ঈদের ছুটিতে নগরবাসী যখন স্বজনদের কাছে ছুটছেন, তখন একদল সংবাদকর্মী সেই তথ্য পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত।
ছুটিতে এরই মধ্যে ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা। তবে গণমাধ্যমগুলো লোকবল কমিয়ে হলেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আগের মতোই।
সংবাদকর্মীদের এক ঈদে ছুটি মেলে তো অন্য ঈদে মেলে না। কেউ কেউ কাজ করেন দুই ঈদেই। স্বজনদের থেকে দূরে থেকে দায়িত্বকেই আপন করে নেন তারা।
সোমবার ঢাকার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের অফিস ঘুরে কর্মব্যস্ত সেসব সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
দৈনিক সমকালের অনলাইন ইনচার্জ সবুজ ইউনুছ বলেন, ‘একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, সেটি তো আমাদের পালন করতেই হয়। একসঙ্গে তো আর সবকিছু বন্ধ করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় পত্রিকা তিন দিন বন্ধ থাকে। তবে এই সময়ে অনলাইন ভার্সন চালু থাকে। এই সময় মানুষ কোথায় কী ঘটল, তা জানার জন্য অনলাইন দেখে। আমরা মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের চাওয়া-পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে থাকি।’
সমকালের সিনিয়র সাব-এডিটর এ কে এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘পত্রিকা তিন দিন ছুটি পেলেও অনলাইন খোলা রাখতে হয়। যে কারণে ছুটির দিনেও আমাদের কাজ করতে হয়।’
অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত নিউজ এডিটর আসিফ আজিজ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে না গিয়ে অফিস করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। কষ্টের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আমাদের কিছু সহকর্মী আপনজনদের কাছে গিয়েছেন। আমরা যারা অফিস করছি বলেই তারা যেতে পেরেছেন। সহকর্মীরা ছুটি ভোগ করতে পারছেন। এই যে ত্যাগ, এর মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। ঈদে পরিবার রেখে অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের পাশাপাশি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।’
একই প্রতিষ্ঠানে সাব-এডিটর ফেরদৌসি যুথি বলেন, ‘অফিসকে দ্বিতীয় ঘর বলা হয়। তার কারণ দিনের বেশির ভাগ সময়ই এখানে সহকর্মীদের সঙ্গে কাটে। সেই ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া ভিন্ন একটা অনুভূতি। তবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর একটা আক্ষেপ তো থেকেই যায়।’
অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা পোস্টের জয়েন্ট নিউজ এডিটর মাহাবুর আলম সোহাগ বলেন, ‘এ পেশায় যুক্ত হওয়ার পর থেকেই একটি কথা মনের মধ্যে গেঁথে গেছে, সেটি হলো পাঠকদের নিউজের ক্ষুধা নিবারণের দায়িত্ব আমাদের। এ জন্য সময়মতো সংবাদটি পরিবেশন করতে না পারলে নিজেদের মধ্যেই খারাপ লাগে।
‘সে কারণে ঈদ বা যেকোনো উৎসবে ছুটিছাঁটার কথা চিন্তা না করে কাজের মধ্যে থাকতে হয়। এটি এখন আমাদের অভ্যাসের মধ্যে ঢুকে গেছে। এ জন্য এখন কাজের মধ্যেই প্রশান্তি খুঁজি।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার সাবিনা পুঁথি বলেন, ‘এখন ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটছে। ঈদ বা বিশেষ দিনগুলোয় গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদের ব্যস্ততা আরও বেশি বেড়ে যায়। ছুটিতে আমাদের কাজের সময় আরও বেড়ে যায়।
‘এবার ঈদের ছুটিতে সিনেমা হলে গিয়ে একটি সিনেমা দেখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ছুটি বাতিল হওয়ায় পরিকল্পনাটিও বাতিল করা হয়েছে। সবকিছুতেই আমাদের আসলে খাপ খাইয়ে নিতে হয়।’
সংবাদকর্মী তারেক মাহমুদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ঈদ কাটে খবরের পেছনে ছোটাছুটি করে। সারাক্ষণ দায়িত্ব তাদের তাড়া করে বেড়ায়। পাঠকের কাছে সর্বশেষ খবর পৌঁছে দেয়ার তাড়নায় খবরের মানুষগুলো ব্যক্তিগত আনন্দকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হই।’
দেশে সম্প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান এবং গানটি লেখার পেছনের গল্প নিয়ে বেশ ভালোই তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেল।
নজরুলের লেখা ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটি কোক স্টুডিও বাংলা প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের পর সমালোচকরা দাবি করলেন, গানটি নজরুল লিখেছিলেন পুত্র হারানোর শোকে।
পরে অবশ্য নজরুল পরিবারের সদস্য খিলখিল কাজী এবং অনির্বাণ কাজী নিশ্চিত করেন যে, ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটি পুত্র হারানোর শোকে নয়।
বিতর্ক মিটে গেল, কিন্তু রয়ে গেল এক পিতার পরিচয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়। লেখায় তিনি ঠিকই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, ক্ষেপে গিয়ে লিখেছেন—
‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না/বিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ আমি চির বিদ্রোহী বীর/বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।’
পুত্র হারানো শোকগ্রস্ত পিতার আবেগও বেড়িয়ে এসেছে কবির কাব্যে, লেখায়, সুরে, গানে- ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি/করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঝের ঝরা ফুলগুলি/ ফুল ফুটিয়ে ভোর বেলা কে গান গেয়ে/নীরব হ’ল কোন বিষাদের বান খেয়ে/বনের কোলে বিলাপ করে সন্ধ্যারাণী চুল খুলি।’
কবির আরেক ছেলে কাজী সব্যসাচীর স্মৃতিচারণামূলক লেখা থেকে জানা যায়, একদিন নজরুলের বাড়ি তল্লাশি করতে আসে কলকাতা পুলিশ। নিষিদ্ধ কোনো বই তার কাছে আছে কি না, সেটা খুঁজতেই তল্লাশি। বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা বাজেয়াপ্ত ছিল তখন। শুরু হলো তল্লাশি। নজরুল এতে কোনো বাধা দিলেন না। খোঁজাখুঁজি করে করে কিছুই পেল না পুলিশ। বাড়ির জিনিসপত্রের অনেক কিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেদিকে নজর নেই কবির।
হঠাৎ একটা বাক্সের দিকে নজর গেল পুলিশের। ওই দিকে এগোতেই কবি পাগলের মতো হয়ে গেলেন। তল্লাশি চালাতে আসা পুলিশের দলটির প্রধানকে অনুরোধ করে বললেন, ‘আর যাই করুন, এ বাক্সে হাত দেবেন না।’
পুলিশও জেদ করে বাক্স খুললেন এবং দেখলেন। পাওয়া গেল খেলনা ও ছোট ছেলের জামা, সুন্দরভাবে সাজানো। সেগুলো ছিল নজরুলের প্রয়াত ছেলে বুলবুলের স্মৃতি। লজ্জিত পুলিশ দলের প্রধান দেখলেন, চোখে পানি টলমল করছে নজরুলের।
যে বুকে এত দ্রোহ থাকে, সেই বুকে যে সন্তানের জন্য অনেক ভালোবাসাও থাকে- এ তারই উদাহরণ যেন।
প্রেমিক নজরুল প্রচণ্ড স্পর্ধা রাখেন। ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল/কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির, চৈতী চাঁদের দুল/জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে, মাখাব তোমার গায়/রামধনু হতে লাল রং ছানি, আলতা পরাব পায়।’
প্রিয়ার খোঁপায় তারার ফুল পরানোর বাসনার কথা শুনে প্রেমিক মনের স্পর্ধার কথা বোঝা যায়।
সাম্য প্রতিষ্ঠা ও প্রচারেও তার লেখাই যেন আশ্রয়। নজরুল লিখছেন, ‘এল নন্দের নন্দন নব-ঘনশ্যাম/এল যশোদা-নয়নমণি নয়নাভিরাম/এল যশোদা-নয়নমণি নয়নাভিরাম/প্রেম রাধা-রমণ নব বঙ্কিম ঠাম/চির-রাখাল গোকুলে এল গোলক ত্যজি/কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী/কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী।’
তুমুল প্রতিভাধর এ মানুষটির জন্মদিন আজ। নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেন কাজী নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৫ মে কবি নজরুলের জন্মদিনে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ঢাকায় এনে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবির ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’কে সামরিক সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়।
১৯৭৬ সালে নজরুলকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। ওই বছরের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মৃত্যুর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ী, কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতীয় কবি।
আরও পড়ুন:রাঙ্গামাটিতে নানা আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা।
বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে সকালে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
এরপর জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি থেকে রাজবন বিহার পর্যন্ত গৌতম বুদ্ধের ধাতু প্রদক্ষিণ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রা শেষে রাজবন বিহারে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।
প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বিশ্বে শান্তি ও মঙ্গল প্রার্থনায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধমূর্তিদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, হাজার বাতিদান, টাকা দান, ফানুসবাতি উৎসর্গ ও দান।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে নানা এলাকা থেকে রাজবন বিহারে আসেন হাজারও পুণ্যার্থী। বুদ্ধের মাথায় পানি ঢেলে তারা সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পায়ে শ্রদ্ধা জানান।
জল্পনা চাকমা নামের এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘বুদ্ধের তিন স্মৃতিবিজড়িত এই দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে পরিবার ও নিজের মঙ্গল প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বিহারে এসেছি।’
গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপরিনির্বাণ উপলক্ষে প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। রোববার সারা দেশে বুদ্ধপূর্ণিমার উৎসব হলেও রাজবন বিহারে হচ্ছে এক দিন পর।
রাজবন বিহারের বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন ভিক্ষু জানান, রোববার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থাকে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি। রোববার বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করলে তা বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে পড়ে না। তাই সোমবার সব আয়োজন করা হয়েছে।
এই আয়োজনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নিখিল কুমার চাকমা ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান ও পঞ্চশীল পাঠ করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা।
আরও পড়ুন:করোনায় দুই বছর কিছুটা অনাড়ম্বরভাবে পালিত হলেও এবার সাড়ম্বরেই পালিত হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা।
রোববার রাজধানীর অন্যান্য বৌদ্ধ মন্দিরের মতো মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ মন্দিরেও ছিল নানারকম আয়োজন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বৌদ্ধ বিহারে এসে আনন্দ প্রকাশ করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি।
তিনি বলেন, ‘একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ বসবাসের বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
ফরিদুল হক খান বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির ধর্ম। সব ধর্মেই বলা আছে শান্তি ও সম্পৃতির কথা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একটি ধর্ম নিরপেক্ষ শান্তি-সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে সকল বৌদ্ধমন্দিরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বাইরেও বৌদ্ধমন্দিরে প্রধানমন্ত্রী সহায়তা প্রদান করেছেন।’
বৌদ্ধ ভিক্ষু সুনিন্দ মিত্র বলেন, ‘মনের শুদ্ধি লাভ করাটাই আজকের দিনের প্রার্থনা। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক– গৌতম বুদ্ধের এই বাণী মাথায় রেখে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র মহাথেরর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত সুদর্শন দীপাল সুরেশ সিনিভিরন্তে। বোদ্ধ ধর্মের ভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ ও জাতিগত হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গৌতম বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার এক বাণীতে এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহামতি বুদ্ধ ছিলেন জীবের মঙ্গল কামনায় সত্যসন্ধ। পৃথিবীকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরন্তর প্রয়াস চালান। বুদ্ধের চেতনায় ছিল দুঃখ জয়ের মাধ্যমে জীবের মুক্তি কামনা। তিনি মানব জীবনে দুঃখ ও দুঃখের কারণ এবং তা নিবারণের উপায় সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, যা চতুরার্য সত্য নামে পরিচিত।’
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। অহিংসা পরম ধর্ম- বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
‘প্রাচীনকাল থেকে বাংলার জনপদের সঙ্গে বৌদ্ধ সভ্যতা ও কৃষ্টি গভীরভাবে মিশে আছে। পাহাড়পুর ও ময়নামতি শালবন বিহার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে। এটা এ দেশের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কবিগুরুর সত্য ও সুন্দরের দর্শন কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
কুষ্টিয়ায় রোববার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতি এ আহ্বান জানান।
স্পিকার বলেন, ‘বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ির ঐতিহ্য ও গৌরব বিরল। এটা আমাদের গর্ব। কুঠিবাড়ি সম্পর্কে যেন দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন, গবেষণা করতে পারেন।
‘কবিগুরুর সত্য ও সুন্দরের দর্শন কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। কুঠিবাড়ির গুরুত্ব অনুধাবন করে এর উন্নয়নে আরও কাজ করতে হবে। সরকারের কাছে আমার এমনই প্রত্যাশা।’
কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার কুঠিবাড়ির ঐতিহাসিক বকুলতলায় একটি বকুলগাছের চারা রোপণ করেন।
আলোচনা সভা শেষে রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা পাঠ ও নাটক মঞ্চায়ন হয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কুঠিবাড়িতে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিরিবিলি পরিবেশ এবং জমিদারি দেখাশোনার জন্য বারবার কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়িতে এসেছেন কবিগুরু। প্রত্যন্ত শিলাইদহে কেটেছে কবির জীবনের অনেকটা সময়।
