ধরা যাক হিরো আলমকে আপনার প্রচণ্ড অপছন্দ, তার হেড়ে গলায় গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতে গা জ্বলে যায়, পুলিশ ডেকে মুচলেকা নিলে খুশিতে আটখানা হন; কিন্তু তার পরও হিরো আলম কেন আপনার মাথায় গেঁথে থাকেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন হিরো আলমের কর্মকাণ্ড উঁকিঝুঁকি মেরে দেখেন, আর সুযোগ পেলেই তীব্র কটাক্ষ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন?
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যাকে পছন্দ নয়, তাকেও অনুসরণের পেছনে মানুষের বিশেষ মানসিক উদ্দীপনা কাজ করে। এর মানে হলো, যাকে আপনি চূড়ান্ত অপছন্দ বা ঘৃণা করছেন তিনিও আপনার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অপছন্দের মানুষের কাণ্ডকারখানা সংগোপনে দেখার এই প্রবণতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘হেট ওয়াচিং’, বাংলায় যার অর্থ হতে পারে ‘বিদ্বেষমূলক দর্শন’। অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের সংজ্ঞা অনুসারে, এটি এমন এক ধরনের কর্মকাণ্ড, যা মূলত উপহাস বা সমালোচনার মাধ্যমে আনন্দ পেতে মানুষ করে থাকে।
নেটফ্লিক্সে এমিলি ইন প্যারিস সিরিজটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার শেষ নেই। অথচ এ সিরিজটি নেটফ্লিক্সে সবচেয়ে বেশি দেখা সিরিজের অন্যতম। সিরিজটি আসার ২৮ দিনের মধ্যেই এটি দেখেছে ৫ কোটি ৪০ লাখের বেশি পরিবার। আর এই বিপুল ভিউকে গুরুত্ব দিয়ে সিরিজটির তৃতীয় সিজন শিগগিরই আসছে নেটফ্লিক্সে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা অনেকেই ঘৃণা করতে প্রচণ্ড ভালোবাসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে এই প্রবণতার অনেক বেশি বিস্তার ঘটেছে। যাদের মোটেই পছন্দ করি না, এমন অসংখ্য মানুষকে আমরা অনুসরণ করি। লাল চুলের কোনো টিকটকারকে সমালোচনায় ধুয়ে দিতে আমরা হাজির করি তার বিভিন্ন সময়ের ‘আপত্তিকর’ কর্মকাণ্ড।
ম্যানিলার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জে আর ইলাগান বলছেন, ‘দূর বা কাছ থেকে ঘৃণা করার এই প্রবণতা সব সময়েই ছিল। তবে এখন আমরা যে ধরনের ঘৃণা নিয়ে বেশি কথা বলছি, সেগুলো মূলত পাবলিক কন্টেন্ট, পাবলিক পারসন এবং এ ধরনের আরও বেশ কিছু বিষয়কেন্দ্রিক।’
ইলাগানের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে ঘৃণামূলক অনুসরণ একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা। এই প্ল্যাটফর্মগুলো সুপরিচিত ব্যক্তিত্বদের প্রতি ঘৃণা উদ্গিরণের পথ সহজ করে দিয়েছে।
তিনি বলছেন, ‘বিষয়টি বেশ বিরক্তিকর অনলাইন বন্ধুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। বিরক্তিকর হলেও আপনি নিয়মিত তাদের ওপর চোখ রাখেন। মনে মনে ভাবেন- ওরা বিশেষ কিছু হয়ে যাননি। তার পরও তাদের ওয়ালে স্ক্রল করা ঠেকিয়ে রাখতে পারেন না।’
বিরক্তিকর মনে করেও কেন আমরা এটা করি? বিদ্বেষমূলক দর্শন এবং ঘৃণামূলক অনুসরণে কেন এত আসক্তি? এমন প্রশ্নে ইলাগান বলছেন, এই আসক্তির সঙ্গে মানুষের জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিভিন্ন কারণের গভীর সংযোগ রয়েছে। কাউকে ঘৃণার পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর মানসিক আনন্দ।
জৈবিকভাবে ঘৃণা মন ভালো রাখে!
