শিশুর জন্মের সময় মায়ের গর্ভের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী কর্ডটিকে কেটে ফেলার প্রক্রিয়ায় জন্ম হয় নাভির। গোটা পৃথিবীতে নাভিকে শরীরের স্বাভাবিক অংশ মনে করা হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে একে নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমায় দীর্ঘকাল ধরে নাভিকে যৌন উত্তেজক অঙ্গ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে নাভি নিয়ে এই বাড়তি আগ্রহের উৎস। নিউজবাংলার পাঠকের জন্য প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
সঙ্গিনীকে একটি খাবার টেবিলে শুয়ে পড়তে বলছেন নায়ক। সায় দিতেই ‘খুব ভালো মেয়ে’ বলে প্রশংসার বাক্য ঝরে নায়কের কণ্ঠে। এরপর কৌশলী হাতে শাড়ি সরিয়ে সঙ্গিনীর নাভি উন্মোচন। সঙ্গিনীর পেটের ওপর একসঙ্গে দুটি ডিম ভেঙে ছড়িয়ে দেন নায়ক।
একটি শটে দেখা যায় উত্তাপে ডিম ফুটছে। বিস্মিত নায়কের মুখের সামনে উড়তে দেখা যায় বাষ্প। পরক্ষণেই অনুমতির অপেক্ষায় সঙ্গিনীর দিকে ফিরে তাকান তিনি। ডিম রান্নার সময় নায়ক চামচ দিয়ে অমলেটটি উল্টেও দেন একপর্যায়ে। দুজনের কিছু গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাঝে প্রস্তুত হয় ‘ডিনার’।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া লাভ বার্ডস সিনেমার একটি দৃশ্য এভাবেই ডিম ভাজছিলেন সুপারস্টার প্রভু দেবা। যার নাভির ওপরে ভাজা হচ্ছিল তিনিও আরেক মহাতারকা নাগমা।
বলিউড বা বলিউডের বাইরে ভারতীয় সিনেমায় দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই নাভির যৌনতাপূর্ণ চিত্রায়ণ হয়েছে। হতে পারে এটি সংস্কৃতির অংশ বা ফেটিশ (বিশেষ কোনো বস্তুর প্রতি আকর্ষণ)।
নারীর জন্য তৈরি বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক নাভিকে উন্মুক্ত রাখে। দক্ষিণ ভারতীয় বহু চলচ্চিত্রে নাভিকে নারী দেহের সংবেদনশীল ও কামুক অংশ হিসেবে দেখানো হয়। নাভির ক্লোজ-আপ শট বা অভিনেত্রীর নাভিতে পুরুষ অভিনেতা মুখ বা হাত মন্থনের দৃশ্য যৌন দৃশ্যের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত।
চলচ্চিত্রের বাইরে গুগল ট্রেন্ডসে ‘নাভি’ বহুবার সার্চ করা একটি শব্দ। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নাভি শব্দটি নিয়ে গুগল করা শীর্ষস্থানীয় দেশ ভারত। ভারতীয়রা অনলাইনে এ-সম্পর্কিত যেসব ট্রেন্ড খুঁজছেন তার মধ্যে রয়েছে ‘শাড়িতে হট নাভি’, ‘কাজল নাভি’ ও ‘আনুশকা নাভি’। এই সার্চের মূল লক্ষ্য অভিনেতা কাজল আগরওয়াল ও আনুশকা শেঠি, যারা মূলত দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাজ করেন।
নাভি নিয়ে এমন আকর্ষণ কেন?
