ছোটবেলা থেকেই আমরা পছন্দের রং বেছে নিতে চাই। তবে আশ্চর্যজনকভাবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পছন্দ প্রায়ই বদলে যায়। আর এ বিষয়টি আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
রং-পেনসিল (ক্রেয়ন) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রেওলা ১৯৯৩ সালে বিষয়টি জানতে ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠে। কৌতূহলী হয়ে তারা সে সময় একটি অবৈজ্ঞানিক জরিপ চালায়।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের কাছে তাদের প্রিয় রং কোনটা জানতে চেয়েছিল। বেশির ভাগই উত্তর দিয়েছিল- নীল। উত্তরের শীর্ষ ১০ রঙের মধ্যে তিনটি ছিল নীলঘেঁষা রং।
সাত বছর পর প্রতিষ্ঠানটি আবার জরিপ চালায়। ২০০০ সালের ওই জরিপেও পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল নীল রং। এবার শীর্ষ ১০ রঙের তালিকায় ছয়টিই নীলঘেঁষা। এই তালিকায় ছিল গোলাপি, বেগুনি এবং সবুজ রংও।
পছন্দের রঙের তালিকায় নীলের আধিপত্যে অবাক নন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ রোড আইল্যান্ডের সহযোগী অধ্যাপক লরেন ল্যাব্রেক। বিপণনে রঙের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন তিনি। প্রায়ই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তাদের পছন্দের রং জানতে চান।
লরেন ল্যাব্রেক বলেন, ‘৮০ শতাংশই নীল বলে। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নীল পছন্দ করতে শুরু করি। আমার মনে হয় এটি ক্রস কালচার। বড় কোনো পার্থক্য নেই। মানুষ এমনিই নীল পছন্দ করে।’
পছন্দের রঙের নির্বাচনের বিষয়টি শৈশবে উদ্ভাসিত হতে থাকে। গবেষণা বলছে, শিশুরা গাঢ় এবং মোটামুটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ রং পছন্দ করে। সময়ের সঙ্গে শিশুরা নির্দিষ্ট রঙের সঙ্গে মজবুত সখ্য গড়ে তুলতে শুরু করে। তারা উজ্জ্বল রং যেমন কমলা, হলুদ, বেগুনি কিংবা গোলাপি (ইতিবাচক আবেগের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি) পছন্দ করে থাকে।
৪-১১ বছর বয়সী ৩৩০ জন শিশুর ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তারা একটি ‘সুন্দর’ অক্ষর আঁকার সময় পছন্দের রং ব্যবহার করে। অন্যদিকে, ‘দুষ্ট’ চরিত্র আঁকায় কালো রং ব্যবহারের প্রবণতা দেখায়। যদিও অন্য গবেষণাগুলো এ ধরনের সংযোগ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
সামাজিক চাপও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেয়েদের পোশাক এবং খেলনা কেনার ক্ষেত্রে রংটি গোলাপি হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া শিশুর বয়স বাড়ার বিষয়টি রং বাছাইয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।
বলা হয়ে থাকে, কৈশোরে এসে শিশুরা গাঢ় বা উজ্জ্বল রঙের দিকে বেশি ঝোঁকে। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি অ্যাকাডেমিক গবেষণা নেই।
যুক্তরাজ্যের কিশোরীদের বেগুনি এবং লাল রঙের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখা গেছে; যেখানে ছেলেরা সবুজ এবং হলুদ-সবুজ পছন্দ করে।
ব্রিটিশ কিশোরদের বেডরুমের রঙের পছন্দের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের সাদা বেছে নেয়ার প্রবণতা বেশি, যেখানে লাল এবং নীল তাদের পছন্দের রং। বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্করা নীলকে তাদের প্রিয় রং দাবি করে থাকে; অন্যদিকে উজ্জ্বল হলুদ বাদামি রং তাদের অপছন্দের তালিকায় শীর্ষে।
পছন্দের রং নির্বাচিত হয় কীভাবে?
