কাঁঠাল নিয়ে জমজমাট আয়োজন হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে। কাঁঠাল ঘিরে হয়েছে গান-আলোচনা সভা ও প্রতিযোগিতাও।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সাংসদের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো হয়ে গেছে এই কাঁঠাল উৎসব। সেখানে ২ মিনিটে কাঁঠালের সর্বোচ্চসংখ্যক কোয়া খেয়ে বিজয়ী হয়েছে কলেজের কর্মচারী বিলকিস বেগম। পুরস্কারেও পেয়েছেন আস্ত এক কাঁঠাল।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হয় এই উৎসব। এর স্লোগান দেয়া হয় ‘কাঁঠালের বহু ব্যবহারে, প্রাণ-প্রকৃতি সুস্থ রাখে’।
উৎসবে যোগ দেন চার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীসহ অনেকে।
দিনভর নানা আয়োজনে মুখর ছিল কলেজ প্রাঙ্গণ। কাঁঠালকথন, কাঁঠালরঙ্গ, আবৃত্তি, গান, সম্মাননা ও আলোচনা সভা শেষে রাখা হয় কাঁঠাল খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
৫৫ প্রতিযোগী তাতে অংশ নেন।
মাত্র ২ মিনিটে ৫৯ কোয়া কাঁঠাল খেয়ে একটি কাঁঠাল, একটি বই ও শুভেচ্ছা উপহার জিতে নেন কলেজের কর্মচারী বিলকিস বেগম। একই সময় ৪৯ কোয়া খেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার কর্মচারী নয়ন রায় দ্বিতীয় ও ৪৬ কোয়া খেয়ে কলেজছাত্র মো. আফিফ তৃতীয় স্থান লাভ করেন। তাদেরও দেয়া হয় শুভেচ্ছা উপহার।
কাঁঠাল উৎসব দেখতে এসে জাহানারা খাতুন জানান, ‘এখানে এসে কাঁঠাল ফল সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি এর ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে। প্রতি বছরই এমন আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি।’
কাঁঠালের পরিচিতি রক্ষা ও গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আসমা হেনা চুমকি।
আরও পড়ুন:মানবিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশসেরা ১২টি যুব সংগঠনকে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ দেয়া হয়েছে।
দেশের ৭৫০টিরও বেশি সংগঠনের মধ্য থেকে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান, শিল্প ও সংস্কৃতি, সম্প্রদায়ের সুস্থতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, জলবায়ু ও পরিবেশ উদ্ভাবন এবং যোগাযোগ- এই ছয় ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের (সিআরআই) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলা’-এর আয়োজনে সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে শনিবার এই পুরস্কার দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা এবং সিআরআইর চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়।
সপ্তমবারের এই আয়োজনে দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘সম্ভাবনা’ ও ‘ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন’; শিল্প ও সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে পেয়েছে ‘অভিনন্দন ফাউন্ডেশন’ ও ‘টং-এর গান’; কমিউনিটর সুস্থতা ক্যাটাগরিতে ‘নপম ফাউন্ডেশন’ ও ‘অলট্রাস্টিক পিপল’স ইউথ অরগানাইজেশন’; সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে ‘উইমেন’স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’ ও ‘ভালো কাজের হোটেল’; জলবায়ু ও পরিবেশ ক্যাটাগরিতে ‘ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড স্নেইক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ’ ও ‘ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল’; উদ্ভাবন ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ ও ‘টিম অ্যাটলাস’।
অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ ও ‘খেলা ঘর’ সংগঠনকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পক্ষে সম্মাননা নেন দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু এবং সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা।
ইয়াং বাংলার এই আয়োজনে সকালে যোগ দেন সিআরআইর চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সিআরআইর ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী।
সিআরআইর ট্রাস্টি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংসদ নাহিম রাজ্জাক প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পর্যটন নগরী হিসেবে সারা দেশের মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার খ্যাতি রয়েছে।
এখানে যেমন রয়েছে সারি সারি চায়ের বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হাওর, লেক ইত্যাদি, পাশাপাশি রয়েছে লোকালয় ও উঁচু নিচু টিলার ওপরে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন ও তাদের নানা উৎসব আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।
সারা বছরই নানা অনুষ্ঠানে মেতে উঠেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা, তবে প্রধান উৎসবগুলো হয় শীত মৌসুমে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছরের নভেম্বর মাসেই গারো, খাসি (খাসিয়া) ও মণিপুরীদের পৃথক বড় তিনটি উৎসব রয়েছে। যে উৎসবগুলো দেখতে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা।
