পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্য। জুলাইয়ের এক বিকেলের তীব্র গরমে মধ্য ত্রিশের এক লোক মাঠের কোনায় দাঁড়িয়ে আছেন। ভীষণ নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে। পরনে গোলাপি শার্ট, কালো ট্রাউজার। কিছুর প্রত্যাশায় এই অপেক্ষা।
নির্ভয় চন্দ্র ঝার বয়স ৩৫। বেগুসরাই থেকে মধুবনী জেলায় আসতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে ১০০ কিলোমিটারের বেশি (৬২ মাইল) পথ। জেলার সৌরথ গ্রামে আজ বসেছে অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ‘বর বাজার’। নির্ভয় চন্দ্র নিজের জন্য উপযুক্ত পাত্রী খোঁজার আশায় এখানে উপস্থিত হয়েছেন।
যেকোনো মুহূর্তে একটি মেয়ের পরিবার তার কাছে আসবে, যৌতুকের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বর ৫০ হাজার টাকার ট্যাগ নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
নির্ভয় বলেন, ‘বয়স যদি কিছুটা কম হতো তবে সহজেই ২-৩ লাখ টাকা চাইতে পারতাম।’
নির্ভয় একজন মৈথিল ব্রাহ্মণ। এরা বিহারের মিথিলাঞ্চল অঞ্চলে বাসকারী হিন্দু ব্রাহ্মণদের একটি উপগোষ্ঠী। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় হলো জটিল হিন্দু বর্ণের শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে প্রভাবশালী সামাজিক গোষ্ঠী। তারা ঐতিহাসিকভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে আসছে।
নির্ভয় চন্দ্র ঝা পাত্রীর খোঁজে ইভেন্টে এসেছেন। ছবি: আল জাজিরা
হিন্দু এন্ডোগ্যামি নিয়মগুলো সাধারণত একই বংশের মধ্যে বিয়েকে সীমাবদ্ধ করে। মানে তারা একই বর্ণ-গোষ্ঠীর মধ্যে জোটকে উত্সাহিত করে; কারণ এ ধরনের বন্ধনগুলোর বেশির ভাগ পরিবার দ্বারা ‘বিন্যস্ত’ হয়।
নির্ভয় একটি কারখানায় ম্যানেজার পদে আছেন। এটা তার জন্য বড় অ্যাডভানটেজ। কারণ তার আয় স্থিতিশীল। এ জন্য ভালো এবং উপযুক্ত কনে পাওয়ার আশায় আছেন তিনি।
যৌতুক যদিও ভারতে বেআইনি, তবে এটা প্রচলিত এবং এর সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে। বিশেষ করে বিহার এবং পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যে এই চর্চা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে বছরে যৌতুকের অর্থ প্রদানের মোট মূল্য ৫ বিলিয়ন ডলার; যা জনস্বাস্থ্যের ভারতের বার্ষিক ব্যয়ের সমান।
অন্তত ২০ জন পুরুষ গাছের নিচে বসে ‘সৌরথ সভা’র এই মৌসুমে বরের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন। এটিকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের প্রাচীনতম বিয়ে সাইটগুলোর একটি।
যদিও এ ধরনের ঐতিহ্যগুলো ভারতে অনেকাংশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে মধুবনীতে এটি টিকে আসছে সাবলীলভাবেই।
বর বাজার
এটা প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য। এখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বররা নিজেদের প্রদর্শনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কনের পুরুষ অভিভাবকরা সাধারণত বাবা বা ভাই বেছে নেন বর। সাধারণত কনের এ ক্ষেত্রে কিছু বলার থাকে না।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘এটা অনেকটা কেনাকাটার মতো। বর পছন্দ হলে উপযুক্ত যৌতুক দিয়ে এখানে বিয়ে ঠিক করা হয়ে থাকে।’
একজন পঞ্জিকার বা ঐতিহ্যবাহী রেকর্ড-রক্ষক, কয়েক শতাব্দী ধরে পারিবারিক রেকর্ড রাখে। ছবি: আল জাজিরা
মৈথিল ব্রাহ্মণদের কাছে এটি পবিত্র অনুষ্ঠান। স্থানীয়রা বলছেন, সম্ভাব্য কনের পরিবার তাদের উদ্দেশ্য ঘোষণা না দিয়েই গ্রামে আসে। দূর থেকে গোপনে পুরুষদের পর্যবেক্ষণ করে। পছন্দ হলে নির্বাচিত বরের ওপর একটি মিথিলা গামছা, একটি লাল শাল পরিয়ে দেয়। এটার মাধ্যমে নির্বাচনের বিষয়ে প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়া হয়।
মধুবনীর বাসিন্দা জ্যোতি রমন ঝা বলেন, ‘এটা বাসের সিটে রুমাল রাখার মতোই। যেমন গণপরিবহনে আগে আসলে আগে সিট পাবেন।’