ইলাগান বলছেন, ঘৃণা, ভালোবাসা ও উপভোগ হলো শক্তিশালী মানসিক প্রতিক্রিয়া। কখনও কখনও সত্যিকারের হুমকির অনুপস্থিতিতেও মানুষ শক্তিশালী মানসিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়। এ সময় মস্তিষ্কের মাধ্যমে নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়ে থাকে।
এই নিউরোট্রান্সমিটার সাধারণত সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিন। সাধারণভাবে এরা ‘সুখী হরমোন’ হিসেবে পরিচিত, যা ইতিবাচক অনুভূতির জন্ম দেয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘৃণাও আমাদের মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতির জন্ম দিতে পারে। যেমন ২০২০ সালে লকডাউনের সময় বেশ কয়েকটি দেশে নেটফ্লিক্সের রিয়েলিটি শোর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ঘরবন্দি অবস্থায় অনেকে মানসিক আমোদের জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠানের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন।
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, দৃশ্যত অপ্রীতিকর হলেও মানুষ কোনো আবেগ অনুভবে সক্ষম হলে নিজেকে সুখী ভাবতে থাকে। যেমন, ফেসবুকে কোনো উদ্ভট মিম দেখে মেজাজ খিঁচড়ে যাওয়ার পর হাতের ফোনটি দেয়ালে ছুড়ে মারার পর বেশ ভালো বোধ করে মানুষ।
এই একই কারণে বিষাক্ত ইতিবাচকতা শেষ পর্যন্ত মনের জন্য কিন্তু বিষাক্ত। কোনো কিছু খারাপ লাগলে সেটি প্রকাশ না করা মানে হলো, নিজের আবেগকে গলা টিপে দমন করা। আর তাই কাউকে ভালো না লাগলে তার মিথ্যা প্রশংসায় মেতে ওঠার কোনো কারণ নেই।
আমরা অন্যের সঙ্গে নিজেদের তুলনা পছন্দ করি
ইলাগান বলেন, বিদ্বেষমূলক দর্শন বা ঘৃণামূলক অনুসরণের ক্ষেত্রে আমরা মানসিকভাবে অনুসরণকারীর সঙ্গে নিজেদের তুলনায় উৎসাহী হই। এর ফলে মনের মধ্যে ভালো বা খারাপ অনুভূতি জন্ম নিতে পারে।
তিনি বলেন, নাটক বা চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোর সঙ্গে হরহামেশা আমরা এই তুলনা করে থাকি। তবে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। কারণ হিসেবে ইলাগান বলছেন, মানুষ সহজাতভাবে ভয়ারিস্টিক। ভয়ারিস্টিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ অন্যের দুঃখ-যন্ত্রণা বা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় আনন্দিত হয়। এমনকি অন্যের যৌনতা বা নগ্নতা দেখে নিজেও যৌন আনন্দ অনুভব করে।
ইলাগানের মতে, অন্যের সঙ্গে দুভাবে আমরা নিজেদের তুলনা করে থাকি। এর মধ্যে ঊর্ধ্বগামী তুলনা হলো, যখন আমরা নিজেদের তুলনায় আপাতদৃষ্টে উচ্চ অবস্থানের কারও সঙ্গে নিজেকে মেলাই। এটি ঈর্ষাকে উসকে দিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ঘৃণার দিকে ধাবিত হয়। আমাদের মুখ থেকে তখন বের হতে পারে, ‘ওহ, উনি খুব ভালো করছেন? ঠিক আছে, তবে তিনি যা করছেন আমার তা পছন্দ নয়।’
আবার আপাতদৃষ্টে ‘নিম্ন’ অবস্থানে থাকা ব্যক্তির সঙ্গেও আমরা নিজেদের তুলনা করি। ফেসবুক বা টুইটারে তাদের পোস্ট আমাদের মনে বিরক্তি বা ঘৃণার জন্ম দেয়। এই ঘৃণা একই সঙ্গে আমাদের মনে নিজেদের ‘ভালোত্বের’ অনুভূতি তৈরি করে। বিষয়টি ঠিক কোনো ট্রেনের ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখার অনুভূতির মতো। দেখতে কষ্ট হয়, কিন্তু ওই ট্রেনে না থাকা নিয়ে মনে স্বস্তিও কাজ করে।
ঘৃণা সামাজিক বন্ধনও বাড়ায়
ঘৃণা সব সময় বিচ্ছিন্নতা বাড়ায়, সেটি কিন্তু বলা যাবে না। হিরো আলমকে নিয়ে নিজের মনোভাব জানাতে ফেসবুকে কতবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন একবার ভাবুন। হতে পারে তাকে আপনি পছন্দ করছেন না, কিন্তু সেই বিদ্বেষ প্রচার করতে আপনি কোনো না কোনোভাবে ফেসবুকেই যাচ্ছেন। আপনার স্ট্যাটাসে বন্ধুরা কী প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, সেটাও দেখছেন মনের আনন্দ নিয়ে।
