খুশির ঈদ চলেই এলো। ঈদের আয়োজনে কারও যেন কমতি নেই। এ সময় সবার বাড়িতেই খাওয়াদাওয়ার বিশাল আয়োজন থাকে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি যাওয়া হয়ে ওঠে এই সময়টায়। বন্ধুবান্ধবরাও অনেকটা জোর করে বসেন। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। বেড়াতে গেলেও খাবার-দাবারের এলাহি কাণ্ড থাকে। আর ঈদের খাবারের সঙ্গে মূল আয়োজনে থাকে বিভিন্ন রকমের মাংস বা প্রাণিজ আমিষ। তবে এক মাস রোজা রাখার পর হুট করেই এ ধরনের খাবারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঈদের সময় খাবারদাবারের ভুল থেকে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হলে পুরো আনন্দটাই মাটি হতে পারে। তা ছাড়া এখন গরমকাল। এই গরমের কথা মাথায় রেখেও খাবারদাবার নির্বাচন করতে হবে।
-
কী খাবেন, কী খাবেন না?
যাদের কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, হজমেও সমস্যা নেই কিংবা তরুণ তারা সবই খেতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন খাওয়াটা যেন অতিরিক্ত না হয়। চর্বিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা ভালো। অনেক সময় দেখা যায় বেশি পরিমাণে মাংস, বিরিয়ারি খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা থাকে কিংবা বুক জ্বালাপোড়াও করতে পারে। ঈদের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. আবীর হাসান বলেন, ‘এক মাস রোজা রাখার পরে ঈদের সময় হঠাৎ করে বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি ও আমিষজাতীয় খাবারের পরে বুকে জ্বালাপোড়াও হতে পারে। যাদের পাইলসজাতীয় রোগ আছে, তারা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় সাবধান থাকুন। প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাবেন। বুকের জ্বালাপোড়ার জন্য ওমিপ্রাজল বা পেন্টোপ্রাজলজাতীয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খেতে পারেন। বমি বমি ভাব হলে ডমপিরিডন খাবেন। যাদের হার্টের সমস্যা ও কিডনিতে সমস্যা আছে তারা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রোটিন খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন।’
-
কেমন হবে ঈদকালীন ডায়েট চার্ট
সকালে কী খাবেন?
এক মাস রোজা রাখার ফলে ঈদের দিন সকালে অনেক কিছু খেতে মন চাইবে। তবে মনের সেই গোঁ ধরে বসে থাকলে হবে না। সকালের নাশতার মেন্যুটা যাতে হালকা খাবারের হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নরওয়েতে কর্মরত গ্লোবাল হেলথ বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ আশিক মাহমুদ বলেন, ‘সকালের নাশতাটা শুরু করতে পারেন ফলের রস দিয়ে। তাই বলে বাজারে পাওয়া যায় এমন ফ্রুট জুস দিয়ে নয়। ঈদের দিন সকালে অনেকেই দেখি কোমল পানীয় খান। এগুলো থেকে বিরত থাকুন। বাজারে প্রচলিত ফ্রুট জুসের বেশির ভাগই আসল ফলের রস দিয়ে তৈরি নয়। এ ছাড়া কোনো কোনোটিতে কৃত্রিম রংও মেশানো থাকে। তাই এসব পানীয় থেকে দূরে থাকুন। এগুলো লিভার ও কিডনি উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। ঈদের দিন সকালে ফলমূল, ডাবের পানি খেতে পারেন। নামাজে যাওয়ার আগে দুধের তৈরি পায়েস কিংবা অল্প পরিমাণে সেমাই খেতে পারেন। অনেকে একটু বোরহানি খেতে চান, সেটাতেও না নেই।’
-
দুপুর ও রাতে
তরুণরা নিজের পছন্দমতো খাবার খেতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে মুশকিল। চর্বি সব সময়ই পরিহারযোগ্য। ঈদের দিন পোলাও-মাংস কিংবা বোরহানি খাবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে কিছুটা সতর্ক থাকুন। খাবারের মাঝে পানি পান করবেন না। হজমে সমস্যা হতে পারে। আপনি চাইলে খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন। দুপুরের খাবারের তালিকায় মাছ, মাংস, শাকসবজি রাখতে পারেন। এ ছাড়া সবুজ সালাদ ও টক দই রাখতে পারেন। খাবারের অনেক আইটেমের পরিবর্তে দুই-তিনটি আইটেম ভালোভাবে রান্না করলে পুষ্টি, ক্যালরি, স্বাদ সবই পাওয়া সম্ভব। খাবারে সফট্ ড্রিংকস পরিহার করতে পারলে ভালো। বয়স্কদের একটু বুঝেশুনে খেতে হবে। আমিষ খেতে ইচ্ছে করলেও অল্প পরিমাণে খাবেন। চর্বিযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবারে হাতই দেবেন না। রাতের খাবার হালকা হলে ভালো। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান রাতের খাবারে সাদা ভাত পরিহার করে রুটি ও সবজি খেতে পারেন। তরুণরা রাতের খাবারের ভিন্নধর্মী স্বাদ পেতে বাসায় চায়নিজ খাবার রান্না করেও খেতে পারেন। এগুলোতে তেল ও মসলা উভয়ই কম থাকে। ঘুমানোর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাবার খেতে হবে।
-
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পরামর্শ
যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের সমস্যা আছে, তাই ভাজাপোড়া খাবারও নিয়ন্ত্রণে রেখে খেতে হবে। ঈদের দিন বিভিন্ন ধরনের তেলে ভাজা কাবাব, চিকেন ফ্রাই, চপ এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চিনিযুক্ত শরবতের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফলের রস যেমন : বেল, তরমুজ, পাকা আম, পাকা পেঁপে বা মাল্টার রস পরিমাণে অল্প করে চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে। দুপুর বা রাতের খাবারের মেন্যুতে মাছ বা মুরগির মাংস রাখা যাবে। গরুর মাংস খুব বেশি খাওয়া উচিত না। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। খাবারে ফাইবার বাড়াতে মটরশুঁটি, শিম, আপেল, ব্রকলি, গাজর, খেজুর রাখতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে আবার সাধারণ চালের পরিবর্তে লাল চাল, লাল আটা খেতে পারেন। অন্যদের মতো খাবারের তালিকা লম্বা করে ঈদের আনন্দটা যাতে মাটি না হয় সেদিকে আপনাদের সতর্ক হতে হবে।
