আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/ আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।/ এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/ পলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/ নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/ আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে। ..রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যদিও নতুন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে বৃষ্টির সুবাতাসের পরশে হৃদয়ে দোল লাগতে শুরু করেছে আরও বেশ কিছুদিন আগেই- তবুও ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী আষাঢ় এসেছে আজ। আর এই দিনটির মধ্য দিয়েই সূচনা হচ্ছে প্রিয় ঋতু বর্ষার।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা গরমের পর বর্ষা যেন বহুল প্রতীক্ষিত এক ঋতু। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিয়ে থাকা রাশি রাশি কদম ফুলের কলি যেমন আষাঢ়ের বাদর দিনের অপেক্ষায় থাকে, তেমনি অপেক্ষায় থাকেন অগণিত কবি-সাহিত্যিক-গীতিকাররাও। সত্যিই আষাঢ় বাঙালির এক রোমান্টিক ঋতু। আষাঢ়ের কদম-কেতকী ধোয়া বৃষ্টি না এলে যেন পূর্ণতা পায় না বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য।
আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস মিলে বর্ষকাল। বর্ষা বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতির জন্য এক অপরিহার্য ঋতু। বর্ষা মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, নতুন গান ও জেগে ওঠার অনুষঙ্গ। বর্ষা আমাদের আবহমান বাংলাকে অনেক বেশি রূপবতী করে তোলে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও বেশি সবুজ-শ্যামলীমাময়।
বর্ষায় বিলে-ঝিলে শাপলা-শালুক ফোটে। কদমের পাশাপাশি হিজল-কেয়ার অপরূপ রূপে সেজে ওঠে চারপাশ। রিমঝিম বৃষ্টির শিহরণ হৃদয়কে করে তোলে স্নিগ্ধ ও সুশোভিত। বর্ষার জলে ধুয়ে-মুছে যায় দীর্ঘদিনের পুরোনো সব জঞ্জাল। বৃষ্টির পরশে নতুন শস্যাদি জন্মায়। রুক্ষ-অনুর্বর জমি উর্বর হয়। নদী, খাল-বিল ফিরে পায় পূর্ণ যৌবন। গাছপালা ফিরে পায় প্রাণ।
আবহমান বাংলার নারীদেরও প্রিয় ঋতু বর্ষা। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের নারীরা এ ঋতুটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের ঘন বর্ষায় নৌকা বা ট্রলারে চড়ে তারা বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। বৃষ্টির দিনে ঘরের মেঝেতে নকশিকাঁথা বিছিয়ে ফুল তোলেন একের পর এক। অথবা বুনন করেন বাঁশ কিংবা তালপাতার পাখা।
মাঝিমাল্লারাও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন বর্ষা ঋতুর জন্য। বর্ষা এলে তারা জলে নৌকা ভাসান। নাবিক সেজে দেশ ঘোরেন। তখন গেয়ে বেড়ান ভাটিয়ালী সুরের গান। জেলেরা নতুন পানির মাছ শিকার করে করেন বাড়তি রোজগার। অন্যদিকে কৃষক সম্প্রদায় বর্ষাকালে কিছুটা অবসর যাপন করেন। যেন সারা বছরের হাড়ভাঙা খাটুনির পর খানিকটা বিশ্রাম নেন তখন। এভাবে বর্ষা ঋতু নানাভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে আছে মানবজীবনের সঙ্গে। সংগত কারণেই বর্ষায় মানবমন কাব্যিক দ্যোতনাময় হয়ে ওঠে। অকবিকেও করে তোলে কবি। বেসুরো লোককেও করে তোলে গায়েন।
আর এ কারণেই বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সুর বেজেছে এই বর্ষায়। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া ভার। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউই বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনে দেখা যায়, বর্ষা যেন বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। তবে শুধু কবি-সাহিত্যিকরা নন, বর্ষার অপরূপ সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় অতি সাধারণ যে কাউকেও।
কবিকূলের শিরোমণি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায়, গানে, গল্পে নানাভাবে বর্ষার বন্দনা করেছেন। ‘আষাঢ়’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার, ঘনিছে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ আরেক কিবতায় বলেন, ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা।’ ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে।/গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু/বাজিল ক্ষণে ক্ষণে।/তোমার ললাটে জটিল জটার ভার/নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার/বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া,/বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’
