বাজারের চায়ের দোকানগুলো থেকে যদিও হিন্দি সিনেমার সংলাপ আর ওয়াজের সুর ভেসে আসছে, এর মধ্যেই মাঝির কণ্ঠে শাহ আবদুল করিমের গান- ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি...’। ধল বাজারে এসে নৌকা থামতেই কানে ভেসে আসল এমন সুর।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার এই বাজার ঘেঁষে উজান ধল গ্রাম। এই গ্রামেই ১৯১৬ সালে জন্ম নেন শাহ আবদুল করিম। যিনি পরবর্তীতে হয়ে উঠেন ভাটির মানুষের দুঃখ-বঞ্চনা, প্রেম-বিরহ, ভালোবাসা ও ক্ষোভের সুরেলা কথক। মাটি আর মানুষের কথা ও সুরে গান গেয়ে হয়ে উঠেন বাউল সম্রাট। ১২ সেপ্টেম্বর তাকে হারানোর দিন; ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বাউল সম্রাটের বাড়িতে যাওয়ার পথেই দেখা রশিদ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনিও বাউল। করিমেরই শিষ্য। আবদুল করিমকে ‘বাবা’ সম্বোধন করেন।
বাজারের রেস্টুরেন্টগুলো থেকে কানে আসা সুর ও স্বর নিয়ে কথা উঠতেই আক্ষেপ তার কণ্ঠে। রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাটির আগের দিন আর নাই। ঘরে ঘরে ডিশলাইন এসে গেছে। মোবাইলও আছে সবার। এসবে এখন খালি ভিনদেশি গান বাজে। ভাটির সুর, বাউল সুর আর তেমন কানে আসে না।’
বলতে থাকেন রশিদ উদ্দিন- ‘ধর্মের কথা বলে তো এখন আমাদেরও গানে বাধা দেয়া হয়। অথচ আগে এমন ছিল না। আগে বর্ষা মৌসুমে প্রতি ঘরেই বাউল গানের আসর বসত। আমরা দিনরাত গান করতাম। কিছু বাধা ছিল, তবে বেশিরভাগ মানুষ গানে উৎসাহ দিত।’
আব্দুল রশিদের কাছে বদলে যাওয়া দিনের আফসোস শুনতে শুনতেই পৌঁছে যাওয়া আবদুল করিমের বাড়িতে। করিম গত হয়েছেন ১৪ বছর। তবু এখনো পুরো বাড়িটিই যেনো করিমময়।
বাড়ির পাশেই নদীর ঘাটে বাধা রঙিন নৌকা, নাম- করিম তরী। করিমের ছবি আর গানের কথায় সাজানো নৌকাটি। আরেকটু এগোলেই একটি ভবন- ‘শাহ আবদুল করিম স্মৃতি জাদুঘর’। ভবনের সামনে করিমের আবক্ষ ভাস্কর্য আর ঘরের ভেতর ঠাসা বাধ্যযন্ত্র, সনদ, ছবি ও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্রে। এর পাশেই দুটি সমাধি। পাশপাশি শুয়ে আছেন দুজন। আবদুল করিম আর তার স্ত্রী সরলা। মৃত্যুও যাদের আলাদা করতে পারেনি।
এসব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েও পুরনো আফসোস আবারও প্রকাশ করেন আব্দুল রশিদ। বলেন, ‘সবই আছে কিন্তু আগের পরিবেশটা নাই। ভাটি এলাকা কিছুটা উন্নত হচ্ছে, তবে মানুষগুলো বদলে যাচ্ছে। আগের মতো গানের আসর নেই।’
করিম সঙ্গীতালয়ের ভগ্নদশা নিয়েও আক্ষেপ তার কণ্ঠে।
হাওরে তখন বন্যা। চারদিকে থৈ থৈ পানি। পানিতে ডুবছে হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। চারদিকে ফসল হানির হাহাকার। কৃষকের আর্তনাদ। শাহ আবদুল করিমের গানেও পাওয়া যায় হাওরের এই অকালবন্যার চিত্র। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ভাটির চিঠি গ্রন্থে করিম লিখেছেন- ‘জল নামে রাস্তায় কোনো বাধাবিঘ্ন নাই।/ প্রচুর মাটি নেমে আসে চোখে দেখতে পাই।/ পাহাড়ি জল নিচে নেমে নদীপথে চলে/ এলাকা প্লাবিত হয় অকালবন্যার জলে।’
এই গানটির প্রসঙ্গ টেনে করিমপুত্র শাহ নুর জালাল বলেন, ‘গানে তো বাবা মানুষ, হাওর আর ভাটির কথাই বলে গেছেন। কিন্তু ভাটির মানুষের দুর্দশা গোছাতে তো কেউ উদ্যোগ নেয় না। ঢলে পানির সঙ্গে মাটি আসায় নদী ভরাট হচ্ছে। এতে বন্যা বেশি হচ্ছে। এটা বাবা অনেক আগে গানে বলে গেছেন। কিন্তু নদী খনন তো আর হয়নি। ফলে প্রতি বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
গানে গানে এভাবেই মানুষের কথা, ভাটির দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিলেন আবদুল করিম। ফলে বাউল হয়েও তিনি হয়ে গেয়ে ছেন গণসঙ্গীত শিল্পী। হয়ে উঠেছেন গণমানুষের শিল্পী।
পাঁচ বছর পর পর দেশে ভোট আসে। গরীবের উন্নয়নের আশ্বাস আর ধর্মের বাণী নিয়ে ভোটারদের কাছে আসেন প্রার্থীরা। ভোটের লোকজনও দাঁড়ায় ভোটের লাইনে। কিন্তু তদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। গরিব আরও গরিব হয়ে ওঠে।
