× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

জীবনযাপন
Lokayat Shak Laukik diet
google_news print-icon

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস

শাক
বাংলাদেশে খাদ্যসংস্কৃতির অন্যতম উপাদান শাক। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
প্রাচীনকালে গ্রামের বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবার ছিল শাক-সবজি। চতুর্দশ শতকের ‘প্রাকৃত-পৈঙ্গল’-এ আছে, ‘কলাপাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মৌরলা মাছের ঝোল আর নালিতা শাক (পাট শাক) যে স্ত্রী নিত্য পরিবেশন করিতে পারেন তাঁহার স্বামী পুণ্যবান।‘

আমাদের খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতির শিকড় থেকে আসা। এটি প্রধানত হাজার বছর ধরে পুরাণ, ধর্ম, মিথ ও লোকাচারের ভিত্তিতে নির্মিত, আর অংশত এসেছে অন্নাভাব বা দারিদ্র্য থেকে। খাদ্যে শাকের সংযোজনও সেভাবে।

নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এক সাক্ষাৎকারে বৈষ্ণব সাহিত্যিক হরিদাস দাসের ভাই মুকুন্দ দাসের আতিথেয়তার স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, সেদিন অন্য কিছু আয়োজন করতে না পেরে মাথার ওপর সুবিস্তারি তমালগাছের পাতা বেটে ভর্তা করে তিনি অতিথিদের ‘মধ্যাহ্নের’ (বৈষ্ণবরা দুপুরের আহারকে মধ্যাহ্ন বলে) আয়োজন করেছিলেন।

রাজা দশরথ মারা গেছেন এই সংবাদ পেয়ে বনবাসে থাকা রাম ইঙ্গুদি ফল বেঁটে তার সঙ্গে বদরি (কুল) মিশিয়ে কুশগাছের পাতায় বিছিয়ে ‘পিন্যাক’ তৈরি করে পিতার উদ্দেশে পিণ্ডদান করেছিলেন।

বলা বাহুল্য, বনবাসে না থাকলে নিশ্চয় উপাচারের আয়োজন অন্যরকম হতো। তাই ভাদুড়ি বলছেন, ‘আমরা যা খেতে চাই (বা পাই), দেবতাকে আমরা তাই দিই।‘

সুতরাং সারাংশ টানা যায়, আমাদের আশপাশে যা পাওয়া যায়, তা-ই নিজেরা খাই এবং এভাবে আমাদের খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। শাক সেই অভ্যাসের অন্যতম উপাদান।

নীহাররঞ্জন রায়ের লেখা ‘বাঙালীর ইতিহাস আদিপর্ব’ গ্রন্থে আছে, ‘নানা প্রকারের শাক খাওয়া বাঙালির এক প্রাচীনতম অভ্যাস।‘

প্রাচীনকালে গ্রামের বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবার ছিল শাক-সবজি। চতুর্দশ শতকের ‘প্রাকৃত-পৈঙ্গল’-এ আছে, ‘কলাপাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মৌরলা মাছের ঝোল আর নালিতা শাক (পাট শাক) যে স্ত্রী নিত্য পরিবেশন করিতে পারেন তাঁহার স্বামী পুণ্যবান।‘

পল্লীবাসী কৃষিনির্ভর বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পরিচয় প্রাকৃত পৈঙ্গলের আরেকটি পদে পাওয়া যায়, ‘পুত্র পবিত্রমনা, প্রচুর ধন, শুদ্ধচিত্তা স্ত্রী ও কুটুম্বিনী, হাঁক দিলেই ত্রস্ত ভৃত্যগণ- এসব ছেড়ে কোন বর্বর স্বর্গে যেতে চায়?’

পঞ্চদশ শতকের চৈতন্যচরিতামৃতে চৈতন্য দেবের খাদ্যতালিকায় ‘১০ প্রকার’ শাকের উল্লেখ দেখা যাচ্ছে-

পীত সুগন্ধী ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল

চারিদিকে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল।

কেয়াপত্র কলার খোলা ডোঙ্গা সারি সারি

চারিদিকে ধরিয়াছে নানা ব্যঞ্জন ভরি।

দশ প্রকার শাক নিম্ব সুকতার ঝোল

মরিচের ঝাল ছানাবড়া, বড়ি, ঘোল।

ষোড়শ শতকের চৈতন্যকাব্যগুলোতেও বাঙালির খাবার হিসেবে শাকের উল্লেখ রয়েছে। চণ্ডীমণ্ডলে অতি সাধারণ খাদ্য বর্ণনায় আছে ‘দুই তিন হাঁড়ি’ শাকের কথা!

খুদ কিছু ধার লহ সখীর ভবনে

কাঁচড়া খুদের জাউ রান্ধিও যতনে।

রান্ধিও নালিতা শাক হাঁড়ি দুই তিন

লবণের তরে চারি কড়া কর ঋণ।

অধ্যাপক যতীন সরকার একবার আমাকে গীতার (?) একটি শ্লোক শুনিয়েছিলেন, যার মর্মার্থ হচ্ছে, ‘ঘরের আশপাশেই যখন স্বাস্থ্যরক্ষা আর উদরপূর্তির ব্যবস্থা ছড়িয়ে আছে, তখন পোড়া পেটের জন্যে পাপকার্য কেন?'

