রাজধানীতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত খাবার ‘কালাই রুটি’। ঢাকার বিভিন্ন অংশে অল্প সময়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কালাই রুটির দোকান।
মাসকলাই আর চালের আটার মিশেলে হাতে বানানো এই রুটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট ও মিনারেল।
উত্তরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে মাসকলাইয়ের ডালের আবাদ বেশি হয়। এই মাসকলাইয়ের আধিক্যের কারণে এসব এলাকায় কালাই রুটির উদ্ভব, তবে ঠিক কবে থেকে এই রুটির প্রচলন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
কথিত আছে, উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়াড় এলাকায় প্রথম কালাই রুটি তৈরি শুরু হয়। পরে তা রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, ঠাকুরগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
কালাই রুটি মূলত কৃষিকাজে নিয়োজিত দিনমজুরদের খাবার। চরাঞ্চলের আবহাওয়ার কারণে মরিচ-ঝাল দিয়ে খাওয়া এই রুটি কায়িক পরিশ্রমের জন্য উপকারী।
ফসলের মাঠ থেকে উঠে আসা কালাই রুটি এখন রেস্তোরাঁয় জায়গা করে নিয়েছে। রাজধানীতে কিছু তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে গড়ে উঠেছে কালাই রুটির বেশ কিছু দোকান।
ঢাকায় বসেই এখন এ রুটির স্বাদ নিতে পারছেন নগরবাসী। মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, মিরপুরসহ ঢাকার অনেক এলাকায় চোখে পড়ে রুটির দোকান।
সাংবাদিকতা ছেড়ে ২০২০ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে ‘কালাই রুটির আড্ডা’ নামের একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন জামিলুর রহমান।
‘ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট’ স্লোগানে শুরু করা এই ব্যবসায় তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কারিগর এনে স্থানীয় স্বাদে পরিবেশন করা এই বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ অল্প দিনেই জনপ্রিয়তা পায়।
কী বলছেন রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তারা
নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যকে ঢাকায় ছড়িয়ে দিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নামেন জামিলুর রহমান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল শুধু উত্তরাঞ্চলের মানুষ কালাই রুটি খেত, কিন্তু সময়টা এখন বদলে গেছে। এখন সবাই কালাই রুটি পছন্দ করে। আমরা কখনও ভাবতে পারিনি ঢাকা শহরের মানুষ কালাই রুটি গ্রহণ করতে পারবে।’
মোহাম্মদপুরের পর খিলগাঁওয়েও এ রেস্তোরাঁর একটি শাখা চালু হয়েছে। ‘কালাই রুটির আড্ডা'য় রুটির সঙ্গে বেগুন ভর্তা, লবণ-ঝাল ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, রসুন ভর্তা, টকঝাল ভর্তা, আচার, শুঁটকি ভর্তা ও আলু ভর্তা পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া হাঁসের মাংস, গরুর ভুনা, বট (গরুর ভুঁড়ির ভুনা), চিকেন ভুনাও পাওয়া যায় রেস্তোরাঁটিতে।
‘কালাই রুটির আড্ডা’র মতোই মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে আছে আরও একটি রেস্তোরাঁ। নাম ‘কালাই কুঠির’। নাটোরে গিয়ে কালাই রুটি মনে ধরে যায় এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম অংশীদার ফরহাদ আহমেদের। রুটির পুষ্টিগুণে অভিভূত হয়ে প্রায় দুই বছর আগে রেস্তোরাঁটি চালু করেন ফরহাদ।
ভালো সাড়া পাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘কালাই কুঠির’-এর তিনটি শাখা চালু করেছেন তারা। এগুলো মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, রিং রোড ও কৃষি মার্কেট এলাকায়।
ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের এখানকার শেফ, ওয়েটারসহ রুটি বানানোর পুরো সেটটাই উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়ে আসা। তারা সবাই অভিজ্ঞ। রুটির আসল স্বাদ ধরে রাখতে এই আয়োজন।’
কালাই কুঠিরে লবণ-ঝাল ভর্তার পাশাপাশি কবুতরের মাংস, গরুর মেজবান, হাঁসের মাংসও পাওয়া যায়।
ফুটপাতেও জমজমাট ব্যবসা
কালাই রুটির আড্ডা ও কালাই কুঠিরের মতো রেস্তোরাঁর বাইরে ঢাকায় স্ট্রিট ফুড বা ফুটপাতের দোকানেও কালাই রুটি পাওয়া যায়। মিরপুর-২-এর ‘চাপাই কালাই রুটি অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’ তেমনই একটি। এখানেও জমজমাট ব্যবসা। কালাই রুটির সঙ্গে বিভিন্ন পদের ভর্তা আর হাঁসের মাংসের স্বাদ নিতে এখানে আসেন অনেকে।
মিরপুরের নূরানী মসজিদের পাশে কালাই রুটির এই ব্যবসা শুরু করেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা মো. সোহেল রানা। দেড় বছর আগে জুতার ব্যবসার পাশাপাশি এই দোকান খোলেন তিনি।
সোহেল বলেন, ‘আটাটা আমরা রাজশাহী থেকে আনি। কারিগর রাজশাহীর। আমার দোকানে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কাস্টমার আসে। বেচাকেনা অনেক ভালো।’
এই দোকানে প্রতি পিস কালাই রুটি বিক্রি হয় ২৫ টাকা দরে। অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও লবণ-ঝাল ভর্তা, বেগুন ভর্তার পাশাপাশি হাঁসের মাংস, গরুর মাংস পাওয়া যায়।
এখানে খেতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা আহসান উদ্দিন বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো হলো নুন-ঝাল আর বেগুন ভর্তা। এটা আমাদের খুব ফেভারিট, ঐতিহ্যবাহী।’
মোহাম্মদপুরের ‘কালাই রুটির আড্ডা’য় বন্ধুদের নিয়ে উদযাপনে আসা লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান জানান, ‘জীবনে প্রথমবারের মতো কালাই রুটি আস্বাদনে এসেছি। আমি এই ফার্স্ট কালাই রুটি খাইলাম। খেয়ে মনে হলো ভালো, খাবারটা ভালো আর কী।’
ছয় বন্ধুকে কালাই রুটির সঙ্গে পরিচয় করাতে রেস্তোরাঁয় আসেন শামসুল আলম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের দিকে বেসিক্যালি লবণ-ঝাল দিয়ে খায়। এখন বেগুন ভর্তাও বেশি খায়। হাঁসের মাংস ও বট খায়, তবে কম। কারণ আমাদের এলাকায় এসবের প্রচলনটা কম।’
‘কালাই কুঠির’ নামের রেস্তোরাঁয় খেতে আসা কুষ্টিয়ার বাসিন্দা প্রিয়া বলেন, ‘গ্রামে তো আসলে যাওয়া হয় না। ঢাকায় যেহেতু এখন পাচ্ছি, আমার খুব পছন্দ। এ জন্য মিস করি না। খাবারটা খুব ভালো লাগে; মাঝেমধ্যেই এখানে খেতে আসি।’
রেস্তোরাঁভেদে প্রতি পিস কালাই রুটির দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ভর্তার দাম। আর মাংসের আইটেম মিলবে ১৩০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে।
রেস্তোরাঁগুলোতে গড়ে প্রায় ৩০০ জন কালাই রুটি খেতে আসেন। দিনে বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার।
যেভাবে তৈরি হয় রুটি
অন্যসব রুটির চেয়ে স্বাদে ব্যতিক্রম কালাই রুটি। কারণ উপাদান আর বানানোর পদ্ধতির ভিন্নতা। তিন ভাগ চালের আটার সঙ্গে এক ভাগ কালাইয়ের আটা মিশিয়ে পরিমাণমতো লবণ ও পানি যুক্ত করে খামির বানানো হয়। প্রথাগত বেলনের বদলে হাতের তালুর চাপে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয় রুটি। পরে মাটির তাওয়ায় স্যাঁকা হয়।
‘চাপাই কালাই রুটি অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’-এর কারিগর মো. ইয়াসিন আলী ৩০ বছর কালাই রুটির দোকান চালিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে।
তিনি বলেন, ‘আমি দুই হাত দিয়ে কালাই রুটি তৈরি করি। পিঁড়িতে করা যায় না। বেলনে হয়, তবে মজা লাগে না খেতে।’