করিমের উপলব্দি তাই গরীবের কেউ নেই। তিনি লিখেছেন- ‘ভোট দিবায় আজ কারে?/ ভোট শিকারী দল এসেছে নানা রঙ্গ ধরে/... কেউ দিতাছে ধর্মের দোহাই, কেউ বলে গরিবের ভাই/ আসলে গরিবের কেউ নাই, গরিব ঠেকছে ফেরে।’
রাজনীতিবিদদের এই শঠতা আর সাধারণ মানুষের বঞ্চনা নিয়ে আরেক গানে করিম গেয়েছেন- ‘ভাইরে ভাই/ভোট নেওয়ার সময় আইলে/ নেতা সাহেব এসে বলে/ এবার আমি পাশ করিলে/ কাজ করবো গরিবের দায়,/ শেষে দেখা যায় ধনির বাড়ি খাসী খাওয়া/ লাইসেন্স পারমিট দেওয়া,/ নৌকা বাওয়া আর সালাম দেওয়া/ এই দুইটাই গরিবে পায়,/ গরিবের কি মান অপমান দুনিয়ায়।’
করিমপুত্রের সঙ্গে আলাপকালেই চার তরুণ এসে ঢুকেন বাড়িতে। ঢাকা থেকে হাওরে ঘুরতে এসেছেন তারা। এই ফাঁকে আবদুল করিমের বাড়িও দেখে যাওয়া। দেখে যাওয়া যাওয়া যে পরিবেশ থেকে করিম হয়ে উঠেছেন বাউল গানের সম্রাট।
তাদেরই একজন নিয়াজ আহমদ। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। লোকগান করেন। বললেন, ‘করিমের গান আমার খুব পছন্দ। তার জীবনচারণও পছন্দ। তাকে মুর্শিদ হিসেবে গণ্য করি। মুর্শিদ যেখানে শুয়ে আছেন, সেই মাটি দেখতে এসেছি। তার স্পর্শ পেতে এসেছি।’
মাঝেমাঝেই দূরদুরান্ত এমন অনেকে করিমের স্মৃতির খোঁজে ভাটির এই দুর্গম জনপদে আসেন জানিয়ে শাহ নুর জালাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা আসে তাদের বেশিরভাগই তরুণ। তারা ব্যান্ড, রক, হিন্দি ইংরেজি গান শুনে। আবার বাউল গানও শুনে। কেবল শুনে না বাউলদের সম্পর্কে তারা জানতে চায়। তাই দূরের পথ পাড়ি দিয়ে করিমের ভিটায় আসে।
‘এদের মধ্যেই বাউল আবদুল করিম বেঁচে থাকবেন। ডিশ আর ইন্টারনেট এসে করিমকে ভুলিয়ে দিতে পারবে না। বরং এসবকে ব্যবহার করে করিমের গান আরও বেশি মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে।’
তবে করিমের গানের চর্চা ও প্রসারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ক্ষোভ লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশের কণ্ঠে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিরাইয়ে একটি আবদুল করিম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কাজ শুরু হয়নি।
‘জীবিত থাকতেই করিম নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন ‘করিম সঙ্গীতালয়’। পৃষ্টপোষকতার অভাবে এটিরও কার্যক্রম থেমে আছে। ফলে লোকের মুখে মুখে করিমের গান ছড়িয়ে পরলেও তার গান শেখা বা শুদ্ধভাবে চর্চার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে অনেকক্ষেত্রে গানের কথা ও সুর বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।’
করিমের বাড়ির পাশেই হাওর। তখন হাওরে ডুবে যাওয়া ধান নৌকায় করে কেটে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। কণ্ঠে তাদের করিমের গান- ‘বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে...’। হাওর ছেড়ে শহরে ফিরেও সেই একই সুর কানে এল, মাইক্রোবাসের ক্যাসেট প্লেয়ার থেকে ভেসে আসছে- ‘কেমনে চিনিবো তোমারে...’।
ক্যাবল-ইন্টারেন্টের প্রভাব, বহুবিদ সংস্কৃতির প্রবেশ ও আধিপত্যসহ সত্ত্বেও গ্রাম থেকে শহরে এখনো বেজে চলছে আবদুল করিম।
আরও পড়ুন:জামালপুরে দেড় শতাধিক এতিম শিশুকে নিয়ে দোয়া ও ইফতার মাহফিল করেছে জামালপুর জেলা প্রেসক্লাব।
বুধবার জামালপুর প্রেসক্লাবের ছাদে এই দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ইফতারের আগে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ।
এ ছাড়াও পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন, জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ আকাশসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মেহেদী।
