জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চিন্তায় আছেন ইউরোপের ওয়াইন প্রস্তুতকারকরা। সাম্প্রতিক সময়ে অসহনীয় গরমের পাশাপাশি দাবালন আঘাত হেনেছে মহাদেশটিতে। এই অবস্থায় চলতি বছর চাহিদা অনুযায়ী ওয়াইন প্রস্তুত সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি মাসে পর্তুগাল ও স্পেনের তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, এসব কারণে এ বছর ওয়াইন প্রস্তুত ২৫ শতাংশ কম হতে পারে।
প্রতিবেদন বলছে, তীব্র গরম বা দাবানলে ইউরোপের কোনো আঙুর বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আগুন না পৌঁছাতে পারলেও কয়েক কিলোমিটার অঞ্চল ছেয়ে যায় ধোঁয়ায়। এতে নষ্ট হতে পারে ফসল। আর তা না হলে এসব বাগানের আঙুর থেকে ওয়াইন প্রস্তুত করা হলে স্বাদে প্রভাব ফেলবে। মানে ওয়াইনে মিলবে ছাইয়ের গন্ধ।
ঝুঁকি আছে আরও। তীব্র তাপ ফুলকে ফল হতে বাধা দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, আঙুরকে ঝলসে দেয়ার পাশাপাশি সেগুলোকে ডিহাইড্রেট করে ফেলতে পারে এ আবহাওয়া।
পর্তুগালের শীর্ষ ওয়াইন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পর্তুগিজ ওয়াইন মেকারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, খরা এবং খুব উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এ বছর ‘উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হ্রাস’ হতে পারে।
নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যাঞ্জেল হু বলেন, ‘ইউরোপ অনেক দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। আঙুর বাগানগুলো সাধারণত মহাদেশটির শীতপ্রধান অঞ্চলে অবস্থিত। ফ্রান্স ও জার্মানির আঙিুর বাগানগুলোতে দারুণ প্রভাব ফেলছে বর্তমানের বৈরী আবহাওয়া।’
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের মধ্যে ইউরোপের গম এবং ভুট্টার ফসলও তীব্র গরমে হুমকিতে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ ফ্রান্স। তারা আগেই জানিয়েছিল, এ বছর গম উৎপাদন পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) তহবিল থেকে এ টাকা দেয়া হয়।
গণভবনে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ১০ কোটি টাকার চেক তু্লে দেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
মাঙ্কি বা বানরের সঙ্গে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ার তেমন কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কিছু দেশে বানরকেই এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আর কোনো উপায় না পেয়ে এবার ভাইরাসটির নাম বদলে দিতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের অবিতর্কিত নাম বাছাইয়ের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এ নিয়ে ওয়েবসাইটে দেয়া হচ্ছে পরামর্শ।
জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ফাদেলা চাইব- এ কথা জানিয়েছেন বলে মঙ্গলবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ফাদেলা চাইব বলেন, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের নামকরণ আগেই হয়েছে। এখন অমর্যাদাকর নয় এমন একটি নাম খুঁজছি আমরা।
তিনি বলেন, কোনো জাতিগত গোষ্ঠী, অঞ্চল, দেশ বা প্রাণীর প্রতি যেন কোনো অপরাধ করা না হয়, সে জন্যই ভাইরাসটির নতুন নাম খোঁজা হচ্ছে।
সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য বানরকে দায়ী করে এই প্রাণী নিধনের খবর মিলেছে ব্রাজিলসহ অনেক দেশে। এরপরই ভাইরাসের নতুন নামকরণ নিয়ে ভাবতে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
১৯৫৮ সালে ডেনমার্কে গবেষণার জন্য রাখা বানরের মধ্যে প্রথম শনাক্ত হয় এক ভাইরাস, যার নাম দেয়া হয় মাঙ্কিপক্স।
এত বছর ধরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ততটা গুরুতর না হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি এই ভাইরাস নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয়।
গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মাঙ্কিপক্সকে বিশ্বজুড়ে গণস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। সবশেষ করোনাসহ ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাতবার বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা এবং শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চিকেন পক্স পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে গুটি বসন্ত ও চিকেন পক্স উভয়েরই মিল রয়েছে।
মাঙ্কিপক্সে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটলেও তা সীমিত। কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানরসহ কিছু প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে।
তবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া কঠিন। এর সংক্রমণ সাধারণত ফ্লুইড ট্রান্সফার, ঘা, দূষিত পোশাক বা দীর্ঘস্থায়ী মুখোমুখি যোগাযোগ কিংবা সহাবস্থানের মাধ্যমে ঘটে, যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
আরও পড়ুন:বিশ্ববাজারে আরও কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। সোমবার ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেল ৩ ডলার করে কমে ৯০ ডলারের নিচে নেমেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ চীনে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাবের পর দেশটি থেকে তেল রপ্তানি বেড়ে গেছে। এর ফলেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরেক দফা কমেছে।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারে দাম ৩ দশমিক ৪৯ ডলার বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৬৬ ডলারে নেমেছে, যা গত শুক্রবারের চেয়ে দেড় শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে অপরিশোধিত তেলের দাম ৩ দশমিক ৩২ ডলার বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেলে দাম এখন ৮৮ দশমিক ৭৭ ডলার, যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ আগের সেশন থেকে কম।
চীন সরকারের এক তথ্য বলছে, গত মাস থেকে দেশটির অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে ধীর হয়ে এসেছে। এতে তেল শোধনাগারগুলোতে উৎপাদন দিনে ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালের মার্চের পর সর্বনিম্ন।
আইএসজি ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে বলছে, ২০২২ সালে চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হবে, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
পাশাপাশি করোনাভাইসের কারণে চীনের মূল ভূখণ্ডে কমে গেছে কর্মসংস্থানও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবে ২০১৫ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। ফলে ইরান থেকে তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। আর সেটি উঠে গেলে ইরান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তেল আমদানি করতে পারবে।
এমন অবস্থায় বিশ্ববাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং তেলের দাম কমে গেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরমাণু চুক্তি বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপে তারা সোমবারই সাড়া দেবে। তবে পরমাণু চুক্তিটি এখানেই রফাদফা হতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র তিনটি বিষয়ে ইরানের প্রস্তাব রাখে।
আরও পড়ুন:সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কত কি না খুঁজে বেড়ায় মানুষ। গুগলও হতাশ করে না। প্রশ্ন যত উদ্ভটই হোক, গুগলের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে উত্তর দেয়ার। আর এ কাজ করতে গিয়ে বিপত্তিও ঘটে অনেক।
তবে এখন থেকে গুগলকে বাজে প্রশ্ন করে সহজে উত্তর পাওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিষেবা উন্নত করতে ‘বৈশিষ্ট্যযুক্ত স্নিপেট’ যুক্ত হয়েছে এই সার্চ ইঞ্জিনে। ফলে বোকাসোকা প্রশ্নের উত্তর সহজে মিলবে না।
ধরা যাক গুগলকে আপনি প্রশ্ন করলেন, স্নুপি (কার্টুন চরিত্র) কখন আব্রাহাম লিঙ্কনকে হত্যা করেছিল? জবাবে গুগল এতদিন যেভাবেই হোক একটি বর্ণনা হাজির করত যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো সংযোগই নেই। এই দোষটা গুগলের নয়, এটি দায় আসলে অর্থহীন প্রশ্নটির।
এবার সেই অর্থহীন প্রশ্নকে শনাক্ত করে নিশ্চুপ থাকবে গুগল।
গুগলের অনুসন্ধানপ্রধান পান্ডু নায়ক বলেন, ‘আমরা আমাদের সিস্টেমগুলোকে এ ধরনের প্রশ্ন শনাক্তের উপযোগী করেছি। তবে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে এটি কার্যকর নয়। আমরা ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটিয়েছি।’
২০১৭ সালে ভুয়া খবর প্রচারের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছিল গুগল।
একজন প্রশ্ন করেছিলেন, ওবামা কি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছেন? উত্তরে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট কৌতুক করে বলেছিল, ‘ওবামা আসলে ২০১৬ সালে তার মেয়াদ শেষে একটি কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
গুগল এখন থেকে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেবে অনেক ভেবেচিন্তে। এ ছাড়া ‘অ্যাবাউট দিস রেজাল্ট’ নামে একটি অপশনও চালু হচ্ছে। এটি ক্ষেত্রবিশেষে আজেবাজে প্রশ্নকারীদের সতর্ক করবে।
পান্ডু নায়ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে কোনো সহায়ক তথ্য পাওয়া যাবে না। আপনি সব সময় আপনার প্রশ্নের ফলাফল দেখতে পারেন, এমনকি সতর্কতা জারির পরও।’
সুতরাং পরের বার যখন গুগলকে জিজ্ঞাসা করবেন, কীভাবে ইলুমিনাতির সঙ্গে যোগাযোগ করব?
