চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট ৩১ মে উদ্বোধন হলেও নিয়মিত ফ্লাইট শুরু হচ্ছে আরও দেরিতে। তাই অপেক্ষা করতে হবে হজ যাত্রীদের। ৫ জুন থেকে নিয়মিত হজ ফ্লাইট শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
অবশ্য সূচি চূড়ান্ত না হলেও আগামীকাল মঙ্গলবার তা চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) সৌদি সরকারের কর্মকর্তারা আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমরাও একটি মিটিং করব, এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
‘৫ জুন থেকে ফ্লাইট হবেই। আমাদের একটি বিষয় ঠিক করা আছে যে, ৩১ মে প্রথম ফ্লাইট করব; আর ৫ জুন থেকে বাকি ফ্লাইটগুলো শুরু করব।’
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, চূড়ান্ত ফ্লাইট শুরু হতে পারে ৫ জুন থেকে।
প্রায় দুই বছর পর এবার বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন মুসল্লিরা। এবার হজ মৌসুমে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের নিয়ে হাজির হওয়া প্রথম ফ্লাইট হতে চায় বাংলাদেশ। সে লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর কথা জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
২০১৫ সালে মৌসুমের প্রথম হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রস্তাবিত হজ সূচিতে অনুমোদনও দিয়েছে সৌদি সরকার।
উদ্বোধনী ফ্লাইটের পর আরও কিছু সময় চূড়ান্ত ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে এমন ধারণা দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষও।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৩১ মের উদ্বোধনী ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত আছি। তারপরও যেভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে যে, গ্যাপ দিয়ে মনে হয় বাকিগুলো করতে পারবে, আমরা সেভাবেই ঠিক রেখেছি। আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত আছি।
‘আমরা যেভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ফ্লাইট চেয়েছি বা বলেছি, সেভাবেই অনুমোদন পাওয়া গেছে। আমরা অনুমোদিত সিডিউল পেয়েছি, আমরা আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত আছি।’
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বের ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সর্বনিম্নটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকার।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিস অফ বাংলাদেশ (হাব)।
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে বিগত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোর্শেদ হাসান খানকে বাসা ছাড়তে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া নোটিশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। তাই তাকে বাসা ছাড়তেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে মোর্শেদ হাসানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মোর্শেদ হাসানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা ছাড়তে গত ২৯ জুন নোটিশ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন শিক্ষক মোর্শেদ হাস। যা মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত খারিজ করে দেয়।’
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকের স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় তার লেখা ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে এক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগ আনে ছাত্রলীগ।
এ ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করার দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও ওই লেখার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের এক সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া
এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা। কিন্তু সেটি তিনি না করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বাসা ছাড়তে নোটিশ দেয়।
বদলি সাজা খাটা রোধে এবং প্রকৃত আসামি শনাক্তে দেশের কারাগারগুলোতে পর্যায়ক্রমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করতে নির্দেশনামূলক হাইকোর্টের রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী শিশির মনির।
ছয় পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙ্গুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা, গ্রেপ্তারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা, এবং দেশের সব কারাগারে আঙ্গুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণির সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁও থানায় হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন।
এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিন পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। জহির উদ্দিন সেই পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১০ মার্চ জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করা হয়।
পাশাপাশি নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি-না, তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালতের নির্দেশে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালানো প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার এবং তার ৫ সহযোগীর জেল হেফাজতের মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে হেফাজতে পি কে হালদার ও সহযোগীদের জেরা করে অর্থ জালিয়াতি এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
তৃতীয় দফার ১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে মঙ্গলবার পিকে হালদারসহ ৬ অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালত এই নির্দেশ দেয়।
পরবর্তী শুনানির জন্য তাদেরকে ২০ জুলাই আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। ওইদিন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী।
অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, জেল হেফাজতে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের জেরা করে অর্থ জালিয়াতির এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ভারতের প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির নাম বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম জানা গেছে।
বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার প্রধান আসামি পি কে হালদার।
পি কে হালদার চক্র জালিয়াতির টাকা হাওলার মাধ্যমে ভারত এবং অন্যান্য দেশে পাচার করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে পি কে হালদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় ।
প্রথমে ৩ দিন, পরে আদালতের নির্দেশে আরও ১০ দিনের জন্য অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নেয় ইডি। এরপর প্রথম পর্যায়ে ১১ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে ২১ জুন অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হলে আবারও ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
ইডির তদন্তকারীরা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বহু জমি-বাড়ি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, অবৈধ পাসপোর্ট, আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মামলা করেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
আরও পড়ুন:মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের কারণ হিসেবে বাসমালিকদের হিংসাত্মক মনোভাবকে দুষলেন বাইকচালকেরা। এ সময় সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বাইকচালকেরা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তারা এই দাবি জানান।
মানববন্ধনে মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের পেছনে বাসমালিকদের হিংসাত্মক মনোভাব রয়েছে দাবি করে বাইকচালক মমিন তাজ বলেন, ‘ঈদে বাসমালিকদের আয় কমে যাওয়ার ভয় থেকেই তারা ওপর মহলে চাপ সৃষ্টি করে এই বাইক চলাচল বন্ধ করেছে। আমরা ঝামেলাবিহীনভাবে বাড়ি ফেরার জন্য মহাসড়কে বাইক চলাচলের অনুমতি চাই।’
বাইকচালক মেজবাহদ্দিন বলেন, ‘নিরাপত্তার ইস্যুতে আন্তমহাসড়কে বাইক চলাচল বন্ধ কার্যকরী সমাধান নয়। বরং মহাসড়কে আইনের প্রয়োগ করে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয়া হোক। কেননা এই ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য বাস-ট্রেনের টিকিট পাওয়া ঝামেলা। এ ছাড়া যাতায়াতেও কষ্ট।’
মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক বাইকচালক উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা আরিচা ঘাট খুব কম ব্যবহার করছেন। আর ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে।
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে যাত্রীর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর গুলিস্তান এবং সায়দাবাদ বাস টার্মিনালেও। এ দুটি টার্মিনালে যাত্রীর ভিড় লেগেই আছে।
২৬ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর থেকেই যাত্রীর চাপ রয়েছে এই রুটে। তবে শনিবার থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঈদযাত্রার চাপ।
মো. শামীম তার পরিবার নিয়ে এসেছেন গুলিস্তান বিআরটিসি টার্মিনালে। পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরে গ্রামের বাড়ি যাবেন ঈদ করতে।
তিনি বলেন, ‘আগে আরিচা হয়ে বাড়ি যেতাম। এখন মাওয়া হয়ে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু হওয়ায় বাড়ি যাওয়া সহজ হয়ে গেছে। টিকিট পেতে একটু ঝামেলা হচ্ছে। তবে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের আগে এটুকু ঝামেলা হবে এটাই স্বাভাবিক।’
বিআরটিসির বাসচালক সুমন ব্যাপারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত মাসের ২৬ তারিখ থেকেই যাত্রীর ভিড় বেড়েছে এই রুটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সেতু দেখার জন্য হলেও মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। ঈদের কারণে চাপ আরও বাড়ছে।’
কাউন্টারে অনেক যাত্রী বাস দেরিতে ছাড়ার অভিযোগ তুলছেন। তাদের একজন ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘বাস সময়মতো ছাড়ছে না। কাউন্টারে বললে বলে জ্যামে আটকে বাস।’
যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বাবুবাজার ব্রিজের পর থেকেই প্রচণ্ড জ্যাম। গাড়ি আসতে দেরি করছে, তাই গাড়ি ছাড়তে একটু দেরি হচ্ছে।’
ফাল্গুনী মধুমতী পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. মনির বলেন, ‘আরিচা হয়ে মানুষ এখন বাড়ি যায় না। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ এখন পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যায়। যাত্রীদের প্রচুর চাপ। তবে টিকিট দিতে পারছি।’
গুলিস্তান থেকে লোকাল পরিবহনেও পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যাচ্ছে হাজারো যাত্রী।
প্রচেষ্টা পরিবহন গুলিস্তান থেকে ফরিদপুর ভাঙ্গা পর্যন্ত যায়। এই বাসের সুপারভাইজার মো. রাকিব বলেন, ‘লোকাল বাস হলে আমাদের বাসে যাত্রীর চাপ ভালোই। গত ঈদের থেকে এবারের ঈদে যাত্রী ভালো পাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছি ২৫০ টাকা।’
শুধু গুলিস্তান না সায়দাবাদ বাস টার্মিনালেও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।
দোলা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা রাব্বি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যাওয়া এখন খুব সহজ হয়ে গেছে। তাই আরিচা হয়ে এখন আর খুব কম মানুষ বাড়ি যায়। পদ্মা সেতু হয়েই যাচ্ছে তারা।’
আরও পড়ুন:গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে ভোট হয়েছে, সেটিকে ভালো ভোটের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের মনমতো প্রার্থীকে জয়ী করেছে।
ভোটের ২০ দিন পর মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাতকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী আর কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