আবার ধরুন হাওয়া সিনেমা ভালো লাগেনি। ওই সিনেমার দুর্বলতাগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুলে ধরে বন্ধুদের সমর্থন পেতে তাদের আপনি যেতে বলছেন সিনেমা হলে।
ইলাগান বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি, একসঙ্গে মিলেমিশে কোনো মানুষকে ঘৃণা করা বেশ মজাদার। আপনাদের একজন সাধারণ শত্রু আছেন এবং এটি আপনারা সবাই মিলে বলতে পারছেন।’
এ কারণেই সবচেয়ে বাজে চলচ্চিত্রের অভিযোগ তুলেও লোকজন দ্য রুম দেখতে বানের পানির মতো সিনেমা হলে ছুটে গেছে এবং মুভি চলার সময় পর্দায় দল বেঁধে চামচ ছুড়ে মেরেছে।
নৃতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদরাও মনে করেন, গালগল্প এক ধরনের আঠার মতো, যা সমাজকে একত্রিত রাখে। এ কালে এর মাত্রা অনেক প্রকাশ্য হয়েছে। কিছু লোক তাদের ঘৃণার প্রকাশকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বেশি ‘দর্শনীয়’ করে তুলতে চান, যাতে বন্ধুরাও এতে যোগ দিতে পারেন।
বিদ্বেষমূলক দর্শন বা ঘৃণামূলক অনুসরণ কি খারাপ?
ইলাগানের মতে, দুই ধরনের বিদ্বেষী মানুষ রয়েছেন। কেউ কেউ সত্যিকারের খারাপ বিষয়বস্তুতে আহত হয়ে সেটি ঘৃণা করেন। আবার এমন মানুষও আছেন, যারা বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, ঘৃণার উপাদান খুঁজে পান।
‘আপনি প্রথম ধারাটির মানুষ হলে চিন্তার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে আপনার ঘৃণা যৌক্তিক।’
ইলাগান বলছেন, ‘কখনও কখনও লোকজন অনলাইনে যা করেন সত্যিই তা বেশ হাস্যকর। এ ক্ষেত্রে সমালোচনার মুখে পড়ার যৌক্তিক কারণ থাকে। তাই কোনো কিছু পোস্ট করার আগে নিজের সক্ষমতা ও পরিস্থিতি জেনেবুঝে নিন।’
মাত্রা ছাড়া ঘৃণা বা বিদ্বেষ সম্পর্কেও সতর্ক করছেন ইলাগান। তিনি বলছেন, ‘ঘৃণার প্রকাশ নিজের কতটা কাজে আসছে সেটি বোঝাও জরুরি। আপনাকে বুঝতে হবে, নিজের খারাপ লাগা প্রকাশ করে একটু স্বস্তি পেতেই এটা করছেন, নাকি অপছন্দের ব্যক্তিকে একেবারে খারিজ করে দিতে চাইছেন।’
ক্রমাগত ঘৃণা ছড়ানোর কারণে শেষ পর্যন্ত আপনি নিজেই একজন ‘ঘৃণিত ব্যক্তিতে’ পরিণত হতে পারেন। আপনার সব কথাই হয়ে পড়তে পারে অযৌক্তিক। তাই নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য এমন অস্বাস্থ্যকর অবস্থা সম্পর্কেও সতর্ক থাকা জরুরি।
সর্বশেষ কথা হলো, বিদ্বেষপ্রবণতা মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। মন ঝরঝরে রাখতে কখনও কখনও মৃদুমন্দ ঘৃণার দাওয়াই হয়ে উঠতে পারে অতুলনীয়।
আরও পড়ুন:প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবালটি খুঁজে পান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। দৈর্ঘ্যে ১১১ ফুট ও প্রস্থে ১০৪ ফুট প্রবালটির আকার একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির চেয়েও বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে প্রবালটিতে। এর মাধ্যমে জলজ প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই বিশাল প্রবাল। সদ্য আবিষ্কৃত এই জলজ বিস্ময়টি এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক প্রবাল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোরাল বা প্রবাল এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে, পুঞ্জিভূত হয়ে গঠিত হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। সঙ্গে যুক্ত হয় শৈবাল, মৃত জলজ প্রাণীর দেহাবশেষ ও পলিপ। সব মিলিয়ে জীবন্ত প্রাণীর তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা এই প্রবাল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্য। আজারবাইজানের বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এর মধ্যেই, সমুদ্র তলদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করতে বৈজ্ঞানিক অভিযান চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
