স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করা থেকে আটকাতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ভারতের এক মুসলিম নারী। পিটিশনে ওই নারী বলেছেন, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে তার স্বামীকে। এ ঘটনা ভারতীয় মুসলমানদের বহুবিয়ের প্রথাকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
২৮ বছরের ওই নারীর নাম রেশমা (নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নাম প্রকাশ হয়নি)। দিল্লি হাইকোর্টের কাছে রেশমার প্রত্যাশা, বহুবিয়ে নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার কোনো আইন প্রণয়ন করবে।
আদালতের নথি বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শোয়েব খান নামে এক যুবককে বিয়ে করেন রেশমা। পরের বছর নভেম্বরে এই দম্পতির একটি সন্তান হয়।
রেশমা তার স্বামীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা, হয়রানি এবং যৌতুকের দাবির অভিযোগ এনেছেন।
রেশমার আরও অভিযোগ, শোয়েব তাকে এবং তার সন্তানকে ছেড়ে দিয়েছে এবং দ্বিতীয় বিয়ে করার পরিকল্পনা আঁটছেন।
শোয়েবের এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক, শরিয়াবিরোধী, অবৈধ, স্বেচ্ছাচারী, কঠোর, অমানবিক এবং বর্বর হিসেবে বর্ণনা করেন রেশমা।
রেশমা বলেন, ‘মুসলিম নারীদের দুর্দশা নিয়ন্ত্রণে এই চর্চার নিয়ন্ত্রণ দরকার।’
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ মানুষ বহুবিয়ে করেন। তুরস্ক, তিউনিসিয়ার মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এই চর্চা নিষিদ্ধ। আর যেসব দেশে এই ব্যবস্থার অনুমতি আছে, সেসব দেশে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়ন্ত্রণ করে।
বহুবিয়েকে ‘নারীর প্রতি একটি অগ্রহণযোগ্য বৈষম্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি এই প্রথাকে ‘অবশ্যই বাতিল’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি অভিন্ন সিভিল কোড (ইউসিসি) প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই আইনে বিয়ে, বিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো ধর্মীয় আইনে পরিচালিত করা যাবে না। ভারতের সব নাগরিকের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে।
সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে ভারত বেশ স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে সরকারের এই ধর্মীয় সংস্কার ইসলামের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে মুসলিমরা।
ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ইসলাম ধর্মের পণ্ডিত এস ওয়াই কোরেশি বলেন, ‘সাধারণ ধারণা হলো, একজন মুসলমানের চারজন স্ত্রী এবং অসংখ্য সন্তান রয়েছে। এতে এক পর্যায়ে সংখ্যার দিক থেকে হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে মুসলিমরা। তবে এটি সত্যি না। (ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ মুসলিম, ৮০ শতাংশ হিন্দু।)
‘ইসলাম ধর্মের অনুসারে ভারতে মুসলিম পুরুষের সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করার অনুমতি আছে। তবে এর শর্তগুলো বেশ কঠিন, পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।
‘ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একজন পুরুষ দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। তবে কেবল এতিম এবং বিধবাদের মধ্য থেকে। অবশ্যই তাদের সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতে হবে। তবে প্রত্যেককে সমানভাবে ভালবাসা প্রায় অসম্ভব। এটা এমন না যে তাদের সবাইকে আপনি একই জামাকাপড় কিনে দিলেন। বহুবিয়ে এর চেয়েও বেশি কিছু।’
কোরেশি আরও বলেন, ‘বহুবিয়ের নির্দেশিকাটি সপ্তম শতাব্দীতে আরবে উপজাতীয় যুদ্ধের সময় কোরআনে যুক্ত হয়েছিল। সে যুদ্ধে অনেক পুরুষ-যুবক মারা গিয়েছিল। বহুবিয়ের উদ্দেশ্য ছিল বিধবা এবং এতিমদের সাহায্য করা। অন্যথায়, কোরআন এই অনুশীলনকে নিরুৎসাহিত করে।’