কুমিল্লার এই ভোট গত কয়েক বছরের ভোটের মধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে সহিংসতা, ভয়ভীতি, ভোটারদের বাধা, একজনের ভোট আরেকজনের দিয়ে দেয়ার যে বিস্তার অভিযোগ উঠেছিল, তার কিছুই হয়নি কুমিল্লায়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই প্রথম ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও দিনভর কোনো অভিযোগ করেননি। একেবারে শেষ পর্যায়ের চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার আগে হাঙ্গামার পর পরাজিত প্রার্থী দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু অভিযোগ করেন, তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে পরে সেই চারটি কেন্দ্রসহ সব কেন্দ্রের আলাদা ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সেসব ফলে দেখা যায়, সাক্কুর এজেন্টরা আগেই কেন্দ্র থেকে ফল নিয়ে এসেছেন। কেন্দ্র থেকে আলাদা ঘোষিত ফলাফলে সাক্কুর এজেন্টদের সই ছিল এবং তারা কোনো অভিযোগ করেননি।
কুমিল্লার এই ভোট আওয়ামী লীগের জন্য বেশ স্বস্তিকর এই কারণে যে, শহরের ভোটে ১৯৭৩ সালের পর তারা প্রথম জয় পেয়েছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সদর আসনে জয়ের পর সিটি করপোরেশনের দুটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথমবার ২০১২ সালে ৩০ হাজার এবং পরেরবার ২০১৭ সালে ১১ হাজার ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এবার স্বল্প ভোটে হলেও জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
নৌকা নিয়ে রিফাত ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০টি, ঘড়ি প্রতীকে সাক্কুর পক্ষে রায় দিয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ জন। ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩৪৩টি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ শুধু অংশগ্রহণই করেনি, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক একটা নির্বাচন। চমৎকার প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনটা হয়েছে, এখানে যে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের মনমতো প্রার্থীকে জয়ী করেছে। আমি মনে করি যে নির্বাচনের ইতিহাসে এটি একটি দৃষ্টান্ত।’
জনগণ যে আস্থা রেখে ভোট দিয়েছে, তার মর্যাদা রক্ষা করতে বিজয়ীদের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘মানুষের আস্থা, বিশ্বাসটা যেন আপনাদের ওপর থাকে। যে বিশ্বাস নিয়ে ভোটার আপনাকে ভোট দিয়েছেন, সেই বিশ্বাসে যেন কখনও চিড় না ধরে, সেই বিশ্বাস যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই বিশ্বাসটাকে ধরে রেখে আরও বিশ্বাস যেন অর্জন করতে পারেন, সেদিকেই আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।’
কমিশনের চিন্তা বাদ দিন
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘মোটা অঙ্কের কমিশন’-এর চিন্তা বাদ দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতেও বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘যারা কাউন্সিলর ও মেয়র তাদের আমি এতটুকু বলব যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে হলে, এই একটা উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে, একটা মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়া যাবে, ওই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে।
‘এই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলে পরে তার বাস্তবায়নের সুফল মানুষ কতটুকু ভোগ করবে, আর তার থেকে, এই উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাষ্ট্র কতটুকু লাভবান হবে, এই অর্থটা কতটুকু ফেরত আসবে আর কতটুকু মানুষের কাজে লাগানো যাবে, সেটাই মাথায় রাখবেন।’
আরও পড়ুন:হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষে দুটির ডানা ক্ষতিগ্রস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় চার সদ্যসের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মো. মহিদুল ইসলামকে। কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে আছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিমান ও সিএ) নজরুল ইসলাম সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (এয়ারওয়ার্দিনেস স্টান্ডার্ড) আব্দুল কাদের, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন।
গত রোববার রাত ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই উড়োজাহাজের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সে সময় বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমানের একটি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজকে হ্যাঙ্গারে প্রবেশ করানোর সময় সেখানে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজের একটি পাখা এবং পাখার নিচের অংশে আঘাত লাগে।
‘এতে সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজটির বাম ডানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটির ডান ডানাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
এ ঘটনায় বিমানের এয়ার সেফটি বিভাগের পরিচালক এনামুল হক তালুকদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তাহেরা খন্দকার জানান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিমানের স্বাভাবিক ফ্লাইট কার্যক্রমে এই দুর্ঘটনার কোনো প্রভাব পড়বে না।’
বিমান কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনার ফলে আপাতত এই দুই উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। উড়োজাহাজ দুটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করতে এসব তথ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের কাছে পাঠানো হবে। তাদের মূল্যায়নের পর জানা যাবে ক্ষতির পরিমাণ।
তারও আগে, গত ১০ এপ্রিল দুপুরে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হ্যাঙ্গারের ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় আগে থেকেই সেখানে থাকা বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ফলে ৭৭৭ উড়োজাহাজের র্যাডোম ও সামনের বাল্কহেড এবং ৭৩৭ উড়োজাহাজের বাঁদিকের আনুভূমিক স্ট্যাবিলাইজারের কোনার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ঘটনার পরপরই বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বিমানের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন বিমানের মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম, সৈয়দ বাহারুল ইসলাম ও সেলিম হোসেন খান এবং জিএসই অপারেটর মো. হাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য