ভারতীয় চলচ্চিত্রে এখন প্রায়ই ‘আইটেম সং’ দেখা যায়। এসব গানে অভিনেত্রী স্বল্প পোশাকে প্রলুব্ধ করার ভঙ্গিতে নাচেন। আইটেম গান নারীকে ‘বস্তু’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে এটি নারীর যৌনতা ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ্য ঘোষণা, যদিও তার নির্মাতা পুরুষ। ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রায় সব আইটেম গানে অভিনেত্রীর কোমর ঝাঁকুনি ও দোলানোসহ প্রলোভন ভরা নাচের সঙ্গে তার নাভি দৃশ্যমান রাখা হয়। এর প্রচুর ক্লোজ-আপ থাকায় দর্শকের মনোযোগ আরও আকর্ষিত হয়।
শিশুর জন্মের পর যখন মায়ের গর্ভের সঙ্গে যুক্তকারী কর্ডটি কেটে ফেলা হয়, ওই কর্ডের গোড়াটি শেষ পর্যন্ত শুকিয়ে যায় ও বাইরের দিকে কিংবা ভেতরের দিকে কিছুটা উঁচু বা গভীর হয়ে নাভি পূর্ণতা পায়।
পর্ন ওয়েবসাইটে ‘ভারতীয় নাভি’ সার্চ করলে অভিনেত্রীদের ছোট ছোট ক্লিপ বা তাদের নাভি দেখা যায় এমন দৃশ্যগুলোতে নিয়ে যাবে৷ ‘ন্যাভাল কুইন’ শব্দটি তামান্না ভাটিয়া, ক্যাটরিনা কাইফ, কৃতি শ্যানন, সামান্থা রুথ প্রভু ও তেজস্বী প্রকাশসহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
মুম্বাইয়ের ৩৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী ভারুন টিনএজ বয়স থেকেই নাভির প্রতি আকৃষ্ট।
তিনি বলেন, ‘সিনেমা হোক বা বিজ্ঞাপন, নাভির দৃশ্য সব জায়গায় দেখতাম। কিছু ইরোটিক গানে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে নাভির দৃশ্য যুক্ত করা হতো। নাভি নারী দেহের এমন একটা অংশ ছিল, যার সঙ্গে বাস্তব জগতে আমার পরিচয় ঘটে। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় নাভির দৃশ্য আমি অনেক পরে দেখেছি। আমি ৯০-এর দশকে বলিউড ফিল্ম দেখে বড় হয়েছি, যেখানে নাভির দৃশ্য দেখানো হয়েছে।’
নাভির প্রতি এমন আকর্ষণকে ভারতীয় সিনেমার অনন্য বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক কিরুবাখার পুরুষোত্তম।
তিনি বলেন, ‘হলিউডে এমন কিছু পাবেন না। একই সঙ্গে যেসব ভারতীয় সিনেমায় নাভি প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলোতে চুমু খাওয়া বা যৌনতার দৃশ্যও নেই।’
শুরুতে উল্লেখ করা ডিম ভাজার দৃশ্যটি অবশ্য ১৯৯১ সালের হলিউড সিনেমা হট শটসের অনুকরণে নির্মিত। ওই সিনেমায় নায়ক চার্লি শিন নায়িকা ভ্যালেরিয়া গোলিনোর পেটের ওপর বেকন ভেজেছিলেন।
ভারতীয় সিনেমায় ঐতিহ্যগতভাবে যৌন দৃশ্য বা চুম্বন দৃশ্য দেখানো হয় না। এর কারণ এই অঞ্চলে আবেগের প্রকাশ্য প্রদর্শনকে ভালো চোখে দেখা হয় না। প্রকৃত ঘনিষ্ঠতা, মেক আউট বা যৌন মিলনের জায়গায় ফিল্মগুলো যৌনতার ইঙ্গিত দেয়ার জন্য দুটি ফুলের ক্লোজ-আপ বা যুগলকে লুকানোর ছাতা বা গাছ দেখিয়ে এসেছে।
পুরুষোত্তম বলেন, ‘আমার মতে সমাজ হিসেবে, প্রকৃত যৌনতার চেয়ে আমাদের কাছে যৌনতার ইঙ্গিত বেশি গ্রহণযোগ্য। কোনো পুরুষ নারীর নাভি স্পর্শ করলে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলেই সিনেমাটি বিতর্কের মুখে পড়তে পারে। এমনকি তা নিষিদ্ধও হয়ে যেতে পারে।’
২০০০ সালের তামিল সিনেমা ‘কুশি’তে এক নারী তার নাভির দিকে তাকিয়ে থাকা পুরুষের সঙ্গে মারামারি করেন। ভারতীয় সিনেমায় ‘ব্যক্তিগত অঙ্গ’ প্রদর্শনে বিধিনিষেধ থাকায় নাভিকে শরীরের একটি যৌন অংশ হিসেবে দেখানো হয় এবং এটি সহজেই দেখা যায়। এ অঞ্চলে নাভি শুধু শরীরের একটি আবেদনময় ও দৃষ্টিনন্দন অংশই নয়, কামোদ্দীপক অংশও।
পুরুষোত্তম ভারতীয় সিনেমায় ফুল, ছাতা এবং গাছ ব্যবহারের মতো ইঙ্গিতপূর্ণ যৌন ক্রিয়াকে জাপানি পর্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেখানে তাদের অশ্লীলতার আইন এড়ানোর জন্য যৌনাঙ্গ ঝাপসা করা হয়।
পুরুষোত্তম বলেন, ‘জাপানে হেনতাইয়ের মতো হার্ডকোর পর্ন রয়েছে। তারপরও সেখানে যৌনাঙ্গ ঝাপসা করে রাখা হয়। আমার মতে সাংস্কৃতিক দমন যৌন আকাঙ্ক্ষা ও ফ্যান্টাসিগুলোকে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রকাশ করে।’