অনেকটা দৈবক্রমেই প্রবালটি আবিষ্কার করেন ন্যাট জিও’র ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে স্বচ্ছ পানিতে ছেলেকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রথমে এটিকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মনে করে এগিয়ে গেলেও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বুঝতে পারেন জীবন্ত প্রাণীদের তৈরি অসামান্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি।
গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বৃহত্তম জলজ প্রাণী নীল তিমির চেয়েও আকারে অনেকটা বড় এই প্রবাল।
এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়াতে থাকা ‘বিগ মামা’ প্রবালটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল। তবে নতুন সন্ধান পাওয়া প্রবালটি ‘বিগ মামা’র চেয়েও প্রায় তিন গুণ বড়। ৩৪ মিটার দীর্ঘ প্রবালটি এতটাই বিশাল যে ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে এটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে একজনের দান করা দুটি ড্রাগন ফল ৪৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে লিপু সুলতানা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দুটি ড্রাগন ফল মাদ্রাসায় দান করেন। মধ্যরাতে মাহফিলের শেষ বক্তা শায়খুল হাদিস মুফতি মুশাহিদ আলী ক্বাসেমী ড্রাগন ফল দুটি প্রকাশ্যে নিলামে তোলেন। নিলামের একপর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে ফল দুটি কিনে নেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আলহাজ আলমগীর চৌধুরী।
ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে অংশ নেয়া শ্রোতারা জানান, মাহফিল শেষে দোয়ার আগে ড্রাগন ফল দুটি নিলামে তোলা হয়। দুই হাজার টাকা থেকে নিলাম শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা।
পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল হাফিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাদ্রাসার ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী টিপু সুলতান চৌধুরী দুটি ড্রাগন ফল দান করেন। পরে এই দুটি ফল নিলামে তোলা হলে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
‘মূলত এই ফল এত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ হলো মাদ্রাসায় সহযোগিতা করা। যিনি ফল কিনেছেন, তিনি হলেন আমাদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।’
আরও পড়ুন:কুয়াকাটা সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার পর এবার পটুয়াখালীর একটি জলাশয় পাওয়া গেল জীবিত ডলফিন।
কলাপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী-সংলগ্ন জলাশয়ে বোটলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিনটি পাওয়া যায়। এটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ দেড় ফুট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আন্ধারমারিক নদীর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা।
এসময় ডলফিনটিকে এক নজর দেখতে জলাশয়ের দুপাড়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা জানান, শেষ বিকেলে আন্ধারমানিক নদী থেকে ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে ওই জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ এর সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির পরামর্শ অনুযায়ী ডলফিনটিকে উদ্ধার করে নিবিড় পর্যক্ষণে রেখে খাবার দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিম্যাল লাভার্স অফ পটুয়াখালীর সদস্য ও মো. সুজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে অবমুক্ত করেন।