আমার স্কুলের ‘পণ্ডিত স্যার’ বৈষ্ণব ছিলেন, তিনি পুঁই শাক খেতেন না, বলতেন ওটা ‘আমিষ’।

শাক কিভাবে সংস্কৃতির অংশ হলো তা বাঙালির ১৪ শাকের আচারের উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। দেওয়ালি বা ভূত চতুর্দশীর দিনদুপুরে খেতে হয় ১৪ শাকের ব্যঞ্জন আর সন্ধ্যায় জ্বালাতে হয় ১৪ প্রদীপ। ১৪ শাক* খেতে হয় কারণ এটাই ছিল এককালের কৃষিজীবী বঙ্গবাসীর নিয়ম।

কারোর জন্যে ছিল ধর্মীয় আচার। আর ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪ পুরুষের** আত্মাকে তুষ্ট করতে হয়। পুরাণ মতে, মৃত্যুর পর মানব শরীর পঞ্চভূতে (আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি) বিলীন হয়। তাই মাটি থেকে তুলে আনা শাক খেলে অতৃপ্ত আত্মার রোষানল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লোকধর্মের এই আচারের মধ্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে।

কেউ যদি এই আচার প্রতিপালন করতে চান তাহলে তাকে ১৪ রকম শাকের (বেশির ভাগই অ-চাষকৃত বনজ উদ্ভিদ) প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে, অর্থাৎ যথেচ্ছাচারের মাধ্যমে কোনো একটি প্রজাতি যেন বিলীন হয়ে না যায়, সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।

একসঙ্গে অনেক প্রদীপ জ্বালানো ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করারও প্রাকৃতিক উপায়। দেওয়ালির অমাবস্যা রাতে উন্মুক্ত জ্বলন্ত প্রদীপে আত্মাহুতি দিয়ে পোকামাকড় মরে যায়। কীটনাশক ছাড়াই ফসল রক্ষা পায়। আবার এই সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। উত্তরের ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে শুরু করে।

ঋতু পরিবর্তনের সময় ১৪ শাকের মিলিত পুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সামাজিক ও লোকধর্মীয় আচারাদি আসলে প্রয়োজন ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

জমির বৈশিষ্ট্যের কারণেই বিনা যত্নে জলা-জঙ্গল, পতিত জমি, পুকুর পাড়, জমির আইলে অনেক ধরনের শাক জন্মায়। মানুষ এদের পরিবর্তন ঘটাবার কোনো আয়োজন করেনি কখনও। সার বা পানি দিয়ে যত্নে পালন হয় না, ফলে অনেকটাই অবিকৃত থেকে গেছে এদের অবয়ব, স্বাদ ও গন্ধ।

তবে স্থানাভাবের কারণে একসময়ের শতাধিক অনাবাদি শাকের সংখ্যা এখন দ্রুত কমে আসছে। যেমন নটে শাক। তিন ধরনের নটের মধ্যে রাঙ্গানটে আর পাওয়া যায় না। সবুজনটে পাওয়া যায় আর কাঁটানটে বিলীন হওয়ার পথে।

মাথা ধরলে কাঁটানটের মূল এবং গোলমরিচ সামান্য পানি দিয়ে বেটে কপালে লাগাতে দেখা যায় গ্রামে। গর্ভাবস্থায় এবং আঁতুড়ঘরের খাবারের তালিকায় নটে শাক থাকত। এ ছাড়া অনেক অপ্রচলিত শাকও খাওয়ার চল আছে। যেমন: সজিনা, পিপুল, তেলাকুচা, নুনিয়া, ঢেঁকি, কলমি, গন্ধভাদালি, পুনর্নভা ইত্যাদি।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
কাঁটানটে। ছবি: জাহিদ হোসেন

পিপুল সুগন্ধিযুক্ত একটি লতানো গাছ। পাতা দেখতে অনেকটা পানের মতো। খোলা জংলা অথবা বদ্ধ জায়গায় জন্মায়। অ-চাষকৃত লতাজাতীয় উদ্ভিদ, তাই পরনির্ভরশীল। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত বাড়ে। কাশিতে ও হাঁপানিতে পিপুলের ঝোল করে খাওয়া হতো। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
পিপুল শাক। ছবি: জাহিদ হোসেন

সজিনা শাককে বলা হয় ‘অলৌকিক শাক’, পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। একে বলা হয় নিউট্রিশনস সুপার ফুড এবং এর গাছকে বলা হয় মিরাকল ট্রি। ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই-তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল (যাকে বলি শজনে ডাঁটা) সব কিছুই সুস্বাদু।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
সজিনা শাক। ছবি: সংগৃহীত

নুনিয়া শাকের স্বাদ একটু নোনতা। পতিত জমি, জমির আইল, রৌদ্রোজ্জ্বল মাটিতে জন্মায়। বলা হয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ এই শাকে অন্যান্য সব শাক-সবজির চেয়ে বেশি।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
নুনিয়া শাক। ছবি: জাহিদ হোসেন

ঢেঁকি শাকের আরেক নাম বউ শাক। বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ছায়াময় এলাকার উপযোগী। সারা বছর চুপসে থাকলেও বর্ষার মৌসুমে বেশ তরতাজা হয়ে ওঠে। গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয়। ঢাকায় পাওয়া যায়, তবে কম।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
ঢেঁকি শাক। ছবি: জাহিদ হোসেন