-
বয়স্কদের বাড়তি যত্ন নিন
বয়স একটু বেড়ে গেলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আগের মতো কর্মক্ষম থাকে না। হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগে বাসা বাঁধে। ফলে তাদের খাবারদাবারের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়। অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেললে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। এ ছাড়া বুক জ্বালাপোড়া তো থাকছে। খাবারে যাতে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারে ঘিয়ের ব্যবহারও কমিয়ে দিতে হবে।
-
বেশি বেশি ফলমূল খান
টাককা সবজি খেলে পাকস্থলী ভালো থাকে। যেহেতু এখন গরমকাল তাই বেশি বেশি ফলমূল খেতে পারেন। ফলের রস আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করবে। বাজারে প্রচলিত কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে রসাল ফল যেমন তরমুজ, বেল বা লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।
-
আরও কিছু টোটকা
১। ঈদের দিন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে আমিষজাতীয় খাবার বন্ধ রাখুন। ইসবগুল পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করুন।
২। খালি পেটে টকজাতীয় কিছু খাবেন না। এমনকি আচার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য টেস্টিং সল্ট, ফুড কালার, সস, পানীয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৪। অতিরিক্ত মসলা ও চর্বি বর্জন করুন। বেশি বেশি পানি পান করুন।
৫। শরীরকে বেশি বেশি হাইড্রেট রাখুন। প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন। রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করুন।
৬। আলো-বাতাসে হাঁটাচলা করুন। এতে মন ও শরীর উভয়ই ভালো থাকবে।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধানক্ষেতে কাজ করার সময় সাপের দংশনে আহত হয়েছেন মিলন আলী নামে এক কৃষক। পরে অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ সময় মিলন আলী সাপটিও হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বোগলাউড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। আহত মিলন আলী ওই এলাকার তোবজুল হকের ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন আলী বলেন, ‘সাপের ধরন চিহ্নিত করতে ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সাপটি ধরে আমার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। তাই সে সাপটি ব্যাগে করে নিয়ে আসে। চিকিৎসকরা সাপটি দেখে রাসেল ভাইপার বলে নিশ্চিত করেছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মামুন কবির জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি একটি সাপের বাচ্চাসহ হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিশঙ্কামুক্ত। তারপরও আমরা ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
মাদারীপুরের শিবচরে একই দিনে তিনজনকে সাপে দংশন করেছে। তাদের মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অপরজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে শিবচর উপজেলার চর বাচামারা গ্রামের লোকমান খান বাড়ির পাশে বাদাম ক্ষেতে রাখা ঝাকার নিচ থেকে হাতে কাঁচি তুলছিলেন। এ সময় একটি সাপ তার হাতে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। চিকিৎসকরা তাকে এন্টিভেনম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বজনদের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বললে তারা অস্বীকার করেন। এজন্য স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দুপুরে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের আলেপখাঁর খাঁড়াকান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বাড়িতে পালা থেকে গরুর জন্য খড় বের করার সময় একটি সাপ তাকে দংশন করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
একই দিন সকালে উপজেলার সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা গ্রামের মোসলেম কাজী বাড়ি সংলগ্ন খালের পানিতে পাট জাগ দিচ্ছিলেন। এসময় তাকে একটি সাপে দংশন করে। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা সুলতানা বলেন, সাপের দংশনে আহত তিনজন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দুজনকে বিষধর সাপে কাটেনি। তাই তাদেরকে এন্টিভেনম দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তাদেরকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপরজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।
রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করা উচিত। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে।
যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা জোরদার করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করা উচিত।