প্রচলিত আছে, আগে বরদের জন্য উন্মুক্ত বিডিং হতো। বরের পেশা যত বেশি মর্যাদাপূর্ণ, যৌতুকের দাবি তত বেশি। প্রকৌশলী, ডাক্তার এবং সরকারি কর্মীদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং শহরে স্থানান্তর অনেক ভারতীয়কে পারিবারিক জমি থেকে উৎখাত করেছে। অভিভাবকদেরও এখন তাদের সন্তানদের বৈবাহিক পছন্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনেক কম। সস্তায় ইন্টারনেট সুবিধার সঙ্গে সাজানো ম্যাচমেকিংগুলো অনলাইনে এখন অহরহ। ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৈবাহিক ওয়েবসাইটও রয়েছে।
সৌরথ সমাবেশের অনুষ্ঠানটি গ্রামের একটি পুকুরের পাশে হয়, যেখানে আছে বট ও আমগাছ। পাশেই একটি বিশাল অব্যবহৃত কূপ, যেটি পুরোনো দিনের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পুকুরের পাশেই প্রাচীন হিন্দু একটি মন্দির।
গাঢ় লাল রঙে হিন্দিতে লেখা ‘সৌরথ সভা’। একটি উজ্জ্বল হলুদ ব্যানারের নিচ দিয়ে আগন্তুকরা সেখানে প্রবেশ করেন। কিংবদন্তি আছে, এক লাখ ব্রাহ্মণ এখানে এলে, প্রাচীন বটগাছটির সব পাতা ঝরে পড়বে।
স্বরাজ চৌধুরী নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘আগে জনগণকে এখানে আনার জন্য রাজ্যজুড়ে বাসসুবিধা ছিল। এখন অনুষ্ঠানে খুব কম মানুষের আনাগোনা হয়।’
যৌতুকের হুমকি
শেখর চন্দ্র মিশ্র এই সভার অন্যতম উদ্যোক্তা। এ আয়োজনের এমন পতনের জন্য মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদদের দায়ী করেছেন তিনি৷
শেখর বলেন, ‘মিডিয়া আমাদের সভাকে এমন একটি বাজার হিসেবে চিত্রিত করেছে, যেখানে বলা হয় পুরুষদের গবাদিপশুর মতো বিক্রি করা হয় এখানে।’
শেখর অবশ্য স্বীকার করতে পিছপা হননি যে এই ঘটনা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উন্মুক্ত যৌতুকের সংস্কৃতি প্রচার করে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আজকাল যৌতুককে সদয় দৃষ্টিতে দেখা হয় না। তবুও তা টেবিলের নিচেই হয়। যদি বাবা-মা তাদের ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার বানানোর জন্য অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে তারা বিনিয়োগ ফেরত চান। যৌতুককে এটি করার অন্যতম উপায় হিসেবে দেখা হয়।’
বিহারে যৌতুক একটি বড় হুমকি। বিভিন্ন সরকার যৌতুকবিরোধী প্রচারাভিযান শুরু করলেও যৌতুকের কারণে মৃত্যু ও হত্যা কমছে না। ২০২০ সালের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, বিহারে এক হাজারের বেশি যৌতুকের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে; যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পঞ্জিকারদের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা পারিবারিক রেকর্ডের একটি বই। ছবি: আল জাজিরা
বিহার সরকারের একটি সাম্প্রতিক প্রচারাভিযান জনগণকে তাদের বিয়ের কার্ডে যৌতুকবিরোধী ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অফিসের দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
এই হুমকি অঞ্চলে একটি অদ্ভুত প্রবণতার জন্ম দিয়েছে। এটিকে বলা হয় ‘পাকদওয়া বিভা’ বা বন্দি বিয়ে। এ ক্ষেত্রে যৌতুক এড়াতে বন্দুকের মুখে বিয়ে করার জন্য কনের পরিবারের দ্বারা পুরুষদের অপহরণ করা হয়। এখনও এ ধরনের অপহরণের খবর প্রায়শই পাওয়া যায়।
ইভেন্টের লোকেরা সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন, যখন হাজার হাজার বর লাল জামা পরে আসতেন, যৌতুকের আলোচনার পর বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হতেন।
বিহারের দারভাঙ্গার মনীশ ঝার বয়স ৩১। তিনি তার বর্ণের বাইরে বিয়ে করেছেন। একজন রাজপুত নারীর সঙ্গে বিয়ে তার পরিবার এবং সম্প্রদায় মেনে নিতে পারেনি। অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে সবকিছু স্বাভাবিক করতে।
‘বর বাজারে’ দর্শকদের স্বাগত জানানো একটি ব্যানার। ছবি: আল জাজিরা
তিনি বলেন, ‘একবার আমাকে বন্দুকের মুখেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমি তাকে অনেক ভালোবাসতাম। মৃত্যুর হুমকির মধ্যেও তাকে বিয়ে করেছিলাম। আমাদের এখন একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
‘সমাজের নতুন প্রজন্ম নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। তারা যাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করতে চায়, তাদের জাত যাই হোক না কেন।’
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য