তেলেগু সিনেমার পরিচালক কে রাঘবেন্দ্র রাও প্রায়ই তার সিনেমায় নাভিকেন্দ্রিক যৌনতার দৃশ্য রাখেন। যেমন, ১৯৯১ সালের সিনেমা ‘চিন্না গুনদার’-এ নায়ক ভিজয়কান্ত নায়িকার পেটের ওপর একটি লাটিম রেখেছিলেন।
তবে, কেবল ভারতীয়দেরই নাভিপ্রীতি আছে বিষয়টি তেমনও নয়। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি নাভিকে একটি কামোদ্দীপক স্থান হিসেবে দেখে। জাপানে একটি বার্ষিক নাভি উত্সব রয়েছে।
আমেরিকার সিনেমাগুলো ১৯৩৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত হেইস কোড অনুসরণ করেছে। এ কোডের বিধিনিষেধের মধ্যে একটি ছিল, নাভিকে সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। ১৯৫০ সালের সিনেমা সাম লাইক ইট হট-এ মেরিলিন মনরো এমন একটি পোশাক পরেছিলেন যাতে তার দেহের প্রায় পুরোটা দেখা গেলেও একটি ছোট কাপড়ে তার নাভি ঢাকা ছিল। ১৯৬০-এর দশকে কমিউনিটি গাইডলাইনের সঙ্গে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।
১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে দক্ষিণ ভারতে সফটকোর পর্ন সিনেমার উত্থান ঘটে। কাহিনি আইয়ার মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আরকের একটি ভিডিওতে বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতারা তখন একটি আন্দোলন শুরু করেন যা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ ও জার্মান আর্টহাউস সিনেমার মতো ছিল।
১৯৭৮ সালে আইভি শশীর সিনেমা ‘আভালুদে রাভাকাল’ ছিল এ-রেটিং পাওয়া প্রথম মালয়ালম সিনেমা। একইভাবে ভরথান পরিচালিত ‘রথিনিরভেদম’ এক কিশোরের সঙ্গে এক বয়স্ক নারীর প্রেমের মতো নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে। এ সময়ে মূলত দক্ষিণ ভারতে নির্মিত সফটকোর পর্ন ভারতজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিল্ক স্মিতা ও ডিস্কো শান্তির মতো অভিনেত্রীরা এ সময়ে খ্যাতনামা হয়ে ওঠেন। ভরথান ও শশীর সিনেমাগুলো সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছিল।
ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচক সি এস ভেঙ্কিটেস্বরন তার বই ‘মালয়ালম সিনেমা: ন্যাচারালাইজিং জেন্ডার হাইরার্কিস’-এ লিখেছেন, ‘এই গল্পগুলো নারী দেহের যৌনতা প্রদর্শনের দারুণ এক সুযোগ দিয়েছে। সিমা (আভালুদে রাভুকালের নায়িকা) ও সুভার মতো অভিনেতারা কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন। তারা যে ধরনের যৌনতা প্রকাশ করছেন, যা এর আগে নৈতিক বা আদর্শতার কারণে বাতিল করা হয়নি। তাদের দেহকে ফ্রেমের সামনে ও বর্ণনার উভয় ক্ষেত্রেই সামনের দিকে রাখা হয়েছিল। নায়িকা নিজেকে এমনভাবে স্থাপন করায় ক্যাবারে বা খলনায়কের অশ্লীল আস্তানা তৈরির প্রয়োজন ছিল না।’
এসব মোটা কোমর ও বিশাল বক্ষা নারীর সঙ্গে আইয়ার তুলনা করেছেন প্রাচীন কুশনা সাম্রাজ্যের ইয়াক্সি (যক্ষী) মূর্তিগুলোর।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার এ সংস্কৃতি আসলে প্রাচীন আবেদনের ফল। কুশান সাম্রাজ্যের ইয়াক্সিদের (যক্ষী) মতো নাভি উন্মুক্ত করা শাড়ি পরিহিত মোটা কোমর ও বিশাল বক্ষা নারীদের প্রতি কামশক্তির প্রতিফলন এটি।’
চেন্নাইয়ের ২৫ বছর বয়সী প্রকৌশলী নরেন তামিল ও তেলেগু সিনেমা দেখে বেড়ে উঠেছেন। ম্যাগাজিন কিংবা সিনেমা সব জায়গায় তিনি নাভির প্রতি এ আকর্ষণ লক্ষ করেছেন।
ভারুণের মতো নরেনও অনেকগুলো নাভিসংক্রান্ত সাবরেডিটে (রেডিটের গ্রুপ) জড়িত। তিনি ভাইসকে বলেন, ‘আমার মতে নারী দেহে এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। আমি এও দেখেছি, কোনো সিনেমায় গ্ল্যামারাস দৃশ্যের প্রয়োজন না থাকলেও একটি আইটেম গান যুক্ত করা হয়, যেখানে অভিনেত্রীরা তাদের নাভি প্রদর্শন করেন।’
নরেনের একজন সঙ্গিনী আছেন, যার সঙ্গে তিনি নাভি নিয়ে খেলা উপভোগ করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্পর্শ করা, হাত বোলানো, আঙুল দেয়া বা শুধু তাকিয়ে থাকা।
তিনি বলেন, ‘ডেটিং শুরুর আগে আমরা বন্ধু ছিলাম। তাই তার কাছে এটি প্রকাশ করা সহজ ছিল। নাভির প্রতি আমার আকর্ষণ সম্পর্কে আমি সব সময়ই সৎ। আমার সঙ্গিনী আমাকে এটা উপভোগ করতে দেয়।’
