বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়া আজ। ভোর থেকে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ তিথিকে বলা হয় ‘দেবীপক্ষ’। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন কৈলাসের শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আসেন দেবী দুর্গা। তখন থেকেই মণ্ডপে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়।
এদিন অমাবস্যার শুরু এবং পরবর্তী পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেবীপক্ষ। মহালয়ার পাঁচ দিন পর মহাষষ্ঠীতে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজ বা হাতিতে। এর ফলে বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ। আর দেবীর বিদায় হবে নৌকায়, যার অর্থ শস্য ও জলবৃদ্ধি। দেবীর এই আগমন ও গমনে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এ বছরটা সত্যিকার অর্থেই কল্যাণকর।
পুরাণ অনুযায়ী, মহালয়ার দিনেই ব্রহ্মার কাছ থেকে মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান দেবী দুর্গা। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশভুজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।
মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার আবাহন। আর এ চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা ও তার প্রশস্তি।
মহালয়া উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে ঘট স্থাপন করা হয়।
এবার সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপ ৩২ হাজার ১৬৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপ বেড়েছে ৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৪১টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে।
আরও পড়ুন:সৌদি আরবে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী এবার (২০২৪ সালে) ১০ জিলহজ বা কোরবানির ঈদ হতে পারে জুন মাসের ১৬ তারিখ।
বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের পরের দিন কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। সে হিসাবে এখানে কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখ। তবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
ধর্মমতে, মহান আল্লাহ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানির নির্দেশ দেন। আদেশের পর তিনি সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির সিদ্ধান্ত নেন। এতে আল্লাহ খুশি হন এবং হযরত ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়ে যায়। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত পশু কোরবানি করে থাকেন।
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে লম্বা ছুটি শেষ হয়েছে রোববার। সোমবার ছিল ছুটি শেষের প্রথম কর্মদিবস। রাজধানীর বাস ও রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে নগরে ফেরা মানুষের ভিড় বেড়েছে। তবে অফিস-আদালত এখনও স্বাভাবিক সময়ের চিত্র ফিরে পায়নি।
চিরচেনা রূপে ফেরেনি ঢাকা শহরও। রাস্তার পাশের বেশিরভাগ দোকান, শপিং মল বন্ধ। সোমবার রাজধানীর রাস্তায় খুবই কমসংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। যানজট তো দূরের কথা, নগরীর অধিকাংশ রাস্তাই ছিল ফাঁকা।
সোমবার সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি অফিসসহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি ছিল কম। একইভাবে সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা।
ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোলাকুলির মাধ্যমে একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়।
সকালে মালিবাগ, শান্তিনগর, গুলশান, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মিরপুর ও শাহবাগ এলাকায় স্বল্পসংখ্যক বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও যানবাহনের জটলা দেখা গেছে কেবল বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশন ঘিরে।
বেসিরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আবু রায়হান বললেন, ‘রাজধানীতে এখনও ঈদের আমেজ পুরো মাত্রায়। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। রাস্তায় কোনো যানজট বা বিশৃঙ্খলা নেই। রাজারবাগ এলাকা থেকে গুলশানে পৌঁছতে মাত্র ৬ মিনিট সময় লেগেছে। অথচ অন্য সময় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে।’
সদরঘাটে নগরে ফেরা মানুষের ভিড়
রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সোমবার ঢাকামুখী মানুষের ভিড় দেখা যায়। লম্বা ছুটি শেষে কর্মমুখী মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করায় এদিন যাত্রীর চাপ ছিল লক্ষণীয়। তবে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সবলঞ্চ ডেকে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভেড়ে। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়েও কিছু লঞ্চ ঢাকার এসে পৌঁছায়। চাঁদপুর, ভোলা, ইলিশা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোও ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের ৩১টি নৌপথে নিয়মিত ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তা দ্বিগুণের বেশি করা হয়েছে। ঈদের আগে-পরের প্রায় ১৫ দিন ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭৫টিরও বেশি লঞ্চ যাতায়াত করেছে।
আগে ঢাকা থেকে ৪১টি নৌপথে লঞ্চসহ পণ্যবাহী বিভিন্ন নৌযান চলত। নদী খনন ও ড্রেজিংয়ে অনিয়মের কারণে ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলগামী ১০টি নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার দুপুরের পর থেকে গ্রিন লাইন-৩ ও সন্ধ্যার পর পারাবত-৯, ১০, ১২ ও ১৮; মানামী, কুয়াকাটা-২, কীর্তনখোলা-২ ও ১০; সুরভী-৮ ও ৯; অ্যাডভেঞ্চার-১ ও ৯; সুন্দরবন-১২ লঞ্চসহ মোট ১৫টি লঞ্চ বরিশাল নদীবন্দর থেকে সদরঘাটে এসে পৌঁছায়।