অন্যদিকে মহাকবি মাইকেল মধূসুদন দত্ত লিখেছন, ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর। পল্লীকবি জসীম উদদীন বর্ষার বন্দনা লিখেছেন এভাবে: ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়,/ ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’ এদিকে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণেরও প্রিয় ঋতু বর্ষা। তিনি বর্ষার চিত্র এঁকেছেন ঠিক এভাবে: ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত কর তল।’/এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে;/না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’
তবে উল্লিখিত সব বর্ণনার বাইরেও বর্ষার আরেক রাক্ষুসী রূপ আছে। মাঝে মাঝে বাঙালিদের প্রিয় ঋতু বর্ষাই আবার হয়ে ওঠে মারাত্মক কীর্তিনাশা, যা অসহনীয় করে তোলে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে ঘন ঘোর বর্ষা কখনও কখনও দুর্যোগের বার্তা নিয়ে হাজির হয়। ফলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
বর্ষার অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয় অগণিত মানুষ । ভাসিয়ে নেয় জনপদ। ওদিকে আবার হাওর আর খরস্রোতা নদীর রাক্ষুসী ঢেউয়ে চোখের পলকে ভেঙে নেয় উপকূল। টানা বৃষ্টিবাদলে কর্মহীন হয়ে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। যদিও এমন বর্ষা চায় না কেউই।
তবুও বলি, বর্ষা আসুক। প্রাণ-প্রকৃতি বরাবরের মতোই আষাঢ় ও শ্রাবণের সজল মেঘের বৃষ্টিতে স্নাত হোক। সিক্ত হোক। বর্ষার জলে শুধু প্রকৃতিরই নয়, মানবজীবনেরও সব জঞ্জাল ধূয়ে-মুছে অপসারিত হোক। কদম, কেতকী, জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনীগন্ধা ও দোলনচাঁপাসহ শতফুলের সুবাসে সুবাসিত হোক প্রত্যেকের হৃদয়। সবার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসুক ‘সজল শ্যাম ঘন বরষা’।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন কমলেও ঈদের আগ মুহূর্তে বেড়েছে। ঈদ যাত্রায় ভোগান্তী কমাতে এই নৌপথে নেমেছেন অনেকে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারপারের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২১ এবং আরিচা-কাজিরহাটে ৪টি ফেরি চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে ফেরি ও লঞ্চ ঘাটে।
মোংলাগামী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘চাকরির জন্য মিরপুর ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। গাতবলী থেকে বাসে পাটুরিয়া হয়ে মোংলা যাতায়াত করি।গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে মোংলা যেতে বেশি সময় লাগে।’
সাতক্ষীরা যাবেন আবু হেনা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ আমি ঢাকার উত্তর সিটিতে চাকরি এবং বসবাস করি। আমাদের জন্য পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া যাতায়াতের জন্য সুবিধা, বিশেষ করে বড় উৎসবে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। রাস্তায় ভোগান্তী কম হয়, খুব একটা যানজটে পড়তে হয় না।’
মাগুরা, ঝিনাইনদহ ও যশোরের রাসেল শেখ, পলাশ মিয়া ও হাবিবুল্লাহ জানান, ‘আমরা পাটুরিয়া দিয়ে যাচ্ছি। মাওয়া দিয়ে আমাদের উল্টা হয়। গাবতলী বা শ্যামলী থেকে সায়েদাবাদ যেতে গাড়িতে ভোগান্তী। সময় নষ্ট আর প্রচুর কষ্ট করতে হয়। পাটুরিয়া দিয়ে গেলে এতে কষ্ট করতে হয়। শুরু ফেরি ঘাটে একটু সময় লাগে। এ কারণে উত্তর ঢাকার অধিকাংশ লোক এখনও পাটুরিয়া হয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়।’
কমর্ফোট লাইন পরিবহনের চালক বিল্লাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাইলেই বাস নিয়ে পদ্মা সেতু পার হওয়া যায় না। ওই রুটের পারমিট লাগে। যারা রুট পারমিট পাইছে, তারা পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা যারা রুট পারমিট পাই নাই, তারা এই রুটে চলাচল করছি।’
পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর তো যাত্রী একেবারে কমে গিয়েছিল। ঈদের আগে দেখে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। আগের মতো না হলেও ৬০ ভাগ যাত্রী এখন লঞ্চে পার হচ্ছে। কয়কদিন আগে আধা ঘন্টা পর লঞ্চ ছাড়া হলেও এখন ১০ মিনিট পর পর ছাড়া হচ্ছে। ৩৩টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মো.খালেদ নেওয়াজ জানান, পদ্মার সেতুর উদ্বোধনের পর দৌলতদিয়ায় যাত্রী ও যানবাহন কমে গেলেও এখন বেড়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক মানুষ ঈদে পাটুরিয়া দিয়ে যাতায়াত করছেন।
আরও পড়ুন:নিউজবাংলার প্রতিবেদন দেখে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুরে এক সঙ্গে জন্ম নেয়া তিন শিশুর পরিবারকে গাভী উপহার দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
একই সঙ্গে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের জন্য নিউজবাংলার প্রশংসাও করেছেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর উপহার পেয়ে তিন সন্তানের মা লাভলী বেগম ও বাবা লিটন উদ্দিনের মুখে ফুটেছে হাসি।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর এক সঙ্গে চার মেয়ের জন্ম দেন লাভলী। জন্মের পরই এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। অন্য তিন মেয়ে লাবন্য, লাবিবা ও লামিশাকে নিয়ে শুরু হয় এই দম্পতির নতুন জীবনযুদ্ধ। কারণ তাদের ঘরে আগেই এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। এখন পাঁচ সন্তান নিয়ে কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন দিনমজুর লিটন।
পরিবারটির মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে গত ২২ মার্চ নিউজবাংলায় একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার হয়। সেটি নজরে আসলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
শিশুদের দুধ কেনার জন্য গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপহার হিসেবে নিউজবাংলার প্রতিনিধির মাধ্যমে লাভলী-লিটন দম্পতিকে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন প্রতিমন্ত্রী।
এরপর পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ হিসেবে তিনি জেলা প্রশাসনের তত্বাবধায়নে গত মঙ্গলবার একটি দুধেল গাভী কিনে দেন।
লাখ টাকার গাভী উপহার পেয়ে বিস্ময় যেন কাটছে না লিটন উদ্দিনের। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পলক ভাই এই গাভী দেয়াতে আমাদের খুবই আনন্দ হচ্ছে। ৪০০ টাকা দিন হাজিরায় কাজ করে আমি বাচ্চাদের মুখে দুধ তুলে দিতে পারতাম না। তাতে আমার খুবই কষ্ট হত। ঈদের আগে এত বড় একটা উপহার পাব, তা ভাবিনি। কখনও ১ লাখ টাকা দিয়ে গাভী কিনতে পারব, তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।
‘আমাদের পরিবারের সবাই আনন্দিত। এখন আর বাচ্চাদের দুধের কষ্ট থাকল না। দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন পলক ভাইকে নেক হায়াত দেন।’
মা লাভলী বেগম বলেন, ‘নিউজবাংলার খবর দেখে এর আগেও পলক ভাই ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের দুধ কিনেছিলাম। আবার ঈদের উপহার হিসাবে একটা গাভী কিনে দিয়েছে। এখন আর বাচ্চাদের দুধের চিন্তা নাই। গাভী থেকে ছয় লিটার করে দুধ হচ্ছে। এখন আমরা সন্তানসহ খুব ভাল আছি।’
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘গণমাধ্যম যে প্রকৃতই সমাজের দর্পণ, তা আমরা আরেকবার প্রমাণ পেলাম নিউজবাংলার মাধ্যমে। আমাদের নাটোরের একটি অস্বচ্ছল পরিবার, যাদের ঘরে চারটি সন্তান একসঙ্গে জন্মগ্রহণ করে।
‘সংবাদটি নিউজবাংলার মাধ্যমে জানতে পেরে তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে প্রাথমিকভাবে বাচ্চাদের দুধ কেনার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করি। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার উদেশ্যে একটি গাভী কিনে দেই। এই ধরণের ছোট ছোট মানবিক কাজ আমাদের জেলাকে, আমাদের পুরো দেশটাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে অনেক বেশি সহায়তা করবে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ ঈদের আগে-পরে নৌপথে ফেরি বা লঞ্চে করে পারাপার নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন ঘরমুখী বাইকচালকেরা।
সেতু পারাপারের সুযোগ পেতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পর নিরাপত্তাকর্মী, সেতু কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের তোপের মুখে অনেক বাইকার বাড়ি ফিরে গেছেন। কেউ কেউ আবার ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।
