খুশির ঈদ চলেই এলো। ঈদের আয়োজনে কারও যেন কমতি নেই। এ সময় সবার বাড়িতেই খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন থাকে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি যাওয়া হয়ে ওঠে এই সময়টায়। বন্ধুবান্ধবরাও অনেকটা জোর করে বসেন। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। বেড়াতে গেলেও খাবার-দাবারের এলাহি কাণ্ড থাকে। আর ঈদের খাবারের সঙ্গে মূল আয়োজনে থাকে বিভিন্ন রকমের মাংস বা প্রাণিজ আমিষ। তবে এক মাস রোজা রাখার পর হুট করেই এ ধরনের খাবারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঈদের সময় খাবারদাবারের ভুল থেকে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হলে পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে। তা ছাড়া এখন গরমকাল। এই গরমের কথা মাথায় রেখেও খাবারদাবার নির্বাচন করতে হবে।
-
কী খাবেন, কী খাবেন না?
যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, হজমেও সমস্যা নেই কিংবা তরুণ তারা সবই খেতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন খাওয়াটা যেন অতিরিক্ত না হয়। চর্বিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা ভালো। অনেক সময় দেখা যায় বেশি পরিমাণে মাংস, বিরিয়ারি খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা থাকে কিংবা বুক জ্বালাপোড়াও করতে পারে। ঈদের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. আবীর হাসান বলেন, ‘এক মাস রোজা রাখার পরে ঈদের সময় হঠাৎ করে বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি ও আমিষজাতীয় খাবারের পরে বুকে জ্বালাপোড়াও হতে পারে। যাদের পাইলসজাতীয় রোগ আছে, তারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় সাবধান থাকুন। প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। বুকের জ্বালাপোড়ার জন্য ওমিপ্রাজল বা পেন্টোপ্রাজলজাতীয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খেতে পারেন। বমি বমি ভাব হলে ডমপিরিডন খাবেন। যাদের হার্টের সমস্যা ও কিডনিতে সমস্যা আছে তারা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রোটিন খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন।’
-
কেমন হবে ঈদকালীন ডায়েট চার্ট
সকালে কী খাবেন?
এক মাস রোজা রাখার ফলে ঈদের দিন সকালে অনেক কিছু খেতে মন চাইবে। তবে মনের সেই গোঁ ধরে বসে থাকলে হবে না। সকালের নাশতার মেন্যুটা যাতে হালকা খাবারের হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নরওয়েতে কর্মরত গ্লোবাল হেলথ বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ আশিক মাহমুদ বলেন, ‘সকালের নাশতাটা শুরু করতে পারেন ফলের রস দিয়ে। তাই বলে বাজারে পাওয়া যায় এমন ফ্রুট জুস দিয়ে নয়। ঈদের দিন সকালে অনেকেই দেখি কোমল পানীয় খান। এগুলো থেকে বিরত থাকুন। বাজারে প্রচলিত ফ্রুট জুসের বেশির ভাগই আসল ফলের রস দিয়ে তৈরি নয়। এ ছাড়া কোনো কোনোটিতে কৃত্রিম রংও মেশানো থাকে। তাই এসব পানীয় থেকে দূরে থাকুন। এগুলো লিভার ও কিডনি উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। ঈদের দিন সকালে ফলমূল, ডাবের পানি খেতে পারেন। নামাজে যাওয়ার আগে দুধের তৈরি পায়েস কিংবা অল্প পরিমাণে সেমাই খেতে পারেন। অনেকে একটু বোরহানি খেতে চান, সেটাতেও না নেই।’
-
দুপুর ও রাতে
তরুণরা নিজের পছন্দমতো খাবার খেতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে মুশকিল। চর্বি সব সময়ই পরিহারযোগ্য। ঈদের দিন পোলাও-মাংস কিংবা বোরহানি খাবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে কিছুটা সতর্ক থাকুন। খাবারের মাঝে পানি পান করবেন না। হজমে সমস্যা হতে পারে। আপনি চাইলে খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। দুপুরের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস, শাকসবজি রাখতে পারেন। এ ছাড়া সবুজ সালাদ ও টক দই রাখতে পারেন। খাবারের অনেক আইটেমের পরিবর্তে দুই-তিনটি আইটেম ভালোভাবে রান্না করলে পুষ্টি, ক্যালরি, স্বাদ সবই পাওয়া সম্ভব। খাবারে সফট্ ড্রিংকস পরিহার করতে পারলে ভালো। বয়স্কদের একটু বুঝেশুনে খেতে হবে। আমিষ খেতে ইচ্ছে করলেও অল্প পরিমাণে খাবেন। চর্বিযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবারে হাতই দেবেন না। রাতের খাবার হালকা হলে ভালো। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান রাতের খাবারে সাদা ভাত পরিহার করে রুটি ও সবজি খেতে পারেন। তরুণরা রাতের খাবারের ভিন্নধর্মী স্বাদ পেতে বাসায় চায়নিজ খাবার রান্না করেও খেতে পারেন। এগুলোতে তেল ও মসলা উভয়ই কম থাকে। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।