এ সময় বক্তারা বলেন, এতিমদের নিয়ে এই ধরনের ইফতার আয়োজন সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। পবিত্র রমজানে সমাজের বিত্তবানদের সামর্থ্য অনুযায়ী এতিম, দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান বক্তারা।
দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ শহরের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার দেড় শতাধিক এতিম শিশু ও আলেমগণ অংশগ্রহণ করেন।
দোয়া ও ইফতার মাহফিলে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন সদরঘাট জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ছানাউল্লাহ।
আরও পড়ুন:চলছে চৈত্র মাস। দেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই এখনও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। শীত শেষ হতে না হতেই হঠাৎ শুরু হয়েছে প্রখর রোদ। রোদে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে থাকা পানি।
এ অবস্থায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় চলছে মাছ ধরার ধুম। বিশেষ করে রাস্তার ধারের জলাশয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে মাছ ধরার দৃশ্য।
ছোট-বড় সবাই মিলে শুকিয়ে যাওয়া খাল-বিল, জলাশয় ও জমি থেকে ধরছেন দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। পানি সেচে ফেলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাছ ধরা হচ্ছে। এসব জায়গাতে বেশিরভাগই ধরা পড়ছে ছোট ও ডিমওয়ালা দেশি মাছ। বড় মাছ খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মাদারীবন এলাকায় রাস্তার পাশে দেখা যায়, শুকিয়ে যাওয়া খেত ও খালে ডমকি দিয়ে সেচে জাল নিয়ে মাছ ধরছে শিশু ও বড়রা। কেউ কেউ কাদার মধ্য থেকে মাছ ধরছেন। কেউ আবার আবাদি জমির ধারে খাদের পানিতে জড় হওয়া মাছ ধরছেন।
শৌখিন মাছ শিকারী আলাল মিয়া বলেন, ‘পানি সেচের পর সকাল থেকে মাছ ধরতে শুরু করেছি। পুঁটি, মলা, টাকি, টেংরা ও কই মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে ডোবায় পানি জমে ছিল। এখন পানি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ ধরছি। চার-পাঁচ কেজির মতো মাছ পেয়েছি। এগুলো বাজারে বিক্রির জন্য না। আমার বাড়িতে সবাই মিলে খাব।’
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন তো শুকনো মৌসুম। খাল-বিলে তেমন পানি নেই। তাই জলাশয়, খাল ও বিলে মাছ ধরার ধুম পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলার শৌখিন মাছ শিকারীরা বিভিন্ন জলাশয় থেকে মাছ ধরছেন। এতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে।’
তবে কিছু অসৎ জেলে বিষ ও চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করায় দেশীয় বিভিন্ন মাছের প্রজাতি হুমকির মুখে বলে জানান এ কর্মকর্তা। বলেন, ‘বহুবার অভিযান পরিচালনা করেছি। তারপরও তারা তা ব্যবহার করছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।’
আরও পড়ুন:ছোট ছোট বাচ্চারা ঘিরে ধরেছে, আছে নানা বয়সের মানুষও। দূর থেকে মনে হবে হয়ত টিসিবির পণ্য সংগ্রহের লাইন। তবে কাছে গিয়ে দেখা গেল ভিন্নচিত্র। ১০ টাকার বিনিময়ে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভার প্রধান সড়কের পাশে বসেছে এ আয়োজন। প্যাকেট খুলে দেখা যায়, দামে ১০ টাকার হলেও সেখানে অন্তত ৭০ টাকা মূল্যমানের ইফতার সামগ্রী রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার অটো পার্টস ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান তিন বছর ধরে এই আয়োজন চালিয়ে আসছেন।
ফ্রিতে কেন দিচ্ছেন না?- জবাবে আনিসুর রহমান বলেন, ‘সারা দিন রোজা রেখে মানুষ ইফতার করবে নিজের টাকায়- এই অনুভূতিটুকু তাদের হোক। এই ভাবনা থেকেই আমি এইটুকু মূল্য যোগ করেছি। আমার এটা করতে ভাল লাগছে এবং বাকিটা তো উপরে একজন আছেন। তিনি সব জানেন এবং দেখেন।’
আনিসুর রহমানের দুই সন্তান শাহাদাত হোসাইন ও সাজ্জাদ হোসাইন বাবাকে সহয়তা করছিলেন।