সিনেমার প্রভাবে মানুষের কি ভিন্ন ধরনের আকর্ষণ জন্মাতে পারে? ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যময় যৌনতাবিষয়ক মনোবিদ পম্পি ব্যানার্জির মতে, সিনেমার প্রভাবকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারদিকে যে ধরনের ছবি রয়েছে সেগুলো আমাদের যৌনতার ওপর প্রভাব ফেলে। সিনেমা আমাদের আকাঙ্ক্ষার ধারণাকে আরও পূর্ণ করে তোলে। ভারতীয় সিনেমায় যৌন দৃশ্য কম থাকে বলে নাভিকে যোনিসংক্রান্ত যৌনতার একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই সঙ্গে নাভি নিয়ে খেলা যৌনকর্মের একটি বিকল্প হয়ে ওঠে।’
ব্যানার্জি নাভির সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও তুলে ধরেন। প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ কামসূত্রে নাভিকে কামপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কামসূত্রে নাভির উল্লেখ আছে। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে, তখনকার মানুষও নাভি নিয়ে খেলতে পছন্দ করতেন।’
কামসূত্রে কীভাবে নাভিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় ও কীভাবে এর যত্ন নিতে হয় বা অলংকার দিয়ে সাজাতে হয় সে বর্ণনাও আছে।
ব্যানার্জি বলেন, ‘ভারতীয় অনেক গহনাই কোমরের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে। নাভি প্রেম আসলে আমরা বংশানুক্রমিকভাবে পেয়েছি।’
যৌনতা ও উত্তেজনাকে পরিষ্কারভাবে দেখানো কোনো দৃশ্য ভারতীয় সেন্সর বোর্ডে এ-রেটিং পায়। এ কারণে নির্মাতারা স্বল্পবসনা অভিনেত্রীর নাভির কিছু উত্তেজক দৃশ্য সিনেমায় ঢুকিয়ে দেন। এতে করে এ-র বদলে সিনেমাটি ইউ/এ রেটিং পায়। এর অর্থ হলো, সিনেমাটি সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।
তবে, অনলাইনে ভারতীয় অভিনেত্রীদের নাভি নিয়ে এতটা হইচই হবে সেটা নিশ্চিতভাবেই চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভাবেননি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অভিনেতা কারিশমা কাপুরের নাভির ভক্তদের নিয়ে খোলা একটি ফেসবুক গ্রুপে ২০ হাজারের বেশি সদস্য আছে। মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে খোলা গ্রুপে আছে ৪২ হাজারের বেশি। রেডিটের সাবরেডিত ও গ্রুপে নাভিপ্রেমীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। একজন রেডিট ব্যবহারকারী স্বীকার করেছেন, তিনি শুধু নাভিসংক্রান্ত যৌন উত্তেজক পোস্ট দেন। কারণ এতে সাড়া বেশি আসে ও ফলোয়ার বাড়ে।
শুধু সিনেমাতেই নাভিকে যৌনতাপূর্ণ দেখানো হয় তা নয়। রিয়েলিটি টিভি সিরিজ শার্ক ট্যাঙ্ক ইন্ডিয়ায় এক কোম্পানি তাদের ‘বেলি বাটন শার্পার’ নিয়ে এসেছিল। তাদের এ পণ্য নাভিকে আরও গভীর ও বৃত্তাকার করে তুলবে এমনটাই ছিল দাবি। তবে এ পণ্যটি শার্ক ট্যাঙ্কের বিচারকদের মাঝে হাস্যরস সৃষ্টি করে এবং তারা একে বাতিল করে দেন।
ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেতা তাপসী পান্নুর দাবি, তেলেগু সিনেমার গানের শুটিংয়ের সময় তার পেটে একবার নারকেল ছুড়ে মারা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘অন্যদের দিকে ফুল বা ফল ছুড়ে মারা হয়। আমার সময় নারকেল ছুড়ে মারা হলো! আমি একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি জানি না পেটে নারকেল লাগার মধ্যে উত্তেজক কোন বিষয়টা আছে।’
আরেক অভিনেতা ইলিয়ানা ডিক্রুজ ভারতের ডিএনএ পত্রিকাকে তার পেটে চীনামাটির তৈরি ঝিনুক ছুড়ে মারার ঘটনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম তেলেগু সিনেমায় একটা দৃশ্য ছিল যেখানে একটা চীনামাটির তৈরি ঝিনুক স্লো-মোশনে আমার পেটের ওপর ফেলা হবে। ঝিনুকটা বেশ বড় ও ভারী ছিল। ওই দৃশ্যধারণের পর আমার পেটের পেশিগুলো ব্যথা করছিল। আমার বয়স ছিল ১৮ বছর, আর আমি তখন মোটেই বুঝতে পারছিলাম না বিষয়টিকে কেন সেক্সি হিসেবে ধরা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে নারী কর্মীদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করেছে।