কলমি শাক মূলত জলের আর ভেজা মাটির শাক। জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়াতে দেখা যায়। এই শাক পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে শোনা যায়। আজকাল কলমি বলতে বাজারে যেটা দেখা যায় তা চাষ করা হাইব্রিড কোনো পরিবর্তিত প্রজাতি। জীবনানন্দের সেই 'সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে' দোল দোলানো, গ্রীবা বাঁকানো কলমি এগুলো নয়।

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস
কলমি শাক। ছবি: জাহিদ হোসেন

আমাদের শৈশব ছিল মূলত শাকময়। সব যে ভাতের সঙ্গে তরকারি হিসেবে খাওয়া হতো তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবেও খাওয়া হতো। যেমন: আমাশয় হলে থানকুনি শাক বেঁটে তার রস, পেট ফাঁপলে বা বদহজম হলে গন্ধভাদালির পাতা সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে সেই সিদ্ধ পানি এক গ্লাস, কৃমি হলে পটোলের শাক (পটোলের লতি) ভাজা গরম ভাতের সঙ্গে খাওয়ানো হতো।

জ্বরে বা মাথা ধরলে সামান্য লবণ দিয়ে আমরুল শাক বেঁটে কপালে প্রলেপ দেয়া হতো। আমাদের বাড়ির পাশে মতলেব নামের এক বাউল সাধুর আখড়া ছিল। পাশেই রাস্তা। একবার এক মাতাল খুব উপদ্রব করছিল রাস্তায়, সাধুর কাছে গাঁজা চাচ্ছিল। সাধু বলছিলেন, তিনি গাঁজার ব্যবসা করেন না, কিন্তু মাতাল শুনবে না। শেষে আমার নানি বাড়ির পাশ থেকে পুনর্নভা শাক তুলে বেঁটে তার রস খাওয়াতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর মাতালের হুঁশ ফিরে এলো। অনেক বছর পর সেদিন চন্দ্রিমা উদ্যানে হাঁটতে যেয়ে পুনর্নভা দেখতে পেয়ে সেই পুরোনো কথা মনে পড়ছিল।

একটা কথা বলা দরকার। বাংলার গ্রামে অনাবাদি শাক সব সময়ে পাবলিক প্রপার্টি হিসাবে গণ্য হয়। অর্থাৎ জলা জঙ্গলে তো বটেই, এমনকি কৃষকের আবাদি জমিতেও যখন সাথি ফসল হিসেবে বথুয়া, দণ্ডকলস, জমির আইলে হেলেঞ্চা, থানকুনি ইত্যাদি জন্মায়, সেটা আর কৃষকের নিজের থাকে না। তার ওপর অধিকার বর্তায় গ্রামের সবার।

যে কেউ (সাধারণত নারীরা) জমির মালিকের অনুমতি ছাড়াই অনাবাদি এসব শাক তুলতে পারেন। এমনকি পথচলতি ভিনগায়ের নারীও কোনো সংকোচ ছাড়াই খেতে নেমে আঁচল ভরে এই শাক তুলে নিয়ে যেতে পারেন। কারণ এ শাক তো কোনো মালিক লাগায়নি, এটা নিজ থেকেই জন্মেছে। তাই এই শাক তোলার অধিকার সবার।

গ্রামীণ এই সংস্কৃতির সঙ্গে নারী-অধিকারের আদিম সংযোগ পাওয়া যায়। যে নারী এই শাক তোলেন তিনি আবাদি ফসলের কোনো ক্ষতি করেন না। অনাবাদি শাক তুলতে গিয়ে কখনও গাছসহ উপড়ে ফেলেন না। শুধু যে অংশটুকু রান্নার জন্য দরকার সে অংশটুকু তারা অতি যত্নের সঙ্গে তোলেন। এ কাজটি তারা খুব ভালোভাবেই করতে পারেন। এটা তাদের ইনডিজিনাস নলেজ।

শৈশবে দেখেছি, গ্রামীণ নারীরা ঘরে একটু চাল থাকলেই নিশ্চিন্ত থাকতেন। তাদের এই স্বস্তির একমাত্র কারণ ছিল শাক। একটু শাকভাত হলেই চলে যেত তাদের সংসার। এমনকি আষাঢ় মাসের অভাবের সময় কেবল কলমি শাক সিদ্ধ খেতেও দেখেছি তাদের। তবু তাদের কণ্ঠে শাক তোলার গান থাকত।

গানগুলোতে নারীর বিষাদ, বঞ্চনা, প্রেম আর পরিচর্যার সব গল্প মিশে থাকত। মনে আছে, একটা গান শুনেছিলাম বথুয়ার শাক নিয়ে (কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর অঞ্চলের উচ্চারণ ‘বাইতো শাক’)। গানে বলা হচ্ছে, এপারে ওপারে অনেক বথুয়ার শাক, কিন্তু শাক তুলতে যেয়ে সাপ দেখে বউ ফিরে এসেছে ফলে সবাই তাকে তিরস্কার করছে। ঘরে স্বামীর কটূ কথায় একে একে সে যায় রান্নাঘরে, উঠোনে, গোয়ালে… যেখানেই যায় সবাই একই গঞ্জনা দেয়। বোঝা যায় শ্বশুরবাড়িতে তার নিজস্ব কোনো জায়গাই নেই। মনের কথা বলা বা শোনার মতো কোনও মানুষও নেই।