তারা জানান, বাবুর্চি দিয়ে তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষে এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হয়। বাবুর্চিও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করেন।
বাবার এই কাজ দুই ছেলেরই খুব ভাল লাগে জানিয়ে তারা বলেন, তাই প্রতি বছর এই সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এটাকে রোজাদারদের সেবা করার একটা সুযোগ হিসেবে দেখছি।
আনিস সাহেব জানান, সামর্থ্যবানরা এগিয়ে এলে এটার পরিসর বড় করা যাবে। বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া যাবে।
ইফতার সামগ্রী সংগ্রহ করতে আসা মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী জানায়, সে ১০ টাকা দিয়ে পরিপূর্ণ ইফতার সামগ্রী পাচ্ছে। এজন্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এখানে চলে আসে।
পাশের গ্রাম বাইঙ্গাপাড়া থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তিও এখান থেকে ইফতার সংগ্রহ করার কথা জানান।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির সময়ে আনিস সাহেবের এমন কাজকে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন:রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মুড়ি। বছর দশেক আগেও গ্রামের বাড়ি বাড়ি মুড়ি ভাজা হতো। তবে সময় সাশ্রয় করতে এখন তা ভাজা হয় মেশিনে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে ভাজা মুড়ি এবং তার স্বাদ।
কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের পাশে বরুড়া উপজেলা। এই উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম লক্ষ্মীপুর। ছিমছাম সবুজের সমারোহে ঘেরা গ্রামটিতে প্রবেশ করলেই নাকে লাগে মুড়ির ঘ্রাণ।
অর্ধশত বছর ধরে এ গ্রামে বংশ পরম্পরায় হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ চলছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে হাজির হন এ গ্রামে। কখনও কখনও পাইকারদের ঠিকানা অনুযায়ী মুড়ি বস্তায় ভরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বছরজুড়ে মুড়ি ভাজা ও বিকিকিনি চললেও রমজান এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় প্রস্তুতকারকদের। এ গ্রামের মুড়ির কদর গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর-নগর সবখানে। এ কারণে মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুর গ্রামের অন্তত ৪০টি পরিবার।
সরেজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতে গৃহবধূরা তাদের রান্নাঘরে একটি চুলায় চাল ভাজেন। অন্য চুলায় গরম করেন বালু। এরপর একটা পাত্রে গরম বালু ও চাল ঢেলে নাড়তে থাকেন। আর তখন চাল ফুটে মুড়ি হয়।
পরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা এ মুড়ি চালনির ওপর রেখে ঘোরাতে থাকেন। তখন বালু নিচে পড়ে যায়। আর মুড়ি থাকে চালনিতে। পরিষ্কার মুড়ি তারা বস্তায় ভরেন। তারপর এসব মুড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এমনকি ঢাকায়।
গ্রামের দুর্গাচরণ পাল জানান, তাদের গ্রামে অন্তত ৪০টি পরিবার বাণিজ্যিকভাবে হাতে মুড়ি ভাজার কাজে যুক্ত। প্রতিটি পরিবার গড়ে ২ হাজার ৭০০ কেজি মুড়ি ভাজে। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারের কাছে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এতে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। বাজারে হাতে ভাজা এক কেজি মুড়ি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
তিনি আরও জানান, বছরের অন্য সময় প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন। তবে রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়। এ মাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি করেন তারা।