নারী অধিকার কর্মী জাকিয়া সোমন বলছেন, “আজ ভারতে কোনো যুদ্ধ নেই। তাই বহুবিয়ের মতো ‘দুর্বৃত্ত ও পুরুষতান্ত্রিক’ প্রথা নিষিদ্ধ করা উচিত।”
মুম্বাইভিত্তিক ভারতীয় মুসলিম নারী আন্দোলনের (বিএমএমএ -ভারতীয় মুসলিম নারী আন্দোলন) প্রতিষ্ঠাতা সোমান আরও বলেন, ‘বহুবিয়ে নৈতিক, সামাজিক এবং আইনগতভাবে ঘৃণ্য। এটার বৈধতা সমস্যা তৈরি করে।
‘আপনি কীভাবে বলতে পারেন যে একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে? সম্প্রদায়কে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের যুগে এটি নারীর মর্যাদা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
বিএমএমএ- বহুবিয়ে নিয়ে ২০১৭ সালে একটি জরিপ চালিয়েছিল। ২৮৯ জন নারীকে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
সোমান বলেন, ‘ ৫০ জন নারীর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম তারা এমন পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে যেগুলো ভীষণ অন্যায্য ছিল। তাদের সবার কাছে এটি (স্বামীর বহুবিয়ে) কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল। অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল।’
বহুবিয়ে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল বিএমএমএ। ইসলামে তাত্ক্ষণিক বিয়ে বিচ্ছেদের বিতর্কিত অনুশীলনের বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল তারা। কয়েক বছর আগে তাত্ক্ষণিক বিয়ে বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ হয় ভারতে।
বহুবিয়ে নিয়ে আইনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আইনজীবী এবং নেতা অশ্বিনী কুমার দুবের এসব চ্যালেঞ্জর একটি করেছেন।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনালের নারী শাখার প্রধান আসমা জোহরা দুবেরের চ্যালেঞ্জের বিরোধীতা করেছেন। তার দাবি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর শাসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী এজেন্ডা এসব চ্যালেঞ্জ।
আসমা বলেন, ‘ইসলামে আইন ঐশ্বরিক। আমরা নির্দেশের জন্য কোরআন এবং হাদিসের দিকে তাকাই। আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা পরিবর্তন করার অধিকার কোনো মানুষের নেই।
‘আপনি কি কখনও এমন একজন মুসলিম পুরুষের সঙ্গে দেখা করেছেন, যার চারজন স্ত্রী আছে? এ প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ পুরুষ জানান, একজন স্ত্রী রাখায়ই কঠিন, সেখানে চারজনের তো প্রশ্নই আসে না। আর বহুবিয়ের হার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে কম।’
জরিপ অবশ্য আসমার দাবির পক্ষে। ভারতের প্রায় সব ধর্মের মানুষের ওপর ১৯৬১ সালে একটি জরিপ চালানো হয়। এক লাখ বিয়ে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যসব সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের বহুবিয়ের হার সবচেয়ে কম; ৫.৭ শতাংশ।
পরবর্তী আদমশুমারি এই ইস্যুতে নীরব ছিল। বহুবিয়ে সম্পর্কিত সাম্প্রতিক তথ্য ২০০৫-২০০৬ সালের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য জরিপে উঠে এসেছে। এতে সব ধর্মেই বহুবিয়ের প্রবনতা কমে এসেছে বলে দেখা গেছে।
কোরেশি বলেন, ‘যেহেতু তথ্যটি বেশ পুরোনো, তাই আমাদের প্রবণতাগুলো খেয়াল করতে হবে। আমরা যদি ১৯৩০ থেকে ১৯৬০ সালের আদমশুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করি, তবে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে বহুবিয়ের ধারাবাহিক পতন দেখতে পাব।’
কোরাশির লেখা দ্য পপুলেশন মিথ: ইসলাম, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া প্রকাশ হয় ২০২১ সালে। সেখানে তিনি বহুবিয়ে নিষিদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘যদি ব্যাপকহারে এটির চর্চা না করা হয়, তবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আপনি কি করতে পারবেন?’