আরও পড়ুন:২৫শে বৈশাখ মানেই গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিনে নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ। এবারে দেশের নানা জায়গায় বৃষ্টির কারণে খরতাপ নেই। তবে বৃষ্টি বন্ধ করতে পারেনি কোনো আয়োজন।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের পতিসরে এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই কাচারিবাড়িতে উদযাপিত হচ্ছে তার ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।
নওগাঁয় কাচারিবাড়ি প্রাঙ্গণে রোববার সকাল ১০টার দিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে জন্মোৎসব উদ্বোধন করেন।
কয়েকটি পর্বে সাজানো হয়েছে পুরো দিনের আয়োজনকে। এর মধ্যে আছে চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম পর্বে ‘রং-তুলিতে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।
এরপর দেবেন্দ্র মঞ্চে ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নওগাঁ ৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার, ৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল ও জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল। বাঙালির জীবনে নানা অনুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এখনও প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জীবনের যত বৈচিত্র্য আছে তার পুরোটাই উঠে এসেছে কবিগুরুর কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাসে।
‘কবিগুরু তার লেখনীতে মানবতার সংকট থেকে উত্তরণের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র সাহিত্য চর্চা করলে মানবজীবনের নানা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
শাহজাদপুরে কাচারিবাড়ি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি নন, তিনি একজন মহাপুরুষ। আমার মতো মানুষের কবিকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ একজন জমিদার বংশের লোক হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবিকে বুকে ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসতেন, গান ভালোবাসতেন, কবিতাকে ভালোবাসতেন। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারতাম তাহলে আমাদের অবস্থান আরও উন্নত শিখরে থাকত।’
আমাদেরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকে অনুসরণ করে জীবন গড়ে তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ ৬ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হচ্ছে তিন দিনের জাতীয় অনুষ্ঠান। থাকছে গ্রামীণ মেলারও আয়োজন।
কবির স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হচ্ছে এ আয়োজন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে তিন দিনের এ বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা চলবে।
প্রতিদিন আলোচনা ছাড়াও থাকছে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাটক প্রদর্শন। অনুষ্ঠানের জন্য কুঠিবাড়ির মূল চত্বরের ভেতর বিশাল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর কুঠিবাড়ির বাইরে বিশাল মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। এটিও চলবে তিন দিন।
আয়োজন নিয়ে তরুণ রবীন্দ্র গবেষক রেফুল করিম বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালে প্রথম কুষ্টিয়ার শিলাইদহে ছায়াশীতল নিরিবিলি এ কুঠিবাড়িতে আসেন। জমিদারি পরিচালনার উদ্দেশ্যে আসলেও রবীন্দ্রনাথ পুরোটা সময় মগ্ন ছিলেন সাহিত্য রচনায়। তিনি গীতাঞ্জলির অধিকাংশ কাব্য এখানে বসে রচনা করেছেন।
‘আর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও রচনা করেন এ কুঠিবাড়িতেই। পদ্মাপারের এই শিলাইদহ গ্রামের চিত্র ধরেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের পট এঁকেছিলেন।’
রেফুল আরও বলেন, ‘এই এলাকার প্রজারা রবীন্দ্রনাথকে খুব ভালোবাসতেন। এই কুঠিবাড়িকে তারা ঠাকুরবাড়ি হিসেবে শ্রদ্ধা করতেন। কুঠিবাড়িতে তিনি হিন্দু-মুসলিম সবাইকে এক কাতারে বসিয়েছেন। কৃষকদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।
‘তাই রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে প্রতি বছর শিলাইদহে মানুষের ঢল নামে। প্রাণের মানুষ, মনের মানুষ রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন যা আছে, কুঠিবাড়ির ভেতর ঘুরে ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা। এত বছর পরও সাহিত্য ও দর্শনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমান প্রাসঙ্গিক।’
করোনায় গত দুই বছর কোনো অনুষ্ঠান না হওয়ায় এবার রবীন্দ্রপ্রেমীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যেতে পারে কুঠিবাড়িতে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য