শ্রীকৃষ্ণ পাল জানান, দুই ধরনের চাল থেকে মুড়ি ভাজা হয়। এর একটি গিগজ চাল। এ চালের মুড়ি লম্বা হয়। তবে বৈশাখ মাসে শুরুতে হবে টাফি চালের মুড়ি ভাজা। এ চালের মুড়ি গোল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু।
তবে দীর্ঘদিন ধরে যারা লক্ষ্মীপুর গ্রামে হাতে ভেজে মুড়ি বিক্রি করছেন, তারা এখন খুব একটা মুনাফা করতে পারেন না। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধিসহ মুড়ি বাজারজাতকরণে অনেক সমস্যা দেখা দেয়ায় ভুগতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর গ্রামে বংশ পরম্পরায় চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি ও বিক্রির কাজ। তাদের মুড়ি স্বাদে ও মানে অনন্য।
‘শুনেছি তাদের এই শিল্পটি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যা করা যায় তা করতে আমি চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি আয়োজনে প্রশাসনের আপত্তির প্রতিবাদে ‘গণ ইফতার’ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা।
এর আধা ঘণ্টা আগে থেকেই হাতে ইফতারসামগ্রী নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পত্রিকার কাগজ ও জায়নামাজ বিছিয়ে সড়কেই বসে পড়েন তারা। ইফতারের আগে তাদের কয়েকজন হামদ ও নাত পরিবেশন করেন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী উমর ফারুক প্রমুখ।
তারা বলেন, ক্যাম্পাসের ইফতার পার্টি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক অনন্য বন্ধন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা বন্ধের পায়তারা করেছিল। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ সংস্কৃতি নিয়ে কূটকৌশল সকল শিক্ষার্থীর হৃদয়ে আঘাত করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইফতারের মাধ্যমে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে বিনষ্ট করবে।
আগামীতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে কর্তৃপক্ষ বিরত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি না করার অনুরোধ করা হয়। এ চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও গণ ইফতার কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পরে সমালোচনার মুখে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইফতার মানা করার বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয় কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন ছাড়া ক্যাম্পাসে যে কেউ ইফতার পার্টি করতে পারবে।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জ সদরে বিয়ের অনুষ্ঠানে দেশীয় মদ্যপানে দীপু সরকার ও প্রসেনজিৎ সরকার নামের দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুই যুবক সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে বলে জানা গেছে।
শনিবার রাতে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়।
২১ বছর বয়সী প্রসেনজিৎ মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বয়রা ইউনিয়নের দাসকান্দি বয়ড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ২৯ বছর দীপু সরকার গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ পাড়া এলাকার সতীশ সরকারের ছেলে।
নিহত দীপুর মামাতো ভাই সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর এলাকায় আমার বোনের গায়ে হলুদ ছিল। এ উপলক্ষে দীপু ও প্রসেনজিৎসহ ৬/৭ জন যুবক দেশীয় মদ্যপান করে আনন্দ করেন।’