বথুয়া শাকের গান এভাবেই কিছু অমোঘ সত্যকে ধরে রাখে সুরের বাঁধনে। পুরো গানটা মনে নেই কিন্তু সাপের ফণা তোলায় ভয় পেয়ে শাক তোলা ফেলে ফিরে আসা নতুন বউটির জন্য এখনও মায়া জেগে আছে মনে…

ইপার বাইতো উপার বাইতো, বাইতো দুমদুম করে

বাইতো শাক তুলতি গেলি সাপে পট করে

আরেকটা গানে পাট শাক তুলতে গিয়ে আনাড়ি বউ পাটের ডগা ভেঙে ফেলেছে দেখে স্বামী মেরেছেন। বউ তাই স্বামীকে রাগ করে ‘বুড়ো’ বলছেন-

পাটশাক তুলতি পাটের ডুগা ভাইঙ্গেছে

তাই দেখে বুড়া আমাক বড্ড মাইরেছে

বুড়ার মারে আমার কপাল ফাইটেছে…

অনেক অভিযোগ আপত্তির পর বউয়ের মান ভাঙে। একটু আগে গ্রামের মানুষকে তিনি সাক্ষী মানতে ডাকছিলেন, অবশেষে তাদেরকেই জানিয়ে দেন, ‘কিছুই করেনি বুড়া সুহাগ কইরেছে…।‘

এই লেখা পড়ে যদি নতুন করে শাক খেতে ইচ্ছা করে, তাহলে মনে রাখবেন, রান্নার সময় মাথায় রাখতে হয়- অল্প সময়, বেশি তাপ, রঙ বজায় রাখা, রান্নার প্রথম দিকে ঢাকনা না দেয়া, আলাদা পানি না দেয়া খুব জরুরি। বড়জোর পাঁচ মিনিটে শেষ করলেই ভালো।

আর হ্যাঁ, ফেলতে না জানলে শাক খেয়ে মজা নেই। কচি পাতার স্বাদই আসল শাকের স্বাদ।

* প্রধানত, ওল, বেতো, সরষে, পুঁই, শুশনি, নিম, মেথি, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, শুষণী, লাউ এবং স্থান ও প্রাপ্যতা ভেদে অন্য কোনো শাক।

** পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, শ্বশুর, শাশুড়ি।

লেখক: মানবাধিকারকর্মী

মন্তব্য

আরও পড়ুন

জীবনযাপন
GI Approval of Sherpur Chickpeas

শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’-এর জিআই স্বীকৃতি

শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’-এর জিআই স্বীকৃতি
গরুর খাঁটি দুধ প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে দেয়া হয়। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস।

শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘ছানার পায়েস’ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বীকৃতির সনদ হাতে পেয়েছেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।

গরুর খাঁটি দুধ প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি বানানো হয়। গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে দেয়া হয়। অল্প আঁচে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু ছানার পায়েস।

শুরুতে হাতেগোনা দুই-একটি দোকানে ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন জেলা সদরেই ২০টির বেশি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। জেলার উপজেলাগুলোতেও নিয়মিত তৈরি হয় এই সুস্বাদু ছানার পায়েস।

কারিগর কালিপদ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানার পায়েস। তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরির জন্য দুই কেজি দুধ, আধ কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০-১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।’

শেরপুর শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লব মিষ্টান্ন ভাণ্ডরে ছানার পায়েস পাওয়া যায়। জেলার পাঁচ উপজেলাতেও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার পায়েস বিক্রি হয়।

জমিদার আমলেও তৎকালীন জমিদাররা এখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে এই মিষ্টি কলকাতায় নিয়ে যেতেন। এখন‌ো শেরপুরে কেউ বেড়াতে এলে ছানার পায়েস খাওয়া চাই-ই চাই। নইলে যেন এক ধরনের অতৃপ্তি থেকে যায়।

বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের জুড়ি নেই। শুধু শেরপুরে নয়, সারা দেশেই রয়েছে এই মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা।

গুণে ও মানে অনন্য শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য গত জানুয়ারি মাসে জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটি সুপারিশ পাঠায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশের ৪৪তম জিআই পণ্য হিসেবে শেরপুরের ছানার পায়েস স্বীকৃতি পায়।

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বতাধিকারী বাপ্পি দে বলেন, ‘ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। কারণ আমরা এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘শেরপুরের যেকোনো মিষ্টির বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো গরুর খাঁটি দুধে তৈরি। আবার দেশের অন্য সব স্থানের চেয়ে দামও অনেক কম। বর্তমানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে।’

মিষ্টি কিনতে আসা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো শেরপুরের ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাইছে শুইনা খুব খুশি হইছি। তাই আজ ছানার পায়েস কিনতে আইলাম।’

স্বীকৃতির সনদ হাতে পেয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব খুশি। এতে উৎসাহ পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ শেরপুর জেলাবাসী। সে সুবাদে জেলার ঐতিহ্য ও সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

এর আগে শেরপুরের তুলশিমালা ধানের চাল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে জেলার দুটি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।