১০ বছর ধরে কালাই রুটি বানাচ্ছেন ‘কালাই রুটির আড্ডা’র কারিগর আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এই রুটিটা হাত ছাড়া হয় না। এটা হাতেরই রুটি, বেলনের রুটি না।’
সাত্তার আরও বলেন, ‘এই রুটি মাটির তাওয়া ছাড়া হয় না। রুটি তাওয়াতে ছাড়ার পরে হালকা সেঁকে উল্টিয়ে দিতে হবে। উল্টিয়ে দিলে রুটির ভেতরটা ফুলবে। না ফুললে কিন্তু মজা নাই কালাই রুটির।’
‘কালাই কুঠির’-এর কারিগর নুরুল ইসলাম জানান, ‘লাল করে ভাইজলে এটা মজা। হালকা কড়া করলে মজা বেশি, দাঁতের সমস্যায় নরম করেও খেতে পারবেন।’
উত্তরবঙ্গের তুমুল জনপ্রিয় এই কালাই রুটির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে রাজধানীতে। স্বাদে-গুণে ভালো হওয়ায় অনেকেই ছুটছেন এর স্বাদ নিতে।
আরও পড়ুন:উদ্বোধন হলো হসপিটালিটি পার্টনার্সের ব্র্যান্ড ইতালিয়ান রেস্ট্রুরেন্ট এসপ্রেসো হাউসের সিগনেচার আউটলেট। শুক্রবার বিকেলে বনানী ১৭ নাম্বার রোডে চালু হয় নতুন এ আউটলেট।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম, পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক, চিত্রশিল্পি আহমেদ নওয়াজ, বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার তুতলি রহমান, চিত্রনায়ক সম্রাট, মডেল আনোয়ারুল শামীম, তাহমিদ ও নিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী, কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ও এসপ্রেসো হাউজ সংশ্লিষ্ট সবাই।
ঢাকায় অথেনটিক ইতালিয়ান খাবার, বেকারি, পেষ্ট্রি ও শতভাগ কলম্বিয়ান আরাবিকা কফির স্বাদ নিশ্চিত করবে এ রেষ্টুরেন্ট।
পুষ্টিবিদ জেনিফার বিনতে হক বলেন, ‘সবাই এখন বাইরে খেতে পছন্দ করেন। যারা ডায়েটে আছেন তারা এখানে পাবেন স্বাস্থ্যকর খাবার। তাই এ রেস্টুরেন্টকে রাখতে পারেন আপনার হেলদি লাইফস্টাইলের টপ লিস্টে।’
এসপ্রেসো হাউসের প্রতিষ্ঠাতা শওকত হোসেন রনি জানান, বাংলাদেশে ইতালিয়ান খাবারের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ফুডলাভারদের জন্য পরিপূর্ণ স্বাদ নিয়ে এসেছে এসপ্রেসো হাউজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পিজ্জা তৈরি করা হচ্ছে ইষ্ট ছাড়া। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য রয়েছে বিশেষ মেনু। আমরা খাবারের মান শতভাগ নিশ্চিত করছি। রেস্ট্রুরেন্টের পরিবেশ ও আতিথেয়তা, সব মিলিয়ে কাস্টমার স্যাটিফেকশনের জন্য প্রস্তুত এসপ্রেসো হাউজ।’
প্রতিদিন সকাল ৮টা ৩০ থেকে রাত ১টা ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকবে রেস্ট্রুরেন্ট।
বহু বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামী সপ্তাহে চালু হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় সেতু এক নজরে কাছ থেকে দেখতে মুখিয়ে আছে সাধারণ জনগণ। ব্যক্তি উদ্যোগে গাড়ি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করছেন অনেকে, আবার দল বেঁধে উত্তাল পদ্মার ওপর নির্মিত সেতু দেখতে যেতে অনেকে ভাড়া করছেন প্রাইভেট কার-মিনিবাস।
সাধারণ মানুষের এই আগ্রহকে মাথায় রেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি আকর্ষণীয় প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সাড়াও মিলছে অনেক। তবে সেতুসংলগ্ন পদ্মাপাড়ে ভালো মানের রিসোর্ট, পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউস না থাকায় দিনে দিনে ঘুরে আসার প্যাকেজ দিতে হচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর।