জবাবে ‘ধনী হতে চান? আজই আবেদন করুন এবং ইলুমিনাতিতে যোগ দিন’- এমন উত্তরের চেয়ে আরও ভালো কিছু আপনাকে জানাবে গুগল।
আরও পড়ুন:ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বাসযোগ্য শহরের বার্ষিক তালিকায় এবারও একেবারে নিচের দিকে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
ইআইইউ গত বৃহস্পতিবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি অনুযায়ী, ১৭২টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬তম। ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ দশমিক ২।
ঢাকার নিচে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোর্সবি, পাকিস্তানের করাচি, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স, লিবিয়ার রাজধানী শহর ত্রিপোলি, নাইজেরিয়ার লাগোস এবং সবশেষে সিরিয়ার দামেস্ক, যার স্কোর ৩০ দশমিক ৭।
বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে এবার রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী শহর ভিয়েনা। ভিয়েনার স্কোর ৯৯ দশমিক ১। ৯৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এবং ৯৬ দশমিক ৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ।
কয়েকটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘দ্য গ্লোবাল লিভাবিলিটি ইনডেক্স ২০২২’ প্রকাশ করেছে ইআইইউ। এগুলো হলো স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো।
সূচকে ১৬৬ নম্বরে থাকা ঢাকার মোট পয়েন্ট ৩৯.১। মানদণ্ডগুলোর মধ্যে স্থিতিশীলতায় ঢাকা পেয়েছে ৫৫ পয়েন্ট। অন্যদিকে স্বাস্থ্যে ২৯.২, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৪০.৫, শিক্ষায় ৪১.৭ ও অবকাঠামোতে ২৬.৮ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।
২০২১ সালে এ তালিকার ১৪০টি শহরের মধ্যে ১৩৭ নম্বরে ছিল ঢাকা।
এবারের তালিকায় বাসযোগ্য শহরের শীর্ষে থাকা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার পয়েন্ট ৯৯.১। শহরটি স্থিতিশীলতা ও স্বাস্থ্যসেবায় শতভাগ স্কোর পেয়েছে। সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৯৬.৩, শিক্ষা ও অবকাঠামোতেও ১০০ করে পয়েন্ট পেয়েছে।
ইআইইউ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দিতে শহরগুলো কতটা সক্ষম ছিল, সেটি জরিপে এবার অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
যখন এ বছরের জরিপ কাজ শুরু করে তার মাঝামাঝি সময় ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর ইআইইউ ইউক্রেনের শহর কিয়েভে শেষ পর্যন্ত আর জরিপ পরিচালনা করেনি। তবে রাশিয়ার মস্কো এবং পিটার্সবার্গে জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার রাশিয়ার শহর মস্কো ১৫ এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ ১৩ ধাপ নিচে নেমে গেছে।
অবশ্য রাশিয়ায় চলমান অস্থিরতার কারণে পশ্চিমাদের দেয়া অর্থনৈতিক অবরোধে সেখানে দেয়া বিভিন্ন ধরনের সেন্সরশিপ সংস্কৃতি ও পরিবেশে প্রভাব ফেলেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত বছর ১৪০ শহরের ওপর জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও এবার ৩৩টি শহর বেশি নেয়া হয়। অবশ্য জরিপ পরিচালনা করার সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে কিয়েভকে পরে বাদ দেয়া হয়েছে তালিকা থেকে।
আরও পড়ুন:ভারতে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ-আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় হামলার শিকার হন রুশদি। এতে গুরুতর আহত লেখককে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে বেশ কিছু পোস্ট করেন তসলিমা।
প্রথম টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘এইমাত্র জানলাম, নিউ ইয়র্কে হামলার শিকার হয়েছেন সালমান রুশদি। আমি সত্যিই স্তম্ভিত। এমনটা হবে, তা কখনোই ভাবিনি।