আরও পড়ুন:
‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদেরই থাকবে’
গোপালগঞ্জের রসগোল্লা পেল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মুক্তাগাছার মণ্ডা
টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য ঘোষণা করেছে সরকার
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পেতে অবশেষে আবেদন

মন্তব্য

জীবনযাপন
Srimangale Garo community celebrate the Wangala festival

শ্রীমঙ্গলে ওয়ানগালা উৎসবে মাতলো গারো জনগোষ্ঠী

শ্রীমঙ্গলে ওয়ানগালা উৎসবে মাতলো গারো জনগোষ্ঠী
শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে রোববার গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা উৎসব। রোববার সকালে ওয়ানগালা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।

ওয়ানগালা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষের মাধ্যমে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে তোলার সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।

মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী। সময় পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রীষ্টকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করে থাকেন।

ওয়ানগালা উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাস প্রমুখ।

আরও পড়ুন:
নেচে-গেয়ে উদযাপিত হলো গারোদের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব
ওয়ানগালায় মুখরিত গারো পাহাড়

মন্তব্য

জীবনযাপন
Seng Kutsnem festival of Khasias

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খাসিদের আয় ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দা ও আর্থিক সংকটের কারণে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ আয়োজন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিল খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে শনিবার আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম' অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে খাসিরা নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। মাঠের এক পাশে খাসিদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। মাঠের একপাশে সুপারি গাছের পাতা দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল। কারণ একেবারে শেষ সময়ে এসে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৩ নভেম্বর মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।

‘সেং কুটস্নেম’ উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।

অনুষ্ঠানস্থলে মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।

এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।

হেলেনা পতমী বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।’

খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সেং কুটস্নেম আয়োজন করি।’

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।’

আরও পড়ুন:
ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসবে মাতলেন খাসিয়ারা
মৌলভীবাজারে মণিপুরী গারো ও খাসিয়াদের উৎসব, চলছে প্রস্তুতি
ইউটিউবারের উদ্যোগে অবশেষে খাসিয়াপুঞ্জিতে বসল প্রাথমিক বিদ্যালয়
ইনফো হান্টারের ভিডিও: খাসিয়াপুঞ্জিতে পানির দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা

মন্তব্য

জীবনযাপন
Manipuris Maharasotsava is over

শেষ হলো মণিপুরীদের মহারাসোৎসব

শেষ হলো মণিপুরীদের মহারাসোৎসব ছবি ও কোলাজ: নিউজবাংলা
শুক্রবার দুপুরে বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পাড়াগুলো। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

নাচ-গানের মধ্যদিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শেষ হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা।

শনিবার ভোরে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়েছে। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল এই উৎসব উপভোগ করেছেন দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ।

শুক্রবার দুপুর ১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কমলগঞ্জে হাজির হন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষ। তাদের পদচারণায় সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে মণিপুরী পাড়াগুলো। শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে মণিপুরী মী-তৈ সম্প্রদায়ের আয়োজনে হয়েছে মহারাসোৎসব।

রাস উৎসব ঘিরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বসেছিল রকমারি আয়োজনে বিশাল মেলা।

মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামণ্ডপ মাঠে মণিপুঈ মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ১৮২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও মী-তৈ মণিপুরীদের ৩৯তম আলাদা উৎসব হয়েছে।

মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘মাধবপুর জোড়ামণ্ডপ রাসোৎসব এ বিভাগের মধ্যে ব্যতিক্রমী আয়োজন। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ বিশ্বনন্দিত মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবে সবার মহামিলন ঘটে।

‘মণিপুরীদের রাসলীলার অনেক ধরন। নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস। শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীরা পূর্ণিমারাসও বলে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছি আমরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন ছিল উৎসবের নিরাপত্তায়।’

আরও পড়ুন:
শেষ হলো দুবলার চরের রাস উৎসব

মন্তব্য

জীবনযাপন
Kalpa ship floating festival in Bankkhali river

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। ছবি: নিউজবাংলা
কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। অপূর্ব কারুকাজে তৈরি একেকটি দৃষ্টিনন্দন জাহাজ নৌকায় বসিয়ে ভাসানো হয় নদীতে। বিকেল গড়াতেই উৎসব বর্ণীল হয়ে ওঠে হাজারো দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে।

ফানুস উড়ানোর বর্ণিল আয়োজনে আকাশ রাঙানোর পর এবার প্রবারণায় কল্প জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। অপূর্ব কারুকাজে তৈরি একেকটি দৃষ্টিনন্দন জাহাজ নৌকায় বসিয়ে ভাসানো হয় নদীতে। জাহাজগুলো যাচ্ছে নদীর এপার থেকে ওপারে। আর সেই জাহাজে চলছে শত শত প্রাণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নদীর দুই পাড়েও উৎসবে মেতেছেন হাজারও নর-নারী।

বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে আয়োজন করা হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসানো উৎসব। দুপুরে শুরু হওয়া এ উৎসব বিকেল গড়াতেই বর্ণীল হয়ে ওঠে হাজারো দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে।

বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে যুগ যুগ ধরে বাঁকখালী নদীতে কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে। এবার ভাসানো হয় পাঁচটি কল্প জাহাজ।