আগামী ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর এক দিনে ঘুরে আসার ট্যুর প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ট্রাভেল সোর্স বিডি নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি। ২৯ সিটের টুরিস্ট এসি বাসে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-ফরিদপুর-ঢাকা ঘুরিয়ে আনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তারা।
এক দিনের ডে ট্যুরের জন্য পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২৭ ও ২৮ জুন এবং ১ ও ২ জুলাই এই চার দিন নির্ধারণ করেছে এজেন্সিটি।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজ্জাদ মোর্শেদ শাওন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আমাদের প্যাকেজে বিশাল সাড়া পেয়েছি। প্রথম দুই দিনের জন্য আমরা ইতোমধ্যে সাড়ে তিন শর বেশি বুকিং পেয়েছি। আর ১ ও ২ জুলাইয়ের জন্য এক হাজারের বেশি মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
শাওন বলেন, ‘নির্ধারিত দিনে আমাদের এসি বাসে করে তাদের নিয়ে যাব। সকাল-বিকেলের নাশতা ও ইলিশ মাছসহ দুপুরের খাবার রয়েছে আমাদের প্যাকেজে। বাসে আমরা এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা, ফরিদপুর ঘুরিয়ে আনব। পুরো প্যাকেজ ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি চাইলে পুরো মিনিবাস ভাড়া করতে পারবে।’
শাওন জানান, তাদের অনেক ট্যুরিস্ট বাস রয়েছে। বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি নিজেদের মতো করে প্যাকেজ ঘোষণা করে তাদের বাস ভাড়া করেছে। তাদের প্যাকেজেও কয়েক হাজার মানুষ সাড়া দিয়েছে।’
শহরের রেন্ট-এ কার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সেতু দিয়ে পদ্মা পাড়ি দেয়ার জন্য প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করার জন্য যোগাযোগ করছেন অনেকে। মিরপুরের জননী রেন্ট-এ কারের মালিক কাওসার হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সেতু এলাকা ঘুরে আসার জন্য কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে ফাইনাল করবে।’
ব্যক্তিগত বাহনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার জন্য প্ল্যান করে রেখেছেন অনেকে। ২৭ তারিখের মধ্যে নেত্রকোণা থেকে ঢাকা আসবেন ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে আসব, ঢাকা থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে সেতু দেখতে যাব। পরের সপ্তাহে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যাব। এই সেতু আমাদের সামর্থ্যের প্রতীক। কাছ থেকে দেখার আগ পর্যন্ত মন মানছে না।’
প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে যাওয়ার পাশাপাশি মোটরসাইকেলে দল বেঁধে যাওয়ার প্ল্যান করেছে কয়েকটি গ্রুপ। তারাও সাধারণের জন্য সেতু খুলে দেয়ার পর ছুটবেন পদ্মার পানে।
তবে সাইকেল বা পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দেয়ার সুযোগ না থাকায় আক্ষেপ রয়েছে অনেকের।
পদ্মা সেতু ঘিরে ট্যুরিজম জনপ্রিয় করতে বেসরকারি উদ্যোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সেতুসংলগ্ন এলাকায় রিভার ক্রুজ শিপ চালু, ঢাকা থেকে পদ্মা হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিস্থলে ডে ট্রিপ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু ঘিরে পর্যটন করপোরেশন কিছু কাজ হাতে নিয়েছে। আমরা সেতুর আশপাশে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করছি। আমরা একটি এনজিওর সঙ্গে কাজ করছি, যারা ক্রুজশিপ চালু করবে। এতে সেতুকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবে মানুষ।