তিনি বলেন, ‘সারা রাত আনন্দ করার পর শনিবার সকালে দীপু ও প্রসেনজিৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়িতে বিশ্রামের পর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় তাদের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার করেন, কিন্তু পরিবারের লোকজন দীপুকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে না নিয়ে মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে এবং প্রসেনজিৎকে মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে দুই হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, দীপুর মরদেহ বলড়া শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। আর প্রসেনজিতের মরদেহ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া আহত আরও চারজন নবাবগঞ্জের বান্দুরা হেলাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, ‘নিহত প্রসেনজিত সরকারের মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে হরিরামাপুর থানা পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
‘প্রাথমিক অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, তারা বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
আরও পড়ুন:নতুন করে দুইদিন সময় না বাড়ানো হলে বৃহস্পতিবারই হতো অমর একুশে বইমেলার শেষদিন। তবে সময় বাড়ানোয় আরও দুদিন চলবে বইমেলা। ইতোমধ্যে সব বই মেলায় চলে এসেছে। ফলে শেষ সময়ে এসে পাঠকরা সহজেই খুঁজে নিতে পারছেন তাদের পছন্দের বই।
বইমেলায় নবীন ও তরুণ জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে থাকলেও হারিয়ে যাননি কিংবদন্তি লেখকরা। তরুণ জনপ্রিয় লেখকের ভীড়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে তাদের বইও।
এবারের বইমেলায় কোন বইগুলো সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে- জানতে চাইলে প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, “সর্বোচ্চ বিক্রিত তিনটি বইয়ের নাম বলতে বললে যে তিনটি বইয়ের নাম আসবে, সেগুলো হলো- আনিসুল হক স্যারের ‘কখনো আমার মাকে’, আসিফ নজরুল স্যারের ‘আমি আবু বকর বলছি’, আনু মোহাম্মদ স্যারের ‘অর্থশাস্ত্র’ বইটি।
“এছাড়া আরও দুইটি বইয়ের নাম বলা যাবে, মহিউদ্দিন আহমেদ স্যারের ‘প্লাবনভূমির মহাকাব্য পলাশী থেকে পাকিস্তান’ এবং জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী স্যারের ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড’।”
তিনি জানান, ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড’৭/৮ দিন আগে বইমেলায় এসেছে। এরই মধ্যে তিনবার স্টক আউটও হয়ে গেছে।
অন্বেষা প্রকাশনীর কর্মী আবদুল্লাহ বলেন, “ড. আমিনুল ইসলাম স্যারের ‘১০১ ইনট্রোডাকশন টু বাংলাদেশ’, ইসমত আর প্রিয়ার ‘আমার শুধু মানুষ হারায়’, সুজন দেবনাথের ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’, আরিফুর রহমানের ‘সাউদার্ন ভ্যালি ওয়ে’ আর জুনায়েদ ইসলামের ‘ক্রিমসন অ্যান্ড দ্য রেড ডোর’ সবচেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
মিজান পাবলিশার্সের বিক্রয়কর্মী ইমন বলেন, “নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব’, ফারজানা ছবির ‘জলছবি’ আর অভিনেত্রী রওনক বিশাখা শ্যামলীর ‘তুমি নয়নতারা’ বইগুলো সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে।”
‘তুমি নয়নতারা’ বইয়ের স্টক শেষ হয়ে যাওয়া এবং মেলা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে হওয়াতে প্রকাশনী নতুন কোনো মুদ্রণে যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর পরিচালক সিরাজুল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘সবচেয়ে বিক্রিত বইগুলোর নির্দিষ্ট নাম না বলি। তবে উপন্যাসের কাটতি বেশি। আর কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই তো আছেই। এছাড়া সাদাত হোসাইন, মৌরি মরিয়মসহ আরও যেসব লেখক ফেসবুকে পজিটিভ লেখালেখি করেন, তাদের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স-এর বিক্রয় প্রতিনিধি শারাফাত লস্কর বলেন, “অরুণ কুমার বিশ্বাসের ‘ব্রাউন পেপার’, দন্ত্যস রওশনের ‘নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস’‘, মশিউর রহমান শান্তর ‘ঘোর’, ড. মোহাম্মদ আমীন স্যারের ‘যতিচিহ্নের গতি-প্রকৃতি’, সাগরিকা নাসরিনের ‘আধখানা বসতি তাহার’ এবং আবদুল গাফফার রনির ‘প্যারাডক্স’ বইগুলো আমাদের প্রকাশনী থেকে ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