‘তিনি পশ্চিমে বসবাস করে আসছিলেন এবং ১৯৮৯ সাল থেকেই তিনি সুরক্ষায় আছেন। যদি তার ওপর হামলা হয়, তাহলে ইসলামের সমালোচনা করা যে কেউ হামলার শিকার হতে পারেন। আমি উদ্বিগ্ন।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুকার পুরস্কারজয়ী রুশদিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার ওপর এ হামলার কারণ নিয়ে আরেক টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘লোকজন বলছে, মন্তব্য করার আগে চলুন জেনে নিই কেন হামলা হয়েছে রুশদির ওপর। যেহেতু তিনি ইসলামপন্থিদের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন, সেহেতু তাকে কোনো ইসলামপন্থি যে হত্যাচেষ্টা করতে পারে, সেটি কল্পনা করা কি খুব কঠিন?’
সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় হাদি মাতার নামের একজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এ নিয়ে করা টুইটে তসলিমা লেখেন, ‘২৪ বছর বয়সী ইরানীয়-আমেরিকান হাদি মাতার রুশদির ওপর হামলা করেছেন। হাদি মাতারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আয়াতুল্লাহ খোমেনির ছবি ছিল, যিনি ১৯৮৯ সালে রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন…এখন হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে ধারণা করতে পারেন।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার জয়ী লেখক সালমান রুশদি ছুরি হামলায় আহত হয়ে এখন নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৩৩ বছর আগেই স্যাটানিক ভার্সেস বইয়ে ইসলাম ধর্মকে হেয় করার অভিযোগে ইরানের প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রহুল্লাহ খোমেনি তার ও তার বইয়ের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, কেউ রুশদিকে হত্যা করতে গিয়ে নিহত হলে সে শহীদ, সে জান্নাতে যাবে। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটি নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো নিউজবাংলা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সেপ্টেম্বর ২৬, ১৯৮৮: ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হয়।
ফেব্রুয়ারি ১২, ১৯৮৯: যুক্তরাষ্ট্রে এই বই বিক্রির প্রতিবাদে পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৮৯: ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রহুল্লাহ খোমেনি বিশ্বের সব মুসলিমকে রুশদিকে হত্যা করার আহ্বান জানান।
ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৮৯: প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী ভারতের মুম্বাইতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের দিকে রওনা দিলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করে। সেখানে পুলিশের গুলিতে ১২ জন মারা যান।
মে ২৭, ১৯৮৯: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের প্রতিবাদে প্রায় ৩০ হাজার ইরাকপন্থি ও ইরানপন্থি জড়ো হলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯: ব্রিটেনের প্রকাশক সংস্থা পেঙ্গুইন পাবলিশার্স যারা রুশদির বইটি প্রকাশ করেছিল, তাদের একটি বইয়ের দোকানের বাইরে ৪টি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল।
জুলাই ৩, ১৯৯১: স্যাটানিক ভার্সেসের ইতালীয় ভাষায় অনুবাদকারী ইত্তোরে ক্যাপরিওলোকে তার ফ্ল্যাটেই ছুরি নিয়ে আক্রমণ করা হয়। আক্রমণকারী ছিলেন একজন ইরানি।
জুলাই ১২, ১৯৯১: বইটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকারী হিতোশি ইগারাশিকে টোকিওতে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয় এবং হত্যাকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হিতোশি ছিলেন তুলনামূলক সংস্কৃতির একজন স্কলার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। যিনি সত্তরের দশকে ইরানে পড়াশোনা করেন।