এর সহজ উত্তর হলো, আমাদের পছন্দের জিনিস আছে বলেই পছন্দের রং আছে। এটাই ইকোলজিক্যাল ভ্যালেন্স থিওরির সারাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক কারেন শ্লোস এবং তার সহকর্মীরা এ ধারণাটি তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষায় তারা দেখিয়েছেন, পছন্দের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষে কিছু কারণ আছে। বেশির ভাগই অতীতের কোনো ছবিকে নিজের জীবনের সঙ্গে জুড়ে একটা অবস্থান তৈরি করে থাকেন পছন্দের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
কারেন শ্লোস বলেন, ‘কেন আপনার পছন্দ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। আসলে আমাদের চারপাশে ঘটা প্রতিদিনের ঘটনাগুলো এর জন্য দায়ী।’
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলেসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও বেশকিছু নিরীক্ষা চালিয়েছেন শ্লোস ও তার দল। একটি বোর্ডে কতগুলো রঙের স্কয়ার দেখিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের পছন্দেরটা বেছে নিতে বলা হয়।
কিছুপর সেই স্বেচ্ছাসেবকদের নতুন কিছু রঙিন ছবি দেখানো হয়। এখানে হলুদ, উজ্জ্বল নীল, লাল এবং সবুজ রং প্রাধান্য পায়।
হলুদ এবং নীল ছবিগুলো স্ট্যাপলার বা স্ক্রু ড্রাইভারের। অন্যদিকে লাল এবং সবুজ রঙের ছবিগুলো ইচ্ছা করেই এলোমেলো করে রাখা ছিল।
অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই লাল ছবির দিকে তাকিয়ে ছিল। এটা তাদের মধুর অভিজ্ঞতাকে (ভালোবাসা দিবস, রসালো স্ট্রবেরি বা গোলাপ) জাগিয়ে তোলে। অন্যদিকে, সবুজ ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছিল ঘৃণা বা অস্বস্তি তৈরির জন্য (পুকুরের ময়লা)।
বাকি অর্ধেক অংশগ্রহণকারী এই ধারণাগুলোর বিপরীত মত দিয়েছেন। তারা লাল রংকে ‘কাঁচা ক্ষত’ আর সবুজকে ঘূর্ণায়মান পাহাড় বা কিউই ফলের সঙ্গে কল্পনা করেছেন।
এবার একটি পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। স্বেচ্ছাসেবীরা ইতিবাচক রঙের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। নেতিবাচক রংগুলো তারা এড়িয়ে গেছেন।
পরদিন এই স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর আবারও পরীক্ষা চালান গবেষক দল। এবার তারা দেখতে চেয়েছেন, তাদের পছন্দ রাতারাতি বদলে যায় কি না।
শ্লোসের বলেন, ‘অভিজ্ঞতাগুলোকে ক্রমাগতভাবে আমরা যেভাবে দেখি এবং ব্যাখ্যা করি তার ওপর প্রভাব ফেলছে। রঙের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতার সারাংশ হিসেবে পছন্দগুলোকে ভাবুন, দেখবেন আপনার নিয়মিত দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা মতামতকে প্রভাবিত করে।’
রঙের পছন্দের ওপর শ্লোসের কাজটিও অসাবধানতাবশত নীলের অবস্থানকে প্রিয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ১৮০০-এর দশকে প্রথম রেকর্ড হওয়া রঙের গবেষণার পর থেকে নীলের রাজত্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া রঙের সঙ্গে আমাদের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হতে পারে। যেমন সুন্দর সমুদ্র বা পরিষ্কার আকাশ। একইভাবে কর্দমাক্ত বাদামি রংটিকে মানুষ অপছন্দ করেছেন। কারণ, এটিকে জৈবিক বর্জ্য বা পচা খাবারের সঙ্গে তুলনা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
তারপরও রং পছন্দের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচয়ের কোনো ভূমিকা আছে কি না তা জানার জন্য নিউ ইংল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষা চালান শ্লোস এবং তার দল। অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল, বছরের চারটি ঋতুতে সাপ্তাহিকভাবে তাদের রঙের পছন্দ এবং অপছন্দগুলোকে চিহ্নিত করতে।
শ্লোস বলেন, ‘তাদের মতামত সরাসরি প্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে হয়। পছন্দ বা অপছন্দের বৃদ্ধি এবং পতন প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