শ্রীমঙ্গলে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব
গারোদের অন্যতম বড় উৎসব ওয়ানগালা। সাধারণত শীতের শুরুতে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে তাদের নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ। গারো ভাষায় ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেব-দেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা তাদের দেবতার কাছে ফসল উৎসর্গ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ১৯ নভেম্বর রোববার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়ি গারো পল্লীর মাঠে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
কমলগঞ্জে খাসিয়াদের খাসি সেং কুটস্নেম উৎসব
খাসি (খাসিয়া) জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব খাসি সেং কুটস্নেম। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে খাসিরা তাদের পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার খাসিয়া জনগোষ্ঠীর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
কমলগঞ্জে মণিপুরীদের মহারাসলীলা উৎসব
নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে থাকা মণিপুরীদের প্রধান উৎসব মহারাসলীলা উৎসব। আগামী ২৭ নভেম্বর সোমবার কমলগঞ্জের মাধবপুরের শিববাজারে (জোড়া মণ্ডপে) ও আদমপুরের তেতইগাঁওয়ে আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসবের। রাস উৎসবের দুটি পর্ব থাকে। দিনের বেলায় রাখালনৃত্য আর রাতে মহারাস।
রাখালনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণের শিশুকালের নানা লীলা তুলে ধরা হয়। রাতের বেলা শুরু হয় মহারাসলীলা। ভোর অবধি রাধাকৃষ্ণের নানা কাহিনি ফুটিয়ে তুলেন মণিপুরীরা।
মাধবপুর মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল এস পলাশ বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় ১৮১তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মহোৎসব উপলক্ষ্যে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। মণিপুরী সম্প্রদায়ের শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব।’
মাধবপুর মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘এবারের রাসোৎসব আমরা বড় পরিসরে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
আরও পড়ুন:সংগীত সংগঠন ‘রবিরশ্মি’-এর ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী এক সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘কী হেরিলাম হৃদয় মেলে’ স্লোগানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুক্রবার ও শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রবিরশ্মির প্রধান উপদেষ্টা, বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, মীর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ও এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা সোহেলা হোসেন।
অনুষ্ঠানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সংগঠক শ্রীমতি রীতা চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের সিলেটের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সংগঠক শ্রী রানা কুমার সিনহাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন রবিরশ্মির শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন ত্রিপুরা থেকে আগত শচীনদেব বর্মন গভ. মিউজিক কলেজের অধ্যাপিকা শিল্পী মানষী ঘোষ। তিনি একাধারে নৃত্যগুরু, কোরিওগ্রাফার ও কথক ডেন্সার। নেপথ্যে কণ্ঠে ছিলেন শিল্পী মহাদেব ঘোষ।
একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী রীতা চক্রবর্তী ও শিল্পী রাণা কুমার সিনহা। পাশাপাশি একক গান পরিবেশন করেন রবিরশ্মির শিল্পী মিথিলা ঘোষ, সঞ্জীব সরকার, খান মো. রেজাউল কবির, পার্মিনা তোড়া দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষ্ণুপদ দাস, অর্চনা রায়, বনশ্রী পাল, মনামী চক্রবর্তী, অতিথি শিল্পী আগরতলার গীতালী অম্বুলী, চট্টগ্রামের প্রণব সিকদার, শ্যামলী পাল, বনানী শেখর রুদ্র ও লিংকন বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন করেন রবিরশ্মি ও আগরতলার শিল্পীরা।
এ দিন একক গান পরিবেশন করেন রবিরশ্মির শিল্পী শাশ্বতী মাথিন, সুকুমার চক্রবর্তী, মনীষা চক্রবর্তী, সৌরভ গাঙ্গুলী, ভারতী চাকী, অরুণা সরকার, জাহানজীব সারোয়ার শিমুল, তপতী রায়, হাসানুল সাওদাত পিয়াস, সুস্মিতা হোসেন, শেলী চন্দ, লিলিয়েন পাল নীলা, অনামিকা ত্রিপুরা, দিলীপ কুমার দাস, শাহনাজ পাপড়ি, স্বপন কুমার চক্রবর্তী ও অতিথি শিল্পী ড. অপর্ণা গাঙ্গুলী, রেখা ভট্টাচার্য। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিক শিল্পী ওয়ালিদ হাসান।