আল মুনজির বলেন, ‘জেলেদের জালে আটকে ডলফিনটি আহত হয়। আমাদের ধারণা, পরে পথভ্রষ্ট হয়ে এটি আন্ধারমানিক নদী হয়ে জলাশয়ে ঢুকে পড়ে।’
এর আগে কখনও দক্ষিণাঞ্চলে জীবিত ডলফিন ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে পুকুরের তলদেশের মাটি খননকালে কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের বাড়ির পুকুরের মাটি খননকালে ওই মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউএনও জানান, সকালে উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের একটি পুকুরের মাটি খনন করছিলেন শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোবারক শেখ ও মিতুল হোসেন নামের দুই শ্রমিক মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে মূর্তিটি দেখতে পান। পরে তারা বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই জনপ্রতিনিধি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইউএনওকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মূর্তিটি উদ্ধার করেন।
মূর্তিটি উচ্চতায় ৩৭ ইঞ্চি ও প্রস্তে ১৭ ইঞ্চি। এটি রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে পাঠানো হবে বলে জানান ইউএনও আসলাম হোসাইন।
আম গাছে মুকুল আসে, সেই মুকুল থেকেই হয় আম। তবে ফরিদপুরের একটি আম বাগানে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্র। আম গাছের ডালে নয় বরং গাছের আমের বোঁটার গোড়া থেকে বের হয়েছে অসংখ্য আমের মুকুল। আর সেই মুকুল থেকে এরইমধ্যে ধরেছে আমের গুটি।
এমন বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে একটি আম বাগানে। আর এ খবর জানতে পেরে তা দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে।
পদ্মার পারে চরের খাঁ খাঁ বিরান জমিতে সবুজের দেখা পাওয়া ভার। চোখ মেললে চারদিকে শুধু ধু ধু বালির চর। এমনই এক পরিবেশে চার বছর আগে স্থানীয় যুবক দুলাল হোসেন রুবেল তার খামার বাড়িতে শখের বসে গড়ে তোলেন ফলজ বাগান। প্রায় শতাধিক আম গাছের সঙ্গে এখানে তিনি আরও বেশ কিছু ফলের চারা রোপন করেন। এরইমধ্যে তার এই আমবাগানের গাছগুলো বড় হয়ে ফলবতী হয়ে উঠেছে। এবার তার আমবাগানে ধরেছে প্রচুর আম। তবে সব আমের ভিড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আমেরিকান রেড পালমার জাতের একটি আম গাছ। এই গাছের একটি আম বড় হওয়ার পরে সেই আমের বোটার মুখ থেকে নতুন করে বের হয়েছে আবার নতুন মুকুল।
বাগানের মালিক দুলাল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমের বোঁটার মুখে আবার নতুন করে মুকুল আসতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। আল্লাহ চাইলে সবই পারেন, এটি দেখে তাই প্রমাণ হলো আবার। এটি আমার কাছে আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে।’
রুবেল বলেন, ‘চার বছর আগে রেড পালমার জাতের এই আম গাছটি আমি বৃক্ষমেলা থেকে কিনি। পরের বছরই ফল আসে। আর এবার এলো আম থেকে আসা এই অবাক করা আমের মুকুল।’
তিনি বলেন, ‘ধলার মোড়ের এই এলাকায় আগে আশেপাশে কোনো সবুজ ছিল না। এই জায়গটি ছিল ২০ ফুট গভীর। চার বছর লেগেছে আমার এই বাগানটি দাঁড় করাতে। এখন বাগানটি সবুজে ভরে গেছে। আমাদের এই ধলার মোড়ে আমার এই বাগানটি ছাড়া আশপাশে আর কোনো সবুজ চোখে পড়ে না।’