ঢাকায় হুয়াওয়ের সাউথ এশিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অফিসে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এ বিশেষ উদ্যোগ কর্মীদের সুস্থতা ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।
হুয়াওয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিলো নারী কর্মীদের ইউরিনারি হেলথের ওপর কাউন্সেলিং প্রদান করা। কাউন্সেলিংয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই), যা নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা।
ইউনাইটেড হসপিটালের চিকিৎসক সরকার কামরুন জাহান ঝিনুক এ সমস্যার ঝুঁকি, লক্ষণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন জীবনযাপনের কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, আটসাট পোশাক পরিহারের মাধ্যমে আর্দ্রতা ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানো সম্ভব।’
হুয়াওয়ের এইচআর ডিরেক্টর লিনজিয়াও এ কর্মশালার সূচনা করেন। হুয়াওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
লিনজিয়াও বলেন, “হুয়াওয়েতে আমরা কর্মদক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। একজন কর্মী পুরুষ বা নারী যাই হোক না কেন, আমরা তাকে তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার মানদণ্ড দিয়েই বিচার করি। আমরা দেখেছি যে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই দক্ষতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। হুয়াওয়ের কর্মীদের সুস্থতার দিকেও আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি।
‘তাই আমাদের কর্মীদের জন্য ওপিডি ও আইপিডি বিমার সুবিধা রয়েছে। আমরা কর্মীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতাবিষয়ক কর্মশালারও আয়োজন করি। আজকের কর্মশালা নারী কর্মীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
হুয়াওয়ের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে কর্মক্ষেত্রে বায়ু, পানি ও খাবারের গুণমান পরীক্ষা করার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিয়ষক নীতি অনুযায়ী নিয়মিত ফায়ার ড্রিলসেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের সকল শক্তি প্রয়োগ করব।'
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে, তার সম্মুখসারির ভূমিকায় ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ও অংশগ্রণকারী ও আহত নারীদের স্মরণ করে তাদের দ্রুত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান।
‘দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ নানান ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। এ সংক্রান্ত আরও উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
‘আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি। তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণী ও নারীরা তাদের চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতায়ন ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। প্রত্যেক নারীকেও পুরুষের সমান মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুযোগ পাওয়া উচিত।’
তিনি উল্লেখ করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন অসাধারণ ব্যক্তি হলেন তার মা, স্ত্রী ও কন্যা।
তারেক রহমান ফেসবুক পেজে স্ত্রী জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছবিও শেয়ার করেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমি সবসময় তাদের জন্য প্রতিটি সুযোগ, সাফল্য এবং সুখ চেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা যারা এটি পড়ছেন তাদের অনেকেরই একই অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মতো আমাদেরও উচিত একটি ন্যায়পরায়ণ, সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া, যেখানে ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মেয়ের ছেলেদের সমান সুযোগ থাকা উচিত এবং তাদের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত। হয়রানি ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা উচিত এবং নির্ভয়ে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের সুযোগ নেওয়া উচিত।’