ভারতের মধ্যপ্রদেশে বিয়ের প্রস্তাবে বিশেষ পাত্তা না পেয়ে পাশের ফ্ল্যাটের সেই তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় গোটা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন যুবক। তরুণী বেঁচে গেলেও ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ওই কমপ্লেক্সের ৭ বাসিন্দার। অভিযুক্ত সঞ্জয় দীক্ষিত ওরফে শুভমের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বিজয়নগরে শনিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, বিজয়নগরের ওই কমপ্লেক্সে ভাড়া থাকতেন শুভম। মাস কয়েক আগে সেখান থেকে অন্য বাসায় চলে যান। ওই কমপ্লেক্সে থাকার সময় পাশের ফ্ল্যাটের এক তরুণীর প্রেমে পড়েন তিনি। তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেন। কিন্তু তরুণী তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শুভম যখন জানতে পারেন যে তরুণীর অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। পুলিশের ধারণা, সেই রাগের বশেই কমপ্লেক্সের গ্যারাজে রাখা তরুণীর স্কুটারে আগুন লাগিয়ে দেন শুভম। তখন অনেকে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন।
স্কুটারের আগুন দ্রুত কমপ্লেক্সের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার ঘটনা কমপ্লেক্সের কয়েকজন টের পেতেই প্রাণ বাঁচানোর জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে আগুন একতলা বেয়ে দোতলা, তিনতলার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। কয়েকজন ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচলেও সাতজনের ঝলসে মৃত্যু হয়।
‘আব্বায় কইছইন পড়ালেখা পরে করলে অইবো, আগে ধান বাঁচানি দরকার। তাই সকাল থাকি ধান কাটতে আইছি’- এ বক্তব্য শিহাব মিয়ার। ধল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ধল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাওরে বাবার সঙ্গে ধান কাটছে শিহাব মিয়া। ধান কাটার ফাঁকেই কথা হয় তার সঙ্গে।
শিহাব বলে, ‘এখন তো স্কুল বন্ধ। তাই প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠেই ধান কাটতে চলে আসি। এখন পড়ার সময় পাই না।’
শিহাবের পাশেই ধান কাটছিলেন তার বাবা মনসুর মিয়া। ছেলেকে পড়ার বদলে ধান কাটায় নিয়ে আসা প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ঢলের ভয়ও আছে। এখন যা ধান আছে, সেগুলো বাঁচানোটা জরুরি। তাই বাড়ির সবাই মিলে ধান কাটতে নামছি। ধান কাটা শেষ হলে সে (শিহাব) আবার পড়ালেখা শুরু করবে।’
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এখন ধান কাটার ধুম পড়েছে। ঢলে অনেক হাওরের ধানই তলিয়ে গেছে। ফের ঢলে নামলে আরও ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সুনামগঞ্জে ঝড় হচ্ছে, হচ্ছে শিলাবৃষ্টিও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান। তাই তাড়াতাড়ি ধান কাটতে মরিয়া কৃষকরা। ফসল ঘরে তুলতে ঘরের শিশুদেরও মাঠে নামিয়েছেন তারা। তাই হাওরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়া ফেলে কর্মমুখী করে তুলেছেন শিশুদের।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের আটটি উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে শিশুশ্রমের চিত্র। হাওরে ধান কাটা, ধান বয়ে নিয়ে আসা, ধান শুকানো, মাড়াই করা- সব কাজেই নিয়োজিত রয়েছে শিশুরা। ছেলে ও মেয়েশিশু- উভয়েই কাজ করছে হাওরে।
ধলে শিহাবের পাশের জমিতেই ধান কাটছিল আবদুল মুকিত। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সে। মুকিত বলে, ‘এখন মাদ্রাসা বন্ধ। পড়ালেখার চাপ নেই। তাই ধান কাটতে আসছি।’
তবে ধল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুয়েবুর রহমান জানিয়েছেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই হাওরের ধান কাটতে পরিবারকে সহযোগিতা করতে লেগে যাওয়ায় স্কুলে উপস্থিতি কমে আসে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ পেরোতেই দেখা যায়, দুই পাশে সড়কের ওপরই ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ চলছে। আর পাশের হাওরগুলোয় চলছে ধান কাটার কাজ।
ছাতকের কৈতক এলাকায় সড়কের পাশে কুলোয় করে ধান বাছাইয়ের কাজ করছিল দুই বোন নিলুফা ও সরুফা। স্থানীয় পাড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তারা।
নিলুফা বলে, ‘বাবা মাঠে ধান কাটছে। আর আমরা এখানে মায়ের সঙ্গে ধান শুকানো ও বাছাইয়ের কাজ করছি।’
এখন প্রতিদিনই এই কাজ করতে হয় জানিয়ে নিলুফা বলে, ‘এখন পড়ালেখা করতে হয় না। কাজ করে সন্ধ্যায় ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।’
আরেকটু এগোনোর পর সড়কে পড়ে থাকা ধান কুড়িয়ে ব্যাগে ভরছে শিশু রিয়াদ। স্থানীয় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। রিয়াদ বলে, ‘ধান বেচে মজা কিনমু। এর লাগি ধান তুকাইরাম (কুড়াচ্ছি)।’