‘পরিবেশের রং পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পছন্দগুলোও বাড়ছে। সবচেয়ে বড় উত্থান এসেছিল শরত্কালে, যখন উষ্ণ রং- গাঢ় লাল ও কমলাপাতার মতো রংগুলোতে বেশি আকর্ষিত হয়েছিল অংশগ্রহণকারীরা।’
শরতে এমন উচ্ছ্বাসের বিষয়ে শ্লোস জানান, তিনি যে অঞ্চলে গবেষণাটি পরিচালনা করেছিলেন সে অঞ্চলটি শরৎকালীন প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত। তাই স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে সে সময়টা পছন্দের হতে পারে।
‘সম্ভবত এটি পরিবেশে একধরনের দ্রুত ও নাটকীয় পরিবর্তন। অন্যদিকে শীতকাল অনেক সাদা এবং বাদামি। তবে এটি দেখতে সাধারণত আমরা খুব একটা বাইরে যাই না।’
আমরা যে পরিবেশে বাস করি তা অন্যান্য উপায়েও আমাদের রঙের পছন্দের বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। ক্যালিফোর্নিয়া-বার্কলে এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ওপর শ্লোস পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজে রঙের ভিন্নতা পছন্দেরটিকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা স্কুলের মূল্যবোধ এবং চেতনাকে গোলাপের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এটা অনুমান করা সহজ যে ইকোলজিক্যাল ভ্যালেন্স থিওরিকে ধরে রাখতে সময় লাগবে। তবে পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানী ডোমিসেল জোনাউসকাইট বলেছেন, এটি ভুল।
তিনি সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লুসানে রঙের জ্ঞানীয় এবং আবেগপূর্ণ অর্থ নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে ছেলে এবং মেয়ে নীল এবং গোলাপি রংকে দেখে।
মেয়েদের গোলাপির প্রতি ভালোবাসা স্কুলজীবনের শুরু থেকে কৈশোরে পৌঁছানর আগ পর্যন্ত। তবে ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই গোলাপি এড়িয়ে চলে। তারা মনে করে ‘আমি যেকোনো রং পছন্দ করতে পারি- শুধু গোলাপি নয়।’
জোনাউসকাইট বলেন, ‘একজন ছেলের জন্য গোলাপি পছন্দ করা সত্যিই বিদ্রোহী। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি বলবেন, “গোলাপি আমার প্রিয়”।’
অতীতে কিছু গবেষক প্রস্তাব করেছেন যে এই বিশেষ রঙের পছন্দ, লিঙ্গ অনুসারে নির্ধারিত হয়। জোনাউসকাইট বলেন, ‘পেরুভিয়ান আমাজনের গ্রামগুলো এবং কঙ্গোর উত্তরাঞ্চলে একটি চরা গোষ্ঠীর কোনো মেয়েশিশুই গোলাপি রং পছন্দ করেনি।
‘আসলে ১৯২০-এর দশকের আগে গোলাপিকে স্টিরিওটাইপিকভাবে পুরুষের রং হিসেবে দেখা হতো। ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটি মেয়েদের সঙ্গে যুক্ত হয়।’
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স কালার গ্রুপ ও বেবি ল্যাব সহকারী অ্যালিস স্কেলটন দীর্ঘদিন শিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, কীভাবে রঙের প্রাথমিক পছন্দগুলো পরবর্তী জীবনে নান্দনিক পছন্দগুলোয় রূপান্তরিত হয়।
তিনি বলেন, ‘কম বয়সী শিশুরাও রং বুঝতে পারে। তুলনা করতে পারে।
‘এটি ভুল ধারণা যে শিশুরা জন্ম থেকেই রং দেখতে পারে না, তারা দেখতে পারে। যে রিসেপ্টরগুলো সবুজ এবং লাল অনুধাবন করে, তারা জন্মের সময় বেশি পরিপক্ব হয়। তাই তীব্র লাল রঙে নবজাতকরা সহজে আকৃষ্ট হয়।
‘আমরা পৃথিবীতে যে বস্তুগুলোর মুখোমুখি হই, সেখান থেকে আমরা রঙের অর্থ যোগ করি, সেটা ছোটদের ক্ষেত্রেও সত্য। শিশুরা কেবল তখনই রঙের দিকে মনোযোগ দেবে, যখন এটির সঙ্গে একটি ফাংশন যুক্ত থাকে। তারা এমন রঙের দিকে মনোযোগ দেবে না, যতক্ষণ না তারা সেটি থেকে কিছু শিখতে পারছে।
‘কল্পনা করুন আপনার কাছে দুটি বোতল আছে। একটি সবুজ, অন্যটি গোলাপি। সবুজ রঙের বোতলটিতে সুস্বাদু তরল, গোলাপিটিতে টক মিশ্রণ। শিশুরা সেই রংগুলো লক্ষ করবে এবং মনে রাখবে। কারণ রঙের এই পার্থক্য থেকে দুটি বস্তুর পার্থক্য নির্ণয় করতে পারছে তারা। বিষয়টা অনেকটা পাকা কলার মতো, যার রংই প্রয়োজনীয় সংকেত।’