‘এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে একটি ডে ট্রিপের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। যেটা ঢাকা থেকে ছেড়ে গিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে জাতির পিতার সমাধিস্থল ঘুরে আসবে।’
আরও পড়ুন:সংসার জীবনের খিটিমিটি কাটিয়ে সম্পর্কে রোমান্টিকতা ফেরানোর হাতিয়ার কিছু গবেষকের মতে যৌনতা।
পেশাগত জীবনে সাফল্যে আরোহণ করতে যে সময় আর পরিশ্রম করতে হয়, তা মানুষের যৌনজীবনে প্রভাব ফেলে অনেকটাই। গবেষকরা বলছেন, এই বৃত্ত ভাঙার চাবি আবার এই মানুষের হাতেই। গৎবাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে আরও মধুর হয় সঙ্গম।
আর গবেষণায় বিষয়টি উঠে আসার পর বিভিন্ন কোম্পানি ছাড়ছে নানা প্যাকেজ, যেখানে গিয়ে সব কাজ ভুলে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটিয়ে সম্পর্কটাকে আবার ঝালাই করে নেয়া যাবে।
অনাদিকাল থেকে ‘অবকাশকালীন যৌনতা’র নিজস্ব কিছু রহস্য আছে। নিউ ইয়র্কের সেক্স থেরাপিস্ট সারি কুপার বলছেন, ‘কামুকতায় নজর দেয়ার মতো সময়, বাস্তব জীবনের প্রতিদিনের চাহিদা থেকে দূরে থাকার মতো বিষয়গুলো যৌন আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করে।
পর্যটনবিষয়ক সংস্থা দ্য গ্লোবাল ওয়েলনেস ইনস্টিটিউট চলতি বছরের শুরুতে ভবিষ্যদ্বাণী করে, ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক সুস্থতা পর্যটন ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ফলক ছুঁয়ে ফেলবে। এখানে ‘যৌন সুস্থতা’ বাজারের দ্রুততম বর্ধনশীল খাতগুলোর একটি।
গত বছর ১৩তম বার্ষিক গ্লোবাল স্পা অ্যান্ড ওয়েলনেস ট্রেন্ডস ফরকাস্টে স্পাফাইন্ডার ওয়েলনেস ৩৬৫ ঘোষণা দেয়, সুস্থ যৌনতার জন্য তারা স্পা, রিট্রিটের মতো বেশ কিছু উদ্যোগ (থেরাপি) বাজারে আনতে যাচ্ছে।
দিন দিন সেক্স রিট্রিটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। হোটেলগুলো সুস্থ যৌনতা সম্পর্কিত বিশেষ স্পা প্যাকেজের অফার দিচ্ছে। অবকাশকে উপভোগ্য করতে যৌনতা নিয়ে মানুষ এখন খোলাখুলি আলোচনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ভ্রমণে যৌনতায় খরচ করতে দ্বিধায় থাকা মানুষের সংখ্যাও কমে আসছে।
সেক্স থেরাপিস্ট মারিশা নেলসন বলেন, ‘মানুষ যৌনতাকে অগ্রাধিকার দিতে চায়। তবে সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়া কম কিংবা যদি ঘনিষ্ঠতার নতুন উপায় খুঁজতে হয়, তখন বিষয়টি কঠিন হয়ে ওঠে।
‘লোকেরা চায় যৌনতাকে অগ্রাধিকার দিতে, কিন্তু যদি তাদের সঙ্গীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সমস্যা হয় বা ঘনিষ্ঠতার নতুন উপায় অন্বেষণ করতে হয়, তাহলে কাজ করা কিছু কঠিন সমস্যা হতে পারে। সেক্স রিট্রিট মানসিক চাপের সঙ্গে ছুটির বিলাসিতাকে আসলে এক বিন্দুতে মিলিয়ে থাকে।’
সেন্ট লুইজিয়ানায় মারিশার একটি সেক্স রিট্রিট সেন্টার আছে। সেখানে সাত দিনের জন্য গুনতে হয় সাড়ে ৭ হাজার ডলার। দম্পতিদের জন্য বিশেষ কর্মশালা, আলো-আঁধারি হোটেল রুমের পাশাপাশি এই প্যাকেজে থাকছে প্রশিক্ষিত সেক্স থেরাপিস্টদের কাছ পরামর্শ নেয়ার সুযোগ।
মারিশা বলেন, ‘আমার কাছে থাকা সব তথ্য বলছে, মানুষ স্টেরিওটাইপিক্যাল ও বিলাসবহুল অবকাশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা অভিজ্ঞতা অর্জনে আগ্রহী। তাদের জন্য আমাদের এই সেবা। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তারা এখানে আনন্দদায়ক ছুটি উপভোগ করতে পারছেন।’