রিয়াদ যার কাছ থেকে মজা কিনবে সেই ‘মজাওয়ালাও’ একজন শিশু। দেলোয়ার নামের এ শিশু পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। সে বলে, ‘বাজার থেকে চানাচুর, চকোলেট, বাদাম কিনে এনে এইখানে ধানের বিনিময়ে বিক্রি করি। পরে ধান আবার বাজারে বিক্রি করে দিই।’
হাওর এলাকার যত ভেতরে যাওয়া যায়, ততই ধান কাটার কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ আরও বেশি চোখে পড়ে। যত দুর্গম এলাকা, শিশুশ্রমিক তত বেশি দেখা যায়।
তাহিরপুরের শনির হাওরে নিজের ছেলেকে নিয়ে ধান কাটছিলেন মাখন মিয়া। ছেলে আরাফাত আনোয়ারপুর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মাখন মিয়া বলেন, ‘ধান ভাসিয়ে নিলে তো পড়ার সঙ্গে খাওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এখন ধান বাঁচাতে হবে। ধান মিললে পড়াও চলবে।
‘একে তো ঢলের ভয়, তার ওপর আছে শ্রমিক সংকট। তাই বাসার নারী-পুরুষ-শিশু সবাই মিলে এখন হাওরে কাজ করছি।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি দুর্যোগেই হাওরে শিশুশ্রমের হার বাড়ে। দুর্যোগে সংকটে পড়া পরিবারকে সাহায্য করতে শিশুরা কাজে যুক্ত হয়। বাড়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হারও।
কেবল ধান কাটা, পরিবহন ও মাড়াই-ই নয়, দুদিন হাওরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিশুদের বিল ও নদী থেকে নৌকায় করে মাছ ধরার কাজ করতেও দেখা গেছে।
তবে তাহিরপুরের সুলতানপুর গ্রামের প্রবীণ আলতাফুর রহমান জানান, বোরো মৌসুমে সব সময়ই হাওরের শিশুরা পরিবারকে সাহায্য করতে কাজে নামে। কারণ প্রতিবারই ফসল তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই পরিবারের সব সদস্যকেই কাজে নামতে হয়। আর যে বছয় বন্যা বেশি হয়, সে বছর এই হার আরও বাড়ে।
তিনি বলেন, ‘এতে পড়ালেখা কিছুটা বিঘ্নিত হলেও হাওরবাসীর কাছে ধান রক্ষাই তখন প্রধান লক্ষ্য থাকে। কারণ এটিই তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।’
হাওর নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানের মৌসুমে হাওর এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতাই কাজে যুক্ত হয় এটা সত্য, তবে স্বাভাবিক সময়ে শিশুরা শৌখিনভাবে কাজে যুক্ত হয়। হালকা সাহায্য করে। কিন্তু যখন দুর্যোগ আসে তখন তাড়াতাড়ি ধান কাটা ও শুকানোর চাপ তৈরি হয়। তখন শিশুদের ওপরও কাজের চাপ পড়ে। কারা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত হয়।’
হাওরের দুর্যোগের কারণে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সুনামগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বোরো ধান হচ্ছে এই এলাকার মানুষের একমাত্র ফসল। এটি তলিয়ে গেলে মানুষজন সংকটে পড়ে। ফলে শিশুদেরও তারা পড়ালেখা ছাড়িয়ে কাজে লাগিয়ে দেয়। কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বাড়ে।
‘২০১৭ সালে বন্যায় ফসলহানির পর ঝরে পড়ার হার মারাত্মক বেড়ে গিয়েছিল। এবার সে রকম হবে না। তবে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে।’ যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে হাউস অফ কমন্সে গুরুগম্ভীর আলোচনায় উপস্থিত টোরি এমপিরা, বিষয় রাজনীতিতে যৌনতা। এক এমপি আলোচনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না হয়তো। সময় কাটাতে তিনি তাই মোবাইল ফোনে দেখতে শুরু করেন পর্ন। পাশে বসা এক নারী মন্ত্রীর চোখে ধরা পড়ে বিষয়টি। ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েন তিনি।
ঘটনাটি চাপা থাকেনি। যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় দৈনিক ডেইলি মিররে ফলাও করে প্রচার হয় খবরটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েস্টমিনিস্টারে ২৬ এপ্রিল টোরি এমপিদের বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।
কদিন আগে এক এমপি অভিযোগ তুলেছিলেন, লেবার এমপি ও পার্লামেন্টের ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেইনার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পা দিয়ে বিরক্ত করেছেন, অনেকটা বেসিক ইন্সটিংক্ট সিনেমার অনুকরণে। ডেইলি মেইলে এটি ছাপা হয়। এর জেরে সেদিন রাজনীতিতে যৌনতা নিয়ে আলোচনায় জড়ো হয়েছিলেন টোরি এমপিরা।
পার্লামেন্টের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অন্য এক নারী এমপি। বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কনজারভেটিভ চিফ হুইপ ক্রিস হিটন-হ্যারিস।
তার কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চিফ হুইপ বিষয়টি দেখছেন। এই আচরণ সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্কাই নিউজের রাজনৈতিক সম্পাদক বেথ রিগবি টুইটে জানিয়েছেন, ওই মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন যে অভিযুক্ত এমপি যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে পর্ন দেখে থাকেন।