এর আগে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিনই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। সেতু দিয়ে ঈদের আগে আর বাইক চলাচলের সুযোগ দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত গিয়ে ফেরি দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে আবার বাইকে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন বাইকাররা। কিন্তু গত ৬ জুলাই নৌপথে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ করা হয়।
বলা হয় আগামী ১০ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত আন্তজেলায় মোটরসাইকেল চালাতে হবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না। এসব সিদ্ধান্ত বাইকচালকদের অসন্তুষ্ট ও হতাশ করে।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন মোটরসাইকেলচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা করে টোল নির্ধারিত থাকলেও নৌকায় করে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে।
মোটরসাইকেলচালক ইমরান হোসেন যাবেন মাদারীপুরের কালকিনিতে। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ঈদে মোটরসাইকেলে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দেব। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটি পূরণ হলো না। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নৌকায় করে পাড়ি দিতে হচ্ছে উত্তাল পদ্মা।
‘অন্যের দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। আরও অনেক গাড়িই তো অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, সেগুলো কি বন্ধ করা হয়েছে।’
মোটরসাইকেলচালক মো. ইমরানের বাড়ি মাদারীপুর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তিনি অনেক খুশি। কিন্তু মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা আফসোসও হচ্ছে তার।
তিনি বলেন, ‘বাইক নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যেতে পারছি না, তাই খারাপ লাগছে। এতে সড়কে বিভিন্ন জায়গায় ভোগান্তিতে পড়তে হলো। এখন ট্রলারে করে বাইক নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপারে যাব।’
ইলা হাওলাদার বলেন, ‘আমি ও আমার হাজব্যান্ড ঈদের ছুটিতে যাব পদ্মার ওপারে। কিন্তু সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে না, ফেরিতে চলবে না। আমাদের ওপারে যেতেই হবে, তাই বিকল্প ব্যবস্থা না পেয়ে ট্রলারে করে নদী পাড়ি দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার-গোপালপুর রোডের মবুল্লাহপুর তিন রাস্তার মোড়ে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ২৫ বছরের হাসিবুল বাশারের বাড়ি বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামে। বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন তিনি।
ওসি বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুনামগঞ্জের পৌর শহরে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পৌর শহরের মরাটিলা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রিক্তা বেগমের মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২৫ বছর বয়সী রিক্তার বাড়ি তাহেরপুর উপজেলায়। স্বামী মো. আমিরুল সুনামগঞ্জের দিরাই থানার এসআই পদে কর্মরত।
ওসি ইখতিয়ার বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় ওনার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। আমাদের ধারণা, তিনি থানায় ছিলেন। তবে তদন্তের পর সব বলতে পারব। বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি আত্মহত্যার ঘটনাটি শুনেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়তো কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা ছিল। সে জন্য এ ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাটি তদন্তাধীন আছে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে জঙ্গি হামলার ৬ বছরেও মামলার রায় ঘোষণা হয়নি। এ মামলার ২৪ আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এনকাউন্টারে ১৯ নিহত হয়েছেন। বাকি পাঁচ আসামি কারাগারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আসামিরা অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে শুনানিতে দেরি হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলছেন, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সফলভাবে তদন্ত শেষে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।