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা সদর পার হয়েই বাঁকখালী নদীর ঘাট। বিকেল ৩টায় এই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকারণ্য নদীর দুই পাড়। গান-বাজনা, কীর্তন ও ফানুস ওড়াউড়িতে মেতে উঠেছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষরা।

পাঁচ থেকে ছয়টি কাঠের নৌকার ওপর বসানো হয়েছে একেকটি কল্প জাহাজ। ইঞ্জিন নৌকাও দেখা গেল দুটি জাহাজে। পানিতে ভাসছে মোট পাঁচটি কল্প জাহাজ। মূলত বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজে রঙের কারুকাজে জাদি, হাঁস, ময়ূর, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এসব কল্প জাহাজে। চমৎকার নির্মাণশৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজই যেন স্বকীয়তায় অনন্য।

ভাসমান এসব জাহাজে চলছে বৌদ্ধ কীর্তন। কেউ নাচছে, কেউ গাইছে; আবার কেউ ঢোল, কাঁসরসহ নানা বাদ্য বাজাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধভাঙা!

আয়োজকরা জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারী জাহাজের সংখ্যা কম। দেশের

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। যে কারণে অনেক গ্রামে এবার জাহাজ তৈরি করা হয়নি।

চট্টগ্রাম থেকে প্রবারণায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন পূজা বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘প্রায় সময় চট্টগ্রামেই প্রবারণা উদযাপন করি। উৎসব বলতে গেলে ওখানে শুধু ফানুস উড়ানো হয়। কিন্তু এই জাহাজ ভাসানোর আনন্দ সত্যিই অসাধারণ।’

বাঁকখালীতে ভাসল ‘কল্প জাহাজ’

কলেজছাত্রী প্রেরণা বড়ুয়া স্বস্তি বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। এই উৎসব মূলত বৌদ্ধদের হলেও প্রতি বছর এটি অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলায় পরিণত হয়।’

চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক সংগীত বড়ুয়া বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা এই উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছি। জাহাজ ভাসানোর প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকে বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে জাহাজ তৈরির আনন্দ শুরু হয়। বিশেষ করে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা এই উদ্যোগ নিয়ে থাকে। প্রতিবছর প্রবারণার পরদিন আমরা বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতে উঠি।’

উৎসবে আসা রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, ‘শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। এই উৎসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও সবার অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।’

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘প্রায় দুশ বছর আগে থেকে এই জাহাজ ভাসা উৎসবের প্রচলন হয় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে। সে দেশের মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এই উৎসবের আয়োজন করেন। শত বছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এই উৎসব হয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘মহামতি বুদ্ধ রাজগৃহ থেকে বৈশালী যাওয়ার সময় নাগ লোকের অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন নাগেরা চিন্তা করলেন বুদ্ধপূজার এই দুর্লভ সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে না। সঙ্গে সঙ্গে নাগলোকের পাঁচশত নাগরাজ পাঁচশ’ ঋদ্ধিময় ফণা বুদ্ধ প্রমুখ পাঁচশ’ ভিক্ষুসংঘের মাথার ওপর বিস্তার করল।

‘এভাবে নাগদের পূজা করতে দেখে দেবলোকের দেবতারা, ব্রহ্মলোকের ব্রহ্মরা বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছিলেন। সেদিন মানুষ, দেবতা, ব্রহ্মা, নাগ সবাই শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় ধ্বজা উড্ডয়ন করে বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা গ্রহণ করে পুনরায় রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই শুভ সন্ধিক্ষণ হচ্ছে শুভ প্রবারণা দিবস।’

মূলত চিরভাস্বর এই স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিশেষ করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমায় বাঁকখালী নদীতে ‘স্বর্গের জাহাজ’ ভাসিয়ে প্রবারণা উদ্‌যাপন করে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া।

উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল।

আরও পড়ুন:
জাহাজ ভাসা উৎসব, সম্প্রীতির মিলনমেলা
কল্প জাহাজ ভাসিয়ে সম্প্রীতির আহ্বান
সত্য-সুন্দরের আশায় উড়ল ফানুস
প্রবারণার ফানুসে উড়ল বুদ্ধের চুল ওড়ানোর স্মৃতি

মন্তব্য

জীবনযাপন
Butchers of Meherpur are running to Dhaka in the hope of higher wages

অধিক মজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের কসাইরা

অধিক মজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের কসাইরা স্থানীয়ভাবে কসাই সংকট হবে জেনেও অধিক মুজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন মেহেরপুরের বেশিরভাগ কসাই। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতি বছর কোরবানি ঈদের এক-দুই দিন আগে তারা ঢাকায় যান। অনেক কসাই ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে আগেভাগেই ঠিক করে নেন কাদের পশু জবাই করবেন ও মাংস কাটবেন। কসাইরা এভাবে ঢাকায় চলে যাওয়ার ফলে প্রতি বছরই মেহেরপুরে কসাইয়ের সংকট দেখা দেয়।

দুই বছরের মধ‍্যে কোনো ঈদ দেশে পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করার সুযোগ পাননি প্রবাসী আব্দুল কাদের। তবে এবার ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগেই ছুটিতে দেশে এসেছেন। কোরবানির পশুও কিনেছেন তিনি। তবে বিপাকে পড়েছেন কসাই খোঁজ করতে গিয়ে। ইতোমধ্যে তিনি দশজন পেশাদার কসাইয়ের বাড়িতে গিয়েছেন, কিন্তু কেউ ঈদের দিন পশু জবাই করে দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।