কনজারভেটিভ ওই এমপিকে শনাক্ত করা যায়নি। তিনি সরকারের সদস্য কি না তাও জানা যায়নি।
ডেইলি মিররকে তিনটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অন্তত ১৫ নারী এমপি তাদের পুরুষ সহকর্মী দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৫৬ এমপির বিরুদ্ধে ৭০টি যৌন অসদাচরণের অভিযোগের তদন্ত ইতোমধ্যে চলছে।
সানডে টাইমস বলছে, অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন কেবিনেট মিনিস্টার; দুজন শেডো মিনিস্টার।
গ্রিন পার্টির এমপি ক্যারোলিন লুকাস প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, এ ধরনের আরচণের জন্য মিনিস্ট্রিরিয়াল কোড কী বলে।
লুকাস বলেন, ‘যৌন হয়রানি অসহনীয়, বরখাস্তের জন্য এটি উপযুক্ত কারণ হতে পারে।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর সাপাহারে রাতে ঘুমের মধ্যে এক গৃহবধূর মাথার চুল কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গৃহবধূর শ্বশুর ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের আইহাই দিঘিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার সন্ধ্যার দিকে শ্বশুর-শাশুড়িসহ তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন ওই গৃহবধূ।
এজাহারে বলা হয়, গ্রামের আশরাফ আলীর ছোট ছেলে জোবায়ের হোসেনের সঙ্গে হাজীপাড়ার বাবু শেখের মেয়ের চার বছর আগে বিয়ে হয়। জোবায়ের পেশায় নির্মাণশ্রমিক, তিনি চট্টগ্রামে কাজ করেন ও মাঝেমধ্যে বাড়ি আসেন।
এ সময় তার স্ত্রী কখনও বাবার বাড়ি আবার কখনও শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ৩ দিন আগে ওই গৃহবধূ শ্বশুরবাড়ি আসেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি নিজের ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন তার মাথার চুল গোছা ধরে কেটে কেউ ঘরের মেজেতে ফেলে রেখেছে।
এ ঘটনায় পরদিন সকালে স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে গৃহবধূ এ ঘটনা তার মাকে জানালে তিনি এসে মেয়েকে সঙ্গে করে তাদের বাড়িতে আসতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাধা দেন। পরে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে গৃহবধূকে উদ্ধার করে তার মায়ের জিম্মায় দেয়।
গৃহবধূর মা অভিযোগে বলেন, ‘মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলে তার শ্বশুর বাধা দেন। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যাই। চেয়ারম্যান জিয়াউজ্জামান টিটু বিষয়টি জানার পর পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। বিকেলে থানায় গিয়ে আমার মেয়ে মামলা করে।’
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙলে দেখি আমার মাথার চুল ছোট হয়ে গেছে। ঘরে আলো জ্বালিয়ে দেখি মেঝেতে অনেক চুল পড়ে আছে। এ নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িকে জানালে তারা ঝগড়া লোগিয়ে উল্টো আমাকেই নানা বাজে কথা বলতে থাকেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
তবে গৃহবধূর শ্বশুর আশরাফ আলী ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘ছেলের অবর্তমানে পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করতে ছেলের বউ নাটক সাজিয়েছে। আমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে পরিবারের কারও কোনো মনোমালিন্য হয়নি।’
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, ‘ওই গৃহবধূ তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরের নামে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। তার শ্বশুর ও ভাশুর মোশারফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাদের আদালতে তোলা হবে।’
আরও পড়ুন:টিপ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ায় সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ক্লোজ করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি)। সেই সঙ্গে স্ট্যাটাসের বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এসপি ফরিদ উদ্দিন আজ সারাদিন অন্য একটি ঘটনার তদন্তে জৈন্তাপুর ছিলেন। রাতে তিনি স্ট্যাটাসের বিষয়টি জেনে লিয়াকতকে ক্লোজ করার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
টিপ পরায় কলেজশিক্ষককে এক পুলিশ সদস্যের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, তখন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
কলেজশিক্ষককে হয়রানির পর ফেসবুকজুড়ে নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও কপালে টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন লিয়াকত। যদিও পরে তিনি সেটি মুছে দেন।