তারেক রহমান আরও বলেন, “বিএনপির নীতি প্রণয়নে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত সমাজে নারীর অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়, যেখানে দলের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ঋণ, তরুণীদের শিক্ষার জন্য অ্যাকাডেমিক ও বৃত্তিমূলক প্রকল্পের মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
উপসংহারে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একসঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করি।’
আরও পড়ুন:নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম নির্ধারক হচ্ছে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা নারীদের প্রতি উগ্রতা, বিদ্বেষ এবং অশ্রদ্ধামূলক সকল আচরণকে না বলি এবং এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য আহ্বান জানাই।’
গত ১৫ বছরে হাজার হাজার পুরুষ, নারী গুম, খুন, অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অমানবিক সংগ্রাম করেছে ওই পরিবারগুলোর নারীরা। জুলাইতেও আন্দোলনের শুরু এই বাংলাদেশের নারীদের হাতেই। শহীদ হয়েছে আমাদের সন্তানরা, ছোট শিশুকন্যাও। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ, সকলেই এই আন্দোলনের শরিক।’
মির্জা ফখরুল আশা করেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়াই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকবে। লিঙ্গ, বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক যেন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করে, এমন বাংলাদেশই আমাদের কাম্য। বাড়ি থেকে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, সর্বত্র তাদের আত্মসম্মানকে মূল্যায়ন করা উচিত।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজকের ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে উগ্রবাদের কোনো জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে আসুন আমাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পদক্ষেপ নিই।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সবার আগে পরিবার থেকে নারীকে সাহস দিতে হবে। যেকোনো সংকটে নারীর পাশে ঢাল হয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবার পাশে না থাকলে রাষ্ট্রের পক্ষে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার নারীকে সাহস দিলে রাষ্ট্রও নারীর পাশে থেকে সাহস জোগাতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর প্রতিবন্ধকতা কখনও শেষ হয় না। সমাজে একটা গোষ্ঠী আছে, যারা নারীকে ক্ষমতায়িত করতে চায় না। দুর্বল নারীকে যত পছন্দ করে, সবলচিত্তের নারীকে তারা পছন্দ করে না। এটাই বাস্তবতা।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন নারীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা হলে সে দেশের কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও দায় রয়েছে। নারীর চলার পথ পুরুষের পাশাপাশি নির্বিঘ্ন ও নির্ভরতার হতে হবে।’
তিনি বলেন, “নারী এখন যে অবস্থানে রয়েছে, সে অবস্থানে থেকে নারী বলে বিতর্কিত নয়, কাজে সে বিতর্কিত হোক, অদক্ষ বলে বিতর্কিত হোক, শুধু নারী বলেই ভূল, নারী বলেই অদক্ষ, এ কথাটা বলা যাবে না। আমি বলব ‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট।
“তাই তার চিন্তার গন্ডিটাকে তার পারিপার্শ্বিকতার নেতিবাচক মনোভাবে আটকে না রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অভিভাবককে বুঝতে হবে, ছেলে ও মেয়ে দুজনই পরিবারের সম্পদ। পরিবারের উচিত নারীকে ক্ষমতায়িত করা।”