মানামি লঞ্চের চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এবার ঈদের আগে যেমন যাত্রীর চাপ ছিলো পরে তেমন হচ্ছে না। সরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় অনেকেই এখন ঢাকা ফিরছে। তবে একসঙ্গে সবাই আসছে না। এজন্য উপচেপড়া ভিড় নেই।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী আকবর পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে ফিরেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, ‘এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের টিকিট পেয়েছিলাম। তবে লঞ্চে অনেক মানুষের ভিড় ছিলো। ঠিকভাবে ঢাকায় আসতে পেরেছি এটাই অনেক।’
মনপুরা, হাতিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় এসেছে এমভি তাসরিফ-৮। লঞ্চটির কর্মী আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘লঞ্চে পাঁচ-ছয়শ’ মানুষ এসেছে। ছুটি শেষ হওয়ায় মানুষ ঢাকায় ফিরঠে। আরামের যাত্রা লঞ্চ। এজন্য অনেকেই লঞ্চে করে আসেন।’
ভোলার চরফ্যাশন ও বেতুয়া থেকে ঢাকা এসেছে এমভি টিপু-১৩। লঞ্চটি ঘাটে ভিড়তেই দেখা যায় ডেকভর্তি মানুষ। অনেকে দাঁড়িয়েও এসেছেন।
ভোলা থেকে আসা যাত্রী মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কাপড়ের দোকানে কাজ করি। ঈদের আগের দিনও খোলা ছিল। চাঁদ রাতে ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ছুটি শেষ, মার্কেট খুলবে। এজন্য চলে আসলাম।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল অঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী কমায় ঢাকার সদরঘাটের চেনা রূপ অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। ঈদের ছুটির সঙ্গে ফিরেছে চেনা সেই ভিড়। তবে ঈদের পরে ঢাকার সদরঘাটে ভিড় বাড়লেও আগের মতো নেই বলে জানিয়েছেন লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সদরঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় থাকলেও ফিরতি যাত্রীর ভিড় ছিলো না। বরিশাল, ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা লঞ্চগুলোর কর্মীরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন। অল্পসংখ্যক যাত্রীই লঞ্চে উঠেছেন। বেশ কয়েকটি লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেকের সিট অধিকাংশই ফাঁকা। ভেতরে কিছু মানুষ বসে আছে। কেউ আবার কেবিন নিয়ে দরদাম করছেন।’
ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ আছে অনেক। কিন্তু সেই অনুপাতে যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ কম ছাড়ছে। যেগুলো ছাড়ছে সেগুলোতে ভরেই যাচ্ছে। ঈদের পরও আমরা যাত্রীর চাপ আশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়ায় আশা পেয়েছিলাম। তবে ঈদের ছুটি শেষে যাত্রীর ভিড় নেই।’
সদরঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। নিয়মিত লঞ্চগুলোই চলাচল করছে। অতিরিক্ত কোনো লঞ্চের প্রয়োজন পড়ছে না।’
টার্মিনাল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সদরঘাট নৌ-থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘আজ যাত্রীর চাপ আগের থেকে বেড়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ আনসার সদস্যরা কাজ করছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে তল্লাশিও করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষে ১০, ১১, ১২ এপ্রিল ছিল সরকারি ছুটি। ১৩ এপ্রিল শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল রোববার ছিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা নববর্ষের ছুটি।
তবে ঈদে ঢাকার বাইরে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। ফলে অফিস-আদালত, ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
স্কুল-কলেজও খুলবে আগামী সপ্তাহে। তারপরই চিরচেনা রূপে ফিরবে রাজধানী ঢাকা।
খাগড়াছড়িতে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেঙ্গী, ফেনী ও মাইনী নদীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক ও প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। ফুল বিঝুকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে নদীর পাড়গুলো হাজারো তরুণ-তরুণীর মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পাহাড়ি সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা হল্লা করে ফুল তুলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে নদী-খালে ফুল উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় নিজেদের পবিত্রতা কামনা করে। এছাড়া ফুল দিয়ে ঘরের প্রতিটি দরজার মাঝখানে মালা গেঁথে সাজানো হয়।
শুক্রবার চাকমা সম্প্রদায় ফুল বিজু পালন করছেন। শনিবার মূল বিজু আর পরেরদিন রোববার পহেলা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা পালন করবেন তারা। এ সময় ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। একইসঙ্গে শনিবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হারিবৈসু, বিযুমা ও বিচিকাতাল পার্বন পালিত হবে ফুল বিজু, মূলবিজু ও বিচিকাতাল নামের নিজস্ব বৈশিষ্টে।
রোববার খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং উৎসবে ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হবে বর্ষবরণের র্যালী। এসব উৎসবে আনন্দের আমেজ ছড়ায়।
চেঙ্গী নদীতে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ফুল উৎসর্গে সামিল হয়েছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ। বৈসাবি উৎসব দেখতে এসেছেন অনেক পর্যটকও।