জেনেভা সফর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ফাইলেরিয়া নির্মূল এবং বিশ্বে প্রথম কালাজ্বর নির্মূল করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ৭৭তম সাধারণ সভায় তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহাপরিচালক বলেছেন, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ হতে পারে একটি যথাযথ রোল মডেল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যাবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মো. আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসাবে এই তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকের ওপর কোনো আক্রমণ যেমন আমি সহ্য করব না, তেমন রোগীর প্রতি কোনো চিকিৎসকের অবহেলাও বরদাস্ত করা হবে না।
রোববার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ও বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
সামন্ত লাল সেন বলেন, মন্ত্রী হিসেবে আমার বয়স মাত্র সাড়ে ৩ মাস। এই অল্প সময়ে আমি যেখানে গিয়েছি একটা কথাই বলেছি, আমি যেমন চিকিৎসকেরও মন্ত্রী, ঠিক তেমনি আমি রোগীদেরও মন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শুধু একটা প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি, তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাও, তোমাদের বিষয়গুলোও আমি দেখব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এর সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আর বানু প্রমুখ।
নবনিযুক্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষ অতি সাধারণ। তাদের চাওয়া-পাওয়াও সীমিত। ডাক্তারের কাছে এলে তারা প্রথমে চায় একটু ভালো ব্যবহার। একটু ভালো করে তাদের সাথে কথা বলা, একটু মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা। এটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া। আমি মনে করি সে স্বপ্ন পূরণ করার কারিগর হচ্ছো তোমরা। যারা আজকে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করতে যাচ্ছো। আমার বিশ্বাস, তোমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএস স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১০৩ জন, সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ১৭১ জন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ১৫৩ জন যোগদান করেন।
দেশে আরও ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে জানানো হয়, নতুন করে ১৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৫ জনে।
তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৪ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জনে।
দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ও উত্তপ্ত তাপমাত্রার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।
বুধবার ইয়েট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের দিকে নজর রাখুন- দুর্বল পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধরা তাপপ্রবাহের সময় অসুস্থতা বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সময় নিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যারা একা থাকেন।’
ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বাংলাদেশের শিশুরা।
ইউনিসেফের মতে, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য যারা তাপজনিত অসুস্থতা যেমন হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের কারণে বিশেষভাবে ডায়রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইয়েট বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের উদ্বেগের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই ইউনিসেফ অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের হাইড্রেটেড ও নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’
এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তাপমাত্রা নজিরহীনভাবে বাড়তে থাকায় অবশ্যই শিশু এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান ইয়েট।
এই তাপপ্রবাহ থেকে ইউনিসেফ কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, যত্নগ্রহণকারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের রক্ষায় নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে-
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
প্রাথমিক চিকিৎসা
যদি কোনো শিশু বা গর্ভবতী নারীর হিটস্ট্রেসের লক্ষণগুলো দেখা যায়, যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্তপাত, পেশি খিঁচুনি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি; ওই ব্যক্তিকে ভালো বায়ু চলাচলসহ শীতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন এবং ভেজা তোয়ালে বা শীতল পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন।
পানি বা ওরাল রিহাইড্রেশন লবণ (ওআরএস) গ্রহণ করুন।
হিটস্ট্রেসের গুরুতর লক্ষণগুলোতে (যেমন: বিভ্রান্তি বা প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা, অজ্ঞান হওয়া, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, খিঁচুনি এবং চেতনা হ্রাস) হলে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
মন্তব্য