এস. এইচ লিমন ও সাইফুর রহমান জুয়েলের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও শাশ্বতী মাথিন।
রবিরশ্মির ২৫তম এ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শেষ হয় দেশবরেণ্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও রবিরশ্মির পরিচালক মহাদেব ঘোষের সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনা ও পরিচালনায়ও ছিলেন তিনি।
প্রায় ৫০ হাজার ক্যাথলিকের মোমের আলোয় আলোকিত হলো গারো পাহাড়।
তীর্থযাত্রায় অংশ নেয়া খ্রিষ্ট ভক্তরা তাদের নানা মানত পূরণ করতে ঈশ্বর জননী মা মারিয়ার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা জানান ও তার অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন।
প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ উৎসব তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে দুই দিনব্যাপী ২৬তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
তীর্থোৎসব মূল আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বলন করে আলোক শোভাযাত্রা। এ উৎসবে সারা দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ অন্য ধর্মাম্বলীরাও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন।
সিনোডাল মণ্ডলীতে মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ কর্মে ‘ফাতেমা রানী মা মারিয়া’ এই মূল সুরে তীর্থোৎসবে যোগ দিয়েছেন প্রায় অর্ধলক্ষ দেশি বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত।
এ ছাড়াও ছিল খ্রীষ্টযাগ, নিশি জাগরণ, জীবন্ত ক্রুশের পথ, মহা খ্রীষ্টযাগসহ নানা অনুষ্ঠান।
পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় শুরু হয় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ শেষে রাত ৯টার দিকে আলোক শোভাযাত্রা, ১১টার দিকে আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, ১২টার দিকে নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তি হয়।
এবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মেঘালয় ও তুরা ধর্ম প্রদেশের পাল পুরোহিত ফাদার টমাস মানখিন।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তীর্থযাত্রা, ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব। ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লিটি। ১৯৯৮ সাল থেকে বার্ষিক তীর্থস্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ ১৯৯৮ সালে এ ধর্মপল্লিকে ‘ফাতেমা রনীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই পালন করা হচ্ছে তীর্থ উৎসব।
শুধু শেরপুর নয়, দেশ বিদেশের প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থী অংশ নেন তীর্থযাত্রায়।
নেত্রকোণার বিরিশিরি থেকে তীর্থে যাওয়া রোবলা সাংমা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি মা ফাতেমা রানী এখানে জাগ্রত আছেন। এ জন্য আমরা দূরদূরান্ত থেকে আসি। উনাকে ভক্তি করি, সম্মান করি। আমাদের মনের ইচ্ছা ও বাসনা মানত করি। সেগুলো পূরণ করেন তিনি।’
মন্দিরা বলেন, ‘মা এখন বেঁচে নেই। আমাদের মা আমাদের জন্য আসতো। আমরা তিন বোনই আসছি আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য প্রার্থনা করতে। এখানে এলে মা মারিয়া সবার আশা পূরণ করে, তাই আমরা অনেক দূর থেকে আসছি।’
শেরপুরের ব্রিজেট বলেন, ‘আমরা মা মারিয়ার কাছে নিজেদের পরিবার ও দেশের শান্তি কামনায় প্রার্থনা করি। যেন আমরা সবাই একত্রে ভালোভাবে শান্তিতে থাকতে পারি।’
পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফলের জন্য তীর্থে প্রার্থনার জন্য যান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী সুমন্ত বলে, ‘আমি মা-বাবার সঙ্গে এসেছি প্রার্থনার জন্য। যেন সামনের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারি।’
তীর্থোৎসব আয়োজকরা জানান সফলতার কথা।
তীর্থোৎসব সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারি বলেন, ‘এবারের তীর্থোৎসবে ধর্মীয় চেতনায় দেশি বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করেছিল। আমাদের এ আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে সব কিছু সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য আমরা খুবই আনন্দিত।’
তীর্থোৎসবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে এসপি মোনালিসা বেগম বলেন, ‘এ উৎসবে সতর্কতা ও শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছে আমাদের টিম। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩০০ সদস্য নিয়োজিত ছিল। চার স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ছিল।
‘এ ছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়।’
আরও পড়ুন:ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রতিক একটি পোস্ট কি আপনার চোখে পড়েছে কাল বা আজ? না খেয়াল করলে বরং কপি করে এনে তা এখানে দিচ্ছি- ‘কারো কি ইচ্ছে করে আমার কপাল থেকে অবাধ্য চুল গুলো সরিয়ে দিতে?’