অবশ্যই সেক্স রিট্রিট নতুন কিছু নয়। তবে যারা নিজেকে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করতে ইচ্ছুক না, তাদের কাছে ধারণাটি ‘অবাস্তব’ মনে হতে পারে। তার পরও আজকাল যৌনতা নিয়ে হোটেলের প্যাকেজগুলোর চাহিদা বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের সেক্স এক্সপার্ট কলিন রিচার্ডস বলেন, ‘আপনি যখন ছুটিতে থাকেন, আপনি তখন কল্পনায় পা রাখতে পারেন। হতে পারে আপনি সুন্দর কোনো দ্বীপে আছেন অথবা সুন্দর পোশাক পরেছেন কিংবা সুস্বাদু খাবার খাচ্ছেন।
‘এটা হতে পারে আপনাকে বাইরে যেতে হতে পারে, আপনি আপনার পোশাক খুলে ফেলতে পারেন। যদিও এটি চরিত্রের বিপরীত মনে হতে পারে। সেক্স রিট্রিট এখন অনেক বেশি পরিশীলিত হয়ে উঠছে। এখন সুন্দর সুন্দর রিসোর্ট আছে। আপনি অবশ্যই সেখানকার ছোট অন্ধকূপে বসে থাকতে পারেন। আর যদি সুইমিংপুলের পাশে বসে থাকেন, তবে অন্যসব রিসোর্টে থাকার মতোই অনুভূতি হবে। যদি না পানিতে যৌনতায় কেউ আপনাকে বাধা না দেয়।
যৌন সুস্থতাভিত্তিক ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির অর্থ হলো, ‘প্রথাগত’ হোটেলগুলো তাদের সব প্যাকেজ আকর্ষণীয় করছে। পোস্ট র্যাঞ্চ ইন-এ আপনি আরও চমৎকার স্পা অফারগুলোর পাশাপাশি ম্যাসাজ উপভোগ করতে পারেন।
দ্য ডব্লিউ ব্রিসবেনে একজন ‘যৌনবিদ’ আপনাকে পরামর্শ দেবে। ক্যারিলন মিয়ামিতে সিঙ্গেল এবং দম্পতিদের জন্য যৌনচক্র নিরাময় প্রোগ্রাম রয়েছে।
নেলসন বলেন, ‘মহামারিতে যেহেতু অনেক দিন সবাই আটকে ছিল, তাই মানুষ এখন বেশি রোমাঞ্চ খোঁজে। আমরা আর অসুখী হতে চাই না।
‘আমরা ভাবতে থাকি, দারুণ একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছি; যা আমার সম্পর্ক এবং কাজে উন্নতিতে সাহায্য করবে। আমরা আনন্দকে অগ্রাধিকার দিতে চাই।’
আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৮ হাজার কেজি আম নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন।
রহনপুর স্টেশন থেকে সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে এ মৌসুমের আম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ট্রেনটি। এ স্টেশন থেকে প্রায় ৩ হাজার কেজি আম তোলা হয়েছে সেটিতে।
ওই স্টেশনে ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সাহিদুল ইসলাম ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা।
সেখান থেকে ট্রেনটি যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে। প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কেজি আম সেখানে তোলা হয়। এরপর রাজশাহী হয়ে আরও আম নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে ম্যাঙ্গো ট্রেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রতিকেজি আম পরিবহনে খরচ হয়েছে ১ টাকা ৩১ পয়সা।
গত মাসের শেষের সপ্তাহ থেকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাকতে শুরু করেছে। ওই অঞ্চলে এখন গোপালভোগ আম শেষের দিকে। বাজার দখল করে আছে হিমসাগর। কয়েক দিনের মধ্যেই ল্যাংড়া উঠবে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার এর আগে জানিয়েছিলেন, আম নিয়ে এই ট্রেন প্রতিদিন বিকেল ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহমপুর থেকে যাত্রা শুরু করবে। রাজশাহী এসে আম নিয়ে আবার রাত ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মতে আগামী দেড় মাস ট্রেনে পাঠানোর মতো আম থাকবে। ততদিনই ট্রেন চলবে। এর আগে আম কমে গেলে ট্রেন বন্ধ করা হবে।
২০২০ সালের ৫ জুন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন হয়। সে বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত আম ঢাকায় পৌঁছে দেয় ট্রেনটি। দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে এটি চালু করা হয়। সেবার ১৬ জুলাই পর্যন্ত আম পরিবহন করা হয়।