মেহেরপুরের পোশাক ব‍্যাবসায়ী ওবায়দুর বলেন, ‘কোরবানির ঈদ আসতে বাকি আছে আর দুদিন। কোরবানির পশুও কিনেছি এক সপ্তাহ হয়েছে। তবে এখনও কোন কসাইয়ের সন্ধান মেলাতে পারিনি।

‘ঈদের আগে এমনিতেই দোকানে চাপ থাকে। তার ওপর এখন কসাই খোঁজা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকজন কসাইকে বলেছি। বাড়তি মুজুরি দিয়ে পুষিয়ে দেয়ার কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। তারা বলছেন- এমনিতেই আমাদের ঢাকায় গরু বেচতে যেতে হবে। সেইসঙ্গে কসাইয়ের কাজটা করলেও হাজার বিশেক টাকা আয় করা যাবে। তাই এলাকায় থাকব না।’

আব্দুল কাদের কিংবা ওবাইদুর রহমানই শুধু নয়, ঈদের আগে তাদের মতো অনেকেই কসাই নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

স্থানীয়ভাবে কসাই সংকট হবে জেনেও অধিক মুজুরির আশায় ঢাকায় ছুটছেন জেলার বেশিরভাগ কসাই। ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু জবাই ও মাংস বানানোর কাজে যোগ দিতে প্রতি বছরের মতো এবারও মেহেরপুরের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছেন।

প্রতি বছর কোরবানি ঈদের এক-দুই দিন আগে তারা ঢাকায় যান। অনেক কসাই ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে আগেভাগেই ঠিক করে নেন কাদের পশু জবাই করবেন ও মাংস কাটবেন। এভাবে দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে এক ধরনের যোগাযোগ গড়ে উঠেছে তাদের।

কসাইরা এভাবে ঢাকায় চলে যাওয়ার ফলে প্রতি বছরই মেহেরপুরে কসাইয়ের সংকট দেখা দেয়।

নিশিপুর জামে মসজিদের ইমাম কিতাব আলী বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক পশু কোরবানি দেয়া হয়। অধিকাংশ জবাই আমাকেই করা লাগে। তবে চামড়া ছাড়ানো মাংস চুরানোর জন‍্য লোক পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই পশু জবাই করে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকেন। অনেকে আবার সিরিয়াল না পাওয়ায় ঈদের পরের দিন পশু কোরবানি করেন।’

কসাই সারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে একটা বড় ছাগল জবাই করে পনের শ টাকা টাকা ও গরু জবাই করে পাই আড়াই হাজার টাকার মতো। অথচ একই কাজ ঢাকায় গিয়ে করলে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যায়, সঙ্গে পাওয়া যায় সম্মানও। আবার গ্রামে কাজ করে অনেক সময় ঠিকমতো টাকাও পাওয়া যায় না।’

ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের জালাল কসাই জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে ঢাকায় যান তিনি; সঙ্গে রাখেন চারজন সহকারী।

তিনি জানান, পশুর মূল্যভেদে পাশ্রমিক নিয়ে থাকেন তিনি। যে টাকায় পশুটি কেনা হয়েছে, তার প্রতি হাজারে ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা রেট ধরে পারিশ্রমিক নেয়া হয়।

তবে এবার সেই রেট বাড়িয়ে দুইশ টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ঈদের দিন ৫ থেকে ৬টি পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারেন তারা। কাজ শেষে ঈদের পরদিন রাতে কিংবা দিনে রাজধানী ছাড়েন।

জেলার গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, যারা মাংস কাটার কাজে ঢাকায় যাচ্ছেন, তাদের ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল থেকে দুইশজনের বেশি কসাই ঢাকামুখী হবেন। এ কারণে তাদের কাছে মাংস কাটার ধারালো ও ভারী অস্ত্র থাকবে। পথিমধ্যে কোনো আইনগত সমস্যায় পড়লে যাতে সমাধান হয়, সে কারণে তাদের কার্ড দেয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা
বড় গরু নিয়ে বিপাকে শেরপুরের খামারিরা
হাটে বেপারিদের আনাগোনায় লাভ চাষির, কোণঠাসা সাধারণ ক্রেতা
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট বরদাশত নয়: র‍্যাব
এক হাটের পশু অন্য হাটে নেয়ার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি

মন্তব্য

জীবনযাপন
At the last minute the animal market of the capital has gathered satisfied buyers

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা

শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, দামে সন্তুষ্ট ক্রেতারা কোরবানির জন্য বিক্রি হয়ে যাওয়া গরুটিকে শেষবারের জন্য আদর করে দিচ্ছেন এক বিক্রেতা। রাজধানীর দক্ষিণ শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি হাট থেকে তোলা। ছবি: নিউজবাংলা
ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে স্থায়ী দুটিসহ মোট ২০টি পশুর হাটে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বেশ জমে উঠেছে। পশুর হাটগুলোতে দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী দুই সিটিতে পশুর হাট বসেছে। চলবে ১৭ জুন অর্থাৎ ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত মোট ৫ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক হাট বসলেও হাটগুলোতে মূলত কয়েক দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করে পশুর পিকআপ ও ট্রাক। খবর বাসস

ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত হাট থাকলেও এখন আর ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। হাটে ঘুরেফিরে দর-দামে মিলে গেলেই নিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের পশুটি।

রোববার রাত পোহালেই পরের দিন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। রাজধানীজুড়ে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার। উত্তরার দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গায় বসেছে বড় দুটি পশুর হাট। এই পশুর হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও ভেড়া। শুক্রবার পর্যন্ত পশুর দাম একটু কম থাকলেও আজ দাম কিছুটা চড়া। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মতে দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

শনিবার উত্তরার গরুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটভর্তি বিভিন্ন জাতের দেশীয় ছোট, মাঝারি ও বড় জাতের অসংখ্য গরু উঠেছে, হাটে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে পশুর হাটে আসা অধিকাংশ ক্রেতাই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরুই পছন্দ করছেন। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম কমে যাবে। তখন কোরবানির পশু তারা সস্তায় কিনবেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাই আজকের মধ্যেই পশু কিনে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে উত্তরার হাটে এসেছেন মোস্তফা মাতাব্বর, মো. রাসেল ও রফিক নামে তিন গরু ব্যবসায়ী। তারা জানান, এ বছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছেন। উত্তরার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই তাদের পছন্দের গরু কিংবা ছাগল কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বাজারে বড় গরুরও কমতি নেই। তবে ছোট ও মাঝারি জাতের গরুর চাহিদাই বেশি।

হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা সালাম বেপারী বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টাজুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এ ছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, গরুকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম শিশির হাটে এসেছেন গরু কিনতে। তিনি বলেন, ‘যতটুক ঘুরে দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে এবার গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কমই আছে।’

গরুর পাশাপাশি হাটে প্রচুর ছাগল, ভেড়াও উঠেছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির একটি ছাগল ক্রয় করা সম্ভব। বগুড়ার নবাব, লাট বাহাদুর, কালো মানিক ও লাল বাদশা নামে ৪টি বড় জাতের বিশাল গরু উত্তরার হাটে আনা হয়েছে। এগুলোর দাম চাওয়া হচ্ছে ১২-১৫ লাখ টাকা।

উত্তরার শ্রমিক নেতা রুবেল জানান, ‘গতকাল রাতে আমার বন্ধু উত্তরার গরুর হাট থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বেশ বড় আকৃতির গরু কিনেছেন। আমার কাছে মনে হলো হাটে হঠাৎ গরুর দাম কমে গেছে। এতে আমি বেশ খুশি এ কারণে যে, এ বছর অনেকেই তার সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিতে পারবেন।’

রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন শুধু ছোট সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া বাজারে প্রচুর পরিমাণ ছাগলও উঠেছে। বেচাকেনাও বেশ জমে উঠেছে। ছোট খাসির দাম ১০-১৫ হাজার টাকা। মাঝারি খাসি ২০-২৫ হাজার এবং বড় জাতের খাসি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

গাবতলী পশুর হাটে ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উট তোলা হয়েছে। উট দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও ইউটিউবাররা। মো. মাহফুজুর রহমান অপু দুটি উট এক মাস আগেই কিনেছেন। এরপর সড়কপথে উট দুটি বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উটের মালিক মো. মাহফুজুর রহমান অপু বলেন, ‘প্রতি উটে ১৪-১৫ মণ মাংস হবে। আমার পরিবার উটের ব্যবসার সঙ্গে ২০-৩০ বছর ধরে জড়িত। আমার বাবাও এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরিচর্যা হিসেবে ঘাস, কুড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে উট দুটিকে। রাজস্থান থেকে দুটি উট নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য কোরবানির সময় বিক্রি করা। আমরা দুটি উটের দাম চাচ্ছি ৬০ লাখ টাকা। তবে কিছু কমে হলেও বিক্রি করব।’

উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার মো. কফিল উদ্দিন মেম্বার বলেন, ‘হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। হাটে গরুতে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রচুর পরিমাণ গরু উঠেছে। তবে পশুর হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। আশা করছি, আজ রোববার আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল থেকে হাটে পশুর বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে বাড়বে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসা অব্যাহত রয়েছে। এই হাটে শতকরা ৫ টাকা হারে হাসিল নেওয়া হচ্ছে। হাটে নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই।’

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ৯টি হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১১টি হাট বসেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে হাট বসেনি।

ঢাকা উত্তরে অস্থায়ী ৮টি হাটের মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গা।

ঢাকা দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটের মধ্যে রয়েছে- খিলগাঁও রেলগেট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগে রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।

আরও পড়ুন:
ঈদযাত্রার প্রভাব নেই সদরঘাটে, গার্মেন্টস ছুটির অপেক্ষা
বাজার কাঁপাতে আসছে বিগবস, বাদশা, টাইগার, বুলেট ও রক
পশুর হাটে ‘ষাঁড়ের লাথিতে’ খামারি নিহত
পশুর হাটে বাড়ছে রঙিন মালা দড়ির চাহিদা
ঢাকার কোথায় কোথায় বসছে কোরবানির পশুর হাট

মন্তব্য

p
উপরে