শুধু তসলিমাই নন, এই যে ভালোবাসাবাসি, একটু স্নেহ, যত্ন বা কারো জন্য বিশেষভাবে ভাবা; সবমিলিয়ে এক শব্দে বলতে গেলে ‘কেয়ার’ করা বা পাবার ইচ্ছে এ জগত সংসারে হয় মানুষের।
প্রতিটি মানুষের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের সম্পর্ক ভিন্ন সত্যি, তবে কেউ কেউ বেশি আপন, কেউ কেউ বেশি কাছের হয়ে ওঠে কখনও। কারও জন্য কারও মনে জন্মে বিশেষ অনুভূতি। এই হলো ‘কেয়ার’।
কারও জন্য কারো মন পুড়লে, কারও জন্য কারো হৃদয়ে আবেগ সঞ্চারিত হলে তাদের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আজ সে সম্পর্ককে একটু বেশি গুরুত্ব দেয়ার দিন। আজ ‘আমি তোমাকে কেয়ার করি’ দিবস।
ডেইজ অফ দ্য ইয়ার বলছে, ‘ন্যাশনাল আই কেয়ার অ্যাবাউট ইউ ডে’ এর শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব নির্ধারণ করতে চালু হয় এ দিবস। এরপর এখন অনেক দেশেই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
ভালোবাসার মানুষকে কতটা ভালোবাসেন তা দেখানোর হয়তো প্রয়োজন হয় না, তবু একটা দিন যদি এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে কাউকে বিশেষভাবে যত্ন নেন তবে বিষয়টি মোটেই মন্দ নয়।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী আজ।
মঙ্গলবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের এ উৎসব। সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। এরপর দর্পণ ও বিসর্জন।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সকাল থেকেই চলছে বিসর্জনের আয়োজন। ঢাকার অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গায়। বিজয়া দশমীর দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২০ অক্টোবর ছিল দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী। ওইদিন বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
হিন্দু পূরাণমতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরতকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক আর মারামারি-হানাহানি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে মণ্ডপগুলোতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঢাক-ঢোল, কাঁসর আর শঙ্খের আওয়াজে মুখর হয় বিভিন্ন মণ্ডপ।
রাজধানীতে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে দশমীর দিন বিকেলে পলাশীর মোড় থেকে প্রতিবছরের মতো বিজয়া শোভাযাত্রা শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, বঙ্গবাজার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন, গোলাপ শাহ্ মাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুর রোড, রায় সাহেব বাজার, বাহাদুর শাহ্ পার্ক হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজ ঘাটে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের প্রতিমা নিরঞ্জন মাধ্যমে শেষ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানিয়েছেন, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর রাজধানী ঢাকায় এবার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৪৬টি মণ্ডপে। গতবছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরে এবং রাজধানীতে ২৪১টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃংখলা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন আজ রোববার। এ দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল কুমারী পূজা।
রাজধানীতে ভক্ত ও অনুসারীদের আগমনে সকাল থেকেই মুখরিত ছিল মন্দির-মণ্ডপ।
রামকৃষ্ণ মিশনে বেলা ১১টায় কুমারী পূজা শুরু হয়। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস উপকরণে দেয়া হয় কুমারী মায়ের পূজা। চলে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে।
কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। এর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সম্মান জানানো হয় বলে জানান ভক্তরা।
পূজার কার্যক্রম শেষে কুমারী মায়ের নাম জানান রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ স্বামী পূ্র্ণাত্মানন্দ মহারাজ। এ বছর কুমারী মা হয়েছেন শতাক্ষী গোস্বামী। রাজধানীর নবেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্লে গ্রুপের এই শিক্ষার্থীর জন্ম ২০১৮ সালে।
কুমারী পূজা দেখতে সকাল থেকেই রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে ভিড় করেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। এ নিয়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পুরাণমতে, মহাস্নান শেষে অষ্টমী পূজা করা হয়। মহাঅষ্টমীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হলো কুমারী পূজা। যেখানে একজন কুমারীকে দেবী দুর্গারূপে আরাধনা করা হয়। যেসব বালিকা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়নি এদিন সকালে তাদের দেবীরূপে পূজা করা হয়।
মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের পূজা। দুর্গাপূজার এ উৎসবে প্রতি বছরই থাকে নানা আয়োজন।
মন্তব্য