মাওলা ব্রাদার্সের মারিহা বিনতে আলী বলেন, “আমাদের প্রকাশনীর সব বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’, ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’, উপন্যাসসমগ্র, শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্ণেল’ ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
ঐতিহ্য প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, “আফতাব হোসেনের ‘বখতিয়ার’, ইফতেখার আমিনের অনুবাদ বই ‘ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা’, সাব্বির জাদিদের ‘আজাদির সন্তান’, মহিউদ্দিন আহমদের ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ আর ‘তেহাত্তরের নির্বাচন’ বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই রাখার দাবি
আগামী বছর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে বইমেলা হবে না মর্মে একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
বলা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তৈরির অংশ হিসেবে কিছু প্রকল্পের কাজ মার্চ মাস থেকেই শুরু করতে চাইছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়া হবে বইমেলা।
যদিও মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে প্রকাশকদের দাবি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ থেকে বইমেলা যেন না সরানো হয়। সরানো হলে বইমেলা না হওয়ারই নামান্তর সেটি।
এ বিষয়ে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ফাতিমা বুলবুল বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির অংশ। এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ পুরো এলাকা জড়িয়ে আছে।
‘শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সবাই বইমেলায় আসে। এখানে বইমেলা হওয়ায় আলাদা একটি আবহ অনুভূত হয়। তাই বইমেলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প কোনো জায়গা থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বইমেলায় অন্যত্র সরিয়ে নিলে মেলার প্রাণটাই থাকবে না। তার চেয়ে বইমেলা না হওয়াই ভালো। বইমেলাকে তো আর বাণিজ্যমেলার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।’
বইমেলায় কবি সামাদের ‘সিলেক্টেড পোয়েমস’
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দেশবরেণ্য কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নতুন বই ‘সিলেক্টেড পোয়েমস’-এর তৃতীয় সংস্করণ। এবারের মেলায় অনন্য এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অন্যন্যা প্রকাশনী। উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে বইয়ের প্রচ্ছদ অংকন করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রুব এষ।
দ্বিভাষিক এই কাব্য সংকলনটি ইংরেজি ভার্সন নতুন করে সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দুই কবি জেমি প্রক্টর শু এবং সাইমন জে অর্টিজ। আগের সংস্করণের সঙ্গে তিরিশটি নতুন অনুবাদ যুক্ত করা হয়েছে বর্তমান সংস্করণে।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য অধ্যাপক সামাদ ২০২৪ সালে একুশে পদক, ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ সামাদ ২০১৭ সাল থেকে পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
২৯তম দিনে ১২৭টি নতুন বই
বইমেলার ২৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২৭টি।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন, পুঁথিগবেষক জালাল খান ইউসুফী, কথাসাহিত্যিক মাহমুদুন নবী রনি এবং কবি রনি রেজা।
শুক্রবারের কর্মসূচি
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ৩০তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য