আরও পড়ুন:ইউক্রেন ইস্যুতে গত মে মাসে রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বখ্যাত ফুড চেইন -ম্যাকডোনাল্ডস। দেশটিতে ম্যাকডোনাল্ডসের ৮৫০টি রেস্টুরেন্টে আছে। যেখানে কাজ করেন ৬২ হাজার কর্মী।
আচমকা এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে যান হাজার কর্মী। সহসায় পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক হবে সে সম্ভাবনাও কম।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন নামে বন্ধ হয়ে যাওয়া ম্যাকডোনাল্ডসের আউটলেটগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুশ সরকার। নতুন লগোতে রোববার থেকে চালু হচ্ছে এসব আউটলেট।
নতুন ব্র্যান্ডিংটিতে একটি বৃত্ত এবং দুটি লাইন রয়েছে; যা একটি বার্গার এবং দুটি ফ্রেঞ্চ ফ্রাইকে নির্দেশ করে। সংস্থাটি এখনও চেইনের নাম প্রকাশ করেনি। যদিও বেশ কয়েকটি বিকল্প বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের নতুন লগো। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাকডোনাল্ডসের মালিকানাধীন ব্যবসা পরিচালনাকারী সংস্থা সিস্তেমা পিবিও-কে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বার্তা সংস্থা- তাস বলছে, চলতি সপ্তাহান্তে ১৫টি রেস্তোরাঁ পুনরায় খোলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবেচনায় থাকা নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘টট সামি’। এর অর্থ ‘একই’। এ ছাড়া আছে ‘স্ববোদনায়া কাসা’ নামটিও। যার মানে ‘উপলব্ধ নগদ নিবন্ধন’।
আরও পড়ুন:প্রতি বছর ধারণক্ষমতারও বেশি পর্যটক সমাগম হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নগরী কক্সবাজারে। পর্যটনকে ঘিরে এই শহরে গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। আছে সহস্রাধিক রেস্তোরাঁও। এসব প্রতিষ্ঠানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট সিস্টেম না থাকার ফলে তরল বর্জ্য ড্রেন দিয়ে সরাসরি যাচ্ছে সমুদ্রে।
আবার পুরো শহরের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে বাঁকখালী নদীতে। এরপর পানির প্রবাহে মিশে এই বর্জ্যও যাচ্ছে সমুদ্রে। শুধু তা-ই নয়, কক্সবাজারের শতাধিক হ্যাচারির বিষাক্ত পানিও সমুদ্রেই গিয়ে মিশছে।
সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে এমন দূষণযজ্ঞ। অনেকেই মনে করেন, ট্যুর অপারেটর ও হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার কারণে প্রতিনিয়ত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে সমুদ্রের নীল জলরাশি।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমেই আসেন প্রায় ৬ লাখ। এই মৌসুমে ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারে উপচে পড়েন পর্যটকরা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য কক্সবাজারে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব স্থানেই প্রতিদিন শত শত টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার বেশির ভাগই শেষ পর্যন্ত সাগরে গিয়ে পড়ছে।
এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলের প্রবাহমান বাঁকখালী নদীতে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে স্থানীয় পরিবেশ ও সমুদ্রের পানি।
সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হলেও দূষণের ফলে তা খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর উজানে ৩৫০ থেকে ৫০০ মিটার প্রশস্থতা থাকলেও মোহনায় তা সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এখানে পৌরসভার বর্জ্য ফেলে, তার ওপর নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলে হাউজিং প্রকল্প করা হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করা এসব প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক সিন্ডিকেট।