সেই হামলায় নিহত হন সেখানে দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম। নিজ ঘরে জানালা ভেদ করে আসা গুলিতে নিহত হন সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক।
সেদিন গুরুতর আহত হন ১২ পুলিশ সদস্য এবং চারজন মুসল্লি। নিহত হন আবির হোসেন নামে এক হামলাকারীও।
স্থানীয় বাসিন্দা ননী ভৌমিক বলেন, ‘সেদিনের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে উঠে।’
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ ইমাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘আসামিরা অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তাই তাদেরকে বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়েছে । এই মামলার আসামিদের উপস্থিতির জন্য বিচারে দেরি হচ্ছে।’
মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ গঠন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সাক্ষীর জন্য প্রস্তুত। তবে আসামিদের প্রায় সবাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলারও আসামি এবং এদের মধ্যে ১৯ জন ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন । তাই বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘দেশ কাপাঁনো এই জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও বিশেষ বার্তা ছিল। আজকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কবস্থা গ্রহণ করে এদের নির্মূল করতে পারছি।’
তিনি জানান, ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ওই গৃহবধূর এক সন্তানকেও চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে অভিযুক্ত উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও কর্মচারী আহমদ হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি।
নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৮তম এক্সট্রা অর্ডিনারি সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো হলো, অভিযুক্ত পিএস রবীনের পদাবনতি (ডিমোশন), কর্মচারী আহমদ হোসেনের চাকরিচ্যুতি, অন্য যারা সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি তাদের সতর্ক করে নিজ দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে বদলি করা, এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে ফৌজদারি মামলা করা।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী।
তিনি বলেন, ‘কর্মচারী আহমদ হোসেন অনেককে ফোন দিয়েছেন, নামে-বেনামে টাকা চেয়েছেন। এখন টাকা দিয়েছেন কি দেন নাই সেগুলো আমরা যাচাই করতে পারি নাই, আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল। উনি যেহেতু আর্থিক লেনদেনের কথা বলেছেন, তাই ওনাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।
‘অভিযুক্ত উপাচার্যের পিএস রবীনের ফোনালাপে সরাসরি টাকাপয়সার কথা বলা নাই। একজন অফিসার হিসেবে তার কথাবার্তা শুনে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলেন নাই। তিনি লিমিট ক্রস করেছেন। সে জন্য তাকে এক ধাপ নিচে নামিয়ে পদাবনতি দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এটা মেজর পানিশমেন্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আমরা কারোরটাই প্রমাণ করতে পারিনি। আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল। তাই আমার বলেছি, একটা ফৌজদারি মামলা করতে। মামলা করলে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা মিলে এ বিষয়গুলো এবং আরও কেউ জড়িত কি না খুঁজে বের করতে পারবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাদের নাম এসেছে আমরা সবার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমাদের উপাচার্য বলেছেন, যে সমস্ত কথা, যে কর্মকর্তা ও অফিসার বলেছেন, তা তাদের নিজেদের দায় থেকে বলেছেন, এতে কারও সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা নেই।
ফোনালাপ বিশ্লেষণ ও সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আট পৃষ্ঠার এই তদন্ত রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মাঈনুল হক মিয়াজী। সিন্ডিকেট তদন্ত কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছেন বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য