১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালিত হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে যথাক্রমে ‘বৈসু’, ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বিজু’ নামে এ উৎসব পালন করে থাকেন। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।
চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ ১৩ ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্র্যময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে।
বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন এ ঈদগাহে এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত।
চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জ আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরু হওয়ার আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ শটগান চালিয়ে জামাত শুরুর ঘোষণা দেন।
সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও দলে দলে মুসল্লি আসতে থাকেন। ময়দানে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতু, বহুতল ভবনের ছাদসহ অলি-গলিতে নামাজ আদায় করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন প্রায় চার লাখ মুসল্লি।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় এসেছেন। দূরের মুসল্লিরা ঈদের দুয়েকদিন আগেই এসে অবস্থান নেন শোলাকিয়া ঈদগাহের মিম্বর, আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ, হোটেল এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে।
দূরের যারা ঈদগাহের মিম্বরে এসে অবস্থান নেন, তাদেরকে ঈদের আগের দিন ইফতার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা হয়। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর দয়া কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, দেড় হাজার পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও মাঠে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। প্রতিটি মুসল্লিকে তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।
ঈদগাহে অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটও মোতায়েন ছিল। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন স্কাউটস সদস্যরা।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এবার স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদজা মাত অনুষ্ঠিত হয়েছে শোলাকিয়ায়।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের দুজন কনস্টেবল আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম, স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক ও আবির রহমান নামে এক জঙ্গি নিহত হন।
ওই হামলার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার।
আরও পড়ুন:মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর সারা দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বৃহত্তম এ ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে বৃহস্পতিবার।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় শুরু করেন। খবর বাসসের
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সব শ্রেণি পেশার মানুষ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়।
ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ঈদের প্রধান জামাতে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে এক সাথে এবার ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘ্নে চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি,মন্ত্রিপরিষদের সদস্যব, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোষ্টে প্রদর্শন করা হয়। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা সজ্জিত করা হয়।
সারা দেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরাজাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলো যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়, এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদের প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতর এর জামায়াত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ, হুইপবৃন্দ,মন্ত্রিপরিষদের সদস্য,সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুসল্লিরা এই জামায়াতে অংশ নেন। জামায়াত সবার জন্য উন্মুক্ত। জামায়াতে আগ্রহী মুসল্লিদেরকে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে আগেই অনুরোধ জানানো হয়।
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। জামাত নির্বিঘœ করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেয়া হয়। বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
আরও পড়ুন:
জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় এ জামাত শুরু হয়। মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম জামাত। এতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানুষের সুস্থতা কামনা করা হয়।
ঈদের জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা।
বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার চাঁদ দেখা না যাওয়ায় ঈদ উদযাপন হবে বৃহস্পতিবার, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবারও ঈদ উদযাপন হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
দেশের নানা প্রান্তে ঈদ উদযাপনের খবর জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
কুড়িগ্রাম