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের একজনের চামড়ায় বাঁধানো একটি বইয়ের সন্ধান মিলেছে একটি জাদুঘরের কার্যালয়ে। ১৮২৭ সালে ইংল্যান্ডে সাফোকের পোলস্টিডে রেড বার্ন গুদামঘরে প্রেমিকা মারিয়া মার্টেনকে খুন করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন উইলিয়াম কর্ডার নামের এক ব্যক্তি। তার চামড়া দিয়েই বইটি বাঁধানো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাফোকের ময়সেস হল মিউজিয়ামে এই বই একইরকম অন্য আরেকটি বইয়ের সঙ্গে প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হেরিটেজ কর্মকতা ড্যান ক্লার্ক বলেছেন, এই বইগুলোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাছাড়া, মানুষের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রেখে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।
‘হরিবল হিস্টোরিজ’ রচনা সমগ্রের লেখক টেরি ডেয়ারি অবশ্য এই প্রত্নবস্তুগুলো বীভৎস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন দুটো বই-ই তিনি পুড়িয়ে ফেলতে চান।
সাফোকের পোলস্টিডে ১৮২৭ সালের ওই খুনের ঘটনা জর্জিয়ান ব্রিটেনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। তখন থেকেই ঘটনাটি বহু সিনেমা, বই, নাটক এবং লোকগীতির বিষয়বস্তু হয়ে আছে।
সবচেয়ে বেশি চাউর হয়েছে কর্ডারের সঙ্গে মার্টেনের প্রেমকাহিনীর সংস্করণ। এই কাহিনীতে বলা আছে, কর্ডার রেড বার্ন -এ দেখা করার জন্য আসতে বলেছিলেন প্রেমিকা মার্টেনকে।
সেখান থেকে পালিয়ে একটি শহরে গিয়ে তারা বিয়ে করবেন বলেও জানিয়েছিলেন কর্ডার। কিন্তু সেই রেড বার্নেই মার্টনকে গুলি করে খুন করেন কর্ডার এবং খড়ের গাদায় পুঁতে দেন লাশ।
১৮২৮ সালের ১১ আগস্ট কর্ডার ধরা পড়েন এবং প্রকাশ্যেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার মৃতদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয় বই। সেই বইয়ে লিপিবদ্ধ ছিল কর্ডারের বিচারের কাহিনি।
১৯৩৩ সালে বইটি জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়করা ক্যাটালগ দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেখানে আরেকটি বই রয়েছে যেটি এত দিন চোখে পড়েনি।
সেই বইটি জাদুঘরে দান করেছিল একটি পরিবার, যাদের সঙ্গে কর্ডারের দেহ কাটাছেঁড়া করার সার্জনের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। বইটি জাদুঘরের গুদামে ছিল না, বরং ছিল কার্যালয়ের বইয়ের শেলফে অন্যান্য বইয়ের সঙ্গে।
কিন্তু বইটি বাঁধাই করা ছিল অনেক বেশি সনাতনী উপাদান দিয়ে। হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলেন, জাদুঘরে হারানো বই আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটি দশকের পর দশক ধরে দেখা হয়নি।
কর্ডারের চামড়ায় বাঁধানো প্রথম বইয়েরর সঙ্গে দ্বিতীয়টির কিছুটা পার্থক্য আছে। প্রথম বইয়ের চামড়ার মলাট অনেকটাই পূর্ণাঙ্গ। আর দ্বিতীয় বইয়ের কেবল বাঁধাইয়ের জায়গা এবং কোনাগুলোতে চামড়া লাগানো আছে।
মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই করা ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’ নামে পরিচিত। ‘হরিবল হিস্টোরিজ’-এর লেখক টেরি ডেয়ারির মতে, একজন মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার চেয়েও জঘন্য কাজ হচ্ছে মৃত্যুর পর তার দেহ ছিন্নভিন্ন করা। চামড়া দিয়ে বই বাধাঁনো আরও বাড়াবাড়ি।
তবে হেরিটেজ কর্মকর্তা ক্লার্ক বলছেন, ‘দেশজুড়ে প্রতিটি জাদুঘরেই আমরা মানুষের দেহাবশেষ দেখতে পাই।’
সূত্র: বিডিনিউজ
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের সন্ধান পেয়েছেন একদল গবেষক। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবালটি খুঁজে পান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। দৈর্ঘ্যে ১১১ ফুট ও প্রস্থে ১০৪ ফুট প্রবালটির আকার একটি পূর্ণবয়স্ক নীল তিমির চেয়েও বড়।