সমুদ্র দূষণের জন্য পর্যটন নগরীতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অবস্থানকেও দায়ী করেছেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তার মতে, রোহিঙ্গা আগমনের ফলে পাহাড় কেটে তাদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেসব ক্যাম্পের বর্জ্য গিয়ে মিশছে নাফ নদে। পরে তা যাচ্ছে সমুদ্রে।
মোর্শেদ চৌধুরী মনে করেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হোটেল-মোটেল জোনসহ চারদিকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া উচিত। সরকারের সঙ্গে একযোগে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হতে হবে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানিয়েছেন, কক্সবাজারের তলদেশ থেকে এখন আর বিশুদ্ধ মিষ্টি পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ শহরের তরল বর্জ্য একদিকে যেমন সমুদ্রে যাচ্ছে, তেমনি এর কিছু অংশ মাটির নিচের পানিতে মিশে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পৌরসভার কঠিন বর্জ্য রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ফেলার কথা থাকলেও শহরের কাছাকাছি বাঁকখালী নদীতে ফেলা হচ্ছে। সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত এই নদীটির পানিও এখন মাত্রাতিরিক্ত দূষিত।
তার মতে, স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকাই সমুদ্র দূষিত হবার সবচেয়ে বড় কারণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য শহরের তুলনায় কক্সবাজার বেশি অপরিচ্ছন্ন। পৌরসভার গাফিলতি এর অন্যতম কারণ। অথচ আমরা নিয়মিত ট্যাক্স দেই পৌরসভাকে।’
সমুদ্রের দূষণ কমাতে কক্সবাজারে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য শোধনাগার বা এসটিপি করা উচিত বলে মনে করেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু এটা করা যাদের দায়িত্ব তারা বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এ ছাড়া সমুদ্র দূষণ রোধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ‘স্যুয়ারেজ সিস্টেম বাস্তবায়নে ট্যুর অপারেটর, হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এদিকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কে এম তারিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, নদীতে নয়, ময়লা রাখা হচ্ছে খোলা জায়গায়। সেখানে এটি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
এ ছাড়া শোধনাগারের জন্য সদর উপজেলার পিএমখালীতে ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এটি হলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা সমাধান হবে।
আরও পড়ুন:দেশের পর্যটনশিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলার সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়ায় ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
করোনার সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোর উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।’
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান আছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬ জেলার পর্যটন ব্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দয্য বর্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে আন্তর্জাতিক মানের উড়োজাহাজ পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে।’
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এদিন সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য