জেলার রৌমারী, রাজীবপুর ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চারটি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। আলাদা আলাদা ঈদ জামাতে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সকালে রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রাম, রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব করাতিপাড়া গ্রাম ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও পাইকেরছড়া গ্রামে ঈদের এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের জামাত আদায় করা রৌমারী উপজেলার শৈলমারী ইউনিয়নের গয়টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোত্তালেব বলেন, ‘আমরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রমজানের রোজা রাখা, ঈদের নামাজ আদায় ও ঈদ উৎসব পালন করে আসছি।’
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের নিরাপত্তায় পূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে কুড়িগ্রামের চারটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সেবায় জেলা পুলিশ সবসময় নিবেদিত।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ বুধবার ঈদ উদযাপন করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এলাকায় সকালে দুটি ঈদের জামাতে দুই শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাধানগর ও ছিয়াত্তর বিঘি এলাকার বিভিন্ন পরিবারের শতাধিক সদস্য সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেন ছিয়াত্তর বিঘি আম বাগানে।
গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখার পাশাপাশি ঈদ উদযাপন করে আসছেন এসব গ্রামের লোকজন।
মৌলভীবাজার
জেলার শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন।
সকাল সাতটায় মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষ মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন উজান্ডির পির আলহাজ আব্দুল মাওফিক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কোরআন ও হাদিস অনুসারে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে রোজা এবং ঈদ করতে হয়। সেই অনুসারে আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করলাম।’
ময়মনসিংহ
জেলার গৌরীপুরের বাহাদুরপুর নূরমহল সুরেশ্বর দরবার শরিফে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে।
সকাল ৯টায় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মো. ইব্রাহিম। এ জামাতে ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, শম্ভুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক শ আশেকান, মুরিদ ও ভক্ত অংশ নেন। নারীদের জন্য আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরিফের পীর সৈয়দ শাহ্ নূরে আফতাব পারভেজ নূরী বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে চাঁদের মিল রেখেই প্রতি বছর এখানে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। তাই এবারও আমরা বাংলাদেশে এক দিন আগে থেকে রোজা রাখা শুরু করি এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করি।’
শেরপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের ছয়টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়েছে।
গ্রামগুলো হলো সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয়আনি পাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও চতল।
স্থানীয় লোকজন ছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও মুসল্লিরা ওইসব গ্রামে ঈদের নামাজ আদায় করতে যান।
প্রতি বছর সদর উপজেলার বামনেরচর গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেখানকার বেশ কিছু মুসল্লি নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন।
সকাল সাতটা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি জামাতে ২০০ থেকে ২৫০ জন মুসল্লি অংশ নেন। এসব জামাতে পুরুষ মুসল্লিদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
টাঙ্গাইল
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে অর্ধশতাধিক পরিবার উদযাপন করছে ঈদুল ফিতর।
সকাল আটটায় স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন।
গত ১২ বছর ধরে ওই এলাকার লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ ও রোজা পালন করে আসছেন।
ঝালকাঠি
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে জেলার রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামে বুধবার ঈদ উদযাপন করেন স্থানীয়রা।
এ গ্রামের বসবাসরত বাসিন্দাদের একটি অংশ রোজাও রাখেন এক দিন আগে থেকে। তাদের মতে, যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করা যাবে।
ডহরশংকর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের ২০০ মুসল্লি প্রতি বছর এভাবে ঈদ উদযাপন করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর আগে এ নিয়ে এলাকার অন্য মুসল্লিদের সঙ্গে হট্টগোল হলেও বর্তমানে তারা নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল আটটায় মঠবাড়ি ইউনিয়নের ডহরশংকর গ্রামের নাপিতের হাট এলাকায় দারুস সুন্নাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত আদায় করা হয়। এতে পৃথক স্থানে নারীরা একই জামাতে অংশ নেন। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম।
ঈদ উদযাপনকারী মুসল্লি মোনাসেফ মৃধা বলেন, ‘আমরা পূর্বপুরুষ থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে আসছি। গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার এক যুগ যাবত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজে উপস্থিত হচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য