এসব সত্ত্বেও মনীশ বিশ্বাস করেন, সৌরথ সভাকে মিথিলাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সত্তা হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘এটি দরিদ্রদের রাজস্ব তৈরিতেও সহায়তা করে। সভা চলাকালীন অনেক লোক পরের কয়েক মাসের জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে থাকেন।
ঘনশ্যাম একজন কাঠমিস্ত্রি। নিম্ন হিন্দু বর্ণের ঘনশ্যাম সভাস্থলের কাছে চা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আগে দোকানদাররা এই সভার অপেক্ষায় বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকতেন। আমার বাবা বলতেন, এই সভা চলাকালীন বেচাবিক্রি করে ছয় মাস টিকে থাকার মতো সঞ্চয় করা যেত। কিন্তু এখন উপস্থিত লোকের সংখ্যা কম।’
সোনু নামে আরেক দোকানদার বলেন, ‘ইভেন্ট চলাকালীন বিক্রি একপর্যায়ে বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকাল তা খুব একটা হয় না।’
সমাবেশে উপস্থিত কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ইন্টারনেট ম্যাচমেকিংয়ের সহজতা তাদের খুব একটা আকৃষ্ট করে না।
একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী বরের বাবা মুক্তিনাথ পাঠক। তিনি বিশ্বাস করেন সৌরথ সভায় বিয়ে তার ছেলে অমরজিতের জন্য একটি বৈবাহিক ওয়েবসাইটের চেয়ে অনেক নিরাপদ।
তিনি বলেন, ‘যখন অনলাইনে বিয়ে হয়, তখন বিচ্ছেদের ঝুঁকি থাকে। তবে যখন ঐতিহ্যগুলো মানা হয়, সে আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে।’
সৌরথ সভার পদ্ধতিটি বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক এগিয়ে বলে দাবি করেন আয়োজকরা। কারণ এখানে স্থায়ী নিয়ম হলো একই বংশের মধ্যে বিয়ে এড়ানো। মনুস্মৃতির প্রাচীন হিন্দু পাঠে বলা আছে, একই বংশের মধ্যে বিয়ে ‘অশুদ্ধ’ সন্তানের জন্ম দেয়।
মধুবনীর বাসিন্দা জ্যোতি বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইভেন্টে একটি ম্যাচ খুঁজে পেতে একজনকে প্রথমে একজন পঞ্জিকারের কাছে যেতে হবে। একজন ঐতিহ্যবাহী রেকর্ড-রক্ষক বা রেজিস্ট্রার যিনি মৈথিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তা নিশ্চিত করার জন্য শতাব্দী ধরে রেকর্ড রাখেন।’
পঞ্জিকার পদ্ধতি কঠোরভাবে নির্দেশ করে যে বর এবং কনে তাদের পিতার পক্ষে সাত প্রজন্ম এবং মায়ের পক্ষ থেকে পাঁচ প্রজন্মের জন্য রক্তের সম্পর্কযুক্ত হতে হবে না।
প্রমোদ কুমার মিশ্র একজন পঞ্জিকার। তিনি সভার কাছে একটি তাঁবু স্থাপন করেছেন। প্রমোদ বলেন, ‘আমি বিয়ে করেছিলাম ২০০৩ সালে। আমাকে আমার স্ত্রীর পরিবার বেছে নিয়েছিল। আমরা এখন সুখে বসবাস করছি।’
মেহেক পান্ডে (ডানে), ইভেন্টে তার ভাই এবং মায়ের সঙ্গে বসে আছেন। ছবি: আল জাজিরা
পঞ্জিকাররা এখনও রেকর্ডের একটি মোটা বই সঙ্গে রাখেন। ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম ও মৃত্যু লিপিবদ্ধ করতে তারা বাড়ি বাড়ি যান। ঐতিহ্যবাহী এ কাজের চাহিদা তেমন না থাকায়, তারা আয়ের বিকল্প পথ খুঁজছেন। তাদের সন্তানরা অন্য কাজের সন্ধানে রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছেন।
কানহাইয়া কুমার মিশ্র নামে একজন বলেন, ‘আমরা সম্ভবত পঞ্জিকারদের শেষ প্রজন্ম।’
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এ সময় এক নারী সভায় এসে উচ্চ স্বরে ঘোষণা দেন, ‘আমার ভাইয়ের জন্য পাত্রী চাই।’
মেহেক পান্ডে উত্তরপ্রদেশ থেকে তার স্বামী এবং মায়ের সঙ্গে তার ৩৩ বছর বয়সী ভাই সুমিত মোহন মিশ্রের জন্য পাত্রী খুঁজতে এসেছেন। জুনে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তবে কনের পরিবার পিছিয়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি।
শহরে উপযুক্ত পাত্রী খুঁজে না পেয়ে তারা সভায় যোগদানের জন্য ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাস এবং ট্রেনে করে মধুবনীতে এসেছেন।
মেহেক বলেন, ‘আজকাল অনলাইন বৈবাহিক অ্যাপের ওপর নির্ভর করতে পারবেন না। কারণ এখানে অনেক ভুয়া কিছু থাকে।’
ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবে সোমবার অনুষ্ঠেয় আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন রাশিয়ার একজন আলোচক।
তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এ বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার উভয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। এর পরিবর্তে রাশিয়া শুধু জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে।
সেই প্রস্তাব সত্ত্বেও উভয় পক্ষই আলোচনার আগে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া শহরে রাশিয়ার হামলায় একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়, যা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা রবিবার ভোরে জানায়, রাশিয়া কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এগুলো ভবনগুলোতে আঘাত করেছে এবং আগুন লেগে কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, শত্রুদের বিশাল আক্রমণে শহরের বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে এবং সাতজন আহত হয়েছেন।
সৌদি আরবে সোমবার ইউক্রেনীয় ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমেরিকান আলোচকরা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ হোটেলকক্ষের মধ্যে ’শাটল কূটনীতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন রাশিয়ার সিনেটর গ্রেগরি কারাসিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত কিছুটা অগ্রগতি আশা করছি।"
আরও পড়ুন:ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত করার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ঘিরে রোনেন বারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরায়েল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইএসএ পরিচালক রোনেন বারকে বরখাস্তে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রোনেন বারের উত্তরসূরি নিযুক্ত হওয়ার পর অথবা ১০ এপ্রিলের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করবেন।
এর আগে গত রবিবার নেতানিয়াহু বলেন, তার ওপর আস্থার অভাব রয়েছে। তাকে এ পদে রাখা যাবে না। তাই বারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বার ১৯৯৩ সালে শিন বেতে যোগ দিয়েছিলেন।
বারের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার শিন বেতের প্রধান হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার এক বছর আগেই তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করল।
ইসরায়েলে হামাসের হামলা চালানোর আগে থেকেই রোনেন বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। গত ৪ মার্চ হামাসের হামলার ওপর শিন বেতের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
আরও পড়ুন:মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নির্দেশে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ম্যানিলার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফিলিপাইন সরকার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হংকং থেকে দেশে আসার পর আইসিসির নির্দেশে পুলিশ দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের চালানো অভিযানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।
আইসিসি দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে হত্যাকাণ্ডগুলোকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দক্ষিণাঞ্চলের শহর দাভাওয়ের মেয়র থাকার সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
দুতার্তে প্রশাসন ২০২১ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। আইসিসির আদালত হলো সর্বশেষ অবলম্বন।
আইসিসির আর বিচার করার এখতিয়ার নেই—এমন যুক্তি দিয়ে সে সময় তার প্রশাসন বলেছিল, ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
আরও পড়ুন:স্কটল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টার্নবেরি গলফ রিসোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন‘ নামের একটি সংগঠন এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে সংগঠনটি।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে জানানো হয়, ট্রাম্পের গাজা নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য ও পরিকল্পনার কারণে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি মানুষ ও তাদের সমর্থকরা। এরই জেরে এ হামলা ঘটিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনের সদস্যরা।