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বিলিয়নের বেশি ক্ষুদ্র প্রাণী ও জলজ অণুজীবের উপস্থিতি রয়েছে প্রবালটিতে। এর মাধ্যমে জলজ প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই বিশাল প্রবাল। সদ্য আবিষ্কৃত এই জলজ বিস্ময়টি এখন পর্যন্ত জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক প্রবাল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোরাল বা প্রবাল এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে থাকতে থাকতে, পুঞ্জিভূত হয়ে গঠিত হয় বিশাল প্রবাল প্রাচীর। সঙ্গে যুক্ত হয় শৈবাল, মৃত জলজ প্রাণীর দেহাবশেষ ও পলিপ। সব মিলিয়ে জীবন্ত প্রাণীর তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা এই প্রবাল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্য। আজারবাইজানের বাকুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এর মধ্যেই, সমুদ্র তলদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করতে বৈজ্ঞানিক অভিযান চালায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
অনেকটা দৈবক্রমেই প্রবালটি আবিষ্কার করেন ন্যাট জিও’র ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে স্বচ্ছ পানিতে ছেলেকে নিয়ে ডুব দেন তিনি। প্রথমে এটিকে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মনে করে এগিয়ে গেলেও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বুঝতে পারেন জীবন্ত প্রাণীদের তৈরি অসামান্য সৌন্দর্য আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি।
গবেষকদের ধারণা, বিশ্বের বৃহত্তম জলজ প্রাণী নীল তিমির চেয়েও আকারে অনেকটা বড় এই প্রবাল।
এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়াতে থাকা ‘বিগ মামা’ প্রবালটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিল। তবে নতুন সন্ধান পাওয়া প্রবালটি ‘বিগ মামা’র চেয়েও প্রায় তিন গুণ বড়। ৩৪ মিটার দীর্ঘ প্রবালটি এতটাই বিশাল যে ধারণা করা হচ্ছে, মহাকাশ থেকেও দেখা যাবে এটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে একজনের দান করা দুটি ড্রাগন ফল ৪৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির হয়েছে।
উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে লিপু সুলতানা চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দুটি ড্রাগন ফল মাদ্রাসায় দান করেন। মধ্যরাতে মাহফিলের শেষ বক্তা শায়খুল হাদিস মুফতি মুশাহিদ আলী ক্বাসেমী ড্রাগন ফল দুটি প্রকাশ্যে নিলামে তোলেন। নিলামের একপর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে ফল দুটি কিনে নেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আলহাজ আলমগীর চৌধুরী।
ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে অংশ নেয়া শ্রোতারা জানান, মাহফিল শেষে দোয়ার আগে ড্রাগন ফল দুটি নিলামে তোলা হয়। দুই হাজার টাকা থেকে নিলাম শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা।
পতনঊষার ইসলামিয়া মালিকিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল হাফিজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাদ্রাসার ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী টিপু সুলতান চৌধুরী দুটি ড্রাগন ফল দান করেন। পরে এই দুটি ফল নিলামে তোলা হলে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
‘মূলত এই ফল এত দামে বিক্রি হওয়ার কারণ হলো মাদ্রাসায় সহযোগিতা করা। যিনি ফল কিনেছেন, তিনি হলেন আমাদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।’
আরও পড়ুন:কুয়াকাটা সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার পর এবার পটুয়াখালীর একটি জলাশয় পাওয়া গেল জীবিত ডলফিন।
কলাপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে আন্ধারমানিক নদী-সংলগ্ন জলাশয়ে বোটলনোজ প্রজাতির একটি জীবিত ডলফিনটি পাওয়া যায়। এটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ও প্রস্থ দেড় ফুট।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন আন্ধারমারিক নদীর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা।
এসময় ডলফিনটিকে এক নজর দেখতে জলাশয়ের দুপাড়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।
মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা জানান, শেষ বিকেলে আন্ধারমানিক নদী থেকে ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে ওই জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক এবং ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ এর সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতির পরামর্শ অনুযায়ী ডলফিনটিকে উদ্ধার করে নিবিড় পর্যক্ষণে রেখে খাবার দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রাণিকল্যাণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন অ্যানিম্যাল লাভার্স অফ পটুয়াখালীর সদস্য ও মো. সুজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডলফিনটিকে অবমুক্ত করেন।
আল মুনজির বলেন, ‘জেলেদের জালে আটকে ডলফিনটি আহত হয়। আমাদের ধারণা, পরে পথভ্রষ্ট হয়ে এটি আন্ধারমানিক নদী হয়ে জলাশয়ে ঢুকে পড়ে।’
এর আগে কখনও দক্ষিণাঞ্চলে জীবিত ডলফিন ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে পুকুরের তলদেশের মাটি খননকালে কষ্টিপাথরের বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের বাড়ির পুকুরের মাটি খননকালে ওই মূর্তিটি উদ্ধার করা হয়।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসলাম হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউএনও জানান, সকালে উত্তর বেতকা গ্রামের সোহেল শেখের একটি পুকুরের মাটি খনন করছিলেন শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোবারক শেখ ও মিতুল হোসেন নামের দুই শ্রমিক মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে মূর্তিটি দেখতে পান। পরে তারা বেতকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান শিকদার রিগ্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই জনপ্রতিনিধি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইউএনওকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে মূর্তিটি উদ্ধার করেন।
মূর্তিটি উচ্চতায় ৩৭ ইঞ্চি ও প্রস্তে ১৭ ইঞ্চি। এটি রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে পাঠানো হবে বলে জানান ইউএনও আসলাম হোসাইন।
আম গাছে মুকুল আসে, সেই মুকুল থেকেই হয় আম। তবে ফরিদপুরের একটি আম বাগানে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্র। আম গাছের ডালে নয় বরং গাছের আমের বোঁটার গোড়া থেকে বের হয়েছে অসংখ্য আমের মুকুল। আর সেই মুকুল থেকে এরইমধ্যে ধরেছে আমের গুটি।
এমন বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে একটি আম বাগানে। আর এ খবর জানতে পেরে তা দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে।
পদ্মার পারে চরের খাঁ খাঁ বিরান জমিতে সবুজের দেখা পাওয়া ভার। চোখ মেললে চারদিকে শুধু ধু ধু বালির চর। এমনই এক পরিবেশে চার বছর আগে স্থানীয় যুবক দুলাল হোসেন রুবেল তার খামার বাড়িতে শখের বসে গড়ে তোলেন ফলজ বাগান। প্রায় শতাধিক আম গাছের সঙ্গে এখানে তিনি আরও বেশ কিছু ফলের চারা রোপন করেন। এরইমধ্যে তার এই আমবাগানের গাছগুলো বড় হয়ে ফলবতী হয়ে উঠেছে। এবার তার আমবাগানে ধরেছে প্রচুর আম। তবে সব আমের ভিড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আমেরিকান রেড পালমার জাতের একটি আম গাছ। এই গাছের একটি আম বড় হওয়ার পরে সেই আমের বোটার মুখ থেকে নতুন করে বের হয়েছে আবার নতুন মুকুল।
বাগানের মালিক দুলাল হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমের বোঁটার মুখে আবার নতুন করে মুকুল আসতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। আল্লাহ চাইলে সবই পারেন, এটি দেখে তাই প্রমাণ হলো আবার। এটি আমার কাছে আল্লাহর একটি নিদর্শন মনে হয়েছে।’
রুবেল বলেন, ‘চার বছর আগে রেড পালমার জাতের এই আম গাছটি আমি বৃক্ষমেলা থেকে কিনি। পরের বছরই ফল আসে। আর এবার এলো আম থেকে আসা এই অবাক করা আমের মুকুল।’