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের মূল ধারা হবে সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যের নিরসন এবং নারী-পুরুষের জেন্ডার বৈষম্য কমাতে কাজ করতে হবে। নারীর উন্নয়ন বিকাশে বাধাগুলো নিয়ে বিষয় চিহ্নিত করা।
‘অন্য সকল সংস্কার কমিশনে নারী অধিকারের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এটা আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। ক্রান্তিকালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করার সর্বোত্তম সুযোগ।’
অনুষ্ঠানে সমাজে যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং জলবায়ু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সবুজায়ন এবং ক্রীড়াঙ্গনে নারী নেতৃত্ব বিকাশে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন ক্যাটাগরিতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের তিনজনকে ‘নাসরীন স্মৃতিপদক ২০২৫’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর পদক গ্রহণ করেন ডনাইপ্রু নেলী, রিনা খাতুন ও আফরোজা খন্দকার।
দিবস উদ্যাপন আয়োজনে নারীদের সাফল্য প্রদর্শন ও পুরস্কার প্রদানসহ ছিল আলোচনা সেশন।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় দেশের সব ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাদের একজন বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়নে সামগ্রিক চিত্রের অগ্রগতি হলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। এখনও অনেক পিছিয়ে আছেন নারীরা। ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে বিভিন্ন স্তরের নারীদের সামনে থাকা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণকে উৎসাহিত করাসহ নারী ও কন্যাশিশুরা যেন সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করতে পারে, সে লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপের গতি বাড়াতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারীদের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের কথা স্বীকার করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘নারীদের অগ্রগতিতে পেছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কারা করছে, কেন করছে সেটা বের করা দরকার। জুলাইয়ের আন্দোলনে মেয়েরাই রোকেয়া হল থেকে সবার আগে বের হলো। কিন্তু পরে এত দ্রুত মেয়েরা সরে গেল কেন?
‘জায়গা কেউ ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়নি। চাপ সৃষ্টি করে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। মেয়েদের পেছনে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে।
‘আমরা দেখেছি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নারীরা দারুণ সাহস দেখিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি মেয়েদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে আশা করিনি।’
নারীদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে কমিউনিটি উন্নয়নে একশনএইড কীভাবে অবদান রেখে চলেছে তা তুলে ধরেন ফারাহ কবির।
তিনি বলেন, ‘দেশের নারীদের অগ্রগতিতে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে চলেছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী সুরক্ষা, অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে অবস্থান ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সমানাধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছি আমরা। আমরা চাই, নারী ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে আরও গতি আসুক।’
ওই সময় নারী উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম রোকেয়া এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ। নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বৈপ্লবিক।
‘বেগম রোকেয়ার জীবন ও তার আদর্শ বাস্তবায়ন এদেশের নারী সমাজকে আলোকিত ও আত্মনির্ভরশীল করতে প্রেরণা যোগাবে।’
মন্তব্য