-
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পরামর্শ
যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের সমস্যা আছে, তাই ভাজাপোড়া খাবারও নিয়ন্ত্রণে রেখে খেতে হবে। ঈদের দিন বিভিন্ন ধরনের তেলে ভাজা কাবাব, চিকেন ফ্রাই, চপ এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চিনিযুক্ত শরবতের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফলের রস যেমন : বেল, তরমুজ, পাকা আম, পাকা পেঁপে বা মাল্টার রস পরিমাণে অল্প করে চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে। দুপুর বা রাতের খাবারের মেন্যুতে মাছ বা মুরগির মাংস রাখা যাবে। গরুর মাংস খুব বেশি খাওয়া উচিত না। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। খাবারে ফাইবার বাড়াতে মটরশুঁটি, শিম, আপেল, ব্রকলি, গাজর, খেজুর রাখতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে আবার সাধারণ চালের পরিবর্তে লাল চাল, লাল আটা খেতে পারেন। অন্যদের মতো খাবারের তালিকা লম্বা করে ঈদের আনন্দটা যাতে মাটি না হয় সেদিকে আপনাদের সতর্ক হতে হবে।
-
বয়স্কদের বাড়তি যত্ন নিন
বয়স একটু বেড়ে গেলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আগের মতো কর্মক্ষম থাকে না। হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগে বাসা বাঁধে। ফলে তাদের খাবারদাবারের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়। অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেললে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। এ ছাড়া বুক জ্বালাপোড়া তো থাকছে। খাবারে যাতে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারে ঘিয়ের ব্যবহারও কমিয়ে দিতে হবে।
-
বেশি বেশি ফলমূল খান
টাককা সবজি খেলে পাকস্থলী ভালো থাকে। যেহেতু এখন গরমকাল তাই বেশি বেশি ফলমূল খেতে পারেন। ফলের রস আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করবে। বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে রসাল ফল যেমন তরমুজ, বেল বা লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।
-
আরও কিছু টোটকা
১। ঈদের দিন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে আমিষজাতীয় খাবার বন্ধ রাখুন। ইসবগুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করুন।
২। খালি পেটে টকজাতীয় কিছু খাবেন না। এমনকি আচার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য টেস্টিং সল্ট, ফুড কালার, সস, পানীয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৪। অতিরিক্ত মসলা ও চর্বি বর্জন করুন। বেশি বেশি পানি পান করুন।
৫। শরীরকে বেশি বেশি হাইড্রেট রাখুন। প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।
৬। আলো-বাতাসে হাঁটাচলা করুন। এতে মন ও শরীর উভয়ই ভালো থাকবে।
আরও পড়ুন:দেশের সাড়ে ২৬ শতাংশ মানুষ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। আর অঞ্চলভেদে স্থূলতার হার রংপুরে সবচেয়ে বেশি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণায় জানা গেছে।
রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অঞ্চলভেদে স্থূলতার হার সবচেয়ে বেশি রংপুরে। এই বিভাগের ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভোগেন। ঢাকায় এই হার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেটে ২৩ শতাংশ, বরিশালে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। খুলনায় এই হার ১৪ শতাংশ।
স্থূলতার সমস্যা আগে শুধু বয়স্কদের মধ্যে দেখা দিলেও এখন তরুণদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে বলে গবেষণায় জানা গেছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের জনগণের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ৫৫ দশমিক ১ শতাংশের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে। ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বয়সীদের ২৯ শতাংশ ও ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৮ দশমিক ২ শতাংশের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে।
স্থূলতায় শহর অঞ্চলের মানুষ বেশি ভুগছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। শহর অঞ্চলের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভোগেন আর গ্রামে এই হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ।
সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার সুস্থ থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার মুটিয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক কঠিন। কিন্তু আমরা একটু সচেতন হলে, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করতে পারি, তবে স্থূলতার ভয়াল থাবা থেকে আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব।’
দেশে সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।
এটি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে বছরে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ (৭ লাখ) মৃত্যুই অসংক্রামক রোগে ঘটে থাকে। সে হিসাবে দেশে দিনে গড়ে এক হাজার ৯০০ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটন আয়োজিত এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হারে বাড়ছে। আগে এই রোগের প্রবণতা বয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা যেত। এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের জীবনাচার পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ।
‘দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৭ লাখই মারা যায় অসংক্রামক রোগে। সে হিসাবে প্রতিদিন মারা যায় ১৯০০ মানুষ।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ একবার দেখা দিলে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। কিন্তু এটা ব্যয়বহুল। এই রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধিতে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও।
‘আমরা ভালো ও উন্নত চিকিৎসা দিতে গেলে গবেষণা দরকার। গবেষণা থাকলে সঠিক দিকনির্দেশনা আসে। তাতে করে নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়।
‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংক্রামক রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মাঝে অসংক্রামক রোগ বেড়ে গেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে। এর প্রভাবে আত্মহত্যা বাড়ছে।
এমন বাস্তবতায় আজ (বৃহস্পতিবার) মানসিক স্বাস্থ্য পলিসি কেবিনেট নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
সেমিনারে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘দেশে ৩৮টি মেডিক্যাল কলেজ ও পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ এগিয়ে গেছে। একইসঙ্গে সমস্যাও বেড়েছে। ভালো স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো, ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর্মী। স্বাস্থ্য খাত সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল। আমারা টিবি, কলেরা, ডায়রিয়া নিয়ে কাজ করেছে। এসব এখন নিয়ন্ত্রণে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন। বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীরসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন:চিকিৎসক সংকটের কারণে দেশে চোখের রোগের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চক্ষু চিকিৎসায় অনেক জনবল এখনও কম আছে। অনেক অপারেশন আমরা এখনও দেশে করাতে পারি না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে।’
চোখের চিকিৎসায় সংকট কেবল চিকিৎসকের অভাব নয়। মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ কর্নিয়া দানে এখনও আগ্রহী নয়। এই ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের মানুষকে এই বিষয়ে আগ্রহী করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিটিউটে অপথালমোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওএসবি) ৪৯তম বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের প্রতিটি উপজেলায় ই-চক্ষু সেবায় জোর দিয়েছি। বর্তমানে ১০০ উপজেলায় ভিশন সেন্টার আছে। আমরা দেশের সব উপজেলা, ৫০০ টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে আমরা ভিশন সেন্টার করব।
তবে নানা সংকটেও স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তৃণমুলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছেছে। ইপিআই কর্মসূচি সারা বিশ্বে প্রসংশিত। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এর ফলে রাতকানা রোধ নির্মূল হয়েছে।”
বাংলাদেশ করোনার যে সাড়ে ২৯ কোটি টিকা পেয়েছে তার মধ্যে ২৬ কোটি টিকা বাংলাদেশের মানুষকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘দেশ এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এজন্য আজ এভাবে প্রোগ্রাম করতে পেরেছি। এখন মানুষ মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে। গত একমাসে আমাদের করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন করোনার সার্টিফিকেট ছাড়াই বিদেশ যেতে পারে।’