টার্নবেরি রিসোর্টটি ভাঙচুর করার পাশাপাশি রিসোর্টের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন গ্রাফিতি অংকন করা হয়েছে। রিসোর্টের সবুজ মাঠে লাল রং দিয়ে লেখা হয়েছে ‘গাজা বিক্রির জন্য নয়’।
সংগঠনটির কর্মীরা জানান, ট্রাম্প গাজাকে নিজের সম্পত্তির মতো মনে করে, যা খুশি তাই করতে পারে না। তারই প্রতিবাদ এটা।
তারা বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রতিরোধ থেকে তার নিজের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়।’
ফিলিস্তিনিনের এই হামলাকে ট্রাম্প ‘শিশুসুলভ, অপরাধমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
আরও পড়ুন:দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ ঢেলে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ উদ্যোগ পৌঁছেছে ইরানের দ্বারপ্রান্তেও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় না বসলে সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের নেতাদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছি, আশা করি আপনি আলোচনায় বসবেন। কারণ, এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় তেহরানের কল্যাণে সমঝোতাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
যদিও ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন। তারা জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠির বিষয়ে অবগত নয় তারা।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ট্রাম্পের চিটি পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি শুক্রবার এএফপিকে বলেন, শক্তি প্রয়োগ করলে তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না।
আরও পড়ুন:ইরান ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াবে চীন।
নতুন টার্মিনাল ও জাহাজ চালু হওয়ায় মার্চ থেকে চীন তেল আমদানি বৃদ্ধি করবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি সত্ত্বেও চীন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অয়েল প্রাইস’ নামের ওয়েবসাইট।
অয়েল প্রাইসের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওয়েবসাইটটির উদ্ধৃতি দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শনিবার এ খবর জানায়।
কয়েকজন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে জানান, চীন তেল ট্যাংকারগুলোতে পরিবর্তন এনেছে যাতে সেগুলো আর নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। এর ফলে রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে বেইজিং। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই দুই দেশ থেকে চীন বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারবে। এ আমদানি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা চীনা তেল ট্যাংকারগুলো এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের চবাহার কাউন্টিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের সদরদপ্তরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জয়শুল আজল।
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন তৈরি এবং হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার উদ্ধৃতি দিয়ে এএফপি এ খবর জানায়।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী হাউজিং ফাউন্ডেশনের দপ্তরে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে।
প্রাদেশিক প্রসিকিউটর মেহদি শামসাবাদি জানান, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তিনি জানান, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশে বিগত বছরগুলোতে সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় অনেকবার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। যেসব গোষ্ঠী এসব হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের তাফতান কাউন্টির গোহার কুহ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই হামলারও দায় এ সংগঠন স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য