তিনি বলেন, ‘ধলার মোড়ের এই এলাকায় আগে আশেপাশে কোনো সবুজ ছিল না। এই জায়গটি ছিল ২০ ফুট গভীর। চার বছর লেগেছে আমার এই বাগানটি দাঁড় করাতে। এখন বাগানটি সবুজে ভরে গেছে। আমাদের এই ধলার মোড়ে আমার এই বাগানটি ছাড়া আশপাশে আর কোনো সবুজ চোখে পড়ে না।’
মূলতঃ পরিবেশের কথা বিবেচনা করেই ৬৯ শতাংশ জমির ওপর এই খামার বাড়ি গড়ে তোলেন বলে জানান রুবেল। বলেন, ‘সেখানে আম, কলা, লিচু, চালতা, সফেদাসহ নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছি। এখানে রেড পালমার ছাড়াও মিয়াজাকি, বানানা ম্যাঙ্গো, দেশীয় হাড়িভাঙা, বারি ফোরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০টি আম গাছ রয়েছে।
‘সামনের অংশে এবার ড্রাগন ফলের চাষ করছি। এছাড়া কবুতর ও খরগোশ পালছি। আগে কিছু গাড়ল ছিল, সেগুলো এখন চরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
রুবেলের স্ত্রী সৈয়দা সানজিদা মিশু বলেন, ‘আমের বোঁটা থেকে এভাবে আবার আমের মুকুল ধরতে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। মুকুল থেকে আবার নতুন করে আমের গুটিও এসেছে। এখন দেখার পালা, এই আমের গুটি কত বড় হতে পারে। যদি সেগুলো পরিপূর্ণ আম হয়ে উঠে তাহলে সেটি হবে আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার।’
জহুরুল আলম শোভন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমি এই আমের ওপর মুকুল ধরার খবর জেনে দেখতে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম।’
সৈয়দ মোস্তফা আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমার এই দীর্ঘজীবনে আমি ফলের গায়ে এভাবে মুকুল চোখে দেখিনি বা শুনিনি। গতকাল সন্ধ্যায় আমি খবরটি শুনতে পেয়ে নিজ চোখে দেখার জন্য এসেছি। আমের বোঁটার উপরে মুকুল ধরেছে, আবার সেই মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বের হচ্ছে। এটি আল্লাহরই একটা নেয়ামত।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দেব নারায়ণ রায় বলেন, ‘উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় এমব্রায়োজেনোসিস (embryogenesis), যাকে বাংলায় বলা হয় বহুভ্রুনিতা। এটি একটি ভ্রূণজনিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণের গঠন ও বিকাশ হয়। অনেকসময় অতিরিক্ত ফলনের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় হরমোন প্রয়োগ করা হলে এমনটি ঘটে থাকে।’
কামাল হোসেন এবং লাভলী আকতার দম্পতির বাড়িতে লাউয়ের গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট (গাছের শাখার সংযোগস্থল) থেকে অসংখ্য লাউয়ের ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে এক এক করে ধরেছে ৩৫টি লাউ। এ খবর পেয়ে অনেকেই এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন লাউ দেখতে।
জনপ্রিয় কিছু সবজির মধ্যে অন্যতম হলো লাউ। এ সবজি বেশ সহজলভ্য। পুষ্টিগুণে ভরা লাউ উপাদেয় খাবার। লাউ সাধারণত একটি ডগায় একটি হয়ে থাকে। তাই এক ডাগায় ৩৫টি লাউ ধরা কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক বিষয়।
ব্যতিক্রমী এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের জোতনছর গ্রামে।
ওই দম্পতি জানান, তারা দুই মাস পূর্বে দেশি লাউগাছের বীজ এনে লাগিয়েছিলেন। বীজ থেকে চারটি গাছ বড় হয়ে মাচায় ওঠে। তিনটি গাছ স্বাভাবিক থাকলেও একটি গাছে হঠাৎ করেই একটি গিঁট থেকে অসংখ্য ফুল বের হতে থাকে। সেই ফুল থেকে ওই ডগায় ৩৫টি লাউ ধরেছে। লাউগুলো আস্তে আস্তে বড়ও হচ্ছে।
প্রতিবেশী বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘এক ডগায় ৩৫টি লাউ গুনে দেখেছি। এর আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। গ্রামের উৎসুক অনেকেই লাউগাছটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, এক ডগায় অসংখ্য লাউ ধরা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। বিভিন্ন কারণে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, তবে গাছটি না দেখে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য