‘কিছুদিন আগে জাপানি একট সংস্থা জরিপে বলেছে পৃথিবীর ১২১ টি দেশের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। আর এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে, যেখানে পার্শ্ববতী দেশ ৭০ নম্বরে অবস্থান করছে।’
বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি আশরাফ সাঈদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদল, অপথালমোলজি সোসাইটির সভাপতি আভা হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ।
নারীর মেনোপজ বা ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার অংশ। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের শরীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়েন প্রায় সবাই।
বয়সের সঙ্গে ডিম্বাশয়ের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে ৩৫ বছর বয়স থেকেই। মেনোপজের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। এর অর্থ হলো ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরিসহ ডিম নিঃসরণের প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটিয়েছে।
সাধারণভাবে নারীদের মেনোপজের গড় বয়স ৪২ থেকে ৫৩ বছর। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে আরও আগেই এটা ঘটতে পারে। স্থায়ী মেনোপজের আগে টানা ১২ মাস বা এক বছর মাসিক বন্ধ থাকতে দেখা যায়।
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় প্রকৃত মেনোপজের কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর আগে থেকেই হট ফ্ল্যাশ ও অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পর্যায়কে বলা হয় পেরিমেনোপজ।
মেনোপজের প্রক্রিয়ার সময় অনেকে প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। কারও কারও অনিদ্রা, জ্বরের অনুভূতি, যৌনাঙ্গ শুষ্ক হয়ে যাওয়া এমনকি আলঝেইমারসের লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজের সময় বিশেষ ধরনের চোয়ালের ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ব্যথার নাম টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার ডিস-অর্ডার (টিএমডি)। মেনোপজের সময় অনেক নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি চোয়ালের গোড়ায় ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ধারণা করা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মধ্যে ৪.৮ শতাংশ বা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ টিএমডিতে আক্রান্ত। পুরুষের তুলনায় নারীদের টিএমডিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণভাবে এর পেছনে হরমোনজনিত পরিবর্তনকেই দায়ী মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মেনোপজের সময় টিএমডির মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই। তবে ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেনোপজ-পরবর্তী সময়ের তুলনায় মেনোপজের প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে নারীদের টিএমডিতে ভোগার প্রবণতা বেশি।
সম্প্রতি আরেক গবেষণাতেও এর প্রমাণ মিলেছে। ব্রাজিলের একদল গবেষক দেখেছেন, টিএমডি সম্পর্কিত ব্যথার সঙ্গে মেনোপজের চূড়ান্ত সময়ের সম্পর্ক রয়েছে। তবে মেনোপজের পর ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমে আসতে শুরু করে।
নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির (এনএএমএন) জার্নাল মেনোপজে গত ১০ মে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেসান্দ্রা পুচি মানটেলি গলহার্দো ও তার সহকর্মীরা গবেষণাপত্রের উপসংহারে লিখেছেন, মেনোপজের দিকে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে টিএমডির মাত্রাও পর্যালোচনায় আনা উচিত।
গবেষণাটির ফলাফল চমকপ্রদ বলে মনে করছেন এনএএমএস মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. স্টেফানি ফাউবিওন। তিনি বলছেন, ‘এই গবেষণাটি যৌনতাসংশ্লিষ্ট হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং ব্যথার অভিজ্ঞতার মধ্যে সম্পর্কের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে। পরিষ্কার প্রমাণ মিলেছে, টিএমডির লক্ষণগুলো মেনোপজের বিভিন্ন লক্ষণের সঙ্গে যুক্ত এবং মেনোপজের বিভিন্ন পর্যায়জুড়ে ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ পায়।’