সেপ্টেম্বর ৭, ১৯৯৫: খোমেনির দেয়া ফতোয়ার ৬ বছর পর লন্ডনে প্রথম জনসমক্ষে বের হন সালমান রুশদি।
ফেব্রুয়ারি ১২, ১৯৯৭: ফতোয়ার ৮ বছর পর ইরানের বিপ্লবী ১৫তম খোরদাদ ফাউন্ডেশন রুশদির মাথার জন্য ঘোষিত পুরস্কার বৃদ্ধি করে ২৫ লাখ ডলার করে।
সেপ্টেম্বর ২২, ১৯৯৮: ইরানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি রুশদির ফতোয়ার বিষয়টি এক অর্থে বাতিল করে দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি শেষ।’
সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৯৮: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খাররাজি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন কুকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রুশদির জীবনের জন্য হুমকি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না ইরান। এমনকি কাউকে এমন কিছু করতে উৎসাহিতও করবে না।
সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৯৮: ইরানের গণমাধ্যম জানায়, ৩ জন ইরানি ধর্মগুরু ইসলামের অনুসারিদের ফতোয়ার অধীনে রুশদিকে হত্যার আহ্বান জানান।
অক্টোবর ৪, ১৯৯৮: ইরানের ১৬০ জন পার্লামেন্ট মেম্বার এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, রুশদির বিরুদ্ধে দেয়া ফতোয়া জারি থাকবে।
অক্টোবর ১০, ১৯৯৮: ইরানের ছাত্ররা রুশদির হত্যার পুরস্কার দিতে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলার সংগ্রহ করে।
ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৯৯: মুম্বাইয়ে জন্ম নেয়া রুশদিকে ভারত ভিসা প্রদান করে। সে সময় দেশটির মুসলিমরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।
জুন ১৫, ২০০৭: সাহিত্যে অবদানের জন্য রুশদিকে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করেন ব্রিটিশ রানী এলিজাবেথ। পাকিস্তান, ইরান ও মালয়েশিয়া এর কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায়।
জানুয়ারি ২০, ২০১২: ভারতের জয়পুরে একটি সাহিত্য উৎসবে সালমান রুশদির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠীর প্রতিবাদের মুখে তিনি উৎসবে আর যোগ দেননি।
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২: ইরানের একটি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন তার মাথার জন্য ৩৩ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
জুন ২০, ২০১৪: অন্য লেখকদের সাহায্য করার জন্য এবং বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখায় তাকে পেনটার (পেন) প্রাইজ দেয়া হয়।
অক্টোবর ১৩, ২০১৫: ফ্রাঙ্কফ্রুট বইমেলায় রুশদির উপস্থিতির জন্য ইরানের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় সেই বইমেলা থেকে নিজেদের অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করে নেয়।
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬: ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া আউটলেট রুশদিকে হত্যার জন্য ৬ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
জুন ১, ২০২২: ব্রিটিশ রানীর জন্মদিনে রুশদিকে ‘কম্পানিয়ন অফ অনার’ করা হয়।
আগস্ট ১২, ২০২২: পশ্চিম নিউ ইয়র্কের শাটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় সালমান রুশদির ওপর হামলা চালায় এক তরুণ। আহত রুশদির কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সার্জারির পর তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার বইয়ের এজেন্ট এন্ড্রু ওয়াইলি এক মেইলে জানিয়েছেন, সালমান সম্ভবত এক চোখ হারিয়েছেন, তার নার্ভেও আঘাত লেগেছে, তার লিভার ছুরির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য