তার আগেই সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে, চলছে সমালোচনা।
তিনি সোমবার ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানীর করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন - তারমধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারনে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারনে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’
এই স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস আমি ডিলিট করে দিয়েছি। যেটা ডিলিট করে দিয়েছি, যেটার অস্তিত্বই নাই, সেটা নিয়ে আমি কথা বলব না।
‘পুরুষ হয়ে টিপ পরে প্রতিবাদ জানানোর ভাষাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। সেটা নিয়ে লিখেছি।’
স্ট্যাটাস কেন ডিলিট করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত বলেন, ‘আমার ভালো লাগছিল তাই দিয়েছিলাম। পরে ভালো লাগে নাই, তাই সরিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া ওটা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু না।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য খুবই আপত্তিকর ও মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। আমি আশা করব, কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে অপসারণ করবে।’
পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একজন সদস্য ফেসবুকে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না- সে প্রশ্ন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুরকে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ প্রবিধানে ফেসবুক নিয়ে কিছু নেই। কারণ যখন প্রবিধান তৈরি হয় তখন ফেসবুক ছিল না। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ও মন্তব্য করা নিয়ে একটি গাইডলাইন রয়েছে। লিয়াকত আলীল স্ট্যাটাসে ওই গাইডলাইনের ব্যত্য়য় ঘটেছে কি না তা আমরা যাচাইবাছাই করছি।’
টিপ পরায় গত শনিবার রাজধানীতে হেনস্তার শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে সোমবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:টিপ পরায় কলেজশিক্ষককে এক পুলিশ সদস্যের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, তখন আরেক পুলিশ সদস্যের ফেসবুক স্ট্যাটাস সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।
কলেজশিক্ষককে হয়রানির পর ফেসবুকজুড়ে নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও কপালে টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলী। যদিও পরে তিনি সেটি মুছে দেন।
তার আগেই সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে, চলছে সমালোচনা।
তিনি সোমবার ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানীর করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন - তারমধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারনে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারনে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’
এই স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস আমি ডিলিট করে দিয়েছি। যেটা ডিলিট করে দিয়েছি, যেটার অস্তিত্বই নাই, সেটা নিয়ে আমি কথা বলব না।
‘পুরুষ হয়ে টিপ পরে প্রতিবাদ জানানোর ভাষাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। সেটা নিয়ে লিখেছি।’
স্ট্যাটাস কেন ডিলিট করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত বলেন, ‘আমার ভালো লাগছিল তাই দিয়েছিলাম। পরে ভালো লাগে নাই, তাই সরিয়ে দিয়েছি। তা ছাড়া ওটা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু না।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য খুবই আপত্তিকর ও মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। আমি আশা করব, কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে অপসারণ করবে।’
লিয়াকতের স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানা নেই বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একজন সদস্য ফেসবুকে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না- সে প্রশ্ন করা হয় লুৎফরকে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ প্রবিধানে ফেসবুক নিয়ে কিছু নেই। কারণ যখন প্রবিধান তৈরি হয় তখন ফেসবুক ছিল না। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ও মন্তব্য করা নিয়ে একটি গাইডলাইন রয়েছে। লিয়াকত আলীর স্ট্যাটাসে ওই গাইডলাইনের ব্যত্য়য় ঘটেছে কি না তা আমরা যাচাইবাছাই করছি।’
টিপ পরায় গত শনিবার রাজধানীতে হেনস্তার শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে সোমবার বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য