আরও পড়ুন:সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে সংগঠন দুটি। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাবের সমর্থনে অর্থনীতিবিদ, জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে, স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমবে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮ দশমিক ৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
পাশাপাশি মধ্যমেয়াদে (২০২২-২৩ থেকে ২০২৭-২৮) সিগারেটের মূল্য স্তর চার থেকে কমিয়ে দুই স্তরে আনার প্রস্তাব করা হয়।
সংগঠন দুটির দাবি, বর্তমানে চার স্তরের অ্যাডভ্যালুরেম কর কাঠামো চালু থাকায় সিগারেট সস্তা এবং সহজলভ্য। সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে ভোক্তা কমদামী ব্রান্ড বেছে নিতে পারছে।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১ টাকা ২৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
আরও পড়ুন:পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথায় ভোগা নারীদের সর্বোচ্চ তিন দিন কাজ থেকে ছুটি দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করতে যাচ্ছে স্পেন সরকার।
আগামী সপ্তাহেই প্রস্তাবের খসড়াটি অনুমোদন পেতে পারে। এটি কার্যকর হলে প্রথম পশ্চিমা দেশের নাগরিক হিসেবে ঋতুস্রাবের সময় ছুটির অধিকার ভোগ করবেন স্পেনের নাগরিকরা।
বর্তমানে শুধু জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।
স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর।
স্পেনের সমতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ এল পেরিওডিকো সংবাদপত্রকে বলেন, ‘এসব লক্ষণ কারও মধ্যে দেখা গেলে সাময়িক শারীরিক জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই পিরিয়ডের সময়কার এসব জটিলতাকেও আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন। এ সময়টি অত্যন্ত কষ্টকর, তাই এতে আক্রান্ত নারীদের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।’
প্রস্তাবের খসড়াটি মঙ্গলবার স্পেনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পেতে পারে। এতে ছুটির বিষয়টি ছাড়াও ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলগুলোতে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ, প্রান্তিক এলাকার নারীদের স্যানিটারি প্যাড ও ট্যাম্পন বিনা মূল্যে প্রদান এবং সুপার মার্কেটে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল।
খসড়া প্রস্তাবে ১৬ এবং ১৭ বছর বয়সী কিশোরীদের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই সরকারি হাসপাতালে গর্ভপাতের সুযোগ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জয়পুরহাটে কিডনি বেচাকেনার দালাল চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে জয়পুরহাট পুলিশ লাইনসে সংবাদ সন্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভুঞা এ তথ্য দেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন, কালাই উপজেলার থল গ্রামের সাহারুল, উলিপুর গ্রামের ফরহাদ হোসেন চপল, বহুতি গ্রামের মোশারফ ও মোকারম, ভেরেন্ডি গ্রামের সাহাদুল ইসলাম, দূর্গাপুর গ্রামের সাইদুল ফকির এবং সদর উপজেলার বম্বু হানাইল গ্রামের সাদ্দাম হোসেন।
জয়পুরহাটের এসপি সংবাদ সম্মেলনে কিডনি দালাল চক্রের নেটওয়ার্ক ও কার্যক্রম তুলে ধরেন।
এসপি জানান, কিডনি দালালরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দরিদ্রদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কিডনি সংগ্রহ করেন। চক্রটি প্রথমে কালাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গরিব মানুষকে সুদে টাকা ধার দেয়। এক পর্যায় ধারের ঋণ শোধে ব্যর্থ হলেই তাদের কিডনি বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করেন দালালরা।
তিনি আরও জানান, দালালরা প্রতিটি কিডনি উচ্চ দামে বিক্রি করলেও দাতাকে এক থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে বিদায় দেন। পরে চিকিৎসার অভাবে কিডনি দাতা জটিলতায় ধুকেতে থাকেন।
দরিদ্র মানুষ মোটা অঙ্কের টাকার আশায় কিডনি দিতে রাজি হলেও পুরোটা পান না। পরে টাকা চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় দালালরা।
এসপি আরও জানান, দুবাই থেকে কাওছার এবং ভারতে বসে সাত্তার জয়পুরহাটের কিডনি দালালদের পরিচালনা করেন। তাদের মাধ্যমে এলাকার দালালরা দেশ-বিদেশে কিডনি বিক্রি করেন।
কিডনি দালাল চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান জয়পুরহাটের এসপি মাছুম আহাম্মদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার করা সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত এলাকায় কিডনি বেচাকেনার ঘটনায় ১৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য