মূলতঃ পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই ৬৯ শতাংশ জমির ওপর এই খামার বাড়ি গড়ে তোলেন বলে জানান রুবেল। বলেন, ‘সেখানে আম, কলা, লিচু, চালতা, সফেদাসহ নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছি। এখানে রেড পালমার ছাড়াও মিয়াজাকি, বানানা ম্যাঙ্গো, দেশীয় হাড়িভাঙা, বারি ফোরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০টি আম গাছ রয়েছে।
‘সামনের অংশে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছি। এছাড়া কবুতর ও খরগোশ পালছি। আগে কিছু গাড়ল ছিল, সেগুলো এখন চরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রুবেলের স্ত্রী সৈয়দা সানজিদা মিশু বলেন, ‘আমের বোঁটা থেকে এভাবে আবার আমের মুকুল ধরতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। মুকুল থেকে আবার নতুন করে আমের গুটিও এসেছে। এখন দেখার পালা, এই আমের গুটি কত বড় হতে পারে। যদি সেগুলো পরিপূর্ণ আম হয়ে উঠে তাহলে সেটি হবে আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার।’
জহুরুল আলম শোভন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই আমের ওপর মুকুল ধরার খবর জেনে দেখতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম।’
সৈয়দ মোস্তফা আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমার এই দীর্ঘজীবনে আমি ফলের গায়ে এভাবে মুকুল চোখে দেখিনি বা শুনিনি। গতকাল সন্ধ্যায় আমি খবরটি শুনতে পেয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এসেছি। আমের বোঁটার উপরে মুকুল ধরেছে, আবার সেই মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বের হচ্ছে। এটি আল্লাহরই একটা নেয়ামত।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেব নারায়ণ রায় বলেন, ‘উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় এমব্রায়োজেনোসিস (embryogenesis), যাকে বাংলায় বলা হয় বহুভ্রুনিতা। এটি একটি ভ্রূণজনিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন ও বিকাশ হয়। অনেকসময় অতিরিক্ত ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করা হলে এমনটি ঘটে থাকে।’
কামাল হোসেন এবং লাভলী আকতার দম্পতির বাড়িতে লাউয়ের গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট (গাছের শাখার সংযোগস্থল) থেকে অসংখ্য লাউয়ের ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে এক এক করে ধরেছে ৩৫টি লাউ। এ খবর পেয়ে অনেকেই এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন লাউ দেখতে।
জনপ্রিয় কিছু সবজির মধ্যে অন্যতম হলো লাউ। এ সবজি বেশ সহজলভ্য। পুষ্টিগুণে ভরা লাউ উপাদেয় খাবার। লাউ সাধারণত একটি ডগায় একটি হয়ে থাকে। তাই এক ডাগায় ৩৫টি লাউ ধরা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক বিষয়।
ব্যতিক্রমী এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের জোতনছর গ্রামে।
ওই দম্পতি জানান, তারা দুই মাস পূর্বে দেশি লাউগাছের বীজ এনে লাগিয়েছিলেন। বীজ থেকে চারটি গাছ বড় হয়ে মাচায় ওঠে। তিনটি গাছ স্বাভাবিক থাকলেও একটি গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট থেকে অসংখ্য ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে ওই ডগায় ৩৫টি লাউ ধরেছে। লাউগুলো আস্তে আস্তে বড়ও হচ্ছে।
প্রতিবেশী বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘এক ডগায় ৩৫টি লাউ গুনে দেখেছি। এর আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। গ্রামের উৎসুক অনেকেই লাউগাছটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, এক ডগায় অসংখ্য লাউ ধরা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। বিভিন্ন কারণে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, তবে গাছটি না দেখে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য