে টুপি বিতরণ করা হয়।
আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুবায়ের মোহাম্মদ ইহসানুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি অফিসিয়াল বিষয়। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, ‘চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে শুধু জানতে চাওয়া হয়েছে যে আরবি সাহিত্য সংসদ সংগঠনটি কাদের এবং তারা কারা। শুধু এটুকুই জানতে চাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বটতলা কলা অনুষদের অধীনে। এখানে কেউ প্রোগ্রাম করতে চাইলে আমাদের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয়। কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নয়, অনুমতি ছাড়া প্রোগ্রাম করেছে সেজন্য এই চিঠি দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও এটা অবহিত আছেন।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার অফিস থেকে এরকম কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি। তবে যেহেতু বটতলা কলা অনুষদের আওতাধীন তাই এখানে প্রোগ্রাম করতে হলে অনুষদ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কেউ এটি না নিলে অনুষদ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এ বিষয়ে আরবি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ছেলেরা রমজানকে স্বাগত জানিয়ে কুরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করেছে এটা শুনেছি। এটা তো কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রামও না। মুসলমানের দেশে কুরআন তেলাওয়াত করলে কারও গাত্রদাহ হবে এটা তো উচিত না।’
বাজার খরচ পাঁচ টাকা। আর ওই সামান্য টাকায় মিলেছে ৯ ধরনের খাদ্য উপকরণ। আর এই বাজারের ক্রেতারা সবাই সমাজের পিছিয়ে পড়া দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ।
শনিবার দুপুরে খুলনা মহানগরীর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন পাকা রাস্তায় বসেছিল এই বাজার। ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব) নামের একটি সংগঠন পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন করেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পুলিশের কনস্টেবল এস এম আকবর। সংগঠনটি পরিচালনাকারী অন্যরাও পুলিশের সদস্য। চাকরির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষও যুক্ত হয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তায় হাত বাড়ান। এরই ধারাবাহিকতায় রমজানে হাজারও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।
মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ক্রেতারা পেয়েছেন ৩ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি করে চিড়া, ছোলা, চিনি, মুড়ি, পেঁয়াজ এবং আধ কেজি করে খেজুর ও তেল। কার্যক্রম শুরুর দিনে প্রায় ৩০০ পরিবারের মাঝে এসব উপকরণ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
কেএমপি কমিশনার এ সময়ে বলেন, ‘ওয়াব নামের সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পুলিশের চাকরি করার পাশাপাশি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এটা মানবিক পুলিশিং কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। এই সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ইতোপূর্বেও বিভিন্নভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘সংকটাপন্ন রোগীকে বিনামূল্যে রক্তদান, গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়াসহ শিক্ষার খরচ বহন, দুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান এবং প্রাকৃতিক প্রতিটি দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে থাকেন।’
ওয়াব-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সেবামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একটি মানুষ তার কর্ম দিয়েই কিন্তু প্রমাণিত হয়; সে কী চাকরি করে তা দিয়ে প্রমাণিত হয় না। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই পরমাত্মা তথা স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও একটি ইবাদত।’
সামাজিক সংগঠন ওয়াবের অ্যাডমিন সরদার মসনুর আলী বলেন, ‘রমজানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এই কার্যক্রম শুরু হবে। খুলনা থেকে এর উদ্বোধন হলো। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছেন না তারা পাঁচ টাকার বিনিময়ে এসব উপকরণ পাবেন। এছাড়া যাদের পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই তাদেরকে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল রয়েছে। রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা পণ্য পৌঁছে দিয়ে আসেন, যাতে গ্রঈতা সামাজিকভাবে নিজেকে হেয় মনে না করেন।’
স্টলে স্টলে সাজানো রকমারি পণ্য। তার সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ। একজনের পর একজন স্টলে গিয়ে ১০ টাকায় কিনছেন আট ধরনের ইফতার পণ্য।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া মাঠে শনিবার সকালে দেখা যায় এমন চিত্র।
স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য এমন বাজারের আয়োজন করে ‘বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশন’। আজ ৩০০ নারী-পুরুষের মধ্যে ইফতার পণ্যগুলো তুলে দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
ইফতার পণ্য কিনতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তারা এসে লাইনে দাঁড়ান। ১০ টাকায় কেনেন এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি চিড়া, এক কেজি চিনি, এক কেজি বুট, এক কেজি ডাল, এক কেজি মুড়ি, এক কেজি পেঁয়াজ ও আধা কেজি খেজুর।
ইফতার পণ্য কিনতে পেরে আনন্দিত কামারখাড়া গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, ‘তেল, পিঁয়াজ, চিনি, মুড়িসহ কতকিছু পাইলাম ১০ টাকায়! বাজারে কিনতে গেলে কি এ টাকায় এসব পাইতাম? আল্লাহ অগো (আয়োজক) ভালো রাখুক।’
একই গ্রামের সালমা আক্তার বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম। রোজা আসামাত্র সেই দাম আরও বাড়ছে। ১০ টাকায় আট পদের ইফতার কিনতে পেরে ভালো লাগছে।’
সামছু মিয়া নামের একজন বলেন, ‘১০ টাকায় যেসব জিনিসপত্র কিনতে পেরেছি, তা বাজারে কিনতে গেলে দাম পড়বে হাজার টাকা। যারা কম টাকায় ইফতার পণ্য দিল, তাদের দোয়া করি।’
আয়োজক সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘আল্লাহ যতদিন সামর্থ্য দেবে, ততদিন এ আয়োজন করে যাব। এ বছর রোজায় ১০ টাকায় ৩০০ নারী-পুরুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী তুলে দিতে পেরেছি। আগামীতে আরও বড় আয়োজন করার চেষ্টা থাকবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য